মোল্লা রিচার্ড ডকিন্সের গড ডিলিউশন লেকচার

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি
লিখেছেন এস এম মাহবুব মুর্শেদ (তারিখ: সোম, ২৪/০৩/২০০৮ - ৫:০৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ভূমিকা
আমি রিচার্ড ডকিন্সের বিভিন্ন ভিডিও লেকচার শুনে, তার লেখার বেশ কিছু বাংলা রিভিউ পড়ে এবং কিছু অনলাইন ম্যাটেরিয়াল পড়ে তার বেশ ভক্ত হয়ে পড়েছিলাম। গড ডিলিউশন বইটাও কিনে ফেলেছিলাম, কিন্তু শেষ মেষ পড়া হয়ে উঠেনি। রির্চাড ডকিন্সকে কতটুকু জানি জিজ্ঞেস করলে বলতে হবে ২০-৩০% এর মত। কিন্তু আমি বাজি ধরে বলতে পারি বেশীর ভাগ রির্চাড ডকিন্স ফ্যানই আমার মত। তাই সাহস করে আমার অনুভুতির কথা গুলো তুলে ধরি।

এথেইস্ট রির্চাড ডকিন্স পরিচিত তার ধর্ম বিরোধী প্রচারনার জন্য। ডারউনিজমের চরম সার্পোটার, সেলফিশ জিন, গড ডিলিউশনের মত বিখ্যাত বইয়ের লেখক রির্চাড ডকিন্সের ভুরি ভুরি লেকচার পাওয়া যায় ইন্টারনেটে। তার লেকচার গুলো দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম। অসম্ভব আর্টিকুলেট, ধর্ম বিষয়ে এসোটেরিক জ্ঞ্যানের অধিকারী মনে হয়েছে। তাই অ্যারিজোনা স্টেইট ইউনিভার্সিটি যখন তার লেকচার অনুষ্ঠিত হবে শুনলাম, তখনই সিদ্ধান্ত নিলাম এটা মিস করা যাবেনা।

প্রস্তুতি পর্ব
যেখানটায় লেকচার হবে সেটা বিরাট একটা অডিটোরিয়াম। এটার নাম গ্যামেজ অডিটোরিয়াম। ক্লিনটনের সময়ে এখানে তৎকালীন প্রেসিডেন্সিয়াল বির্তক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সুতরাং বুঝতেই পারছেন আয়তনে (৩হাজার লোক বসতে পারে) এবং গুরুত্বে এখানে অনুষ্ঠিত যে কোন কিছুরই মর্যাদা অনেক বেশী।

যাই হোক, বেশ ঝামেলা করে একটা টিকিট যোগাড় করলাম। গড ডিলিউশন বইটা কিনতে গিয়ে দেখি বিক্রী হয়ে গেছে। পরে অনুষ্ঠান উপলক্ষে আনা বইয়ের স্টকে গিয়ে এক কপি পেলাম। উদ্দেশ্য একটা সিগনেচার যোগাড় করা।

অনুষ্ঠানের দিন আমার এক্স রুম মেট, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজী আবীরও জানালো যেতে চায় আমার সাথে। সবাই সবকিছু গ্রহন করতে পারেনা বিধায়, আমি একটু ইতঃস্তত করছিলাম। তবু তাকেও সঙ্গে নিলাম।

প্রায় পুরো হলটাই জনাকীর্ণ ছিল। ডকিন্স লেকচার দিতে শুরু করে নিজেই স্বীকার করলেন এটাই তার সবচেয়ে বড় অডিয়েন্স।

লেকচার
গড ডিলিউশন লেকচারে রিচার্ড ডকিন্স কি বলেন সেটা আপনি একটু গুগল করলেই কোথাও না কোথাও তার ভিডিও দেখতে পাবেন। আমি তার বিশেষ কতগুলো বিষয় তুলে ধরব যেটা আমাকে ভাবিয়েছে, প্রশ্ন বিদ্ধ করেছে।

প্রায় শুরুর দিকে ডকিন্স একটা স্কেল দেখালেন: গোঁড়া ধার্মিক আর গোঁড়া নাস্তিকের একটা মানদন্ড। যতদূর মনে পড়ে স্কেলটা ছিল এরকম:

--১--------২--------৩------৪----৫-----৬------৭
পুরো---কিঞ্চিত----কম---নির--সন্দেহ--প্রায়---পুরো
ধার্মিক-কম ধার্মিক-ধার্মিক-পেক্ষ--কারী-নাস্তিক-নাস্তিক

তিনি নিজেকে দাবী করলেন এই স্কেলে ৬ এর ঘরে। তারমানে তিনি বিশ্বাস করেন কিছু একটা থাকলেও থাকতে পারে, কিন্তু তার সম্ভাবনা প্রায় শূণ্যের কোঠায়।

তারপর তার আর্গুমেন্ট উপস্থাপন করলেন। প্রথম যুক্তি, আমরা সবাই নাস্তিক - অন্য ধর্মের ব্যপারে। আমি মুসলিম তাই অন্য যে কোন ধর্মের সাপেক্ষে আমি নাস্তিক। যাদেরকে ট্রাডিশনালী নাস্তিক বলা হচ্ছে তারা কেবল মাত্র আরো একটা ধর্মের ব্যাপারে অনাস্তা পোষন করছে। অকাট্য যুক্তি।

তারপর একটা সম্ভাবনার কথা বললেন। পৃথিবীর চারপাশে একটা চায়ের পাত্র ঘুরছে। গানিতিক ভাবে একজন বিজ্ঞানী এটা প্রমান করেছেন যে, পৃথিবীর চারপাশে একটা চায়ের পাত্র ঘুরার সম্ভাবনা আছে। এখন এটা দেখা যায় না, আবার প্রমানও করা যায় না যে এটা আছে, আবার উড়িয়েও দেয়া যায় না যে এটা নেই। গডের ব্যাপারটাও সেই একই রকম। হয়ত আছে, হয়ত নাই - কিন্তু যতক্ষণ প্রমান করা না যায় ততক্ষণ এটা নেই বলে ধরে নেয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। এটাও ভাল যুক্তি।

এরপর ধর্ম নিয়ে কত মারামারি হয়েছে সেটার একটা ফিরিস্তি দিলেন। নাস্তিক কিছু (যেমন হিটলার) হত্যাকারী ছিল সেটাও জানালেন - কিন্তু নাস্তিকতাই যে সেসমস্ত হত্যাকান্ডের মূল মোটিভ ছিলনা সেটাও বললেন। ফীমেল সারকামসিজন, ভিন্ন ধর্মের ছেলেকে বিয়ে করায় পাথর মেরে হত্যা এধরনের কিছু ধর্মীয় উন্মাদনার উদাহরন দিলেন।

ডারউইনিজম নিয়ে কিছু কথা বললেন। তারপর তার গড ডিলিউশনের এগেইনেস্টে গোটা বিশেক বই প্রকশিত হয়েছে তার একটা ফিরিস্তি দেখা গেল। দর্পভরে বললেন তার বই এত মিলয়ন বিক্রী হয়েছে এবং আরো হচ্ছে।

এক পর্যায়ে বললেন, তাহলে ধর্মগ্রন্হ কি ছুঁড়ে ফেলা উচিৎ? উত্তরে বললেন, হ্যাঁ অবশ্যই। তাহলে কি তার গড ডিলিউশন ফলো করলেই চলবে? এই প্রশ্নের উত্তরে কিছুক্ষণ চুপ থেকে একটা হাসি দিয়ে বললেন, "ওয়েল ইয়েস"। আমার মেজাজ খারাপ হল হল ভর্তি লোকগুলো আনন্দের তালি দিয়ে উঠল।

প্রশ্ন উত্তর পর্ব
প্রশ্ন উত্তর পর্বটা মজার। আমি সাহস করে আর যাইনি প্রশ্ন উত্তরে। তিনটে প্রশ্নউত্তর আমার দৃষ্টি কেড়েছে। যতদূর মনে পড়ে নিজের ভাষায় লিখছি।

প্রশ্ন এক:
আমি একজন এথেইস্ট, আপনার বিরাট একজন ফ্যান। আমার এক বন্ধু আছে যে মরমেন ধর্মের। তার চমৎকার একটা পরিবার আছে, সে সুখে শান্তিতে আছে। এখন আমি তাকে কিভাবে কনভিন্স করতে পারি যে এথেইজম হওয়া বেটার?
উত্তর:
আমি এব্যাপারে নরম নরম কথা বলতে পারি না। ধার্মিক কেউ আমার কাছে আসলেই আমার উত্তর গুলো শক্ত এবং চাঁচাছোলা হবে। সুতরাং আমার মনে হয় তুমি নিজে আমার চেয়ে ভালো ভাবে কনভিন্স করতে পারবে।

প্রশ্ন দুই:
আমি একজন ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ। আমাকে এমন একটা বিষয় নিয়ে কাজ করতে হয় যেখানে সমস্ত রোগীরা আসে টার্মিনাল ইলনেস নিয়ে। তারা জানে তারা খুব শিঘ্রী মারা যাচ্ছে। তাদের আমি দেখেছি ধর্ম নিয়ে অতিরিক্ত রকমের বাড়াবাড়ি করতে। তারা জীবনের শেষ কটা দিন ধর্মের আড়ালে একটু শান্তি খুঁজতে চায়। তাদেরকি আমি বলব, আরে না পরকাল বলে কিছু নাই। তুমি মরলেই ফুটুস?
উত্তর:
আমি অতটা নিষ্ঠুর হতে বলব না। তবে যা সত্য, সেটা সত্যই। তুমি না বললেই তো সেটা আর মিথ্যে হয়ে যাবে না।

প্রশ্ন তিন:
আপনি পৃথিবীর চারপাশে ঘোরা ট-পটের উদাহরন দিয়েছেন। আমি আরেকটা উদাহরন দিতে চাই। মনে করেন দুটো কাঁচের শীট একসাথে জুড়ে একটা ফ্ল্যাট দ্বিমাত্রিক স্পেস তৈরী করা হল। যেহেতু তারা দ্বিমাত্রিক তারা তিমাত্রিক কিছু তৈরীও করতে পারে না এবং কল্পনাও করতে পারে না। এখন তাদের দেশে একটা ছবি বানিয়েছে তারা, তারা কখনও ছবিটাকে উল্টিয়ে তার মিরর ইমেজ বানাতে পারবে না। কেননা ছবিটাকে উল্টাতে হলে ছবিটাকে কাঁচের শীটের ভিতর থেকে বের করে, তিমাত্রিক জগতে এনে, উল্টিয়ে আবার দ্বিমাত্রিক জগতে প্রবেম করাতে হবে। ব্যাপারটা দ্বিমাত্রিক জগতের লোকদের বোধের বাইরে, তাই বলে ব্যাপারটা যে অসম্ভব তা তো না...
উত্তর:
(বিরক্ত হয়ে) ওয়েল, আমি তোমার বক্তব্যটাকে প্রশ্ন না হিসেব নিয়ে মন্তব্য হিসেবে নিব। তোমার কথাটা ভাল কিন্তু আমার কিছু বলার নাই।

আমার অনুভুতি
রিচার্ড ডকিন্সের প্রতি একটা শ্রদ্ধা অনুভব করতাম। ভাবতাম তিনি অনেক খোলা মনের মানুষ। কিন্তু লেকচার শোনার পর থেকের তার প্রতি আমার শ্রদ্ধা একেবারেই কমে গেছে।

প্রথমতঃ তাকে মনে হয়েছে এথেইস্ট মোল্লা। ধর্মের বিভাজন দূর না করে বরং আরেক প্রকারের ধর্ম প্রতিষ্ঠাই তার লক্ষ্য। সাউথ পার্ক কার্টুনে তাকে যর্থাতই রিপ্রেজেন্ট করা হয়েছিল বলে আমি মনে করি।

দ্বিতীয়তঃ তাকে যথেষ্ট সংকীর্ণমনা মনে হয়েছে। তিনি থিওলজী পড়েননি কিন্তু সেটা নিয়ে বড় বড় লেকচার দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি কিছু আদি যুক্তি নিয়ে পড়ে আছেন আগ বাড়ছেন না (টি-পট যুক্তি, ডারউইনিজম)। তিনি ভিন্ন মতকে পাত্তা দিচ্ছেন না (তৃতীয় প্রশ্ন-উত্তর)।

তৃতীয়তঃ তাকে প্রচন্ড অ্যারোগ্যান্ট মনে হয়েছে। ধার্মিক কেউ কি বলল সেটা দু পয়সা দাম দেন না। কেউ যদি আস্তিক হয় তাকে ফু দিয়ে উড়িয়ে দেন। এটা স্বাস্থ্যকর হতে পারে না।

দুঃখিত রিচার্ড ডকিন্স আমার চোখে তুমি নাস্তিকতা ধর্মের একটা বড় মোল্লা ছাড়া আর কিছু নও।


মন্তব্য

হিমু এর ছবি

যত দিন যাচ্ছে, ডকিন্সের অ্যাপ্রোচ ক্রমশ অসহিষ্ণু হয়ে উঠেছে, এটা লক্ষ্য করেছি। তাঁর বইয়ের ভাষাতেও এই উগ্রতার ক্রমশ বিস্তার লক্ষ্যনীয়। তবে বার্ট্রান্ড রাসেলের চায়না টি-পটের অ্যানালজিটা আমার কাছে বেশ লেগেছিলো।


হাঁটুপানির জলদস্যু

হিমু এর ছবি

তবে তৃতীয় প্রশ্নটার কাছাকাছি ধরনের বেশ কিছু প্রশ্ন প্রায়ই করা হয়। মুশকিল হচ্ছে, যা কিছু আমাদের বোধের বাইরে, তাকেই ঈশ্বর বলে মেনে নিয়ে কিছু নিয়ম মেনে চলার ব্যাপারটাকেই মূলত নাস্তিকরা প্রশ্নবিদ্ধ করেন। টাইমস এর একটা সাক্ষাৎকারে ডকিন্স বলেছিলেন, হয়তো ঈশ্বর আছেন, কিন্তু তিনি অতীতে বা বর্তমানে প্রচলিত কোন ধর্মের ঈশ্বর নন।


হাঁটুপানির জলদস্যু

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

আমারও মনে হয়েছে ডকিন্স হয়ত ওভারইউজড এনালজি ব্যবহার দেখে বিরক্ত হয়েছেন। কিন্তু তার এপ্রোচ আরো পজিটিভ করা উচিৎ।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

হিমু এর ছবি

অ্যাপ্রোচ নিয়ে আমিও তোমার সাথে একমত। আমি ডকিন্সের বেশ কিছু সাক্ষাৎকার দেখেছি জার্মানিতে আসার পর। লক্ষ্য করেছি, তিনি খুব কষ্ট করে নিজেকে সামলে রাখেন। অথচ ডকিন্সের লেখা আমার ভালো লাগার অনেক কারণের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে তাঁর গতিময়, সাবলীল ভাষা ও বক্তব্যের জন্যে। রীতিমতো বিস্মিত হয়েছি গড ডিলিউশনে তাঁর ক্রুদ্ধ বক্তব্যগুলো পড়ে। তবে আমার কাছে যা মনে হয়েছে, তাঁর তর্জনগর্জনগুলি বার বার এক বিশেষ ঘরানার বিজ্ঞানীদের দিকে উদ্দিষ্ট। টেম্পলটন ফাউন্ডেশন নিয়ে এ কারণেই তোমাকে প্রশ্ন করতে অনুরোধ করেছিলাম।

সাধারণ মানুষের সামনে লেকচারে তাঁর আরো ধৈর্য ধরে, নরম ভাষায় বলা উচিত বলে আমি মনে করি। যদি তিনি কোন বিশেষ ঘরানার বিজ্ঞানীদের প্রতিই বিদ্বিষ্ট হন, তো তর্জনগর্জন তাদের সামনে গিয়ে করলেই হয়।


হাঁটুপানির জলদস্যু

অপরিচিতা এর ছবি

রিচার্ড ডিকেন্সকে আমার সবসময়ই ভোঁতা যুক্তির একজন অবিসস্বাসী মনে হয়।
যুক্তির চেয়ে জোরটাই যেন প্রধান।

অপরিচিতা

হিমু এর ছবি

ডিকেন্স নয়, ডকিন্স।

অপরিচিতা সম্ভবত বেশ চমৎকার আলোচনা শুরু করতে পারেন, ডকিন্সের "ভোঁতা যুক্তি" আর "যুক্তির চেয়ে বড় জোর" নিয়ে। রেফারেন্স দিতে ভুলবেন না।


হাঁটুপানির জলদস্যু

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

আমার তার যুক্তি ভোঁতা মনে হয়নি। মনে হয়েছে অন্যপক্ষের কথা আরেকটু গুরুত্ব দিলে ভালো করতেন।

আপনার কেন ভোঁতা মনে হয়েছে সেটা বললেন না!
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

বহুদিন এই লেখার অপেক্ষায় ছিলাম। ধন্যবাদ।

ডকিন্সের প্রতি এক ধরনের শ্রদ্ধাবোধ আমার ছিলো, তা আপনার লেখা পড়ার পরেও পুরোপুরি অটুট আছে। তিনি কোনও পয়গম্বর নন যে, তাঁর সমস্ত কথা, যুক্তি বা আচরণ প্রশ্নহীন মেনে নিতে হবে।

তাঁর "অ্যাপ্রোচ ক্রমশ অসহিষ্ণু হয়ে উঠেছে", কথাটা হয়তো সত্য এবং তা ঠিক সমর্থনযোগ্য নয়। আবার এ-ও সত্য যে, চরম অসহিষ্ণু এবং প্রায়শই যুদ্ধংদেহী সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রতিপক্ষের সঙ্গে সার্বক্ষণিক সহনশীলতা বজায় রাখাটা দুরূহই বটে।

পয়গম্বর মুহম্মদ কোরানে জেহাদের ডাক দিলে বা ইহুদিসহ যাবতীয় অবিশ্বাসীদের কতলের আহ্বান জানালেও ইসলাম শান্তির ধর্ম হিসেবেই প্রচার পায়। সেই তুলনায় ডকিন্সের অসহিষ্ণু অ্যাপ্রোচ তো নস্যি!

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

দিগন্ত এর ছবি

"চরম অসহিষ্ণু এবং প্রায়শই যুদ্ধংদেহী সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রতিপক্ষের সঙ্গে সার্বক্ষণিক সহনশীলতা বজায় রাখাটা দুরূহই বটে। "
আমি এটার সাথে একমত।

যাহোক আপনি যদি ডকিন্সকে বিব্রতকর অবস্থায় দেখতে চান তার 'মিলিটান্ট এথেয়িসম' নিয়ে - আমার মনে হয় তাহলে আপনি বিবিসির হার্ডটকের ভিডিওটা ইউটিউবে দেখে নিন। আপনার প্রশ্নগুলোর মতই কিছু প্রশ্ন ডকিন্সকে করা হয়েছিল। ডকিন্স কিছুটা উত্তর দিতে পেরেছিলেন, কিছুটা পারেননি।
পর্ব ১, পর্ব ২, পর্ব ৩

আপনার মূল প্রশ্নের উত্তরে একটু পরে আসছি।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- কাছে আসো একটু দোয়া পইড়া ফুঁ দিয়া দেই।
আর আসার সময় বাড়ির উত্তর-দক্ষিণ কোণার কূয়া থাইকা একমগ পানি নিয়া আইসো, পইড়া দিবো নে!
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

সৌরভ এর ছবি

ডকিন্সকে খুব অল্পই জানি।
যতটুকু জানি, সেটুকু তার বিখ্যাত "The Root of All Evil?" ডকুমেন্টরির মাধ্যমে।

তবে, সুমন ভাইর হতাশ হওয়া দেখে অবাক হইনি।
আমার মনে হয়েছে আপনি যদি কোন ধর্মে বিশ্বাসী হন, তাহলে তাকে অ্যারোগ্যান্ট মনে হতে বাধ্য।
(উনি অ্যারোগ্যান্ট, এটা আমি বলছি না)

(এই পোস্টে আরো কমেন্ট করার আশা রাখি, আমার খুব প্রিয় একটা টপিক)


আমি ও আমার স্বপ্নেরা লুকোচুরি খেলি


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

আমি তার যুক্তি গুলো নিয়ে কোন প্রশ্ন তুলিনি। বরং তার মোল্লা মার্কা এটিচিউডের সমালোচনা করেছি। কারো সাথে আদর্শগত ভাবে মিল থাকলেই যে তাকে অন্ধের মত ভক্তি করতে হবে সেটা আমি মনে করিনা। তাহলে ধর্মান্ধের সাথে আমার পার্থক্য কোথায়?

আমি মনে করি দৃষ্টি রাখতে হবে প্রচ্ছন্ন। মন রাখতে হবে উদার।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

মাহবুব লীলেন এর ছবি

পরিষ্কার ব্যবসায়িক ফর্মুলা
নিজেকে পুরোপুরি নাস্তিক বললে বাজার কমে যাবার সম্ভাবনা
বরং নিজেকে প্রায় নাস্তিক হিসেবে তুলে ধরে আস্তিকদের জন্য কিছু জায়গা ছেড়ে দিলে তারা বরং তাকে উদাহরণ হিসেবে ব্যববার করতে পারবে এই বলে যে- ডকিন্সও কিন্তু একেবারে নেই বলেননি

০২

ডকিন্সের মূল বাজার সন্দেহবাদীরা
সন্দেহবাদীদের সন্দেহ পুরোপুরি উঠে গেলে ডকিন্সের বাজারও শেষ
তাই ডকিন্সের ফর্মুলাই হলো সন্দেহকে আরো বদ্ধমূল করা
যাতে হয় তারা বারবার হয় নিজেদের সন্দেহ যাচাই করতে না হয় নিজেদের পক্ষে কিছু যুক্তি জোগাড় করতে তার কাছে আসে

দিগন্ত এর ছবি

এটা কি ঠিক হল? সন্দেহবাদীদের সংখ্যাও বেড়ে চলেছে। মানে ধার্মিক -> সন্দেহবাদী বেড়ে চলেছে। আর সন্দেহবাদী -> নাস্তিকও বেড়ে চলেছে। ডকিন্সের উদ্দেশ্য দ্বিতীয়টা ত্বরাণ্বিত করা (ওনার নিজের বক্তব্য থেকে)। কিন্তু তার জন্য তার বাজার কমছে না, নতুন সন্দেহবাদীরা তার বই চেখে দেখবে।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

শিক্ষানবিস এর ছবি

মাহবুব লীলেনের মন্তব্যটা পড়ে খুব খারাপ লাগলো। কথাটা কিন্তু কনস্পাইরেসি থিওরির মত হয়ে গেল। মানুষ সবাই ভাল। যে যা জানে তা প্রচার করবেই। কারণ সে মনে করে তার জ্ঞানটাই বেঁচে থাকবে, সে না।

আপনি যা-ই বলেন না কেন দেখবেন কেউ না কেউ তার মধ্যে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ষড়যন্ত্রের আভাস খুঁজে পাবে।

একটা বিষয় পরিষ্কার হওয়া দরকার। ডকিন্স যদি আস্তিকতা আর নাস্তিকতার অনর্থক বিতর্কে অন্ধের মত জড়িয়ে পড়েন তাহলে আমি তাকে সম্পূর্ণ অমান্য করবো। কারণ এখানে প্রশ্নটা হল বিজ্ঞান আর অবিজ্ঞানের। আস্তিকতা আর নাস্তিকতার নয়। এটা বিজ্ঞানের যুগ। বিজ্ঞান তার মত করে এগোয়। অন্যের কথা নিছক যুক্তি দিয়ে মেনে নেয়া বিজ্ঞানের স্বভাব না। বিজ্ঞান চায় পরীক্ষণ।

দিগন্ত এর ছবি

আপনার অভিযোগগুলোর একটু ব্যাখ্যা করা যাক।

"ধর্মের বিভাজন দূর না করে বরং আরেক প্রকারের ধর্ম প্রতিষ্ঠাই তার লক্ষ্য।"

- প্রথমত সংজ্ঞানুসারে, নাস্তিকতা মানে প্রতিষ্ঠিত ধর্মগুলো বিতাড়ন। সুতরাং ডকিন্সের উদ্দেশ্য যে ধর্মের বিভাজন দূর করার জন্য হবে না - সেটা খুব স্বাভাবিক।

তিনি থিওলজী পড়েননি কিন্তু সেটা নিয়ে বড় বড় লেকচার দিয়ে যাচ্ছেন।

- মনে হয় না এটা সত্যি, আমি তো ওনাকে অনেক ধর্মের অনেক কিছুই ব্যাখ্যা করতে দেখেছি গড ডিলিউশনে।

তিনি কিছু আদি যুক্তি নিয়ে পড়ে আছেন আগ বাড়ছেন না (টি-পট যুক্তি, ডারউইনিজম)।

- এই দুই যুক্তি অকাট্য, আর কোনো যুক্তির দরকার পড়ে না।

তিনি ভিন্ন মতকে পাত্তা দিচ্ছেন না (তৃতীয় প্রশ্ন-উত্তর)।
- এটা ওনার একটা বদগুণ, আমি মেনে নিচ্ছি।

তাকে প্রচন্ড অ্যারোগ্যান্ট মনে হয়েছে। ধার্মিক কেউ কি বলল সেটা দু পয়সা দাম দেন না। কেউ যদি আস্তিক হয় তাকে ফু দিয়ে উড়িয়ে দেন। এটা স্বাস্থ্যকর হতে পারে না।

- অ্যা্রোগ্যান্ট হওয়াটা কাম্য নয়, কিন্তু নাস্তিক-মাত্রই আস্তিকদের কথা উড়িয়ে দেবার কথা। কারণ, আমরা মোটামুটি সবাই জন্মসূত্রে আস্তিক। নাস্তিক হয়েছি জীবদ্দশায়। তার জন্য নিজেকে বোঝাতে হয়েছে আমাদের সে আমরা কেন আর আস্তিক থাকতে চাই না। সেই একই বোঝানোটা আরেকজন আস্তিককে বলা সম্ভব। এটাই হল ডকিন্সের বক্তব্য (হওয়া উচিত)।

আসলে ডকিন্সকে আপনি যেরকম আশা করেছিলেন সেরকম উনি ঠিক নন। আমি আপনার লেখা থেকেই বলছি -

"আমার মেজাজ খারাপ হল হল ভর্তি লোকগুলো আনন্দের তালি দিয়ে উঠল।"
। এর মানে বাকিরা যা শুনতে এসেছিল তারা তাই শুনতে পেয়েছে, কিন্তু আপনি পাননি। আশার সাথে প্রাপ্তির পার্থক্যই তো অশান্তির কারণ, তাই আপনি অসন্তুষ্ট।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

সময় নেই তাই চট করে আপনার মন্তব্যের উত্তর দিয়ে যাই। প্রথমতঃ আমি তো আপনার কাছে অভিযোগ করিনি, করেছি ডকিন্সের কাছে। আপনি আমার অভিযোগ নিয়ে চিন্তিত কেন?

এই গুরু-প্রথা এবং ডকিন্সের গুরু-ভাব নেয়া এই জায়গাটাতেই আমার আপত্তি।

আমি মনে করি খোদা নাই তার হাজারটা যুক্তি দেয়া যায়। নাস্তিকতা নামের ধর্মও দাঁড় করানো যায়। কিন্তু মানব জাতির যে সমস্যা - বিভেদ - সেটা দুর হয় না। কে কি বিশ্বাস করল তাতে কিছু এসে যায় না যতক্ষণ না সেটা একে অপরের ক্ষতি করে। ধর্মের কিংবা নাস্তিকতার এই ক্ষতিকর দিকটাকে আগে সারতে হবে।

দিগন্ত লিখেছেন:
প্রথমত সংজ্ঞানুসারে, নাস্তিকতা মানে প্রতিষ্ঠিত ধর্মগুলো বিতাড়ন। সুতরাং ডকিন্সের উদ্দেশ্য যে ধর্মের বিভাজন দূর করার জন্য হবে না - সেটা খুব স্বাভাবিক।

বিভাজন যদি দূর না হয় তাহল হানাহানি মারামারি দূর হবে না। আবার বলি কে কি বিশ্বাস করল না করল তারচেয়ে বড় সমস্যা বিভাজন দূর করা।

দিগন্ত লিখেছেন:
মনে হয় না এটা সত্যি, আমি তো ওনাকে অনেক ধর্মের অনেক কিছুই ব্যাখ্যা করতে দেখেছি গড ডিলিউশনে।

প্রশ্ন উত্তর পর্বে একজনের প্রশ্নের জবাবে উনি স্বীকার করেছেন যে "ট্রাডিশনাল" থিওলজী উনি পড়েননি। এবং দর্পভরে বলেছেন সেটা পড়ার প্রয়োজন নেই।

দিগন্ত লিখেছেন:
এই দুই যুক্তি অকাট্য, আর কোনো যুক্তির দরকার পড়ে না।

এইটা কোন কথা হল? এই দুইটা অকাট্য বলে আর কোন যুক্তি খুঁজতে হবে না? তাহলে পৃথিবীতে তো আর কিছু করার দরকার নেই! আপনি যে কতটা অন্ধ সেটা বুঝতে পারছেন?

দিগন্ত লিখেছেন:
এর মানে বাকিরা যা শুনতে এসেছিল তারা তাই শুনতে পেয়েছে, কিন্তু আপনি পাননি। আশার সাথে প্রাপ্তির পার্থক্যই তো অশান্তির কারণ, তাই আপনি অসন্তুষ্ট।

তো?

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

দিগন্ত এর ছবি

আবার বলি কে কি বিশ্বাস করল না করল তারচেয়ে বড় সমস্যা বিভাজন দূর করা।

- আবার আপনি একই ভুল করেন। আমি তো বলিনি উনি কোনো সমস্যা সমাধান করেন। ওনার যুক্তির মূল বক্তব্য হল ঈশ্বরে বিশ্বাস করার কোনো দরকার নেই। সমস্যা সমাধানের কথা উনি বলেন না। আপনি আমার দেওয়া বিবিসির হার্ড-টকের ভিডিওতে দেখতে পারেন একই কথা।

ওনার বক্তব্যের আরো একটা অংশ হল যে ধর্ম সমাজে একটা আলাদা আসনে অধিষ্ঠিত যেটা থাকা উচিত নয়। ওনার দাবী আপনি সমালোচনা করতে পারেন বুশের (বা টোরি পার্টির) রাজনীতির বিরুদ্ধে কিন্তু ধর্মের ভুল দিকগুলো তুলে ধরলেই অন্যায়? সে সময় তো অন্যের মতে শ্রদ্ধা রাখার প্রশ্ন ওঠে না ....

প্রশ্ন উত্তর পর্বে একজনের প্রশ্নের জবাবে উনি স্বীকার করেছেন যে "ট্রাডিশনাল" থিওলজী উনি পড়েননি।

- "ট্রাডিশনাল" থিওলজী বস্তুটা ঠিক কি?

এই দুইটা অকাট্য বলে আর কোন যুক্তি খুঁজতে হবে না?
- আমার তো তাই ধারণা।, বিজ্ঞানে কোনো যুক্তি অকাট্য হলে আগে তাকে খণ্ডন করার চেষ্টা করাই তো কাম্য।

কিন্তু মানব জাতির যে সমস্যা - বিভেদ - সেটা দুর হয় না।
- আমি কখন বললাম যে মানব-জাতির সমস্যা দূর হবে ডকিন্সের কথা শুনলে? দেখেন আপনি আমার সাপেক্ষে ডকিন্সকে গুরু বলে মনে করছেন, সেটা ঠিক নয়। ডকিন্সের যুক্তি আমার ভাল লাগে তার মানে এই নয় ডকিন্সের বর্ণিত পথ "বাস্তবসম্মত"। ডকিন্সের যুক্তি আমার অনেক অন্ধ ধারণা ভেঙে দিয়েছে বলে আমি ওনার ফ্যান। কিন্তু এর মানে এই নয় যে উনি যা বলেন সব ঠিক - উনি নিজেও মনে হয়না সেটা দাবি করেন।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

শিক্ষানবিস এর ছবি

দুঃখিত রিচার্ড ডকিন্স আমার চোখে তুমি নাস্তিকতা ধর্মের একটা বড় মোল্লা ছাড়া আর কিছু নও।

আপনি যা লিখলেন এই যদি হয় বাস্তবতা তাহলে আমি এই সময় থেকে ডকিন্সকে অপছন্দ করতে শুরু করলাম। আপনার লেখা পড়ে বুঝলাম, ডকিন্স সাহেব আস্তিক-নাস্তিকের অনর্থক বিতর্কে জড়িয়ে পড়া এক সাধারণ মানুষ বৈ অন্য কিছু নন। তার প্রশ্নোত্তর শুনে আমার মনে হয়েছে বিজ্ঞান তার অন্তরে প্রবেশ করতে পারেনি। তাকে বিজ্ঞানী মানতে আমি নারাজ। কারণ আমার কাছে কেবল আবিষ্কার আর উদ্ভাবনই বিজ্ঞান নয়। দর্শন নিয়ে পড়াশোনা করলেই যেমন দার্শনিক হওয়া যায় না, তেমনই বিজ্ঞান নিয়ে অনেক পড়লেই বিজ্ঞানী হওয়া যায় না। প্রজ্ঞার প্রতি ভালোবাসা না থাকলে দার্শনিক হওয়া যায় না, আর বিজ্ঞানকে অন্তরে ধারণ করতে না পারলে বিজ্ঞানী হওয়া যায় না।

আমি কখনই আস্তিক-নাস্তিকের অর্থহীন প্রশ্নে জড়িয়ে পড়াকে পছন্দ করি না। কারণ মানুষ যে সবকিছু কখনই জেনে যাবে না তা প্রায় নিশ্চিত। ওমেগা পয়েন্ট বলে একটা ব্যাপার আছেই। এড়িয়ে যাওয়ার কোন উপায় নেই।

ব্যাপারটা দ্বিমাত্রিক জগতের লোকদের বোধের বাইরে, তাই বলে ব্যাপারটা যে অসম্ভব তা তো না...

প্রশ্নটা খুব ভালো হয়েছে। মানুষের বোধের বাইরে আছে অনেক কিছু। তা বিজ্ঞানের মাধ্যমেই বিশ্লেষণ করতে হবে। ডকিন্সের খোঁড়া যুক্তির মাধ্যমে নয়। যুক্তিবিদ্যা আর বিজ্ঞান আলাদা দুটি জিনিস। বিখ্যাত যুক্তিবিদ হওয়ার মধ্যে আলাদা কৃতিত্ব নেই। মানুষ অনেক কাল আগে থেকেই যুক্তি দিয়ে কথা বলে আসছে। যুক্তি দিয়ে আস্তিকতা বা নাস্তিকতার কোন সমাধানে পৌঁছা যায় নি। কোনদিন যাবেও না।

হিমু এর ছবি

এই মন্তব্যটা অনেক প্রতিমন্তব্য দাবি করে। আমি একটা দিচ্ছি।

মানুষের বোধের বাইরে আছে অনেক কিছু। তা বিজ্ঞানের মাধ্যমেই বিশ্লেষণ করতে হবে। ডকিন্সের খোঁড়া যুক্তির মাধ্যমে নয়। যুক্তিবিদ্যা আর বিজ্ঞান আলাদা দুটি জিনিস। বিখ্যাত যুক্তিবিদ হওয়ার মধ্যে আলাদা কৃতিত্ব নেই। মানুষ অনেক কাল আগে থেকেই যুক্তি দিয়ে কথা বলে আসছে। যুক্তি দিয়ে আস্তিকতা বা নাস্তিকতার কোন সমাধানে পৌঁছা যায় নি। কোনদিন যাবেও না।

এই প্যারাগ্রাফটাই কোন বিজ্ঞানপ্রেমী মানুষের কাছ থেকে আসা উচিত নয় বলে আমি মনে করি। যুক্তি দিয়ে সমাধানে পৌঁছানো যাবে না, কিন্তু বিজ্ঞানের মাধ্যমে সব বিশ্লেষণ করতে হবে ... বিজ্ঞান কি অযৌক্তিক কোন পন্থা? আমি তো জানি বিজ্ঞান যুক্তি দিয়েই এগোয়।

মানুষ যেমন অনেক কাল আগে থেকে যুক্তি ব্যবহার করছে, তেমনি অনেক কাল আগে থেকে অযুক্তিও ব্যবহার করছে।

ডকিন্সের যুক্তি খোঁড়া কথাটা বলে ফেললে, কোথায় খোঁড়া, তা দেখিয়ে দেয়ার দায়ও কাঁধে নেয়া হয়। আশা করি স্পষ্ট করে বোঝাবেন আমাদের।

সম্ভবত রাদারফোর্ড বলেছিলেন, মানুষের পক্ষে বাতাসে ভাসা অসম্ভব। বেশ জোর দিয়েই বলেছিলেন, তাপগতিবিদ্যার দ্বিতীয় সূত্রের কথা উল্লেখ করে। কখনোই কোন কিছু সম্ভব না, এ ধরণের বক্তব্য দিয়ে ফেললে অনেক পথ বন্ধ হয়ে যায়। আর নাস্তিকরা কিন্তু কারো চেহারা দেখে নাস্তিক হয় না, কোন একটা যুক্তিতে কনভিন্সড হয়েই হয় (যদি কেউ কারো চেহারা দেখে নাস্তিক হয়, তাহলে আমি সেই ব্যক্তিদ্বয়ের সাথে পরিচিত হতে উৎসুক)। সেই যুক্তির গুণ বিচার না করে খোঁড়া বলে উড়িয়ে দিলে অহেতুক তর্কই বাড়বে।


হাঁটুপানির জলদস্যু

শিক্ষানবিস এর ছবি

আসলে ব্লগটা পড়ার পর ডকিন্সের উপর বিশেষ রেগে গিয়েছিলাম। কারণ উনি যেভাবে প্রশ্নের উত্তরগুলো দিয়েছেন তা সহ্য করতে পারিনি। এজন্য খোঁড়া বলে ফেলেছি। তার যুক্তিগুলোকে খোঁড়া বলা একেবারেই উচিত হয়নি। এবার আমার দৃষ্টিতে যুক্তি আর বিজ্ঞানের বিষয়টা বলি,

- বিজ্ঞান আসলে যুক্তির পথ ধরে এগোয় না। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির সাথে যুক্তিবিদ্যার পদ্ধতির পার্থক্য আছে। যুক্তি মানব মস্তিষ্ক থেকে আসে। তাই মানব মস্তিষ্কের নির্ভরযোগ্যতাই এখানে সর্বাধিক বিবেচ্য। কিন্তু বিজ্ঞান প্রকৃতির নিয়ম ব্যবহারিক প্রমাণের মাধ্যমে উদ্‌ঘাটন করে। সেজন্য প্রথমে প্রকল্প, পরে পরীক্ষণ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের ব্যাপারটা এসে যায়। আমার মতে, বিজ্ঞান দিয়ে ঈশ্বর আছে কি নেই তা প্রমাণ করতে যাওয়ার মত বোকামি আর নেই।
- আমার মতে, ঈশ্বর আছে কি নেই তা মানুষের পক্ষে কোনদিনই বোঝা সম্ভব না। বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে চলতে হবে। পৃথিবীর সব ধর্ম আর দার্শনিক তত্ত্বকথা ফেলে দিন। সম্পূর্ণ নতুন ভাবে ব্যাখ্যা করলেও ব্যাখ্যার অতীত কিছু একটা রয়ে যাবে। শূন্য যেমন থাকবে, তেমনই থাকবে অসীম। শূন্য বা অসীমের বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব হলে অন্য কিছু একটা এসে যাবে। ওমেগা পয়েন্ট ও থাকতে পারে। সেই পয়েন্ট যেখানে নেই এমন কিছু নেই। কিন্তু, সেই পয়েন্ট মহাজাগতিক কোন কিছুর পক্ষে হওয়া সম্ভব কি-না বলতে পারছি না।
- আমার মতে, নাস্তিকতা আর ধর্মহীনতা সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়। বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে চিন্তা করলে ধর্মের অসারতা অতি সহজেই ধরা পড়ে। কিন্তু, নাস্তিকতা তথা কিছু একটার (অর্থাৎ যা কিছু আছে) কিছু একটা (অর্থাৎ যা চালাচ্ছে) চালিকাশক্তি নেই, এমন ধারণা বিজ্ঞান দিয়ে করা সম্ভব নয়। আবার আছে এটাও বিজ্ঞান দিয়ে বোঝা সম্ভব নয়। দুটোই বিশ্বাস।
- বিশ্বাসকেও উড়িয়ে দেয়া যায় না। কারণ বিশ্বাস বলে কিছূ একটা মানুষের মধ্যে আছে এটা মানুষ অস্বীকার করতে পারবে না। খুবই জটিল। বিজ্ঞান আর বিশ্বাসের মধ্যে বিন্দুমাত্র সম্পর্ক নেই। কিন্তু বিশ্বাসের সাথে যুক্তির সম্পর্ক রয়েছে বলে আমার মনে হয়। যুক্তি দিয়ে বিশ্বাসের প্রতিষ্ঠার চেষ্টা মানুষের বুদ্ধিশুদ্ধি শুরু হওয়ার সময় থেকেই চলে আসছে।

হিমু এর ছবি

বিশ্বাসকেও উড়িয়ে দেয়া যায় না। কারণ বিশ্বাস বলে কিছূ একটা মানুষের মধ্যে আছে এটা মানুষ অস্বীকার করতে পারবে না। খুবই জটিল। বিজ্ঞান আর বিশ্বাসের মধ্যে বিন্দুমাত্র সম্পর্ক নেই। কিন্তু বিশ্বাসের সাথে যুক্তির সম্পর্ক রয়েছে বলে আমার মনে হয়। যুক্তি দিয়ে বিশ্বাসের প্রতিষ্ঠার চেষ্টা মানুষের বুদ্ধিশুদ্ধি শুরু হওয়ার সময় থেকেই চলে আসছে।

আমি এ ধরনের বক্তব্য শুনে একটু অসহায় বোধ করি। এককালে বিশ্বাস করতাম জুজুবুড়ি বলে একটা বুড়ি ঘরের ভেতর ওঁত পেতে থাকে, দুপুরবেলা আমি ঘর ছেড়ে দরজা খুলে বেরোতে গেলেই সে এসে আমাকে আরো ভয় দেখাবে। এই বিশ্বাস বেশ তীব্র ছিলো, এ কথা এখনো স্মরণে আছে। এখন আমি এই বিশ্বাসের অস্তিত্বকে উড়িয়ে দিতে পারবো না, কিন্তু জুজুবুড়ির অস্তিত্বকে উড়িয়ে দিতে পারি। কেউ যদি এখন যুক্তি দিয়ে জুজুবুড়ির অস্তিত্ব প্রমাণ করার চেষ্টা করেন, তাহলে সেই যুক্তির গুণ বিচার করে তাকে একশোতে দুই দিতে পারি বড়জোর। অথচ দেখুন, জুজুবুড়িতে বিশ্বাসের কারণে কিন্তু আমার মঙ্গলই হয়েছে, তা না হলে আমি দরজা খুলে বেরিয়ে গিয়ে বিপদে পড়তে পারতাম।

বিশ্বাসের প্রতিষ্ঠা ঠিক যুক্তি দিয়ে হয় কি না আমি জানি না। ভূতে বিশ্বাস করে অনেকে, অনেকে জ্বিনে বিশ্বাস করে, সেগুলির পেছনে যুক্তি থাকে না, মানুষের ভেতরে যে স্বাভাবিক ভয় কাজ করে অন্ধকারের ব্যাপারে, সেগুলোর ওপরই জ্বিনভূতের সীলমোহর পড়ে। আমাদের ধর্মবিশ্বাস বাহিত হয় বাবা-মায়ের কাছ থেকে, তাঁদের ওপর আমাদের আস্থা আছে বলে তাঁদের রোপিত ধর্মবিশ্বাস আমরা বহন করে চলি। কোন যুক্তি নয়, সরাসরি তথ্য দেয়া হয় আমাদের। যদি যুক্তি কোন দেয়াও হয়ে থাকে, সেটাও শিশুতোষ যুক্তি, জুজুবুড়ির যুক্তির মতোই।

নাস্তিকতার মূল সমস্যা এর উপস্থাপনে। সব সময়ই রুড অ্যাওয়েকেনিং এর দিকে চলে যান এর প্রবক্তারা। আমাদের ভেতরটাও নানা রকম আস্তিক শক অ্যাবজরবারের গদির ওপর বসানো, সেটা একটা ঝাঁকি খায় সেই উপস্থাপনে। সেখানেই সমস্যা। আমরা তখন পাল্টা জবাব খুঁজি, যুক্তিতে, বিজ্ঞানে, কিন্তু জুতমতো জবাব পাওয়া যায় না। একটাই উত্তর আসে, জানি না, জানা যায় না। ঈশ্বর নেই, এ কথা বলার চেয়ে সহজ উত্তর, ঈশ্বরকে আমি জানি না ঠিকমতো। একই কথা ডকিন্সও বলেন। যে ঈশ্বরদের নাম নিয়ে মানুষ চলছে, সে ঈশ্বর নন, অন্য কোন অধরা ঈশ্বর হয়তো রয়ে গেছে কোথাও, যার খোঁজ পাওয়ার সাধ্য এখনও আমাদের নেই, ভবিষ্যতে হলেও হতে পারে। ওঁর স্কেলটা দেখুন। ৭ এ ৬ এ থাকার অর্থ স্পষ্ট হবে।


হাঁটুপানির জলদস্যু

শিক্ষানবিস এর ছবি

আমিও সেটাই বলছি। সবকিছুর উর্ধ্বে কিছু নেই তা ডকিন্সও স্পষ্ট করে বলছেন না। নাস্তিকতা মানে, একটা কিছু থাকতেই হবে এমন চিন্তাকে অস্বীকার করা, একটা কিছু নেই সেটা বলা নয়।
আর বিশ্বাসের ব্যাপারে বলছি। আমি বলিনি যে পুরনো বিশ্বাস আঁকড়ে ধরে থাকতে হবে। অবশ্যই যুক্তি দিয়ে চলতে পারে মানুষ, বিশ্বাস দিয়ে নয়। আমি আগের বিশ্বাসকে অস্বীকার করা যাবে না এমনটি বলিনি। আমি বলছি, বিশ্বাস নামে যে একটা কিছু আছে সেটা অস্বীকার করা যাবে না।

বজলুর রহমান এর ছবি

ডকিন্স নিজেকে ১ থেকে ৭ এর স্কেলে ৬ তে ফেলে স্বীকার করলেন তিনি ৮৪% নাস্তিক। পরিসংখ্যানবিদ্যায় ৯৫% এর সীমারেখা না পেরুলে হাইপোথিসিস অপ্রমাণিত ধরা হয়। সুতরাং এতটুকু (অ)বিশ্বাস নিয়ে লাফালাফি না করাই ভাল।
ডকিন্সের কোন বই আমি খুলে দেখি নি, গাঁটের পয়সা দিয়ে কেনার প্রশ্নই ওঠে না। অন্যদের আলোচনা দেখে মনে হয়, দশ বছর বয়সে যেসব বিষয় উদার পরিবারে আমার কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল, তিনি সেগুলোই একটু ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে ভাপা পিঠা বানিয়ে বিক্রি করে খান।

যাদেরকে ট্রাডিশনালী নাস্তিক বলা হচ্ছে তারা কেবল মাত্র আরো একটা ধর্মের ব্যাপারে অনাস্তা পোষন করছে। অকাট্য যুক্তি।

এ ব্যাপারে আমার কিছু আপত্তি আছে। এদের বিধর্মী বলা হয়, নাস্তিক নয়। একজন মুসলিম ছেলে খৃস্টান বা ইহুদী মেয়েকে বিয়ে করতে পারে, নাস্তিককে পারে না।

ইশ্বর নিয়ে আস্তিক বা নাস্তিক কোন গোষ্ঠির আলোচনাই আমার কাছে সাধারনত ভালো লাগে না। এমন কোন স্বত্তা থাকলেও তার অনুভুতি, চিন্তা, মূল্যবোধ মানুষের মত হওয়ার সম্ভাবনা কম। যখন দেখি বদমায়েশ ব্যক্তি বা গোষ্ঠি বিনা শাস্তিতে দাপট দেখিয়ে বেড়াচ্ছে, পুরস্কৃত হচ্ছে, তখন তাকে ভালো মানুষের মত নীতিবান মনে হয় না। যখন পিতার কাঁধে সন্তানের লাশ দেখার দৃশ্যটি কল্পনা করি ( এটি আমার পরিবারে আমাকে দেখতে হয়েছে শিশু বয়সে), আমার কাছে তাকে মোটেই পরম করুণাময় ভাবতে পারি না। ধর্মীয় বিধাতার রূপকল্প মানুষ নিজের মানদন্ডে তৈরী করেছে।

বিধাতা বা পরলোক থাকুক বা নাই থাকুক, আমাদের ভালো হতে আপত্তি কি? এতে একটা আনন্দ আছে, সেটাও বিবর্তনের ফল।

হিমু এর ছবি

আমার মনে হয়, ডকিন্স অনুদার পরিবারে বড় হওয়া অনেকের জন্যেই হয়তো গড ডিলিউশন বইটা লিখেছেন। বইয়ের প্রথম পাতা পড়লেই আপনার কাছে হয়তো ব্যাপারটা স্পষ্ট হতো।

আর কোন স্কেলে নিজের অবস্থান দেখানোর সাথে পরিসংখ্যানগত অনুমান প্রমাণের সম্পর্কটা যদি একটু স্পষ্ট করে ব্যাখ্যা করতেন তাহলে উপকৃত হতাম। আমার কাছে আপনার এই তুলনাটি পরিসংখ্যানের ভুল প্রয়োগের মতো মনে হয়েছে। আমরা হাইপোথিসিস টেস্ট করি কোন নমুনায় প্রাপ্ত তথ্যের সাথে মূল পপুলেশনের কিছু তথ্য তুলনা করে। নিজেকে একটা স্কেলের কোথাও দাঁড় করিয়ে ডকিন্স কি আদৌ কোন হাইপোথিসিস প্রমাণের চেষ্টা করেছেন? আপনার বক্তব্য কি পরিসংখ্যানের দৃষ্টিকোণ থেকে একেবারেই অগ্রহণযোগ্য নয়?

আপনার এ ধরনের যুক্তি প্রয়োগ কিন্তু প্রমাণ করে, ডকিন্সবিরোধী শিবিরে ঠিক কী ধরনের "বৈজ্ঞানিক" যুক্তি দাঁড় করানো হয়।


হাঁটুপানির জলদস্যু

বজলুর রহমান এর ছবি

আপনার কথা সত্যি। ভাবি নি কেউ আমার কৌতুকটি এত সিরিয়াসলি নেবেন। ডকিন্স নিজেকে কিসের ভিত্তিতে ৬ এ ফেলেছেন - আমার কাছে পরিষ্কার নয়। এটা লিনিয়ার স্কেল , না গাউসিয়ান , লগারিদ্মিক, না অন্য কিছু ? ব্যাপারটা ফাজি(ল) মনে হলো, তাই আমিও সেই ধরনের ধূসর যুক্তিতে বলেছি। স্যাম্পল সাইজ় এক-ও হতে পারে (অর্থাৎ ডকিন্স নিজেই) । নিজেকে তিনি যদি অন্যদের চেয়ে খুব বেশী স্বতন্ত্র না ভাবেন [ অর্থাৎ পরিসংখ্যান তত্বের সচরাচর ব্যবহৃত ক্রাইটেরিয়ন ৯৫% এর চেয়ে আলাদা না ভাবেন] তাহলে আর তাঁর কাছে নতুন কি জানার আছে; তাঁর সাথে বাকি সবার তেমন পার্থক্য নেই। অনেকটা এটাই ছিল আমার ফাজি(লামো) যুক্তি।
নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন, সিরিয়াস ব্যাপারে আমি পরিসংখ্যান সঠিক ভাবেই ব্যবহার করি।
আমি নিজেকে ডকিন্স বিরোধী বলি নি, শুধু একটু হাই তুলেছি। অনেকে বাংলাদেশে নিজের (মুক্তিযুদ্ধের সাথে সম্পর্কহীণ বিষয়ে) বইএর কাটতি বাড়াবার জন্য যেমন খুব বেশি বেশি নিজেকে মুক্তি্যুদ্ধের আদর্শের প্রধান ধারক ও বাহক হিসাবে প্রমাণ করতে এখানে সেখানে প্রায় সর্বস্বীকৃত অনুভূতির পুনরাবৃত্তি করে বিস্ময়কর জনপ্রিয়তা পেয়ে যান, তাঁদের কান্ড-কারখানা দেখে যেমন হাসি পায়, এখানেও আমার দৃষ্টিতে বাণিজ্যই আসল লক্ষ্য।

হিমু এর ছবি

ডকিন্সের কোন বই আমি খুলে দেখি নি, গাঁটের পয়সা দিয়ে কেনার প্রশ্নই ওঠে না। অন্যদের আলোচনা দেখে মনে হয়, দশ বছর বয়সে যেসব বিষয় উদার পরিবারে আমার কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল, তিনি সেগুলোই একটু ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে ভাপা পিঠা বানিয়ে বিক্রি করে খান।

আপনি ডকিন্সের কোন বই খুলে দেখলেন না, গাঁটের পয়সা খরচ করে কিনলেন না, শুধু অন্যের মুখে শুনে তাকে ভাঁপাপিঠাঅলা বলে মনে করে নিলেন। আমি কি আপনার মন্তব্যের এই অংশকেও রসিকতা হিসেবে ধরে নেবো?

গড ডিলিউশন পড়ে আমার খুব একটা ভালো লাগেনি। ধর্মীয় নেতাদের মতো একই তীব্রতা নিয়ে সেখানে কথা বলতে শুনেছি নম্রভাষী ডকিন্সকে। কিন্তু আপনার মন্তব্য পড়ে অনুভব করলাম, এই তীব্র ভাষার কারণ কী। আপনার চেয়েও শতগুণে কটু ভাষায় "রসিকতা" করা হয়েছে তাকে নিয়ে। এখন সেই একই কাজ যখন তিনি করা শুরু করেছেন, তাকে আমরা ভুয়া বলে উড়িয়ে দিচ্ছি। ধর্মের কান্ডারীরা কয়েক হাজার বছর ধরে অবিশ্বাসীদের সব রকমের গালি দিয়ে তাদের পিটিয়ে-পুড়িয়ে-খুঁচিয়ে মেরেছে, আর একজন ডকিন্স মাঝখানে দাঁড়িয়ে উঠে সেইসব লোকজনের প্রবর্তন করা ধর্ম নিয়ে অসহিষ্ণু হয়ে পড়ায় আমরাও তাকে মোল্লা বলে উড়িয়ে দিচ্ছি। আমরা কোটি কোটি মোল্লার মাঝখানে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মরবো, কিন্তু কোন ডকিন্সকে সহ্য করবো না।


হাঁটুপানির জলদস্যু

দিগন্ত এর ছবি

আমি হিমুর সাথে একমত। একটু প্রস্ঙ্গ জুড়ে দেওয়া যাক বিষয়টার সাথে। ডকিন্সের প্রথম বই দ্য সেলফিস জিন - এ কোথাও নাস্তিকতার প্রচার নেই, উনি তখনও পূর্ণ একজন বিজ্ঞানী ছিলেন যিনি ব্যবহারিক জিনতত্ত্ব নিয়ে গবেষণা করতেন। ওনার লেখা এই বইটাই সবথেকে জনপ্রিয় হয়েছে পাঠকদের কাছে। কিন্তু এই বইতে তিনি মানুষের আচার-আচরণ সহ সমাজগঠনের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেওয়া শুরু করলে মৌলবাদ ধার্মিকরা তাকে আক্রমণ করে। তারই ফলশ্রুতিতে ধীরে ধীরে ডকিন্সের লেখার বিষয় ঘুরে ঈশ্বরের বা নাস্তিকতার দিকে যায়। গড ডিলিউশন হল তার প্রথম বই যেটা পুরো প্রায় নাস্তিকতাবাদের প্রচার - এই বই এসেছে প্রথম বইয়ের ৩০+ বছর পরে। এর আগের বইগুলোতে উনি মূলত বিজ্ঞান নিয়েই আলোচনা করে গেছেন - এক্সটেন্ডেড ফেনোটাইপ, আনওয়েভিং দ্য রেনবো, মাউন্ট ইম্প্রোবাবল ইত্যাদি অধিকাংশ বইই বিজ্ঞনকে সহজ করে বোঝানোর জন্য লেখা। উনি যদি নাস্তিকতার প্রচারই করতে চান তাহলে কেন সরাসরি নাস্তিকতার বই থেকেই শুরু করেননি?প্রশ্নগুলো সহজ আর উত্তরটাও জানা।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

আমার নিজের এই লেখাটা পড়ে আমারই খুব হাসি পাচ্ছে। ডকিন্সের বিরুদ্ধে অনেকেই এই অভিযোগ করে। এই নিয়ে তার গড ডিলিউশনের মুখবন্ধে আলোচনাও আছে। আমি নিজে কিভাবে ইভলভ হয়েছি বুঝতে পারছি।

দুর্দান্ত এর ছবি

এই লেখা পড়ার পরে আমি গড ডিলিউশান কিনেছিলাম, পড়া হয়নি এখনো।

অরফিয়াস এর ছবি

গড ডিলিউশন পড়ছি, প্রায় শেষের দিকে, কিন্তু আমার কাছে ডকিন্সকে উগ্র নাস্তিক মনে হয়নি, অজ্ঞানতার যে অন্ধকারে ডুবে আছে পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ এবং ধর্ম যেভাবে শিকড় বিস্তার করেছে, এখানে আমি নরম ভাষায় যত্ন করে যতই কথা বলি, যতই যুক্তি দিয়ে বোঝাই, অন্ধ-বিশ্বাসীদের কোনো পরিবর্তন হবে বলে মনে হয়না, তবে সত্য কটু-তীব্র হলেও লাভজনক, ডকিন্সের ঝাঁঝালো কথায় তাই আমার সমস্যা নেই। অন্তত হাজারো জাকির নায়েকের মাঝে একজন ডকিন্স হলেও দোষে-গুনে মিশিয়ে মানবিক গুনাবলী ছাড়িয়ে যাওয়া সম্ভব তো নয়।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।