লাঞ্ছনা আর বঞ্চনার গল্প
মৌটুসী বুয়েট থেকে মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে বেরিয়েছে কিছুদিন হলো। তার পরীক্ষার ফলাফল খুব ভালো। আমেরিকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার সুযোগ হয়ে গেলেও ভিসা সংক্রান্ত জটিলতায় পরের সেমিস্টারে যেতে হচ্ছে তাকে। প্রায় ছয় মাসের এই সময়টুকুতে একটা চাকুরী করতে চাচ্ছিল সে।
মৌটুসীর আন্ডারগ্র্যাজুয়েট গবেষণার বিষয় ছিলো ডিজেল ইঞ্জিনে ঘনীভূত প্রাকৃতিক গ্যাস প্রতিস্থাপন করে কর্মক্ষমতা যাচাই করা। এই গবেষণাটি সে যথেষ্ট আনন্দ এবং আগ্রহের সাথে করেছে। তথ্যের জন্য দিনরাত লাইব্রেরিতে পড়ে থাকা, দিনের পর দিন গবেষণাগারে পড়ে থাকা, গবেষণার যন্ত্রাংশ তৈরির জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দৌড়াদৌড়ি করা, সবই সে করেছে নিজে নিজে। কখনো তার সাথে সাহায্য করেছে একই গবেষণার সঙ্গী ছেলেটি। মৌটুসীর তাই ইচ্ছা কোনো গাড়ির সার্ভিস সেন্টারে কাজ করা, যেখানে সে তার অর্জিত জ্ঞান হাতেকলমে কাজে লাগাতে পারবে।
শেষমেষ ঢাকায় একটি অভিজাত গাড়ির সার্ভিস সেন্টারে তার চাকুরী হয়। চাকুরীর সাক্ষাৎকারে তাকে বলা হয়, ‘আপনার শ্বশুরবাড়ি থেকে কাজ করতে দিবে?’ মৌটুসী সদ্য বিয়ে করেছে পাশ করার পর পর। শ্বশুরবাড়ির সম্মতি নিয়েই কাজ খুঁজছিল সে। সেটা জানায় তাদের।
মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে চাকুরী হলেও তাকে বলা হয়, ‘আপা, আপনি গাড়ি রিসিভ করার ডেস্কে বসেন’। মৌটুসী ঘুরে ফিরে পিছনের শপে যায়, কাজ শিখতে চায়। কিন্তু তাকে বারবার বলা হয় ফ্রন্ট ডেস্কে বসতে। তিক্ত মুখে মৌটুসী আবিষ্কার করে তাকে আসলে চেহারা দেখাতে ফ্রন্ট ডেস্কে বসিয়ে রাখা হয়েছে।
মৌটুসীদের সাথে সহপাঠিনী ছিলো ১২ জন। মোট প্রায় ১৪০ জন ছাত্রের মধ্যে ১২ জন মেয়ে। শতকরা ৮.৫ ভাগের মতো। মৌটুসী যখন সার্ভিস সেন্টারের তিক্ত অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে তখন বাকিরাও চাকরীর ইন্টারভিউ দিচ্ছে বিভিন্ন জায়গায়।
একবার এক প্রতিষ্ঠানে ইন্টারভিউয়ের ডাক এলো মিশার। সেখানে গিয়ে সে দেখে তার সহপাঠীদের প্রায় সবাই সেখানে এসেছে। শুধু মেয়েরা। অর্থাৎ সেদিন সাক্ষাৎকারের জন্য শুধু মেয়ে প্রার্থীদের ডাকা হয়েছে। মিশা ডাক পড়লে রুমে যেতেই তাকে কিছু সহজ প্রশ্ন, যার উত্তর একটা স্কুল পড়ুয়াও দিতে পারবে, দিয়ে শুরু করে সাক্ষাৎকর্তা। যেমন, ‘সিএনজি কী?’ তারপর শুরু করে খাজুরে আলাপ, ‘বাড়ি কোথায়?’, ‘বাবা কী করে?’ একপর্যায়ে তারা স্বীকার করে যে এই পোস্টে মেয়েদের নেয়া হবে না।
প্রথমত, আগে থেকেই তারা ঠিক করে রেখেছে এই পোস্টে ‘মেয়ে’ নেবে না। দ্বিতীয়ত, তারপরও মেয়ে প্রার্থীদের ডেকে বিয়ের সাক্ষাৎকারের মতো এরকম নাজেহাল করা হয়েছে।
ছন্দার ঘটনা আরো ভয়াবহ। ঢাকা ইউনিভার্সিটি থেকে পাস করার পর বিভিন্ন কারণে বেশ কিছুদিন পর চাকুরীক্ষেত্রে ঢোকে সে। একটি নামকরা ব্যাংকে ভালো একটি চাকুরী পেয়েও ছন্দা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারে না। এক সহকর্মী শুরু করে তাকে হেনস্থা করা। দিনরাত তার সাথে খাতির জমানোর চেষ্টা করে। ছন্দা বিবাহিত এবং তার একটা ফুটফুটে মেয়েও আছে। এসব জানা সত্ত্বেও এক সময় তাকে প্রেমের প্রস্তাব দেয় লোকটা। তার কুপ্রস্তাবে রাজি হয়নি দেখে শুরু করে মানসিক অত্যাচার, বাড়িয়ে দেয় কাজের চাপ এবং বিভিন্নভাবে হেনস্থা করতে থাকে। বিভিন্ন ঝামেলা বাঁধিয়ে প্রমোশন আটকে রাখে সঠিক সময়ের চেয়ে দু’বছর বেশি। লোকটির ক্ষতির কথা বিবেচনা করে অভিযোগ জানায়নি এতদিন। এবারে ছন্দা বাধ্য হলো অভিযোগ জানাতে। ভাগ্য সুপ্রসন্ন থাকায় লোকটিকে ছাঁটাই করে প্রতিষ্ঠানটি।
এ তো গেলো উচ্চশিক্ষিত ইউনিভার্সিটি পাশ মেয়েদের কথা। স্বল্পশিক্ষিত বা অশিক্ষিত মেয়ে শ্রমিকদের আরো অনেকগুণ লাঞ্ছনার মধ্যে দিয়ে কাজ করতে হয়। পোশাকশিল্পে রিফাতের ইন্টার্নশিপের অভিজ্ঞতা [১] থেকে জানা গেল, অনিয়ন্ত্রিত পোশাক কারখানায় নারীরা কিভাবে লাঞ্ছিত হন সেখানে। শিশু শ্রম আইন থাকা সত্ত্বেও শিশুদের কাজে লাগানো হয় নিয়মিত। ম্যাটার্নিটির ছুটি নিতে না পেরে নারী শ্রমিক বাচ্চা প্রসব করেন ভাঙা বিমের ফাঁকে। প্রচণ্ড শব্দে ঘোরা সেলাই মেশিন আর গরমের মধ্যে নতমূখে কাজ করে যায় এই নারী শ্রমিকেরা। আর দেখতে একটু নজরকাড়া হলে নানারকম যৌন নির্যাতন তো আছেই।
আসলে এই গল্পগুলো লিখে শেষ করা যাবে না। সচলায়তনের নারী সপ্তাহ নিয়ে প্রকাশিত লেখাগুলো [২] জ্বলজ্যান্ত দলিল এই বিষয়ে।
কর্মক্ষেত্রে নারীর এই অভিজ্ঞতাগুলো পড়লে দুটো ভেক্টর চোখে পড়ে: লাঞ্ছনা আর বৈষম্য। বিষয়দুটো নিয়ে আরো একটু আলোচনা করা যাক।
কর্মক্ষেত্রে নারী লাঞ্ছনা (সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট)
ইউনাইটেড নেশনসের সংজ্ঞা [৩] অনুযায়ী, যৌন হয়রানি হচ্ছে, অযাচিত যৌন ইচ্ছা প্রদর্শন, কিংবা যৌন কার্য সম্পাদনের অনুরোধ, কিংবা যৌনতা সংক্রান্ত মৌখিক বা শারীরিক কর্ম যখন:
১) এই কাজের বদলে চাকরি প্রদানের শর্ত জুড়ে দেয়া হয়
২) এই কাজের বদলে চাকরিতে প্রমোশন বা সুযোগ সুবিধার শর্ত জুড়ে দেয়া হয়
৩) এই কাজে রাজি না হলে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে কাজে বাধার সৃষ্টি করা
এর পরে একটি লম্বা তালিকা দেয়া হয়েছে, কী কী কাজ সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্টের মধ্যে পড়ে। এগুলোকে চারভাগে ভাগ করা যায়।
শারীরিক: ধর্ষণ বা ধর্ষনের চেষ্টা, ছোঁয়া, গায়ের উপর চলে আসা, কোনঠাসা করা, চিমটি কাটা, ঘাড়ে মাসাজ করা, কাপড়, চুল বা শরীর ছোঁয়া, জড়িয়ে ধরা, চুমু দেয়া, শরীরে চাপড় দেয়া, টোকা দেয়া, গায়ে ঘেঁষে দাঁড়ানো।
মৌখিক: যৌন কার্য সম্পাদনের জন্য চাপ প্রয়োগ, আপাত মধুর নাম যেমন, বেইব, সোনা, ময়না, জান্টু ইত্যাদি ডাকা, শিস দেয়া বা অদ্ভুত শব্দ করা, শরীর সর্ম্পকে বা অযথাই যৌন বিষয়ক মন্তব্য করা, কাজের প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে যৌন প্রসঙ্গে নিয়ে যাওয়া, যৌন বিষয়ক কৌতুক বা গল্প, যৌন অভিজ্ঞতা বা আকাঙ্ক্ষা নিয়ে প্রশ্ন, যৌন বা সামাজিক জীবন নিয়ে অযাচিত প্রশ্ন, চুমুর শব্দ, কুকুরের মতো ঘেউ ঘেউ করা, জামা কাপড় সর্ম্পকে যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করা, কারো যৌন জীবন সর্ম্পকে মিথ্যা এবং বানোয়াট কথা ছড়ানো।
অন্যান্য: কাউকে আপাদমস্তক দেখা, হা করে তাকিয়ে থাকা, পথ রোধ করা, পিছু নেয়া, উপহার দেয়া, চোখের ইশারা যৌন ইঙ্গিত দেয়া, হাত বা শরীর ব্যবহার করে যৌন অঙ্গভঙ্গী করা, চোখ টেপা, চুমু ছোঁড়া বা জিহ্বা চাটা।
ইলেকট্রনিক: তাছাড়া ইদানীং ইন্টারনেটের যুগে ফোনে মিস কল দেয়া, টেক্সট বা ভয়েস মেসেজে কুৎসিত ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য বা ছবি প্রেরণ করা, ফেইসবুকে ফালতু কথা বলা, ইমেইল বা মেসেজ যৌন ইশারা মূলক লিংক বা কৌতুক পাঠানো, ভিডিও ধারণ, পর্ন ভিডিও প্রদশর্নের চেষ্টা, ইত্যাদি আছে।
ছবি ১: নারী লাঞ্ছনার ধরন
ছন্দার ঘটনা তো উপরে বলাই হয়েছে। তাছাড়াও সচলায়তনে নারী সপ্তাহ উপলক্ষ্যে প্রকাশিত লেখাগুলোতেও এই ধরনের লাঞ্ছনার আরো উদাহরণ পাওয়া যায়। স্বপ্নহারার লেখায় [৪] জানতে পারি শাওন নামের মেধাবী মেয়েটি নিজের যোগ্যতায় প্রোমোশন পেয়েও কীভাবে সহকর্মীদের মৌখিক লাঞ্ছনার শিকার হয়। দস্যি নামের অতিথি লেখক জানান [৫], কীভাবে তার ভিডিও ধারন করে অফিসের সবাই সেল ফোনের করে দেখেছে, অথচ অভিযোগে কিছুই হয়নি।
আসলে বাংলাদেশের কর্মক্ষেত্রে ছোট বড় সেস্কুয়াল হ্যারাসমেন্ট এত বেশি যে সেটা রীতিমতো লজ্জাজনক। কিন্তু সমাধানের উপায় কী? আমার মনে হয়েছে এর সমাধানে দুটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত প্রয়োজন সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট চিহ্নিতকরণ ও প্রতিরোধ বিষয়ে প্রশিক্ষণ, সেই সাথে কঠিন শাস্তি প্রয়োগ। দ্বিতীয়ত ঊর্ধ্বতন পদে আরো নারী নিয়োগ।
সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট ট্রেইনিং নিয়ে ভারতের উদাহরণ এখানে প্রযোজ্য। আদ্যিকালের বদ্দিবুড়ি নামে একজন ফেইসবুক বন্ধু জানালেন: “ভারতের অর্গানাইজড সেক্টরে 'বিশাখা গাইডলাইন' এখন খুব কড়াভাবে ফলো করা হয়। আমি আমাদের কোম্পানির অ্যান্টি সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট সেলে আছি, আমাদের কোম্পানিতে মোটামুটি প্রমাণ হলে দুই ঘন্টার মধ্যে চাকরি যায়। ২০১১ পর্যন্ত বেশ ফ্রিকোয়েন্ট ছিল এই ধরনের অভিযোগ মাসে দুটো তিনটে [হ্যারাসমেন্টের ঘটনা] কোনো না কোনো ব্র্যাঞ্চে থাকতই। এখন সেটা কমে বছরে দুটোতে এসে দাঁড়িয়েছে। এ বছর এখন পর্যন্ত একটাও [হ্যারাসমেন্টের ঘটনা] আসে নি।
এটা সম্ভব হয়েছে প্রত্যেক কর্মীকে প্রত্যেক বছর অ্যান্টি সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্টের কোর্স করে পরীক্ষায় পাশ করতে হয়, আর ঐ তৎক্ষণাৎ চাকরি যাবার ঘটনায়।
কিন্তু বড়সড় সংবাদপত্র বা ছোটখাট কোম্পানিগুলোতে খুব খারাপ অবস্থা।”
উচ্চ পদে আরো নারী নিয়োগ বিষয়ে পরে আসছি। আগে নারী বৈষম্যের দিকটা জেনে নেয়া যাক।
কর্মক্ষেত্রে নারী বৈষম্য (গ্লাস সিলিং এবং অন্যান্য)
আমাদের মাননীয় প্রধান মন্ত্রী একজন নারী। তাছাড়া সংসদে ৩৫০টি আসনের মধ্যে নারীদের জন্য ৫০টি আসন নির্ধারিত। বাংলাদেশে সংসদের স্পিকার একজন নারী। তাছাড়া আমাদের প্রাক্তন বিরোধী দলের প্রধানও একজন নারী। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান হিসেবে আলাদা হবার পর থেকেই বাংলাদেশে নারীর ভোটের সমান অধিকার রয়েছে। পৃথিবীর ১৯৫টি স্বাধীন রাষ্ট্রের মধ্যে মাত্র ১৭টির রাষ্ট্রপ্রধান একজন নারী। বিশ্বের সমস্ত সংসদের মাত্র ২০ভাগ সদস্য নারী। সে তুলনায় তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল রাষ্ট্র বাংলাদেশ একটি উজ্জ্বল ব্যতিক্রম।
কিন্তু বাংলাদেশের নারীদের সমস্যা কি সমাধান হয়ে গেছে? আমার লেখার শিরোনামে বলেছি ঊর্ধ্বতন পদে আরো নারী এই সমস্যা সমাধানে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। কিন্তু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, প্রাক্তন বিরোধীদলের প্রধান, স্পিকার এবং সংসদের একটি বিশাল অংশ নারী হওয়া সত্ত্বেও আমাদের নারীদের সমস্যা থেকেই গেছে।
বাংলাদেশে ১৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সিদের মধ্যে প্রতি ১০০ পুরুষে ১১১ জন নারী। অন্যভাবে দেখলে, প্রতি ১০০ জন ১৫-৬৪ বছর বয়সীদের মধ্যে ৫৩ জন নারী এবং ৪৭ জন পুরুষ। অর্থাৎ কর্মক্ষম জনশক্তির একটি বৃহত্তর অংশ নারী [৬]। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী সেকেন্ডারি পড়াশোনায় [৭] এই পার্থক্য সঠিকভাবে পরিলক্ষিত হয়। এক্ষেত্রে প্রতি ১০০ জন ছাত্রের বিপরীতে ছাত্রী ১১৪ জন, যেটা পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি! অথচ টারশিয়ারি অর্থাৎ ভোকেশনাল বা বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশোনার ক্ষেত্রে সহসাই এই হার কমে প্রতি ১০০ ছাত্রের বিপরীতে ৭২ জন ছাত্রী হয়ে যায় [৮]। দুঃখজনক হলো পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় এটি অনেক কম। নিচের গ্রাফ দুটোতে এই বৈপরীত্য দেখানো হলো।
ছবি ২: সেকেন্ডারি পড়াশোনায় নারী বনাম পুরুষ % [৭]
ছবি ৩: টারশিয়ারি বা ইউনিভার্সিটি পড়াশোনায় নারী বনাম পুরুষ % [৮]
ভাগ্যিস ছাত্রীরা কলেজ পাশের পর পড়তে আসে না, নাহলে হয়ত আমার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সুযোগই ঘটত না। কথাটা সার্কাজম মনে হলেও আসলে খুব সত্য। আমাদের সাথে মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ত ১২৯ জন ছাত্রের সাথে ছাত্রী ছিলো ১১ জন। অথচ জনসংখ্যার হিসেবে ছেলেদের তুলনায় বেশি পড়ার কথা মেয়েদের।
ঠিক একইভাবে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে যেমন নারীদের অনুপস্থিতি প্রকটভাবে চোখে পড়ে, বিভিন্ন সংস্থার উঁচু কার্যনিবার্হী পরিষদের নারীদের অনুপস্থিতি তেমনভাবেই পীড়াদায়ক। বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী, প্রাক্তন বিরোধীদলীয় নেত্রী, সংসদের স্পিকার নারী হওয়া সত্ত্বেও মন্ত্রী পরিষদের ৫২ জনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীসহ মাত্র ৪ জন নারী (প্রায় ৭.৫%) [৯]। Women in Executive Power বইটিতে [১০] আলোচনা করা হয়েছে যে, পারিবারিক সম্পৃক্ততার ভিত্তিতে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নেতৃদ্বয় ক্ষমতায় এলেও তারা নারীদের ক্ষমতাসীন পদে অধিভুক্ত করতে পারেননি। কেবল নামমাত্র কয়েকটি পদে নারীদের অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে, যেগুলোর এক্সিউটিভ ক্ষমতা বইটির ভাষায় শুধু মাত্র ‘সফট পাওয়ার’ এর মধ্যে সীমাবদ্ধ।
একই চিত্র দেখা যাবে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধানের ক্ষেত্রে। যদিও বাংলাদেশের নারী এক্সিকিউটিভদের সংখ্যা নিয়ে তথ্য পাওয়া যায়নি, আমাদের সবার অভিজ্ঞতা থেকে দ্বিমত ছাড়া সবাই বলতে পারেন বাংলাদেশে নারী এক্সিকিউটিভ অত্যন্ত কম এবং তাদের ক্ষমতা সাধারণত ‘সফট পাওয়ারের’ মধ্যে সীমিত থাকে। কাছাকাছি ধরণের একটি তথ্য পাওয়া যায় বিশ্বব্যঙ্কের ওয়েবসাইটে, যেখানে বলা হয় নারীদের মাত্র ৫৭% বিভিন্ন কাজে জড়িত [১১]। তুলনামূলকভাবে, পুরুষদের ৮৪% ভাগই বিভিন্ন কাজে জড়িত [১২]।
পশ্চিমা বিশ্বে এই সমস্যাটিকে একটি অদৃশ্য কাচের ছাদ বা গ্লাস সিলিং বলা হয়। অর্থাৎ নারীরা কর্পোরেট সিঁড়ির একটা পর্যায় পর্যন্ত ঠিকমতো উঠতে পারলে একটা পর্যায়ে এসে একটা অদৃশ্য ছাদে যেন আটকে যায়। তাকে আর উপরে উঠতে দেয়া হয় না।
এই বিপুলসংখ্যক কর্মজীবী নারীদেরও ব্যবহার করা হয় সস্তা শ্রমিক হিসেবে। আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংস্থার একটি রিপোর্টে [১৩] বলা হয় যে, তাদের সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী একজন নারী কর্মজীবী পুরুষের তুলনায় ঘন্টাপ্রতি শতকরা ২১ ভাগ কম আয় করেন। অর্থাৎ একটি কাজের জন্য পুরুষ ১০০ টাকা আয় করলে একই যোগ্যতা নিয়ে নারী আয় করেন ৭৯ টাকা। বিশেষ করে হোটল এবং রেস্টুরেন্টে এবং কনস্ট্রাকশন সেক্টরে কর্মরত নারীরা পুরুষদের থেকে শতকরা ৩০ ভাগেরও কম আয় করেন।
বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষার তুলনামূলক চিত্র দেখলে দেখা যায় ছাত্ররা, ছাত্রীদের তুলনায় বেশী ফেইল করে (রিপিটেশন)। [১৪, ১৫] অথচ কাজের ক্ষেত্রে তাদের মনে করা হয় পুরুষদের তুলনায় তারা যোগ্য নয়। এই ধারণা আমাদের সমাজের এতটাই গভীরে যে মেয়েরা নিজেরাও সেটা বিশ্বাস করে।
আমার সাথে এক সহপাঠিনী মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় স্ট্যান্ড করার পর আমাদের সাথে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে এসেছে। প্রথম সেমিস্টারের গণিত পরীক্ষার দিন সে ভীষণ নার্ভাস তার পড়া ঠিক হয়নি বলে। আমি তেমন পড়িনি পরীক্ষার জন্য অথচ তেমন কোনো দুশ্চিন্তা নেই আমার মাঝে। তার মতো ভীষণ ভালো ছাত্রী পরীক্ষা শুরু হবার কিছু আগে আমার কাছে একটি বিষয় আলোচনার জন্য আসে, আমি সে বিষয়ে কিছু জানি না ঠিকই কিন্তু ছোট্ট একটা অংশ উল্লেখ করে বললাম, জ্যাকোবিয়ান পড়েছ? সে আরো নার্ভাস হয়ে গেল। পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর দেখা গেল সে ঠিকই সে বিষয়ে সর্বোচ্চ গ্রেডটি পেয়েছে। নারী হবার কারণে তার মধ্যে একটা নিজেকে ছোট ভাবার একটা প্রবনতা দেখা যায়। এমনকি এই লেখার অংশটি তাকে দেখিয়ে প্রকাশের অনুমতি চাইতে গেলেও সে নিজেকে ডিফেন্ড করছে এই বলে যে, ‘আমি সত্যিই অংকে ভালো না। মাধ্যমিকে কোনোমতে ৯০ এবং উচ্চ মাধ্যমিকে কোনোমতে লেটার পেয়েছিলাম।’ এতদিন পরেও সে নিজেকে ছোট ভাবার আভ্যন্তরীন অনুভূতি থেকে বেরোতে পারেনি।
এছাড়া আমাদের কাজের জায়গাগুলোতে নারীদের জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা হয় না। নারীদের যাতায়াত করতে হয় পুরুষদের সাথে যু্দ্ধ করে। ব্যবহার করতে হয় অস্বাস্থ্যকর অপ্রতুল বাথরুম। আমার এক বন্ধু, লাজিনা জানায়, “একটা বিষয় যেটার আমি সম্মুখীন হয়েছি, বাংলাদেশ এ চাকুরিজীবী মেয়েদের থাকার সমস্যা। মেয়েরা যদি অন্য কোনো শহরে চাকরি পায়, যেখানে তার পরিবারের কেউ অথবা কাছের কোনো আত্মীয় থাকে না, সেখানে থাকাটা একটা বড় সমস্যা হয়ে যায়। এইটা হয়ত চাকরি ক্ষেত্রের বৈষম্য নয়, কিন্তু এই সামাজিক বৈষম্য এর কারণে বাংলাদেশে অনেক মেয়ে অনেক ভালো চাকরি তে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও আবেদন জমা দিতে পারে না।”
এই আলোচনাসাপেক্ষে, চাকুরীক্ষেত্রে বৈষম্যগুলো নিচের ছবির মতো ভাগ করা যায়।
ছবি ৪: নারী বৈষম্যের ধরন
তাহলে কর্মক্ষেত্রে নারী অবদমনের পুরো চিত্রটি দাঁড়ায় এরকম।
ছবি ৫: নারী অবদমনের ধরন
ঊর্ধ্বতন পদে আরো নারী
লেখার এই অংশে এসে আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি যে আমি একজন পুরুষ। নারীদের যে সমস্ত বাধা পেরুতে হয় আমাকে তার সিকিভাগও পেরুতে হয়নি। তথ্য এবং সূত্র ব্যবহার করে একটি সমস্যার প্রকৃতি বোঝা যায় কিন্তু এই সমস্যাটির সমাধান করতে হলে একজন নারী হিসেবে এই বাধা পার হবার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। আমি তাই শরণাপন্ন হচ্ছি ফেইসবুক অপারেশনসের প্রধান (সিওও) শ্যারল স্যান্ডবার্গের লেখা “লিন ইন” নামের বইটার প্রতি [১৬]। বইটিতে এবিষয়ে প্রচুর তথ্যের সন্নিবেশ আছে। আমার ক্ষুদ্র লেখার ক্ষুদ্রে একটি অংশে বইটার মূল শিক্ষাগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করব শুধু।
যেদিন পৃথিবীতে সত্যি সত্যি সম অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে সেদিন দেশ ও প্রতিষ্ঠানগুলোর সব পর্যায়ে নারী অর্ধেকটা জুড়ে কাজ করবে এবং পুরুষ, সহধর্মিনীর সাথে হাত মিলিয়ে ঘরের কাজগুলোর অর্ধেকটা করে দেবে, সেই দিন হবে পৃথিবীর জন্য একটি গৌরবময় দিন। অর্থনীতির সূত্র এবং এ সংক্রান্ত সমস্ত গবেষণায় জানা গেছে যে যদি আমরা পুরুষ ছাড়াও নারী জনগোষ্ঠির বুদ্ধি এবং শক্তি কাজে লাগাতে পারি তাহলে সামগ্রিকভাবে আমাদের কার্যদক্ষতা বৃদ্ধি পাবে।
নারীদের নেতৃত্ব দিয়ে লাইবেরিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান হঠানোর জন্য নোবেল পুরষ্কার প্রাপ্ত নেত্রী এবং লেখিকা লেইমাহ জিবোউইকে যখন জিজ্ঞেস করা হয় নারীরা কীভাবে এগিয়ে আসতে পারে, তখন তিনি এককথায় উত্তর দেন, “চাই ঊর্ধ্বতন পদে আরো নারী”, More women in power। কিন্তু কীভাবে?
লক্ষণীয় যে, আমাদের এবং পার্শ্ববর্তী দেশে নারীর ক্ষমতায়ন বলে কাছাকাছি ধরনের একটি বিষয় চালু আছে। নারীর ক্ষমতায়ন নারীর অধিকার বৃদ্ধিতে সহায়তা করলেও সামগ্রিকভাবে এবং সুদূরপ্রসারী ফলাফল বিবেচনায় যথেষ্ট নয়। নারীর ক্ষমতায়ন একটি সঠিক পদক্ষেপ হলেও আমাদের প্রয়োজন উচ্চ পদে আরো নারী।
ফেইসবুকের সিওও শ্যারল একবার আমেরিকার কোষাধ্যক্ষ প্রধান টিম গাইটনারের সাথে একটি সাক্ষাৎকার আয়োজন করে। সেখানে টিমের সাথে কয়েকজন নারী আসেন। আলোচনার শুরুতে দেখা যায় শ্যারলের অনুরোধ সত্ত্বেও নারীরা রুমের এক কোনায় গিয়ে বসেছে, আলোচনার টেবিলে নয়। শ্যারলের প্রথম উপদেশ তাই, টেবিলে এসে বসো।
নারীরা সবসময় নিজেদের সন্দেহ করে। এর একটি গালভারি নামও আছে: ইমপোস্টার সিনড্রোম বা প্রতারক মনোভাব। যদিও এই সমস্যায় নারী-পুরুষ উভয়ই ভুগতে পারে, সাধারণত নারী ভোগে অনেক বেশি। এই সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তি যদি কোনো বিষয়ে ভালো করে ফেলে, তখন মনে মনে ভাবে আমি বোধ হয় ভুল করে ভালো করে ফেলেছি, যে কোনো মুহূর্তে কেউ একজন ধরে ফেলবে যে আমি আসলে এত ভালো না। উপরে আমার বান্ধবীর যে ঘটনা বলেছি সেটা একটা বাস্তব উদাহরণ এক্ষেত্রে। গবেষণায় দেখা গেছে এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে ভালো বুদ্ধি হচ্ছে, যদি নিজের সফলতা প্রতারণা মনে হয়, তাহলে প্রতারণাই চালিয়ে যাও, যতক্ষণ না পর্যন্ত আত্মবিশ্বাস গড়ে ওঠে। Fake it, till you feel it.
অন্যদিকে সফলতা এবং জনপ্রিয়তা এই দুটি একত্রে পাওয়া নারীদের জন্য ভীষণ শক্ত। দেখা গেছে সফল নারীদের কেউ পছন্দ করে না। অথচ সফল পুরুষদের সবাই পছন্দ করে। ২০০৩-এর একটি পরীক্ষা করা হয়, যেখানে একটি কেইস স্টাডি ছাত্রদের পড়তে দেয়া হয়। এতে একজন সফল ব্যবসা উদ্যোক্তার গল্প বলা হয়। ছাত্র এবং ছাত্রীদের কেইস স্টাডিটি দেবার আগে একভাগের জন্য উদ্যোক্তার নাম দেয়া হয় হাওয়ার্ড, একজন পুরুষ এবং আরেক ভাগের জন্য বলা হয় উদ্যোক্তার নাম হেইডি, একজন নারী। দেখা যায় ছাত্র এবং ছাত্রী উভয় পক্ষই হাওয়ার্ডকে উদ্যোক্তাকে হিসেব পছন্দ করছে। আর হেইডিকে বলেছে স্বার্থপর এবং বস হিসেবে অনুপযুক্ত।
গবেষণায় দেখা গেছে, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে ভাবে যে পুরুষেরা যোগানদাতা, সিদ্ধান্ত নিতে পারদর্শী এবং আত্মনির্ভরশীল, অপরপক্ষে নারীরা মমতাময়ী, আদর যত্নে পারদর্শী এবং সামাজিক। যেহেতু আমরা নারী এবং পুরুষকে দুটো বিপরীত মেরুতে রেখে চিন্তা করি, সেহেতু কার্যক্ষেত্রে যখন আমাদের ধ্যানধারণার সাথে মেলে তখন পুরুষ এক্সিকিউটিভকে আমাদের “পছন্দ” হয়। আর যেহেতু নারীর এই সনাতন ধারণার সাথে মেলে না তখন নারী এক্সিকিউটিভকে আমাদের আর “পছন্দ” হয় না। সময়ের সাথে ধীরে ধীরে এই অবস্থার উত্তরণ ঘটবে এই আশা ব্যক্ত করে শ্যারল বলেছেন যে, ‘আমি’ শব্দটি কম ব্যবহার করে ‘আমরা’ শব্দটি বেশি ব্যবহার করতে। এতে করে নারী এক্সিকিউটিভকে স্বার্থপর মনে হবে না অতটা বেশি।
শ্যারলের মতে নারীদের আরেকটি সমস্যা হচ্ছে মেন্টর বা পরামর্শদাতা খোঁজার একটি প্রয়াস। উচ্চপদে উঠতে আগ্রহী নারীরা অনেক সময় একজন মেন্টরের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেন। শ্যারলের মত হচ্ছে, মেন্টর পেলে ভালো, কিন্তু না পেলে এত অস্থির হবারও কিছু নেই। আবার অনেক সময় খুব অল্প অল্প করে সাহায্য করতে পারে এরকম কয়েকজন মেন্টরকে দিয়েও কাজ চালাতে হতে পারে। আত্ম নির্ভরশীলতা এবং সাহস জরুরি এক্ষেত্রে।
শ্যারলের আরেকটি উপদেশ হচ্ছে সত্য কথাটি বলো, সেটা শুনতে যেমনই হোক না কেন। সত্য কথা বললে ম্যানেজার কী চিন্তা করতে পারে এমনটা ভেবে অনেকেই সত্যি কথা বলার সাহস পান না। কিন্তু কার্যকরী যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হচ্ছে সত্য বলা। আবার বেশীরভাগ নারী মনে করে কর্মক্ষেত্রে কাঁদা ঠিক না। কিন্তু শ্যারলের বিরুদ্ধে একবার একজন একটা কুৎসিত কথা বলার পর মার্ক জাকারবার্গকে সেটা জানাতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন শ্যারল। মার্ক জিজ্ঞেস করে তোমার একটা হাগ দিতে পারি? শ্যারল হ্যাঁ বলার পর, মার্ক তাকে আলতো করে জড়িয়ে সান্ত্বনা দেন। শ্যারলের মতে এই ধরনের ব্যাপারগুলো তাদের মধ্যে বোঝাপড়া অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। অবশ্যই বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে অফিসগুলোতে আগে পরিবর্তন প্রয়োজন।
একবার এক ফেইসবুকের এক অল্পবয়সী কর্মচারী এসে শ্যারলকে কাজ এবং প্রাত্যহিক জীবনের ভারসাম্য কীভাবে রক্ষা করা যায় সে বিষয়ে প্রশ্নবানে জর্জরিত করতে থাকে। শ্যারল উত্তর দিতে দিতে প্রশ্ন করে, তোমার কি শিগগিরই বাচ্চা হবে? সে জানায় বাচ্চা তো দূরের কথা, বিয়েও হয়নি তার, এমনকি এখন কোনো বয়ফ্রেন্ডও নেই তার। শ্যারলের মনে হয়েছে এই ভাবে মেয়েরা ভবিষ্যতে কী হতে পারে সে দুঃশ্চিন্তায় দায়িত্বশীল কাজ থেকে পিছিয়ে যায়। তাই প্রয়োজনের অনেক আগে থেকেই তারা অপ্রয়োজনীয়ভাবে পিছিয়ে পড়তে থাকে। শ্যারলের পরামর্শ হচ্ছে আগে থেকেই পিছিয়ে যাবার প্রয়োজন নেই। মেয়ে হয়ে মাতৃত্বকে নিজের দেনা হিসেবে ভাবার ও কোনো কারণ নেই। ক্রমাগত প্রতিষ্ঠানগুলো নারীদের প্রতি সহনশীল হচ্ছে এবং হবে। তাই যখন মা হবার সুযোগ আসবে তখন সেটার সমাধান করলেও চলবে।
অফিসের কাজে যেমন নারীদের সম অধিকার প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন তেমনি বাড়ির কাজেও প্রয়োজন স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কাজ অর্ধেক অর্ধেক ভাগ করে নেয়ার। বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে, যেখানে সাহায্যের জন্য নানী-দাদী কিংবা অর্থের বিনিময়ে সাহায্য পাওয়া যায়, সেখানে এই সাহায্যের প্রয়োজন অনেকাংশে সীমিত। তবুও অনেক কাজ বাংলাদেশের মায়েদের একলাই করতে হয়। সেসব ক্ষেত্রে এমন জীবনসঙ্গীনি বাছাই করুন যারা আপনার সাথে সংসারের কাজ অর্ধেক ভাগ করে নিতে রাজি আছেন।
শেষ কথা
প্রথমেই আমাদের স্বীকার করে নিতে হবে যে, সত্যিকার সম অধিকারের সময় এখনই এসে গেছে, সুদূর ভবিষ্যতে নয়। এই অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে প্রয়োজন সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে সমানসংখ্যক নারী। আর সেই লক্ষ্যেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে সেটা যত কষ্টকর হোক। এক্ষেত্রে নারী এবং পুরুষের পার্থক্যটা ভুলে না গিয়ে বরং সেটাকে গ্রহণ করেই এগিয়ে যেতে হবে।
এ লক্ষ্যের কোনোটাই সম্ভব না যদি পুরুষ এবং নারী সমান ভাবে একত্রে কাজ না করে। এক্ষেত্রে পুরুষকে যেমন নারীদের সহায়তা দিতে হবে, তেমনি নারীদেরকেও সহায়তা করতে হবে নিজেদের। অনেক সময় দেখা যায় প্রতিষ্ঠিত নারীরা অন্য নারীদের উপরের দিকে উঠতে দিতে চান না। শ্যারলের মতে [১৬], প্রতিষ্ঠিত নারীরা মনে করেন শুধু মাত্র একজন নারীই তাদের প্রতিষ্ঠানের উপরের দিকে উঠতে পারবে। তাদের এমনটা মনে কারন হচ্ছে তারা রুমভর্তি পুরুষ দেখে অভ্যস্ত, এবং তাদের মধ্যে বিশ্বাস ঢুকে গেছে মেয়েরা এই চেয়ারের যোগ্য না। তাই তারা অন্যান্য মেয়েদের নিজেদের প্রতিযোগী হিসেবে দেখে। অথচ গবেষণায় দেখা গেছে, যখন মেয়েরা একে অন্যকে সাহায্য করে এবং ক্ষমতাসীন পদে একে অন্যকে আসতে সাহায্য করে তখন সামগ্রিক ভাবে সেই প্রতিষ্ঠানের সকল নারী এর সুবিধা পায়। সুতরাং নারী-পুরুষ নির্বিশেষে নারীদের উঠে আসতে সাহায্য করতে হবে।
পাকিস্তানের অংশ হিসেবে যখন বাংলাদেশের অর্ধেক জনগণ সংসদে সঠিকভাবে উপস্থাপিত হয়নি এবং পদে পদে যখন বাংলার জনগনকে লাঞ্ছিত এবং বঞ্চিত করে রাখা হয়েছিলো তখন বাংলাদেশের জনগণ যুদ্ধের মাধ্যমে বিজয় ছিনিয়ে নিয়ে আসে সেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে। অথচ যুগ যুগ ধরে আমাদের জনগোষ্ঠীর অর্ধেক নারী যখন লাঞ্ছিত হয়, বঞ্চিত তখন আমরা সেই প্রথাকে জিইয়ে রেখে দিই, পিছিয়ে টেনে রাখি নারীদের। এখন সময় এসেছে সেই অর্ধেক জনগোষ্ঠিকে তাদের প্রাপ্য বুঝিয়ে দেবার। আসুন আমরা সবাই মিলে নারী অধিকার রক্ষায় এগিয়ে আসি।
কৃতজ্ঞতা
হাসিব মাহমুদ
তৃষিয়া নাশতারান
তথ্যসুত্র
[১] https://kathopokathon.wordpress.com/2013/04/28/%E0%A6%B8%E0%A7%87%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%87-%E0%A6%A6%E0%A6%BF%E0%A6%A6%E0%A6%BF%E0%A6%AE%E0%A6%A8%E0%A6%BF/
[২] http://www.sachalayatan.com/taxonomy/term/19583
[৩] http://www.un.org/womenwatch/osagi/pdf/whatissh.pdf
[৪] http://www.sachalayatan.com/swopnohara/54365
[৫] http://www.sachalayatan.com/guest_writer/54332
[৬] http://en.wikipedia.org/wiki/Demographics_of_Bangladesh
[৭] http://data.worldbank.org/indicator/SE.ENR.SECO.FM.ZS
[৮] http://data.worldbank.org/indicator/SE.ENR.TERT.FM.ZS/countries
[৯] http://en.wikipedia.org/wiki/Cabinet_of_Bangladesh
[১০] Women in Executive Power: A Global Overview; Chapter 3
https://books.google.com/books?id=rv1zVtHv3FQC&pg=PA24&lpg=PA24&dq=number+of+women+executive+in+Bangladesh&source=bl&ots=ay9DXnI5Zr&sig=vEDpRGQOOrqLYyZMOIgaZHUnq-I&hl=en&sa=X&ei=-eRQVcGYC4XooATk0ICYCw&ved=0CB0Q6AEwADgK#v=onepage&q=number%20of%20women%20executive%20in%20Bangladesh&f=false
[১১] http://data.worldbank.org/indicator/SL.TLF.CACT.FE.ZS/countries
[১২] http://data.worldbank.org/indicator/SL.TLF.CACT.MA.ZS/countries
[১৩] http://ilo.org/wcmsp5/groups/public/@asia/@ro-bangkok/documents/publication/wcms_098063.pdf
[১৪] http://data.worldbank.org/indicator/SE.PRM.REPT.FE.ZS/countries
[১৫] http://data.worldbank.org/indicator/SE.PRM.REPT.MA.ZS/countries
[১৬] http://www.amazon.com/Lean-In-Women-Work-Will/dp/0385349947
মন্তব্য
গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট। বন্ধুদের এবং নিজের অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখার ইচ্ছা আছে, দেখা যাক-
facebook
লিখে ফেলো প্লিজ। পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
খুব গোছানো, জরুরি পোস্ট। নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা, পর্যবেক্ষণ নিয়ে লিখতে বসেছিলাম। গুছিয়ে উঠতে পারিনি। এখানেই মন্তব্য হিসেবে দিচ্ছি পরে এসে।
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
পোস্ট হিসেবেই দাও। ইবুক তৈরী হচ্ছে।
অল্প পরিসরে অল্প করে হলেও অনেকগুলো বিষয় তুলে এনেছেন।
একচা কথা, বর্তমানে বাংলাদেশের সংসদে বিরোধীদলীয় প্রধানও একজন নারী, রওশন এরশাদ।
পড়ার এবং তথ্যের জন্য ধন্যবাদ।
দারুণ গোছানো একটা লেখা, অনেককিছু জানতে পারলাম।
কর্মক্ষেত্রে এরকম কোন অভিজ্ঞতা এখনো হয়নি। যদিও একবার এক কলিগের মন্তব্যে রীতিমত আহত হয়েছিলাম। খুব অনায়াসে সে বলেছিল তার নারী কলিগদের সামনে যে তার ধারণা 'মেয়েদের মধ্যে কোন ক্রিয়েটিভিটি নেই'। লজ্জিত বোধ করেছিলাম সেদিন- আমার চারপাশের এই মানুষগুলোই তাহলে এরকম ভাবে আমার সম্পর্কে?
মজার ব্যাপার হল, ওই অফিসে মেয়েরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল, অন্তত রিসার্চ সেকশনে। তার মধ্যে যে ক'জন সামান্য'লেখালিখি' করে তারা (৫ জনের মধ্যে ২ জন) উভয়েই নারী।
-------------
ফারাবী
নারীদের যারা ছোট করে তাদের অ্যাভয়েড করুন। যে বলেছে তার ক্রিয়েটিভিটি নিয়ে প্রশ্ন করা যায়।
খুব গোছানো ভাল একটি লেখা। সময় নিয়ে সময়োপযোগী লেখাটার জন্য ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ।
গোছানো এবং জরুরি পোস্ট।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
ধন্যবাদ। তুমি না একটা লেখা দিতে চেয়েছিলে?
দৌড়ের উপর ছিলাম যে।
সময় আছে এখনো?
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
তথ্য সমৃদ্ধ ভালো একটি লেখা। ভাবনাগুলো ছড়িয়ে পড়ুক। পরিবর্তন আসুক।
ধন্যবাদ।
The first principle of women empowerment by UN Women is
Establish high-level corporate leadership for gender equality –
See more at: http://www.unwomen.org/en/partnerships/businesses-and-foundations/womens-empowerment-principles#sthash.ObmdKpjf.dpuf
তাই “ শুধু নারীর ক্ষমতায়ন নয়, চাই ঊর্ধ্বতন পদে আরো নারী” কথাটা শোনাচ্ছে নারীবাদ নয় মানবতা বাদ চাই এর মত। নারীর ক্ষমতায়ন হল একটা সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি বা কৌশল যেটার লক্ষ্য হল কর্ম ক্ষেত্রে নারীকে সিদ্ধান্ত নেবার জায়গায় নিয়ে যাওয়া। ঊর্ধ্বতন পদে আরো নারী, নারীর ক্ষমতায়ন এরই একটি অংশ। তাই নারীর ক্ষমতায়ন ও ঊর্ধ্বতন পদে আরো নারী এই দুইটা বিষয় কে বিচ্ছিন্ন ভাবে দেখার কোন সুযোগ নেই।
এটা শুধু শিরোনাম প্রসঙ্গে বললাম, যেটার লজিকটা উল্টো লেগেছে।
সামগ্রিক ভাবে লেখাটা ভালো হয়েছে, এবং চলমান বাস্তবতা হিসেবে আমরা সবাই ফেস করেছি এবং করছি।
ইউ এনের এই ডেফিনিশন আমি দেখেছি। প্রিন্সিপাল গুলো সবগুলো তুলে দেই প্রথমে:
এই তালিকার মধ্যে কোথাও বলা নেই নারীকে উচ্চপদে আসীন হতে হবে। প্রথম পয়েন্টটাই দেখুন, সেখানে বলেনি কর্পোরেট লিডারশিপে নারীকে সমান ভাবে উপস্থিত থাকতে হবে। বলছে, নেতৃত্বে থাকতে হবে এমন সব মানুষদের যারা সমতায় বিশ্বাস করে। এই নেতৃত্ব পুরুষ হতে পারে।
উদাহরনস্বরুপ, যদি একটা প্রতিষ্ঠানে ৬ জন নেতৃত্বে থাকে "উইমেন এমপাওয়ারমেন্টের" প্রিন্সিপাল অনুযায়ী ৬ পুরুষ হলেও ক্ষতি নেই যতক্ষণ পর্যন্ত এদের বেশীরভাগ নারী সমতায় বিশ্বাস করে। অথচ 'উচ্চপদে আর নারীর' বিষয়টা বলে যে এই উদাহরনে কমপক্ষে ৩ জন নারী নেত্রী থাকতে হবে।
নারীর ক্ষমতায়তনকে আমি বটম-আপ ভাবে দেখছি। অর্থাৎ ন্যুনতম পরিবর্তনের মাধ্যমে কিভাবে নারীদের সামগ্রিক সমতা আনা যায় সেটার চেষ্টা করা হচ্ছে নারীর ক্ষমতায়তনের মাধ্যমে। কিন্তু এই পদ্ধতি গুরুত্বপূর্ণ হলেও খুব ধীর। "উচ্চপদে আর নারী" - বা More women in power হচ্ছে টপ-ডাউন পদ্ধতি। অর্থাৎ উঁচু পদগুলিতে নারীর সমতা নিশ্চিত করলে সামগ্রিকভাবে সকল জায়গায় সমতা বৃদ্ধি পাবে।
আমার তাই মনে হয়েছে দুটো পদ্ধতির প্রয়োজন রয়েছে। একারনেই আমি বলেছি "শুধু নারীর ক্ষমতায়ন নয়, চাই ঊর্ধ্বতন পদে আরো নারী"। "শুধু" শব্দটি লক্ষ্য করুন। Not only X, but also Y মানে হচ্ছে এক্স এবং ওয়াই দুটোই দরকার।
পড়ার জন্য এবং চিন্তার জাগিয়ে তোলা মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।
------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।
ধন্যবাদ।
আপনার লেখাটা ভালো হয়েছে, তাই প্লিজ কোন প্রকার তর্কে জড়াতে চাই, এমন ভাববেন না।
For gender equality ...... উচ্চ পদে জেন্ডার সমতার কথা বলা হয়েছে। UN এর যে কর্মপন্থা সেখানে এই মূল নীতি গুলোকে বেস হিসেবে ধরে প্রয়োজনে পজিটিভ বৈষম্যের মাধ্যমে এই সমতা বিধানের কথা বলা হয়েছে। এটা ক্ষমতায়নের যে ধারণা সেটার ই প্রধান বক্তব্য, এবং সবখানেই এই সমতার কথা বলা হয়েছে। এই নেতৃত্ব পুরুষ হতে পারে......একমত হতে পারলাম না।
শুধু কথাটি আমি লক্ষ্য করেছি, এবং এটাও ক্ষমতায়ন এর যে সামগ্রিক ধারণা সেটাকে বিক্ষিপ্ত করেছে। হয়ত বিচ্ছিন্ন ভাবটাকে একটু খানি প্রশমিত করেছে এই আর কি!!!
যেমন আপনার লেখার শিরোনাম যদি হত “ঊর্ধ্বতন পদে আরো নারী/ বা অধিক সংখ্যায় আরও নারী নিয়োগের মাধমে নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে হবে” তবে এই বিচ্ছিন্ন ভাবটা তৈরি হতনা। কারণ ক্ষমতায়ন হল আমাদের মূল লক্ষ্য যা অনেক গুলো কাজের মাধ্যমে হতে পারে, এবং অন্যতম প্রধান হল নারীকে ঊর্ধ্বতন পদে আরও নিয়োগ... আমার প্রকাশ করার ক্ষমতা সীমিত, তাই পরিস্কারভাবে বোঝাতে পারছি কিনা জানিনা।
বিশ্বজুড়ে এখন এটা মোটামুটি পরিক্ষিত যে সামাজিক উন্নয়নের জায়গায় টপ টু বোটম এপ্রচ মোটামুটি অকার্যকর, এবং বোটম আপ এপ্রচ এর মাধ্যমেই সঠিক উন্নয়ন সম্ভব।
সেটা সামাজিক ধাপ গুলোর ক্ষেত্রে প্রয়োগযোগ্য, আপনার বক্তব্যে আপনি কি বলতে চেয়েছেন সেটা আমার কাছে স্পষ্ট নয়। ধরা যাক আমি যদি নারীর উন্নয়নের কথা বলি তবে আমাকে সকল স্তরের নারীর কথা চিন্তা করতে হবে এবং তাঁদের কে উন্নয়নের মূল ধারায় সম্পৃক্ত করতে হবে। উপরের পর্যায়ে কিছু নারী অধিষ্ঠান লাভ করলেই যে নারীর সত্যিকার উন্নয়ন হয়না সেটা আমদের সরকার ও রাজনিতির ময়দান দেখলেই বোঝা যায়। আর সেখানেই টপ টু বোটম এপ্রচ ফেইল করে, যেটা আপনিও স্বীকার করেন বলেই মনে হয়েছে।
যাই হোক আপনাকে অনেক শুভ কামনা, লেখাটা ভালো হয়েছে।
তর্ক করাটাকে খারাপ ভাবার কারন নেই। সুস্থ তর্ক সুস্থ আলোচনার জন্ম দেয়, যেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
For gender equality - এর বাংলা অনুবাদ হচ্ছে "লৈঙ্গিক সমতার জন্য"। এই নীতিতে কোথাও নারীকে উচ্চপদে থাকতে হবে এমনটা বলা হয় নি।
বুঝতে পেরেছি।
বাংলাদেশের টপ-ডাউন পদ্ধতিতে একেবার কোনো লাভ হয়নি সেটা সত্যি না। কিন্তু আরো নারী দরকার এবং সেটা দরকার ক্ষমতাসীন পদগুলোতে। তাহলে আরো দ্রুত ফলাফল আসবে আমার মতে।
Establish high-level corporate leadership……এই নেতৃত্ব কাদের নেতৃত্ব? নারী নেতৃত্ব!!! for gender equality... কিসের জন্য? লৈঙ্গিক সমতার জন্য
একটা নীতি একটা ধারণা মাত্র, সেটার ভিত্তিতে অনেক একশন প্লান থাকে...
পুরো বাখ্যা সহ + কর্মপন্থা সহ ভালভাবে পড়লে হয়ত আরও পরিষ্কার ধারণা আমরা দুজনেই পাবো...
বাংলাদেশের টপ-ডাউন পদ্ধতিতে একেবার কোনো লাভ হয়নি সেটা সত্যি না।......একেবারে কোন লাভ হয়নি, সেটা বলিনি... সামাজিক ক্ষেত্রে মোটামুটি অকার্যকর, অর্থাৎ অন্য কিছু ক্ষেত্রে কিছুটা কার্যকর। কিন্তু যেহেতু তার থেকেও আরও ভালো এপ্রচ পেয়েছি আমরা তাই কেন কিছুটা ভালো এপ্রচে কাজ করব?
নারীবাদী ধারণা গুলো ও যদি লক্ষ্য করেন প্রথম দিককার সকল এপ্রচ ও কিন্তু টপ টু বোটম এপ্রচ ছিল এবং আজকের বিশ্বের সকল সফল এপ্রচ বোটম আপ এপ্রচ। সমস্যার মুলে এবং মূল জনগোষ্ঠীর সাথে সম্পৃক্ত হয়ে কাজ করতে না পারলে কোন কাজ ই সফল হয়না, আবার নীতি নির্ধারণই পর্যায়ের কাজটাকেও সমাজের মূল থেকে উঠে আসতে হয়।
সবশেষে এটুকুই বলতে চাই, নারীর ক্ষমতায়নে উচ্চ পর্যায়ে নারীর আরও বেশী অংশগ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এবং সমাজের সকল পর্যায়ে এটা নিশ্চিত করতে হবে।
আপনি বার বার একই ভুল করছেন। স্টেইটমেন্টের কোথাও নারী নেতৃত্বের কথা বলা নেই। আপনি ইন্টারপ্রেট করার সময় নারী শব্দটি বসিয়ে দিয়েছেন। আমি বাংলা অনুবাদ করছি:
"লৈঙ্গিক সমতার জন্য প্রতিষ্ঠানের উঁচু নেতৃস্থানীয় পদ প্রতিষ্ঠা করতে হবে" - এই কথাটির কোথায় নারীর কথা বলা আছে?
এত বাধা বিপত্তি পার হয়ে যখন নারী কোন সফলতা পায়, তখন সমাজ তার যোগ্যতার প্রশংসা নয় বরং কল্পনার ঘোড়া ছুটিয়ে দেয় সফলতার পেছনে কি ছলা কলা লুকিয়ে আছে সেটা আবিষ্কার করার জন্য।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে বাস্তবতার আলোকে এত সুন্দরভাবে তত্ত্ব এবং তথ্য পরিবেশন এর জন্য।
পড়ার জন্য অসংখ্যা ধন্যবাদ।
খুব খুব চমৎকার একটা পোস্ট ।
ধন্যবাদ ভাই এরকম একটা পোস্টের জন্য।
--------
আচ্ছা বাংলাদেশে 'বিশাখা গাইডলাইন' জাতীয় কোনো পদ্ধতি কী চালু আছে?
তবে পহেলা বৈশাখের ন্যাক্কার জনক ঘটনাকে অস্বীকারের প্রবণতা দেখে এরকম ব্যবস্হা থাকলেও সেটার প্রয়োগ
কতোটা হয়/হবে সেটা নিয়ে মনে সংশয় তৈরি হলো।
উঁচু পদে নারীদের বসালেই হবেনা তাদের সফট পাওয়ারের সীমাবদ্ধতা ঘোচাবার ব্যবস্হাটা জরুরী।
শুধু শুধু শোপিস হবার কোনো মানেই হয় না যদি সিদ্ধান্ত গ্রহনে নারী নিজের মেধা মনন কাজে না লাগালো।
আত্মবিশ্বাস ফেয়ার এণ্ড লাভলি এনে দেয় না সেটা অর্জন করতে হয়। নারী দুর্বল, নারী অবলা ইত্যাদি ট্যাবু থেকে
যতদিন আমরা বের হতে না পারছি ততোদিন যথেষ্ট মেধা থাকা সত্ত্বেও বোকার মত পেছনেই থাকতে হবে...
ধন্যবাদ পড়ার জন্য। বাংলাদেশে এমন কিছু আছে কিনা আমার জানা নেই।
"যেদিন পৃথিবীতে সত্যি সত্যি সম অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে সেদিন দেশ ও প্রতিষ্ঠানগুলোর সব পর্যায়ে নারী অর্ধেকটা জুড়ে কাজ করবে এবং পুরুষ, সহধর্মিনীর সাথে হাত মিলিয়ে ঘরের কাজগুলোর অর্ধেকটা করে দেবে, সেই দিন হবে পৃথিবীর জন্য একটি গৌরবময় দিন।"
"গবেষণায় দেখা গেছে, যখন মেয়েরা একে অন্যকে সাহায্য করে এবং ক্ষমতাসীন পদে একে অন্যকে আসতে সাহায্য করে তখন সামগ্রিক ভাবে সেই প্রতিষ্ঠানের সকল নারী এর সুবিধা পায়। সুতরাং নারী-পুরুষ নির্বিশেষে নারীদের উঠে আসতে সাহায্য করতে হবে।"
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
পড়ার জন্য ধন্যবাদ!
আক্ষরিক অর্থে না ধরে, বিশদ ভাবে পড়ুন, তাহলে হয়ত আরেক্তু ক্লিয়ার হতে পারবেন। মূলনীতি একটা ধারণা মাত্র, সেটার অনেক রকম কর্ম কৌশল থাকে। যাই হোক এটাই আমার শেষ মন্তব্য। তত্ত্ব যাই থাকুক আপনার লেখাটা সত্যি ই অনেক ভালো হয়েছে। আপনার জন্য অনেক সুভ কামনা। ভালো থাকবেন
http://www.unwomen.org/~/media/headquarters/attachments/sections/partnerships/businesses%20and%20foundations/women-s-empowerment-principles_en%20pdf.pdf
আমি দুঃখিত, কিন্তু আপনার ডকুমেন্টটায় এমন কিছু পেলাম না যেটা আপনার ইন্টারপ্রেটেশন সাপোর্ট করে। "একটি প্রানীর চারটি পা আছে" - বললে আমি ততটুকুই বুঝব যতটুকু কথাটিতে বলা আছে। আমি তারসাথে আমার ইন্টারপ্রেটেশন যোগ করে এটা ধরে নিবো না যে প্রানীটির লেজও আছে, দুটো কান আছে, ইত্যাদি। আমারও এটা শেষ মন্তব্য।
খুব গোছানো লেখা!
নিজের দুই আনা লেখা শেষ করতে পারিনাই বলে পোস্ট দেওয়া হয়নাই। যাইহোক, সেখান থেকে সামান্য বলি। মেয়েরা উচ্চ পর্যায়ে গেলে তার কমান্ড অনেকে মেনে নিতে পারেন না, অনেকক্ষেত্রেই এটা দেখা যায়। তাকে আর তার নির্দেশকে সঠিক ভাবে মেনে চলছেনা, এরকম হলে আসলে কি করা উচিৎ?
পরিচিত এক মহিলা বসকে দেখেছি উনি ছেলেদের মতো উনিও রাফ অ্যান্ড টাফ দেখাতে গিয়ে তার অসম্ভব বিচ্ছিরি ব্যাবহারের ট্রেন্ড তৈরী করে ফেলেছেন বলা যায়। তার আন্ডারে কেউ কাজ করতে চায়না, আর করতে গেলেও হতাশ আর বিরক্ত হয়ে চাকরি ছেড়ে দেয় কয়েক মাসের মধ্যেই। পুরো অফিসের সমস্ত ডিপার্টমেন্টেই এ নিয়ে নানা আজেবাজে কথা প্রচলিত। এমন ক্ষেত্রে কি করা যেতে পারে এটা বুঝতে পারছিনা!
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
তোমার সেনারিও টা মিলে যায়। "লিন ইন" বই থেকে উদাহরণ খুঁজে দিচ্ছি কিছুক্ষণ পর।
দারূণ একটা লেখা
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
ধন্যবাদ
লেখাটা অনেক ভাল লেগেছে মুর্শেদ।
আমি টপ ডাউন অথবা বটম আপ কোনটাতেই সর্বোতভাবে বিশ্বাসী নই। তবে বেছে নিতে বললে বটম আপ বেছে নিব কারণ এতে বেশি সংখ্যক মানুষের উপকার হয়। তবে তোমার উদাহরণ ঠিক আছে। কাজের ক্ষেত্রে টপ ডাউন আরো বেশি সংখ্যক নারীকে লিডারশিপে প্রেরনা যোগাবে।
কিন্তু উচ্চপদে নারী থাকলেই কাজে নারীবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি হবে কথাটা পুরোপুরি ঠিক নয়। নারী নিজেই পুরুষতন্ত্রের ধারক বাহক হতে পারেন আর সিস্টেমের বাকি অংশ পরিবর্তন না করলে ইতিবাচক পরিবর্তন সম্ভব না।
আরেকটা ব্যাপার বৈষম্যর ব্যাখ্যা উদাহরণ আরেকটু বেশি আসলে ভাল হতো।
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু
আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে
সঠিক। এই ব্যাপারটা কমবে যখন উচ্চপদে আরো অনেক নারী আসবে। যখন নারীরা দেখবে যে উঁচু পদে যেতে হলে "পুরুষ" সুলভ হবার প্রয়োজন নেই তখন পুরুষতন্ত্রের বাহক হবার প্রয়োজনীয়তা কমে আসবে।
পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
বেশ তথ্যবহুল লেখা। কর্মক্ষেত্রে নারীর লাঞ্ছনার বিষয়গুলো এতো বিস্তারিত জানা ছিলোনা। ভবিষ্যতের রেফারেন্স হিসেবে কাজে লাগাবে। কেইস স্টাডির আলোকে ঘটনার বিশ্লেষণ খুবই চমৎকার হয়েছে। ধন্যবাদ।
-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে
পড়ার জন্য ধন্যবাদ!
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে
নতুন মন্তব্য করুন