এন্টিগল্প >স্প্যানিয়েলের প্রাত:ভ্রমণ <

মনজুরাউল এর ছবি
লিখেছেন মনজুরাউল (তারিখ: সোম, ২১/০৭/২০০৮ - ১:৪৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

স্প্যানিয়েলের প্রাতঃভ্রমণ

খুব ভোরে স্প্যানিয়েলের ঘুম ভেঙেছিল। সাধারণত ওর ঘুম ভাঙে দেরিতে। আজ কি হলো দুম করে ঘুমটা ভেঙে গেলো। অবশ্য ইদানিং ওর ঘুম কমে আসছিল। রাজ্যের সব বিদঘুঁটে চিন-া মাথা ভার করে তুলছিল। যেমন একটা হাতঘড়ি খুলে ও অবাক হয়ে গিয়েছিল ভেতরকার কারুকার্য দেখে! কী সব ক্ষুদে ক্ষুদে জিনিসপত্তর! আচ্ছা এতো সব ছোট ছোট মেশিনটেশিন কোন মেশিনে বানায়? মানুষ কী ভয়ঙ্কর এগিয়ে গেছে বিজ্ঞানে! ওই থেকে অবাক হওয়া শুরু। এসে থামতে হয় কম্পিউটারে! এতো আরো ভয়ানক ব্যাপার! তারপর চিপস। সিলিকন চিপস! বালুর কণার মতো আকার বলে ওর নাম সিলিকন চিপস! ওরই মধ্যে নাকি শক্তি! কম্পিউটার, রকেট, ইন্টারনেট, সাবমেরিন ক্যাবল কতো কী? মাথাটা গুলিয়ে ওঠে। স্পেস বিষয়ে ভাবতে গেলেই ওর সবার আগে লাইলাকের কথা মনে পড়ে। বেচারা কুকুরটা নাকি এখনো সমানে পৃথিবী প্রদক্ষিণ করে চলেছে। সম্ভবত কুকুরের আকার আর নেই। হয়তো বা পাথরের আকার পেয়েছে। এই গোছের ভাবনা আজকাল ওর ঘুম ফ্যাকাসে করে তুলেছে। অগত্যা আড়মোড় ভেঙে চোখ কঁচলে উঠে পড়লো। কিছুই করার নেই। খানিকক্ষণ হাই তুলে ওঁয়াও ওয়াও, চপাৎ চপাৎ শব্দ করে বেরিয়ে পড়লো। মাথায় তখন খেলা করছে- চল বাপু আজ সকালের ঢাকা দেখে আসি। দুলকি চালে বেরিয়ে তেজগাঁও বড়ো রাস-া ধরে হাঁটছে। গন-ব্য রমনা পার্ক। ওখানে নাকি রাজ্যের সায়েবসুবোরা প্রাতঃপ্রমণ করে। পেল্লাই কারবার নাকি। বেশ, তাহলে আমিও চললাম বলে শুরু হলো স্প্যানিয়ালের হাঁটা।

ওর এই স্প্যানিয়াল নামটা নিয়ে বেজায় খটকা। বেশ কয়েকবার মাকে জিজ্ঞাসা করেছে। মা এড়িয়ে গেছেন। খুব চাপাচাপি করলে বলতেন- ‘কেন মানুষের নাম রকেট, বুলেট হয় না? জাপান, জাপানি, চিনি হয় না?’ স্প্যানিয়াল মনে মনে বুঝেছে- খুব হয়। ও যেহেতু কথা বলতে পারে না তাই মায়ের সঙ্গে তর্কে যায়নি। ও আজন্ম বোবা। গোঙ্গা নয়, বোবাই। কথা না বলতে পারা বোবা। বলার ক্ষমতা হরণ করে সৃষ্টিকর্তা অবশ্য একেবারে ইমব্যালান্স করেননি। প্রখর করে দিয়েছেন ওর শ্রবণ, ঘ্রাণ আর দৃষ্টি শক্তি। ও ঘাসের ডগা দুমড়ানো দেখে বলে দিতে পারে কতো ওজনের মানুষের পা পড়েছিল। যেমন আজ বেরিয়ে এক জায়গায় ঘাসের ওপরকার ছাপ দেখেই বুঝে নিলো একটু আগে যে লোকটি হেঁটে বা দৌড়ে গেছে তার ওজন কমপক্ষে আশি কেজি। আরো এগুতে দেখলো দুটো গুবরে পোকা গবর মনে করে মনুষ্য বর্জ্য ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে। গোটা পাঁচেক মাছি ভন ভন করে পিছু নিয়েছে। পোকা দুটো একটু অসতর্ক হলেই ওরা এসে বসবে। গুবরে দুটোও নাছোড়বান্দা দলাটাকে এক সেকেন্ডের জন্য হাতছাড়া করছে না। ওর চোখ আটকে গেলো একটা মাদি কুকুরের ওপর দেখেই বুঝলো দিন কয়েক আগে হালিখানেক বাচ্চা বিইয়েছে। ডাস্টবিনের পাশে দাঁড়িয়ে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। পুরো ডাস্টবিনটা ময়লায় ভরে উপচে পড়ছে। কী নেই ওতে? চিরুনি থেকে ভাঙা সিডি। এমন কী কয়েকটা চুপসানো কনডমও আছে। নেই কেবল ভাত। ভাত কেন, কোনো রকম খাবারই নেই। আশ্চর্য ব্যাপার! ঢাকা শহরের শত শত কমিউনিটি সেন্টারে রোজ রাতে কমপক্ষে এক লাখ মানুষের খাবার উচ্ছিষ্ট হয়। মানুষগুলো বিয়ের দাওয়াত খাওয়ার সময় নিজেদের কয়েক লাখ বছর আগের প্রজাতি বনে যায়। কুকুরের মতো হাড় থেকে মাংস খসিয়ে খায়। হায়নার মতো বরাদ্দের বাইরে একথাল নিয়ে গিলতে না পেরে রেখে আসে। চিতার মতো ক্ষিপ্রগতিতে রোস্টগুলো প্লেটে তুলে নেয়। হাতির মতো শুড় দিয়ে একটানে চার গ্লাস বুরহানি সাবড়ে দেয়, সিংহের মতো মটমট করে মুরগির হাড় ভাঙে আর পাঁচশ বছর আগেকার কালো দাসদের মতো খাওযার পরিশ্রমে ঘামতে থাকে! যাকগে ওসব কথা, কিন' ডাস্টবিনে সেই ফেলে দেওয়া খাবার থাকবে না কেন? ও হঠাৎ বুঝতে পারে সে যা আশা করছে তা মানুষের পক্ষে করা সম্ভব নয়। কুকুর-শেয়ালরা হলে হতো। ওরা শেয়ার করতে জানে । সিংহের শিকার করা হরিণের অবশিষ্ট মাংসটুকু খেয়ে হাড়ের সঙ্গে লেপ্টে থাকা মাংসগুলো পাখির জন্য রাখে। পাখিরাও আবার পিঁপড়ে বা অন্যান্য ক্ষুদেদের জন্য রেখে দেয়। সব শেষে পোকাদের জন্যও কিছু না কিছু থাকে।

কিন' মানুষ রাখে না। একেবারেই যখন পারে না তখন ফেলে দেয়। কিন' মানুষদের ভেতরকার আরো কিছু মানুষ ভোর হওয়ার আগেই সেসব চেটেপুটে সাবাড় করেছে। এই ধরনের মানুষের সংখ্যা যে হারে বাড়ছে তাতে ওই নেড়িটার আর বেঁচে থাকার সুযোগ নেই। ও মনে মনে ঠিক করলো এখন থেকে প্লাসটিকের ক্যান আর পলিব্যাগ খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। নেড়িটার মনের কথাটা যেন বুঝতে পারলো স্প্যানিয়েল। মুচকি হেসে মনে মনে সায় দিলো। হ্যাঁ বাছা এখন থেকে তোমাকে বিকল্প ব্যবস'া করতেই হবে, দেখছো না এমনিতেই মনুষ্য পদভারে তোমাদের বংশবৃদ্ধি কর্মকাণ্ড করার জন্য পর্যাপ্ত ফাঁকা জায়গা মিলছে না!

আবার হাঁটতে শুরু করলো স্প্যানিয়েল। মগবাজার মোড় পেরুতেই হাতের ডানে যেতে হবে জানে ও। সেভাবেই এগুচ্ছে। সামনে কয়েকটা শ্মশান পড়লো, চার চারটা গোরস'ান। গোটা কয়েক লাশ শেয়ালে তুলে এনেছে। তখনো কাফনের কাপড় জড়ানো! খুব অবাক হলো ও, দিন কয়েক আগে এক সেমিনারে শুনছিল, কারা যেন বলছে... বন্যপ্রাণীদের বাঁচার অধিকার আদায়ের জন্য প্রয়োজনে আমাদের জীবন দিতে হবে, ইদানিং এই শহরে ব্যালান্স রক্ষার জন্য কোনো কোনো প্রজাতির প্রাণী খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না...!’ ব্যাটাচ্ছেলেরা হয় কানা, না হয় ভদকা ভেবে পানি মেশানো শিশি খেয়ে বেহেড! শেয়ালে লাশ তুলে আনছে; আর বলে কী না বণ্যপ্রাণী কমে যাচ্ছে?

মাথা হেট করে একটু ভয়ে ভয়েই ও সামনে এগুতে থাকলো। এ মোড় ও মোড় ঘুরে অবশেষে এসে দাঁড়ালো রমনা পার্কের পাশে। মনটা ভরে উঠলো। কিচির মিচির করে পাখিরা স্বাগত জানালো। তবে হরেক কিসিমের পাখির মধ্যে ওর সবচেয়ে পছন্দ কাক। দাঁড়কাক নয়, পাতি কাকই ওর বেশি পছন্দ। কাকের রং ওকে মোহিত করে। ধূসর রঙটা এমনভাবে ম্যাচিং করা যা কাক ছাড়া অন্য কোনো পাখিতে নেই। ওরকমই একটা সুন্দর কাক হঠাৎ একটা কালো কুচকুচে গাড়ির ছাদে মলত্যাগ করে বসলো। সম্ভবত মানুষের মতো কাকদেরও সকালেই যাবতীয় ত্যাগ-ট্যাগের ব্যাপারটা হয়। দামড়া মতো দেখতে একটা বুনো শুয়োর গোছের মানুষ তেড়ে গেলো কাকটা মারতে। পারলো না। ব্যাপারটায় খুব মজা পেলো ও। মানুষ নাকি পাখিকে উড়তে দেখেই এরোপ্লেন বানাবার বুদ্ধি বার করেছিল। তো বাপ প্লেন তো বানিয়েছোই, রকেটও, কিন' নিজে তো এখনো উড়তে শিখলে না!? সে কারণেই এ যাত্রায় কাকটার রক্ষে,

দামড়াটা এবার পরম মমতায় নিজের রুমাল দিয়ে চুনের মতো বস'টা মুছে দিলো। গাড়িটা ছাড়িয়ে ও দেখলো ও রকম শতশত গাড়ি। গাড়ির যেন হাট বসেছে। আর সব গাড়ির পাশে বা ভেতর একজন করে ওই প্রথম দামড়াটার মতো একেকজন। ও এবার সাহস করে পার্কের ভেতরে ঢুকে একটা সিমেন্টের বেঞ্চে বসে পড়লো।
ওর নিজের শরীরে কোনো বাড়তি মেদ নেই। তাই ঝরাবারও কোনো দায় নেই। এমনিতেও কখনো ও পার্কে আসে না। আসতে হয় না। বলতে না-পারা সাদাসিদে জীবনে কোনোকিছুুই বাড়তি নেই ওর। বসে বসে একসময় একটু ঝিমুনির মতো এসেছিল। আধো ঘুম আধো জাগরণের মতো। ওভাবেই ঘাপটি মেরে পড়ে রইলো। ফুরফুরে বাতাসে ভালোই লাগছে। হঠাৎ ওই ঘোরের মধ্যেই দেখলো ওর পাশ দিয়ে দুটো শুয়োর হেঁটে যাচ্ছে! ভুল দেখেনি তো? গায়ে চিমটি কেটে বুঝলো না ঠিকই দেখছে, স্বপ্ন টপ্ন নয়। ও দুটোকে দেখেই বুঝলো অন-ত বছর পনের ধরে প্যারেড ট্যারেড, ব্যায়াম ট্যায়াম করা জিনিস। তাগড়া। ওদের পেছনে তিনটে মোটাসোটা হোদল কুতকুত জলহসি-। দেখলেই বোঝা যায় পাঁচটা জলাশয়, ন’টা সরোবর, তিনটে নদী আর গোটা দশেক পুকুরের মালিক। তাদের পেছনে ছড়ি হাতে একসৌমকান- বক। সাদা ফকফকে পোশাকে সাধুসনে-র মতো চেহারা। মাথা নোয়ানো দেখে বোঝা যায় রাজার কৃপা লাভে ব্রতী হয়ে গতকালই একজন নিরাপরাধকে ফাঁসিয়েছেন। তিনি বেরিয়ে যাওয়ার পরপরই কলকল করতে করতে দেব শিশুমার্কা চেহারা নিয়ে চারপাঁচজন। শেয়াল। খুব ভালো করে দেখে বুঝলো। প্রথমে মানুষই মনে হচ্ছিল। বিদ্যা বেচে কোথায় কী কী রেখে- টেখে যাচ্ছে তার ফিরিসি- শুনে বুঝলো শেয়াল। হঠাৎ একদল তরুণ-তরুণী একটা নরমণ্ডু নিয়ে দৌড়ে গেলো। প্রথমে ভেবেছিল ধ্যাত, মুণ্ডু কেন? ডাবটাব হবে, অথবা ফুটবল। কিন' না, ছেলেমেয়েগুলো ওর যে বাপের কাছে গাড়িতে চড়তে গেলো সেটা শপাঁচেক মানুষের খুলি বেচে কেনা হয়েছে। এক ফাঁকে দুজন পুলিশ এসে চার-পাঁচজন মানুষের কাছ থেকে তোলা নিয়ে গেলো। এক পুলিশের খায়েশ হলো মাঠা খাবে। খা, তো এমনিতে খাবে না, নুন দিয়ে মাখন দিয়ে দিতে হবে। মানুষটা দিতে চাইলো না বলে মাঠার হাঁড়ি গড়িয়ে পড়লো। পুলিশ দুটো ওকে হয়তো মারতো, কিন' হঠাৎ দুজন গণ্ডার এসে যাওয়ায় তাদের স্যালুট দেওয়ার জন্য মাঠাওয়ালা বাঁচলো। এক ফাঁকে একজন বেশ্যা এসে পাশে বসলো। ওর একটু লজ্জা লজ্জা লাগছিল। মেয়েটি ওর দিকে মিষ্টি করে একটা হাসি দিয়ে টানটান হয়ে শুয়ে পড়লো। ও বুঝলো, মেয়েটা ওভারটাইম করেছে। গলা আর ঘাড়ের কাছে লাল হয়ে আছে। গায়ের গন্ধে টের পেলো খুব বড়ো কোথাও যায়নি। মেয়েটি মুহূর্তেই যেন ঘুমের রাজ্যে ডুবে গেলো। এই সময় দুজন মোটা মতন মহিলা এলেন। প্রথমে ওদেরকে দেখে ওর মনে হলো হয়তো মানুষ। পরে দেখলো না, বেগম সাহেবা। খুব সুন্দর শরীর হয় এদের। আরো সুন্দর হওয়ার জন্য বেশুমার গিলতে থাকে আর ঘষতে থাকে। একসময় এরা শীল মাছ হয়ে পড়ে। ওরা দুজন মেয়েটিকে দেখে থুথু ফেলার ভান করে থপ থপ করে হেঁটে চলে গেলো। হঠাৎ দুজন কালো মতন ষণ্ডা এসে মেয়েটিকে টেনে তুলে একটা ঝোপের আড়ালে নিয়ে গেলো। যদিও স্প্যানিয়েল দেখছে এখানে সবাই উলঙ্গ, ঝোপঝাড় দরকার নেই, কাজটা এখানেই করতে পারে। কিন' ওই কালো দুজনের সে কী লজ্জা! ওরা এখন মেয়েটিকে খাবে। খাওয়ার কথা মনে পড়তেই ওর ইদানিংকার সেই রোগটা চাগাড় দিয়ে উঠলো... আবোল তাবোল ভাবনা।

সিমেন্টের বেঞ্চে এক টুকরো ইটের দাগে হিসাব কষতে শুরু করলো... এই মহানগরীতে কে কী খায়? কতো খায়, কীভাবে খায়, কেন খায়? স্প্যানিয়ালের চার্টটা এ রকম : এই নগরীর এক কোটি কুড়ি রাখ মানুষের মাত্র বিরাশি লাখ মানুষ খায় না। বাকি বিশাল সংখ্যক মানুষ (আটত্রিশ লাখ) কেবলই খায়। পানিঘেরা ঘুমটি ঘরের তিনশ মানুষ চৌদ্দ কোটির চৌদ্দ কোটি বাটি রক্ত খায়। কোটি দেড়েক মশা আর ছারপোকা মাত্র আঠারো লিটার রক্ত খায়। দেড় লাখ কোটিপতি প্রতি দিন দেড় কোটি ক্যালরি খায়। ছাপ্পান্ন কোটি মুরগিতে মাত্র ছাপ্পান্ন মাইগ্রেন ক্যালরি হয়। শ’খানেক বিচারপতি আইন গিলে খায়। হাজার কয়েক আইনজীবী দেড় কোটি আশা-ভরসা খায়। কয়েক লাখ শিক্ষাজীবী কয়েক লাখ বিদ্যাবুদ্ধির জার্নাল খায়। কুকুরেরা মাংস পায় না, কেবলই হাড় চোষে। একটা বাঁশ বহনকারী ঠেলাগাড়ি পুরো রাস-া খায়। একটা জেনারেল পাঁচটা দপ্তর খায়। পাঁচ পুকুর তেলাপিয়া পাঁচ টন শেওলা খায়। পাঁচ দপ্তরের আমলারা পাঁচ কোটি মানুষের মগজ শেওলা দিয়ে ঢেকে দিয়ে ঘিলু খায়। আস- একটা দামড়া গরুর মগজ মাত্র সাতশ গ্রাম। পুরো অর্ধশত মন্ত্রীর মগজ সাত মাইগ্রেন। একটি লিফটে এগারো জন মানুষ খায়। এগারো জন মানুষ একটা গরু খায়। একটা গরুতে দেড় কেজি ঘাস খায়। তেপ্পান্ন বিঘা জমির ঘাস কেটে একজন অধ্যাপক হন এবং দেড় কেজি মগজ দেড় লাখে বিক্রি করেন। একটা মসুর ডালের অর্ধেক ঠিক ফোঁড়ার ওপর লাগিয়ে দিলে ফোঁড়া পাকে। চৌদ্দ কোটি মানুষের দঙ্গলকে চীন থেকে ঘুরিয়ে আনলেও বুদ্ধি পাকে না। এক শহর পাতিকাক আঠাশ টন নাড়িভুঁড়ি খায়, এক শহর কিশোর-কিশোরী সিডি খায়, নেট খায়, মোবাইল খায়, চ্যানেল খায়। কাকে কাকের মাংস খায় না। পুলিশে পুলিশের মাংস খায়। প্রতিদিন তিনশ বায়ান্ন বান ঢেউটিন পিটিয়ে সোজা করা হয়। প্রতিদিন পঞ্চাশ লাখ মানুষকে ঠেঙ্গিয়ে সোজা করা হয। কুকুরের লেজ তেল দিয়ে সোজা করলেও বেঁকে যায়। মোটা গর্দান, চিকন পা, ঘাড়ে ভাঁজ, টাকমাথা, পুরু ঠোঁটের সোজা ঘাড় কিছুতেই বাঁকানো যায় না। রমনা পার্কে শত শত মানুষ নির্মল হয়। হাজার হাজার স্প্যানিয়াল নির্মল জীবনকে হাতের মুঠোয় পুরে দাঁড়িয়ে থাকে। মাথাটা ভন ভন করে ঘুরে ওঠে ওর। ভাবতে ভাবতে আবার সেই পাতিকাক এসে আবারো মল ত্যাগ করুক ভাবতে চায়, কিন' কাকটা আসে না। কাকরা বেহায়া নয় মোটেই।
হঠাৎই তন্দ্রা ভেঙে যায় স্প্যানিয়ালের। চোখ কচলে ঘোর ভাঙতে চায়। পারে না। যা কিছু একটু আগে ভেবেছিল সবই বায়োস্কোপ হয়ে কিলবিল করতে থাকে। আশপাশে কোথাও সেই মেয়েটিকে দেখে না। দেখে অন্য একটি মেয়ে শিক্ষানবিস।এতো ছোট যে দেখলে পুতুল মনে হয়। ও- ও একটু পরে খাবার হয়ে যাবে। হয়তো একজন সাধুসন- বা পীর দরবেশ কর্তৃক ফিতা কেটে শুভ উদ্বোধন করা হবে। আবারো মাথাটা গুলিয়ে ওঠে। টলমল পায়ে উঠে দাঁড়ায়। বাড়ি ফিরতে হবে। হাঁটা শুরু করে।

তখনো সূর্য ওঠেনি কেবল পুব আকাশ রাঙা হয়েছে। হাঁটতে হাঁটতে আবার সেই গোরস'ান, সেই শ্মশান। এবার দেখে কয়েকটা বিলবোর্ডে কয়েকটা সুন্দরী মেয়ে মানুষের কাটা মুণ্ড, কাটা হাত-পা নিয়ে পোজ দিচ্ছে। একটা শিশু দেহ দুখণ্ড করে তার নিচে ক্যাপশন- ফিফটি ফিফটি চাঞ্চ। মনটা খুব খারাপ হয়ে যায় ওর। দৌড়ে পালাতে চায়। চোখ বন্ধ করে ছুটতে থাকে। পায়ের তলে নড়েচড়ে উঠছে শত শত লাশ। চিৎ পটাং হয়ে মরা, আধমরা হয়ে শুয়ে আছে অনেকটা মানুষের মতো দেখতে প্রাণীগুলো। কী নেই ওই দলে? সাহেব, মেম সাহেব, পুলিশ, মিলিটারি, আধা বা সিকি মিলিটারি, চোর, ডাকাত, শিক্ষক, সাংবাদিক, মন্ত্রী, সাংসদ, ব্যবসায়ী, ব্যারিস্টার, উকিল, নাপিত, ধর্মযাজক, বিবেক যাজক, আত্মা, শরীর, স্বাধীনতা, সৌম, ছাত্র, রিকশাচালক, কুলি, সম্পাদক, সিনেমার সঙ, নাটকের নট-নটী সব। এতো সব লাশ মাড়িয়ে বাড়ি ফিরতে ফিরতে সুর্য উঠি উঠি করছে। ও ভাবলো আবারো শুয়ে পড়ি। কিন' শুতে গিয়ে এক বিপত্তি, কিছুতেই চিৎ হয়ে শুতে পারছে না। মন বলছে, শরীর বলছে চিৎ হয়ে টান টান সটান শুয়ে পড়তে, কিন' শোয়া হচ্ছে না। যতোবারই চেষ্টা করছে ততোবারই শরীর কুঁকড়ে ব্যাকা হয়ে যাচ্ছে, কারণ কুকুরেরা কখনো চিৎ হয়ে শুতে পারে না।

পুনশ্চ : স্প্যানিয়াল কুকুরটি আসল স্প্যানিশ জাত হলেও আঠারো প্রজন্ম ধরে এদেশের দেশী নেড়িদের সঙ্গে ক্রসবিটের ফলে নেড়ি কুকুরই হয়েছে, কিন' এই জনপদের মানুষের মতো ওরও এক ধরনের অহমিকা- আমরা উঁচু জাতের!!


মন্তব্য

সুমন সুপান্থ এর ছবি

কুকুর-শেয়ালরা হলে হতো। ওরা শেয়ার করতে জানে । সিংহের শিকার করা হরিণের অবশিষ্ট মাংসটুকু খেয়ে হাড়ের সঙ্গে লেপ্টে থাকা মাংসগুলো পাখির জন্য রাখে। পাখিরাও আবার পিঁপড়ে বা অন্যান্য ক্ষুদেদের জন্য রেখে দেয়। সব শেষে পোকাদের জন্যও কিছু না কিছু থাকে।

কিন' মানুষ রাখে না।

ঠিক ।

যতো আপনার লেখা পড়ছি, ভয় বাড়ছে- ইর্ষাও, এরপর,এমন কাচপ্রতিম গল্প পড়ে, কেউ কি আর আমাদের ছাইভষ্ম আর পড়বে !!!
---------------------------------------------------------

আমার কোন ঘর নেই !
আছে শুধু ঘরের দিকে যাওয়া

---------------------------------------------------------
তুমি এসো অন্যদিন,অন্য লোক লিখবে সব
আমি তো সংসারবদ্ধ, আমি তো জীবিকাবদ্ধ শব !

মনজুরাউল এর ছবি

ধ্যাৎ , কী সব ছাঁইপাশ যে বলেন না, আপনাদের লেখা ছাঁইভষ্ম হতে যাবে কেন? বালাইসাট ! চুপিচুপি আপনাকে বলি, কাউকে বলবেন না যেন...অত বড় লেখা কম্পুটাইপ করব আমি?রাত কাবার হয়ে যেত না? হাতে লিখে নামিয়ে দিলাম আড়াই ঘন্টায়।এক সুহৃদ টাইপ করে দিল। মন-ব্যের বেলায় যেমন প্রথম ,কৃতজ্ঞতা প্রাপ্তিতেও তাই প্রথম।
......................................................................................
এ্যাবসল্যুট সত্য বলে কিছু নেই...

.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......

রাফি এর ছবি

আপনার গল্প যে কয়টি পড়েছি অসম্ভব ভাল লেগেছে ।
এটিও লাগল.

-----------------------------------
অর্থ নয়, কীর্তি নয় ,স্বচ্ছলতা নয়-
আরো এক বিপন্ন বিস্ময়
আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভেতরে
খেলা করে;
আমাদের ক্লান্ত করে;

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

মনজুরাউল এর ছবি

প্রচন্ড অসম্ভবে- ধন্যবাদ
-------------------------

এ্যাবসল্যুট সত্য বলে কিছু নেই...

.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

মনজুরুল হক স্টাইলের আঁচ উত্তাপ ক্রমশ টের পাচ্ছি। অভিনন্দন কমরেড।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

মনজুরাউল এর ছবি

আসুন আমরা আঁচ উত্তাপে জ্বলেপুড়ে ইস্পাত হই--------
----------------------------------------------------------
অভিনন্দন কমরেড ।

.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......

মনজুরাউল এর ছবি

আসুন আমরা আঁচ উত্তাপে জ্বলেপুড়ে ইস্পাত হই--------
----------------------------------------------------------
অভিনন্দন কমরেড ।

.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......

কীর্তিনাশা এর ছবি

কি দারুন!!

-------------------------------
সচল আছি, থাকবো সচল!!

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

মনজুরাউল এর ছবি

এখানে জীবন থেমে গেছে করোটিতে,লাশের স্‌তুপে
নির্বাক বসে আমরা--------কেউ কি জাগে ?

.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......

জিফরান খালেদ এর ছবি

শুরু করার সাথে সাথেই কেন জানি বারবার 'মেটামরফসিস' এর কথা মনে পড়ছিলো।

অ্যাবসার্ড এর এমন দারুণ এলিমেন্টাল লেখা অনেক দিন পড়ি নাই।

তবে, নিচে থেকে চার নম্বর প্যারাগ্রাফ আমার পাঠের ফ্লো নষ্ট করসে। তারপর থেকে শেষটুকু পর্যন্ত একটা অমনযোগ ছিল।

তারপরো, সাধুবাদ।

মনজুরাউল এর ছবি

‘মেটামরফসিস’ এর কথা সঙ্গতভাবেই মনে পড়ার কথা।
সম্ভবত বিণয় ঘোষ আর হেনরি মর্গানের ছায়া ও দেখা যেতে পারে।

ধন্যবাদ।

হ্যাঁ,আপনি ঠিক ধরেছেন।
---------------------------------------------------

.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......

জিফরান খালেদ এর ছবি

হেনরি মর্গানের কথা বলছেন? নাহ, আমার ওরকম কিছু মনে হয়নি। বিনয় ঘোষও নয়।

আমি এন্ডিংটা প্রেডিক্ট করতে পারছিলাম শুরু থেকেই। মাঝের রূপকধর্মী দৃশ্যকল্পগুলিই শুধু বিগড়ে দিচ্ছিল মাথাটা। বেশ ভাল অর্থে। তবে, দৃশ্যগুলো যদি লিটারেলি যা বলছে, শুধু তা-ই বোঝায়, তাহলে আরো ফাটাফাটি হয়। অ্যাবসার্ড এর শীর্ষ প্রকাশ। কিন্তু তা বোধহয় নয়, কিছু না কিছু হয়তো আপনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, মানুষ যা প্রতিনিয়ত দেয়। গল্প এবং প্রতিগল্পে।

ও জায়গায় আমার এমনটা হওয়ার কারণ একেবারেই সাময়িক অমনযোগ থেকে হতে পারে। তবে, আবারো পড়লাম, এবং, ঐ প্যারাগ্রাফে এসে আবারো থামতে হলো। এই টেইস্ট তৈয়ার যদি ইচ্ছাকৃত হয়ে থাকে, তাহলে আপনি অসাধারণ কাজ করেছেন।

কাফকার উল্লেখ আনাতে আশা করি রাগ করেননি।

মনজুরাউল এর ছবি

আমারও মনে হচ্ছিল লেখাটার সেরা আলোচনা(বা সমালোচনা) আপনার কাছ থেকেই আসবে,এলো।ধন্যবাদ।
অ্যাবসার্ড অবস'ান থেকে ভিজ্যুয়ালকে আ্যাবস্ট্রাক্টলি ভিজ্যুয়াল করার চেষ্টা ছিল।আসলে স্প্যানিয়াল এর ফোকাস
কে কাম্যুর নির্লিপ্ততায় দেখানোর চেষ্টা ছিল,বোধ হয় পুরোটা সফল হইনি।মূলত: দেখা ব্যাপারটাই আ্যাবস্ট্রাক্ট।
চেয়েছিলাম ও হাঁটুর ওপরকার কিছুই দেখবে না, সেক্ষেত্রে লেখাটা গতি হারাতে পারত।পুনশ্চ: ধন্যবাদ।

.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......

জিফরান খালেদ এর ছবি

হাহাহা... তাই মনে হচ্ছিল আপনার? অবাক হলাম। আপনার তো আমাকে চেনারই কথা না...

সে যাক, লেখাটি শেষতক আরবান ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজড সোসাইটির অ্যাবসার্ড মিনিং নিয়েই হয়তো ভালো দাঁড়ায়। বিশুদ্ধ অ্যাবস্ট্র্যাক্ট হয়ে ওটা হয়নি আর। আপনার ইচ্ছেও হয়তো ছিলো না।

কাম্যুর নির্লিপ্ততা পাইনি আমি। তবে, কাম্যুর নির্লিপ্ততা বলতে আসলে যা বোঝানো হয়, তা নিয়েও আমার অনেক সংশয়। কাম্যুর কাছে সুইসাইড আর মিনিং এর দ্বান্দিকতা অনেক বড় ব্যাপার ছিল, বৈরাগ্য বোধহয় নয়। তাঁর টোনের কথা যদি বলেন, তাইলেও আমি তা পাইনি।

অ্যাবস্ট্র্যাক্ট আর অ্যাবসার্ডকে অনেক সময় গুলিয়ে ফেলা হয়। অ্যাবসার্ডের ভিজুয়্যালাইজেশান শেষ পর্যন্ত সম্ভবপর, কিন্তু, এক্কেরে লিটারেলীও যদি ধরি, অ্যাবস্ট্র্যাক্ট এর ক্ষেত্রে সে কথা খাটে?

আর, অ্যান্টি-ফর্মের ব্যাপারে আমি আপনার কথা শুনতে চাই। আমার নিজের কিছু চেষ্টা ছিল এ ব্যাপারে। তাই আমি আগ্রহী।

ভাল থাকুন।

উদাস এর ছবি

দুর্দান্ত। খুব দ্রুত আপনার লেখার ষ্টাইলের ভক্ত হয়ে যাচ্ছি।

মনজুরাউল এর ছবি

খুব খারাপ কথা...

.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......

নিঝুম এর ছবি

চমত্‌কার একটা গল্প পড়লাম । উত্তাপ টা আঁচ করতে পেরেই বোধহয় । এন্টি গল্প নিয়ে খানিক্টা কৌতূহল তো ছিলই , এখন কিছুটা অনুমান করতে পারছি বলেই মনে হয় । লেখার স্টাইল্টা খুব ইউনিক । একেবারে নিজস্ব । এই ব্যাপারটাও খুব টানলো । আরো অনেক অনেক গল্প লিখে যাবেন, এই আশা...

--------------------------------------------------------
... বাড়িতে বউ ছেলেমেয়ের গালি খাবেন, 'কীসের মুক্তিযোদ্ধা তুমি, কী দিয়েছ আমাদের'? তিনি তখন আবারো বাড়ির বাইরে যাবেন, আবারো কান পাতবেন, মা জননী কি ডাক দিল?

---------------------------------------------------------------------------
কারও শেষ হয় নির্বাসনের জীবন । কারও হয় না । আমি কিন্তু পুষে রাখি দুঃসহ দেশহীনতা । মাঝে মাঝে শুধু কষ্টের কথা গুলো জড়ো করে কাউকে শোনাই, ভূমিকা ছাড়াই -- তসলিমা নাসরিন

মনজুরাউল এর ছবি

ধন্যবাদ নিঝুম। তবে ভুলেও আমার লেখার ভক্ত হতে যাবেন না।সুকুমার সাহিত্যবোধ, সহজিয়া স্বপ্নালোকের ভালোলাগা সব হাওয়া হয়ে যাবে...তখন দেখবেন হাত-মাথা কেবল ঝাঁইঝাঁই করছে...

.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......

নিঝুম এর ছবি

এখনই তো ঝাঁই ঝাঁই করছে । ভক্ত হয়ে গেলাম নাকি ???
--------------------------------------------------------
... বাড়িতে বউ ছেলেমেয়ের গালি খাবেন, 'কীসের মুক্তিযোদ্ধা তুমি, কী দিয়েছ আমাদের'? তিনি তখন আবারো বাড়ির বাইরে যাবেন, আবারো কান পাতবেন, মা জননী কি ডাক দিল?

---------------------------------------------------------------------------
কারও শেষ হয় নির্বাসনের জীবন । কারও হয় না । আমি কিন্তু পুষে রাখি দুঃসহ দেশহীনতা । মাঝে মাঝে শুধু কষ্টের কথা গুলো জড়ো করে কাউকে শোনাই, ভূমিকা ছাড়াই -- তসলিমা নাসরিন

সবজান্তা এর ছবি

সচলায়তনে যে সকল নাম দেখা গেলে, তাঁদের লেখা অবশ্যই পড়তে হবে, আপনিও তাঁদের দলে ঢুকে গেলেন।


অলমিতি বিস্তারেণ

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

গল্পে এমন সাহস খুব দরকার। কন্টেন্ট চেঞ্জ করার সাহস করতে না পেরে কত গল্পকার হারিয়ে গেল।

.................................
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

ঝরাপাতা এর ছবি

অসাধারণ একটা গল্প পড়লাম, নিত্যদিনের ঢাকার ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র দৃশ্যগুলো লেখক জীবন্ত করেছন নিপুণতায়।


রোদ্দুরেই শুধু জন্মাবে বিদ্রোহ, যুক্তিতে নির্মিত হবে সমকাল।


বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

খুব ভালো লাগছে আপনার লেখা। লেখার স্টাইলটা দারুণ লাগলো... তবে আপনার মুক্তিযুদ্ধকালীন সেই ছবিটা দেখার ইচ্ছা এখনো ত্যাগ করিনি।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

মনজুরাউল এর ছবি

ধন্যবাদ। ছবি হবে না। লেখা হবে। শিগগিরই হবে।

.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।