স্যাঙাৎ শয়তান । অণুঃআতঙ্ক - ১

মন মাঝি এর ছবি
লিখেছেন মন মাঝি [অতিথি] (তারিখ: বুধ, ১৮/০৫/২০১১ - ৪:৩৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

স্যাঙাৎ শয়তান

ঠিক এক মাস আগে আমার জাহান্নামের পথে হাঁটা শুরু।

ঘটনার শুরু এক সী-ফুড রেস্তোরাঁয়। আমার ওয়েটারের বাচনভঙ্গীতে অদ্ভূত এক এ্যাকসেন্ট – প্রায় পূর্ব ইউরোপীয়। কিন্তু না, তাও পুরোপুরি নয়। আমি তাই ওকে জিজ্ঞেস করলাম ও কোত্থেকে এসেছে। “জাহান্নাম,” সপাট জবাব। তারপর আমি কোনরকম প্রতিক্রিয়া জানানোর আগেই ও আবার বলে উঠল, “...ইয়ে, ঠিক জাহান্নাম সদর না, তবে সন্নিকটবর্তী কাউন্টি। দোযখের উপশহর থেকে।”

আমি বলতে বাধ্য হলাম, “হোয়াট দ্য হেল্‌...কি আবোল-তাবোল বকছ তুমি ?”

“ঠিক!” ওয়েটার জবাব দিল। “সত্যি, হোয়াট দ্য হেল্‌ ! দেখুন, আমি খাস্‌ শয়তান না বটে, তবে কোন যেনতেন পিশাচের চেয়ে বড় বৈকি ! প্রিন্স অফ ডার্কনেস -এর বদলে ধরুন, আর্ল অফ ডার্কনেস ।”

“আচ্ছা, তাই নাকি ?” বখশিশ পাবার এটা কোন আজব কৌশল মনে করে শ্লেষমাখা স্বরে বললাম।

“হ্যাঁ, তা-ই,” খানিকটা তিক্ত কণ্ঠে বললো সে, “আর আমি এটা প্রমানও করতে পারব। আপনি প্রমান চান ?”

“আলবাৎ,” আবারও বিদ্রুপাত্নক স্বরে বলি আমি। পৃথিবীতে খুব বেশি লোক এমন দাবী করতে পারবে না যে একটি মাত্র শব্দের জন্য তাদের সম্পূর্ণ জীবন ধ্বংস হয়ে গেছে। কিন্তু আমি পারি। আর সেই শব্দটা হচ্ছে - “আলবাৎ।” আমি যদি সেদিন শুধু এইটুকু মাত্র বলতাম, “না, ধন্যবাদ।”

“বেশ। শুরুতেই বলে রাখি, খাস্‌ শয়তানের মত আমি কিন্তু আপনাকে সুনির্দিষ্টভাবে পাপের পথে প্রলুব্ধ করতে পারব না – তবে আমি সাদামাটা ভাবে পাপের কথা আলোচনা করতে পারি। উদাহরনস্বরূপ, আপনি যদি এ্যালকোহলিক হন – আমি আপনার সামনে একটা মদের বোতল এনে রাখতে পারব না বটে, তবে কথাচ্ছলে একথা উল্লেখ করতেই পারি যে এক গ্লাস ভাল হুইস্কি সাওয়ার আমার খুবই প্রিয়। অবশ্যি, আপনি এ্যালকোহলিক নন। আপনি একজন ঈর্ষাপরায়ন ও কোপনস্বভাবের মানুষ। আমি জানি, আমি যদি আপনাকে বলি যে আপনার কলেজ জীবনের ঘনিষ্টতম বন্ধু ড্যান, আপনার সে সময়ের গার্লফ্রেণ্ডের সাথে শুয়েছিল, তাহলে আপনি এখনো রাগ সামলাতে পারবেন না। শয়তানের মত আমি এখন ড্যানকে এনে আপনার সামনে হাজির করতে পারব না, বা আপনার ক্রোধকে কোন সরাসরি পন্থায় উস্কে দিতেও পারব না , তবে আমি অতীতে আপনার ভেড়ুয়া বনার ঘটনা নিয়ে কথা প্রসঙ্গে আলোচনা করতে পারি বৈকি – যেমন এখন করছি।”

Shengat_Shoitan

দুই সপ্তাহ পরে, ড্যানের ফোন পেলাম। ও এখন এ শহরেই জানিয়ে জানতে চাইল রাতটা আমার বাসায় থাকতে পারবে কিনা। রাগতঃভাবে আমি রাজি হলাম। ড্যান আমার বাসায় পৌঁছুতে না পৌঁছুতেই ওকে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করলাম। হ্যাঁ, যা ভয় করেছিলাম তাই, ওয়েটারটা ঠিকই বলেছিল। এর পরের ঘটনা যেটুকু মনে পড়ে – আমি ড্যানকে রান্নাঘরের মেঝেতে পেড়ে ফেলে উপর্যুপরি ঘুষি মেরে যাচ্ছি, আর মেঝের টালিগুলো রক্তে ভেসে যাচ্ছে।

“খাস্‌ শয়তানের মত,” আমি যখন ওয়াইনের গ্লাশে চুমুক দিচ্ছি তখন অন্ধকারের জমিদার আর্ল অফ ডার্কনেস বলছিল, “আমি কারো পুরো শরীরে ভর করতে পারি না বটে, তবে দেহের যে কোন নির্দিষ্ট প্রত্যঙ্গে ভর করতে পারি। যেমন, ধরুন, কারো হাত দুটোতে।”

দুই সপ্তাহ পরে আমি যখন ড্যানকে ঘুষি মারছি, আমার মুঠির উপর নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেললাম আমি। আর যদিও আমার সমস্ত রাগ ততক্ষনে উপে গেছে – আমি কিছুতেই ঘুষি মারা বন্ধ করতে পারলাম না। আমি যতই থামতে চেষ্টা করি না কেন, আমার বদ্ধমুঠি দুটো আমাকে উপেক্ষা করে স্বয়ংক্রিয় পিস্টনের মত চলতেই থাকল। তবে একসময় তারা থামল এবং খুললো বটে, কিন্তু না, তারপরেই আবার ড্যানের ঘাড় খিচে ধরে মোচড়াতে শুরু করল। আমি তখন কাঁদছি, চিৎকার করছি, আমার হাত দুটো ফিরিয়ে নিতে আপ্রাণ চেষ্টা করছি। কিন্তু পারছি না। না, ওরা যেখানে ছিল সেখানেই থেকে যায়। মোচড়াতেই থাকে। যতক্ষন না ড্যান মারা যায়।

“আমি এক বাণে কাউকে মেরে ফেলতে পারি না,” ব্রেড-রোল গুলি বের করে আনতে আনতে ওয়েটার বলতে থাকে, “তবে আমি তাদের আহত করতে পারি বৈকি।”

আমি গ্রেপ্তার হওয়ার এবং আমার বিরুদ্ধে সেকেণ্ড-ডিগ্রী হত্যার অভিযোগপত্র দাখিলের এক হপ্তা পর বেইলিফ তখন আমাকে আদালতে নিয়ে যাচ্ছে। এমন সময় আমার পা’ দুটো হঠাৎ করেই একদম টেঁসে গেল। একটানা পর পর বেশ কিছু জোরালো কড়াৎ-কড়াৎ মট্‌-মট্‌ শব্দ হচ্ছিল। আমি নীচের দিকে তাকাতেই টের পেলাম সবাই কেন আমার দিকে তাকিয়ে অমন খাবি খাচ্ছে : আমার পা’ দুটো অকথ্য সব কোন সৃষ্টি করে একেবারে দুমড়ে-মটকে গেছে। এক জোড়া প্রেট্‌জেলেও এর থেকে অনেক কম প্যাঁচ বা কোন থাকে। পরে, ডাক্তাররা আমাকে জানিয়েছিলেন আমার পা’ বাইশটারও বেশি জায়গায় ভেঙ্গেছে। তারা আরো বলেছিলেন, এমন ঘটনা কিভাবে সম্ভব সে সম্পর্কে তাদের কোন ধারনাই নেই। কিন্তু আমার আছে।

“সবশেষে... আমি আপনাকে চিরকালের জন্য জাহান্নামে পাঠাতে পারব না বটে, তবে সাঁইত্রিশ বছরের জন্য পাঠাতে পারব। দু’য়েক মাস এদিক-ওদিক হলেও হতে পারে,” প্লেট সরাতে সরাতে ব্যাখ্যা করে আমার ওয়েটার।

ঐ সময় পুরো ব্যাপারটাই আমার কাছে ব্যাপক হাস্যকর ঠেকেছিল। তাই একটা দিন পার না হতেই আমি সেই আজব ওয়েটারটাকে কার্যতঃ ভুলেই গেছিলাম।

কিন্তু এখন, বিধ্বস্ত দু’ পায়ে পূর্নদৈর্ঘ্য কাস্ট নিয়ে জেল-হাসপাতালের ওয়ার্ডের বিছানায় শুয়ে, আমার সবকিছু খুব স্পষ্ট ভাবেই মনে পড়ে যায়। আমি জানি না এই হত্যাকাণ্ডের জন্য আমাকে কতদিন জেল খাটতে হবে। তবে সত্যি কথা বলতে কি, এই জেল খাটার সময়টা নিয়ে আমি আসলে তেমন চিন্তিত নই। আমি অনেক বেশি চিন্তিত আমার মৃত্যুর পরে অপেক্ষমান সাঁইত্রিশটা বছরের জন্য।

--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

মূলঃ ওয়াল্টার ক্যাম্পবেল
অনুবাদঃ মনমাঝি

--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------



মন্তব্য

ফাহিম হাসান এর ছবি

ভালোই। কিন্তু খাদকটা বেস্ট দেঁতো হাসি

মন মাঝি এর ছবি

আচ্ছা একটা কুইজ দেইঃ আপনাকে একটা মৌ মৌ সুগন্ধ ছড়ানো, মধুর চেয়েও মিষ্টি, পাকা টসটসে জিভে জল আসা, ফাস্টো কেলাস চাপাইনবাবগঞ্জের এক লম্বর ল্যাংড়া আম (বা আপনার সবচাইতে প্রিয় কোন খাবার) দিয়ে যদি বলা হয় -- হয় এটার ছবি তোলো -- ভালো ছবি হলে ফোটোগ্রাফিতে একটা পুরস্কার পাবা, অথবা খেয়ে ফেল। কিন্তু একটা করলে আরকটা করতে পারবা না। ছবি তুললে আগামী দশ বছর এটা খেতে পারবা না, আর খেলে আগামী দশ বছর ছবি তুলতে পারবা না।

আপনি কি করবেন ? চোখ টিপি

****************************************

অপছন্দনীয় এর ছবি

মৌ মৌ সুগন্ধ ছড়ানো, মধুর চেয়েও মিষ্টি, পাকা টসটসে জিভে জল আসা, ফাস্টো কেলাস চাপাইনবাবগঞ্জের এক লম্বর ল্যাংড়া আম

ফাহিমের খবর জানি না, তবে এইসব বিশেষণ দেয়ার পরে আমার সামনে ওই জিনিস এনে রাখলে আমি কোন শর্তফর্ত পড়ে দেখার চেষ্টাও করবো না। আগে ওটা পেটের মধ্যে যাবে, তারপরে দেখা যাবে শর্ত কি ছিলো।

এমনিতেও আজ পর্যন্ত নিজের রান্না করা কোন খাবারের ছবি তুলতে পারিনি মন খারাপ ক্যামেরা নিয়ে আসার আগেই ওগুলো পেটের মধ্যে সেঁধিয়ে যায়।

ফাহিম হাসান এর ছবি

আগে আপনাকে ধরে মাইর দিব এমন বিদঘুটে কুইজের জন্য। তারপর আমটা চেটেপুটে খাব, পছন্দনীয় ব্যাটার চোখের সামনে।

------

পেটুক মানুষ রে ভাই। আপনি ঠিকই ধরেছেন। দশ বছর আম না খেয়ে থাকা সম্ভব না। দেঁতো হাসি

অপছন্দনীয় এর ছবি

মাইর দেওয়াটা যেহেতু খাওয়ার আগের কর্ম, ওটা সেরে আসতে আসতে আমের আঁটি ছাড়া আর কিছু বাকি থাকবে না দেঁতো হাসি

পছন্দনীয় কি করবে জানি না, তবে অপছন্দনীয় আছে আমটা সাপটে দেয়ার জন্য :D।

আব্দুর রহমান এর ছবি

সুন্দর।

------------------------------------------------------------------
এই জীবনে ভুল না করাই সবচেয়ে বড় ভুল

সংসপ্তক এর ছবি

চলুক

.........
আমাদের দুর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা
সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখণ্ড বস্ত্র মানবিক;
আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আচ্ছা আফগানিস্তান ভ্রমণ/অবস্থান পর্ব নিয়ে লেখার কী হলো?


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মন মাঝি এর ছবি

কি আর হবে। মনমাঝির নৌকার ফুটো দিয়ে কাহিনিটা পানিতে পড়ে ডুবে গেছে। মন খারাপ

****************************************

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

কী হবে- সেটা প্রথম ফ্ল্যাশব্যাকের পরেই অবশ্য বোঝা যায়। আরো আসুক।

মন মাঝি এর ছবি

হ্যাঁ, তবে আসল হওয়াটা বোধহয় সাঁইত্রিশ বছর দোজখবাসে। আমার বাংলায় শেষ পাঞ্চলাইনের ধাক্কাটা ঠিকমত ফুটেছে কিনা বুঝতে পারছি না।

****************************************

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

চলুক

মন মাঝি এর ছবি

অনেক দেরিতে হলেও -- আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

****************************************

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।