শিকড়ে রক্তের দাগ

মৃদুল আহমেদ এর ছবি
লিখেছেন মৃদুল আহমেদ (তারিখ: বিষ্যুদ, ২৬/০৯/২০১৩ - ৯:১৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

২০০৯-এ আমি একবার বেশ লম্বা সময়ের জন্য মন্ট্রিয়ল গিয়েছিলাম। সেই শহরের কিছু গাড়িঅলা মানুষ আমাকে অপার করুণা দিয়েছিলেন।গাড়িতে করে অনেক ঘুরিয়েছিলেন তাঁরা। শহরের আনাচে কানাচে "অনেক ঘুরেছি আমি বিম্বিসার অশোকের ধূসর জগতে"! মন্ট রয়্যাল পাহাড়ের ওপরটা তো মুখস্থ হয়ে গিয়েছিল। পাহাড়চূড়ায় দাঁড়িয়ে সমস্ত শহর জুড়ে রাতের আলোকসজ্জা দেখা ছিল আমার প্রিয় অভ্যাস।
সেরকমই অনেক ঘোরাঘুরি করে এক রাতে ফিরছি বাসার দিকে! অচেনা এক রাস্তায় মোড় নিতেই আমি চেঁচিয়ে উঠলাম, আরে এ কী?
রাতের অন্ধকারে কী দেখে আমি চেঁচিয়ে উঠলাম সেটা দেখার জন্য গাড়ির সবাই হুড়মুড়িয়ে জানলা দিয়ে তাকাল, কিন্তু বাইরে থমথমে নির্জন রাস্তা ছাড়া আর কিছু নেই দেখে অবাক হয়ে মুখ ফিরিয়ে আমার দিকেই তাকাল। আমি একটা বিচিত্র হাসি দিলাম, যার কোনো মানে নেই। কারণ যা দেখে আমি চেঁচিয়ে উঠেছিলাম তা বোঝানো সবাইকে কঠিন হবে। দুই চারজন শুনে হাসতেও পারে।
নিউইয়র্ক শহরে এসেও আমি একই রোগে আক্রান্ত হয়েছি। রাস্তার মোড়ে মোড়ে গিয়ে চমকে উঠি। তবে এখন আর চেঁচাই না, ফিসফিসিয়ে নিজেকেই বলি, এ কী? আরে, এ কী কাণ্ড!
মন্ট্রিয়ল শহরেরটা ঘটনাটা বলি।
সেই ল্যাম্পপোস্ট জ্বালা আধো অন্ধকার রাস্তা দিয়ে ছুটে চলতে চলতে আচমকা একটা মোড় দেখে আমার মনে হয়েছিল, আরে এটা তো কাকরাইলের দিক থেকে আসা বেইলি রোডের অফিসার্স ক্লাবের মোড়টা! এক্ষুনি ডান দিকে ঘুরলেই দেখতে পাব বেইলি রোডের অতি পরিচিত চেহারা! কিন্তু মন্ট্রিয়ল শহরে তা কী করে সম্ভব? কোন জাদুতে আমার শহরের একটা রাস্তা চলে আসবে এখানে?
সদ্য দেশ ছেড়ে এসেছি এবং জীবনের প্রথম বিদেশ দেখছি, বিস্ময়ের পাশাপাশি কাজ করে দেশের জন্য এক ধরনের টনটনে ব্যথা। তেমনই একটা ভ্যাবাচ্যাকা লাগা অস্থির সময়ে আচমকা বেইলি রোডের মোড় আবিষ্কার করাটা আমার জন্য ছিল বেশ একখানা স্নায়বিক ধাক্কা!
কিন্তু নিউইয়র্ক শহরে এসে আবাসিক এলাকাগুলো ঘুরে দেখতে দেখতে আরো অবাক লাগে। আরে, এটা তো আমার ছোটবেলার ঢাকা শহর! আমি তো এমনই এক ঢাকায় বড় হয়েছি! পরিষ্কার পিচঢালা রাস্তা, প্রত্যেক বাড়ির সামনে ছোট ছোট বাগান, গাছপালা। ফুলের গাছে পানি দিচ্ছে এক বুড়ো দাদি। রাস্তা দিয়ে অল্প দু-চারটা গাড়ি মাঝে মাঝে হুশশ করে চলে যায়, এছাড়া শুনশান নীরবতা। ফুরফুরে বাতাসে ঝকঝকে রোদ, ঘন নীল আকাশ। কোথায় যেন আজ দারুণ উৎসব হচ্ছে এমনই একটা আমেজ চারদিকে।
আশির দশকের শুরু তখন। আমি স্কুলের ছাত্র। হাফপ্যান্ট পরি, সিঁথি করে চুল আঁচড়াই, জুতোমোজা পরে স্কুলে যাই। টিফিন টাইমে ছোঁয়াছুঁয়ি খেলি, দুপুরে বাসার বারান্দায় বসে বই পড়ি। রোজ বিকেলে বাড়ির পাশে বিশাল মাঠে খেলতে যাই, কোনো কোনোদিন মায়ের কড়া নির্দেশে দুপুরে ঘুমোতে হয়, ঘুম থেকে উঠে ভোঁতা মাথা নিয়ে বারান্দায় বসে দেখি আস্তে আস্তে সূর্যটা ডিমের কুসুমের মতো লাল হয়ে শেষে একটা দিগন্তরেখা হয়ে গেল, চোখের সামনে একটা আস্ত বিকেল অন্ধকারের ছায়ায় ঢাকা সন্ধ্যা হয়ে গেল! পাখিদের ডাকাডাকিতে কান পাতা যায় না!
ঐ সময়টায় প্রায়ই স্কুল থেকে ফেরার পথে কী যেন একটা ঘটত আমার। আচমকা থেমে অবাক হয়ে হা করে তাকিয়ে থাকতাম চারদিকে। মাথার ওপরে মেঘভাসা উদাস নীল আকাশ, মাথা উঁচিয়ে ঝাঁকড়া চুলের গাছগুলো গর্বভরে দাঁড়িয়ে আছে, চারদিকে ঝকঝক করছে রোদ, কী অসীম প্রাণশক্তিতে যেন চারদিকটা গমগম করছে! চুপচাপ নির্জন রাস্তা, দু-একখানা গাড়ি আসে যায়। কাছেই কোথায় যেন কোন গাছ থেকে একটা কাক থেমে থেমে ডাকে। দূরে শোনা যায় রেলস্টেশনের শান্টিংয়ের গুমগুম আ্ওয়াজ। সবকিছু মিলিয়ে কী একটা আশ্চর্য অদ্ভুত মাদকতাভরা সৌন্দর্য আমাকে পাগল করে দিত!
নিউইয়র্কের মতো এই ব্যস্ত শহরে হাঁটতে হাঁটতে আমার পুরনো সেই কিশোর শহরের কথা বার বার মনে পড়ে। আমার শহর তো এমনই ছিল। এই দেশে ডলারের চিন্তায় অস্থির মানুষের কিছু দেখার সময় নেই। এদেশিদের তো নেইই, বাঙালিদেরও না। কিন্তু সাজানো গোছানো এই নির্জন পরিচ্ছন্নতার ভেতরে, এই বিষহীন নির্মল বাতাসে আমার সেই ছেলেবেলার শহরের ঘ্রাণ স্পষ্ট অনুভব করি।আর টের পাই, কী সুন্দর একটা শহরকে আমার কাছ থেকে আস্তে আস্তে কেড়ে নেয়া হয়েছে। বিষিয়ে দেয়া হয়েছে মানুষের মন আর পরিবেশ। বাসায় ফেরার পথে অন্য বাড়ির বাগানের ভেতর থেকে মুখ বের করা মোরগঝুঁটি ফুল দেখার যে মুগ্ধতা, তাকে খুব গোপনে কেড়ে নেয়া হয়েছে। ভোররাতের কুয়াশামাখা অন্ধকারে বাবা আর ভাইবোনদের হাত ধরে হাঁটতে বের হওয়ার সরল আস্থার ছবিটাকে খুব যত্নের সাথে মুছে দেয়া হয়েছে!
সেই ঢাকা আমার থেকে এখন অনেক দূরে।
আমার সেই ঢাকা আসলে আজ মৃত।
কিছু হত্যাকে হত্যা বলে সনাক্ত করা যায় না। কিছু বেঁচে থাকা মৃত‌্যুর চেয়েও করুণ। কিছু খুনি চিরকাল নন্দিতই থেকে যায়।
এই শহরের কথা কেউ কখনো ভাবে নি। এর মূল প্রাণশক্তি নদীটির কথাও কেউ ভাবে নি।
নদীটা তার পচাগলা শরীরটা নিয়ে এখনো কুলুকুলু করে বয়ে চলছে আর শহরটা শরীরে লক্ষ গাড়ির চাকার দাগ নিয়ে থমকে আছে।
কিছুদিন আগেই তো কথা হয়েছিল একজন প্রাক্তন নির্বাচন কমিশনারের সাথে। তিনি বিক্ষুব্ধ গলায় বলেছিলেন, অনেক বলেছি রে ভাই, কোনো সরকারই ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্র ঢাকা থেকে নড়াতে চায় না। তাদের আশঙ্কা, বাণিজ্যিক বা অর্থনৈতিক শক্তি যদি দেশ জুড়ে বণ্টন হয়ে যায়, তাহলে সারা দেশের কর্মীদের আনুগত্য আর আগের মতো থাকবে না।
এটা কোনো কথা? এই এক শঙ্কার কারণে সবকিছুর পাহাড় বানাতে হবে এই শহরেই? আরো কত বড় পাহাড় দরকার? কত হাজার মরলে পরে মানবে তুমি শেষে, বড্ড বেশি মানুষ গেছে বানের জলে ভেসে?
তালিকায় এখন যুক্ত হয়েছে সুন্দরবন। শহর গেছে, এবার যাবে বন। মানুষের হিংস্রতা দেখে থমকে অবাক হয়ে তাকাবে বনের পশু।
মৃত শহরের যন্ত্রণা নিয়ে আমার কথা আমি লিখে গেলাম। তবে এটা প্রথম পর্ব মাত্র। দ্বিতীয় পর্ব লেখা হবে মৃত সুন্দরবন নিয়ে। লিখবেন আরো অন্য কেউ।
এই তো, আর কয়টা দিন বাকি!


মন্তব্য

তাসনীম এর ছবি

এই ভ্রম আমারও মাঝে মাঝে হয়। হঠাৎ হঠাৎ আমি শৈশবের ঢাকা শহরে এই অচেনা প্রবাসে পেয়ে যাই। সতের বছরের প্রবাস জীবনে থাকার পরেও সেই ভ্রম যায় নি।

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

সাফি এর ছবি

লেখাটা পড়ে আমার ও মনে হচ্ছিল স্মৃতির শহরের কথা।

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

আসলে ভ্রমটার বসবাস তো মাথার ভেতরে। কেউ হয়ত এই ভ্রম সাত দিনেই কাটিয়ে ফেলে, কারো সতেরো বছরেও কাটে না!

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

তারেক অণু এর ছবি
মৃদুল আহমেদ এর ছবি

মন খারাপ

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

সাফি এর ছবি

ভাই আপনে নিউইয়র্ক শহরে শুনশান নীরবতার রাস্তা পেলেন কোথায়?? অ্যাঁ

লোকাল‌য় এর ছবি

ব্রুকলীন আর কুইন্স এর কিছু জায়গা আছে এমন। জ্যাকসন হাইটস এর আশেপাশেও দেখেছি।

সাফি এর ছবি

সেরকম রাস্তা তো ঢাকায় ও আছে। মোহাম্মদপুরে বাবর রোড বা স্যার সৈয়দ আহমেদ রোড, বা বড়লোক পাড়ার গুলশান, বনানী আবাসিক এলাকা, বারিধারার রাস্তা গুলোও তো বেশীরভাগ সময়ই খালিই থাকে।

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

হুমম। অন্য জায়গার কথা তো জানি না ততটা। জ্যাকসন হাইটসের যে সেভেনটি ফোর্থ রোড এখানকার গাউসিয়া রোড, দিনমান যেখানে বাঙালির ভিড়, সেটা রুজভেল্ট অ্যাভিনিউ ক্রস করে উডসাইডের দিকে আমার বাড়ির কাছে এসে একটা চুপচাপ রাস্তা হয়ে গেছে। এমন নীরব রাস্তা তো আশপাশে আমি অনেক দেখলাম! আবাসিক এলাকার ভেতর দিকে খুব বেশি গাড়ি তো চলতে দেখি না!
আর এখন গুলশান বনানী মোহাম্মদপুর এলাকায় অমন ফাঁকা রাস্তা আছে বটে, কিন্তু আগে পুরো ঢাকাতে প্রায় সব বাড়ির সামনেই ছিল বাগান, রাস্তাগুলো ফাঁকা পড়ে থাকত। স্রেফ রিকশা চলত টুং টাং করে।
আর তখনকার বাতাসটা অনেক আরামের ছিল, ঢাকার বাতাস এ্খন বিষিয়ে ভারী হয়ে গেছে। শরীর ক্লান্ত লাগে ভীষণ!

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

সাফি এর ছবি

আহা ক'দিন আগেই হাটবাজারে সাঁটিয়ে বিরিয়ানি খেয়ে এলাম। আপনি এত কাছে আছেন জানলে তো আওয়াজ দিতাম।

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

রেস্ট্রিক্ট করার নিয়ম ভুলে গেছি। বহুদিন পার সচলে ঢুকলাম কিনা। নিয়মটা দেখতেও এখন আলসেমি লাগছে। আপনাকে মেসেজে সেলফোন নাম্বার দিয়ে দিলাম।যোগাযোগ করেন। একসাথে নাহয় কোনোদিন সাঁটিয়ে খাওয়া যাবে! হাসি

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

লোকাল‌য় এর ছবি

আমার হয়েছিল প্রথম বৃষ্টি দেখে। এখনও হ্য়।

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

হুমম। আসলে একেকজনের একেকরকম হয়। আমার বৃষ্টিতে কিছু হয় নি। কিন্তু রোজ সকালে ঘুম ভেঙ্গে জানলা দিয়ে গাছের পাতার ফাঁকে উজ্জ্বল নীল আকাশ দেখলেই ছোটবেলায় ফিরে যাই!

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

মুহাম্মাদ তারিক সাইফুল্লাহ এর ছবি

মৃ ভাই, লেখার শেষের অংশটা পড়ে মনটা হু হু করে উঠলো! কদর্যের আগ্রাসন রুখতে হবে আমাদেরই। লংমার্চ হবে এখানে...জানাব কী হলো।

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

হুমম। এই সরকারের কিছু অহেতুক গোয়ার্তুমির অভ্যাস আছে। হয়ত সিদ্ধান্ত বদলাবে, কিন্তু কিছু মানুষ মারা যাবার পর।

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

নীলকমলিনী এর ছবি

আর আমার ছোট বেলার ঢাকা ছিলো আসলেই ছিমছাম সুন্দর শহর। ৬৭,৬৮ সালে বাবা মা কে দেখেছি রিকশার হুড ফেলে তেজগাঁ থেকে নিউ মার্কেট যেতেন বাজার করতে ফাঁকা গ্রীন রোড ধরে। আমি যখন কলেজে পড়ি তখনো ঢাকায় অনেক বড় বড় গাছ ছিলো। দুপুরে নিউ মার্কেট ছিলো প্রায় খালি। আশি সালে যখন আমেরিকায় আসি তখনো অনেক অন্য রকম ছিলো। ৯৩ এ যখন দেশে গেলাম ৮৪ র পরে , নয় বছর পর। মনে আছে মাঝ রাতে আজিমপুরে যাচ্ছি মার বাসায়। গাড়ী যখন গ্রীন রোড ধরে যাচ্ছে, আমি বলে উঠলাম আমরা সদর ঘাটে যাচ্ছি কেন? মনে হচ্ছিলো আমি পুরানো ঢাকায় যাচ্ছি। একজন বলল এটা গ্রীন রোড। ভাঙ্গা চোরা এই রাস্তাটি আমি চিনতেই পারিনি। আমি যে গ্রীন রোড কে রেখে গিয়েছিলাম , সে ছিলো চওড়া একটা রাস্তা, চারপাশে দোকান , বেতের ফার্নিচার কেনার জন্যে সবাই ওখানেই যায়।
এরপর আর কখনই আমি ঢাকাকে চিন্তে পারিনি। এখন মনে হয় একা একা কোথাও এতেও পারবো না। প্রথম প্রথম আমিও অনেক মিল খুঁজে পেতাম অনেক কিছুতে। আজকাল দূরে কোথাও বেড়াতে গেলে চারপাশে খালি জমি দেখলে খালি মনে হয় এখান থেকে কিছু জমি যদি আমার দেশে নিতে পারতাম তাহলে দেশের মানুষ একটু হাত পা ছড়িয়ে থাকতে পারতো।
মৃদুল লেখাটি খুব ভালো হয়েছে। পড়ে দেশের জন্যে মন খারাপ লাগছে।

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

নীলুদি, আপনি তো ষাটের দশকের কথা বলছেন। আমরা আশির দশকের পোলাপান হয়েই এই শহরের জন্য কষ্ট হয়। কদিন আগে ভার্জিনিয়াতে একজনের বাড়িতে গিয়েছিলাম। তাদের খোলা বারান্দার পাশেই বিশাল একটা মাঠ। সেখানে কাশবনের মতো ফুল ফুটে আছে। এমন চোখ জুড়ানো সেই বারান্দা ছেড়ে সরে আসতে মন চাইছিল না। ভারী আফসোস হয়েছিল, একজনের বাড়ির পাশে যা আছে, তা আমি ঢাকাতে পয়সা দিয়েও কোথাও পাব না! মনে হয়েছিল এই মাঠটা যদি কোনোভাবে ঢাকায় নিয়ে ফেলতে পারতাম, তাহলে দম আটকে মরার নাগরিক জীবনটার ইতিহাস অন্যরকম হত!

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

@নীলকমলিনী,
আরো আগে, ধরুন চল্লিশের দশকে, তখনও নিউমার্কেটের জন্ম হয় নি, গ্রীন রোড পুরোটাই ছিল একটা স্রোতস্বিনী খাল। এর দুপাশে ছিল সবুজ ক্ষেতের সমারোহ আর পাখির কলতানে মুখর এক অনাবিল প্রশান্তিময় প্রাকৃতিক পরিবেশ।

গান্ধর্বী এর ছবি

লেখাটা পড়ে মনে হচ্ছে একদিন আমারও এমন মনে হবে মন খারাপ

ভাল লাগল।

গান্ধর্বী

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

কেন, আপনারও বুঝি দেশ ছাড়ার সময় সমাগত প্রায়?

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

মন খারাপ

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

মন খারাপ

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

অতিথি লেখক এর ছবি

আমরা নতুন প্রজন্মরা আপনাদের কাছ থেকে সেই আমলের ঢাকাকে জাঞ্ছি, আর ভাবছি- কী অপরাধ করেছিলাম, যে কারণে এখন ঢাকাতে বিশুদ্ধ নিশ্বাসও নিতে পারি না!

- এস এম নিয়াজ মাওলা

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

অপরাধ করে শাস্তি পেলেও শান্তি ছিল।

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

ছোটবেলায় যখন রাজশাহী থেকে ঢাকায় আসতাম, ফেরার সময় দেখতাম গায়ের রং অনেক ফর্সা হয়ে গেছে! আর এখন মনে হয় উল্টোটা ঘটছে!

____________________________

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

ঢাকা থেকে বাইরে যাবার সময় গাজীপুর ক্রস করলেই টের পাওয়া যায় বাতাসটা সজীব লাগছে!

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

অতিথি লেখক এর ছবি

ঢাকা যে কখনও সুনশান নীরব ছিল তা রূপকথার মত মনে হচ্ছে মন খারাপ
ইসরাত

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

হুমম। রূপকথাই তো। তবে খুব অল্পদিন আগেই সেটা সত্যি ছিল।

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

অতিথি লেখক এর ছবি

নিজ দেশে আমরা যারা পরবাসে আছি তাদেরও শৈশব নিয়ে এমন কষ্ট হয়।সব কিছু কত তাড়াতাড়ি বদলে গেল,আমার ছেলেবেলা,আমার শৈশব এর সাথে এখনকার শৈশব কত হাজার মাইল ব্যবধান।শৈশব আর ছেলেবেলা সবার কাছেই জীবনের শ্রেষ্ঠ মধুর সময়।এখনকার শৈশব,এখনকার ছেলেবেলা চার দেয়ালে বন্ধী।তারা আকাশ দেখতে পায়না,পুকুরে ঝাপিয়ে পড়তে পারে না,শীতের দিনে ধান কাটার পরে অলস রোদ যখন এলিয়ে পড়ে তার তেজটুকু শরীরে মাখতে পারে না,নদী চিনে না,তারা কুয়াশা দেখে না,শিশিরের স্পর্শ পায় না,জোনাকি দেখেনা।এই শৈশবের সাথে আমার শৈশবের হাজার বছরের দূরত্ব অথচ ক্যালান্ডের পাতায় খুব বেশি ব্যবধান নেই।সব কিছু খুব তাড়াতাড়ি বদলে যাচ্ছে,হারিয়ে যাচ্ছে প্রাণবন্ত শৈশব।যার দুরন্ত একটা শৈশব নেই তার স্মৃতি বলতে কিছুই নেই।সবুজ ফিরে আসুক শৈশবে,ফিরে আসুক জল আর কাদামাটি আর মাথার উপর একটা সাদা-নীলের ক্যানভাস।ভালোথাকুক শৈশব।

মাসুদ সজীব

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

মানুষ তো সবসময় শৈশবের স্মৃতিতে পরিভ্রমণ করতে চায়। কিন্তু শৈশবের প্রত্যেকটা জিনিস যদি সে দেখে হারিয়ে গেছে, আর ফিরে পাওয়া যাবে না, তাহলে কেমন লাগে?

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

কল্যাণ এর ছবি

চলুক

_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

হাসি

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

তানিম এহসান এর ছবি

সেই ঢাকা! জাদুর শহর, আহা!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।