ধর্মের প্রয়োজনীয়তা কি ফুরিয়ে গেছে?

শিক্ষানবিস এর ছবি
লিখেছেন শিক্ষানবিস (তারিখ: রবি, ২২/০৬/২০০৮ - ২:২১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

"ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি, চিকো"-র নৃবিজ্ঞান বিভাগ থেকে সম্পাদিত "Magic, Witchcraft and Religion" বইয়ে ধর্ম ও অতিপ্রাকৃতের নৃবিজ্ঞান নিয়ে বেশ কিছু প্রবন্ধ স্থান পেয়েছে। এর মধ্যে রবার্ট এইচ লোভির (Robert H. Lowie) একটি প্রবন্ধ আছে যার নাম "Religion in Human Life"। এটা পড়ার পরই কিছু লেখার তাড়া অনুভব করলাম। এমন একটা সময়ে প্রবন্ধটি লেখা যখন ধর্মের নৃবিজ্ঞান কেবল প্রতিষ্ঠা পেতে শুরু করেছিল এবং যখন সমাজের সাধারণ মানুষের উপর বিজ্ঞানের প্রভাব এতো বেশি ছিল না। ১৯৬৩ সালকে অনেকটা এরকমই ধরে নেয়া যায়। সমসাময়িক নৃতাত্ত্বিক চিন্তাধারা এবং সময়ের পটভূমিতে লোভির প্রবন্ধটি নিয়ে আলোচনা করাই এই প্রবন্ধের উদ্দেশ্য। তবে ব্যক্তিগত মতামত প্রকাশের আগে লোভির জীবন এবং প্রবন্ধটিতে তিনি ঠিক কি কি বলেছেন তা পরিষ্কার করে নিতে চাই।

রবার্ট লোভির জন্ম ১৮৮৩ সালে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনাতে। জন্মের ১০ বছর পর সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক সিটিতে চলে আসেন। তবে নিউ ইয়র্কের জার্মান পল্লীতে থাকার কারণে লোভিকে খুব ভিন্ন কোন সমাজের মাঝে পড়তে হয়নি। তার বাল্যকালের প্রতিবেশে ইহুদি চিন্তাধারার পাশাপাশি মুক্তচিন্তারও স্থান ছিল। এই প্রবন্ধেই লোভি বলেছেন, বাবা-মা ছোটকালে তাকে কোন ধমীয় শিক্ষা দেননি। তাই কোন নির্দিষ্ট ধর্মের প্রতি ছোটকাল থেকেই তার আগ্রহ গড়ে উঠেনি। ১৬ বছর বয়সে দর্শন নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন এবং লক্ষ্য করেন আর্নস্ট হেকেল সহ সমসাময়িক দর্শনের মূল ধারার দার্শনিকদের মনোভাব সব ধর্মের প্রতিই বিরূপ। বয়স ২৫ হওয়া পর্যন্ত দার্শনিকদের এই মনোভাব কেবল দেখেই গেছেন। এরই মধ্যে কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা শুরু করেন এবং নৃবিজ্ঞানে আগ্রহী হয়ে উঠেন। নৃবিজ্ঞানকেই ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নেন। বিভিন্ন বর্ণনামূলক গবেষণার মাধ্যমে নৃবিজ্ঞান সমৃদ্ধকরণে বিশেষ অবদান রাখেন।

রবার্ট লোভি ঠিক কি কারণে ধর্মে আগ্রহী হয়ে উঠলেন তা অনুমান করা যায়। খ্রিস্টান মিশনারিদের মানসিক দৃঢ়তা এবং বিশুদ্ধ জীবনযাপনই তাকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করেছিল। এরপর যখন মাঠ পর্যায়ে গবেষণার জন্য অ্যারিজোনা আর মন্টানায় গেলেন এবং সেখানকার মানুষের দৈনন্দিন জীবনে ধর্মের বিশাল প্রভাব লক্ষ্য করলেন তখনই বোধহয় আগ্রহটা পাকাপোক্ত হয়ে গেল। সমসাময়িক অনেক নৃবিজ্ঞানীর মত তিনিও মেনে নিলেন, মানুষের বাস্তব জীবনে ধর্মের প্রভাব এতো বেশি যে এ নিয়ে পরিপূর্ণ নৃতাত্ত্বিক গবেষণা হওয়া প্রয়োজন। লোভি যে কেবল ধর্মের নৃবিজ্ঞান নিয়েই কাজ করেছেন তা নয়। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে গবেষণা করতে গিয়ে সাধারণ মানুষের জীবনে ধর্মের প্রভাব তাকে বরাবরই বিস্মিত করছে। "Religion in Human Life" প্রবন্ধে সে দিকগুলোই ফুটে উঠেছে। প্রথমেই তিনি গবেষণার ধরণ বলে দিয়েছেন, অবশ্যই তা নৃতাত্ত্বিক। নৃতত্ত্বের মূলকথা হল, সবাইকে তার নিজস্ব দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করতে হবে। অন্যদের বুঝতে না পারার মূল কারণ যে পক্ষপাতিত্ব তাকেই সমূলে উৎপাটন করে নৃবিজ্ঞান। লোভি এই কাজ আরও সহজে করতে পেরেছেন। কারণ ছোটবেলা থেকে তার মধ্যে কোন ধর্মীয় সংস্কার গড়ে উঠেনি। এ কারণে তার অসুবিধা না হয়ে বরং আরও সুবিধা হয়েছে, তিনি সবকিছু নৃতাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে সমর্থ হয়েছেন। লোভির দৃষ্টিভঙ্গির আরেকটি বড় দিক হল, তিনি স্বয়ং বিজ্ঞান বা বিজ্ঞানীদের পক্ষ নিয়েও কথা বলেননি, বিজ্ঞানী হয়েও বিজ্ঞানকে ধর্মের সমতলে নামিয়ে এনেছেন।

লোভি লক্ষ্য করলেন, আদিম পৃথিবীতে এমন কোন সভ্যতা বা সংস্কৃতি খুঁজে পাওয়া যায় না যাদের কোন ধর্মীয় ধারণা বা বিশ্বাস ছিল না। যেহেতু এটা সর্বব্যাপী ও সুপ্রতিষ্ঠিত সেহেতু এর কোন না কোন গুরুত্ব অবশ্যই থাকবে। এই গুরুত্বের কথা বুঝতে পারলেন আফ্রিকার আদিবাসী গোষ্ঠী থেকে শুরু করে খ্রিস্টান চার্চের ধর্মপ্রচারক সবার মধ্যে একটি সাধারণ চেতনার দিকে লক্ষ্য করে। চেতনাটি হল, "অন্যকে সাহায্য করার তীব্র আকাঙ্ক্ষা এবং নিজের চেয়ে অনেক বড় কোন সত্ত্বার প্রতি বিশ্বাস থেকে পাওয়া সাহস"। এভাবেই বিভিন্ন ধর্ম সম্পর্কে তথ্য জোগাড় শুরু করলেন তিনি। সবকিছু বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বিশ্লেষণ করলেন। তার কাছে এগুলো ছিল কেবল মানুষের বিশ্বাসের প্রতিফলন যা অবশ্যই বৈজ্ঞানিক গবেষণার দাবী রাখে। এর পাশাপাশি ধর্মবিরুদ্ধতার দিকেও চোখ পড়লো তার। সে সময় ধর্মের প্রতি পণ্ডিতদের তিন ধরণের মনোভাব ছিল। প্রথমত, ধর্ম এক ধরণের কর্তৃপক্ষ যা বুদ্ধিবৃত্তিক স্বাধীনতা হরণ করে; দুই, বাধা নিষেধের প্রতীক; তিন, জনগণের আফিম। ভলতেয়ারের বিখ্যাত উক্তি থেকে প্রথম মনোভাবের প্রমাণ পাওয়া যায়, "প্রথম দুষ্কৃতিকারীটি যখন প্রথম বোকাকে ঠকিয়েছিল তখন থেকেই ধর্মের সূচনা।" আর শেষ মনোভাব যে মার্ক্সবাদ থেকে এসেছে তা না বললেও চলে। মার্ক্সের মতে ধর্ম হল পুঁজিবাদের হাতিয়ার যা দিয়ে তারা শোষণ প্রক্রিয়া চালু রাখে।

স্পষ্টতই বোঝা গেল, ধর্ম বুদ্ধিজীবী মহলে কতটা ভিত্তিহীন হয়ে উঠেছিল। কিন্তু এটাও সত্য যে, সাধারণ মানুষের কাছে তা কখনই গুরুত্ব হারায়নি। এক সময় চার্চের গুরুত্ব মানুষের কাছে কমে গিয়েছিল, কিন্তু ধর্মের শক্তি তখনও পুঞ্জিভূত ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় অনেকেই ধর্মকে নতুন করে আবিষ্কার করেছেন, মুক্তি ও নিরাপত্তার আশায়। এ থেকে বোঝা যায় ধর্মের প্রতি অবজ্ঞা ভাব মূলত উন্নতি ও প্রতিপত্তি থেকে আসে। মানুষ প্রভাবশালী ও ধনী হয়ে গেলে ধর্মের প্রয়োজনীয়তা তার কাছে ফুরিয়ে যায়, অন্তত সে তা-ই মনে করে। এই অবজ্ঞা ভাব অনেক বিস্তৃত হয়েছে, যা দুটি উদাহরণ দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়: এক, ধর্মের প্রতি অনেকেই নিবেদিত কিন্তু এদের মধ্যে অধিকাংশই হতদরিদ্র; দুই, অন্যরা অর্থাৎ যারা স্বচ্ছল তারা ক্যাথলিক ধর্মকে পরোক্ষভাবে পালন করে, সন্তানকে ব্যাপ্টাইজ করলেও নিয়মিত ধর্ম পালন তাদের দ্বারা হয়ে উঠে না। প্রোটেস্ট্যান্ট সুইডেন বা ইভানজেলিক্যালদেরও অবস্থাও এমন। এভাবেই আধুনিক সভ্য জগৎ থেকে ধর্ম উধাও হতে বসেছে, আপাত দৃষ্টিতে অন্তত তা-ই মনে হয়। কিন্তু সাধারণ মানুষের মাঝে কাজ করতে গিয়ে লোভি লক্ষ্য করলেন, অ্যামেরিকার আদিবাসী অর্থাৎ ইন্ডিয়ানদের অনেক গোষ্ঠীর মধ্যে ধর্ম এখনও বিশাল প্রভাব বিস্তার করে আছে, আদিম মানুষের জীবনে যেমন ছিল অনেকটা তেমনই।

নিউজিল্যান্ডের মাউরি গোষ্ঠীর লোকেরা যে কোন কাজের শুরুতেই ঐশীবাণী পড়ে নেয়, এমনকি একটি নৌকা বানাতে গেলেও বা বানানোর পর তা প্রথমবারের মত পানিতে ভাসাতে গেলেও। উত্তর ব্রাজিলের আপিনাই গোষ্ঠীর লোকেরা প্রতিদিন সূর্যের সম্মানে সমবেত ধর্মীয় সঙ্গীত গায়। এই উদাহরণগুলো লোভি পরোক্ষভাবে দিয়েছেন। নিজের গবেষণা ক্ষেত্র তথা ক্রো ও হোপি জনগোষ্ঠীর মধ্যে ধর্মীয় একাগ্রতা তাকে প্রত্যক্ষভাবেই বিস্মিত করেছে, অবশ্য এই দুই গোষ্ঠীর আচারানুষ্ঠানের মাহাত্ম তার কাছে সম্পূর্ণ ভিন্ন ঠেকেছে।
হোপিরা ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালনের জন্য অনেক সময় ব্যয় করে যা সময়ের অপচয় বলে মনে হতে পারে। হিসাব করে দেখা গেছে বছরের প্রতি তিন দিনে এক দিন তারা ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালনে ব্যয় করে। কোন আচারানুষ্ঠান এক বার শুরু হলে তিন দিনের আগে থামতেই চায় না। সপ্তাহ বা মাস ব্যাপী অনুষ্ঠানও আছে। তাদের সবগুলো অনুষ্ঠানই বৃষ্টিকেন্দ্রিক। বিষয়টা খুব স্বাভাবিক। চাষের জমিতে সেচ দেয়ার মত কোন প্রযুক্তি না থাকায় কেবল বৃষ্টির উপরই তাদের নির্ভর করতে হয়। এজন্যই বৃষ্টি নিয়ে এতো বন্দনা। তাই হোপিদের উপাসনাকে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক বলে ধরে নেয়া যায় না। সাধারণ একজন ব্যক্তি সর্বশক্তিমানের কাছে প্রার্থনা করছে, বিষয়টা এমন নয়। এর সাথে জড়িয়ে আছে তাদের প্রাত্যহিক জীবন।
ক্রো ইন্ডিয়ানরাও ধর্মের প্রতি খুব একনিষ্ঠ। এই দুই গোষ্ঠীই ধর্মীয় আচারানুষ্ঠান পালনে অনেক সময় ও শ্রম ব্যয় করে, হোপিরা বোধহয় একটু বেশি। কিন্তু এদের মধ্যে একটা মৌলিক পার্থক্য আছে। হোপিদের কাছে উপাসনার ভাবগত দিক খুব একটা প্রাধান্য পায় না। কিন্তু ক্রো-দের বসবাস ভাবের জগতে। ক্রোদের অতিপ্রাকৃতের সাথে মুখোমুখী যোগাযোগ লোভিকে সর্বাধিক বিস্মিত করেছিল। তারা হরহামেশাই এমন যোগাযোগ স্থাপন করে। তাই ক্রো এবং হোপি-দের মধ্যে যে পার্থক্য তাকে একটি প্রতিষ্ঠিত চার্চ ও সাধারণ ইভানজেলিজ্‌মের মধ্যে পার্থক্যের সদৃশ বলে চালিয়ে দেয়া যায়।

আদিবাসীদের এই ধর্ম পালন আমাদেরকে আদিম মানুষের কথাই মনে করিয়ে দেয়। আমরা বুঝতে পারি ধর্ম তাদের জীবনের কতটা অংশ জুড়ে ছিল। এটাই স্বাভাবিক, কারণ যারা ঈশ্বর ও পরকালে বিশ্বাস করে তাদের এছাড়া কোন উপায় নেই। ক্রো জনগোষ্ঠীর লোকেরা এটাকে ঐশ্বরিক যোগাযোগের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিল। লোভি বলেন,

ক্রোদের জীবনের প্রতিটি কাজ ধর্ম অনুযায়ী সম্পাদিত হয় বললে হয়তো অত্যুক্তি করা হবে, কিন্তু এটা সত্য যে তাদের জীবনের প্রতিটি হতাশা ও কষ্টের সাথে ব্যক্তিগত ঐশ্বরিক যোগাযোগ রূপে ধর্মের উপস্থিতি থাকে।

অর্থাৎ তাদের জীবনের যেখানেই হতাশা ও ব্যর্থতা সেখানেই ধর্ম। এই হতাশা ও ব্যর্থতাকে কিন্তু জীবনের অর্ধেক বলা যায়। তাহলে ধর্মকেও কি অর্ধেক বলতে হবে? না, ধর্ম তাদের জীবনে অর্ধেকেরও বেশি। তারা মনে করে, জীবনের সকল সফলতাই ঐশ্বরিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে আসে। আর কেউ ব্যর্থ হলে ধরে নিতে হবে, তার কোন ঐশ্বরিক দূরদৃষ্টি নেই। এজন্য ব্যর্থ মানুষ মাত্রই সফল কারও কাছ থেকে কোন নিদর্শন নেয়। এই নিদর্শনের মাধ্যমে হয়তো কোন সফলতা আসে তার জীবনে। এভাবেই তার ঐশ্বরিক যোগাযোগের সূচনা ঘটে। ক্রো গোষ্ঠীর বৃদ্ধরা সবকিছু এভাবেই বর্ণনা করল লোভির কাছে। লোভির এক খ্রিস্টান বন্ধু তাকে এ সম্বন্ধে বলেছিল, "বৃদ্ধদের কাছ থেকে যখন এরকম কথা শোন তখন চোখ বন্ধ করে তোমাকে বিশ্বাস করে যেতে হবে।" আসলেই তো, এখানে সবকিছুই বিশ্বাসের। এর বাইরে কিছুই নেই। কিন্তু এভাবে বিশ্বাস করতে বেশ কষ্ট হয়। তাই বিশ্বাসের জন্য কিছু যুক্তি দেয়া ভাল। অতিলৌকিক ঘটনা ঘটা বা তা বর্ণনার সময় এই লোকেরা যে সচেতন ছিল তার পেছনে অন্তত ৪টি যুক্তি আছে।
১। একজন সাদা মানুষের কাছে তারা কেন মিথ্যা বলবে? কারণ তারা তো জানেই, তাদের গল্প যত অবিশ্বাস্য হবে সাদা মানুষেরা তা ততই কম বিশ্বাস করবে।
২। তারা যে ধরণের দৃষ্টি অর্জন করে তা শুধুমাত্র হেঁয়ালির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। তারা এরকম ঐশ্বরিক যোগাযোগের জন্য দুর্গম পাহাড়ের উপর চলে যায়। সেখানে চারদিন অবস্থান করে, নিজেকে কষ্ট দেয়। এটা কোন পুরাণ নয়, কারণ লোভি নিজেই এরকম ঘটনা দেখেছেন। নিছক হেঁয়ালির উপর এটা প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না।
৩। যদি ধরেও নেয়া যায় যে, সফলতা অর্জনের আশায় সে নিজেই নিজের মধ্যে একটা স্বপ্ন বা হেঁয়ালির জন্ম দিয়েছে; তারপরও কথা থেকে যায়। কারণ, সেক্ষেত্রে ফিরে আসার পর তার সফলতার সম্ভাবনা থাকতো না, প্রশংসিত হওয়ার বদলে সে নিজের সম্মান হারাতো।
৪। অতিপ্রাকৃতের কাছ থেকে কোন পুরস্কার পেয়ে অনেকেই সফলতা অর্জন করেছে। কিন্তু এর পাশাপাশি তাদের উপর নতুন বাধানিষেধ আরোপিত হয়েছে। যোগাযোগের সময় ঈশ্বর তাদেরকে একটি নিষেধাজ্ঞা দেন। এটা মেনে না চললে সে আবার ব্যর্থ হবে। লোভি এক বৃদ্ধকে দেখেছেন যে এ কারণে ঐশ্বরিক যোগাযোগের পর দিন থেকে কখনও ঘোড়ায় চরেনি।
সুতরাং এরকম দৃষ্টি অর্জন হেলা করার মত না। এই আচারানুষ্ঠান ব্যক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করে আর সমাজকে প্রভাবিত করে।

এবার বিশ্বের সাধারণ মানুষদের প্রতি দৃষ্টি দেয়া যাক যাদের পূর্বপুরুষরা এক সময় এমনই ছিল। এই সমাজেও ব্যক্তিগত চিন্তাধারা সমাজকে প্রভাবিত করে। আর এখানেও ব্যক্তিকে নিয়ন্ত্রণের অন্যতম উপাদান হল ধর্মীয় অনুপ্রেরণা। নিরাপত্তা ও নির্বাণের আশায় অধিকাংশ মানুষই ধর্মকে পুষে রাখে। কিন্তু তাদের ধর্মানুভূতির প্রকাশ আদিবাসীদের মত অতো স্পষ্ট হয় না। সে হিসেবে ধর্ম সমাজের অন্যতম ঐক্য আনয়নকারী হিসেবে কাজ করে। অবশ্যই ধর্ম সমাজ একাঙ্গীকরণের একমাত্র চালিকা শক্তি না। সঙ্গীত, শিল্প বা বিজ্ঞানও সে ভূমিকা পালন করতে পারে। কিন্তু কে পালন করবে তা নির্ভর করে ঐ সমাজের মানুষ কার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারে তার উপর। এটা ধ্রুব সত্য যে, বিজ্ঞান, শিল্প বা সঙ্গীতের সাথে মিশে যেতে পারে এমন মানুষ সমাজে বেশি নেই। সমাজের অধিকাংশ মানুষই এখন পর্যন্ত ধর্মের সাথে একাত্মতা পোষণ করতে পারে। এ ধরণের সমাজে একাঙ্গীকরণের দায়িত্ব ধর্ম ছাড়া আর কে-ই বা পালন করবে। লোভি বলেন,

সাধারণ মানুষের জন্য সমাজ একাঙ্গীকরণের চালিকা শক্তি হিসেবে এখনও ধর্মের বিকল্প নেই। এই ধ্রুব সত্যটি কেবল ধর্মের অস্তিত্বই ঘোষণা করে না, একই সাথে এর সর্বজনীন গ্রহণযোগ্যতাকে ফুটিয়ে তোলে।

এবার দেখা যাক ধর্মকে ঝেড়ে ফেলে সমাজ কতটা একীভূত হয়ে উঠতে পারে। এমন একটা সমাজের কল্পনা করতে হবে যেখানে ধর্মকে বিলুপ্ত করে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন নাৎসি জার্মানিই এক্ষেত্রে সর্বোত্তম উদাহরণ। হিটলার খ্রিস্টান হওয়ার কারণে ইহুদি বিদ্বেষী ছিলেন না। কারণ সভ্য খ্রিস্টান কখনও ইহুদি নিধনকে স্বীকৃতি দিতে পারে না। তার এই চেতনার মূলে ছিল যুবক বয়স থেকে তিল তিল করে গড়ে উঠা চেতনা যা তাকে বলেছিল, ইহুদিরাই জার্মানদের সর্বশক্তিমান হয়ে উঠার পথে প্রধান অন্তরায়। আর জার্মানদের সর্বশক্তিমান হতে হবে এবং পুরো বিশ্বের নেতৃত্ব দেবে জার্মানরা এ ধরণের চেতনা হিটলার পেয়েছিলেন ইউজেনিক্স থেকে। তিনি মনে করতেন জার্মানদের চেয়ে সভ্য ও উন্নত আর কেউ নেই। এভাবেই হলোকাস্টের সূচনা। হলোকাস্ট অবশ্যই ধর্মবিরোধী। খ্রিস্টান চার্চ হলোকাস্ট বা হিটলারের কুশাসন মেনে নিতে পারেনি। হিটলার নিজের চিন্তাধারার বিরোধী কোন পক্ষকেই টিকিয়ে রাখতে চাননি যার মধ্যে ধর্মপ্রচারকরাও পড়তেন। সংগঠিত ধর্মকে উপড়ে ফেলে নিজের ইউজেনিক্স কেন্দ্রিক নাৎসিবাদকে প্রতিষ্ঠা করাই ছিল তার লক্ষ্য। তিনি "ইয়ুথ গ্রপ" প্রতিষ্ঠা করেছিলেন যরা উদ্দেশ্য ছিল, এমন যুব সমাজ গড়ে তোলা যাদের মধ্যে প্রথাগত ধর্মের প্রতি আনুগত্য থাকবে না। কমিউনিস্ট সোভিয়েত ইউনিয়নেও এ ধরণের ধর্মহীন শিক্ষা প্রচলিত ছিল। কোন গ্রামের মানুষকে ধর্ম পালন থেকে বিরত রাখার একটি মোক্ষম উপায় হল, সেখান থেকে একটি শিশুকে ছিনিয়ে নেয়া এবং তাদেরকে বলে দেয়া, কেউ যদি ধর্ম পালন করে বা কোন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে সাহায্য করে তাহলে শিশুটিকে মেরে ফেলা হবে। জার্মানির মত খ্রিস্টান রাষ্ট্রে হিটলার কিভাবে এই নীতি প্রয়োগ করেছিলেন তা বেশ দুর্বোধ্য। এভাবে সমাজ থেকে ধর্ম সরিয়ে নিলে কি হতে পারে তা লোভির ভাষায় বললে দাড়ায়:

ধর্ম উধাও হওয়ার সাথে সাথে সমাজ থেকে নৈতিক মানদণ্ডও উধাও হয়ে যায়। সেই সমাজে যে কেবল ধর্ম থাকে না তা নয়, কোন সাধারণ বাধা সৃষ্টিকারী নীতিও থাকে না। কোন জাতি ধর্ম বাদ দিয়ে নৈতিকতা ধরে রাখতে পারবে কি-না তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে।

হিটলার কতটা ধর্মবিরোধী ছিলেন তা নিয়ে বিস্তারিত চিন্তা করার অবকাশ আছে। কিন্তু এটা প্রায় নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নির্যাতিত, নিপীড়িত এবং যুদ্ধে বিধ্বস্ত সৈনিকরা ধর্মের দারস্থ হতে বাধ্য হত। জার্মানি-অস্ট্রিয়া-পোল্যান্ড অঞ্চলের খ্রিস্টান চার্চও হিটলারের নীতিকে মেনে নিতে পারেনি। "দ্য সাউন্ড অফ মিউজিক" সিনেমাতে চার্চের মাদার নাৎসি বাহিনীর হাত থেকে "মারিয়া ফন ট্র্যাপ" পরিবারকে পালাতে যেভাবে সাহায্য করেছিলেন বাস্তবতা তেমনই ছিল কি-না জানি না, তবে সিনেমা তো বাস্তবতারই প্রতিফলন। নাৎসিদের ধর্মনাশ নিয়ে লোভি যা বলেছেন তা বাস্তবতার খুব কাছাকাছি।

রবার্ট লোভি এরপর ধর্ম ও বিজ্ঞানের সংঘাত নিয়ে আলোচনা শুরু করেন। গত ১০০ বছর ধরে এই সংঘাত ক্রমেই জোড়ালো হচ্ছে। তবে লোভি মনে করেন, এই সংঘাত মাত্র কয়েকটি বিষয় নিয়ে, বিজ্ঞানের সামগ্রিক শিক্ষার কথা চিন্তা করলে যা খুবই নগণ্য। তাই "স্বতন্ত্র বলয়" মেনে নিলেই বিষয়টা চুকে যায়। স্বতন্ত্র বলয়ে প্রথমে বলা হয়েছে ধর্ম ও বিজ্ঞান সম্পূর্ণ পৃথক পৃথক ক্ষেত্রে আলোচিত হবে, একে অন্যের পরিমণ্ডলে হস্তক্ষেপ করবে না। পাশাপাশি কে কোন ক্ষেত্র নিয়ে আলোচনা করবে তাও বলে দিয়েছিলেন স্বতন্ত্র বলয়ের প্রবক্তা স্টিফেন জে গুল্ড। এই কাজটা না করলে সম্ভবত তিনি আরও কম সমালোচিত হতেন। কেবল স্বতন্ত্র বলয়ের বিষয়টি মেনে নিলেই সব সংঘাত চুকে যায়। আর কে কোন বলয়ে থাকবে তা সমাধান করাও কঠিন নয়। কারণ বলয় ইতোমধ্যে ঠিক হয়েই আছে। তাই বর্তমানে বিজ্ঞানের সাথে ধর্মের সংঘর্ষ নৈতিকতার মানদণ্ড নিয়ে। তাই সব ঝেড়ে ফেলে এই একটি বিষয় দৃষ্টি নিবদ্ধ করা উচিত। লোভির মতে, বিজ্ঞান কখনই নৈতিকতা ঠিক করে দিতে পারে না। নিজের মত করে কিছু বলার আগে লোভি কি বলেছেন তা-ই বলে নেয়া যাক।

লোভি প্রথমেই বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের অস্থিতিশীলতার কথা বলেছেন। তার মতে বিজ্ঞানের সব তত্ত্বকেই অনুকল্প (হাইপোথিসিস) বলা যায়। কারণ সবগুলোই অপেক্ষাকৃত ভাল কোন অনুকল্প দিয়ে প্রতিস্থাপিত হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। তিনি মানুষের আরেকটি ভুল ধারণার উল্লেখ করেছেন। অনেকেই মনে করে, বিজ্ঞান সমাজ এবং অর্থনীতির ঊর্ধ্বে। কিন্তু লোভি বলেন, বিজ্ঞানীরা কোন আইভরি টাওয়ারে বাস করেন না, তারা এই সমাজেরই মানুষ, এই সমাজের অর্থনীতিই তাদের জীবনযাত্রার মান নির্ধারণ করে। তাই সমাজ ও বিজ্ঞানের মধ্যে নিবিঢ় সম্পর্ক আছে। বিজ্ঞানীদেরও একটা সমাজ আছে যা অনেক সময় অপেক্ষাকৃত ভাল তত্ত্বের স্বীকৃতি দেয় না। যেমন উইলিয়াম হার্ভে যখন রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করেছিলেন তখন, বিজ্ঞানী মহল তাকে হাতুড়ে ডাক্তার আখ্যা দিয়েছিল। এর পাশাপাশি বৈজ্ঞানিক তত্ত্বে অনেক সময়ই ভুল ধারণা বিকশিত হয়ে উঠে, তবে অবশ্যই ভুল শোধরানের ক্ষেত্রে বিজ্ঞানই সবচেয়ে এক্সপার্ট। লোভির এই কথাগুলোকে বিজ্ঞানের জন্য খুব কট্টর বলে ধরে না নিলেও চলে। কারণ তিনি এগুলো বলেছেন বিজ্ঞানকে ধর্মের সমতলে নামিয়ে আনার জন্যই। মূল কথা বলেছেন এর ঠিক পরেই।

বিজ্ঞান ও ধর্ম উভয়েই বোধহয় ঠিক কথা বলছে, কিন্তু তারা যে ব্যক্তিদের নিয়ে বলছে বা যে সমস্যার সমাধান করছে সে ব্যক্তি ও সমস্যাগুলোই আসলে ভিন্ন। একটা উদাহরণ দিলে পরিষ্কার হয়ে যাবে। কারও যদি ডায়াবেটিস থাকে তাহলে ধর্মের দারস্থ হয়ে কোন লাভ নেই। কিন্তু কেউ সাইকোসোমাটিক হলে আবার বিজ্ঞানের কাছে গিয়েও লাভ নেই। সাইকোসোমাটিক বলতে হতাশা থেকে উদ্ভূত একটি সমস্যাকে বোঝায়। লোভি তার এক ভাইয়ের উদাহরণ টেনে বুঝিয়ে দেন, কিভাবে ধর্মীয় বিশ্বাস তাকে সুস্থ করে তুলেছিল। এ বিষয়ে তার শেষ কথা ছিল:

সাধারণ মানুষ কেবল এমন একটি সমাধান চায় যা সত্যিকার অর্থেই কাজে দেবে। সেই সমাধান তৈরী করতে গিয়ে গণনায় কি পরিমাণ ভুল হয়েছে বা তা আদৌ কার্যকরী কি-না এ নিয়ে তারা বিন্দুমাত্রও মাথা ঘামায় না।

অনেক ক্ষেত্রেই ধর্ম এমন একটি কার্যকরী সমাধান দিতে পারে।

এসব কারণেই লোভি স্পষ্ট করে বলে দেন, একজন সাধারণ মানুষ কখনই ধর্মের বদলে বিজ্ঞান নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে পারে না। নোবেল বিজয়ী সাহিত্যিক ডোরিস লেসিং সত্যমুখী দর্শনের জয়গান গেয়েছেন। তার মতে,

সত্যকে অর্জন না করে আজীবন তার জন্য সংগ্রাম করে যাওয়াই সর্বোত্তম।

কিন্তু লোভি মনে করেন, সাধারণ মানুষের কাছে লেসিংয়ের এই দর্শনের কোন গুরুত্ব নেই। তাই সাধারণ মানুষ সত্যকে আঁকড়ে ধরে রাখতে চায়, তার জন্য সংগ্রাম করতে চায় না। সে এ ধরণের সত্যের কাছ থেকে শান্তি, নিরাপত্তা ও আয়েশ চায় যা বিজ্ঞানের মধ্য দিয়ে কখনই আসতে পারে না। কারণ বিজ্ঞান নিজেই প্রচণ্ড গতিশীল, প্রগতিশীল ও বিঘ্ন সৃষ্টিকারী। আর্নস্ট মাখ বিজ্ঞানের এই বৈশিষ্ট্যকে এভাবে তুলে ধরেছেন:
বিজ্ঞানের সর্বোচ্চ দর্শন হল বিশ্বের একটি অসম্পূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি বহন করে চলা এবং এই বয়ে চলাকে আপাত সম্পূর্ণ কিন্তু অপর্যাপ্ত বিশ্ব দৃষ্টির (ধর্ম) চেয়ে উত্তম বলে আখ্যায়িত করা।

বিজ্ঞানের প্রকৃত দর্শন এটাই। কিন্তু পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষই বিজ্ঞানী নন। তাই তাদের পক্ষে এই দর্শন মেনে চলা সম্ভব না। তাদের পক্ষে কি সম্ভব তার একটি সুন্দর নিদর্শন পাওয়া যায় গ্যোটের কবিতাতে:

Wer Wissenschaft und kunst besitzt
Hat auch Religion;
Wer jene beiden nicht besitzt,
Der habe Religion.

যে বুদ্ধিবৃত্তিক ও নৈসর্গিক উদ্দ্যেশ্যকে তাড়া করার কাজে সম্পূর্ণ নিমজ্জিত হয়েছে
তার উৎসাহই তার ধর্ম হয়ে উঠতে পারে।
কিন্তু এই তাড়া করার কাজে জড়াতে না চাইলে
প্রথাগত ধর্মের উপর নির্ভর করে চলাই উত্তম।

এভাবে প্রবন্ধের শেষ প্রান্তে চলে আসেন লোভি। এ পর্যায়ে এসে তিনি নির্দ্বিধায় বলেন, বিজ্ঞান মানুষকে নিরাপত্তা দিতে পারে না। ধর্মের পক্ষেই কেবল চূড়ান্ত নিরাপত্তা দেয়া সম্ভব। সবশেষে বলেন:

যতদিন প্রকৃতির উপর যুক্তিযুক্ত নিয়ন্ত্রণ ও মানুষের জৈব-মনোবৈজ্ঞানিক চালিকাশক্তির মধ্যে ব্যবধান থাকবে ততদিন বিশ্বাসেরও স্থান থাকবে। এই বিশ্বাস শুধু আয়েশই দেয় না সাথে নিরাপত্তা জোগায়; সম্ভাব্যতার বদলে নিশ্চয়তা প্রদান করে। তাই বলা যায়, ধর্ম ও বিজ্ঞান মানুষের জীবনে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরণের দুটি কাজ করে এবং এই দুয়ের মধ্যে মিথস্ক্রিয়া ঘটতেই হবে এমন কোন কথা নেই।

এতটুকু জানার পর ধর্ম নিয়ে চূড়ান্ত কোন মন্তব্য করার চেষ্টা করা যেতে পারে। ধর্মের প্রয়োজনীয়তা কি ফুরিয়ে গেছে?
এই উত্তর দেয়ার আগে জানতে হবে কার বা কিসের প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হচ্ছে। যদি কোন মানুষের প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয় তাহলে আমি প্রথমত গ্যোটের কবিতার সাথে একমত। অর্থাৎ যারা প্রথাগত ধর্মের বাইরে অন্য কিছুকে (বিজ্ঞান বা শিল্প-সাহিত্য) সমাজে বসবাসের জন্য তার চালিকাশক্তি হিসেবে খুঁজে পেয়েছে তার জন্য সেটাই সর্বোত্তম ধর্ম। কিন্তু যে সেটা খুঁজে পায়নি তার জন্য প্রথাগত ধর্ম মেনে চলাই উত্তম। কিন্তু, এই প্রথাগত ধর্মের কথা বললে তার মধ্যে গোঁড়ামিও এসে যায় যা অন্য ধর্মের সাথে বিরোধের সৃষ্টি করে। এই গোঁড়ামি এড়ানোর জন্য ডোরিস লেসিংয়ের মত আমিও বলব, সত্য বলে কোন কিছুকে ইচ্ছাকৃতভাবে মেনে নেয়ার চেয়ে বরং সত্যের অনুসন্ধান চালিয়ে যাওয়া ভাল। কারণ সত্যানুসন্ধানী কোন ব্যক্তির পক্ষে গোঁড়া হওয়া সম্ভব নয়। সে, সমাজে স্থান করে নেয়া এবং শান্তি ও নিরাপত্তার জন্যই কেবল ধর্ম পালন করবে।
এবার সমাজের প্রয়োজনীয়তার কথা বলা যায়। রবার্ট লোভি তো বলেই দিয়েছেন, মানুষের জীবনে যেহেতু এখনও ধর্মের স্থান আছে সেহেতু সমাজেও এর প্রয়োজনীয়তা আছে। কিন্তু সেটা ১৯৬৩ সালের কথা। তখনও বিজ্ঞান এতো প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। আর তখন বিজ্ঞান থেকে উদ্ভূত প্রযুক্তির ব্যবহারও ছিল সীমিত। গত ৪০ বছরে সমাজে বিজ্ঞানের প্রভাব ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে আর ধর্মের প্রভাব হ্রাস পেয়েছে। ধর্মের প্রভাব হ্রাসের আরেকটি কারণ শিল্প ও সাহিত্যের প্রভাব বৃদ্ধি। প্রযুক্তির উন্নয়নের কারণেই শিল্পের এই প্রসার ঘটেছে যার সর্বোৎকৃষ্ট প্রমাণ চলচ্চিত্র। এই পরিস্থিতিতে কেউ কি বলতে পারে, সমাজ জীবনে ধর্মের কোন প্রয়োজন নেই। এর উত্তর বিভিন্ন সমাজের জন্য বিভিন্ন রকম। কোন সমাজ ধর্মহীনতার দিকে এগোচ্ছে আর কোনটি এগোচ্ছে না তাও গবেষণার বিষয়। এই গবেষণার জন্য নৃবিজ্ঞানের বিকল্প নেই।
পরিশেষে রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয়তার কথা আসে। সেক্যুলারিজ্‌ম তথা ধর্মনিরপেক্ষতা বা ইহজাগতিকতা বিকশিত হওয়ার পর আমরা ধরেই নিতে পারি, রাষ্ট্রে ধর্মের কোন প্রয়োজনীয়তা নেই। সেক্যুলারিজ্‌ম অর্থই হল, রাষ্ট্র ধর্মহীন থাকবে এবং ব্যক্তি বা সমাজ ধার্মিক না ধর্মহীন তা নিয়ে মাথা ঘামাবে না। তাই বলা যায়, এই যুগে রাষ্ট্র চালনার একমাত্র সমাধান সেক্যুলারিজ্‌ম।

সেক্যুলারিজ্‌ম মেনে নিয়ে তো ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের মধ্যে বিরাজমান প্রায় সব সমস্যার সমাধানই করা গেল। কিন্তু বিজ্ঞানের সাথে ধর্মের সংঘাতের কি হবে? আগেই বলেছি, ধর্ম ও বিজ্ঞানের সংঘাত সমাধানের প্রাথমিক উপায় "স্বতন্ত্র বলয়"। কিন্তু এই প্রাথমিক সমাধান বর্তমান যুগের সংশয়বাদী ও নাস্তিকদের মতের বিরুদ্ধে যায়। তাদের মতে, ধর্ম নৈতিকতার মানদণ্ড হতে পারে না। সেক্ষেত্রে বিজ্ঞানের সাথে ধর্মের একমাত্র সংঘাত হল, বিজ্ঞান ধর্মকে নৈতিকতার মানদণ্ড হতে দেবে কি-না। এরও সমাধান আছে। তা হল নৈতিকতার অন্য কোন মানদণ্ড তৈরী করা এবং তার ভিত্তিতে সমাজকে গড়ে তোলা। সেই প্রক্রিয়া এখন পর্যন্ত ভালভাবে শুরু হয়নি। হলে তা দর্শন দিয়েই হবে। স্পিনোজার নীতিশাস্ত্র হয়তো আবার ফিরে আসবে। কিংবা সেই নীতিশাস্ত্রেরই কোন আধুনিক রূপ ধর্মের স্থান করে নেবে। তখন কি ধর্মের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যাবে? এটা আমি বলতে পারব না। বরং পাল্টা প্রশ্ন করতে পারব, ধর্মের প্রয়োজনীয়তা কি ফুরিয়ে যাবার মত? আমরা এক সন্ধিক্ষণে দাড়িয়ে আছি। কারণ আমাদেরকে এমন একটি প্রশ্নের জবাব খুঁজে বের করতে হবে। আমি এখন পর্যন্ত এর জবাব খোঁজার চেষ্টা করিনি। তাই সরাসরি কোন উত্তর দিতে চাই না। অভিজিৎ রায়ের মত বলতে চাই, "Let the data decide"।

--------------------------------
সূত্রঃ Religion in Human Life - Robert H. Lowie; from "Magic Witchcraft and Religion", California State University, Chico.


মন্তব্য

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

কোথায় যেন পড়েছিলাম: ‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍A man without religion is like a fish without a bicycle.

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
মৌমাছির জীবন কি মধুর?

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

সুমন চৌধুরী এর ছবি

সন্ন্যাসীর মন্তব্যে (বিপ্লব)



ঈশ্বরাসিদ্ধে:

হিমু এর ছবি

মার্ক টোয়েইন বলেছিলেন কি?


হাঁটুপানির জলদস্যু

শিক্ষানবিস এর ছবি

উক্তিটা বেশ লাগল।

অতিথি লেখক এর ছবি

লেট দ্য ড্যাটা ডিসাইড। সত্যের প্রতি যার আগ্রহ সে কখনও গোঁড়া হতে পারে না। একমত। ধর্মের প্রয়োজনিয়তা অবশ্যই ভিন্ন ভিন্ন সমাজে ভিন্ন। ধর্মাচরণের সাথে যদি বৈষয়িকতার যোগ থাকে তাহলে বলব, যতদিন ধনীদরিদ্র ভেদাভেদ থাকবে সমাজে ধর্মও তাহলে ততদিন টিকে থাকবে; ধনীর জন্য হাতিয়ার হিসেবে আর দরিদ্রের জন্য স্বস্তি হিসেবে। এখানে আলোচিত Lowie যদিও কোন ধর্মশিক্ষা গ্রহণ করেননি তবুও তিনি কিন্তু একটা সমাজে বাস করেছেন যেখানে ধর্মের প্রভাব ছিল। ভারতবর্ষের কোনও এক লেখক (নাম মনে নেই) তাঁর এবং বন্ধুদের কম্যুনিজমের ব্যাখ্যায় বলেছিলেন 'আমরা যারা মুসলমান ঘরের তারা মুসলমান কম্যুনিস্ট আর যারা হিন্দু ঘরের তারা হিন্দু কম্যুনিস্ট।' নাস্তিক এবং দার্শনিকেরা যা বলছেন তা কোন না কোন ধর্মের প্রভাব থেকেই উদ্ভুত। কোন দার্শণিক এককভাবে সারা দুনিয়ার তাবৎ সমাজ, জনগোষ্ঠী, ভাষা, বা ধর্ম নিয়ে কোন সার্বিক বিশ্লেষণে যাননি। সম্ভবও নয়। একই ধর্মের মধ্যে আবার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট নানান গোষ্ঠী বিরাজ করে। একই সমাজেও তাই। তারা আবার ধর্মকে নিজের মতো করে সাজিয়ে নেয়, ব্যাখ্যা দেয়। সবার মধ্যেই সীমাবদ্ধতা কাজ করে। সেক্যুলার রাষ্ট্র এমন আইন তৈরি করতে পারেনি যা সবার কাছে সমান গ্রহণযোগ্য। নতুন আইন করার প্রয়োজনীয়তা বা আপিল করার প্রবণতা থেকে এটা স্পষ্ট যে শেষ কথাও শেষ হয়না। দুনিয়ার তাবত তথ্যভাণ্ডার এক জায়গায় এনে উপাত্ত যাচাই করা সম্ভব এখনও হয়নি। ধর্মের নৃতাত্ত্বিক ব্যাখ্যাগুলো সামগ্রিক বিচারে শেষ পর্যন্ত কতটা নিরপেক্ষ তা কিন্তু মীমাংসিত নয়। let the data decide এর ক্ষেত্রেও আমরা নির্বাচিত sampling এর মাধ্যমেই কাজ করি। কখনও whole population এখানে বিবেচনা করা সম্ভব হয় না। সেজন্য fallacy অনিবার্য হয়ে ওঠে। natural science এও শেষ কথা বলে কিছু নেই। আমাদের যে সময় তাও আপেক্ষিক। কিংবা আপেক্ষিকতাবাদ (আইনস্টাইন) নিয়ে এখনও শেষ কোন কথা আসেনি। ন্যানোটেকনোলজি এখনও বিকাশলাভ করেনি। দার্শনিকরা যা বলেন তাও কি তার অন্তরের একধরনের বিশ্বাসের প্রকাশ নয়? যে বিশ্বাস তিনি সমাজকে বিশ্লেষণের মাধ্যমে পেয়ে থাকেন। তাই সত্য কী, সেটা খুঁজে বের করাই হবে আসল কাজ। যতদিন না হচ্ছে ততদিন খ্রিষ্টান চার্চে যাবে। অগ্নি পুজারিরা আগুনের পুজা করবে। সূর্যের পুজারিরা সূর্যের পুজা করবে। ইহুদিরা জিহোবার মুর্তির সামনে প্রসাদাঞ্জলী দিয়ে যাবে। বিশ্লেষণধর্মী লেখাটার জন্য লেখককে অসংখ্য ধন্যবাদ।

জিজ্ঞাসু

শিক্ষানবিস এর ছবি

আসলে নৃবিজ্ঞান নিরপেক্ষ হয়েছে কি-না সে প্রশ্ন তোলা যায় না। কারণ যা নিরপেক্ষ তা-ই হল নৃবিজ্ঞান। নৃবিজ্ঞানের তত্ত্বগুলোই নিরপেক্ষতার উপর দাড়িয়ে থাকে। তাই নিরপেক্ষতা না থাকলে আর নৃবিজ্ঞানই থাকলো না, তার বৈজ্ঞানিক তত্ত্বই ভুল প্রমাণিত হয়ে গেল।

আমার এই লেখার মূল উদ্দেশ্য বর্তমান সমাজে ধর্মের অবস্থানটা কোথায় এবং তার প্রয়োজনীয়তা কতটুকু তা আছে তা বলা। এখানে প্রয়োজনীয়তা আবার কার জন্য তাও বলে দেয়া হয়েছে। সুতরাং এর মাধ্যমে সবকিছু নিরপেক্ষ হয়ে যায়। কারণ ওর জন্য এটা প্রয়োজন, তার জন্য সেটা এভাবে কিছু বলা হচ্ছে না। বরং সে তার নিজের জন্য এই জিনিসের কতটা প্রয়োজন অনুভব করছে তা-ই মুখ্য। নৃবিজ্ঞান কিন্তু ধর্মের প্রয়জনীয়তাকে স্বীকার করে নিচ্ছে না। কার কাছে ধর্ম কেমন তা-ই বলছে কেবল।

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

আমি খুব সহজ যুক্তিতে বুঝতে চাইছি-পারলৌকিক প্রাপ্তির লোভ না থাকলে আধুনিক মানুষের জন্য ধর্মের উপযোগ টা কি?

ধর্ম আমার ফসল ফলিয়ে দেয়না,অসুখ হলে ঔষধ বানিয়ে দেয়না,বৃষ্টির সময় মাথা উপর ছাতা ধরেনা । তাহলে বাকী থাকলো কি? নীতি,মুল্যবোধ?

সুস্থ জীবন যাপনের জন্য যে নীতি ও মুল্যবোধ প্রয়োজন পড়ে, সেগুলো কেবল ধর্ম থেকেই উৎসারিত এমন দাবী কি আদৌ করা যায়?

ধর্ম নিয়ন্ত্রিত ইউরোপ ছিল অন্ধকার । আধুনিক ইউরোপের রেঁনেসা সম্ভব হয়েছিল যে ফরাসী বিপ্লবের মাধ্যমে তা ধর্মের নিয়ন্ত্রনকে আলগা করেই- রুশো,ভলতেয়ারদের দার্শনিকতায় ।
-------------------------------------
বালক জেনেছে কতোটা পথ গেলে ফেরার পথ নেই,
-ছিলো না কোন কালে;

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

শিক্ষানবিস এর ছবি

নৈতিকতার মানদণ্ড কেবল ধর্মই হতে পারে, এ নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। গুল্ডের সাথে ডকিন্সদের বিরোধটা তো এখানেই।

কিন্তু, সাধারণ মানুষের (ধরুন অশিক্ষিত) অবস্থা কিন্তু আমার-আপনার মত নয়। তাদের অবস্থা মৃত্যুর আগে পরিবর্তন হবে এমন আশাও করা যায় না। তাহলে কি নিয়ে বেঁচে থাকবে তারা। এজন্যই বোধহয় গ্যোটে ঐ কথা বলেছিলেন। যে যা নিয়ে থাকতে পারে তা নিয়েই থাকা উচিত। কারণ একটিমাত্র জীবন, শান্তি না পেলে আর বাকি থাকলো কি?

আলমগীর এর ছবি

আমার ক্ষুদ্র বুদ্ধিতে বুঝি ধর্মের প্রয়োজন সব সময়ই থাকবে। পরলোকের প্রাপ্তির বাইরেও মানুষের দৈন্দিন জীবনে সুস্থিরতার জন্য ধর্ম অনেক মানুষের কাজে আসছে।

মানুষ খুব আজব সৃষ্টি, অদেখায় বিশ্বাসে মানসিক সুখ পায়।

শিক্ষানবিস এর ছবি

আসলেই আজব!

অভিজিৎ এর ছবি

বেশ ভাল লাগল লেখাটা। সব দিকই মোটামুটি স্পর্শ করা হয়েছে। আমার কিছু ব্যক্তিগত মতামত দেই এ ব্যাপারে। শিক্ষানবিস যা লিখেছে তার বাইরে ধর্মের টিকে থাকার পেছনে অর্থনৈতিক কারণ তো আছেই, যেটা এ প্রবন্ধে আসে নি। তবে আমরা যে বিজ্ঞানের যুগে প্রবেশ করেছি সেখানে, ধর্ম টিকে থাকার পেছনে 'শোষক শ্রেনীর হাতিয়ার' বা এ ধরণের রাজনৈতিক শ্লোগান না আউরে বরং এতদিন ধরে টিকে থাকার পেছনে কোন জীববৈজ্ঞানিক কারণ আছে কিনা তা খূজে দেখা দরকার। বিবর্তনবাদের দৃষ্টিতে দেখলে সেটাই এই মুহূর্তে সর্বোত্তম বৈজ্ঞানিক পন্থা। এমন হতেই পারে 'বিশ্বাস' ব্যাপারটা মানব জাতির বেঁচে থাকার পেছনে হয়তো কোন বাড়তি উপাদান যোগ করেছিল একটা সময়। মানুষ তো আদিমকাল থেকে বহু কলহ মারামারি এবং রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে গিয়ে এখানে এসে পৌছেছে। একটা সময় সাহসিকতার সাথে যুদ্ধ করাটা ছিল টিকে থাকার ক্ষেত্রে অনেক বড় ফ্যাক্টর। যে গোত্রে বিশ্বাস ঢুকিয়ে দিতে পারা গিয়েছিল যে যোদ্ধারা সাহসের সাথে যুদ্ধ করে মারা গেলে পরলোকে গিয়ে পাবে অফুরন্ত সুখ, সাচ্ছ্বন্দ্য, হুর পরী উদ্ভিন্নযৌবনা চিরকুমারী অপ্সরা, (আর বেঁচে থাকলে তো আছেই সাহসী যোদ্ধার বিশাল সম্মান আর পুরস্কার) - তারা হয়ত অনেক সাহসিক্তার সাথে যুদ্ধ করেছে এবং নিজেদের এই যুদ্ধাংদেহী জীন বিস্তৃত করতে সহায়তা করেছে। নিয়ে রিচার্ড ডকিন্সের একটা খুব ভাল লেখা আছে মুক্তমনায় - 'ধর্মের উপযোগিতা'। দিগন্তও খুব ভাল একটা লেখা লিখছিলো - ধর্মের উৎস সন্ধানে। আমি সবাইকে লেখা দুটো পড়তে অনুরোধ করছি।

মানব সভ্যতাকে অনেকটা শিশুদের সাথে তুলনা করা যেতে পারে। শিশুদের বেঁচে থাকার প্রয়োজনেই একটা সময় পর্যন্ত অভিভাবকদের সমস্ত কথা নির্দ্বিধায় মেনে চলতে হয়। ধরা জাক একটা শিশু চুলায় হাত দিতে গেল, ওমনি মা বলে উঠল - চুলায় হাত দেয় না - ওটা গরম! শিশুটা সেটা শুনে আর হাত দিল না,হাত সরিয়ে নিলো। মার কথা শুনতে হবে - এই বিশ্বাস পরম্পরায় আমরা বহন করি - নইলে যে আমরা টিকে থাকতে পারবো না, পারতাম না। এখন কথা হচ্ছে - সেই ভাল মাই যখন অসুংখ্য ভাল উপদেশের পাশাপাশি আবার কিছু মন্দ বা কুসংস্কারাচ্ছন্ন উপদেশও দেয় - শনিবার ছাগল বলি না দিলে অমঙ্গল হবে জাতীয় - তখন শিশুর পক্ষে সম্ভব হয় না সেই মন্দ বিশ্বাসকে আলাদা করার। সেই মন্দবিশ্বাসও বংশপরম্পরায় সে বহন করতে থাকে অবলীলায়। সব বিশ্বাস খারাপ নয়, কিন্তু অসংখ্য মন্দ বিশ্বাস হয়ত জন্ম দেয় 'বিশ্বাসের ভাইরাসের'। এগুলো একটা সময় প্রগতিকে থামাতে চায়, সভ্যতাকে ধ্ব্বংস করে। যেমন, ডাইনী পোড়ানো, সতীদাহ, মুরতাদদের হত্যা এগুলোর কথা বলা যায়। ডেনিয়েল ডেনেটের একটা ভাল ভিডিও আছে এ নিয়ে, দেখা যেতে পারে ।

হিটলারকে যেভাবে এ প্রবন্ধে দেখানো হয়েছে তার সাথে আমি একমত নই। হিটলার নিজেই তার বই Mein Kampf য়ে বলেছেন তার ইহুদি নিধনের ইন্সপেরেশন আসলে কি ছিল -

"Hence today I believe that I am acting in accordance with the will of the Almighty Creator: by defending myself against the Jew, I am fighting for the work of the Lord."

এই সাইটে হিটলারের খ্রীস্টানিটি নিয়ে বেশ কিছু ভাল আলোচনা আছে।



পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)


পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)

শিক্ষানবিস এর ছবি

প্রথম প্যারায় লিখেছেন ধর্ম টিকে থাকার পেছনে কোন জীববৈজ্ঞানিক কারণ আছে কি-না তা নিয়ে। খুব ভাল লেগেছে। রিচার্ড ডকিন্স ও দিগন্তের লেখা দুটো অবশ্যই পড়বো।

দ্বিতীয় প্যারায় মানব সভ্যতাকে শিশুর সাথে তুলনা করেছেন। এটা আরও ভাল লেগেছে। ডেনিয়েল ডেনেটের ভিডিওটাও তাই দেখতে হবে।

তৃতীয় প্যারায় হিটলার নিয়ে বলেছেন। হিটলার নিয়ে রবার্ট লোভি যা বলেছেন এখানের একটি প্যারায় আমি সেটাই বলেছি। এ বিষয়ে আমারও খটকা লাগছিল। এজন্যই পরের প্যারায় লিখেছি, যে হিটলারের ধর্ম চিন্তা বিস্তৃত চিন্তার অবকাশ আছে। সেটাই এখন করবো বলে ঠিক করেছি। মাইন কাম্পফের উক্তিটা পড়ে তো ধর্ম থেকে উতসাহিত বলেই মনে হচ্ছে। হিটলারে ধর্মচিন্তা নিয়ে কিছু লিখে তা পুষিয়ে দেয়ার ইচ্ছা রইল।

সর্বোপরি সুন্দর পর্যালোচনার জন্য ধন্যবাদ।

বন্যা এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকে চমৎকার একটা লেখার জন্য। আসলে, ধর্মকে শুধু সামাজিক বলয়ের মধ্যে ফেলে দেখাটা কি পুরোপুরিভাবে ঠিক? রাজনৈতিক এবং আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ধর্মকে বিচার না করলে কোন ধর্মের বিশ্লষণই বোধ হয় পূর্ণ হতে পারে না। ধর্মকে এভাবে ব্যখ্যা করতে গেলে সরলীকরণের সম্ভাবনা থেকে যায়। গত দশ হাজার বছরের মানব ইতিহাস এবং বিভিন্ন ধর্মের উৎপত্তির ইতিহাস পড়লে এটা খুব সহজেই পরিস্কার হয়ে যাওয়ার কথা। সভ্যতার বিভিন্ন ধাপে শুধু যে নতুন নতুন ধর্মের সৃষ্টি হয়েছে তাইই নয়, ক্রমাগতভাবে তাদের রূপও বদলেছে বিভিন্ন কারণে। যেমন ধরুন আমারিকার ফাউন্ডিং ফাদাররা বেশ প্রগতিশীলভাবে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলে গেলেও, আজকের আমেরিকানরা ইউরোপীয়ানদের চেয়ে অনেক বেশী ধার্মিক...এটার ব্যখ্যা পাওয়া সম্ভব গত কয়েকশ' বছরের রাজনৈতিক এবং আর্থসামাজিক বিকাশের মধ্যে। আজকে আমেরিকা নিজের দেশে মূখে ধর্ম-নিরপেক্ষতার কথা বললেও কেন পৃথিবী জোড়া ধর্মকে প্রবলভাবে ব্যাবহার করে যাচ্ছে তারও ব্যাখ্যা পাওয়া সম্ভব। ধর্ম অসহায় মানুষকে অনিশ্চতা এবং হতাশার মধ্যে আশার(তথাকথিত) আলো দেখায়। আসলে যতদিন পর্যন্ত সমাজে সব মানুযের ভালোভাবে বেঁচে থাকা নিশ্চিত না হবে ততদিন পর্যন্ত ধর্মকে সম্পূর্ণভাবে বাদ দেওয়া বোধ হয় সম্ভব হবে না।
আর ধর্মকে নৈতিকতার মানদন্ড বলাটা যে আসলে কত হাস্যকর তা একটু চিন্তা করলেই বোঝা যাওয়ার কথা। নৈতিকতার মোড়কে পোড়া ধর্ম তো মানব সভ্যতার(আমাদের জানা যতটুকু সময়) পুরো সময়টা ধরেই ছিল, কিন্তু ইতিহাসের পাতাগুলো তো অনৈতিক যুদ্ধ, অত্যাচার, বিভৎষতায় ভরা...ধর্মতো সেগুলোকে কখনই ঠেকাতে পারেনি, অনেক ক্ষেত্রেই বরং উষকে দিয়েছে।

শিক্ষানবিস এর ছবি

এজন্যই এখন ধর্মকে ঘরের কোণে চলে যেতে হচ্ছে, শুধু ব্যক্তিগত জীবনে। ধর্ম না বলে বরং কোন পরম সত্ত্বায় বিশ্বাস বলা যেতে পারে। আমিও প্রথাগত ধর্মের চেয়ে পরম সত্ত্বায় বিশ্বাসকে প্রাধান্য দেই। কিন্তু নৃতাত্ত্বিক গবেষণায় এখনও দেখা যাচ্ছে, প্রথাগত ধর্ম সাধারণ মানুষকে ঘিরে রেখেছে। তবে অবশ্যই, দিন দিন এর প্রভাব কমে যাচ্ছে।

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

যাক বাবা শিক্ষানবিসের এই ব্লগের উছিলায় বন্যা আপুকে পাওয়া গেল এক যুগ পরে

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

দিগন্ত এর ছবি

আমার এমনিতে লেখাটা ভাল লাগলেও অসংখ্য জায়গায় আমি দ্বিমত পোষণ করি। একটা একটা করে দেখে নেওয়া যাক -

সাধারণ মানুষের জন্য সমাজ একাঙ্গীকরণের চালিকা শক্তি হিসেবে এখনও ধর্মের বিকল্প নেই।

- এটা দুই একই ধর্মের মানুষের জন্য যতটা সত্যি, আলাদা ধর্মের মানুষের জন্য ততটাই মিথ্যা। পৃথিবীতে ধর্ম যতদিন থাকবে ততদিনই কিন্তু আলাদা আলাদা আকারেই থাকবে, সুতরাং ...

ধর্ম উধাও হওয়ার সাথে সাথে সমাজ থেকে নৈতিক মানদণ্ডও উধাও হয়ে যায়।

- একেবারেই ঠিক নয়। পৃথিবীতে অনেক জায়গায় ধর্ম এখন ক্রমবিলুপ্তির পথে, তার মধ্যে একটা জায়গাতে আমি নিজে কয়েকমাস কাটিয়েছি - সেটা চিন। আমার মনে হয়না তার ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে কোনো মূল্যবোধের তফাৎ ঘটেছে। বরং সবাই মূল্যবোধ ব্যাপারটাকে ধর্মের থেকে আলাদা করে সমাজের একটা অঙ্গ বলে মেনে নিয়েছে। এবার আপনি যদি তার সাথে রাষ্ট্রীয় ধর্ম আর রাষ্ট্রীয় মূল্যবোধের কথা বলতে চান, তাহলে তো বলতে হয় রাষ্ট্রীয় ধর্মের নামে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের সারা পৃথিবীর লম্বা ইতিহাসের কথা - সেটাই বা কেন বাদ যায় আলোচনা থেকে।

কারণ সভ্য খ্রিস্টান কখনও ইহুদি নিধনকে স্বীকৃতি দিতে পারে না। তার এই চেতনার মূলে ছিল যুবক বয়স থেকে তিল তিল করে গড়ে উঠা চেতনা যা তাকে বলেছিল, ইহুদিরাই জার্মানদের সর্বশক্তিমান হয়ে উঠার পথে প্রধান অন্তরায়।

যদি ধরেও নেওয়া যায় আপনার কথা ঠিক, তাহলেও বলি, যুবক বয়েস থেকে হিটলারের মধ্যে গড়ে ওঠা ইহুদী-বিদ্বেষ তার অলীক কল্পনাজাত বা নিজ-মস্তিষ্কপ্রসূত কিছু নয়। সেটা তদানীন্তন 'সভ্য' খ্রীষ্টান সমাজেরই অবদান। সেই কারণেই, হিটলারের অনুগামীর সংখ্যাও কম ছিল না। একজন ব্যক্তিকে একটা হলোকাস্টের মত ঘটনার জন্য দায়ী করা বাহুল্য ছাড়া কিছু নয়।

কিন্তু কেউ সাইকোসোমাটিক হলে আবার বিজ্ঞানের কাছে গিয়েও লাভ নেই। সাইকোসোমাটিক বলতে হতাশা থেকে উদ্ভূত একটি সমস্যাকে বোঝায়।

আমি ঠিক জানি না উনি সাকোসমাটিক রোগীদের নিয়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণার কথা কিছু পড়েছেন কিনা। বিজ্ঞানের কাছে এটা মন বা মস্তিষ্কের একটা অবস্থা - তাই হতাশা কাটিয়ে ওঠার জন্য মস্তিষ্ক বা মনোবৈজ্ঞানিকের পরামর্শ নেওয়া যেতেই পারে। সান্ত্বনাবাক্য দরকার পড়লে ধর্ম কেন, তা অনেকসময়ে আত্মীয়-পরিজনদের মধ্যেও পাওয়া যায়।

তিনি নির্দ্বিধায় বলেন, বিজ্ঞান মানুষকে নিরাপত্তা দিতে পারে না। ধর্মের পক্ষেই কেবল চূড়ান্ত নিরাপত্তা দেয়া সম্ভব।

- কি ভাবে ধর্মের মাধ্যমে নিরাপত্তা পাওয়া সম্ভব সেটাই প্রশ্ন। যদি সেটা যে কোনো বদ্ধমূল বিশ্বাসের মাধ্যমে হয়, তাহলে তো সেটাকে আলাদা করে ধর্ম বলার কিছু নেই, যে কোনো বিশ্বাস থেকেই তা আসতে পারে।


হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

শিক্ষানবিস এর ছবি

পাঁচটি উদ্ধৃতি দিয়েছেন। এর মধ্যে তিন নম্বরটির দায়িত্ব আমার নিজের। বাকিগুলো রবার্ট লোভির নিজের কথা।
এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে রবার্ট লোভি ১৯৬৩ সালে নৃতাত্ত্বিক গবেষণার মাধ্যমে যা বুঝতে পেরেছেন তা-ই লিখেছেন। নৃবিজ্ঞানের এই ধারার মূল উদ্দেশ্য ধর্মের একটি পরিপূর্ণ নৃতাত্ত্বিক তত্ত্ব দাড় করানো। এজন্য কোন তত্ত্বকথায় না গিয়ে তারা মাঠ পর্যায়ে গবেষণার আশ্রয় নেন। তার পরও বলতে হয়, লোভি কেবল মার্কিন আদিবাসীদের মধ্য কাজ করেছেন আর সেটা ১৯৬৩ সালের কথা। অনেক কিছুই পরিবর্তিত হয়ে গেছে। আমি এখানে লোভির গবেষণার কথা উল্লেখ করেছি, নৃবিজ্ঞানের মাধ্যমে ধর্ম গবেষণার গুরুত্ব বোঝানোর জন্য।

আর তিন নম্বর উক্তির দায় স্বীকার করছি। হিটলারকে লোভি যেভাবে দেখেছেন তার দ্বারা আমিও খানিকটা প্রভাবিত হয়েছি বলেই এমন হয়েছে। অভিজিতের মন্তব্যের জবাবে আমার মতামত জানিয়েছি।

নিঘাত তিথি এর ছবি

শিক্ষানবিসকে অভিনন্দন জানাই এরকম চমৎকার প্রবন্ধের জন্য। যুক্তি, নিরীক্ষা, বিশ্বাস, নৃবিজ্ঞান- এই সব মিলেই একটি দারুণ আলোচনা, এবং তার চাইতেও বেশি চিন্তার খোরাক যোগানো লেখা।
পড়তে ভালো লেগেছে। তারপরে প্রত্যেকের নিজের মত করে ভেবে নেবার সুযোগ তো রয়েছেই।
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

পরিবর্তনশীল এর ছবি

***** কী আর হবে? য্যামনে আছি ত্যামনেই থাকি।

--------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

আহমেদুর রশীদ এর ছবি

ধর্ম ধার্মিকদেরকে ভীত আর ন্যুজ করে দেয়। তবে ধর্মব্যবসায়িদেরকে করে যা খুশী তা করার মতো পাষন্ড।

---------------------------------------------------------
আমাকে ডাকে আকাশ, বোঝে মাটি হাওয়া জল
বোঝে না মানুষ আর বিনাশী মুদ্রার ছল

---------------------------------------------------------

ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
________________________________________
http://ahmedurrashid.

শিক্ষানবিস এর ছবি

ঠিক। এর প্রমাণ আমিও পেয়েছি।

হিমু এর ছবি

আদিম সমাজে ধর্মের উৎপত্তি নিয়ে জ্যারেড ডায়মন্ডের একটি পর্যবেক্ষণ পড়ে বেশ চমৎকৃত হয়েছিলাম। ডায়মন্ডের একটি অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা আছে, সেটি হচ্ছে পৃথিবীর কিছু Last First Contact এর সুযোগ তিনি পেয়েছিলেন। পাপুয়া নিউগিনির এমন কিছু দুর্গম অংশে তিনি গিয়েছেন, যেখানে তিনিই প্রথম বহিরাগত (Not necessarily শ্বেতাঙ্গ)।

এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সমাজগুলোর নিজেদের মধ্যে মিথষ্ক্রিয়ার সময় ডায়মন্ড দেখেছেন, দু'টি ভিন্ন গোষ্ঠীর পাপুয়ারা মুখোমুখি হলে সুযোগ পেলেই আলাপ করে। সবসময় ভাষার সুবিধাটাও নেয়া যায় না, কারণ পাপুয়া নিউগিনিতে হাজারের ওপর ভাষা চালু আছে। আকারে ইঙ্গিতে তখন তারা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের চেষ্টা করে। যারা ভাষার সুবিধা নিতে পারে, তারা জানতে চায় আত্মীয়স্বজন, খাবারদাবার, পূজাঅর্চনা নিয়ে। এই আলাপের মধ্যে কোন না কোন পরিচয়ের সূত্র তারা খুঁজে বার করার চেষ্টা করে। পরিচয় বেরিয়ে গেলে দু'পক্ষেরই খাটনি কমে, একজন আরেকজনকে খুন করার আর দরকার পড়ে না। পরিচয় পাওয়া না গেলে খুন করাই রেওয়াজ, কারণ দুই পক্ষের কেউই জানে না, ভিনগাঁয়ের বদমায়েশ পাপুয়াটা কী মতলবে এসে হাজির হয়েছে। গ্যাঞ্জাম করার আগেই দে ভুকিয়ে।

ডায়মন্ড আদিম সমাজে ধর্মকে একধরনের ডিলিনিয়েটর হিসেবেই ব্যাখ্যা করেছেন। নিরাপত্তার প্রয়োজনে, সংঘাতের সামর্থ্য বিচারে ভিন্ন ভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে বস্তুগত মিল বা সাদৃশ্যেরও অতীত কোন অলীক যোগসূত্র, যার কারণে রক্তপাত লোকক্ষয় থেকে বিরত থাকা যায়, আবার যার অভাবকে কেন্দ্র করে আক্রমণের আয়োজন করা সম্ভব হয়। ধর্ম আদিম সমাজে সম্ভবত Foraging এর সাথে সম্পৃক্ত একটি স্ট্র্যাটেজি, একটি কৌশল হিসেবেই ব্যবহৃত হতো। ক্রমে এর সাথে যুক্ত হয়েছে পৌরহিত্য, পরলৌকিকতা, আরাধ্যের সন্তুষ্টি কামনার উদ্দেশ্যে ভেটদান ... প্রভৃতি কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য, যা এখনও বিশ্বজুড়ে প্রচলিত ধর্মগুলোর মধ্যে বর্তমান।


হাঁটুপানির জলদস্যু

শিক্ষানবিস এর ছবি

জ্যারেড ডায়মন্ডের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ। নৃবিজ্ঞান ও জীববিজ্ঞানেই ইদানিং বেশি আগ্রহ পাচ্ছি। আদিম ধর্মের উতপত্তির ব্যাখ্যাও ভাল লাগলো।

হিমু এর ছবি

তাহলে ডায়মন্ডের চারটা মাস্টারপিস পড়ে দেখতে অনুরোধ করি।

  • Guns, Germs and Steel
  • Collapse
  • The Third Chimpanzee
  • Why is Sex Fun?

প্রথম বইটায় একটা প্রশ্নের উত্তর খোঁজা হয়েছে, কেন ইউরেশিয়ার মানুষ গোটা পৃথিবীর ওপর কর্তৃত্ব স্থাপন করেছে, উল্টোটা কেন হয়নি। দ্বিতীয় বইটা বিভিন্ন অতীত সমাজের পতন নিয়ে আলোচনা করেছে। তৃতীয়টা মানুষের আচরণগত বিবর্তন নিয়ে, আর চতুর্থ বইটা মানুষের সাথে অন্য প্রাণীর যৌন আচরণের পার্থক্যকে ভিত্তি করে মানুষের বিবর্তন বিষয়ে কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছে।


হাঁটুপানির জলদস্যু

শিক্ষানবিস এর ছবি

বইগুলো জোগাড় করার কোন সহজ উপায় বলতে পারেন?

অবনীল এর ছবি

দেরিতে হলেও কমেন্ট করছি। এই ধরনের টপিকের আমি পাঁড় পাঠক। Jared Diamond এর রিসেণ্টলি একটা লেকচার শুনলাম Ted.com এ বিষয় Collapse of societies. Here's the link:

http://www.ted.com/index.php/talks/jared_diamond_on_why_societies_collapse.html

ওখানে ডাউনলোড লিঙ্ক ও পাবেন ভিডিওর নিচে। এই ধরনের আরো লেখার অপেক্ষায় রইলাম।

___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা

রায়হান আবীর এর ছবি

এই সুন্দর ফুল সুন্দর ফল
মিঠা নদীর পানি
খোদা তোমার মেহেরবাণী

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

লেখাটা অর্ধেকের মতো পড়লাম... পুরোটা পড়া হলো না দূর্বল মনোযোগের অভাবে। তবে যতটুকু পড়েছি তাতে কিছু দ্বিমতও আছে। আর শুধু লোভির ভাবনা নিয়ে ধর্মকে বিশ্লেষন করাটা কতটুকু যুক্তিজনক?
এই পোস্টের উত্তর করাটা বেশ সময় সাপেক্ষ... রেফারেন্স ঘাঁটতে হবে... বইগুলো হাতের কাছেই আছে... কিন্তু সময়টা বা পরিবেশটা হাতের কাছে নেই।
একটু সময় নিয়ে করতে গেলে দেরি হয়ে যাবে বোধহয়। ব্লগের এইটা একটা অসুবিধা... সময়ের সাথে হারিয়ে যায়।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

শিক্ষানবিস এর ছবি

পুরোটা পড়লে বুঝবেন, আমি শুধু লোভির দৃষ্টিতে লেখিনি। লোভির দৃষ্টিভঙ্গিটা কেবল উল্লেখ করেছি। ধরতে পারেন একজন বিখ্যাত নৃবিজ্ঞানীর ধর্ম বিষয়ক চিন্তাধারা তুলে ধরা। এটা করার মূল উদ্দেশ্য ছিল ধর্মের নৃবিজ্ঞান নিয়ে গবেষলা করার প্রয়োজনীয়তা বোঝানো।

জুলিয়ান সিদ্দিকী এর ছবি

অনেকদিন পর ধর্ম সম্পর্কিত একটি মানসম্পন্ন লেখা পড়লাম। খুব ভালো লাগলো। ধন্যবাদ লেখককে।

উদ্ধৃতি
ধর্ম উধাও হওয়ার সাথে সাথে সমাজ থেকে নৈতিক মানদণ্ডও উধাও হয়ে যায়।

এর পক্ষে ছোট্ট একটি যুক্তি উত্থাপন করি।
শের এ বাংলা একে ফজলুল হক নির্বচনের সময় কোরআন শরিফের কাপরের থলেতে একটি ডায়রি নিয়ে গলায় ঝুলিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় বেরিয়েছেন। সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলিম মানুষ তাকে সত্যবাদী ভাববে আর অন্যান্য ধর্মের লোকেরাও তার প্রতিশ্রুতির প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে। কারণ গলায় ঝোলানো আছে কোরআন।

সাধারণের ধর্মীয় অনুভূতির কারণে যারা হক সাহেবকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো তারা তা ভঙ্গ করেনি। কিন্তু হক সাহেব ধর্মে বিশ্বাস করতেন না বলে ধর্মপ্রাণ মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাস ও মূল্যবোধ এর সঙ্গে প্রতারণা করার জন্য গলায় কোরআনের ডামি ঝুলিয়েছিলেন।
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।

___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।