বাম্পার ৭৪.৮৫% এবং কতিপয় চা,পান, বিড়ি দোকানির মিষ্টি বিতরণ

মূর্তালা রামাত এর ছবি
লিখেছেন মূর্তালা রামাত (তারিখ: বিষ্যুদ, ১১/০৯/২০০৮ - ১০:৪৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

গতকাল প্রকাশিত হলো দেশের এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল। গড় পাশের হার ৭৪.৮৫%। গতবারের তুলনায় তা ১০% বেশি। জিপিএ ৫ পেয়েছে ১৯হাজার ১০৮ জন যা গতবারের দ্বিগুণ। এসএসসি-এর পর এইচএসসিতেও এই হঠাৎমেধা বিস্ফোরণের কৃতিত্ব সরকারের বলে দাবী করেছেন শিক্ষা উপেদেষ্টা জনাব ড.হোসেন জিল্লুর রহমান। তার দাবি মতে ফখরুদ্দীন সরকার দেশে স্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করায় শিক্ষার্থীরা মনযোগ দিয়ে পড়তে পেরেছে তাই এই বাম্পার ফলাফল।

তার দাবি নিয়ে অভিভাবকদের কোনো মাথাব্যথা দেখা যায়নি। সন্তান ভালো ফল করেছে এতেই তারা খুশি। পুরো দেশ জুড়ে উৎসবের আমেজ। মিষ্টির দোকানগুলোতে প্রচন্ড ভিড়। কতিপয় চা, পান, বিড়ি দোকানিরাও মিষ্টি বিলিয়ে এই উৎসবে সামিল হয়েছে। মিষ্টির দোকানদারের বদলে তাদের খুশি হওয়া নিয়ে অবাক হচ্ছেন? অবাক হবার তেমন কিছু নেই। এসব চা, পান, বিড়ির দোকানিরা খুশি কারণ এদের দোকানের উপরের ফ্ল্যাটে বা গা ঘেঁষেই রয়েছে চেয়ার, টেবিল ও সাইনবোর্ড সর্বস্ব প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ! এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে এবার বেশি ছাত্রছাত্রী ভর্তি হবে, দোকানিদের বেচাবিক্রিও হবে জম্পেশ!

উচ্চ শিক্ষার জন্য দেশে পর্যাপ্ত সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় পাস করা এসব শিক্ষার্থীর বেশিরভাগকেই ভর্তি হতে হবে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে। দেশে বর্তমানে প্রায় ৫২ টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় এবং বেশ কিছু প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ রয়েছে। দু' একটি বাদে সবগুলো প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবস্থাই হযবরল। শিক্ষার যথাযথ মান নিয়ন্ত্রণ না করেই এসব প্রতিষ্ঠানগুলো উচ্চ শিক্ষার সনদ বিতরণ করে যায়। অন্যভাবে বললে এখানে টাকার বিনিময়ে সনদ কিনতে পাওয়া যায়। ফলে শিক্ষার্থীরা যারা এখানে পড়ছে তারা আদতে শিক্ষিত না হয়ে হচ্ছে উচ্চ ডিগ্রিধারী।

এতে দেশের কি কোনো লাভ হচ্ছে? শিক্ষাকে যদি জাতির মেরুদণ্ড বলে ধরা হয় তবে এসব তথাকথিত সার্টিফিকেটধারীর ভারে জাতির মেরুদণ্ড দিনেদিনে নাজুক হয়ে পড়ছে। ধরা যাক নামসর্বস্ব প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে টাকার বিনিময়ে সার্টিফিকেট নেয়া একটি ছেলে বা মেয়ে যদি শিক্ষকতায় পেশায় যোগ দেয় তবে জাতি তার কাছ থেকে কী শিক্ষা পাবে ভাবতেই ভয় হয়। অথবা না পড়েই যদি কেউ ডাক্তার, ইঞ্জনিয়ার হয়ে যায় তবে তাদের দ্বারা কী অঘটন ঘটবে তা সহজেই অনুমেয়।

বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে তাই কঠোরভাবে শিক্ষার মান নিয়ন্ত্রণ করা হয়ে থাকে। কিন্তু আমাদের দেশে আমরা এর উল্টোটাই ঘটতে দেখছি। বিভিন্ন সূত্রে জানা যাচ্ছে এই বাম্পার মেধা বিস্ফোরণের পেছেনে রয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জবর কারসাজি। শিক্ষকদের মুক্ত হস্তে বেশি বেশি নম্বর দেবার নির্দেশ দেয়া হয়েছে যাতে বেশি ছেলেপেলে পাস করে। বেশি পাস করা মানেই প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর রমরমা বাণিজ্য। আর বাণিজ্য মানেইতো কমিশন।

বাণিজ্যের এই দুষ্ট চক্র দারিদ্রের দুষ্ট চক্রের চেয়েও ভয়ানক। বিশ্ব ব্যাংক যেখানে গেছে সেখানেই বাণিজ্যের এই দুষ্ট চক্র গেড়ে বসে সেই দেশের দফারফা করে ছেড়েছে। এই দুষ্ট চক্রকে ভাঙ্গতে না পারলে আমাদের জন্যও অপেক্ষা করছে এক অন্ধকার ভবিষ্যৎ। বাম্পার পাসে, কতিপয় চা, পান, বিড়ি দোকানির উচ্ছ্বাসতো সেই ভবিষ্যতেরই ইঙ্গিত দিচ্ছে যেখানে অন্ধরাই সবচে বেশি দেখতে পায়।

১১/০৯/০৮


মন্তব্য

মূর্তালা রামাত এর ছবি

লেখা পাঠালাম সকালেই। সেই লেখা এলো পোনে ৩টায়!! তাও আবার ৫ টা পোস্টের নিচে!কী আর করা এরপর মনে হয় ২/৩ আগে থেকেই লেখা পাঠিয়ে অপেক্ষা করতে হবে।

মূর্তালা রামাত

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

চমৎকার এই বিশ্লেষণটা নীচে চলে আসায় দুঃখিত মুর্তালা। আসলে দেরী হয়ে গেলে ডেইট রিসেট করতে হয়। সব মডারেটর এটা করতে স্বস্তি বোধ করেন না। এরপর এরকম সমস্যা হলে contact ‌এট সচলায়তন.কমে ইমেইল করেন।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

শামীম এর ছবি

এমনিতেই শিক্ষা ব্যবস্থার পরীক্ষাগুলোতে আসলেই কতটুকু মেধা যাচাই হয় সে বিষয়ে আমি সন্দিহান। এজন্যই বাধ্য হয়ে ভর্তি-পরীক্ষা পদ্ধতিকে সমর্থন করি।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

রাফি এর ছবি

এই দিন বেশি দূরে নেই যখন জিপিএ ফাইভের হিসাব দেয়া হবে শতকরা হিসেবে।
ভাবতে ভালই লাগে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। চোখ টিপি

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

জিপিএ ৫ এ প্রাইভেটের পোয়াবারো এই বিষয়ে লিখতে চেয়েছিলাম। বিষয়টি চমৎকার ভাবে ফোকাস করেছেন।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

তানবীরা এর ছবি

ভালো হইছে সব্বাই খুশী হইছে তাও সমালোচনা, এই জাতীকে নিয়ে সরকার কি করবে? কোনভাবেই খুশী করতে পারছে না।

তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

কেন যেন এইসব বাম্পার রেজাল্টের খবর শুনলে মন খুশি হয় না আর। বরং নানান সন্দেহবাতিক চিন্তাভাবনা জড়ো হয়। ভাল লিখেছেন।
_________________________________
বিষন্নতা ছোঁয় আমায় মাঝে মাঝেই, কখনো কি ছোঁয় না তোমায়?

শিক্ষানবিস এর ছবি

দেশের শিক্ষাব্যবস্থার অবস্থা আসলেই খুব খারাপ। আপনার লেখায় তা ভালভাবে ফুটে উঠেছে।
আবার শুনলাম, কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ও মেডিকেলে নাকি ২০১০ থেকে ভর্তি পরীক্ষা হবে না। এতে কোচিং সেন্টারের দৌরাত্ম্য কমলেও সে নির্বাচন কতটা গ্রহণযোগ্য হবে তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।
উচিত আদর্শ শিক্ষানীতির বাস্তবায়ন।

রায়হান আবীর এর ছবি

রামাত ভাইয়ের কাব্য পড়া হয়নাই, তবে তার এইসব লেখা সত্যিই দারুন।
আপনাকে দ্রুত সচল করা হবে এই কামনা করি।

=============================
তু লাল পাহাড়ীর দেশে যা!
রাঙ্গা মাটির দেশে যা!
ইতাক তুরে মানাইছে না গ!
ইক্কেবারে মানাইসে না গ!

পরিবর্তনশীল এর ছবি

uchit kotha bolsen
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

মুর্শেদ এর ছবি

শুধুমাত্র প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় নয় তথাকথিত কেচিং সেন্টার সমূহের (আমি যাদের বলি ছেলেমেয়েদের সৃজনশীলতা ধংশকারী প্রতিষ্ঠান) পোয়াবারো । এবং সামান্য পুজিতেই বিশাল লাভ । সম্ভবত পুজিবাজারে বিনিয়োগ করে এতো টাকা একসাথে আয় করা যায় না।
এই হচ্ছে আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার একটি খন্ডিত চিত্র।

আপনার পোষ্টের জন্য ধন্যবাদ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।