আসুন আমরা আলী আজমের খোঁজ জানতে চাই....

মূর্তালা রামাত এর ছবি
লিখেছেন মূর্তালা রামাত (তারিখ: মঙ্গল, ১৭/০৪/২০১২ - ৮:১০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

অবশেষে বাংলাদেশ রেলওেয়ের অর্থ কেলেঙ্কারির দায় নিয়ে পদত্যাগে বাধ্য হলেন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ ও রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। এর আগে একই কেলেঙ্কারির সাথে যুক্ত থাকার দায়ে পদচ্যুত হয়েছেন বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলীয় জিএম ইউসূফ আলী মৃধা, রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর ঢাকা কমান্ড্যান্ট এনামূল হক। সেই সাথে চাকরিচ্যুত হয়েছেন রেলমন্ত্রীর এপিএস ওমর ফারুক তালুকদার।

এই চারজন ব্যক্তির পাশাপাশি এই রেল কেলেঙ্কারি নাটকে আরেকটি চরিত্র বিদ্যমান। মূলত এই চরিত্রটির দ্বারাই নাটকের সূত্রপাত। আর সে হল সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের এপিএস এর ড্রাইভার আলী আজম। গত ৯ এপ্রিল রাতে ৭০ লক্ষ(মতান্তরে ২ কোটি ৭০ লক্ষ্) টাকা ভর্তি গাড়িটি এই আলী আজমই বিজিবি সদরদপ্তরে ঢুকিয়ে দেয়।

তারপরের ঘটনাতো সবারই জানা। সবার খবর আমরা জানি কেবল এই ড্রাইভার আলী আজমের কোন খোঁজ আমরা জানি না। বিজিবি বলছে তারা সেই সকালবেলায়ই অন্যদের সাথে আলী আজমকে ছেড়ে দিয়েছে। পুলিশ বলছে তাদের কাছে আলী আজমের কোন খবর নেই। র্যাব বলছে তারাও তার ব্যাপারে কিছু জানে না। অথচ এই কেলেঙ্কারি নাটকের মূল স্বাক্ষী সেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এমনটা হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু ঘটনা হল এখন পর্যন্ত অর্থ কেলেঙ্কারির প্রধান স্বাক্ষী লাপাত্তা!

আমাদের মিডিয়াও এ কদিন সুরঞ্জিত সেনের পদত্যাগ করা উচিত কী উচিত না তা নিয়েই তর্কে মেতে ছিল। যার ফলে নাটকের অন্যান্য কুশীলবেরা চোখের সামনে থাকলেও আলী আজমের সাহসী র্কমকাণ্ড এবং তার ফলশ্রুতিতে তার অন্তর্ধান মিডিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেনি। গতকাল রেলমন্ত্রীর পদত্যাগের পর সবাই তাকে নিয়ে কাঁটাছেড়া করেছেন কিন্তু কেউই আলী আজমের খবর জানতে চাননি। ভাবখানা এমন যে কোথাকার কোন ড্রাইভার তার আবার খবর নেয়া দরকার কী! অথচ মামুলী ওই ড্রাইভারই কিন্তু রেলের কালো বেড়াল তথা দুর্নীতির মুখোশ উন্মোচনের নায়ক ।

আলী আজমের কীর্তির কারণে দুর্নীতি দমন যাদের কাজ সেই দুর্নীতি দমন কমিশন পর্যন্ত নড়েচড়ে বসতে বাধ্য হয়েছে। ৭০ লক্ষ টাকার উৎস সন্ধানে মাঠে নামার ঘোষণা দিলেও তারা এই টাকার সন্ধানদাতা আলী আজমের সন্ধান করেছেন এমনটি শোনা যায়নি। এমনকী জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিজানূর রহমানও মন্ত্রী বিদায় নিয়ে তদন্ত নিরেপক্ষ হবার সুযোগ করে দিয়েছেন জাতীয় বক্তব্য দিলেও জলজ্ব্যান্ত একজন মানুষের হাওয়া হয়ে যাওয়া নিয়ে কিছু বলেননি! বিরোধী দলও সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ঘটনার মূল হোতাদের বিচারের কাঠগড়ায় তোলার দাবী করলেও ঘটনার মূল স্বাক্ষীর খোঁজ দিতে সরকারের প্রতি কোন দাবী জানায়নি!

মূল স্বাক্ষী ছাড়া ঘটনার তদন্ত যে কোনপথে এগুবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই এই অর্থ কেলেঙ্কারি ধামাচাপা পড়া বা অন্য কাহিনীতে রূপান্তরিত হবার আগেই আমাদের আলী আজমের খোঁজ জানাটা জরূরী। সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী সর্বশেষ তাকে বিজিবি হেফাজতে দেখা গেছে। অতএব বিজিবিকেই সর্বপ্রথম তার ব্যাপারে খোলাসা করতে হবে। এখানে উল্লেখযোগ্য হল, যে বিজিবি পাঁচ দশ বোতল ফেনসিডিল আটক করলেই ফৌজদারি মামলা ঠুকে মিডিয়ায় তা ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রচার করে। সেই বিজিবিই কিন্তু এখন পর্যন্ত ৭০ লক্ষ্ টাকা পাওয়ার ব্যাপারে কোন মামলা করাতো দূরে থাক একটা এফআইআরও দায়ের করেনি! বিজিবির এই রহস্যজনক ভূমিকার সাথে আলী আজমের হারিয়ে যাওয়ার কোন যোগসূত্র যে নেই তা প্রমাণের দায়িত্ব বিজিবির ওপরই বর্তায়।

ঘটনার সাথে সরাসরি জড়িত এবং ঘটনার রাতে উপস্থিত তিন ব্যক্তি তিনটি ভিন্ন গল্প আমাদের শুনিয়েছেন, টাকার অঙ্কটাও একেকজন একেকরকম বলেছেন। এখন বাকি কেবল ড্রাইভার আজম আলী। যেহেতু সেই গাড়িটিকে বিজিবি সদরদপ্তরে ঢুকিয়েছিল সেহেতু ধরে নেয়া যায় সেদিন রাতে কী ঘটেছিল এবং গাড়িতে প্রকৃতপক্ষে কত টাকা ছিল তা একমাত্র তার পক্ষেই খোলাসা করা সম্ভব।

দেশে গুম খুন এখন খুবই একটা নিত্যনৈমত্তিক ব্যাপার। এখন যদি আলী আজমও গুম হয়ে থাকেন এবং আর কোনদিনই যদি তার খোঁজ না পাওয়া যায় তবে তার দায়ভার কিন্তু সরকারের উপরই বর্তাবে। অর্থ কেলেঙ্কারির এই ঘটনা ইতোমধ্যেই সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মত একজন ডাকসাইটে রাজনীতিবিদের ৫৫ বছরের রাজনৈতিক জীবনের দফারফা করে সেরেছে। আপাতদৃষ্টিতে এটি পরিষ্কার যে এই ঘটনা নিয়ে যত জল ঘোলা হবে ততোই সরকারের জন্য তা গলার ফাঁস হয়ে দাঁড়াবে।

আর সেজন্যই ড্রাইভার আলী আজমের খোঁজ জানাতে সরকারকেই পদক্ষেপ নিতে হবে। সরকারই আলী আজমকে গুম করেছে বলে জনমনে যে আতঙ্কের কানাঘুঁষা চলছে তার দায় থেকে মুক্তি পেতে গেলে সরকারের সামনে এছাড়া আর কোন পথ খোলা নেই। আশা করি সরকার এ ব্যাপারে শুভবুদ্ধির পরিচয় দেবে, দেশের একজন সাধারণ নাগরিক আলী আজমকে অচিরেই আমরা অন্ধকার থেকে আলোতে দেখতে পাব। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই মানুষটি যে সৎসাহস দেখিয়েছেন তার জন্য দেশবাসী তাকে স্যালুট জানাতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছে।

১৭/০৪/২০১২
সিডনি, অস্ট্রেলিয়া।


মন্তব্য

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

গুম করে দেয়নি তো?

মূর্তালা রামাত এর ছবি

আমার আশঙ্কাও সেটা্

মূর্তালা রামাত

দ্রোহী এর ছবি

তুরাগ নদী।

হাসি

মূর্তালা রামাত এর ছবি

অথবা বুড়িগঙ্গা।

মূর্তালা রামাত

সুলতান এর ছবি

আজম তো ভিআইপি না। ও হারায় গেলে দেশের কি? যা ক্ষতি তা আজমের পরিবারের। সরকারের এইটা নিয়ে ভাবার সময় কোথায়।

মূর্তালা রামাত এর ছবি

ভাবসাবে সেটাই মনে হয়

মূর্তালা রামাত

সুলতান এর ছবি

আজম আলী ভিআইপি না। তাই ও হারিয়ে গেলে দেশের কিছু যায় আসে না।

স্যাম এর ছবি

আমরা আলী আজমের খোঁজ জানতে চাই... কিন্তু লেখার শেষ লাইন

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই মানুষটি যে সৎসাহস দেখিয়েছেন তার জন্য দেশবাসী তাকে স্যালুট জানাতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছে

এর সাথে প্রকাশিত খবরের কিছুটা বিরোধ আছে - যতদুর জানা যায় আলি আজম ওই টাকার ভাগ চেয়েছিলেন, সততা ও দেশপ্রেম থেকে যদি কাজটা করতেন (এখনো প্রমানিত নয়) স্যালুট জানাতে জাতি আসলেই অপেক্ষা করত।

আশা করি সরকার এ ব্যাপারে শুভবুদ্ধির পরিচয় দেবে, দেশের একজন সাধারণ নাগরিক আলী আজমকে অচিরেই আমরা অন্ধকার থেকে আলোতে দেখতে পাব।

সহমত

তৌফিক জোয়ার্দার এর ছবি

টাকার ভাগ চেয়ে কেউ বিজিবি এলাকাতে গাড়ি ঢোকাবে, এটা কি বিশ্বাসযোগ্য?

কল্যাণ এর ছবি

ভাগ চেয়ে না ঢোকালেও ভাগ না পেয়ে রাগ করে ঢুকায়া দিতে পারেতো নাকি ইয়ে, মানে...

_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩

মূর্তালা রামাত এর ছবি

রাগ করে সামরিক বাহিনীর ব্যারাকে গাড়ি ঢোকানোর আগে মনে হয় আজরাইলও কয়েকবার ভাববে

মূর্তালা রামাত

মূর্তালা রামাত এর ছবি

আমার কাছে অন্তত নয়

মূর্তালা রামাত

মূর্তালা রামাত এর ছবি

এই কাজটি যদি সে সততা ও দেশপ্রেম থেকে নাও করে থাকে তবুও সে স্যালুট পাবার যোগ্য- মূলত তার সাহসের জন্য। সে যে রিস্কটা নিয়েছে সেটাতে তার জীবন বিপন্ন হবার শঙ্কা পুরোমাত্রায় ছিল। এবং তার রিস্ক নেয়া কাজটির কারণেই আমরা কালো টাকার কথা জানলাম, পত্রিকায় এপিএস,জিএম আর কমান্ড্যান্টের দুর্নীতি নিয়ে বিস্তর লেখা হল। মন্ত্রী মহোদয়ের বিত্ত বৈভব নিয়েও লেখা হল। আর এ সবই সম্ভব হয়েছে একমাত্র ঐ লোকটির সাহসের কারণে। আর সমাজের খেটে খাওয়া শ্রেণীর একজন অসৎ লোকের একটি আধা সামরিক বাহিনীর সদর দপ্তরে ঢোকার মত সাহস হবে বলে আমার ব্শ্বিাস হয় না।

মূর্তালা রামাত

ইয়াসির এর ছবি

সরকার কিংবা বিরোধী দল (ভবিষ্যতের সরকারী দল) কারো জন্যই এই ধরণের ঘটনা নিরাপদ নয়, কাজেই কেউ আলী আজমের ব্যাপারে আগ্রহী হবে না এটাই ফ্যাক্ট। সম্ভাব্য সকল বিদ্রোহীদের জন্য এটা একটা বার্তা, বিরুদ্ধে যেও না, গুম হয়ে যাবে। মনে প্রাণে প্রার্থনা করি, লোকটা জীবিত থাকুক।

মূর্তালা রামাত এর ছবি

মনে প্রাণে প্রার্থনা করি, লোকটা জীবিত থাকুক।

মূর্তালা রামাত

কল্যাণ এর ছবি

খবরের কাগজের তথ্য ঠিক থাকলে ড্রাইভার টাকার ভাগ চেয়ে না পাওয়াতে প্রতিশোধ হিসেবে টাকা সহ আরোহীদের ধরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। আর এটাই সব সংবাদ মাধ্যমে সমর্থিত। অনেকটা নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করার মতই ব্যাপার। এটা স্যালুট দেয়ার মত বলে ডিক্লেয়ার করার আগে আর একটু চিন্তা ভাবনা করা দরকার ছিল। বরং যেটা সত্যি সেটাইতো বের হয়ে আসা উচিত, আর আজমের খোঁজ পাওয়া এবং তাকে আইনের আওতায় আনার কারণ হিসাবে শুধুমাত্র এটাই যথেষ্ট।

_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩

মূর্তালা রামাত এর ছবি

আমি আলী আজমের সাহসের জন্য তাকে স্যালুট দিতে চাই। এবং আপনি সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলে দেখুন, তাদের কাছে ড্রাইভারই হিরো- কারণ যে কোনভাবেই হোক না কেন, জনগণ যেটা চায় সে ঠিক সে কাজটাই করেছে

মূর্তালা রামাত

চুপচাপ এর ছবি

ওই লোকরে স্যালুট দিয়া নিজেরে শুধু শুধু ছোট করতে যাওয়ার দরকার কি বুঝলাম না। ওই লোক টেকার ভাগ চেয়ে না পাওয়াতেই এই কাজ করছে, এইটাই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বিশ্বস্ত খবর, নিউজপেপার অনুযায়ি। আপনি পুরা লেখাটাই লিখছেন আবেগের বশে। যুক্তির ধারে কাছ দিয়াও যান নাই। বিনা বিচারে তারে গুম করে দেয়াটা অবশ্যই সমর্থন যোগ্য নয়, কিন্তু তাই বলে তারে নায়ক ভেবে তারপর তাকে খুজতে হবে এমনটাও নয়। আমরা চাই সে যদি এই অন্যায়ের সাথে যুক্ত থাকে তারো বিচার হোক। আর আপনি কয়জন সাধারন মানুষের সাথে কথা বলেছেন? আমিও তো সাধারান মানুষই ভাবতাম নিজেরে্‌, কিন্তু আমি তো ওরে নায়ক ভাবি না। নাকি আমি কোন অসাধারন মানুষ ? গড়াগড়ি দিয়া হাসি

সাবেকা এর ছবি

ড্রাইভার আলী আজমের খোঁজ জানাটা খুবই জরুরি । একজন সাধারণ নাগরিক তিনি, তাই কারো মাথা ব্যাথা নেই তাঁর ব্যাপারে, এটা দিনের আলোর মতই সত্য । আশা করবো তিনি বেঁচে আছেন ।

তবে আজমকে হিরো বানানো কতটা যুক্তিযুক্ত তা ভেবে দেখার দরকার আছে ।

হিমু এর ছবি

সচিবের এপিএসের পদমর্যাদা সিনিয়র সহকারী সচিব। মন্ত্রীর এপিএসের পদমর্যাদা কি উপসচিবের সমান, নাকি সিনিয়র সহকারী সচিব? তার গাড়ি কি সরকারী, নাকি মন্ত্রীর এপিএসের নিজস্ব? এপিএস কোন রাজকার্য করে বেড়ায় যার জন্য ঐরকম একটা বিলাসবহুল গাড়ি তাকে সরকার থেকে দেয়া হবে? এই গাড়ির চালকের বেতন, তেলের পয়সাও কি সরকারের কোষাগার থেকে আসে?

আজম যে কারণেই টাকা ধরিয়ে দিক, আসল কথা গাড়িতে কালো টাকা পাওয়া গেছে। এখন তার খোঁজ পাওয়া দরকার।

কল্যাণ এর ছবি

আজম যে কারণেই টাকা ধরিয়ে দিক, আসল কথা গাড়িতে কালো টাকা পাওয়া গেছে। এখন তার খোঁজ পাওয়া দরকার

_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩

মূর্তালা রামাত এর ছবি

সহমত

মূর্তালা রামাত

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।