উৎকেন্দ্রীকতারও এক কেন্দ্র থাকে নিচে

মুজিব মেহদী এর ছবি
লিখেছেন মুজিব মেহদী (তারিখ: শনি, ২৬/০১/২০০৮ - ১২:৫৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

auto
পেছনে তাকাবার আর ফুরসৎ নেই, কিংবা ডানেবায়ে, শুরুর উচ্ছ্বাস আমি হারিয়েছিলাম জানি এইভাবে একবার, লালবাগ রোডে-- সেটা সেক্সের প্রশ্ন ছিল না, নয় থমকে থাকারও

শাহবাগ থেকে শুরু করি শেষে মনখারাপের কথা তুলে, যেহেতু বেশি বেশি অতিপরিচিত মুখ চোখে লাগে, অচেনা নন্দন পানে নীরবে তাকিয়ে শুধু দূর ছবি আঁকি তাই, শূন্যে সমীপবর্তী রেখে মন, স্মৃতিতে জুড়তে থাকি হাড়মাস শিল্প মনোলোভে-- এটা এতটাই স্বপ্নসঙ্গত যে মনোযোগ গেঁথে গিয়ে চিরকেলে আত্মীয়কেও ফেলে রেখে যাচ্ছি বলে মনে হয়-- নাড়ি ছিঁড়ে

বাপু এগোও তবে রয়েসয়ে-- বললে সে, মনে রাখতে হবে যে রোপণও একটা কলা, এরও কিছু কানুনধর্ম আছে, সবাই জানে না, জানে উত্তুরে হাওয়া-- আমি বলি যে আমারো একটা ছে আছে জগৎব্যাপারে-- তুমি খুব অনিবার্য হয়ে গেছ, তুই গেছিস হয়ে, আপনি গেছেন

একমাত্র লেহনাকাঙ্ক্ষায় আমি জন্মি নি যে খানিক টকের ঝাঁঝ মুখে দিয়ে, নাক টিপে ফের তা বের করে বাঁহাতে আঘাত ঠুকে বলে দেবে-- 'রে তুই ফিরে যা রে আবেগপ্রবর', মেঘের দেখা আমি এটাই প্রথম পেলাম তা তো নয়, বিবিধ মাপের মেঘ শাদাকালো, বিশাল আকাশে ঢের লোফালুফি খেলে-- আপনি তো কালো মেঘ, বজ্রসম্ভাবী আধুনিকা, কিছুটা পুরুষালি ঢঙ, কাঁধেতে মোরগফুল জটাজুটে বেঁধে রাখা আছে-- তবু আমি পুড়ে যাই কেন যে ক্লিশে বিরহের ভারে

'বাংলা শব্দের বিবিধার্থ মানে আছে'র চেয়ে এ বেলায় আর কী বলা সঙ্গত বলুন, তবু প-এ প্রেম না বুঝে আপনি যে প্রতিশোধে পুড়ে যান, আমি সেটা জানি, তবে কী কী যুক্তিতে আপনি এ শুভে অনিচ্ছা করেন, সেসব জানারও আমি অধিকার রাখি

তোমাকে ফ্রড বলতে পারে শুধু আরেক ফ্রডই-- সম্মোহনশীলা ওহে দাহনবিদ্যাপটু, চিরহরিৎ সুবর্ণ সর্পিণী-- তবু শোন, নিবিড় বাজালে বাঁশি তুমি জাগবেই জানি, বহতার অক্লেশ খুনী-- দেখ, ম্যা ম্যা করতে করতে ভুলে গেছি যে, এখানেই নেমে যাওয়া হলে জানাই যাবে না কোনো হরিনাথকুল, তিলি-কি-তিসিরূপ সন্দেহ এখনো চোখের পরে নাচে-- কোন মেঘ নেব আর কোনটা নেব না তা জমিনসাপেক্ষ যদি, আমি তার নিমবার্তাবাহী

যেসব পাপকে ধর্মান্ধরাও ঠিক মনেই করে না পাপ, ওদের একেকটি মুখ মনে করে আমি বহুদিন পুণ্যের সংজ্ঞা খুঁজেছি একা, শেষে ভেবেছি এইসব শিশুপাপের মুখে হাসি ফোটাতে পারার চে' পুণ্যকর্ম কিছু ব্রহ্মাণ্ডে থাকতে পারে না, যেহেতু আরো ঢের জন্ম হবে পৃথিবীতে-- সবিশেষ পাপের সন্তান

মাইরি আমি লাগাতে চাই নি দ্বার, চিইইইই... বাতাস লাগাতে চাইল বলে, লেগে গেল, শোনো, পৃথিবীরও থাকে মোট দুইখানি দ্বার, একটা তোমার, আমি যেটা খুলি তার উচ্ছ্বাস সুশালীন-- লঙ ড্রাইভ চাঁদনিতে হলে, কুয়াশা কেবিনও যদি ফাঁকা থাকে, জানা যেতে পারে তবে দ্বারটির মানে

নগরের অন্তর্ক্ষত হলো অ্যালিয়েনেশন, একথা মানলে ভালো, কোনোই ফিরে আসার নইলে জবাব মেলে না, অবেলায় দেখা হয় বিরূপার সাথে, শব্দটির কতরকম প্রেক্ষিত হতে পারে ভেবে, আমি এমন রোমাঞ্চিত হয়েছি যে সাহস করে আকাশের তারা গুনবার মতো একটা ফ্যান্টাসিকেও মনে করেছি কর্ম, আর দারুণ রটিয়ে গেছি ঘরভর্তি আমি ফুটিয়ে রেখেছি খাঁটি কার্পাস তুলো, তুমি শুনলে হাসতেও ভুলে থাকতে পার-- হাসার সময় পেরিয়ে কমসেকম তিরিশ সেকেন্ড, আর এরকম সংক্রামক হাসি যে কী ভয়ানক হাস্যোদ্রেক করে, তা বলতে গেলেও আরেকবার হাসি পায় দ্রুত

রাতে ট্যাপের গালফুলানো শব্দ শুনলে মানুষের নানারূপ কাণ্ডকীর্তির কথা মনে হয়, এসবকে জীবনঘনিষ্ঠতা বলে যারা চ্যাঁচাবে আখেরে, তাদেরকে লোকেরা অপবাদ দেবে স্রেফ সমালোচক বলে, মজা হলো-- শব্দটা যে একটা মোক্ষম গালি, এটা জেনেও তারা গালাবাদ করে, কেননা গালিপ্রুফ মন না হলে কেউ কখনো পারে না হতে সম-আলোচক

এই যে একা আমি, তারও এক বন্ধু ছিলেন চলচ্চিড়িয়া, ঠিক বৃষ্টি যেন মেঘ না চাহিতে, ভালোবাসতেন-- হাঁটতে বলার আগেই পা বাড়িয়ে দিতেন সামনে, হাতে তাক তো এইমাত্র বাহুর যোজনা, ঠোঁটে ঠোঁট তাকালেই চোখে, নিম্নাঙ্গে তাকাবার আগেই কী যে বলে বসতেন তবু-- 'শুতে আমার একদম ইচ্ছে হচ্ছে না গো, যদিও শোয়াটোয়া ব্যাপারে আমার অ্যালার্জি নেই, ছিল না কস্মিনে'-- শুনে বেশ কাতুকুতু লাগে, যেন শোয়া ছাড়া মনুষ্যাভিধানে কোনো প্রীতিকেলী নেই-- যেন ঘর মানেই হলো বিছানা আর বাহির মানে পথ

সত্যবাদিতা বেশ তোহফা কাজ, সত্য চিনতে হলে যে কটা মিথ্যের ঘাড় চিবিয়েচুনিয়ে খেতে হয়, কোয়ান্টিটির ভ্যালু সেখানে ওঠাতে হলে, কারো না কারো দ্বার, খোঁয়াড়ের, ভাঙানোই লাগে, এত এত ঘাড়বান মোরগেরা থাকে না যত্রতত্র সকল খোঁয়াড়ে-- তবু এটা নিঃসন্দেহে এক সর্বনাশা কথা যে, অহেতু গুঞ্জন খাড়া করে নিজে নিজে দ্বার খুলে পালিয়ে যাবে কোনো গানগাওয়া পাখি, মানবে না এটা কোনো পরিবেশবিদই, কেননা পক্ষীকুলের শাশ্বত জীবন দেবে, এমন খোঁয়াড়ঘর ভূ-ভারতে নেই, আছে শুধু মনের ভারতে

আমি বাংলাভাষার হয়ে ওকালতি করি, এটা মনে রেখেই যারা ছোটবোনের নোটবুকে ইংরেজিতে লেখে নিজ অ্যাফেয়ার্স নোট, তাদের সখ্যলাভ বিষয়ে তীব্র উচ্চাশা পোষণের রেওয়াজ সমাচ্চলিত আছে-- যেটুকু সন্দেহ এতে লুকিয়েচরিয়ে থাকে, তার চিরন্তনতা ব্যাপারে সন্ধিগ্ধ বলে অনুমান শব্দটাকে আমরা ঢের আমল দিয়েছি কালে কালে-- শিল্পের এহেন ঘোর, রতিকল্পধারা, বেয়ে বেয়ে, আগুয়ান হতে হতে আনকোরা একেকটা ইমেজারি গড়ে তুলে পাশে দাঁড়িয়ে মৃদু হাস্যলাস্য করি, আমরা, মনে মনে

যতসব ফণিমনসা কাঁটা, শরীরে বিঁধতে থাকে বনব্যর্থপুরে-- কতদূর চলে গেছে সাফল্যচরণ দাশের হরিদ্রাভ বাড়িটির পথ, যেখানে শীতের সকাল রৌদ্র পোহাতে আসে খেজুরের গুড় মুড়ি নিয়ে-- তুমি ও হৃদয়ধারীর সাথে হেঁটে হেঁটে খুঁজে দেখতে হবে

তবু যদি ব্যর্থতা সঙ্গ নাহি ছাড়ে, ওয়েস্টপ্লাজার ঘাসে একদিন একা বসে কেঁদেকেটে আসা যেতে পারে, তবে কিছু নাগরিক গ্লানি ভোলা যাবে-- নগরের সবচে' সত্য তো হলো ডাস্টবিন, এরকম বিন দেগে দেগে স্থাপনা কল্পিত হয় নগরভুবনে, বয়সের আন্দাজ করি তাই সভ্যতার দৈর্ঘ্যপ্রস্থ মেপে-- আমি আর পাড়াতুতো রুচিরা স্বজন

সময়ে যদি ডাস্টবিনে চলে যাই, মনে করো আমি সভ্যতা নই, সমান্তরালে বেড়ে ওঠা তার উপজাত শুধু, মানে বাই-প্রোডাক্ট, পেছন পথে আসা, তুমি তাই-ই ঠাহর করেছ


মন্তব্য

শেখ জলিল এর ছবি

সুপার প্রডাক্ট-এর সাথে বাইপ্রডাক্ট-এর মূল্যও অনেক। রিসাইকেল করে নিলেই হয়।
....মনে হয় লেখাটা মাথার উপর দিয়ে গেলো!?

যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!

অতিথি লেখক এর ছবি

জটিল জীবনচিত্র।
-- ফকির ইলিয়াস

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।