বৃষ্টিভেজা গদ্যকলাপ ৭ : ড্রিজলিং অ্যান্ড প্রেসিপিটেশন

মুজিব মেহদী এর ছবি
লিখেছেন মুজিব মেহদী (তারিখ: শনি, ০৭/০৬/২০০৮ - ৯:৫৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বোর্ডিং পাস সংগ্রহ করে লাগেজ লিভিং শেষে ডিজঅ্যাম্বারকেশনের জন্য ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের মোবাইল সিঁড়ির দিকে এগিয়ে যাবার পথে, প্যাসেজে, সহসাই দু'টো সদাহাস্য একা চোখের সাথে দেখা হয়ে যায়, যে দু'টো লাগাতার কথা বলেই চলেছে মনে হলো। জানতে চাই, হোয়্যার আর ইউ ফ্রম ? 'বাংলাদেশ।' আর ইউ এলোন ? 'নো, আই এম উইথ মাই ড্যাড অ্যান্ড মম।' ও, আই সি। হোয়্যার আর দে নাও ? 'ড্যাড ইজ এট বোর্ডিং পাস কালেক্টিং লাইন অ্যান্ড মম ইজ এট মানি এক্সচেঞ্জ সেন্টার।' ওকে, নাইস টু মিট ইউ। 'ইটস মাই প্লিজার।' থ্যাঙ্কস। 'উই আর গয়িং টু এরাইভ ইন দ্য সেইম ফাইট, সো, সি ইউ এগেইন।' ইট উইল বি ফাইন।

কাউন্টার থেকে ছাড় পেতে পেতে লাইনে থাকতেই দোতলায় আবার দেখা। অসাধারণ এক হাসিতে অভ্যর্থনা জানাল সে। ওয়েটিং রুমে বৃষ্টিদেবতা আমাদের পাশাপাশি বসবার বন্দোবস্ত করে দিলেন। 'জানেন না তো, আমরা যেতে চেয়েছিলাম হিমালয়ে, কিন্তু শেষপর্যন্ত পোখরা থেকেই ফিরতে হয়েছে। এত বৃষ্টি বাপের জন্মে দেখি নি। সবাই খুব নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিল, তাই হেলিকপ্টার ওড়ে নি। অতৃপ্ত হয়ে ফিরছি।' আমিও কম যাই না। বলি, আমার অতৃপ্তি বিস্তৃত হয়ে আছে রামগিরি থেকে অলকা অবধি। রামায়ণের কিষ্কিন্ধাকাণ্ড, কালিদাসের মহাভারত, জয়দেবের গীতগোবিন্দ, বৈষ্ণব কবিতার একটা বড়ো অংশ কিংবা রবীন্দ্রনাথের অজস্রাজস্র কবিতা হাতড়েও তুমি এত হাহাকার পাবে না। যেমনটি বুকে নিয়ে আমি ফিরছি। এমনকি আমার বৃষ্টিও হয় নি দেখা। এ দেশের রাজতন্ত্র ফুরাল, কিন্তু বিরহভাব, কই ফুরায় নি মানুষের। রাজাহীন রাজকীয় হোটেলের ছাদের নিচের দ্বিদিবসিক উন্নয়ন সেমিনারের হাহাকারই ছিল মূল স্তোত্র। এরকম বাজে ভ্রমণ আর হয় না জানেন। সম্পূর্ণ বাজে অবশ্য বলা যাবে না এখন, আপনার সাথে দেখা হবার পরে। 'আমাকে তুমি বলুন, প্লিজ! মাত্র ইন্টারমিডিয়েট দিয়েছি।' ও-কে, মনে হচ্ছে যেন কাঞ্চনজঙ্ঘায় ঠেস লেগে গুঁড়িয়ে যাওয়া মেঘের থেকে আসা বৃষ্টিদলের ছোঁয়াটা এই এখন মাত্র বাগে পাচ্ছি তোমার মারফতে। এই যে এখন বন্দর জুড়ে ড্রিজলিং হচ্ছে, ধারণা করি সেটাও ওই তোমারই কল্যাণে। নইলে কাঠমান্ডুতে চারদিনেও বৃষ্টি দেখব না ময়ুরের মৈথুনঋতুতে, এটা কেমন করে হয়! দেখ, তোমার সম্মানে নামা ড্রিজলিং থাই এয়ারওয়েজের সদ্য ল্যান্ড করা বিমানটির আজদাহা শরীরে আদুরে পরশ বুলিয়ে দিচ্ছে। 'জানেন, ওই যে বন্দরের চারপাশের পাহাড়গুলো, এই মিষ্টি ড্রিজলিংয়ের ভিতর কেউ একজনের হাত ধরে ওইদিকে হাঁটা দেয়া গেলে দারুণ হতো।' সে তো বটেই, আমার দিক থেকেও দারুণ হতো না কি! গিয়ে হয়ত দেখতাম ঘাসের ওপরে রক্তবর্ণ সব মখমল পোকার উৎসব। কিন্তু সে তবু হবার নয়! বরং চলো ঢাকাতেই কোনো ঘোল খুঁজে নেব খন, এহেন দুধের বদলে। স্প্রাইটের জামা পরা ভ্যালেন্টাইনস স্কচ গলায় ঢেলে মনে মনে ঢাকার ঘোলঘরগুলোই তখন ভাবতে থাকি কেবল। যেন হয়ে উঠি বর্ষার দূত, চাতকপাখি, যার এটা প্রজননঋতু।

বৃষ্টিভেজা গদ্যকলাপ ৬ : আইতান কাইতান


মন্তব্য

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

এ পর্ব একটু অন্যরকম হয়েছে।

মুজিব মেহদী এর ছবি

হয়ত তাই।
সিরিজটা বৃষ্টি বিষয়ক বিচ্ছিন্ন কিছু অভিজ্ঞতার একটা মালা, একই অভিজ্ঞতার প্রলম্বন নয়। তাই এটাকে একটু অন্যরকম লাগল হয়ত। অবশ্য এ পর্বটির সাথে ঠিক এর পরের পর্বটির যোগ হবে ঘনিষ্ঠ।
................................................................
আমার সমস্ত কৃতকর্মের জন্য দায়ী আমি বটে
তবে সহযোগিতায় ছিল মেঘ : আলতাফ হোসেন

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

শাহীন হাসান এর ছবি

খুব তড়িত্ শেষ হয়ে গেল, চাচ্ছিলাম আর একটু ....
....................................
বোধহয় কারও জন্ম হয় না, জন্ম হয় মৃত্যুর !

....................................
বোধহয় কারও জন্ম হয় না, জন্ম হয় মৃত্যুর !

মুজিব মেহদী এর ছবি

এত ব্যস্ততার মধ্যে সবার ব্লগিং করতে হয় যে, ভয় লাগে লেখাটা দীর্ঘ হয়ে গেল কি না। এ সংক্রান্ত আরো কিছু কথাবার্তা হবে পরের পর্বে। ওতে হয়ত গ্রন্থিমোচন ঘটবে।
................................................................
আমার সমস্ত কৃতকর্মের জন্য দায়ী আমি বটে
তবে সহযোগিতায় ছিল মেঘ : আলতাফ হোসেন

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

অপূর্ব  সোহাগ এর ছবি

কেন জানি সাধ মিটিলো না

মুজিব মেহদী এর ছবি

আপনার প্রত্যাশা হয়ত অনেক ব্যাপ্ত ছিল। প্রত্যাশা অধিক হলে প্রাপ্তিকে প্রায়শ অপর্যাপ্ত বোধ হয়।

অবশ্য আরেকটু আছে, আসছে...
................................................................
আমার সমস্ত কৃতকর্মের জন্য দায়ী আমি বটে
তবে সহযোগিতায় ছিল মেঘ : আলতাফ হোসেন

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

পরবাসে দৈবের বশে যদি এই হয়, তাহলে আপনার ঐ স্প্রাইটমোড়া স্কচের তুলনায় আমারে বৃষ্টি তো পলিথিনে মোড়ানো বাংলা মদ! কী করা যাইবেক, আমরাও দাড়ি রাখুম।
................................................................................
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে, হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

মুজিব মেহদী এর ছবি

দাড়ি রাখলে সুবিধা কী, বুঝলাম না যে!
................................................................
আমার সমস্ত কৃতকর্মের জন্য দায়ী আমি বটে
তবে সহযোগিতায় ছিল মেঘ : আলতাফ হোসেন

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

তারেক এর ছবি

ভালো লাগছে পড়তে... চলুক হাসি
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

মুজিব মেহদী এর ছবি

এরকম বললে সাহস পাওয়া যায়।
................................................................
আমার সমস্ত কৃতকর্মের জন্য দায়ী আমি বটে
তবে সহযোগিতায় ছিল মেঘ : আলতাফ হোসেন

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।