দেখা হইলো চক্ষু মেলিয়া-১

নীলম এর ছবি
লিখেছেন নীলম [অতিথি] (তারিখ: শনি, ২৬/০১/২০১৩ - ৪:৪১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার পর থেকে লম্বা লম্বা টার্ম ফাইনালগুলো একটাই আশায় বুক বেঁধে শেষ করি। পরীক্ষা শেষ হলেই ঘুরতে যাবো! শেষ পরীক্ষা এগিয়ে আসতে থাকে আর চলতে থাকে ভ্রমণের প্ল্যানিং, সাথে সাথে বাড়তে থাকে উত্তেজনা। এর ফলে শেষ পরীক্ষার আগের দিনটা আমার এখনও স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগের দিনের মত ছটফট করেই কাটে। এবছর একটা সেমিস্টার শেষ করতে হল দশ মাসে, অস্থিরতা এমন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকলো যে পরীক্ষা শুরুর আগেই ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যানটা শুরু করে দিলাম।

ঠিক হল টাঙ্গুয়ার হাওড় দেখতে যাওয়া হবে এই শীতে। সেই সাথে শীতের পাখি দেখাটাও হয়ে যাবে। শুরু হলো বাকিসব সিদ্ধান্ত নেয়ার পালা। এ পর্যন্ত সর্বনিম্ন চার সদস্যের দল থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ সত্তর সদস্যের দলের সাথেও ঘুরেছি আমরা। চারজন স্থায়ী সদস্য তাই জুটে গেলাম কোন ঝামেলা ছাড়াই। তবে কিছুদিন আগেও যেখানে চারজন মিলে ঘুরে বেড়ানো কোন ব্যাপারই ছিল না সেখানে আজকাল চারপাশের পরিস্থিতি দেখে নৌকা নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর জন্য চারজন মেয়ের সংখ্যাটা বেশ ছোট মনে হল। শুরু হল সদস্য সংগ্রহ অভিযান। শেষ পর্যন্ত পরীক্ষা শেষ হওয়ার এক সপ্তাহ আগে গিয়ে দশজন মেয়ের বেশ বড়সড় একটা দলের জন্য ট্রেনের টিকেট কেটে নিয়ে ফিরলাম।

সিলেট যখন যাচ্ছিই চল এটা দেখি, ওটা দেখি করতে করতে ঘোরাঘুরির লাইন আপটা হয়ে গেলো এরকম ঢাকা-শ্রীমঙ্গল-লাউয়াছড়া-মাধবপুর লেক-সিলেট-জাফলং-লালাখাল-শাবিপ্রবি-সুনামগঞ্জ-টাঙ্গুয়ার হাওড়-ঢাকা! একটু লম্বা হয়ে গেলো, কিন্তু কি আর করা? দশ মাসের টার্ম শেষ হচ্ছে একটু বিশাল ট্যুর না দিলে হয় নাকি? তবে এর মাঝে প্রবল শৈত্যপ্রবাহ যেভাবে পুরো দেশকে কাঁপিয়ে দিয়ে গেল তাতে আমাদের পরিকল্পনারও কিছু কিছু দিক কেঁপে যেতে থাকলো। সুনামগঞ্জের হোটেলে কি এতোজনের কম্বলের ব্যবস্থা থাকবে? শ্রীমঙ্গলের রেস্টহাউসে কি গরম পানি পাওয়া যাবে? ভোর ছয়টা চল্লিশের ট্রেন কি সবাই ধরতে পারবে? এসব প্রশ্নের আনাগোনা চলতেই থাকলো।

অবশেষে ১৬ জানুয়ারী ভোর সাড়ে ছয়টায় আমাদের নয়জনকে নয়টি ব্যাগ, একটি বারবিকিউ চুলা আর একটি ট্রাইপডসহ কমলাপুর স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে পাওয়া গেল। সব ট্যুরেই শেষ পর্যন্ত কাউকে না কাউকে ফেলে আসতে হয়, তাই এবারো অসুস্থতার কারণে একজনকে ছেড়েই আমরা চেপে বসলাম পারাবত এক্সপ্রেসে। গন্তব্য শ্রীমঙ্গল। থাকবো পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের রেস্টহাউসে। তখনো জানি না এই অপরিচিত রেস্টহাউসের রান্নাঘরেই আজ রাতে আমাদের মধ্যে কয়েকজনের রান্নায় হাতেখড়ি হতে যাচ্ছে! সেই গল্পে আসছি একটু পরে।

রেস্টহাউসে পৌঁছে একটু ফ্রেশ হয়ে নিয়েই রওনা হলাম বাজারের উদ্দেশ্যে। বারবিকিউ করার জন্য মুরগী এবং আরো কিছু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে হবে। রেস্টহাউসের কেয়ারটেকার জানালেন শ্রীমঙ্গলে টক দই পাওয়া যাবে না। এটা কিনতে অবশ্যই মৌলভীবাজার যেতে হবে। আমরা সিদ্দিকা কবীরের বই থেকে উপকরণ মুখস্ত করে আসা পাবলিক আমাদের টক দই চাই-ই চাই। প্রথমেই টক দই অভিযান। বেশ কয়েকটি দোকানের পরে শ্রীমঙ্গলের মুখ উজ্জ্বল করে অবশেষে এক মিষ্টির দোকানী জানালেন তারা টক দই বিক্রি করেন, তবে এক কেজির কমে না। অগত্যা তাই নিলাম। এরপরে আর কোন উপকরণে তেমন কোন ঝামেলা হয়নি।

বাজার শেষে দুপুরের খাবারের পালা। গিয়ে ঢুকলাম কুটুমবাড়ি নামক এক রেঁস্তোরায় যার স্থাপত্যশৈলী ছিল বড়ই মনোমুগ্ধকর। তবে লক্ষ্য করলাম যারা বসে আছেন তাদের কারো সামনেই খাবার নেই, আমরা ভেবে নিলাম সবাই বুঝি একসাথেই ঢুকেছি। আসল ঘটনা আবিষ্কৃত হল নিজেরা খাবার অর্ডার করার পরে। লোকবলের অভাবে খাবার পরিবেশিত হল প্রায় ত্রিশ-চল্লিশ মিনিট পরে। পরে অবশ্য বুঝেছি এসব এলাকায় খাবার একটু দেরীতেই পাওয়া যায়। যেহেতু ঢাকার রেস্টুরেন্টগুলোর মত এগুলো সবসময়ই লোকে লোকারণ্য থাকে না তাই সবকিছু সাথে সাথেই পাওয়া যায় না। প্রিপারেশনে এখানে কিছুটা সময় লাগে। খাবারের মান ভালো ছিল। তবে শ্রীমঙ্গলে গিয়ে আপনি কুটুমবাড়িতে না খেয়ে ফিরে এলেও খুব একটা ক্ষতি হবে না।

খাওয়া-দাওয়া শেষে রওনা হলাম চাবাগানের উদ্দেশ্যে। রাস্তায় ধূলো ছুটিয়ে এগিয়ে চলছিল আমাদের পিক-আপ। রাস্তার দুপাশে শ্রমিকদের ঘরবাড়ি। বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনষ্টিটিউট দেখে আমরা ঢুকে গেলাম ফিনলে’র চা বাগানে। সবুজ গালিচা বিছানো চা বাগান। যদিও শীতকালে সেই বিস্ময়কর সবুজের দেখা পাওয়া গেল না। তবুও যা ছিল তাই ঢাকাবাসী আমাদের চোখ জুড়ানোর জন্য যথেষ্ট ছিল।

কিছুক্ষণ ফটোসেশন চললো। তারপরে কেউ কেউ হারিয়ে গেল সবুজে। দুইজন বাচ্চা ছেলেকে ঘুড়ি উড়াতে দেখে আমি আর আরেক বান্ধবী গেলাম তাদের কাছে ঘুড়ি উড়ানো শিখতে। আমাদের চেহারায় চোর চোর ভাব ছিল কিনা কে জানে, আমাদেরকে দেখেই একজন তার যাবতীয় সম্পত্তি নিয়ে দে ছুট! অন্যজন অবশ্য বেশ তার তুলনায় বেশ ধৈর্য্যের পরিচয় দিল।

তারপরে একটি লাফাঙ্গা ফটোসেশন শেষে রওনা হলাম সাত লেয়ারের চা দেখতে (পান করা আর হয়নি)! গাড়িতেই আমাদের ড্রাইভার চাচা সাত লেয়ার তৈরীর রহস্য উদঘাটন করে দিলেন এবং জানিয়ে দিলেন এটা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক। আমাদের মোটেও এটা খাওয়া উচিৎ হবে না। বাড়িতে ফিরে অবশ্য এখনো এক্সপেরিমেন্টটা করা হয়ে ওঠেনি। তাই ড্রাইভার চাচার বর্ণিত রহস্যের সত্যতা এখনো প্রশ্নবিদ্ধ আছে।

আমরা সবাই সাধারণ চা-ই নিলাম এবং এক কাপ সাত লেয়ারের চা নেয়া হলো চেখে দেখার জন্য। চেখে দেখার অভিজ্ঞতা আমাদের জন্য তেমন একটা সুখকর ছিল না। আপনাদের ভিন্ন কোন অভিজ্ঞতা থাকলে জানাবেন। চা খেয়ে ফেরার পথে গেলাম মণিপুরী পাড়ায়। তাদের তৈরী শিল্পকর্ম দেখে আমরা যারপরনাই মুগ্ধ। প্রায় সবকিছুই পছন্দ হয়ে যাচ্ছিলো। সবাই কিছু না কিছু কেনাকাটা করে ফিরে এলাম রেস্ট হাউসে।

রাত আটটার দিকে মেরিনেট করে রাখা মুরগীগুলো নিয়ে বেরিয়ে এলাম রেস্টহাউসের বাইরে। উদ্দেশ্য বারবিকিউ করা। তবে নয়জনের মধ্যে কারোরই এর আগে এই কাজ করার অভিজ্ঞতা নেই। সবাই দর্শক হিসেবে বিভিন্ন বারবিকিউ পার্টিতে উপস্থিত থেকেছে। তবে উৎসাহে কারোরই কমতি ছিল না। এর ফলাফল হিসেবে দু’ঘন্টা পরে পাঁচ টুকরো আধাপোড়া মুরগী পাওয়া গেলো এবং আমাদের কয়লা গেল ফুরিয়ে। এখন কি করা যায়? রেস্টহাউসের রান্নাঘর তন্নতন্ন করে খুঁজে বের করা হল কড়াই-খুন্তি। এরপর মিশন চিকেন ফ্রাই। আমাদের সবার জন্যই রান্না করতে না পারলে খাওয়া হবে না এ ধরণের পরিস্থিতি জীবনে এই প্রথম। যার যা জ্ঞান ছিল সব নিয়ে ঢুকে পড়লাম রান্নাঘরে। এরপরে কি হয়েছিল তা বিস্তারিত না জানানোই ভালো। শুধু এটুকু জানিয়ে রাখি। তিনদফা রান্না করে আমরা সেদিন রাতে খাওয়া সম্পন্ন করতে পেরেছিলাম!

পরদিন সকালে নাস্তা সেরে বেরিয়ে পড়লাম লাউয়াছড়ার উদ্দেশ্যে। ১২৫০ হেক্টর জায়গা নিয়ে গড়ে উঠেছে আমাদের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। অফিসিয়ালি যেখানে রয়েছে প্রায় চল্লিশ প্রজাতির উদ্ভিদ এবং ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ প্রজাতির বন্যপ্রাণী। যেসব প্রানীর মধ্যে শুধু কিছু প্রজাপতি আর বনমোরগ ছাড়া আমাদের এই অন্ধের দল আর কিছুই দেখে নাই। আর কিছু পাখির ডাক শুনেছি মাত্র। খুব ইচ্ছা ছিল উল্লুক আর লজ্জাবতী বানর দেখার। সে ইচ্ছা অপূর্ণই থেকে গেলো। তবে আমরা কিছু না দেখলেও রেললাইনের উপর বাঁদরামি ফটোসেশনের সময় কয়েকজন বিদেশী সাংবাদিক আমাদের দেখে ফেললেন। বন্যপ্রানী ভেবেই কিনা বেশ আগ্রহ নিয়ে আমাদের ট্রেন সাজার ছবি তুললেন।

গাছগাছালী দেখলাম অবশ্য প্রাণভরে। গাইড চাচা আবার আমাদের পরীক্ষাও নিলেন। পাশ করতে পারিনি অবশ্য। মায়ের মুখে শুনেছি তাদের গ্রামের বাড়ির পেছনে বেত বাগান ছিল। আর সেই বেত গাছ আমার চিনে আসতে হল লাউয়াছড়ার জাতীয় উদ্যানে গিয়ে।

যাই হোক, বনের ভেতর দিয়েই চলে গেলাম খাসিয়া পল্লীতে। সেখানে চলছিল পান বাছাই এবং ধোয়ার কাজ। বাচ্চারা স্কুল থেকে ফিরে খেলায় ব্যস্ত। তাদেরকে আর বিরক্ত না করে চলে এলাম।

লাউয়াছড়া থেকে বেরিয়ে রওনা হলাম মাধবপুর লেকের উদ্দেশ্যে। গিয়ে দেখলাম সেটা বেশ পিকনিক স্পটের মত করে গড়ে উঠেছে। চারপাশে টিলা আর মাঝখানে বিশাল লেক। বেশ সুন্দর। সিলেটভর্তি এবার দেখলাম শাপলা ফুল। শীতকালেও এতো শাপলা ফুল দেখবো ভাবিনি। ভ্রমণের প্রথম শাপলা ফুল দেখলাম এই মাধবপুর লেকেই।

তবে আমরা অসচেতন বাঙ্গালীরা সব জায়গায়ই যা করে থাকি আরকি। চিপসের প্যাকেট, সিগারেটের প্যাকেটে লেকের অবস্থা শোচনীয়। যদিও কিছুদূর পরপরই ডাস্টবিনের ব্যবস্থা আছে। আমরা লেকের পাশ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে উঠে গেলাম একটা টিলায়। উপর থেকে লেকের দৃশ্য অতিশয় মনোরম।

লেক দেখা শেষে আবার ফিরে এলাম শ্রীমঙ্গলে। আজকে দুপুরের খাবার খেতে ঢুকলাম নূর ফুডসে। তারা জানালেন তারা আমাদেরকে ভালো হাওড়ের মাছ খাওয়াতে পারবেন। আজকেও খাবারের জন্য অপেক্ষা। তবে এদিন অপেক্ষা করে যা পেলাম তা ছিল সম্পূর্ণ আশাতীত। এতো সুস্বাদু মাছ আজ পর্যন্ত আমরা অন্তত কোন হোটেলে খাইনি। কৈ মাছ, টেংরা মাছ আর রুই মাছের সেই অপূর্ব স্বাদের কথা এখনো ভুলিনি। এবং আপ্যায়নে তাদের আন্তরিকতাও ছিল প্রশংসনীয়। তাই আমাদের সাজেশন থাকবে শ্রীমঙ্গলে গেলে অবশ্যই একবার নূর ফুডসের মাছ খেয়ে আসবেন।

খেয়ে এসে ব্যাগ গুছিয়েই পিক-আপে চড়ে বসলাম। এবার সিলেটের পথে। এভাবেই কেটে গেলো আমাদের প্রথম দু’টি দিন। ঘোরাঘুরি, খাওয়া-দাওয়া, ছবি তোলার সাথে চলছে গল্পগুজব, হৈ-হুল্লোড়, হাসি-ঠাট্টা। বাকি দিনগুলোর গল্প-ছবি নিয়ে লিখবো আরেকদিন।

( * সুনামগঞ্জে গিয়ে দেখা হয়ে গেল আমাদের তারেকাণুর সাথে। তিনি উৎসাহ দিয়ে বললেন নয়জনের মধ্যে অন্তত দু-একজন যেন এই ভ্রমণ নিয়ে কিছু একটা লিখে ফেলি। তাকে ধন্যবাদ। তিনি না বললে হয়তো ঘুরে এসে ভুলে যেতাম, লেখা আর হতো না। আমরা শুধু লাফালাফিতেই পারদর্শী, লেখালেখিতে তেমন একটা নই।
* সব ছবি তুলেছে বান্ধবী সুচেতা সেগুফতা।)


মন্তব্য

তারেক অণু এর ছবি

হাততালি চলুক

লেখা চলুক, চলুক ঘোরাঘুরি

নীলম এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

আপনার লেখাও ফিরে আসুক জলদি!

বেচারাথেরিয়াম এর ছবি

সুচেতার ফেবুতে ছবি দেখেছিলাম। লেখা পড়ে ভাল্লাগ্ল আরো হাততালি

নীলম এর ছবি

হাসি

অনেক ধন্যবাদ লেখা পড়ে মন্তব্য করার জন্য।

বন্দনা এর ছবি

সাত লেয়ারের চা খেতে পারিনি বলে খুব মন খারাপ হয়েছিল। লেখা বেশ লাগলো, পরের পর্ব আসুক।

নীলম এর ছবি

হুমম, এমন দর্শনদারী একটা জিনিস খেতেও ভালো হলে বেশ লাগতো।
লেখা পড়ে মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ! হাসি

সৌরভ কবীর এর ছবি

চলুক চলুক
বেশ কয়েকবার যাবার পরও লাউয়াছড়াতে বারবার যেতে ইচ্ছে করে। উল্লুক, বানরের দেখা পেয়েছি প্রতিবারই। শ্রীমঙ্গলের কাছেই একটা চিড়িয়াখানা আছে। সেখানকার পাখিগুলো দেখে বেশ ভালো লেগেছিলো।

কুটুমবাড়ি আমার পরিচিত স্থপতি রাজন দাশের ডিজাইন করা। আগ্রহ নিয়ে গিয়েছিলাম ওখানে। খাবার দাবার ভালো লাগেনি। পরেরবার গেলে অবশ্যই নূর ফুডসে যাবো।

তারপরে একটি লাফাঙ্গা ফটোসেশন শেষে রওনা হলাম সাত লেয়ারের চা দেখতে (পান করা আর হয়নি)! গাড়িতেই আমাদের ড্রাইভার চাচা সাত লেয়ার তৈরীর রহস্য উদঘাটন করে দিলেন এবং জানিয়ে দিলেন এটা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক। আমাদের মোটেও এটা খাওয়া উচিৎ হবে না

এসম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই। চেখে দেখে এই চা কারো ভালো লেগেছে বলে আমি এখনো শুনিনি।

দেশের মধ্যে এধরনের ভ্রমণগুলি নিয়ে লেখাগুলোতে পর্যটন ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তার সুবিধা-অসুবিধাগুলো সম্পর্কে জানতে পারলে ভালো লাগে।

__________________
জানি নিসর্গ এক নিপুণ জেলে
কখনো গোধূলির হাওয়া, নিস্তরঙ্গ জ্যোৎস্নার ফাঁদ পেতে রাখে

নীলম এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। হাসি

শ্রীমঙ্গল থেকে আসার পরে চিড়িয়াখানাটার কথা শুনেছি। আরো অনেক কিছুই শুনলাম ওটা সম্পর্কে। সে যাকগে, পরেরবার গেলে যাবো হয়তো। বানর আর উল্লুক দেখতেতো আবার যেতেই হবে লাউয়াছড়া। নয়জনের গল্পের কারণেই কিছু দেখতে পারলাম না কিনা কে জানে। তবে বেশ চেষ্টা করেছি চুপচাপ থাকতে।

ড্রাইভার চাচার মতে একেকটা লেয়ারের উপরে মোমের পাতলা একটি আস্তরণ ফেলা হয়। তার উপরে আরেক লেয়ারের চা ঢেলে দেয়া হয়। আগেই বলেছি সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চয়তা দিতে পারছি না।

শ্রীমঙ্গলে অপরিচ্ছন্নতা ছাড়া তেমন কোন অসামঞ্জস্যতা চোখে পড়েনি। এবং আমার মনে হয়েছে এর দায় পুরোটাই দর্শনার্থীদের নিতে হবে। পরের পর্বগুলোতে এসব দিক তুলে ধরতে চেষ্টা করবো। হাসি

ফাহিম হাসান এর ছবি

সীতেশ বাবুর চিড়িয়াখানা তো! ঐ লোক পুরাই ফটকাবাজ। তার নামে পোচিংয়ের শক্ত অভিযোগ আছে এবং তা কিছুটা প্রমাণিতও।

নীলম এর ছবি

হ্যাঁ, হ্যাঁ, এনার কথাই শুনছিলাম তারেক অণু ভাইয়ার কাছে।

সৌরভ কবীর এর ছবি

হতাশাজনক। ফটকাবাজটার নামটাই শুনলাম আজকে মন খারাপ

__________________
জানি নিসর্গ এক নিপুণ জেলে
কখনো গোধূলির হাওয়া, নিস্তরঙ্গ জ্যোৎস্নার ফাঁদ পেতে রাখে

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

বেশ। সিলেট জার্নাল আসুক।

নীলম এর ছবি

পড়ে মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ, ভাইয়া! হাসি

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

ভালো লেগেছে। আরো কয়েকটা ছবি দিতে পারতেন। আর তারেক অনুর সাথে একটা পর্ব যেন থাকে।

নীলম এর ছবি

ধন্যবাদ, পিপিদা! হাসি

পরের পর্বে তাহলে বেশি করে ছবি দিতে চেষ্টা করবো।

অতিথি লেখক এর ছবি

সুখপাঠ্য রচনা। আরেকটু হাত খুলে লিখুন, পরের কিস্তির অপেক্ষায় রইলাম।

…জিপসি

নীলম এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকে! হাসি
পরের পর্বে এ ব্যাপারে খেয়াল রাখবো।

অতিথি লেখক এর ছবি

কর্মসূত্রে ২০০২ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত প্রতিবছর ৩ মাস ফিনলের চা বাগানগুলোতে থাকতে হতো। অথচ কাজের চাপে কোনদিন লাউয়াছড়া বা জাফলং যাওয়া হয়নি। মাধবকুন্ড ঝর্ণাতে গিয়েছিলাম বর্ষার সময়, সে কি রুদ্ররূপ! তবে সব না পাওয়া ভুলিয়ে দিয়েছে পাহাড়ের উপর চা বাগানের বাংলোগুলোতে শীতের পূর্ণিমা রাত কাটানোর অপূর্ব অভিজ্ঞতা। গভীর রাতে ম্যানেজারের গাড়ি করে চা বাগানের ভেতর ছুটে চলা অমাবশ্যার রাত, বাথরুমে গিরগিটির চোখে চোখ রেখে বুক ঢিপঢিপ করা প্রাকৃতিক কর্ম সম্পাদন, এক বাগানের ভেতর দিয়ে আরেক বাগানে যাওয়ার সময় নাম না জানা দীঘি অথবা ছোটখাট হ্রদের হঠাত আবিষ্কার, ম্যানেজার অথবা অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজারের বৌদের সাথে একটু হা হা হি হি, বাংলোর লনে ঘাসের উপর গাছের ছায়ায় কানে হেডফোন গুঁজে হাতেগল্পের বই নিয়ে মেঘ দেখা, লালপানির ঘোরলাগা সন্ধ্যায় ম্যানেজারদের সাথে টোয়েন্টি নাইন অথবা ইন্টারন্যাশনাল ব্রিজ বানানো, টিভি, ইন্টারনেট এমনকি প্রথম দুই বছর মোবাইল বিহীন সেই সময় ছিলো সত্যিকারের নিজের। মন খারাপ

সাত লেয়ারের চা আমারও ভালো লাগেনি, কিন্তু ফ্যাক্টরীর কনভেয়ার বেল্ট থেকে বের হওয়া পৃথিবীর সবচাইতে ফ্রেশ চা খাওয়ার অভিজ্ঞতা অসাধারণ।

শ্রীমঙ্গলের তাঁতের শাল কেনা হয়নি?

আপনার লেখা ভালো লেগেছে। পরের পর্বের অপেক্ষায়।

ফারাসাত

নীলম এর ছবি

আহা! টিভি, ইন্টারনেট, মোবাইল ছাড়া চাবাগানে পূর্ণিমা রাত! শুনেইতো রোমাঞ্চকর অনুভূতি হচ্ছে। হাসি
আচ্ছা, ওখানে অধিকাংশইতো দেখলাম কোম্পানীর চাবাগান তাহলে ওখানকার বাজারে যে কোম্পানীর লেবেল ছাড়া চা টা পাওয়া যাচ্ছে ওটা কোথাকার?

শাল আমার বান্ধবী কিনেছে। আমার কেনা হয়নি।

অনেক ধন্যবাদ আপনাকে পড়ে মন্তব্য করার জন্য। হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

লেবেল ছাড়া চা পাতা গুলো আসলে বিভিন্ন ফ্যাক্টরীর মানোত্তীর্ণ হতে না পারা চা পাতা। সাধারণত কোম্পানীর উৎপন্ন চা রপ্তানী হয়ে যায়; যেগুলো রপ্তানী করা যায়না সেগুলোই স্থানীয় ব্যাবসায়ীরা কিনে নেয়।

ফারাসাত

শাব্দিক এর ছবি

বেশ উমদা লেখা বাঘের বাচ্চা

---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।

নীলম এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

কি যে বলেন! লইজ্জা লাগে

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

বেড়ানোর বা ঘোরাঘুরির পোস্ট পড়তে ও ছবি দেখতে খুব ভাল লাগে। আর বেড়ানোর ইচ্ছেগুলো মনের মধ্যেই থেকে যায়। বাস্তবে রূপ পায় খুব সামান্যই।
লেখা ভাল লেগেছে। বেশি বেশি ছবি চাই। চলুক

নীলম এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। হাসি

পরের পর্বে বেশি ছবি দিতে চেষ্টা করবো।

ব্যাঙের ছাতা এর ছবি

কোথাও যেতে পারিনা, তাই মনের দুঃখে ভ্রমন কাহিনী পড়া বন্ধ করে দিয়েছিলাম। ছবি দেখার লোভে এসে পুরোটাই পড়ে ফেললাম। ধন্যবাদ।
ট্রেনের ছবিটা অনেক স্মৃতি জাগানিয়া। আমাদের ট্রেন হত ছোট থেকে বড় অথবা বড় থেকে ছোট। ৭ জন অসম (মনের দিক থেকে সম) বয়সীদের।

নীলম এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। হাসি

সবার ঘুরতে না পারার দুঃখ দেখে ছাত্রজীবনে ঘোরাঘুরির একটা সুযোগও মিস করছি না। কিছুদিন পরেই হয়তো আপনাদের মত অবস্থা হয়ে যাবে।

মেঘা এর ছবি

গতকাল রাতেই পড়েছিলাম। সবাই এতো ঘুরে বেড়ায় দেখে আমার খুব মন খারাপ হয়। আমি কোথাও যেতে পারি না! আমাকে নিয়ে যাবার কেউ নেই আর একা আমাকে কোথাও যেতে দেয় না বাসা থেকে! তবে সুখের কথা আপু সিলেট গ্যাস ফিল্ডে চাকরী করে। সেই সুবাদে সম্ভাবনা আছে আমার পুরো সিলেটে একাধিক ট্যুর দেবার দেঁতো হাসি গতবার রোজার ঈদের পর গিয়েছিলাম ঘুরেওছিলাম বেশ তবে ভাল ক্যামেরা না থাকায় ছবি তোলা হয় নি খাইছে

ভ্রমণ কাহিনী পড়লে আমার আত্মা জ্বলে তবে সিলেট বলেই মনে হয় একটুও জ্বলে গেলো না খাইছে । লেখা ভাল হয়েছে। আরো বেশি বেশি ছবি চাই। শুভকামনা।

--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি

নীলম এর ছবি

ধন্যবাদ, আপু! হাসি

এদিক দিয়ে বেশ সুবিধায় আছি আমি। বাবা একটু চিন্তা করলেও মাকে ম্যানেজ করে সারা বাংলাদেশ ঘুরে বেড়াচ্ছি। অবশ্য বাবা-মা ঢাকায় থাকলে এতো সাহস পেত না আমি নিশ্চিত। আর আমিও ঢাকার বাইরে বড় হওয়ায় একটানা বেশিদিন ঢাকায় থাকতে পারি না।

যাই হোক, আপনারতো মজাই হয়েছে এখন। পুরো সিলেট চষে বেড়াবেন দুই বোন। দেঁতো হাসি

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

চলুক হাততালি
পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম। আমার সিলেট যাওয়া হয়নি। এবার দেশে ফিরে দেখি সারাদেশ ঘুরার একটা প্ল্যান নিতে হবে। সময়ের কাজ সময়ে করাই ভাল। চিন্তিত

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

নীলম এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

এবার অবশ্যই সিলেট ঘুরে আসবেন। খুব ভালো লাগবে। আমি অবশ্য অল্পতেই মুগ্ধ হয়ে যাই। বাংলাদেশ আমাকে কখনো হতাশ করেনি। তবে এটুকু বলতে পারি টাঙ্গুয়ার হাওড়ে ঘোরার অনুভূতি হবে অসাধারণ। হাসি

রিপন মজুমদার এর ছবি

শ্রীমঙ্গলের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়ার আগে এই পিডিএফটি প্রিন্ট করে নিতে ভুলবেন না যেন।

নীলম এর ছবি

বাহ! বেশ সুন্দর ট্রাভেল গাইডতো। বাংলাদেশের অন্য জায়গাগুলোর কি এমন পাওয়া যাবে?
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে লিঙ্কের জন্য! হাসি

অমি_বন্যা এর ছবি

ঘোরাঘুরির বর্ণনা দারুণ লাগলো। চলুক

নীলম এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ। হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাল লেখা। আরও ভালো হবে আশা করি।

>> সুরথ সরকার।

নীলম এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

অতিথি লেখক এর ছবি

‌ভ্রমনে ছবি কম হলে ভ্রমন কাহিনী পড়ে মন জুড়ায় না। শেষের দুটো ছবি দারুন হয়েছে মধুপুর লেকের। চলুক

মাসুদ সজীব

নীলম এর ছবি

প্রথম ভ্রমণকাহিনী লেখাতো বুঝতে পারিনি অতটা। আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।