শৈশবটাকে ফিরিয়ে দাও

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শুক্র, ১৯/০৮/২০১১ - ৩:০৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

পড়ার বইগুলো কেবল পড়া হয়, মাথায় ঢুকানো হয়না। জটিল জটিল শব্দ আর বিষয়গুলা মাথার উপর দিয়ে উড়াল দিতে থাকে কিন্তু নিউরন নামের জিনিসটাতে আটকাতে পারিনা। খালি কি আমিই এমন? নাকি আমার মত সবাই এমন ভুক্তভোগী!

ছোটবেলায় থেকেই ছিলাম মোটামোটি চলে এমন ছাত্রী। খুব বেশি ভালও না, খুব বেশি খারাপও না। বাবা মা কখনো পড়াশুনা নিয়ে বেশি হম্বিতম্বি করেন নাই,তাই যা হবার তাই হয়েছে, বেশি পড়াশুনার ধার ধারতাম না কখনো। আমার বন্ধুরা যখন পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা মুখস্থ করে যেত, আমি বসে থাকতাম গল্পের বইগুলা নিয়ে । এটা সেটা ওটা এমন হাজারের উপর বই নিয়ে আমার কারবার ছিল। বই পড়তে ভালবাসতাম, আমার তাই ছিল বইয়ের সাথে সখ্য।

এখন চিন্তা করি, আসলে কি খুব ভুল কাজ করেছি? মনে হয় না। জানাটাই আসল, সেটা পাঠ্য বই থেকে হোক আর যেখান থেকেই হোক। জানার পরিধি তাতে বেড়েই যায় , কখনো কমে পড়ে না।

আফসোস, আমাদের দেশের অধিকাংশ অভিভাবক এমনটা ভাবেন না । সেদিন আমার এক ছোট ভাইয়ের কাহিনি দেখলাম, পিচ্চিটা সবে মাত্র ক্লাস টু তে পড়ে। সকাল থেকে বিকাল হয়ে রাত পর্যন্ত এই পিচ্চিটার দম ফেলার ফুরসৎ নাই। ৬-৭ ঘণ্টার স্কুল করে এসে খেয়ে শেষ করতে পারেনা, তারপরই পড়তে বসে যাও। আজকালকার ছেলেমেয়েদের বেত দিয়ে মারা হয়না ঠিক, কিন্তু মনের দিক থেকে এই পিচ্চিগুলাকে এত বেশি ছোট করে রাখা হয় , ভবিষ্যৎ জীবনে গিয়ে এরা যে কিছু নিজে থেকে করতে পারবে, আমার তাতে সন্দেহ হচ্ছে।

অথচ আমি এই ছোট্ট বাবুটাকে জানি, ও ফড়িং দেখতে ভালবাসে, প্রজাপতির পিছনে ছুটতে ভালবাসে। আমার সাথে অনেক ঘুড়ি উড়াতো, আমার আর ওর খুব পছন্দের খেলা এটা। আমার ডাইরির পাতায় ইচ্ছামতো আঁকিবুঁকি করত, পাতা ছিঁড়ে একাকার করত। গত দুইটা বছর ধরে আমি ওর এই কাজগুলো খুব মিস করি। আমার ছোট্ট আদরের বাবুটা আর আগের মত নাই। ও খেলা করেনা, মনের আনন্দে ঘুরে বেড়ায় না, পাতা ছিঁড়ে না, কিচ্ছু না।

বাবা মাদের বলি, কি হবে এতোটা পড়াশুনা করে! নাহয় কতগুলা এ+ এর সংখ্যা বাড়বে ওর রিপোর্ট কার্ডে, নাহয় কতগুলা বড় বড় ডিগ্রি নিয়ে একদিন সত্যি বড় মানুষ হয়ে যাবে। কিন্তু আপনারা নিজেরা যে শৈশবটা পেয়েছেন, ওদেরকে বঞ্চিত করছেন কেন?

শিশুরা ফুলের মত, ওদের শৈশবটাও যেন ফুলের বাগানের মত হয়।

- আফরিনা হোসেন রিমু


মন্তব্য

ফাহিম হাসান এর ছবি

মুখস্থ বিদ্যাকে না বলুন

মিলু এর ছবি

অনেক সময়ই দেখা যায় বড়রা ভুলে যান তাদের ছোটবেলার অনুভুতিগুলোর কথা।

তুলিরেখা এর ছবি

আমাদের দেশগুলোতে এক অদ্ভুত শিশুশিক্ষার ব্যবস্থা, জড়ভরত করতে জুড়ি নেই।
আরে বাচ্চারা খেলতে খেলতে শিখবে, নিজেরা তারা কত সৃজনশীল, কত কিছু করতে করতে শিখতে পারে। তা না, গাদা গাদা কৃত্রিমভাষায় লেখা বইয়ের বাক্য মুখস্থ করিয়ে করিয়ে তাদের রোবট বানানো হয়। কোথাও কোথাও তো কোনো যোগই নেই তাদের জীবনের সাথে এমন সব জিনিস প্রাণপণে গেলানো হয়। এর মধ্য থেকেও যে কিছু কিছু ছেলেমেয়ে তাদের মৌলিকতা বজায় রেখে পরবর্তীকালে কিছু করতে পারে, সেটাই তো আমাদের মহাসৌভাগ্য।
কী বিরক্ত লাগে, এই সিস্টেম বদলাবার কোনো উদ্যোগই নেই!
এক নামীদামী ইস্কুলের এক ক্লাস থ্রীর বাচ্চার শুনলাম বইখাতা মিলিয়ে নব্বইটা, তাও আবার সেই স্কুল থেকেই নাকি কিনতে হয়েছে! এ কী বিষ ব্যবসা শুরু হয়েছে ? এ তো জরুরী ভিত্তিতে দেখা উচিত আর পাল্টানোর চেষ্টা করা উচিত!

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

মৌনকুহর এর ছবি

এক নামীদামী ইস্কুলের এক ক্লাস থ্রীর বাচ্চার শুনলাম বইখাতা মিলিয়ে নব্বইটা

অ্যাঁ

-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
ফেসবুক -.-.-.-.-.- ব্যক্তিগত ব্লগ

আফরিনা হোসেন রিমু এর ছবি

আসলেই হতাশাজনক। পড়াশুনা আনন্দ নিয়ে করা উচিত, চাপিয়ে দিলে সেটা শুধু মগজেই ঢুকবে , মনে প্রভাব ফেলবে না। সবাই এমন করে আমার আর আপনার মত ভাবেনা। কে জানে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আমরা কি তৈরি করে যাচ্ছি।

pocha pathok এর ছবি

মন খারাপ

নিটোল ( অতিথি) এর ছবি

সব জায়গায় চিত্র একই। খুব হতাশ লাগে। কারণ ভুক্তভোগী তো আমি নিজেও!

মৌনকুহর এর ছবি

শিশুরা ফুলের মত, ওদের শৈশবটাও যেন ফুলের বাগানের মত হয়

চলুক চলুক

-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
ফেসবুক -.-.-.-.-.- ব্যক্তিগত ব্লগ

আনোয়ারুল কবির খান এর ছবি

আপনার লেখার সাথে সম্পূর্ণ একমত। আমার ছেলেকে বেশি বিদ্বান বানাতে চাই না। বেশি বিদ্বানরা ভালমন্দ বুঝতে শিখে যায়। তাই তারা মন্দ বাংলাকে ছেড়ে ভালো মার্কিন মুলুকে পাড়ি জমায়, ফিরে না আসার আশা নিয়ে। সবাই ত আর জাফর ইকবালের মতো হয় না। গাছের পাতা, ঘুড়ি আর প্রজাপতি মাটির সাথে নাড়ির টান বাড়ায় বৈ কমায় না।

আফরিনা হোসেন রিমু এর ছবি

ভাল বলেছেন। সুশিক্ষিত জাতি থেকে স্বশিক্ষিত জাতি বেশি প্রয়োজন আমাদের। বড় বড় মানুষগুলো নিজেই জেনেছেন, প্রকৃতি থেকেই।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।