সবাই তো আর একরকম হয় না......

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শনি, ২০/০৮/২০১১ - ৯:৩১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ছুটির দিনে নীল আর সবুজ সারাটা দিন একসাথেই কাটায়। সমস্যা হয় স্কুল থাকলে। নার্সারির ক্লাস কতক্ষণই বা হয়! বড়জোর দুই কি তিন ঘণ্টা। এই সময়টাতে সবুজ একলা হয়ে পড়ে। তার তখন কিছুই ভালো লাগে না, শুধু বাইরে যেতে ইচ্ছে করে। ইচ্ছে করে লাটাই হাতে ছুটে ছুটে ঘুড়ি ওড়াতে। ঝুপ করে পুকুরে পড়ে ডুব সাঁতার কেটে সামনে গিয়ে কাউকে চমকে দিতে মন চায়। কিন্তু এখানে কি আর সেসব আছে! আর নীল তো এসব পারেও না। দুজনে তাই ঘরের মধ্যেই ক্রিকেট আর ফুটবল নিয়ে ব্যস্ত থাকে। ব্যাডমিন্টনের র‍্যাকেট নিয়েও খেলার চেষ্টা করে দুজনে। কিন্তু বাড়িওয়ালা আবার কড়া লোক, বেশি হুটোপাটা পছন্দ করেন না। নীল-সবুজের খেলাও তাই এগোয় না বেশিদূর।

নার্সারিতে পড়লে কী হবে! পড়ার যেই চাপ! সন্ধ্যাবেলায় নীল যখন পড়া নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে তখন সবুজের সময় কাটে নীলের খেলার ঘরে-- খেলা কোরে না, খেলনা গুছিয়ে। নীল মাঝে মাঝে অবাক হয়ে মায়ের কাছে জানতে চায়,
“আম্মু, সবুজ বড় না আমি বড়?”
“তুমি আর ও একই বয়সী।“
“তাহলে ও স্কুলে যায় না কেন?”
“ও তো ‘ক-খ’, ‘ABC’ কিছু পড়তে-লিখতে পারে না। স্কুলে যাবে কী করে?”
“আমি যখন কিছু পারতাম না, তখনও তো স্কুলে যেতাম।”
মা এবার উত্তর খুঁজে পান না, বলেন আজেবাজে কথা না বলে পড়ায় মন দিতে। নীলও আর কথা বাড়ায় না। কিন্তু ওর মাথায় ঘুরপাক খায় অনেক অনেক প্রশ্ন......
“আমাকে ‘তুমি’ করে বলো, সবুজকে ‘তুই’ করে বল কেন তোমরা?”
“আমাকে সন্ধ্যাবেলা খেলতে দিতে চাও না, পড়তে বসাও। কিন্তু ওকে তখন পড়তে বল না কেন?”
“ও আর আমি নাকি সমান সমান। তারপরেও ও আমাকে ‘ভাইয়া’ ডাকে কেন?”
“আমাকে তুমি নিজের হাতে খাইয়ে দাও, ও তো নিজে নিজে খায়। ও কে খাইয়ে দাও না কেন?”
“আমার সব জামা ওকে দিয়ে দাও, ওর গুলো তো আমাকে ধরতেও দাও না কখনও! কেন?”............

ছোট্ট নীলের এতসব প্রশ্নের কোন উত্তর খুঁজে পান না মা, নিজের হীনতায় লজ্জিত হন মনে মনে। কিন্তু সবুজকেও রাখবেন নীলের মত সুযোগ-সুবিধায়-- দুর্মূল্যের বাজারে এই স্বল্প আয়ের সংসারে সেই সামর্থ্যও যে তাদের নেই!

বাধ্য হয়ে ছেলেকে তাই বুঝ দেন মা, “বাবা, সবাই তো আর একরকম হয় না রে......”

বলতে গিয়ে চোখ দুটো ভিজে আসে তাঁর। কিন্তু সাথে সাথেই সামলে নেন নিজেকে-- পাছে আবার নতুন কোন্‌ প্রশ্ন করে বসে এই ছেলে!


নীল অপরাজিতা
২০.০৮.২০১১


মন্তব্য

The Reader এর ছবি

ভাল লেগেছে হাসি

মৌনকুহর এর ছবি

ভালো লাগলো। হাততালি

সচলে স্বাগতম। লিখতে থাকুন প্রাণ খুলে। হাসি

-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
ফেসবুক -.-.-.-.-.- ব্যক্তিগত ব্লগ

দ্বিতীয় সুবর্ণরেখা এর ছবি

বাহ! সাবলীল লেখা...আরো বড় গল্প চাই!

ফাহিম হাসান এর ছবি

ভাল লেগেছে হাসি

পাঠক (বিষণ্ণ বাউন্ডুলে) এর ছবি

লেখার ধরন খুব ভাল লাগল,
লিখতে থাকুন।।

সচলে স্বাগতম।।

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

চমৎকার লিখেছেন ... এরকম গল্প লেখার দিন বোধহয় কখনো শেষ হবে না মন খারাপ

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

ছাইপাঁশ এর ছবি

দীর্ঘশ্বাসের ইমো

ইস্কান্দর বরকন্দাজ এর ছবি

চলুক

নীল-অপরাজিতা এর ছবি

মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ সবাইকে। আমার উৎসাহ আরও বাড়ল। সচলায়তন তো বেশ মজার জিনিস...। হাসি

আশালতা এর ছবি

সচলায়তন তো বেশ মজার জিনিস...।

হা হা হা...মনে হচ্ছে আরেকজন পতঙ্গ সচলাগুনে ঝাঁপ দিতে তৈরি হয়েছে !! সুস্বাগতম হাসি

----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি

আশালতা এর ছবি

গল্প ভালো লাগলো। হাসি

----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

সচলে স্বাগতম।

অপরাজিতা কি নীলচে বেগুনী ছাড়া অন্য কোনো রং হয়?

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

আশালতা এর ছবি

হয়না মনে হয়। তবু আমরা কিন্তু বলার সময় নীল অপরাজিতাই বলি। বোধ হয় তাতে নীলের তীব্রতা বেশি বোঝায়। যেমন বলি নীল আকাশ। আকাশও তো নীল ছাড়া হয়না। হাসি

----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

আকাশ নীল ছাড়াও হয়। লাল, গোলাপী, কালো, অন্ধকার, সাদাটে, ধুসর, নীলচে, মেঘলা এরকম অসংখ্য উপমা জোটে আকাশের। হাসি আকাশের সবচে বেশি রং দেখা যায় সায়েন্স ফিকশনে হো হো হো

নীল অপরাজিতা বলা হয় সাহিত্যের/রচনার প্রয়োজনে। কখনো কখনো। তবে এটা আমার ব্যক্তিগত ভাবনা। আমি সাহিত্যের মারপ্যাঁচ বুঝিনা। ব্যক্তিগতভাবে "নীল অপরাজিতা" শব্দটি আমার কাছে "অশ্রুজল" শব্দটির মতোই! জলের অংশটা যেখানে অপ্রয়োজনিয়। কেউ অশ্রুজল লিখলে তাঁকে আমার অন্তত সেইক্ষেত্রে অসতর্ক লেখক বলে মনে হবে।

তবে এসবই পাঠক হিসেবে মন্তব্য করা। লেখকের ঘাড়ে শব্দের ব্যাবহারের কোনো দায় চাপানো নয়।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

আশালতা এর ছবি

লাল আকাশ/গোলাপি আকাশ ! শুনতে একটু কেমন শোনায় না ? ওগুলো যে আসলে মেঘের রঙ। অবশ্য আপনি বিজ্ঞানী মানুষ। বেশি কিছু বললেই হয়তো অঙ্ক কষে এখুনি দেখিয়ে দেবেন যে আকাশ টাকাশ কারুরই আসলে কোন রঙই নেই। তবে কিনা যে কাউকে ধরে 'আকাশের রঙ কি ?' জিজ্ঞেস করলেই দেখবেন প্রথমেই বলবে 'নীল'। আর আশ্রুজল ! আমার তো শুনতে ভালোই লাগে। সতর্ক হওয়ার কথা মাথায় আসেনা, বোধ হয় শুধু অশ্রুর চাইতে অন্যটা শুনতে বেশি রিদমিক লাগে বলে। এটা ছাড়াও বাংলায় এরকম সমার্থক শব্দ আরও অনেকই আছে কিন্তু। হাসি

----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

মেঘের রঙ লাল কেনো হবে! মেঘ কখনো লাল হয় শুনেছি বলে মনে করতে পারছি না। অবশ্য তা হতে বাধা নেই, কিন্তু তাই বলে আকাশ লাল হতে পারবেনা কেন! আকাশ তো সন্ধেবেলা/ভোরবেলা দস্তুরমতো লাল হয়ে থাকে!

অশ্রুজল শুনতে ভালো লাগলে সমস্যা নেই। আমিও আমার নিজের কীরকম লাগে তা-ই বলছিলাম। অশ্রু = চোখের জল। অশ্রু ভেজা = চোখের জলে ভেজা। অশ্রুজলে ভেজা = চোখের জলের জলে ভেজা!?

সমার্থক শব্দ নিশ্চয়ই আছে। কিন্তু থাকলেই কী আর ব্যাবহারে সিদ্ধ হবে? বাগধারা হলে অন্য কথা!

[আবারো বলে রাখি, ভাষার আমি সামান্যই বুঝি। ব্যাকরণের সেটুকুও না। যা বলছি তাই সবই নিজের ভাবনা।]

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

নীল-অপরাজিতা এর ছবি

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ আশালতা এবং অনার্য সঙ্গীত।

কিন্তু এ যে দেখি বনফুলের 'সুলেখার ক্রন্দন' এর দশা! আসলে অপরাজিতা নামটা আমার আগেই কেউ দখল করে নিয়েছে সচলে। সেজন্যই 'নীল' জুড়ে দিয়েছি অপরাজিতার আগে। হো হো হো

রু (অতিথি) এর ছবি

আমার একটু অসামঞ্জস্যপূর্ণ মনে হয়েছে। তুমি/তুই, সবুজের জামা ধরতে না দেওয়া, সমবয়সীকে ভাইয়া ডাকানো, একেবারেই স্কুলে না দেওয়া (কিংবা বাসায় না পড়ানো) এই জিনিশগুলোর সাথে সামর্থ্যের থেকে মানসিকতার প্রভাব বেশি বলে আমার মনে হয়। বাচ্চার কাছে ধরা খেয়ে চোখ ভিজে আসার কারনটা ঠিক মতো বুঝলাম না। ইচ্ছা আছে, সামর্থ নেই, তাই? কিন্তু নিজের অবস্থানকে ঠিকই জাস্টিফায়েড করা হচ্ছে দুর্মূল্যের বাজার দেখিয়ে। নাকি নিজের ভুল বুঝতে পেরে? তাহলে চোখের পানি লুকানোর দরকার কি?

আসল কথা হচ্ছে আমি বেশি প্যাচাচ্ছি। আমার কথা বাদ দেন, আরও লিখুন। সচলে স্বাগতম।

নীল-অপরাজিতা এর ছবি

গঠনমূলক সমালোচনার জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ, রু।

সহজভাবে ভাবুন।

কাজের ছেলেকে 'তুই' না বলে 'তুমি/আপনি' বলা,
তাদের পোশাক-পরিচ্ছদ বা অন্যান্য ব্যবহার্য জিনিস নিজেদেরগুলোর মতই ট্রিট করা,
পরিবারে তার সমবয়সী বা ছোট সদস্যদের নাম ধরেই ডাকানো,
পরিবারের সদস্যদের মতই স্কুলে বা বাসায় তার পড়াশুনার ব্যবস্থা করা-- সবকটাই ভীষণ উচিত এবং অত্যন্ত করণীয় কাজ। কিন্তু বাস্তব সত্য হচ্ছে এই, মানসিকতাই হোক কিংবা হোক যুগ যুগ ধরে গড়ে ওঠা আমাদের সামাজিক কু-প্রথা-- কোন এক অজানা বাধায় বাঁধা পড়ে আমরা এর কোনটাই করি না।

লেখায় বর্ণিত 'মা', এই ঘুণে ধরা সমাজের গৃহিণীকুলের প্রতিনিধি। কিন্তু ছোট্ট অবুঝ শিশুর অপরিপক্ব মস্তিষ্কের প্রশ্নবানে তার ভেতরকার 'মা' সত্ত্বাটি এক সময় 'আড়মোড়া' দিয়ে ওঠে। তার মাথায় আসে, সবুজকে 'কাজের ছেলে' পরিচয় থেকে মুক্তি দিয়ে 'দত্তক ছেলে' করা যায় কি না। কিন্তু তখন আবার তার সামনে বাধা হয়ে দাঁড়ায় পরিবারের আর্থিক অসমর্থতা।

কোন লেখা লিখে যদি লেখককে এসে এভাবে তা ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দিতে হয়, তার দু'টো অর্থ হতে পারে। এক, লেখক 'জাতের না'। দুই, পাঠক 'সুবিধার না'। এক্ষেত্রে ঘটেছে প্রথমটা। ইয়ে, মানে...

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।