শুভ জন্মদিন ফ্রেডি

অয়ন এর ছবি
লিখেছেন অয়ন (তারিখ: সোম, ০৫/০৯/২০১১ - ৮:১৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১.
প্রথম কবে কোনদিন বোহেমিয়ান র‍্যাপসডি শুনেছি মনে নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার কিছুদিন পরে সম্ভবত। প্রথম শোনার পরের অনুভূতিটা মনে নেই। সেটা ছিল অনেকগুলো অনুভূতির মিশ্রণ। বিস্ময়, অবিশ্বাস, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, আরো নানারকম আবেগ মাথার ভেতর পেটের ভেতর ঘুরপাক খাচ্ছিলো। তারপর আবার শুনলাম, তারপর আবার। শুনতেই থাকি। দিনের পর দিন, সপ্তাহের পর সপ্তাহ। বাসায় বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন যেই আসে তাকেই বলি, একটা গান শুনবে। শুনতে না চাইলেও শোনাই। গান শুরু হওয়ার পর ব্যাপক কৌতূহল নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকি। যেই অনুভূতিগুলোর ছাপ দেখতে চাই, তা পাই না। হতাশ হই। অনেকে গানটা শুনে হাসে, অনেকে বলে ভালো। আমি আর শোনাই না। সেটা ছিল উপরের পাটিতে উচু হয়ে থাকা দাতের ফ্রেডি মারকারীর সাথে আমার প্রথম পরিচয়।

২.
১৯৪৬ সালে পূর্ব আফ্রিকার জান্জিবারে এক পার্সি পারিবারে জন্মগ্রহণ করেন ফারোখ বুলসারা। ফারোখের বাবা চাকরী করতেন ব্রিটিশ সরকারের হাইকোর্ট ক্যাশিয়ার হিসেবে। সে চাকরী রক্ষার স্বার্থেই ভারতের গুজরাট থেকে জান্জিবারে আগমন ঘটে বুলসারা পরিবারের। ছোটবেলার বেশীরভাগ সময়টা ভারতে কাটান ফারোখ। পড়াশোনা করেন বোম্বের বোর্ডিং স্কুল সেন্ট মেরিসে। এই সেন্ট মেরিসে থাকতেই ফারোখকে ফ্রেডি ডাকতে শুরু করে তার বন্ধুরা।

ফারোখের বয়স যখন ১৭ তখন জান্জিবারে আফ্রিকান বিপ্লবীরা ক্ষমতা থেকে উত্খাত করে জান্জিবারের সুলতানকে। ওই সময়টাতে নিরাপত্তাজনিত কারণে আফ্রিকা থেকে ইংল্যান্ডে পালিয়ে আসে বুলসারা পরিবার। ইংল্যান্ড এসে এক আর্ট কলেজ থেকে আর্ট এবং গ্রাফিক ডিজাইনের ওপর ডিপ্লোমা করেন ফ্রেডি। পরবর্তীতে হিথ্রো এয়ারপোর্টে ক্যাটেরিং ডিপার্টমেন্ট থেকে শুরু করে ফেল্টহ্যামে মাল ওঠানামার কাজও করেন তিনি।
ওই সময়টাতে বেশ কয়েকটা ব্যান্ডের সাথে কাজ করেন ফ্রেডি বুলসারা। কিন্তু কোনটাই টিকে থাকেনি। ১৯৭০ এর এপ্রিলে স্মাইল ব্যান্ড থেকে টিম স্ট্যাফেল বিদায় নিলে মূল গায়ক হিসেবে তার স্থানে যোগদান করেন ফ্রেডি। যোগ দেয়ার পরপরই অনেকটা জোর করে ব্যান্ডের নাম স্মাইল থেকে পাল্টে রাখেন "কুইন"। সেই সাথে নিজের বুলসারা পদবী বদলে রাখলেন মারকারী। গুজরাটের জরাথুষ্ট্র ধর্মাবলম্বী ফারোখ বুলসারা ২৬ বছর বয়সে হয়ে গেলেন ফ্রেডি মারকারী।

Freddie Mercury
১৯৭১ এ বেস গিটারিস্ট হিসেবে কুইনে যোগ দেন জন ডীকন। ১৯৭৫ সালে বের হয় তাদের চতুর্থ এ্যালবাম "এ নাইট এ্যাট দা অপেরা"। কুইন কিংবা ফ্রেডি মারকারী, কাউকেই আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।

৩.
ব্যক্তিগত জীবনে ফ্রেডি মারকারি উভকামী ছিলেন। শেষের দিকে অবশ্য সমকামীতায় থিতু হন। জীবনের শেষ ছয়টি বছর কাটান জিম হটন নামের এক হেয়ারড্রেসারের সাথে। ১৯৮৭ সালে ফ্রেডির এইডস ধরা পরে। ধরা পরার পরও ক্রমাগতভাবে এইডস এ আক্রান্ত হওয়ার কথা অস্বীকার করে যান তিনি। ১৯৮৮ এর অক্টোবরে ফ্রেডি মারকারী তার শেষ কনসার্ট করেন বার্সেলোনায়। এই সময়টাতে এইডস জনিত কারণে খুবই অসুস্থ ছিলেন। অবশেষে ১৯৯১ এর ২৩শে নভেম্বর সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এইডস এর কথা স্বীকার করলেন। ১৯৯১ সালের ২৪শে নভেম্বর ৪৫ বছর বয়সে মারা যান ফ্রেডি মারকারী। এক কিংবদন্তীর অবসান ঘটে।

৪.
ফ্রেডি মারকারীর কন্ঠস্বর নিয়ে কিছু লেখার ইচ্ছে ছিলো। কিন্তু ইভা রহমানের কন্ঠস্বর অসম্ভব বাজে এর বাইরে কন্ঠস্বর বিষয়ক আমার ধারণা নিতান্ত সীমিত। ফ্রেডির কন্ঠস্বর নিয়ে শুধু বলতে পারি এটা অস্বাভাবিক এবং অপ্রাকৃতিক। স্বাভাবিক কোন বিশেষণ দিয়ে এটা বিশেষায়িত করা আমার পক্ষে সম্ভব না।

বেচে থাকলে আজ ৬৫ বছরে পা দিতেন ফ্রেডি মারকারী। জন্মদিনে ফ্রেডির প্রতি অনেক অনেক শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা।


মন্তব্য

দ্রোহী এর ছবি

Buddy you’re a boy make a big noise
Playin’ in the street gonna be a big man some day
You got mud on yo’ face
You big disgrace
Kickin’ your can all over the place.

We will we will rock you!
We will we will rock you!

শুভ জন্মদিন ফ্রেডি!

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

গুগলের লোগোটা অসাধারণ হয়েছে।
আর আপনার লেখা অনেকদিন পরে আসলো!

শুভ জন্মদিন ফ্রেডি!

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

দুষ্ট বালিকা এর ছবি

we will rock you প্রথম শুনি ব্যান্ড 5ive এর কভারে। গানটা পছন্দ হয়েছিলো। ফ্রেডির কথা জানি তারও পরে, অবশ্য বোহেমিয়ান র‍্যাপসডি দিয়েই। কুইনের সেরা কাজ এটা, আমার মতে। এই অদ্ভুত স্বরের লোকটার জন্য অনেক অনেক ভালোবাসা!

Freddie Mercury - The Official 65th Birthday Video

**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।

মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।

নজমুল আলবাব এর ছবি

লেখার বিষয়টা আমার দৌড়ের বাইরে। সেটা বিষয়ও না। আমার বিষয়টা হল আপ্নে!!! আপ্নে বাইচা আছেন ভাই? এইটা আপ্নেইতো? ঠিকতো?

স্পর্শ এর ছবি

আমার প্রিয় ভার্সন এটা- কত শতবার যে শুনে ফেললাম!!


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।