ক্লেমেন্জার লেবু সমস্যা আর আমাদের সিডর ভিক্টিমেরা

অয়ন এর ছবি
লিখেছেন অয়ন (তারিখ: বিষ্যুদ, ২৮/০২/২০০৮ - ৩:১৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১.
আগামী মাসে ক্লেমেন্জার জরুরীভিত্তিতে দুটো পুরোন গাড়ী দরকার। পরবর্তী অপারেশনটা দলের জন্য খুব বেশী গুরুত্বপূর্ণ। গাড়ীদুটো দেখতে পুরোন হলেও জরুরী সময়ে যেন আবার বিগড়ে না যায় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। লিটল ইটালীতে পুরোন গাড়ির দোকান আছে দুটো। এর মধ্যে শহরের উত্তরে রিচি নবিলোর দোকানটা বেশ ভালো গাড়ী রাখে। তবে সমস্যা হচ্ছে ওকে তেমন বিশ্বাস করা যায় না। আবার দক্ষিণ দিকের ফ্যাট টনির গাড়ীর কালেকশন তেমন একটা ভালো না হলেও ছেলেটা চুপ থাকতে জানে। পুলিশ চেপে ধরলে খুব বেশী বিপদের আশংকা নেই।
সে হিসাবমতোই শুক্রবার রাতে ক্লেমেন্জা আর রকো রওনা হলো ফ্যাট টনির দোকানের উদ্দেশ্যে। রকো ইতিমধ্যেই পুরোন গাড়ির দামের ব্যাপারে খোজখবর লাগিয়েছে। এক বছরের ব্যবহৃত গাড়ী এখন দু’হাজার ডলারের কমে পাওয়া যাচ্ছে না। ধূর্ত টনি হয়তো কিছু বেশিও নিতে পারে তবে সেটা আড়াই হাজার ডলারের বেশী হবে না। দোকানের সামনে দুজন নামতেই মুখে মোলায়েম হাসি মাখা ফ্যাট টনিকে দেখা গেল।
দোকানে বসে নষ্ট করার সময় হাতে নেই ক্লেমেন্জার। আর ফ্যাট টনির সাথে বেশী কথা বলাও নিরাপদ না। কাজেই প্রথমেই অল্প কথায় সব বলে গেল রকো। ক্লেমেন্জা মাঝে মাঝে দু এক কথা যোগ করছিলো। গাড়ির ধরন জানার পর টনি তাদের নিয়ে গেল দোকানের পেছনে কাভার দিয়ে ঢেকে রাখা কিছু গাড়ীর দিকে।
“দোকানে এই মূহুর্তে সবচেয়ে ভালো গাড়ী এই তিনটি”, বললো ফ্যাট টনি, “যেকোন দুটি নিতে পারেন নিশ্চিন্তে”। ভূরু কুচকে কাভার উল্টে বেশ ভালো করে দেখলো কিছুক্ষণ ক্লেমেন্জা আর রকো দুজনই। “হুমম, এবার দামটা বলে ফেলো”, গম্ভীর স্বরে বললো পেটমোটা ক্লেমেন্জা। “আহা, এতো অস্থির হচ্ছেন কেন, ভালো করে দেখুন আগে”, বলে চললো টনি, “এইরকম গাড়ী এই পুরো লিটল ইটালীতে আর একটিও পাবেন না। দুটো গাড়ীর জন্য আপনাকে দিতে হবে মাত্র পাচ হাজার ডলার”। কিছুক্ষণ ভাবলো ক্লেমেন্জা, তারপর বললো, “সাড়ে তিন হাজার ডলারের এক পয়সাও বেশী পাবে না”। মুখের মোলায়েম হাসিটা একেবারে অক্ষত রেখে টনি বললো, “আপনি বলেই পাচ হাজার চাইলাম, অন্য কেউ হলে তো ছয় হাজারের এক পয়সা কমেও দিতে পারতাম না। যাই হোক শেষ দাম বলছি চার হাজার, এর নিচে আর সম্ভব না”। “শেষ দাম তিন হাজার ছয়শো”, বলেই গেটের দিকে পা বাড়ালো ক্লেমেন্জা। গেট দিয়ে বেরোবার ঠিক আগ মূহুর্তে টনি বলে উঠলো, “তিন হাজার আটশো, নিয়ে নিন”। তিন হাজার আটশো শুনে রকোর দিকে জিজ্ঞাসার দৃষ্টিতে তাকালো পেটমোটা ক্লেমেন্জা। রকো হালকা মাথা নেড়ে না বলতেই দুজন বেড়িয়ে আসলো দোকান থেকে। গাড়ীতে উঠেই রকোকে চেপে ধরলো পেটমোটা, “তিন হাজার আটশোতে কিনতে কি সমস্যা ছিল? না করলে কেন”? “চার হাজারের নিচে নেমেছে দেখেই না করেছি, চার হাজার বললে ঠিকই কিনতে বলতাম,” বেশ ভারী গলায় উত্তর দিলো রকো।

২.
এবার দৃষ্টি ফেরানো যাক আট সমুদ্র তেরো নদী পাড়ে বাংলাদেশের বুকে বরিশাল জেলার আগৈলঝড়া উপজেলার বাসাইল গ্রামে। রহিম হাওলাদারের দুই ছেলে কালু আর লালু। কালু ছোটবেলা থেকেই ভদ্র আর শান্ত, অন্যদিকে লালু সবকিছুতে উদাসীন। মারা যাওয়ার আগে রহিম হাওলাদার তার দুই ছেলেকে সব জমি, পুকুর , বাড়িঘর সমান ভাবে ভাগ করে দিলেন। একটা পুকুর, চার বিঘা জমি আর একটা ঘর, এই সবকিছু বিক্রি করে দুহাতে টাকা উড়িয়ে নি:স্ব হতে লালু হাওলাদারের সময় লাগলো এক বছর আট মাস। সেই একই সময় কালু হাওলাদার তার চার বিঘা জমিকে বানালো সাত বিঘা। পুরোপুরি নি:স্ব হওয়ার পর ঢাকায় আসা ছাড়া আর কোন উপায় ছিলো না লালু হাওলাদারের। ২০০৭ এর ৫ ই মার্চ ঢাকায় আসে লালু। প্রথম কিছুদিন কারওয়ান বাজারে কুলির কাজ করে। তারপর শুরু করে রিকশা চালানো। কিন্তু অত্যাধিক শারীরিক পরিশ্রমে অভ্যস্থ না থাকার দরুণ অল্পদিনেই হাপিয়ে উঠে লালু। এবার শুরু করে দিনমজুরীর কাজ। কাজ করতে করতে প্রায়ই গ্রামের কথা মনে করে চোখের জল ফেলে গোপনে।
১৫ই নভেম্বর ২০০৭। শুরুটা অন্যান্য দিনের মতো হলেও শেষটা বড় ভয়ানক ছিলো কালু হাওলাদারের জন্য। সিডরের আঘাতে ৭ বিঘার জমির ফসল প্রায় পুরোটা নষ্ট হয়, ঘরের ভেতর গাছ ভেঙ্গে পড়ে মারা যায় ছোট ছেলেটা। সকাল বেলা প্রতিবেশীরা কালূ ও তার স্ত্রীকে উদ্ধার করে ধ্বংসস্তূপ থেকে। শারীরিকভাবে পুরোপুরি সুস্থ হতে আর পুত্রশোক কাটিয়ে উঠতে উঠতে লেগে যায় প্রায় এক সপ্তাহ। প্রতিবেশী প্রায় সবার অবস্থাই একই। প্রত্যেকেই কিছু না কিছু হারিয়ে পর্যূদস্ত। পুরো গ্রামে একমাত্র টিকে থাকা ঘরটা ছিল চেয়ারম্যান রশিদ মোল্লার। প্রাথমিক সাহায্য শুরু হয় তার বাড়ি থেকেই। গমচোর হিসেবে হালকা কুখ্যাতি থাকলেও এতো বড় বিপদে তিনিও চুপচাপ বসে না থেকে গ্রামবাসীকে যথেষ্ঠ সাহায্য করেন। এক সপ্তাহেরও বেশী সময় পর সরকারী সাহায্য আসে গ্রামে। বড় বড় হেলিকপ্টার ঘুরপাক খায় গ্রামের উপরে। নিচে ক্ষুধার্ত মানুষ তৃষ্ঞার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন রফিকের নেতৃত্বে সরকারী ত্রাণকার্য শুরু হয়। প্রথমেই যে সমস্যাটা দেখা যায় সেটা হচ্ছে গ্রামবাসীর প্রত্যেকের আলাদা ভাবে ক্ষতি নির্ধারণ। কালূ হাওলাদারের পাশের বাড়িটাই কাদের মোল্লার। কাদের মোল্লার জমি ছিল ২ বিঘা, পুকুর ছিল না, দুধেল গাই ছিল ৩ টা। সেদিক দিয়ে কালূ হাওলাদারের ৭ বিঘা জমিতে মোট ক্ষতির পরিমাণ কাদেরের চেয়ে ঢেড় বেশী। কিন্তু সরকারী ত্রাণ নেয়ার সময় সবাই সমান। ত্রাণ হিসেবে যা পাওয়া গেল সেটাও পরিমাণে খুব একটা খারাপ না। পরিবার নিয়ে টিকে থাকার জন্য মোটামুটি। কিন্তু মূল সমস্যাটা শুরু হলো পুরোপুরি অপ্রত্যাশিতভাবে। ত্রাণকার্য শুরু হওয়ার এক সপ্তাহ পর হঠাৎ করে ঢাকা থেকে বেশ বড় একদল মানুষ আসে যারা বিভিন্ন সময়ে এই গ্রাম ছেড়ে নানা কারণে ঢাকা গিয়েছিল। এই দলের সাথেই গ্রামে পুন:রাগমন ঘটে লালু হাওলাদারের। গ্রামে আসার আগে যথারীতি কারওয়ান বাজারে দিনমজুরের কাজ করতো লালু। সেখানেই একদিন খবর পায় যে বরিশালের গ্রামগুলোতে বেশ ভালো পরিমাণে ত্রাণ বিতরণ করছে সরকার। এবং ত্রাণের পরিমাণ প্রায় ঢাকায় তার দৈনিক আয়ের সমান। এই খবর পেয়ে বিন্দুমাত্র দেরী করেনি লালু। পরিচিত বেশ কয়েকজনকে সঙ্গী করে গ্রামে ফিরে আসে।
লালুর এই গ্রামে ফিরে আসাটাকে ভালোভাবে দেখেনি কালু। ভাইয়ের এই বিপদে সাহায্য করতে যে লালু ঢাকা থেকে ছুটে আসেনি সেটা সে জানে ভালো করেই। লালুর আসার কারণটা বোঝা যায় আসার পরদিনই। গ্রামবাসী অন্য সবার সাথে সেও ত্রাণ নেয়ার লাইনে গিয়ে দাড়ায়। গ্রামবাসীরা সবাই তাকে চেনার পরও কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায় না মিলিটারীর ভয়ে। সবার মতো সেও সরকারী ত্রাণের অংশীদার হয় কোন ক্ষতির সম্মুখীন না হয়েও আর গ্রামের ক্ষতিগ্রস্থ মানুষেরা তাদের প্রাপ্য ত্রাণের ভাগ থেকে হয় বন্চিত। শুধুমাত্র বাসাইল গ্রাম না, এইরকম ঘটনা ঘটেছে বরিশাল, পটুয়াখালি, বাগেরহাটের অনেক গ্রামে। এই ধরনের সমস্যাগুলোর সমাধান কি হতে পারে?

৩.
আবারও দৃষ্টি ফেরানো যাক ক্লেমেন্জা আর রকোর দিকে। ফ্যাট টনির শেষ প্রস্তাবিত দাম ছিল ৩৮০০ ডলার। আর ক্লেমেন্জার বাজেট ছিল ৪০০০ ডলার। তাহলে রকো রাজি হলো না কেন?
ধরা যাক একটি পুরোন ভালো গাড়ীর মূল্য সর্বনিম্ন ২০০০ ডলার আর একটি পুরোন খারাপ গাড়ীর(ইংরেজীতে যাকে লেমন বলা হয়) মূল্য সর্বনিম্ন ১০০০ ডলার। যদি একজন ক্রেতার একটি পুরোন গাড়ী ভালো না খারাপ জানার কোন উপায় না থাকে তাহলে যেকোন পুরোন গাড়ীর প্রত্যাশিত মূল্য (২০০০*.৫০+১০০০*.৫০) অথবা ১৫০০ ডলার। কিন্তু একজন বিক্রেতা কখনোই ২০০০ ডলারের নিচে একটা ভালো গাড়ী বিক্রি করবে না। আবার ১৫০০ ডলারে তার পক্ষে শুধুমাত্র একটি লেমনই বিক্রি করা সম্ভব। এই কারণেই রকো ১৯০০ ডলারের প্রস্তাব শুনে রাজি হয় নি।
এক্ষেত্রে পুরোন গাড়ীর বাজারের কি হবে? যদি কোনরূপ গ্যারান্টি না দেয়া হয় তবে পুরোন গাড়ীর বাজারই তৈরী হবে না। কারণ ভালো পণ্যের প্রত্যাশিত মূল্য যখন পণ্যের প্রকৃত মূল্যের চেয়ে কম থাকে তখন খারাপ পণ্য সে জায়গা দখল করে। একইভাবে এর বিপরীতটাও সত্য। যেটা ই’বের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে

৪.
ফিরে আসি বাসাইল গ্রামে। ক্যাপ্টেন রফিকের চোখে ত্রাণপ্রার্থী লালু আর কালুর মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আর শহর থেকে ত্রাণের লোভে গ্রামে আসা দিনমজুর তার দৃষ্টিতে এক। ধরা যাক প্রতিদিন একজন ত্রাণপ্রার্থীর জন্য সরকারী বরাদ্দ হচ্ছে ১৫০ টাকা এবং গ্রামে মোট জনসংখ্যা ১০০০ জন। যদি শহর থেকে অতিরিক্ত ২০০ জন এসে যদি এই ত্রাণে ভাগ বসাতে চায় তাহলে হয় ২০০ জন প্রকৃত গ্রামবাসীকে বন্চিত করতে হবে অথবা ১৫০০০০ টাকাকে ১২০০ ভাগ করে প্রত্যেককে ১২৫ টাকা করে দিতে হবে। অর্থাত সমাধান যাই হোক, শেষ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গ্রামবাসীরাই।
এই সমস্যাটা থেকে রক্ষা পাওয়া যেত যদি ত্রাণ বিতরণের দায়িত্ব চেয়ারম্যান রশিদ মোল্লার উপর থাকতো।কারণ কালূ আর লালুর মধ্যে কে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্থ এটা রশিদ মোল্লার পক্ষেই জানা সম্ভব, ক্যাপ্টেন রফিকের পক্ষে না। গ্রাম সরকারের জবাবদিহিতা যদি নিশ্চিত করা যায় তাহলে ত্রাণ বিতরণের মতো কাজগুলোতে মিলিটারীর চেয়ে তাদের সফলতার হার অনেক বেশী হবে।

৫.
উপরের যে দুটি সমস্যা নিয়ে আলোচনার চেষ্টা করা হয়েছে সেটাকে অর্থনীতির ভাষায় বলে information asymmetry. ২০০১ সালে এ বিষয়ে গবেষণার জন্য তিন অর্থনীতিবিদ নোবেল পুরষ্কার পান। Information asymmetry নিয়ে বলতে গেলে এ বিষয়ে আমাদের ড: মুহম্মদ ইউনুসের অবদানটাও কিছুটা উল্লেখযোগ্য।
বাংলাদেশের একজন গ্রাম্য মহাজন ঋণের উপর বছরে ১৫০% সুদ আদায় করেন। তাহলে এসব ক্ষেত্রে সাধারণ ব্যাংকগুলো কেন ঋণ দিচ্ছে না? কারণ প্রথাগত ব্যাংকের চেয়ে মহাজনের কিছু তুলনামূলক সুবিধা রয়েছে। যেমন
• প্রথাগত ব্যাংকের চেয়ে মহাজনের পক্ষে ছোট ঋণগুলো নিয়ে গ্রহীতার সাথে ভালোভাবে বোঝাপড়া সম্ভব।
• মহাজন জানে কার পক্ষে ঋণ পরিশোধ সম্ভব এবং কার পক্ষে সম্ভব না।
• মহাজনের পক্ষে ঋণগ্রহীতার আর্থিক অবস্থা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব, যেটা ব্যাংকের পক্ষে সম্ভব না।
উপরের তিনটি সমস্যা – returns to scale, adverse selection এবং moral hazard এর কারণে মহাজনের পক্ষে গ্রামে সুদী কারবারে একটা মনোপলি ধরে রাখা সম্ভব হয়।
ড: ইউনুসের গ্রামীণ ব্যাংক একটি নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছে যাতে উপরের তিনটি সমস্যার কিছুটা সমাধান সম্ভব হয়েছে। গ্রামীণ ব্যাংকের পদ্ধতি অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন প্রকল্পে ঋণ নিতে ইচ্ছুক কয়েকজন ব্যক্তিকে একসাথে ঋণের জন্য আবেদন করতে হবে। যদি ঋণটি অনুমোদন পায় তাহলে ওই দলের দুইজনকে ঋণ দেয়া হবে।ওই দুইজন যদি সময়মতো ঋণ পরিশোধ করতে পারে তাহলে দলের আরো দুইজন ঋণ পাবে। এভাবে চলতে চলতে একেবারে শেষে ঋণ পাবে দলনেতা। এই পদ্ধতিতে adverse selection এবং moral hazard এই সমস্যা দুটি অনেকাংশে দূর করা গেছে। আর returns to scale পুরোপুরি অর্জন করা সম্ভব হয় নি। মূলত এই returns to scale সমস্যাটার কারণেই গ্রামীণ ব্যাংকের সুদের হার এখনো ৪০% এর কাছাকাছি।

শেষ পর্যন্ত যদি কেউ পড়ে থাকেন তাহলে ধন্যবাদ। কারণ লেখা শেষ করার পর নিজেরই পড়তে বোরিং লাগছিলো।


মন্তব্য

দ্রোহী এর ছবি

শেষ পর্যন্তই পড়লাম কিন্তু লেখা হঠাৎ করেই থেমে গেল কেন? মাত্র বুঝতে শুরু করেছিলাম। এখন আমাকে বাকীটুকু বুঝাবে কে?


কি মাঝি? ডরাইলা?

অয়ন এর ছবি

আমার ধারণা ছিল সাইজ দেখে এই পোস্ট কেউ পড়বে না।আমি নিজেই শেষ কবে এই সাইজের পোস্ট পড়েছি মনে নাই। শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

দ্রোহী এর ছবি

পঞ্চম খন্ডটাকে বিশদ ব্যাখ্যা করে একটা পোষ্ট দিতে পারেন।


কি মাঝি? ডরাইলা?

অয়ন এর ছবি

চেষ্টা করবো।

হাসিব এর ছবি

পুরাটাই পড়ছি । এক্টু পৈড়াই বুচ্ছি কমন পড়ছে চোখ টিপি

অয়ন এর ছবি

হো হো হো

তানভীর এর ছবি

গ্রাম্য মহাজন ১৫০% হারে সুদ নিয়ে গ্রামবাসীদের __ মেরে আওয়ামী লীগ-বিএনপি করলেই ঠিকাছে, এরাই একসময় দেশের মহান নেতা হয়ে যায়; আর ইউনুস গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমে সেই সুদের হার ৪০% -এ নামিয়ে আনলেই গালি খেতে হয় ‘সুদ-খোর মহাজন’, ‘রক্ত-খেকো’, ইত্যাদি। বাঙ্গালীর কখনো উপকার করতে নাই।

তবে গ্রামীণের সুদের হার সর্বোচচ ২০% তাদের ওয়েবসাইটের তথ্যানুসারে, ৪০% নয় --
There are four interest rates for loans from Grameen Bank : 20% (declining basis) for income generating loans, 8% for housing loans, 5% for student loans, and 0% (interest-free) loans for Struggling Members (beggars).

=============
"কথা বল আমার ভাষায়, আমার রক্তে।"

অয়ন এর ছবি

২০% এর সাথে আরো কিছু ব্যাপার আছে যেমন- কেউ যদি বারটি কিস্তিতে পরিশোধযোগ্য ১২০০ টাকা লোন নেয় তখন তাকে দেয়া হবে ১১০০ টাকা, ১২০০ টাকা না। এইধরনের কিছু শর্তের ফলে সুদের হার গিয়ে ঠেকে প্রায় ৩৫% থেকে ৩৮% এ। আমার কাছে এই মুহূর্তে তথ্যগুলো নেই। তথ্যগুলো পেলে আরেকটি পোস্ট দেয়ার চেষ্টা করবো।

হাসিব এর ছবি

অয়নের তথ্য ঠিক আছে ।গ্রামীনের ইফেক্টিভ ইন্টারেস্ট রেট একটু বেশীই । এটা নিয়েও সমালোচনা আজকের না । বহুদিন থেকেই একাডেমিক সার্কেলে এটা আলোচিত ঘটনা । গ্রামীনের সুদের হার থেকে আবার আশা ব্র্যাকের সুদের হার বেশী (স্মৃতি থেকে লিখছি)! এখানে গ্রামীনকে হয়তো খ্যাতির বিড়ম্বনা ও মোবাইল বিষয়ক হয়রানির কারনে বেশী গালি খেতে হয় ।

আর "গ্রাম্য মহাজন ১৫০% হারে সুদ নিয়ে গ্রামবাসীদের __ মেরে আওয়ামী লীগ-বিএনপি করলেই ঠিকাছে," এই কথাটাও বেশিমাত্রায় সরলীকরণ । ছোটবেলাথেকেই গ্রামভিত্তিক লেখা সাহিত্য নাটকে এদেরকেই তো ভিলেন হিসেবে দেখে অভ্যস্ত । তাদের গুনগান কেউ গেয়েছে বলে মনে পড়ছে না ।

তানভীর এর ছবি

ক্ষমতার আশীর্বাদ ছাড়া তো আর যুগ যুগ ধরে মহাজনের অত্যাচার চলে আসে নি। ক্ষমতাবানরা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে লাভবান হয়েছে বলেই মহাজনী ব্যবসা চলে এসেছে। আগে গ্রামের দু’একটা অবস্থাপন্ন পরিবারের একটা থাকত মহাজন পরিবার। উদাহরণ দিতে পারব না, তবে খোঁজ নিলে দেখা যাবে বাংলাদেশের অনেক প্রথিতযশা রাজনীতিকই গ্রামের সম্ভ্রান্ত মহাজন পরিবার থেকে এসেছেন। সাহিত্য-নাটকে মহাজনরা যতই ভিলেন হোক, এরাই আসলে গ্রামের মাথা। ডঃ ইউনুস প্রথা ভেঙ্গেছেন- ১৫০%-এর জায়গায় ৪০%-এ সুদ দিয়েছেন। তার অপরাধ হয়েছে। মাশুল হিসেবে আওয়ামী লীগ বা বিএনপির কোন একটায় যোগ দিয়ে প্রায়শ্চিত্ত করতে পারতেন, তা না করে আরো বড় অপরাধ করেছেন- নতুন দল করে রাজনীতিতে আসতে চেয়েছেন। এদেশে ফালু, বাবর পলিটিক্স করলে ঠিকাছে, দেশের বড় মন্ত্রী হবে। কী ইউনুস নতুন দল করে পলিটিক্সে আসতে চায়! ‘সুদ-খোর মহাজন’, ‘রক্তখেকো’র-এত বড় আস্পর্ধা! বীর বাঙ্গালী গর্জে ওঠো।

=============
"কথা বল আমার ভাষায়, আমার রক্তে।"

হাসিব এর ছবি

দুঃখিত । আই এ্যাম নট গেটিং ইওর পয়েন্ট । আপনি দোষারোপের ব্যাপারে মিউচুয়ালি এক্সক্লুসিভ অবস্থানে চলে যাচ্ছেন মনে হয় । কি দেখে আপনার মনে হলো আমরা এখানে যারা আলোচনা করছি তারা মহাজন, ফালু, বাবরকে কিছু থেকে বাচাচ্ছি । এখানে কেউ কি তাদের পক্ষে সাফাই গাইছে ?

তানভীর এর ছবি

জ্বী না। আপনি সরলীকরণের কথা বললেন। তাই বললাম। ইউনুস লীগ-বিএনপি কোন একটাতে যোগ দিলেই তকমাগুলো আর জুটত না। যেমন ফালু, বাবর, হাজারীর, (মহাজনের) মত লোকেরাও লীগ-বিএনপি থেকে রাজনীতি করে দেশের নীতি-নির্ধারক হয়ে যান। ব্যাপারটা আসলেই সরল। অস্পষ্ট বক্তব্যের জন্য দুঃখিত।

=============
"কথা বল আমার ভাষায়, আমার রক্তে।"

হিমু এর ছবি

ইউনুস সুদখোর মহাজন হতে পারেন, কিন্তু তাকে রক্তখেকো বললো কে?


হাঁটুপানির জলদস্যু

তানভীর এর ছবি

হা হা। এই যে এখানে আছে রক্তখেকো ইউনুস

যেখানে আগে বাংলাদেশকে মানুষ চিনত রবীন্দ্রনাথ আর মুজিবের নামে
সেখানে এখন চেনে রক্তখেকো ইউনুসের নামে

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

মাগো... আপনের সাথে কোনদিন তর্কে না যাওয়ার মেন্টাল সংকল্প করলাম! দেঁতো হাসি
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

হিমু এর ছবি

ইউনুস, ক্ষুদ্রঋণ আর নোবেলবিজয় নিয়ে আমার নিজস্ব কিছু পর্যবেক্ষণ আছে। পরীক্ষার চাপটা কেটে গেলে লিখবো। সিরিজ করে নয়, পূর্ণাঙ্গ প্রবন্ধ আকারে। আশা করি ধৈর্য ধরে পড়বেন।


হাঁটুপানির জলদস্যু

অমিত আহমেদ এর ছবি

পড়লাম... আরো পড়তে চাই।

হিমু এর ছবি

ভালো লাগলো বেশ। সিরিজ আকারে চলতে থাকলেও মন্দ হয় না। আরেকটু ঘরোয়া জিনিসের উদাহরণ হলে একেবারে দারুণ ব্যাপার হয়। সুবিনয় মুস্তফী একটা সিরিজ শুরু করেছিলেন, সুন্দরী বস এসে মিষ্টি হাসি দিয়ে কাজ গছিয়ে একটা যাচ্ছেতাই কান্ড ... হাজার হোক আমারই মতো দুষ্ট পুরুষ তিনি, লেখার তাই আর সময় পাচ্ছেন না বলে কিছু বলতেও পারি না ...।

স্টিভেন লেভিটের ফ্রীকোনমিক্স পড়ে দারুণ লেগেছিলো, মনে হয়েছিলো অর্থনীতির সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং জিনিসগুলো কখনোই শেখা হয়নি। সেখানে ইনফরমেশনের সাথে পণ্যের মান আর মূল্যের অসামঞ্জস্য নিয়ে একটা দারুণ উদাহরণ পড়েছিলাম, একদিন পুরোনো গাড়ির দাম নিয়ে। একটা নতুন গাড়ি, ধরা যাক অয়ন সেটি কিনলো গতকাল ১০০ টাকা দিয়ে। আজ যদি সে গাড়িটা আমার কাছে বিক্রি করতে চায়, ৬০ টাকাও হয়তো দাম পাবে না, যদিও গাড়িটার মাইলেজ বলতে গেলে শূন্য। কেন? কারণ কোন সিরিয়াস গড়বড় না থাকলে কেউ নতুন গাড়ি কিনে পরদিন বিক্রি করে না! এই কান্ডজ্ঞানভিত্তিক তথ্য গাড়িটার দাম একেবারে বসিয়ে দেবে।

অয়ন, হাতের কাছে ফ্রীকোনমিক্স থাকলে পড়ে একটা রিভিউ দিও ভাইটু, পিলিজ।


হাঁটুপানির জলদস্যু

অয়ন এর ছবি

ডাউনলোড করে নিলাম। কালকে থেকে শুরু করবো।

হিমু এর ছবি

ফটাশ করে কোত্থেকে নামাইলা?? তাহলে আমার জন্য একটা বই খুঁজে দ্যাখো না একটু ... জোনাথান কিংডনের LOWLY ORIGINS ...


হাঁটুপানির জলদস্যু

অয়ন এর ছবি

ফ্রিকোনোমিক্স তো নামালাম ইস্নিপ্স থেকে। Lowly Origins তো খুজে পাচ্ছি না মন খারাপ

হাসিব এর ছবি

আরেকটু ঘরোয়া জিনিসের উদাহরণ হলে একেবারে দারুণ ব্যাপার হয়।

এইটা বিদজ্জনক । আমার মাইক্রোফিন্যান্স সাবজেক্টের প্রফেসর আমরা ভুল কিছু বললে রেগে গিয়ে বলতেন সাংবাদিকদের মতো কথা না বলতে । কারন একটাই, তারা প্রবন্ধগুলো একটু বেশী ঘরোয়া করে ফেলেন । উদাহরন দেই একটা ।

সিনারিও - ১
প্রবন্ধ শুরু, বাঁশবাগান পত্রিকার সাংবাদিক মনে মনে ভেবে রেখেছেন মাইক্রোক্রেডিটের সুনাম লিখবেন । তিনি শুরু করেছেন এভাবে ।

সালেহা বেগম । মাগারিপুরের দুর পাড়াগায়ের এক সচ্ছল ও স্বাবলম্বী নারী । মাসিক আয় যার ২০হাজার টাকা । এই সালেহা বেগমের অবস্থা বছর পাচেক আগেও এরকম ছিলোনা । দারিদ্রের কষাঘাতে দিন কাটতো তার । অনাহারে অর্ধাহারে ঘার দেনায় কাটতো জীবন তার । একদিন হঠাৎ এক প্রতিবেশীর কাছে খবর পেলেন অমুক ব্যাংকের কথা । ...........

এর পর তার উন্নতির সিড়িতে ওঠার বর্ননা। এই ভূমিকা পড়ে পাঠকের মন শুরুতেই দ্রবীভূত । ভাবেন, নাহ, এই মাইক্রোক্রেডিটই সব সমস্যা সমাধান । কত সুন্দরভাবেই না সালেহা দারিদ্র কাটিয়ে উঠলো । পাঠক আর বাকিটুকু পড়েন না মন দিয়ে । আবেগে দ্রবীভূত মন নিয়ে ভাবেন নাহ উনারা হাজার হলেও উন্নত জাত । ইউনুসকে কি আর সাধে নোবেল দিয়েছে !

সিনারিও - ২
এক্ষেত্রে ধরে নেই সাপ্তাহিক কচুবনের সাংবাদিক মাইক্রোক্রেডিটের ওপর মেজাজ বিলা করে লিখতে বসেছেন ।

মালেহা বেগম । শরিয়তপুরের দুর পাড়াগায়ের এক হতদরিদ্র নারী । উঠোনে বসে কাদছেন একটু আগে তমুক ব্যাংকের লোকেরা তার বাড়ির টিনের চাল খুলে নিয়ে গেছে বলে । দরিদ্র এই নারীর পুরোটা জীবন এরকম ছিলো না । একসময় সব না থাকলেও পরিবারে স্বচ্ছলতা ছিলো । ধনবান না হলেও মাস শেষে থাকতোও কিছু সঞ্চয় । এই অবস্থা থেকে আরোও উন্নতি আশায় বছর পাচেক আগে একদিন এক প্রতিবেশীর পরামর্শে লোন নিলেন তমুক ব্যাংকের কাছ থেকে । ভেবেছিলেন বিনিয়োগ করবেন । আয় রোজগার উঠে এসে সেটা শোধ করে যা থাকবে সেটা নগদ লাভ । কিন্তু ..............

এ পর্যন্ত পড়েই পাঠকের মন বিক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে । মনে মনে ভাবেন শালার এই বেনিয়ার জাতরাই দেশটাকে খেলো । আর এর সাথে তাল দিচ্ছে পশ্চিমি দুনিয়ার দখলদারেরা যারা নিজেদের উন্নতি স্বার্থেই ......

আপনি পত্রিকা বা অনেক সময় বিভিন্ন ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশনের বই পুস্তকে এই ধরনের গল্প দেখতে পাবেন । টার্গেট অনুযায়ী গল্প বানিয়ে সেটা যায়গা অনুযায়ী সুন্দর টেক্সট বক্সের ভেতরে সেটে দেয়া হয় এসব ব্যক্তিগত কাহিনী ।

আমার মতে এই জাতীয় টেকনিকাল বিষয় যেগুলো গবেষণার দাবি রাখে সেগুলো থেকে এইধরনের আবেগী ব্যক্তিগত জিনিস বাদ দিয়ে লেখার স্টাইল নৈর্ব্যক্তিক হওয়া উচিত যাতে করে আবেগের বদলে শুধুমাত্র ফ্যাক্টস দেখে পাঠক সিদ্ধান্ত নিতে পারে ।

পুনশ্চঃ সাংবাদিক ভাইয়েরা মাইন্ড করে থাকলে অগ্রীম ক্ষমাপ্রার্থী ।

হিমু এর ছবি

দুর্ধর্ষ যুক্তি, তবে আমি আসলে ঘরোয়া জিনিসের উদাহরণ বলতে গিয়ে কাঁচিয়ে ফেলেছি ব্যাপারটা। বলা উচিত ছিলো, আরেকটু চেনা লেনদেন। সারা জীবনে কোনদিন গাড়ি তো দূরের কথা, গরু কিনতেও যাই নাই ভাই, তার আবার পুরান-নতুন! নীলক্ষেতে বই, নিউমার্কেটে মাছ, এলিফ্যান্ট রোডে প্যান্ট, পাড়ার দোকানে প্যারাসিটামল ... এইসব জিনিসের কেনাবেচা দেখলে মাথাটা ঠান্ডা থাকে।


হাঁটুপানির জলদস্যু

হিমু এর ছবি

আচ্ছা, সাপ্তাহিক কচুবন নামটা আমার খুবই মনপসন্দ হয়েছে। একটা গল্প ড্রাফট করছি, "গোয়েন্দা ঝাকানাকা ও বইমেলা রহস্য", সেখানে একটা সাপ্তাহিক-কাম-দৈনিক পত্রিকার এক বিভাগীয় সম্পাদক চরিত্র আছে। সম্পাদকের নাম খুঁজে পেলেও পত্রিকার নাম খুঁজে পাচ্ছিলাম না ভেবে ভেবে। আপনি অনুমতি দিলে কচুবন নামটা ব্যবহার করতে পারি এখন থেকে।


হাঁটুপানির জলদস্যু

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

৫ম অংশটা আরো বিশদভাবে বললে ভাল হতো ,,,আপনার উদাহরণ গুলো ভাল লাগল

একটা জায়গায় খটকা, গ্রামীণ ব্যাংকের দাবী যে তদের ক্ষেত্রে সময়মতো ঋণ পরিশোধের হার ৯৮% এর বেশী, যেটা সম্ভবতঃ সাধারণ ব্যাংকেও হয়না, যদিও সাধারণ ব্যাংকে এডভার্স সিলেকশনটা আরো ভালোভাবে হবার কথা ,,,
তো, এত বছর ধরে এত ভাল রিটার্ন টু স্কেলের পরও তারা কেন এটাকে রিস্ক বলে ভাবছে, কেন সেই রিস্ক এড়াতে সূদের হার এত বেশী ধার্য্য করছে?
আর এতদিন ধরে যখন এত ভাল রিটার্ণ টু স্কেলটা কন্টিনিউ করেছে, তখন নিশ্চয়ই তাদের এক্সপেক্টেশনের চেয়ে অনেক বেশী আয় হচ্ছে তাদের ,,,, গ্রামীণের সোশ্যাল কর্পোরেট চেহারা থেকে দাবী করা যায় যে এই বাড়তি আয় তারা ঋণগ্রহীতাদের জন্যই খরচ করবে, কোন না কোন ভাবে ,,,সেটা কতটুকু হচ্ছে?

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

অয়ন এর ছবি

একটা জায়গায় খটকা, গ্রামীণ ব্যাংকের দাবী যে তদের ক্ষেত্রে সময়মতো ঋণ পরিশোধের হার ৯৮% এর বেশী, যেটা সম্ভবতঃ সাধারণ ব্যাংকেও হয়না, যদিও সাধারণ ব্যাংকে এডভার্স সিলেকশনটা আরো ভালোভাবে হবার কথা ,,,

ঋণ পরিশোধের হার এতো উচু থাকার পিছনে অনেকগুলো কারণ আছে। তার মধ্যে অন্যতম একটা হচ্ছে গ্রামীণের ঋণ বিতরণের ইউনিক মডেল। ধরা যাক একটা গ্রুপে ৫ জন সদস্য, এবং গ্রামীণ গ্রুপের দুইজনকে ঋণ দিল। এখন ঋণ পরিশোধের দায়টা কিন্তু শুধু ওই দুইজনের উপর না, গ্রুপের ৫ জনের উপরই বর্তাচ্ছে, যেটা প্রচলিত ব্যাংকিং পদ্ধতিতে হয় না। আর সাধারণ ব্যাংকের ঋণ পরিশোধের হার (বিশেষ করে বাংলাদেশের সরকারী বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে) এতো কম হওয়ার পিছনে একটা কারণ হচ্ছে তাদের পক্ষে গ্রামীণ ব্যাংকের মতো কোন মডেল অনুসরণ সম্ভব না। এই কারণে ইভালুয়েশ্যন এবং মনিটরিং কোনটাই ঠিকভাবে হয় না।
তো, এত বছর ধরে এত ভাল রিটার্ন টু স্কেলের পরও তারা কেন এটাকে রিস্ক বলে ভাবছে, কেন সেই রিস্ক এড়াতে সূদের হার এত বেশী ধার্য্য করছে?

সুদের হার বেশী ধার্য করছে কারণ সিটি ব্যাংকের যেখানে এক কোটি টাকা লোন দেয়ার জন্য একবারেই ইভালুয়েশ্যন এবং মনিটরিং কস্ট বহন করতে হচ্ছে সেখানে গ্রামীণ ব্যাংককে সমপরিমাণ টাকা লোন দেয়ার জন্য প্রায় পাচ হাজার বার ইভালুয়েশ্যন এবং মনিটরিং কস্ট দেয়া লাগছে(যদি প্রতিটি লোন দুহাজার টাকার হয়)।
আর এতদিন ধরে যখন এত ভাল রিটার্ণ টু স্কেলটা কন্টিনিউ করেছে, তখন নিশ্চয়ই তাদের এক্সপেক্টেশনের চেয়ে অনেক বেশী আয় হচ্ছে তাদের ,,,, গ্রামীণের সোশ্যাল কর্পোরেট চেহারা থেকে দাবী করা যায় যে এই বাড়তি আয় তারা ঋণগ্রহীতাদের জন্যই খরচ করবে, কোন না কোন ভাবে ,,,সেটা কতটুকু হচ্ছে?

গ্রামীণের হাত পা যেভাবে বাড়ছে তাতে ওদের সোশ্যাল কর্পোরেট চেহারা তো দেখতেই পাচ্ছেন। হয়তো গরীব ঋণগ্রহীতাদের সরাসরি কোন লাভ না হলেও দেশের অর্থনীতির কিছুটা লাভ হচ্ছে।

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

অয়ন জব্বর লেখা হইছে। অভিনন্দন। বাংলা ব্লগে অর্থনীতির মতোন শুকনা কিন্তু দরকারী জিনিস নিয়া ভাল লেখা আরো বাড়বে এরকম লেখা উদাহরণ আর পথপ্রদর্শক হিসাবে থাকলে।

হিমু, গাড়ি চলে না সিরিজ এখন হবে গাড়ি টোটালি নষ্ট - গত এক মাসে অবস্থা এতো খারাপ হইছে যে বলার মত না। দৈনিক বাজে হেডলাইনের সাথে কিপ আপ করাই কঠিন হইয়া গেছে!
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

হিমু এর ছবি

হ্যাঁ, কী আর করবেন, সুন্দরী গরমাগরম বস হলে যা হয় আর কি ... কাজেকামে জীবনটা একটা হুলুস্থূলু হয়ে যায় ...


হাঁটুপানির জলদস্যু

অয়ন এর ছবি

বাংলায় যে অর্থনীতির উপর অসাধারণভাবে লেখা যায় সেটা কিন্তু আপনিই প্রথম দেখিয়েছেন।

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

এরকম লেখার ভালো একটা মন্ত]্য করতে পারবো কি না, এই আশঙ্কায় প্রথমবার মন্তব্যই করি নাই। শেষ আবার কে কোনদিক দিয়ে ঠেসে ধরে!!

যাইহোক, লেখাটা পড়ে আরাম পাওয়া গেল, সুবিনয় ভাইয়ের লেখার মতোন একটা স্নেহ আছে অনর্থনীতিবীদ পাঠকদের প্রতি।

ধন্যবাদ। আরোও আসুক এরকম লেখা।

___________________________
বুড়োরা সবাই সমস্বরে বললো, "নবজন্ম", আমি চাইলাম "একটা রিওয়াইন্ড বাটন"

কনফুসিয়াস এর ছবি

এরকম আরো কিছু লেখা নিয়মিত পেলে অর্থনীতি বুঝতে শুরু করবো বলে মনে হচ্ছে।
অয়নকে অনেক ধন্যবাদ।
-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

সৌরভ এর ছবি

অয়নও দেখি কঠিন কঠিন লেখা দেয়া শুরু করলো।
মাথা চুলকায় রে পিচ্চি, বুড়া হই গেসি।



আমি ও আমার স্বপ্নেরা লুকোচুরি খেলি


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

অয়ন এর ছবি

সবাইকে ধন্যবাদ।

সৌরভ এর ছবি

বাসি শুভ জন্মদিন, অয়ন।



আমি ও আমার স্বপ্নেরা লুকোচুরি খেলি


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

নজমুল আলবাব এর ছবি

অয়ন তাইলে ফর্মে আসছে। গুড।
সচলে এসে আমার প্রিয় সাবজেক্টটা আবার সামনে চলে এল। প্রথমে সুবিনয় এইবার অয়ন। ভালই লাগছে।

ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।