দিনলিপি

অয়ন এর ছবি
লিখেছেন অয়ন (তারিখ: মঙ্গল, ১৪/০২/২০১২ - ৯:১৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১৩.০২.২০১২
মফস্বল শহরগুলো সাধারণত ১০ মিনিট হাটলেই পুরোটা দেখা হয়ে যায়। খাগড়াছড়ি আছি দুদিন হলো। প্রথমদিন বিকেলবেলা বড় রাস্তা ধরে বেশ কিছুক্ষণ হাটতে হাটতে শহরের শেষ প্রান্তে চলে আসলাম যেন। এ রাস্তার দু'ধারে ডিসি অফিস, আদালত ভবন, প্রেস ক্লাব, সরকারী অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলীদের কার্যালয় সব কিছু পাশাপাশি। আমরা আছি বিসিকের রেস্ট হাউজে। এক সহকর্মীর সাথে। রেস্ট হাউজের কেয়ারটেকার আশরাফের বাড়ী ভৈরব। যেকোন রকম দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত ভদ্রলোককে দেখে নিজের ক্ষুদ্রতা চিন্তা করে অস্বস্তিবোধ হয়। তবে সে অনুভূতি সাময়িক, ঢাকা ফিরে আমি আবার সেই পুরোন চুতিয়া আমিতে পরিণত হবো। মাঝে মাঝে ভদ্রলোক রুমে এসে গল্প জুড়ে দেন। নানারকম গল্প করেন তিনি। এই রেস্টহাউজে এসে থাকা দুই তরুণীর গল্প কিংবা পাহাড়ী মদ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ার গল্প।

খাগড়াছড়ি শহরের রাত সুনসান নিশ্চুপ। আমাদের রুমের পাশে ছাদের মতো বিস্তৃত বেশ একখানি জায়গা। পাশেই মূল রাস্তা। রুমে শুয়ে দীর্ঘক্ষণ কান পাতলে দু'একটা মটরসাইকেল কিংবা অটোরিক্সা চলার শব্দ মেলে। রাতে দেখার মতো আছে তারা। আকাশ ভর্তি তারা। দীর্ঘসময় তাকিয়ে থাকলে মনে হয় মাথার ওপর নেমে আসছে। এই বিশাল নক্ষত্রমন্ডলীর দিকে তাকালে ব্যক্তিগত জীবনের সুখ দু:খগুলো অনেক ছোট হয়ে আসে। পুরাতন প্রেমিকার স্মৃতি, পরিচিতজনের মৃত্যু, ব্যক্তিগত চাওয়া পাওয়ার আকাঙ্খা, সবকিছু বড় অর্থহীন, তুচ্ছ মনে হয়।

এখানে আসার আগে চট্টগ্রাম ছিলাম একরাত। বেশ কয়েক বছর পর চট্টগ্রাম দেখলাম। জিইসির মোড় আগের চেয়ে অনেক বেশী আলোকজ্জ্বল। নতুন অনেক ডেভেলপারের বিজ্ঞাপন। শহরের কিছু কিছু অংশ চিনতে পারি না। মিমিসুপার মার্কেটের জায়গায় কি যেন একটা। অলিখা মসজিদের পেছনে একটা নার্সারী ছিলো। এখন কিছু ভাঙ্গা ইট। বাহারী অন্তর্বাসের চাহিদা মেটাতে এসেছে ভ্যালেন্সিয়াস সিক্রেট। রিকশা ভাড়া মনে হলো বাড়েনি। তা যাই হোক, শহর খুব বেশী পাল্টে নি। ২২ বছর আগে এই শহরে প্রথম পদার্পণ। ২২ বছর দীর্ঘ সময়, অবশ্য পৃথিবীর ইতিহাসের তুলনায় ক্ষুদ্র এক মূহূর্ত। চোখ বন্ধ করলে প্রথম দিনটা এখনো স্পষ্ট দেখতে পাই। সরকারী কোয়ার্টারে থেকে থেকে অভ্যস্ত আমাদের কাছে নতুন বাসাটা কেমন যেন খোপের মতো মনে হচ্ছিলো। বারান্দা নেই, সামনে খোলা জায়গা নেই। সেই বাসায় কাটলো চট্টগ্রামের ১৩ বছর। এক সময়ের পরিচিত মানুষ, পরিচিত জায়গা এদুটোর পরিবর্তন কেন যেন মানতে কষ্ট হয়। সুর মেলাতে গিয়েও সুর আর মেলে না।

১৪.০২.২০১২
আজ মহালছড়ি ঘুরে এলাম। প্রচুর ধানক্ষেত এই উপজেলায়। অবশ্য তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে খাগড়াছড়িতেই সমতল ভূমি সবচেয়ে বেশী। ছোট ছোট অনেক পাহাড়। মাঝ দিয়ে উচু নিচু রাস্তা। সেই রাস্তা দিয়ে প্রবল বেগে গাড়ি চলে। পাহাড়ের পাশেই বিস্তীর্ণ সবুজ। দূরের পাহাড়ে ধোয়া উড়তে দেখা যায়। তবে আমার খেলনা ক্যামেরা দিয়ে আর কাজ হচ্ছে না। খাগড়াছড়ি জায়গাটা সুন্দর হলেও পর্যটকদের কোন আনাগোনা চোখে পড়লো না। ঢাকা থেকে সরাসরি এখানে আসা যায়। তাও কেউ আসে না। কি কারণ কে জানে।


মন্তব্য

স্বপ্নাদিষ্ট এর ছবি

খাঁটি ব্লগ! দুএকটি ছবি জুড়ে দিলে মন্দ হতো না চলুক । পরের দিনলিপির অপেক্ষায় পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

-স্বপ্নাদিষ্ট
=======================
যে জাতি নিজের ভাগ্য নিজে পরিবর্তন করে না, আল্লাহ তার ভাগ্য পরিবর্তন করেন না।

আজহার এর ছবি

হাততালি

পরিবর্তনশীল এর ছবি

ভালো লাগলো লেখাটা। খুব ভালো।

নিবিড় এর ছবি

এরকম ছোট ছোট দিনলিপি পড়তে সব সময় ভাল লাগে

তাপস শর্মা এর ছবি

সুন্দর। পড়তে পড়তে একাত্ম হওয়া যায় যেন। হাসি

তারেক অণু এর ছবি
নজমুল আলবাব এর ছবি

আসসালামু আলাইকম। কেমনাছেন জনাব? মেন্টাল মোবারক ঠিকাছে? এইদিকে কেমনে কেমনে? পথ ভুল করে নাকি? সব ঠিকাছে?

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

লেখকের নাম দেখে তাশকী খাইলাম
লেখা ভালো লাগছে

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

মর্ম এর ছবি

লিখুন আরো, এমন লেখা পড়লে আফসোস হয় কিন্তু ভালও লাগে।

~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

এরকম দিনপঞ্জি পড়তে ভাল্লাগে খুব।

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

চলুক

ধূসর জলছবি এর ছবি

চমৎকার দিনপঞ্জি ।

প্রদীপ্তময় সাহা এর ছবি

ভালো লাগল ।
এরকম আরও দিনপঞ্জী চাই ।

ভালো থাকবেন ।

পাখি এর ছবি

ভালো লেগেছে। আমারো মার্চ মাসে নীলগিরির উপর দাঁড়িয়ে এমন কিছু অনুভূতি হয়েছিল।আমিতো আপনার মত সুন্দর করে লিখতে পারিনা তাই আমার সেই অনুভূতিগুলো আমি ছাড়া আর কেউ জানলো না।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।