ভ্যাঙ্কুভারে তিন দিন

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: সোম, ১৯/০৯/২০১১ - ৬:১২পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

প্রতি বছর একবার অতি ব্যাস্ত ছেলে মেয়েরা তাদের হাইটেকের চাকরির ডেডলাইন এর ফাকেঁ বাবা মায়ের সাথে মিলিত ছুটিতে সময় কাটায়। এবার সবার গন্তব্য ভ্যাংকুভার। আমরা সেখানে যাবার আগেই মেজ মেয়ে প্রযেক্টের শেষে ম্যাক্সিকো থেকে, মেজ জামাই নিউ ইয়র্ক থেকে, বড় মেয়ে অটোয়া থেকে গিয়ে আমাদের অপেক্ষায়। সকাল দশটার ফ্লাইটে আমরা অটোয়া থেকে যাত্রা শুরু করলাম। সংগে ঘরে বানানো প্রচুর কাবাব, সিঙ্গারা, মোগলাই পরাটা, রান্নাকরা কিমা নিয়ে নিলাম। লোকাল টাইম দুপুর বারোটায় ছোট বড় অনেক গুলি দ্বীপের সৈকতে সাগরের আছড়ে পড়া ঢেউ, ছবির মতন সুন্দর সাজানো শহর ভ্যাঙ্কুভারে পৌছালাম। বাসায় পৌছানোর পরে সব্বাই পরের তিন দিনের ভ্রমন প্লান বানাতে বসলো। এত অল্প সময়, কত কিছু যে দেখার আছে!

ঠিক সেইদিনই জুনের সেই চমৎকার দিনেই ভ্যাংকুভারে পথমেলা। ইন্ডাস্ট্রিয়াল রোডের কয়েক কিলোমিটার রাস্তা সমস্ত যানবাহন চলাচল বন্দ করে দিয়ে, সকাল থেকে সন্ধ্যা মেলা। অন্যান্য মেলার মতনই রাস্তার দুইধারে দোকানদাররা টেবিল সাজিয়ে বসেছে। কাপরচোপর, জুয়েলাড়ি, খাবার দাবার, ঘর সাজানোর জিনিশ, ফুল, ফুল এবং সব্জির চারা, বই, খেলনা খুব সুলভে দেদারছে বিক্রি হছে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে মেলার মাঝামাঝি একটা খোলা স্টেজে আধুনিক বাদ্যযন্ত্রসহ বিভিন্ন দেশের শিল্পীরা চমৎকার নাচ গান পরিবেশন করে যাচ্ছে ঘড়ি ধরে। চারিদিকে প্রচুর দর্শক দাঁড়িয়ে বসে অনুস্থান উপভোগ করছে।

কিছুদুর হাটার পর নাকে হটাৎ ইলিশ মাছ ভাজার গন্ধে পেটের মধ্যে ছুচোর ডাকা ডাকি। চোখের সামনে লম্বা এক লাইন মানুষ অসীম ধৈর্য্য দাঁড়িয়ে। লাইন যেখানে শেষ হয়েছে, সেখানে চার পাঁচটা বিরাট বিরাট বারবিকিউ গ্রিলে টাটকা সার্ডিন মাছ মোটা দানার লবন এবং গোল মরিচের গুরো দিয়ে গ্রিল করছে। গ্রিলের দুই পাশের টেবিলে ব্যাস্ত হাতে পেপার প্লেটে ফটাফট ন্যাপকিন, ফর্ক, এবং একটা পোর্তুগীজ হোলহুইট সোরডো বান, পাচঁটা গ্রিল করা সার্ডিন মাছ এক টুকরা লেবুসহ পাঁচ ডলারে দিচ্ছে। লাইনে কম করে হোলেও শ’দুয়েক লোক দাঁড়িয়ে। সেদিকে তাকিয়ে আমি আর লাইনে না দাড়িয়ে মেলা দেখতে থাকলাম। কিছুদুর যাবার পর দেখি পার্কের পাশে রঙ্গিন ছাতার নীচে পাতা চেয়ার টেবিলে বসে ছোটজামাই আর ছেলে সেই গ্রিল মাছ খাচ্ছে। তারা চার প্লেট এক্সট্রা কিনেছে আমাদের জন্য। আমরাও চেয়ার জোগার করে বসে গেলাম। গোধুলীর সোনা রঙ্গে মেলার স্টেজে এক চাইনিজের একক সুরেলা কন্ঠের গান শুনতে শুনতে, মেলার উৎসবের মধ্যে বসে শক্ত আস্তরনের পর্তুগিজ বান রুটি যার ভিতরটা নরম এবং ফাঁফা তাই দিয়ে সার্ডিন মাছ দিয়ে অসম্ভব মজার খাবার খেলাম।

আমাদের এবারের গন্তব্য গ্রিনিভাইল দ্বীপ। ট্যুরিস্টদের জন্য ছোট ছোট দৃস্টিনন্দন উপহারের দোকান, খুব চমৎকার একটা বেকারী, হরেক রকমের সদ্য বেক করা পাউরুটি ছোট ছোট টুকরো করে কেটে খদ্দেরদের সামনে দিচ্ছে চেঁখে দেখার জন্য, এত্ত মজার যে প্রত্যকেই কিছু না কিছু কিনছেই। এরপর গেলাম বিখ্যাত সেই কাচা বাজারটাতে। কত রকমের যে চীজ, সসেজ, টাটকা ফল, শাক, সবজী, মাছ একটা বিরাট বড় ছাদের নীচে কয়েক শত খোলা দোকানে থরে থরে সাজানো। কতগুলি অরগানিক দোকানে দেখলাম আমাদের ছোটবেলায় দেখা সেই বড় বড় খাজ কাটা টমেটো(হেয়ার লুম) যেগুলোর কথা দেশে এখন সব্বাই ভুলতে বসেছে। ভ্যাংকুভারে প্রচুর চাইনিজ থাকে, তাদের কল্যানে বাজারে এশিয়ান তরকারি, ফল, বিশেষ করে ফ্রেস লিচু, আম, চিনির মতন মিস্টি তেতুল দেখে কিনে ফেললাম। কচি কচি পুইশাক, দেশি সবুজ বেগুন, টাটকা চিংড়ি আর হ্যালিবাট মাছ,(সমুদ্র থেকে ধরে আনা কত রকমের যে মাছ সেখানে!!) কিনলাম রাতের জন্য। লাঞ্চে রেস্টুরেন্টের বাইরে পানির উপরে রেলিং দেয়া পাটাতনে চেয়ার টেবিলে বড় বড় হরেক রঙ্গের ছাতার নীচে বসে ফিস য়্যান্ড চীপস খেলাম ঠিক রেলিঙ্গের পাস দিয়ে চলমান ট্যুরিস্ট বোঝাই চমৎকার লঞ্চগুলি দেখতে দেখতে।

ভুগোলের মানচিত্রে মানুষ যেখানেই ভ্রমন করুক না কেন, তার মনের গভীরে থাকে শৈশবের নিজ মাতৃভুমি। তাই বিকেলে কাপিলানো সাসপেন্সান ব্রীজ পার হোতে গিয়ে কেনো যে দেশের কথা মনে পড়লো। দেশে নেই নিরাপত্তার বালাই, বাশের সাকোঁতেই মানুষ প্রতিদিন পারাপার করছে আবাল বৃদ্ধ বনিতা! দুটোর তুলনা হয় না। সাসপেন্সসান ব্রীজের বহু নীচে খরোস্রতা পানির ধারা দুই পাহাড়ের মাঝে নেচে নেচে আপন মনে চলছে কোন অজানা গন্তব্য। ব্রীজের অপর পাড়ে বিড়াট এক গাছে বানিয়েছে এক ট্রি-হাউস। সেই গাছ-ঘরে গিয়ে দেখলাম পশ্চিম দিগন্তে বিদায়ী সুর্য্যর রঙ তুলিতে একেঁ দিচ্ছে সমস্ত আকাশ, সোনালী আলোয় ভরিয়ে দিচ্ছে চরাচর, অপুর্ব মায়ায় যেন পুরো পাহাড়, গভীর অরন্য নিজেদের অস্তিত্বকে জানান দিচ্ছে প্রবল ভাবে।

স্ট্যনলি পার্ক, স্ট্যানলি কাপের মতনই বিখ্যাত। নড়বড়ে হাটুর জন্য গাড়ীতেই ঘুরে ফিরে দেখলাম অপুর্ব সুন্দর, মানুষের সংজ্ঞায়িত তটভুমি, পাহাড়, পায়েচলা পথ, প্রকৃতিকে যার যার নিজের মতন করে আবিস্কার করে অনুভব করার সুবর্ন সুযোগ। একুইরিয়ামে গিয়ে দেখি লম্বা লাইন। গত সপ্তাহে একটি নুতন অতিথীর শুভ আগমনে এই উপচে পড়া দর্শক। বেবী বেলুগা যদিও তার মায়ের কাছ ছাড়া হচ্ছেনা, একুইরইয়ামেই তার জন্ম উপলক্ষ্য বেলুগা বিশেষজ্ঞ, দায়িত্বশীল অভিজ্ঞ কিছু কর্মী চব্বিশ ঘন্টাই পালাক্রমে মা এবং শিশুর স্বাস্থ্য, আচরন মনিটর করে যাচ্চেন। প্রায় তিরিশ জন দর্শককে প্রতি বারে মিনিট পাচেকের জন্য বড় জানালা ওয়ালা ভিতরের হল রুমে ঢুকতে দেয়া হয়, ইন্টারকমে রেকর্ড করা ধারা বিবরনিতে মেরু সমুদ্রের প্রানী বেলুগা গুলির নাম, তাদের পারস্পারিক সম্পর্ক, তাদের সামাজিক রীতি নীতি মেনে চলা আচরন সম্পর্কে আমরা জানলাম, দর্শকরা বেলুগা সম্পর্কে প্রশ্ন করে কৌতুহল মিটালো গাইডের থেকে।। হল ওয়ের দুই পাশ সারি সারি একুইরিয়ামের জানালায় সাগরতলের অপার রহস্যময় প্রানীকুলের চেহারা ছাড়াও জানালার পাশেই ছাপানো তথ্য রয়েছে আগ্রহীদের জন্য। কত রকমের যে জেলি ফিস, সী-হর্স, মাছ, কাকড়া, কচ্ছপ দেখে মুগদ্ধ হতে হয় সাগর তলের বাসিন্দাদের দেখে। বাইরে খোলা পানিতে রয়েছে শীল, ওটার, ডলফিন অন্যান্য প্রানী, ভাগ্য ভালো হলে তাদের দেখা মিলবে খুব কাছ থেকে।

স্কী-রিসোর্ট গ্রাউস মাউন্টেইন। দলে দলে লোকজন পাহাড় চুড়ায় ওঠার পায়ে চলা পথে চলছে। আমরা কেবল-কারে করে চুড়ায় যাওয়া আসার টিকেট কাটলাম, রিটার্ন টিকেট কিনলে স্কি লিফটে আর একবার অন্য দিক দিয়ে চুড়ায় উঠা ফ্রি। অপুর্ব সুন্দর সেই যাত্রাপথ। ভরা গরমেও পাহাড়ের চুড়ায় বরফের স্তুপ, দেখতে চাইলে পায়ে চলা পথে একটু হাটলেই পাওয়া যাবে খুব কাছের থেকে কয়লা কালো রঙের ভীষন দর্শন গ্রেজলী বিয়ার, মর্জি হলে দুই পায়ে দাঁড়িয়ে হুংকার দিয়ে দর্শকের দৃস্টি আকর্ষন করবে বিদ্যুৎ চালিত তারের উচু ঘেরা দেয়া সীমানা থেকে।

মহাসাগরের বুক চিড়ে বিরাট ফেরিবোটে পৌছানো গেল ভ্যাংকুভার দ্বীপে। সেখানে বুশার্ড গার্ডেন আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দর বোটানিকাল গার্ডেন। কত রঙ্গের যে গোলাপ ফুল, সাদা, লাল, গোলাপি, বেগুনি, নীল, কমলা পীত, তুতে, গেড়ুয়া, সবুজ, শুধু গোলাপেই মন ভরে যাবে। অন্য কত রকমের যে ফুল আমার মনে হোল যদি এখানেই থাকতে পারতাম! বাগান পরিকল্পনা, রক্ষনা বেক্ষন অপুর্ব সুন্দর। বিশেষ করে দুটো বেশ বড় টিলার মাঝে পুস্পিত আর্চের মধ্যে দিয়ে কয়েক কদম হেটেই অদ্ভুত সুন্দর এক ফুলেল উপত্যকায় পৌছে গেলাম। সিড়ি দিয়ে নেমে খুব কাছ থেকে ফুলের গাছগুলি দেখতে চাইলাম। অপর পাড়ের সিড়িতে উঠেই কানে আসলো মনে নেশা ধরানো স্বচ্ছ স্ফটিক পানির উপর থেকে ঝ্ররে পড়ার মধুর শব্দ। সিড়ি দিয়ে উঠেই চোখে পড়বে জাপান গার্ডেন। দেখে মনে হবে চোখ দুটি সার্থক, মন ভরে যাবে অপার এক আনন্দে।

এরপর আমাদের নিয়ে গেল ক্যাথেড্রাল গ্রুভ ফরেস্টে। এটা একটা প্রভিন্সিয়াল পার্ক। সুপ্রাচীন বিরাট বিরাট গাছের জন্য এটি বিখ্যাত, গাছ গুলির বয়স প্রায় আটশত বছর, অর্থাৎ বাংলাদেশে যখন সেন রাজ্য শেষ, খিলজিরা ঘোড়া দাপিয়ে আসছে দখল নেবার জন্য, তখন হয়তো এই সব গাছের জন্ম! পরিধিতে প্রায় তিন মিটার, আকাশ ছোয়া উচ্চতায়, তবে বটের মত ঝুরিওয়ালা বা অনেক ডালপালা নেই। দেখলেই বোঝা যায় প্রাচীন ঐতিহাসিক গাছ। ১৯৯৭ সালে এক ঝড়ে অনেক গুলো গাছ ধরাশায়ী হয়েছে। সেগুলি এখনও ঐ ভাবেই ভুশয্যায়, দর্শকদের জন্য। দেখে সময়কে মনের গভীরে উপলবদ্ধি করার একটা পক্রিয়া অবচেতনেই শুরু হয়ে যায়। আরো অবাক ব্যাপার, গাছ গুলোর ভিতরটা একদম ফাঁফা। ফলে সামান্য ঝড়ো হাওয়ায় কুপেকাত হবার সম্ভাবনার জন্য পর্যটকদের আবহাওয়ার দিকে বিশেষ মনোযোগ দিতে বলা হয়।

প্রায় ঘন্টা খানেক ড্রাইভ করে জামাই আমাদের একটা আজুবাওয়া উপজাতীর গ্রামে নিয়ে গেল, যেখানে তারা এখনো টোটেম পোল বানায়, বিড়াট বড় রেড সিডারের আস্ত গাছের মোটা মোটা গুড়ি খোদাই করে। দেড় দুই মিটার মোটা লম্বায় প্রায় সাত আট মিটার গাছ দিয়ে প্রায় বছর খানেক লাগিয়ে চমৎকার মিনারের মতন মাথায় পালক গোজা উপজাতি মানুষ, ভালুক, ঈগল পাখি ইত্যাদির মুখ খোদাই করা পোল বানায়। এটা কোন ধর্মীয় ব্যাপার নয়, প্রাচীন একটা উপজাতি কালচার বলা যায়। সম্ভবত সামাজিক, গোত্রিয় সাফল্যর প্রতিক। কিছু কিছু পোল অবশ্য কোন কোন উপখ্যানেররও ইংগিত দেয়, আমাদের দেশের নক্সী কাথাঁর কাহিনীর মতন।

নিজেদের পুরোনো ঠিকানায় ফেরত যাত্রার আয়োজন, যার যার স্যুটকেস গোছানোর পালা। মেয়েদের চোখের দিকে তাকিয়ে দেখি, অসুস্থ মায়ের জন্য তাদের মনের উৎকন্ঠা, ভালোবাসা টলমল করছে। হটাৎ উপলব্ধি করলাম, মানুষ শুধু ভুগোলের মানচিত্রেই, দেশ থেকে দেশান্তরেই ভ্রমন করে না, মন থেকে মনেও ভ্রমন করে, ভালোবাসার, আবেগের, অনুভুতির তাজমহলে মনকে সাজায় দর্শনীয় স্থানের প্রেক্ষাপটে ।


মন্তব্য

শিশিরকণা এর ছবি

সংগে ঘরে বানানো প্রচুর কাবাব, সিঙ্গারা, মোগলাই পরাটা, রান্নাকরা কিমা নিয়ে নিলাম।

এইটুকু পড়েই উদাস হয়ে গেলাম। বাকিটা ... ফেডেক্স করে কিছু বাসার ঠিকানায় পাঠান, মোগ্লাইতে কামড় বসিয়ে তারপর পড়ব না হয়।

লেখা আপনার কাবাব, মোগ্লাই এর মতই সুখাদ্য হয়েছে। কিছু ছবি দেখতে পারলে আরও ভাল লাগত। ছবি ছাড়া বেড়ানর গল্প পানসে লাগে।

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

আসমা খান, অটোয়া। এর ছবি

লেখাটি পড়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ। আপনার মন্তব্য অনুপ্রানিত করলো আরো লেখার জন্য! কাবাব, মোগ্লাই ফেডেক্সে পাঠানো কি ঠিক? ডেলিভারি ম্যানের কথাটি তো চিন্তা করবেন, শুধু বর্ননা পড়েই আপনি উদাস, আর যে বেচারা হাতে ধরবে, সুন্দর গন্ধ শুঁকবে, তার কি হবে?

মেয়ে অনেক ছবি তুলেছিল, লেখার সাথে পোস্ট করলাম কিন্তু সেগুলি দেখছিনা, মডারেটরদের অনুরোধ করেছি এ ব্যাপারে। অশেষ ধন্যবাদ।

পাঠক তামান্না ঝুমু এর ছবি

ভ্রমণ বৃত্তান্ত বেশ ভাল লাগল।

আসমা খান, অটোয়া। এর ছবি

লেখাটি পড়া ও মন্তব্যর জন্য অশেষ ধন্যবাদ।

মুস্তাফিজ এর ছবি

একদিন আমিও এসব দেখতে যাব।

...........................
Every Picture Tells a Story

আসমা খান, অটোয়া। এর ছবি

অবশ্যই যাবেন, খুব সুন্দর শহর, সময় নিয়ে দর্শনীয় স্থান গুলি দেখবেন। মন ভরে যাবে। লেখাটি পড়া ও মন্তব্যর জন্য ধন্যবাদ।

তারেক অণু এর ছবি

আসছি ভ্যাঙ্কুভারে। আচ্ছা গ্রীজলি ভালুক কয়লা কালো রঙের হবে কেন! এমনটা হবার কথা না খুব আলাদা জেনেটিক মিউটেশন না হলে। খুব রসালো খাবার দাবারের গন্ধ পাচ্ছি--

ফাহিম হাসান এর ছবি

আওয়াজ দিয়েন। আমি প্রতিবেশি অঙ্গরাজ্যেই আছি। গ্রিজলির কালো হওয়ার কথা নয়, ব্ল্যাক বেয়ার হতে পারে।

আসমা খান, অটোয়া। এর ছবি

আমি থাকি অটোয়াতে, আপনি কোথায়?

ভালুকের তথ্যর গড়মিলে আন্তরিক দুঃখিত। লেখাটি পড়া এবং মন্তব্যর জন্য অশেষ ধন্যবাদ, ভালো থাকবেন।

আসমা খান, অটোয়া। এর ছবি

তারেক অনু!!! আপনি পড়ছেন আমার লেখা? অশেষ ধন্যবাদ!

ভ্রমন ও লেখার সময়ের ব্যাবধান বেশি হয়ে গিয়েছিলো, দুঃখিত তথ্যর গড়মিলে। সেখানে দুটো ভালুক ছিলো, গ্রিজলী ভালুকটা বড় বড় পাথরের আড়ালে শরীর, মাথাটা বাইরে বিষন্ন অলসভাবে দুরের দিকে তাকিয়ে ছিলো। আর বাইরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছিলো কালো ভালুকটা।

আমি কিন্তু আপনার লেখার আশায় থাকি, বই হিসেবে কবে বের হচ্ছে, অপেক্ষায় আছি!

কী কমু এর ছবি

গ্রিনিভাইল দ্বীপ?...আপনি বোধহয় গ্র্যানভিল দ্বীপের কথা বলতে চেয়েছিলেন?

ভ্যাঙ্কুভারে এসে ডাউনটাউনের ওপর দিয়ে স্ট্যানলি পার্কে গেলেন, একটু সময় করে ডাউনটাউনের হারবার সেন্টারের চূড়োয় 'লুকআউট'-এ উঠলে সারা ভ্যাঙ্কুভারের চেহারা দেখতে পেতেন। রোদেলা দুপুরে ওখান থেকে ভ্যাঙ্কুভারের ল্যান্ডস্কেইপ অসাধারণ লাগে দেখতে। পরে কখনও বেড়াতে এলে দেখতে ভুলবেন না।

শহরটা সত্যিই ছবির মত সুন্দর। মানুষগুলোও বড্ড ভাল।

নিতান্তই গেরস্ত মানুষ, চারপাশে কেবল
শস্যের ঘ্রাণ পাই।

আসমা খান, অটোয়া। এর ছবি

দুই হাজার আটের ঘটনা, আমার উচ্চারন বাংগালীর বানান করে উচ্চারন করার মত, অনেক ধন্যবাদ ছবির মত দ্বীপটির সঠিক নামটি জানানোর জন্য।

আগামীতে যদি আবার যাই হারবার সেন্টারের লুক আউটে উঠবো ইনশাল্লাহ।

অশেষ ধন্যবাদ, লেখাটি পড়ার এবং মন্তব্যর জন্য।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

প্রসঙ্গটা পোস্টের মূল প্রসঙ্গের সাথে সম্পর্কিত নয়, তবু কথাটা যেহেতু এখানে উচ্চারিত হয়েছে তাই এই বেলা বলে রাখি।

অর্থাৎ বাংলাদেশে যখন সেন রাজ্য শেষ, খিলজিরা ঘোড়া দাপিয়ে আসছে দখল নেবার জন্য,

সেন রাজত্ব চলেছে ১০৭০ সাল থেকে ১২৩০ সাল পর্যন্ত। ১২০৪ সালে খিলজীরা এ'দেশের খুব কম জায়গাই দখল করতে পেরেছিলো এবং তা টিকেছিলো ১২২৭ সাল পর্যন্ত। অর্থাৎ সেনরা খিলজীদের আগে তো ছিলই, খিলজীদের আমলেও ছিল এবং খিলজীদের শাসন শেষ হবার পরে আরো তিন বছর ছিল। লক্ষ্মণ সেন প্রথম আক্রমণের ধাক্কায় পালিয়ে গেলেও তাঁর রাজ ১২০৬ সালে তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত অব্যাহত ছিলো। বঙ্গের উত্তর-পশ্চিমাংশের কিছু অংশে খিলজীদের প্রায় ২৩ বছরের নিয়ন্ত্রণ থাকাটাকে আর যা কিছু বলা যাক "বঙ্গ বিজয়" বলা যায় না।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

আসমা খান, অটোয়া। এর ছবি

মন্তব্যর জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

যতদুর মনে পড়ে ক্লাস সিক্সের পাঠ্য ছিলো সেন আমল। মাত্র সতেরজন ঘোড় সওয়ার নিয়ে বখতিয়ার খিলজি এসেছিলেন গৌড়ের উপকন্ঠে। তার কয়েক শত বছর পরে মাত্র আনুমানিক দুই শত সৈন্য নিয়ে লর্ড ক্লাইভ কোলকাতায় প্রবেশ করেন বিনা বাধায়। আসলে ইতিহাসের এই সমস্ত অসম জয় পপরাজয় আলোচনা আমার উদ্দেশ্য ছিলোনা, আমি সময়ের একটা ধারনা দিতে চাচ্ছিলাম, গাছ গুলির বয়সের মাপে।

অশেষ ধন্যবাদ লেখাটি পড়ার জন্য।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আমার ডিসক্লেইমারটা জলে গেছে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ফাহিম হাসান এর ছবি

ছবি কই, ছবি?
লেখা ভাল লেগেছে।

আসমা খান, অটোয়া। এর ছবি

ছবি দিয়েছিলাম, কিন্ত দেখছিনা, হারিয়ে গেল? কোথায়?

অনেক ধন্যবাদ লেখাটি পড়া এবং মন্তব্যর জন্য।

উচ্ছলা এর ছবি

দারুন সাবলীল আপনার লেখার স্টাইল চলুক
খুব ভালো লাগলো পড়তে।

আসমা খান, অটোয়া। এর ছবি

উচ্ছলা, অনেক ধন্যবাদ লেখাটি পড়া এবং সুন্দর মন্তব্যর জন্য।

কল্যাণF এর ছবি

লিখেছেন ফাহিম হাসানঃ
ছবি কই, ছবি?
লেখা ভাল লেগেছে।

একাসুর

আসমা খান, অটোয়া। এর ছবি

ফাহিম হাসানের মত আপনাকেও অশেষ ধন্যবাদ লেখাটি পড়ার জন্য।

আশালতা এর ছবি

লেখা তো ভালো লাগলো কিন্তু এত সব সুখাদ্যের বর্ণনায় মর্মর মত আমারও উদাস উদাস লাগল। হাসি

----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি

আসমা খান, অটোয়া। এর ছবি

আশালতা, শরতের আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখেন, কি চমৎকার নীলের পটে সাদা মেঘের কারুকাজ, নীচে ফসলের ক্ষেত, যদি পান শিউলি ফুল, মালা গেঁথে খোপায় গুজেই দেখেন, খুশিতে মন ভরে গেছে কখোন নিজেও টের পাবেন না।

অনেক অনেক ধন্যবাদ লেখাটি পড়ার এবং মন্তব্যর জন্য।

তাশফীন মাহমুদ এর ছবি

আমি ভ্যানকুভারেই থাকি! হাসি আসলেই ছবির মতো সুন্দর। অবশ্য আপনি যেসব জায়গার কথা লিখেছেন তার অনেকগুলিতেই আমার এখনো যাওয়া হয়নি - ২০০৭ থেকে আছি যদিও। আলস্য বোধহয় একেই বলে।

কিছু কিছু জায়গার নাম আপনি বাংলা বানানে লিখতে গিয়ে গুলিয়ে ফেলেছেন- গ্র্যানভিল আইল্যান্ডের বেলায় লিখেছেন ‘গ্রিনিভাইল’, বুচার্ট গার্ডেনের বেলায় ‘বুশার্ট’।

ছবিগুলো হারিয়ে যাওয়ায় এখানে ফ্লিকার থেকে কিছু লিংক পোস্ট করছি-
স্ট্যানলি পার্ক
গ্র্যানভিল আইল্যান্ড
বুচার্ট গার্ডেনস্‌

ভ্যানকুভার সম্পর্কে কিছু তথ্য-
১। ভ্যানকুভারে সারাবছর প্রচুর বৃষ্টি হয়। তবে মুষলধারে না, টিপটিপ করে। স্থানীয়রা বাঙালিদের মতো বৃষ্টিপ্রেমী নয়, শহরটার মেঘলাপনায় তারা কমবেশি হতাশ থাকে। এখনো সামারটা যাচ্ছি-যাবো বলেও ঝুলে আছে বলে বোধহয় ভ্যানকুভারের এই দিকটা আপনার চোখ এড়িয়ে গেছে।

২। ভ্যানকুভারের আসল আকর্ষণ তার আশেপাশে outdoor activitiesএর সুযোগসুবিধা। সেই অর্থে ভ্যানকুভার নিমিত্তমাত্র; কাছেধারে উইস্লার, স্কোয়ামিশ জাতীয় শহরগুলিতে স্কিয়িং, স্নোবোর্ডিং, মাউন্টেন বাইকিং, ডার্ট বাইকিং - এসবের জন্য দারুণ সব জায়গা আছে। সেই লোভে অনেকে ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া থেকে এখানে প্রতিবছর ঘুরতে আসে। অনেকে আর কখনো ফিরে যায় না - এমন বেশ কয়েকজনকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি।

৩। ভ্যানকুভার হলো সুশির শহর। যেখানেই যাবেন সুশির দোকান দেখতে পাবেন। দামেও বেশ সস্তা। আর সুশি মানেই কিন্ত কাঁচা মাছ তা নয়।

৪। ক্যানাডার তাবৎ জনগণের মতো ভ্যানকুভারের মানুষও আইস হকির পাগল। এখানকার স্থানীয় আইস হকি দল (নাম ‘ভ্যানকুভার ক্যানাক্স’) গত বছর স্ট্যানলি কাপের ফাইনালের উঠেছিল (স্ট্যানলি কাপ হলো আইস হকির অলিখিত বিশ্বকাপ)। ফাইনালে দলটা গু হারা হেরে গেলে শহরজুড়ে ভীষণ দাঙ্গা-হাঙ্গামা হয়, কিন্তু সে আরেক গল্প।

৫। ভ্যানকুভারে হলিউডের প্রচুর ছবি, টিভি সিরিজের শুটিঙ হয়। এক্স ফাইলসের বেশিরভাগ পর্ব ভ্যানকুভারে ধারণ করা। সাম্প্রতিক ট্রন ছবিটার শেষ দৃশ্য দেখে তো সিনেমা হলে সবাই খিকখিক করে হাসতে শুরু করলো - যে ব্রিজটার উপর দিয়ে নায়ক-নায়িকা মোটরসাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিল, সেটা নর্থ ভ্যানকুভার যাওয়ার পথে লায়ন্স গেইট ব্রিজ।

আগামী বার এলে টোফিনো, ইউক্লুলেট, সানশাইন কোস্ট - এসব জায়গাগুলি ঘুরে দেখতে পারেন। হাইকিং, সাঁতার কাটা, স্কুবা ডাইভিং, এবং সর্বোপরি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত।

ভালো থাকবেন।

আসমা খান, অটোয়া। এর ছবি

অনেক অনেক ধন্যবাদ, তথ্যবহুল সুন্দর মন্তব্যর জন্য। আগামীতে গেলে অবশ্যই আপনার বর্নিত স্থান গুলি দেখবো ইনশাল্লাহ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।