ছন্দে ছন্দে চলা ০২

রোমেল চৌধুরী এর ছবি
লিখেছেন রোমেল চৌধুরী [অতিথি] (তারিখ: শুক্র, ৩০/০৯/২০১১ - ১২:১০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

পূর্বের পাঠ : ছন্দে ছন্দে চলা ০১

গত পর্বে মাত্রাবৃত্ত নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। পর্যাপ্ত উদাহরণ দিতে পারিনি। পরে মনে হলো মূলপাঠের পর অনুশীলনীর মতো একটা কিছু না থাকলেও সমাধানকৃত সমস্যা (solved problems) তো থাকতে পারে। উপরি হিসেবে না হয় কিছু ভালো কবিতার রস আস্বাদনও করা গেল। তাই এই প্রচেষ্টা। তাই পড়ুয়াগণ (আমিও কিন্তু পড়ুয়াদের দলে, একই বেঞ্চে) আসুন, অক্ষর বৃত্ত নিয়ে আলোচনার আগে মাত্রাবৃত্তের যতটুকু শিখলাম তা একটু ঝালাই করে নিই।


শরীরের গাছে/ পাঁচখানি ডাল-/৬+৬
চঞ্চল মনে/ ঢুকে পড়ে কাল।/৬+৬
দৃঢ় ক’রে মন/ মহাসুখ পাও,/৬+৬
কী-উপায়ে পাবে/ গুরুকে শুধাও।/৬+৬
যে সবসময়/ তপস্যা করে/৬+৬
দুঃখে ও সুখে/ সেও তো মরে।/৬+৬
ফেলে দাও পারি/পাট্যের ভার,/৬+৬
পাখা ভর করো/ শূন্যতার-/৬+৫
লুই বলে, ক’রে/ অনেক ধ্যান/৬+৫
দেখেছি, লভেছি/ দিব্যজ্ঞান।/৬+৫
(অনুবাদে লুইপাদ, চর্যা-১)

প্রথম উদাহরণটি বাংলা ভাষার প্রাচীনতম কাব্যসংকলন 'চর্যাচর্যবিনিশ্চয়'-এ সংকলিত কবি লুইপাদের কবিতার আধুনিক অনুবাদ। ফি-চরণে ৬ মাত্রার ২ টি করে পূর্ণ পর্ব।


এ জগতে হায়/ সেই বেশি চায়/ আছে যার ভূরি/ ভূরি/৬+৬+৬+২
রাজার হস্ত/ করে সমস্ত/ কাঙালের ধন/ চুরি।/৬+৬+৬+২
(রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ‘দুই বিঘে জমি’)

মাত্রাবৃত্তের ৬ মাত্রার চাল, পঙক্তি শেষে ২ মাত্রার একটি অসম্পূর্ণ পর্ব। লক্ষ্য করুন হায়>চায়, হস্ত>সমস্ত এইসব মধ্য-মিল থাকাতে পর্বগুলো সনাক্ত করতে সুবিধে হচ্ছে।


দুর্গম গিরি/ কান্তার মরু/ দুস্তর পারা/বার/৬+৬+৬+২
লঙ্ঘিতে হবে/ রাত্রি নিশিতে/ যাত্রীরা হুশি/য়ার।/৬+৬+৬+২
(কাজী নজরুল ইসলাম, ‘কাণ্ডারী হুশিয়ার’)

একই চাল, কিন্তু এন্তার যুক্তাক্ষর ব্যবহার করায় কবিতার ছন্দ যেন টগবগিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। ভ্রুতলয়ে পড়তে হচ্ছে।


এইখানে তোর/ দাদীর কবর/ ডালিম গাছের/ তলে।/৬+৬+৬+২
তিরিশ বছর/ ভিজায়ে রেখেছি/ দুই নয়নের/ জলে।/৬+৬+৬+২
এতটুকু তারে/ ঘরে এনেছিনু/ সোনার মতন/ মুখ,/৬+৬+৬+২
পুতুলের বিয়ে/ ভেঙে গেল বলে/ কেঁদে ভাসাইত/ বুক।/৬+৬+৬+২
(জসীম উদদীন, ‘কবর’)

যুক্তাক্ষর ব্যবহার না করায় এলায়িত, গীতল, উন্মুক্ত একটা ভাব লক্ষ্য করি। ফি-চরণে ৬ মাত্রার ৩ টি করে পূর্ণ পর্ব আর ১ টি করে ২ মাত্রার অতিপর্ব।


কাল সে আসিবে/ ওই বালুচরে,/ আমি কি আবার/ হায়,/৬+৬+৬+২
আসমান-তারা/ শাড়ীখানি আজ/ উড়াব সারাটি/ গায়?/৬+৬+৬+২
(জসীম উদদীন, ‘কাল সে আসিবে’)

আমার প্রিয় কবিতার তালিকায় এই কবিতাটি অনন্যসাধারণ স্থান দখল করে আছে। ফি-চরণে ৬ মাত্রার ৩ টি করে পূর্ণ পর্ব আর ১ টি করে ২ মাত্রার অতিপর্ব।


তখনো ছিলো/ অন্ধকার/ তখনো ছিলো/ বেলা/৫+৫+৫+২
হৃদয় পুরে/ জটিলতার/ চলিতেছিলো/ খেলা/৫+৫+৫+২
ডুবিয়াছিলো/ নদীর ধার/ আকাশে আধো/লীন/৫+৫+৫+২
সুষমাময়ী/ চন্দ্রমার/ নয়ান ক্ষমা/হীন/৫+৫+৫+২
(শক্তি চট্টোপাধ্যায়, ‘হৃদয়পুর’)

মাত্রাবৃত্তে ৫ এর চাল। ফি-চরণে ৫ মাত্রার ৩ টি করে পূর্ণ পর্ব আর ১ টি করে ২ মাত্রার অতিপর্ব।


তোমার মুখ আঁকা/ একটি দস্তায়/৭+৭
লুটিয়ে দিতে পারি/ পিতার তরবারি/৭+৭
বাগান জোত জমি/ সহজে সস্তায়/৭+৭
তোমার মুখ আঁকা/ একটি দস্তায়;/৭+৭
(আল মাহমুদ, শোণিতে সৌরভ)

মাত্রাবৃত্তে ফি-পঙক্তিতে ৭ মাত্রার ২ টি করে সম্পূর্ণ পর্বে এই চাল দেয়া হয়েছে।


উগ্র ঢাল, তার/ তীক্ষ্ণ শরমুখ/ রঙিন, কোপনীয়/৭+৭+৭
রেখেছে সঞ্চিত/ যা-কিছু মায়াময়,/ মধুর, গোপনীয়/৭+৭+৭
(বুদ্ধদেব বসু অনুদিত, ‘সুন্দর জাহাজ’)

মাত্রাবৃত্তে ফি-পঙক্তিতে ৭ মাত্রার ৩ টি করে সম্পূর্ণ পর্ব।


মন ভালো নেই/ মন ভালো নেই/ মন ভালো নেই/৬+৬+৬
কেউ তা বোঝে না/ সকলি গোপন/ মুখে ছায়া নেই/৬+৬+৬
চোখ খোলা তবু/ চোখ বুজে আছি/ কেউ তা দেখেনি/৬+৬+৬
প্রতিদিন কাটে/ দিন কেটে যায়/ আশায় আশায়/৬+৬+৬
আশায় আশায়/ আশায় আশায়/৬+৬
এখন আমার/ ওষ্ঠে লাগে না/ কোনো প্রিয় স্বাদ/৬+৬+৬
এমনকি নারী/ এমনকি নারী/ এমনকি নারী/৬+৬+৬
এমনকি সুরা/ এমনকি ভাষা/৬+৬
মন ভালো নেই/ মন ভালো নেই/ মন ভালো নেই/৬+৬+৬
(সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, 'মন ভালো নেই')

অসমান পঙক্তিতে ৬ এর চাল। ফি-লাইনে ৩ টি করে সম্পূর্ণ পর্ব, কখনো কখনো ২ টি।

১০
তুমি জেনেছিলে/ মানুষে মানুষে/৬+৬
হাত ছুঁয়ে বলে/ বন্ধু/৬+৩
তুমি জেনেছিলে/ মানুষে মানুষে/৬+৬
মুখোমুখি এসে/ দাঁড়ায়/৬+৩
হাসি বিনিময়/ করে চলে যায়/৬+৬
উত্তরে দক্ষিণে/৬
তুমি যেই এসে/দাঁড়ালে-/৬+৩
কেউ চিনলো না/ কেউ দেখলে না/৬+৬
সবাই সবার/ অচেনা!৬+৩
(সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, 'তুমি জেনেছিলে')

অসমান পঙক্তিতে ৬ এর চাল, মাঝে মাঝে ৩ মাত্রার অতি পর্ব।

১১
অন্ধ রেল গাড়ি/ বধির রেলগাড়ি/ অন্ধ রেল বেয়ে/ চলছে দ্রুত বেগে/৭+৭+৭+৭
দু-চোখে মরা ঘুম/ আকাশে মরা মেঘ/ সঙ্গে মরা চাঁদ/ অন্ধ আছি জেগে/৭+৭+৭+৭
অন্ধ বগিগুলো/ ক্লান্ত হয়ে গেছে/ এগিয়ে চলে তবু/ অন্ধ প্রতিযোগী/৭+৭+৭+৭
চলছে ট্রাক বেয়ে/ জানে না কোথা যাবে/ নষ্ট রেলগাড়ি/ অন্ধদূর বগী।/৭+৭+৭+৭
(হুমায়ুন আজাদ, ‘অন্ধ রেলগাড়ি’)

দীর্ঘ ২৮ মাত্রার সুষম পঙক্তিতে মাত্রাবৃত্তের ৭ এর চাল।

১২
বেণীমাধব,/ বেণীমাধব,/ তোমার বাড়ি/ যাবো/৫+৫+৫+২
বেণীমাধব,/ তুমি কি আর/ আমার কথা/ ভাবো?/৫+৫+৫+২
বেণীমাধব,/ মোহনবাঁশি/ তমাল তরু/মূলে/৫+৫+৫+২
বাজিয়েছিলে,/ আমি তখন/ মালতী ইস্/কুলে/৫+৫+৫+২
ডেস্কে বসে/ অঙ্ক করি,/ ছোট্ট ক্লাস/ঘর/৫+৫+৫+২
বাইরে দিদি/মণির পাশে/ দিদিমণির/ বর/৫+৫+৫+২
আমি তখন/ নবম শ্রেণী,/ আমি তখন/ শাড়ি/৫+৫+৫+২
আলাপ হলো,/ বেণীমাধব,/ সুলেখাদের/ বাড়ি/৫+৫+৫+২
(জয় গোস্বামী, মালতীবালা বালিকা বিদ্যালয়)

তিনটি সম্পূর্ণ পর্ব ও একটি অতি-পর্ব, ৫+৫+৫+২ এর চাল।

১৩
আমি তো আমার/ শপথ রেখেছি/৬+৬
অক্ষরে অক্/খরে/৬+২
যারা প্রতিবাদী/ তাদের জীবন/৬+৬
দিয়েছি নরক/ করে।/৬+২
দাপিয়ে বেড়াবে/ আমাদের দল/৬+৬
অন্যে কবে না/ কথা/৬+২
বজ্র কঠিন/ রাজ্যশাসনে/৬+৬
সেটাই স্বাভাবি/কতা।/৬+২
(শঙ্খ ঘোষ, ‘সবিনয় নিবেদন’)

মাত্রাবৃত্তে ৬ এর চাল, মাঝে মাঝে ২ মাত্রার অতি-পর্ব।

১৪
গত রাতে শামসুর রাহমানের ‘প্রথম গান দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে’ নিয়ে বসেছিলাম। অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করলাম কবিতাগ্রন্থটির মোট ৩৯ টি কবিতার মধ্যে অক্ষরবৃত্তে ২৬ টি, ১০ টি মাত্রাবৃত্তে আর গদ্যরীতিতে ৩ টি কবিতা লেখা। এইসব আপাত গদ্য কবিতার শরীর জুড়ে মাত্রাবৃত্তের মোহিনী নাচের যে মুদ্রা আমি দেখেছি তার কিছুটা পাঠকের সমীপে তুলে ধরতে চাই। এই দেখুন,

১৪ক
শুধু দু' টুকরো/ শুকনো রুটির/ নিরিবিলি ভোজ/৬+৬+৬
অথবা প্রখর/ ধু-ধু পিপাসার/ আঁজলা ভরানো/ পানীয়ের খোঁজ/৬+৬+৬+৬
শান্ত সোনালি/ আল্পনাময়/ অপরাহ্ণের/ কাছে এসে রোজ/৬+৬+৬+৬
চাইনি তো আমি ৷/ দৈনন্দিন/ পৃথিবীর পথে/ চাইনি শুধুই/৬+৬+৬+৬
শুকনো রুটির/ টক স্বাদ আর/ তৃষ্ণার জল৷/৬+৬+৬
(শামসুর রাহমান, ‘রূপালি স্নান’, প্রথম গান দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে)

পূর্ণ পর্বের ৬ চালের মাত্রাবৃত্ত।

১৪খ
জানি না কী করে/ কার মমতার/ মতো/৬+৬+২
শান্ত শুভ্র/ ভোর এসে ঝরে/৬+৬
জানি না কী করে/ এত নীল হয়/ রোজ/৬+৬+২
ধ্রুপদী আকাশ।/ ঘাসে এত রঙ,/ রোদে/৬+৬+২
জীবনের সাড়া,/ বিকেল হাওয়ায়/ এত নির্জন/ ভাষা/৬+৬+৬+২
জানলো না কেউ/ তবু কি করে যে/ বেঁচে আছে তারা!/ ৬+৬+৬
(শামসুর রাহমান, ‘মনে মনে’, প্রথম গান দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে)

লক্ষ্য করুন, মাত্রাবৃত্তের ছয়ের চাল, তবে ভেতরে ভেতরে সুবিধে মত জিরিয়ে নেবার জন্যে ইতস্তত ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ২ মাত্রার অতি-পর্ব (অসম্পূর্ণ পর্ব)। চালটা এরকম, ৬+৬+২, ৬+৬, ৬+৬+২, ৬+৬+২, ৬+৬+৬+২, ৬+৬+৬

১৪গ
বারো মাস তুমি/ ক্ষ’য়ে গ’লে ঝরে/৬+৬
যা কিছু পেয়েছ/ বর্ষার মেঘে/ বাতাসের স্বরে/৬+৬+৬
দিগন্ত কাঁপা/ রোদের সাড়ায়/৬+৬
শত বছরের/ কবির চোখের,/ প্রাণের তারায়/৬+৬+৬
নিত্য নিজেকে/ বলি বারবার/৬+৬
বিনিময়ে তার/৬+৬
দু’দিনের যত/ সাধারণ সুখ/৬+৬
ছাড়ো হেসে খেলে,/ শুধু এক বুক/৬+৬
বেদনার রেণু/ ছড়িয়ে তোমার/ গানের ভাষায়/৬+৬+৬
প্রগাঢ় অনেক/ অজানা আশায়/৬+৬
ভুলে নিয়ে ছেঁড়া/ হৃদয়ের ক্ষত/৬+৬
যেই ঝড় আজো/ না চাইতে আসে/৬+৬
মুছে ফেলে তাকে/ মেনে নাও এই/ বন্ধ্যা আকাশে/৬+৬+৬
তারা ফোটানোর/ ব্রত।/৬+২
(শামসুর রাহমান, ‘যুদ্ধ’, প্রথম গান দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে)

টানা পূর্ণ পর্বের ৬ মাত্রা, শুধু স্তবকের শেষে এসে ২ মাত্রার অতি-পর্ব।

১৪ঘ
গলায় রক্ত/ তুলেও তোমার/ মুক্তি নেই/ ৬+৬+৫
হঠাৎ-আলোয়/ শিরায় যাদের/ অবির্ভাব/৬+৬+৫
আসবেই ওরা/ ঝড়ের পরের/ পাখির ঢেউ/৬+৬+৫
(শামসুর রাহমান, ‘আত্মজীবনীর খসড়া’, প্রথম গান দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে)

৬ চালের মাত্রাবৃত্ত আর অতি-পর্বটি ৫ মাত্রার।

১৪ঙ
জেনেছি কাকে চাই,/ কে এলে চোখে ফোটে/৭+৭
নিমেষে শরতের/ খুশির জ্যোতিকণা;/৭+৭
কাঁপি না ভয়ে আর/ দ্বিধার নেই দোলা-/৭+৭
এবার তবে রাতে/ হাজার দ্বীপ জ্বেলে/৭+৭
সাজাব তার পথ,/ যদি সে হেঁটে আসে/৭+৭
(শামসুর রাহমান, ‘পূর্বরাগ’, প্রথম গান দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে)

মাত্রাবৃত্তের সবচেয়ে বড় অর্থাৎ সাতের চাল।

১৪চ
মানিনি জীবন/ সমুদ্র সন্ধানে/৬+৬+২
চোরাবালিতেই/ পরম শরণ/ নেবে।/৬+৬+২
আশার পণ্যে/ পূর্ণ জাহাজ/ সে-ও/৬+৬+২
ডোবা পাহাড়ের/ হঠকারিতায়/ ঠেকে/৬+৬+২
হবে অপহৃত—/ ভাবিনি কখনো/ আগে।/৬+৬+২
(শামসুর রাহমান, ‘নির্জন দুর্গের গাঁথা’, প্রথম গান দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে)

৬ চালের মাত্রাবৃত্ত আর অতি-পর্বটি ২ মাত্রার।

১৪ছ
অ্যাপোলো তোমার/ মেধাবী হাসির/ সোনালি ঝরনা/৬+৬+৬
শিশু পৃথিবীর/ ধুসর পাহাড়ে/ এখনও কি র’বে/ লুপ্ত?৬+৬+৬+৩
আমরা এখানে/ পাইনি কখনো/ বন্ধু তোমার/৬+৬+৬
সোনালি রুপালি/ গানের গভীর/ ঝঙ্কার,/৬+৬+৪
শাণিত নদীর/ নিবিড় বাতাস/ মানবীর মতো/ ডাকে চেতনার/ রাত্রে,৬+৬+৬+৬+৩
তবুও এখানে/ আমরা সবাই/ বিবর্ণ রোগী/ পৃথিবীর পথে,/৬+৬+৬+৬
হৃদয়ের রঙ/ মনের তীক্ষ্ণ/ ক্ষমতা ফেলেছি/ হারিয়ে।/৬+৬+৬+৩
(শামসুর রাহমান, ‘অ্যাপোলোর জন্যে’, প্রথম গান দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে)

৬ চালের মাত্রাবৃত্ত আর অতি-পর্ব ৩ মাত্রার। শুধু চতুর্থ চরণের অতি-পর্বটি ৪ মাত্রার। উল্লেখ্য যে, অতি-পর্বে মাত্রাফের করা রীতিসিদ্ধ।

১৪জ
মদের নেশা খাটি/সারা জাহানে/৭+৫
বাকি যা থাকে তার/ বেবাক ঝুট।/৭+৫
বাঘিনী যেন সেই/ মেয়েমানুষ/৭+৫
যার আঁধারে কাল/ কেটেছে রাত/৭+৫
(শামসুর রাহমান, 'কবর খোঁড়ার গান',প্রথম গান দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে)

সাত-পাঁচ, ভাবছেন কি? এগুলো গদ্য কবিতা নয়, আলবৎ মাত্রাবৃত্ত।

অনেক হলো, আর উদাহরণ দিয়ে বিরক্তি বাড়াবো না। পাঠকের কাছে মন খুলে মন্তব্য আসা করছি। সেই সাথে নানা ধরণের প্রশ্ন ও অভিমত।


মন্তব্য

তানিম এহসান এর ছবি

হাসি :-)

রোমেল ভাই, ১ নাম্বারের অষ্টম লাইনে ‘শূণ্যতার’ ছয় মাত্রা মেলাতে পারছিনা, বারবার মনে হচ্ছে পাঁচমাত্রা, শূ/ন/ন/তা/র। একটু সাহায্য করবেন ভাইয়া।

ভাইয়া আপনার জন্য একটা গান, আনুশেহর গলায় শোনার পর থেকে কয়েকটা দিন ধরে মাথার ভেতর বেজে চলেছে! http://youtu.be/XO7sJ8DCemM

জিরাফ এর জন্য আদর হাসি আর রোদেলার জন্য শরতের নীলাকাশ হাসি

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

সাবাস, একেই বলে মনযোগী ছাত্র। এইটাই তো আশা করেছিলাম। শেষ ৩ লাইনে ৬+৫, ঠিক করে দিলাম।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

তানিম এহসান এর ছবি

ভাইয়া, ক্যাটেগরিতে ব্লগরব্লগর কোনভাবেই মানায়না।
তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে গেলাম এই অপপ্রয়াস এর বিরুদ্ধে রেগে টং

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

জানাও এবার তীব্র প্রতিবাদ
তোল দলে দলে মুষ্ঠিবদ্ধ হাত!

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

তানিম এহসান এর ছবি

ক্যাটেগরি বদল হোক। এর আগে একবার কবিতার নাম নিয়ে একজন খুব গড়াগড়ি খেয়েছিলো দেঁতো হাসি এবার ক্যাটেগরি নিয়ে কেউ উল্টো মত দেয় কিনা দেখার অপেক্ষায় থাকলাম, কুরুক্ষেত্র বেধে যাবে বলে দিচ্ছি রেগে টং

(আমাদের আয়নামতি আপা তার উয়িদ লাঠি নিয়ে কোথায় যে গেলেন! তিনি সাথে থাকলে একটু বল ভরসা পাওয়া যেত, উনিতো আবার বেড়াল চালানও দিতে পারেন চোখ টিপি মানুষটার বহুদিন দেখা নেই।)

(ঘেঁয়াও)

অপছন্দনীয় এর ছবি

কোবতের মধ্যে এত অঙ্ক? চিন্তিত

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

বড়ই চিন্তার বিষয়। ভাবছি, কোবতের এই সার্জারী কতজনারই না বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়াবে! ভবিষ্যতে অঙ্ক কমাবার চেষ্টা থাকবে। হ্যাঁ, অঙ্ক নিয়ে একটা চমৎকার ছড়া আছে,

অঙ্ক নিয়ে বসলে আমার কখন কী যে হয়
টেবিলটাও পর হয়ে যায় বইগুলো সব ভয়।
ভয়ের চোটে ভাবতে থাকি শহর ভেঙে কেউ
দালান কোঠা বিছিয়ে দিয়ে তোলে ক্ষেতের ঢেউ।
রাস্তাগুলো নদী এবং গলিরা সব খাল
ইলেক্ট্রিকের খাম্বাগুলো পাল্টে হলো তাল।
মোটরগাড়ি গরুর পালে হাম্বা তোলে হাঁটে
পুলিশগুলো গুলিস্তানে নিড়ানি ঘাস কাটে।
আব্বা হলেন কাকতাড়ুয়া আম্মা হলুদ পাখি
বুবুরা সব ভূঁইকুমড়ো পাতায় ঢেকে রাখি।

সবাই যখন পাল্টে গেছে নিজের ঘরে নাই
আমিই তখন ইচ্ছে মতন খোকন থেকে যাই।
কেউ বলে না আঁক কষতে কেউ বলে না লেখ্
কেউ ধরেনা কানের লতি কেউ বলে না শেখ্।
ঢাকা শহর ঢাকা শহর সবুজ হয়ে যাও
কলেজগুলো সর্ষে বাগান, ভার্সিটিতে লাউ।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

রিশাদ_ময়ূখ এর ছবি

কাজের টিউটরিয়াল

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

ধন্যবাদ রিশাদ ময়ূখ, কাজে লাগলেই শ্রম সার্থক!

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

মিশা এর ছবি

ভাল লেগেছে।
আমি জসীম উদ্দীনের "কাল সে আসিবে" কবিতাটা খুজতেসি। কিন্তু পাচ্ছি না। যদি কোন লিঙ্ক আপনার জানা থাকে তাহলে প্লিজ শেয়ার করবেন।

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

ধন্যবাদ মিশা, এই নিন 'কাল সে আসিবে'।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

প্রসঙ্গটা জরুরি। কিন্তু উপস্থাপনাটা বেশ খটমটো
ছন্দে যাদের ধারণা প্রাথমিক তাদের বুঝতে ঝামেলা হতে পারে
একটু অন্যভাবে তরল আকারে করেন না

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

ধন্যবাদ মাহবুব লীলেন,
এই মতামতটা খুব জরুরী ছিল। উপস্থাপনাতে রসের যে খামতি আছে সেটা আগেই বুঝতে পেরেছিলাম। পছন্দনীয়ের মন্তব্যে নিশ্চিত (confirm) আর আপনার মন্তব্যে সুনিশ্চিত (reconfirm) হলো। পরের পর্বগুলোতে যথাসাধ্য চেষ্টা করবো যাতে সহজিয়া হয়। আপনার কাছে আইডিয়া চাইছি, আইডিয়া চাইছি সকল পাঠকের কাছে। হাসি
প্রথম পর্বটা পড়েছেন?

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

প্রথম পর্বটাও পড়েছি
সবই ঠিক আছে। কিন্তু ছন্দ জিনিসটা যখন কান নির্ভর; মানে শুনে বুঝতে হয়; অক্ষর গুণে নয়
লেখার সময় হয়তো অক্ষর গোণা কিছুটা কাজ দেয়। কিন্তু তার খুবই প্রাথমিক পর্যায়ে
সেক্ষেত্রে এটারে সিলেবল ধরে ব্যাখ‌্যা করা যায় কি না দেখেন

অক্ষরবৃত্ত-মাত্রাবৃত্ত-স্বরবৃত্ত;
এইভাবে বাংলা ছন্দকে ব্যাখ্যা করা আর নামকরণের সময় আমার ধারণা প্রবোধচন্দ্র সেন লিখিত শব্দকে বিবেচনা করেই করেছিলেন। যদিও পরে তিনি নিজেও এই নামগুলো থেকে সরে এসে অন্য নাম আর অন্যভাবে ছন্দের ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন কিন্তু পরবর্তীতে দেয়া তার নামগুলো আর কেউ গ্রহণ করেনি

ফলে এখনও ছন্দের গ্রামার রয়ে গেছে লিখিত শব্দের মাত্রা-গণনা ভিত্তিক; উচ্চারিত শব্দের সিলেবল ভিত্তিক নয়; যার কারণে এখনো লাইনের মাঝখানে দাগ টেনে টেনে আর যুক্তাক্ষরে কয়টা অক্ষর আছে তা গুণে গুণেই ছন্দের পাঠ দিতে আর নিতে হয়

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

ব্যস্ততার মধ্যেও আপনি যে সময় করে প্রথম পর্বটাও পড়েছেন সেজন্য ধন্যবাদ জানাই। প্রথম পর্বের শুরুতেই বলেছি, ছন্দ নিয়ে লিখতে বসার পেছনে আমার দু'টো উদ্দেশ্য ছিল,

প্রথমটি হলো, পাঠক ও লিখিয়েদের মধ্যে যারা এ বিষয়ে আগ্রহী তাদের জন্য একটা দিলখোলা মিথস্ক্রিয়ার পরিবেশ সৃষ্টি করা। আর দ্বিতীয়টি হলো, যাঁরা এ বিষয়ে সম্যক জ্ঞান রাখেন, অভিজ্ঞতার ঝুলিতে যাঁদের সঞ্চয় পর্যাপ্ত, তাদের কাছ থেকে নিজের ভুল-ভ্রান্তিগুলো শুধরে নেবার একটা সুযোগ তো পাওয়া যাবে।

আমার খুব ভাল লাগছে এ কারণেই যে আমার দ্বিতীয় উদ্দেশ্যটিও অর্জিত হতে যাচ্ছে।
আপনি লিখেছেন,

কিন্তু ছন্দ জিনিসটা যখন কান নির্ভর; মানে শুনে বুঝতে হয়; অক্ষর গুণে নয় লেখার সময় হয়তো অক্ষর গোণা কিছুটা কাজ দেয়। কিন্তু তার খুবই প্রাথমিক পর্যায়ে সেক্ষেত্রে এটারে সিলেবল ধরে ব্যাখ‌্যা করা যায় কি না দেখেন

প্রথম পর্বের শেষটায় আমি লিখেছি,

পরিশেষে পিঠে বালিশ বেঁধে নিতে চাই। আমি জানি ছন্দ বিচারে চোখের চাইতে কানের উপর নির্ভর করতে হয় বেশী। তাই মাত্রাবৃত্তের মাত্রা পরিমাপের আলোচনায় হয়ত অক্ষর বিচারের চাইতে ধ্বনি বিচারই শ্রেয় হত, যথাযথ হত। কিন্তু আমি আলোচনার শুরুতেই ধ্বনিবিচারের ভারে পাঠককে ভারাক্রান্ত করে তুলতে চাই নি। আলোচনা শুরু করতে চেয়েছি একটি চেনা জগত থেকে। সকলেই তো অক্ষর জ্ঞানসম্পন্ন। তাই অক্ষর দিয়েই শুরু করতে চেয়েছি এই আলোচনা। স্বরবৃত্তের আলোচনায় যখন যাব, তখন হয়ত ধ্বনিকে এড়িয়ে যাবার কোন উপায় থাকবে না। সে সময় আবার না হয় মাত্রাবৃত্তকে ধ্বনির বিচারে বাজিয়ে দেখা যাবে।

রুদ্ধদল (closed syllable) ও মুক্তদল (open syllable) কি, তা সহজ করে বলে নিয়েও এই আলোচনা শুরু করা যেত। হয়ত কয়েকটি শব্দের ভেতরে রুদ্ধদল ও মুক্তদল পৃথক করে দেখাবার প্রয়োজন হত। সুবিধে হত এই যে, প্রথমেই পাঠককে কানের বিচারের উপর আস্থাশীল করে তোলা যেত। মাত্রাবৃত্ত ও স্বরবৃত্তকে পাশাপাশি রেখে একটি তুলনামূলক বিচারও করা যেত তাৎক্ষনিকভাবে। কিন্তু অক্ষর গণনার কাজটি কি পুরোপুরি এড়িয়ে যাওয়া যেত? যেত না। কারণ, বাংলাভাষার সবচেয়ে বনেদী ছন্দটি অর্থাৎ অক্ষরবৃত্তকে বুঝতে হতো বর্ণ/অক্ষর গুনে গুনেই।

অক্ষরবৃত্ত-মাত্রাবৃত্ত-স্বরবৃত্ত;
এইভাবে বাংলা ছন্দকে ব্যাখ্যা করা আর নামকরণের সময় আমার ধারণা প্রবোধচন্দ্র সেন লিখিত শব্দকে বিবেচনা করেই করেছিলেন। যদিও পরে তিনি নিজেও এই নামগুলো থেকে সরে এসে অন্য নাম আর অন্যভাবে ছন্দের ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন কিন্তু পরবর্তীতে দেয়া তার নামগুলো আর কেউ গ্রহণ করেনি

ফলে এখনও ছন্দের গ্রামার রয়ে গেছে লিখিত শব্দের মাত্রা-গণনা ভিত্তিক; উচ্চারিত শব্দের সিলেবল ভিত্তিক নয়; যার কারণে এখনো লাইনের মাঝখানে দাগ টেনে টেনে আর যুক্তাক্ষরে কয়টা অক্ষর আছে তা গুণে গুণেই ছন্দের পাঠ দিতে আর নিতে হয়

আপনার মতের প্রথম অংশটুকুর সাথে সহমত কিন্তু দ্বিতীয় অংশটুকুর সাথে ভিন্নমত পোষণ করি।
হ্যাঁ, সেন মহাশয় যে পরিমান নিষ্ঠা ও আন্তরিকতা নিয়ে ছন্দের উপর কাজ করে গেছেন, রচনা করেছেন 'ছন্দ পরিক্রমা', তা নিঃসন্দেহে শ্রদ্ধার্হ। তিনি যে মনে করেছিলেন অক্ষরবৃত্ত নামের মধ্যে এই ছন্দের চরিত্র-পরিচয় ঠিক ধরা পড়েনি, সেটিও ঠিক। পরবর্তীতে তাই তিনি অক্ষরবৃত্তকে নাম দিয়েছিলেন মিশ্রকলাবৃত্ত বা তানপ্রধান ছন্দ। মাত্রাবৃত্তকে নাম পাল্টে বলেছিলেন কলাবৃত্ত বা ধ্বনিপ্রধান ছন্দ আর স্বরবৃত্তকে বলেছিলেন দলবৃত্ত বা শ্বাসঘাতপ্রধান ছন্দ। কিন্তু পরবর্তীতে দেয়া নামগুলো আর কেউ গ্রহণ করেনি।

কিন্তু এজন্যই যে ছন্দ বিবেচনা রয়ে গেছে লিখিত শব্দের মাত্রা গণনা ভিত্তিক তাই বা মেনে নিই কী করে? 'মাত্রা'কেই 'কলা' নামে অভিহিত করেছিলেন প্রবোধচন্দ্র, অনেকটা ইংরেজী 'মিটার'-এর আদলে। উচ্চারনের ক্ষুদ্রতম একেকটা অংশই 'মাত্রা' বা 'কলা'। কিন্তু দেখুন, অক্ষরবৃত্তের নাম পাল্টে নতুন নাম রাখবার ক্ষেত্রেই বিষয়টি তাঁকে বিপাকে ফেলে দিয়েছিল। 'মাত্রা'-কে আবার প্রকারভেদের মধ্যদিয়ে নিয়ে যেতে হয়েছে। বলতে হয়েছে 'মাত্রা' বা 'কলা'র মিশ্রতার কথা। ছন্দের রীতিভেদে মাত্রা যে বিভিন্ন রকম হতে পারে, সেটি কবুল করতে হয়েছে। সুতরাং তাঁর দেয়া নাম গ্রহণ করলেও ইংরেজী 'মিটার' কিম্বা 'সিলেবল' দিয়ে অক্ষরবৃত্তকে যথাযথভাবে মাপা যেত না। অক্ষরবৃত্তকে মাপতে হতো সেই সনাতনী অক্ষরের বিচারেই। স্বরবৃত্ত কিংবা মাত্রাবৃত্তের বিচারে কিন্তু এই বিপত্তিটি ঘটে নি। সেখানে 'সিলেবল' ভিত্তিক পরিমাপ পদ্ধতি বরং নিখুঁত ও অধিকতর গ্রহনযোগ্য। কেন? কারন হলো, ভাষার নিজস্বতা ও কালানুক্রমিক বিবর্তনের ইতিহাস। মোটাদাগে বলি, বাংলা কাব্যভাষার বিবর্তন ও বিস্তৃতি হয়েছে পয়ারে পয়ারে। পুঁথিপাঠের কথা ভাবুন, টেনে টেনে পড়ায় সেখানে একই শব্দকে বিভিন্নভাবে উচ্চারণ করা গেছে, কখনো ভ্রুতলয়ে কখনো ধীরলয়ে। ফলে শব্দের মাত্রা আর সিলেবলের পরিধিতে আটকে থাকেনি।

আপনার সাথে মত বিনিময় খুবই ফলপ্রসূ ও আনন্দদায়ক হলো!

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

স্বরবৃত্ত এবং মাত্রাবৃত্ত ধ্বনি দিয়ে ব্যাখ্যা খুবই সহজ
প্রথমটা সিলেবল দিয়ে আর দ্বিতীয়টা স্বরধ্বনি আর ব্যঞ্জনধ্বনি দিয়ে অতি সহজেই ব্যাখ্যা করা যায়

কিন্তু অক্ষরবৃত্তে এসে গোলমাল লেগে যায়

বাংলাভাষার সবচেয়ে বনেদী ছন্দটি অর্থাৎ অক্ষরবৃত্তকে বুঝতে হতো বর্ণ/অক্ষর গুনে গুনেই।

বিষয়টা স্বীকার করে একটু অন্যদিকে আপনার চোখ ঘুরাই
এই বনেদি ছন্দটা প্রাচীন কাল থেকে বাংলা গানে ব্যবহার হয়ে আসছে
গীতিকাররা কিন্তু বর্ণগুণে লেখেন না। গেয়ে গেয়ে লিখেন
পিসি সেন তার ছন্দ আলোচনার বেশিরভাগ দৃষ্টিই রেখেছিলেন রবীন্দ্রনাথের দিকে
লোকবাংলার গীতিকারদের দিকে নজর দিলে হয়তো তিনি এর কোনো সূত্র পেয়ে যেতেন; যা কবিতাও ব্যবহার করা সম্ভব

এটা কিন্তু স্বরধ্বনিকে কেন্দ্র করে চলে; এতে ঝামেলাও নাই (ওপেন সিলেবলে)। কিন্তু ঝামেলা আসে রুদ্ধদলে;
রুদ্ধদল একেক সময় একেক মাত্রার বৈশিষ্ট্য পায় এখানে। কিন্তু তাও হিসেবে ফেলা যে খুব কঠিন তা কিন্তু মনে হয় না

বাংলায় দীর্ঘ-ই-উ লিখিতভাবে আছে। সোজাভাবে তাকালে উচ্চারণে এদের খুঁজে পাওয়া যায় না
বাংলায় কিন্তু উচ্চারণে দীর্ঘ-অ-আ-ও-এ/এ্যা আছে; বর্ণে নেই

বাংলা উচচারণে মনো-সিলেবিক ওয়ার্ডে স্বরধ্বনি সব সময় দীর্ঘ আকারে উচ্চারতি হয় (আজ- বট- বন- ইট- এক...)

আমার হিসেবে অক্ষরবৃত্ত এই বৈশিষ্ট‌্যটাই মেনে চলে; যেখানে বলা হয় শেষের শব্দ ক্লোজ সিলেবল হলেও দুই মাত্রা ইত্যাদি। মূলত শেষের শব্দ মনোসিলেবিক শব্দের মতো উচ্চারিত হয় বলে একটু দীর্ঘ হয় (দ্বিস্বরের ক্ষেত্রেও বোধহয় এই হিসাব চালানো যেতে পারে)

দেখেন তো। যেহেতু কাজ করছেন বিষয়টা নিয়ে
এভাবে ব্যাখ্যাগুলোকে সহজ করা যায় কি না

০২

আমি কিন্তু কোনোভাবেই মানতে রাজি নই যে অক্ষরবৃত্ত ধ্বনি দিয়ে ব্যাখ্যা করা অসম্ভব

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

চমৎকার!
আপনি যে 'মাষ্টার কী'-এর কথা লিখলেন, সেটি দিয়ে অন্য দুটি ছন্দের পাশাপাশি অক্ষরবৃত্তকে 'সিলেবিক' মাপে মাপা সম্ভব। মুক্তদল সবসময় এক মাত্রা পাবে। আর রুদ্ধদল শব্দের শুরুতে ও মধ্যে থাকলে এক মাত্রা, শেষে থাকলে দু'মাত্রা। এবারে নিচের উদাহরণ দু'টি দেখি,


শস্যের খেতের পাশে আজ রাতে আমাদের জেগেছে পিপাসা।
(জীবনানন্দ দাশ, 'পিপাসার গান')


নিড়ানো হয়েছে মাঠ পৃথিবীর চারিদিকে
শস্যের খেত চষে চষে
গেছে চাষা চলে;
(জীবনানন্দ দাশ, 'মাঠের গল্প : কার্তিক মাঠে চাঁদ')

সিলেবিক বিশ্লেষণে 'শস্যের' > শোস্+ সের্ > ১+২=৩ মাত্রা।

এ হিশেবে প্রথম উদাহরণে মাত্রাবিন্যাস কি দাঁড়ালো, ৩+৩+২+২+২+৪+৩+৩=২২ মাত্রা। আলবৎ ঠিক!

কিন্তু, দ্বিতীয় উদাহরণে ৩+২+২+২=৯ মাত্রা। বুঝাই যাচ্ছে এই পংক্তিতে জীবনানন্দ 'শস্যের' শব্দটির রুদ্ধদল দুটিকে স্থান নির্বিশেষে ২ টি করে মোট ৪ মাত্রার মর্যাদা দিয়েছেন। অর্থাৎ, অক্ষর গুনেছেন এভাবে 'শসসের', পুরো পংক্তিটি পড়লে কোন ছন্দপতনও টের পাচ্ছি না। ফলে, মোট মাত্রার সংখ্যা ১০ তে উত্তীর্ণ হয়ে অক্ষরবৃত্তের চরিত্রকে ধরে রাখছে। এ রকম আরো অনেক উদাহরণ আছে। ছন্দোমুক্তির ক্ষেত্রে অক্ষরবৃত্ত অনেক স্বাধীনতা দেয়। আর তাই সবক্ষেত্রে একে সিলেবিক বিশ্লেষণে বিচার সংগত নয়।

আমি কিন্তু কোথাও বলিনি যে অক্ষরবৃত্তকে ধ্বনি দিয়ে ব্যাখ্যা করা অসম্ভব। বলেছি,

ইংরেজী 'মিটার' কিম্বা 'সিলেবল' দিয়ে অক্ষরবৃত্তকে যথাযথভাবে মাপা যেত না।

আপনার উপর শ্রদ্ধা বেড়েই যাচ্ছে।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

মৃত্যুময় ঈষৎ(Offline) এর ছবি

মুক্তদল সবসময় এক মাত্রা পাবে। আর রুদ্ধদল শব্দের শুরুতে ও মধ্যে থাকলে এক মাত্রা, শেষে থাকলে দু'মাত্রা।

ভাইয়া, আমি আমার আগের কবিতাটিতে ঠিক এইভাবেই অক্ষরবৃত্তকে ধরে লিখেছিলাম। বর্ণ গুণে গুণে চলনটা জানা ছিল না। পরে আপনার কাছ থেকেই জেনেছিলাম। তাহলে কি ধরে নিতে পারি আমার কবিতাটি ঠিক ছিল?

সমস্যাটা করে ফেলেছি উচ্চারণের সাথে বর্ণে। অক্ষরবৃত্ত ভুলে গেছিলাম দেখছি। 'ভয়শূন্য' এ যে ভুল একি ভুল 'দণ্ডায়মান' এ হয়েছে। হবে ভ+য়+শূন্+নো = ৪, আমি উচ্চারণে সিলেবল ভয়্+শূন্+নো ধরে তালগোল পাকিয়ে ফেলেছি- হয়ে গিয়েছিল ৩। তদ্রূপে দণ্(১)+ডায়্(১)+মান্(২)=৪ ধরে ৬ মিলিয়েছি। অথচ হবে দণ্+ডা+য়+মা+ন=৫, হয়ে গেছে ৭, হোঁচট খেল।

যেমন "মুক্তদল সবসময় এক মাত্রা পাবে। আর রুদ্ধদল শব্দের শুরুতে ও মধ্যে থাকলে এক মাত্রা, শেষে থাকলে দু'মাত্রা।" এই নিয়মে দণ্ডায়মান কিন্তু ৪ মাত্রা ধরা যায়ঃ দণ্(প্রথমে, ১)+ডায়্(মাঝে, ১)+মান্(শেষে, ২)=৪, তাতে আমার দরকারী ৬ মাত্রা লিখেছিলাম।

কিন্তু সমস্যা হল বর্ণ গুণে করলে যা হয়- উপরের নিয়মে করলে তা হয় না কেন? আসলে তূল্যমূল্য বিচারে কোন নিয়মটি সঠিক, না একটিতে লিখলেই হবে? কনফিউজ্ড!!! চিন্তিত

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

তুমি যদি খুব ভালো করে খেয়াল কর, তবে দেখবে তোমার কবিতার কোথাও তুমি যে অক্ষরবৃত্তে ভুল করেছ সেটি কিন্তু আমি আমার মন্তব্যের কোথাও বলিনি। জিজ্ঞাসা করেছি যে, "পয়ার-বন্ধে মাত্রা কমালে কেন?"

হিমাঙ্কের বালুঘর/ বদ্ধমুখ হয়েছিল পায়,
শূন্যতার বেলাভূমে/ কৃশতায় জমেছিল কিছু

সুনিবিড় ছায়াঘরে/ জীবনেরা গড়েছিল স্তূপ,
ঝরনার প্রিয়সখা/ চিরবাধ্য অনুমিত প্রজা

কারন তুমি উপরের চারটি চরণের মাত্রা ৮+১০ থেকে কমিয়ে নিচের চারটি চরণে ৮+৬ এ নিয়ে আশায় মহাপয়ার পয়ারে পরিবর্তিত হয়েছিল।

মেঘপুঞ্জ কালিরেখা/ আদিগন্ত এঁকে
স্রোতে সাধে ঝিনুকের/ ফেনাহার হ্লাদ-

পথ ছেড়ে নিঃসঙ্গতা/ দাঁড়ায় নি একা
অনুক্ষণে রিক্ত এসে/ ভিজিয়েছে গাঢ়

কিন্তু তুমি যে তোমার কবিতায় অক্ষরবৃত্তের হিশেবে ভুল করেছ সেটি কি কোথাও বলেছি? না, বলিনি।

"চিত্ত যেথা ভয়শূন্য উচ্চ যেথা শির।"
এই পংক্তিটির বিশ্লেষনে তুমি অক্ষরবৃত্তের হিশেবে ভুল করেছিলে সেটি বলেছি। তুমি লিখেছ,

'ভয়শূন্য' তে অক্ষরবৃত্তে ৪ মাত্রা পেতে কষ্ট হচ্ছে রোমেল ভাই, সমাসনিষ্পন্ন ধরলে ভয়্(১) শূন্(১) নো(১) = ৩ মাত্রা পাই, বিচ্ছিন্ন করে 'ভয় শূন্য' ধরলে ভয়্(২) শূন(১) নো(১) = ৪ মাত্রা। আমি কি ঠিক আছি?

আমি বলেছি, "উহু, অক্ষরবৃত্তের হিসেবে তুমি সঠিক নও।" এবারে ধ্বনি দিয়েই বিচার করে দেখাই কোথায় তোমার ভুল হয়েছে।

চিত্(১)তো(১) যে(১)থা(১) ভ(১)য়(১)শূন্(১)নো(১) উচ্(১)চো(১) যে(১)থা(১) শির(২)।

হ্যাঁ, 'ভ(১)য়(১)' হবে। কারণ অন্তঃস্থ অ-এর উচ্চারণে জিহবার দেয়াল আলগা হয়ে বাতাস বেরিয়ে যাচ্ছে।
তুমি লিখেছ, সমাসনিস্পন্ন ধরলে 'ভয়্(১)'। এটি ভুল, কারন আমি 'ভয়'-কে ক্লোজড সিলেবল ভাবতে ভয় পাই। আরো লিখেছ, বিচ্ছিন্ন করে ধরলে ভয়্(২)। এটি তো ধ্বনিবিচারেই ভুল, কারন শব্দের শুরুতে কিম্বা মাঝে ক্লোজড সিলেবল ১ মাত্রার বেশী পায় না।

এবার আসি 'দণ্ডায়মান'-এ। আগেই বলেছি অক্ষরবৃত্তের শরীরে লেগে থাকে এলানো শিথিলতা। তাই এই শব্দটির উচ্চারণ ও মাত্রা হবে, দণ্(১)ডা(১)য়ো(১)মান্(২)=৫ মাত্রা। দণ্(১)+ডায়্(১)+মান্(২)=৪ নয়।

আমি বুড়ো হয়েছি, চোখ চালসে হয়েছে। কানও হয়ত আগের মত খাড়া নেই। ভুল আমার হতেই পারে। তবে অক্ষরবৃত্তের বিচারে ধ্বনি ও অক্ষর দুটোকেই ব্যবহার করো, শুধু ধ্বনিকে প্রাধান্য দিলে ঠকবার সম্ভাবনা আছে। জীবনানন্দ 'ঋণ'-এর সাথে 'তৃণ'-কে অন্ত্যমিল ও মধ্যমিল হিশেবে ব্যবহার করেছেন। সেখানে তুমি ওদের জন্য ক'মাত্রা বরাদ্দ করবে। অন্ত্যমিলের ক্ষেত্রে না হয় একটা ফয়সালা করেই দিলে, মধ্যমিলে?

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

মৃত্যুময় ঈষৎ(Offline) এর ছবি

না না আগে ভুল বলেছেন সেটা বলি নি তো!!! সমস্যা হয়েছে অক্ষরবৃত্ত অনেক আগের পড়া, আমি শিখেছিলাম ঐ নিয়মটাই(অসম্পূর্ণ ভাবে)- তাই আমারি এতো জিজ্ঞাসা, এতো ভুল হয়। ঐ নিয়মেই কবিতাটি লিখেছিলাম। পরে বর্ণের কথা শুনে আরেকটি উপায় আছে জেনেছিলাম। অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্করী আর কী।

অন্তঃস্থ অ-এর উচ্চারণে জিহবার দেয়াল আলগা হয়ে বাতাস বেরিয়ে যাচ্ছে। কথাটি সত্য। বহুকাল আগের ব্যাকরণপাঠও মনে পড়ল, সমসানিষ্পন্ন হলে অখণ্ডোচ্চারণ করতে হয়(সম্ভবত এমনই ছিল)। "ভয়োশূন্ নো" অর্থাৎ ভ+য়ো+শূন্+নো যা ৪ মাত্রা। দণ্ডায়মান এর শুদ্ধ(ব্যাকরণিক) উচ্চারণ 'দণ্ডায়োমান' যেমন 'চলোমান', 'বলোবান', এগুলো মতুপ্ আর বতুপ্ তদ্ধিত প্রত্যয়ান্ত(যতদূর মনে আছে)। সমাসনিষ্পন্ন যদিও নয় তবু 'ধনবান' এর মাঝের 'ন' এ ও-কার আসবে উচ্চারণে হবে 'ধনোবান'। ভয়শূন্যের অখন্ডোচ্চারণ ভুলে গিয়েছিলাম, তবে দণ্ডায়মান এর শুদ্ধোচ্চারণটি জানতাম। জেনেও আমি চাচ্ছিলাম দণ্ ডায়্ মান্ উচ্চারণ করতে/করাতে, তাতে কবিতার অর্থসহতা থাকে, মাত্রা ৬ থাকে। বর্ণ গুণে ধরলে কিছুতেই ৪ মাত্রায় আনা যায় না।

ভ১ য়ো১ শূন্১ নো১=৪ মাত্রা
দণ্১ ডা১ য়ো১ মান্২=৫ মাত্রা। আপনি অবশ্যই সঠিক।

আমার ধ্বনির সাহায্য নেওয়াটা সহজ মনে হয়(যদিও ভুল করার সমূহ সম্ভাবনা আছে আমার স্পষ্টতঃ)।
--------------------------------------------
ঋণ যদি পৃথক আর একক শব্দ হিসেবে আসে সেক্ষেত্রে উচ্চারণ 'ঋণ্'। আমার কাছে মনে হয়েছিল এই রুদ্ধ দলটিকে প্রথমে আছে যেমন ধরা যায় তেমনি শেষে আছে তাও ধরা যায়। শেষে আছে ধরে ২ মাত্রা দিতে চাই। তৃণ এর উচ্চারণ তৃ১ ণো১ দুটোই মুক্ত দল, ২ মাত্রা পেতে কোন সমস্যায়ই পড়বে না।

এই পোস্টে শেষ বারের মতো কবিকে বিরক্ত করবোঃ 'ঋণ্' রুদ্ধদলটি শব্দের শেষে আছে ধরা যাবে কি?
--------------------------------------------
পুনঃ পুনঃ বিরক্ত করার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী।

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

মোদ্দা কথা, অক্ষরবৃত্তের চালচলন বড়ো রহস্যময়ী। তাই ওকে নমনীয় দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে হয়। সবসময় নিয়মের নিগড়ে আষ্টে-পিষ্টে বেধে ফেলা চলেনা। প্রতিদানে অক্ষরবৃত্ত দেয় গীতল উন্মুক্তি।

আমি তো এ কারনেই 'ঋণ' ও 'তৃণ'-এর উদাহরণ দিয়েছিলাম। পৃথক শব্দ হিশেবে 'ঋণ'-কে কোন প্রকৃতির ক্লোজড সিলেবল হিশেবে ভাববে? শব্দের শেষে, প্রথমে নাকি মধ্যে? শেষে ভাবলে ২ মাত্রা আদায় করে নেবে, প্রথমে কিম্বা মধ্যে ভাবলে একমাত্রা। কি, ঝামেলা? না, ঝামেলার সাথে সাথে সে কিন্তু কবিকে ফ্লেক্সিবিলিটিও দিচ্ছে। কবি শব্দটিকে ১ কিম্বা ২ উভয় মাত্রা হিশেবেই ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছেন। 'তৃণ'-ও ঠিক তেমনি।

'তৃণ'-এর উচ্চারণ যে 'তৃ১ ণো১' আর দুটোই যে মুক্ত দল, তাই ২ মাত্রা পেতে যে কোন সমস্যায়ই পড়বে সবই মানলাম। কিন্তু অন্ত্যমিল কিংবা মধ্যমিল হিশেবে 'ঋণ' এর বিপরীতে 'তৃণ'-কে উচ্চারণ করো তো। 'তৃ ণো' নয় বরং তৃণ্ উচ্চারণ করতে হচ্ছে। তাহলে রুদ্ধদল হিশেবে ওর কয় মাত্রা কপালে জুটবে?

এই পোস্টে শেষ বারের মতো কবিকে বিরক্ত করবোঃ 'ঋণ্' রুদ্ধদলটি শব্দের শেষে আছে ধরা যাবে কি?

বিরক্ত হচ্ছি না তো! প্রশ্নের উত্তরে বলবো, কেন নয়?

পুনঃ পুনঃ বিরক্ত করার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী।

বিরক্ত যখন হচ্ছি না তখন ক্ষমার প্রশ্নটিও অবান্তর। আমি যথাসম্ভব আন্তরিকভাবে পাঠকদের প্রশ্নের/মন্তব্যের জবাব দেবার চেষ্টা করি। সেসব প্রশ্ন থেকে হয়ত অভাবনীয় কিছু শেখার সুযোগও তো মিলে যেতে পারে।

অট.
না চাইলেও পেশাগত কারণে আমাকে নির্ধারিত টাইমটেবলের বাইরেও দিন ও রাতের অনেকটা সময় জুড়ে ব্যস্ত থাকতে হয়। তোমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি এখনও ছাত্র। তাই আছে পিএইচডির নানা ঝুট-ঝামেলা। সবশেষে সংসার, সন্তান পালন, বৃদ্ধ বাবা-মাকে দেখা। তাই হয়ত অনেক সময় কুলিয়ে উঠতে পারি না।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

মৃত্যুময় ঈষৎ(Offline) এর ছবি

ঝামেলার সাথে সাথে সে কিন্তু কবিকে ফ্লেক্সিবিলিটিও দিচ্ছে। কবি শব্দটিকে ১ কিম্বা ২ উভয় মাত্রা হিশেবেই ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছেন।

এই ফ্লেক্সিবিলিটি টাই চাচ্ছিলাম।

তৃণ্ রুদ্ধদল শব্দের আদিতে/মধ্যে থাকলে ১ মাত্রাই পাচ্ছে। তৃণ ১-২ মাত্রা দুটোই হচ্ছে দেখছি। বুঝেছি ভাইয়া।

আমি যথাসম্ভব আন্তরিকভাবে পাঠকদের প্রশ্নের/মন্তব্যের জবাব দেবার চেষ্টা করি। এজন্যেই রাজ্যের অনুসন্ধান নিয়ে আপনার সামনে হাজির হই, কিঞ্চিত বিরক্ত করি বৈ কী।

অট.
আমি জানি রোমেল ভাই, আপনার সীমাহীন ব্যস্ততার কথা। পিএইচডির বিষয়টি জানতাম না। খুব ভালো লেগেছে জেনে। এ বয়সে এসেও লেখাপড়ার প্রতি আপনার সুতীব্র ঝোঁক আমাদেরকেও প্রবল অনুপ্রাণিত করলো। ভাইয়া আপনি যখন সময় পাবেনই তখন উত্তর দিবেন, তা ৭ দিন/১০ দিন পরে দিলেও কোন সমস্যা নেই।

ভাবী সাহেবান কে সালাম আর রোদেলা-রিলকের জন্য স্নেহাশিষ রইলো।

তানিম এহসান এর ছবি

লীলেন ভাইয়ের কথার সূত্র ধরে একটা বিষয় জানতে ইচ্ছে হচ্ছে, শ্রদ্ধেয় প্রবোধচন্দ্র সেনের আগে কি কেউ কবিতার ছন্দের বুনোন নিয়ে কাজ করেছেন। নাকি তিনিই প্রথম কবিতার ছন্দে পড়িয়েছিলেন তিনটি বৃত্তের চলন?

লীলেন ভাইয়ের কথা খুব ভাবালো, কানে যে ছন্দ বাজে পড়ার সময় বা শোনার সময় তার কোন অলংকরন কোনদিন কি হয়েছে? নাকি ওটা পাঠকের উপর ছেড়ে দেয়া?

প্রশ্নগুলো কতটা প্রাসঙ্গিক হলো বুঝতে পারছিনা কিন্তু করতে পেরে ভালো লাগছে।

মৃত্যুময় ঈষৎ এর ছবি

প্রিয় রোমেল ভাই, আপনার অক্লান্ত পরিশ্রমের জন্য সাধুবাদ নিন। পাঠকরা অনেক উপকৃত হচ্ছে সে দেখতেই পাচ্ছেন।

দুটি অনুরোধঃ যেহেতু এ পর্বটি মাত্রাবৃত্তের সেহেতু মাত্রাবৃত্ত কীভাবে বিশ্লেষণ করতে হয় তা যদিও প্রথম পর্বে আলোচিত হয়েছে তবু এ পোস্টেও পুনরায় উল্লেখ করলে সুবিধে হত। একটু ভাববেন কি?

আর উদাহরণের কবিতাগুলোর মধ্যে অন্তত একটি কবিতায় হাতে কলমে ব্যবচ্ছেদ করে দেখালে ভালো হত মনে হয়।

দুর্(২) গম্(২) গি(১) রি(১)|| কান্(২) তার্(২) ম(১) রু(১)|| দুস্(২) তর্(২) পা(১) রা(১)|| বার্(২)
লঙ্ (২) ঘি(১) তে(১) হ(১) বে(১)|| রাত্(২) রি(১) নি(১) শি(১) তে(১)|| যাত্(২) রী(১) রা(১) হু(১) শি(১)|| য়ার্(২) অর্থাৎ ৬+৬+৬+২ = ২০ মাত্রার।

আর সহজভাবে অক্ষরের সাহায্যে বিশ্লেষণের পাশাপাশি উচ্চারণের সাহায্যে করাটাও দিলে কেমন হয় ভাইয়া?

জিরাফ এর জন্য আদর হাসি আর রোদেলার জন্য শরতের নীলাকাশ হাসি


_____________________
Give Her Freedom!

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

ধন্যবাদ, মৃত্যুময় ঈষৎ। তোমার অনুরোধ দু'টি খুবই যুক্তিগ্রাহ্য। কিন্তু কলেবর বৃদ্ধি হবে একথা ভেবেই হোক, কিম্বা পুরোনো কাসুন্দি ঘাঁটতে না চাইবার কথা ভেবেই হোক, ওটি আর করা হয়ে উঠেনি। নবীন পাঠক যারা আগের পর্বটি পড়েন নি তাদের জন্য এই পর্বের শুরুতেই কিন্তু আগের পর্বের লিংক রেখে দিয়েছি। রেখে দিয়েছি তাদের জন্যও যারা কিনা অনুশীলনে যাবার আগে প্রথম পর্বে গিয়ে ফরমুলোগুলো একটু দেখে আসতে পারে।

উদাহরণের কবিতার অন্ততঃ একটির ক্ষেত্রে হাতে কলমে ব্যবচ্ছেদ করে দেখানো যায়। কিন্তু 'মাত্রা'/'কলা' বিশ্লেষণে তাহলে 'রুদ্ধদল' ও 'মুক্তদল'-এর প্রসংগটি এখানেই চলে আসে। সেটি আমি করতে চেয়েছিলাম সবার পরে, স্বরবৃত্তের আলোচনার ক্ষেত্রে। অর্থাৎ, আলোচনার ক্রম (sequence) নির্ধারণ করেছিলাম এভাবে, মাত্রাবৃত্ত > অক্ষরবৃত্ত > স্বরবৃত্ত। সিলেবলের সংজ্ঞা ও প্রকারভেদকে পাশ কাটিয়ে প্রথমে অক্ষর ধরে ধরে মাত্রাবৃত্ত ও অক্ষরবৃত্তের আলোচনা। এরপর সিলেবলের কথা উল্লেখ করে স্বরবৃত্তের আলোচনা, পাশাপাশি মাত্রাবৃত্তের সিলেবলভিত্তিক আলোচনা, পরিশেষে স্বরবৃত্তের সাথে মাত্রাবৃত্তের তুলনামূলক আলোচনা।

এবার দেখি আলোচনার ভিন্নক্রম নির্ধারণের সুবিধে ও অসুবিধে কোথায়।
১। মাত্রাবৃত্ত > স্বরবৃত্ত > অক্ষরবৃত্ত।
সুবিধে
* কানের বিচারকে চোখের বিচারের উপর প্রাধান্য দিয়ে প্রথম থেকেই ধ্বনিভিত্তিক আলোচনা করা সম্ভব হতো।
অসুবিধে
* প্রথমেই সিলেবলের সংজ্ঞা ও নানারকম ফিরিস্তি আওড়ালে পাঠক ভারাক্রান্ত হতে পারতো।
* শেষে কিনা অক্ষরবৃত্ত আলোচনার সময় ঠিক ঠিক অক্ষর গুনেই মাত্রা নির্ধারণ করে দেখাতে হতো। কোনভাবেই কি অক্ষর গুনে গুনে মাত্রা নির্ধারণের বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া যেত? যেত না।
সুতরাং 'ডিম আগে না মুরগী আগে' এই বিষয়টি থেকেই যেত বোধহয়। ভালো হতো, প্রথমে অক্ষরবৃত্তের বিষয়টি সেরে নিলে। কিন্তু অক্ষরবৃত্ত পুরোপুরি বুঝে উঠা খুব সহজ কাজ নয়। সেখানে একই কবিতার চরণের দু'রকম মাত্রা নির্ধারণ সম্ভব। উদাহরণ দিই,

আকবর বাদশার সঙ্গে
হরিপদ কেরানির কোন ভেদ নেই।

কেউ বলবে 'আকবর' শব্দে তিন মাত্রা 'বাদশা' শব্দেও তাই। সব মিলিয়ে প্রথম পংক্তিতে আট মাত্রা। দ্বিতীয় পংক্তিতে ১৪ মাত্রা, সবমিলিয়ে ৪+৪+৪+৪+৪+২=২২ মাত্রার অক্ষরবৃত্ত।

আবার কেউ বলবে 'আকবর' 'বাদশা' দুটি শব্দেই ৪ মাত্রা করে প্রথম পংক্তিতে সাকুল্যে দশ মাত্রা, ৪+৪+২=১০ মাত্রার অক্ষরবৃত্ত। দ্বিতীয় পংক্তিতে ১৪ মাত্রা, ৪+৪+৪+২=১৪ মাত্রার অক্ষরবৃত্ত। কোনটি রেখে কোনটি ফেলে দেবে।

পাঠক ও সুধীজনের চাহিদার প্রতি যথাসম্মান দেখিয়ে এখন আলোচনার ক্রম পরিবর্তনের বিষয়টি নিয়ে ভাবছি। কিন্তু যে ভুল হয়ে গেছে তা কি শুধরে নেবার আর উপায় আছে?

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

মৃত্যুময় ঈষৎ এর ছবি

সুস্পষ্টতর ভাবে বুঝলাম। আপনি যেভাবে চিন্তা করে ক্রম ঠিক করেছেন সেটা যুক্তিযুক্ত। আলোচনার ক্রম আমি মনে করি না পরিবর্তনের প্রয়োজন আছে। তবে পরবর্তী পর্বে সবাইকে তৃপ্ত করার একটা প্রয়াস নিতে পারেন (অনেক শ্রমসাধ্য হবে, এজন্য আমরা পাঠকেরা অগ্রিম দুঃখিত)।

কবিকে অনন্ত শুভেচ্ছা। হাসি


_____________________
Give Her Freedom!

তানিম এহসান এর ছবি

যে বিন্যাসে গুছিয়ে নিয়ে শুরু করেছেন সেভাবেই এগিয়ে যান রোমেল ভাই, ভুল বলে কিছু হয়নি, যা হয়েছে তা হচ্ছে বোঝার ক্ষেত্রে আরো বেশি করে বুঝে নেয়ার চেষ্টা। কিছু বিষয় হয়তোবা ছন্দের বিচারে ধরে ধরে এগুনোর ক্ষেত্রে সহায়ক হতো কিন্তু তাতে যদি আপনার কলমে আর ভাষায় খানিকটা হলেও দ্বিধা চলে আসে তাহলে কিন্তু আবার যে প্রকাশের দ্যোতনা নিয়ে যাত্রা শুরু হয়েছিলো তা ব্যাহত হতে পারে।

পরে আপনি কোন একটা পর্ব শুধুমাত্র এই পষ্টতার জন্য উৎসর্গ করুন, যারা পড়ার তারা ঠিকই খুঁজে নিয়ে পড়ে যাবে। অক্ষরবৃত্তের আলোচনা শুরু করে তারপর কোন একটা পর্বে নিয়ে আসুন তুলনামূলক পাঠন আরো ব্যাপক আকারে।

“কবিতার ক্লাশ” এই কারনেই আমাদের বারবার পড়তে হয় তবুও পড়া হয়ে উঠেনা - কবিতা নিয়ে কোনদিন এতো আলোচনা সমালোচনার মধ্য দিয়ে যাইনি আমি, এখন মনে হচ্ছে কবিতা পুরোটা বুঝে নেয়ার দিব্যি আমি কোনদিন দিতে যাবোনা!

লীলেন ভাইয়ের কথার সূত্র ধরে একটা আইডিয়া এসেছে, আপনার সবগুলো পর্বশেষ হোক, সেদিন এটা নিয়ে কথা বলবো হাসি

মাহবুব লীলেন এর ছবি

কবিতার ক্লাশ' বইটা প্রাথমিকভাবে ছন্দ বোঝার জন্য খুবই ভালো
কিন্তু বইটাতে মারাত্মক একটা সমস্যা আছে
সমস্যাটা হলো বইটা ছন্দ সম্পর্কে আগগোড়া একটা ধারণা দিতে পারে; সেটি হলো বাংলা ছন্দ বোধহয় বর্ণ গুনে গুনেই বুঝতে হয়

যদিও শেষের দিকে নীরেন্দ্রনাথ - সব ছন্দই কি সিলেবিক?' এরকম একটা চ্যাপ্টার যোগ করে ধ্বনিভিত্তিক ছন্দ বিশ্লেষণের চেষ্টা করে বোঝাতে চেয়েছেন যে ছন্দ মূত কানের বিষয়;
কিন্তু চ্যাপ্টারটা অতি জটিল; আর দ্বিতীয়ত এই চ্যাপ্টারটাতে আসার আগে ছন্দ সম্পর্কে ভুল ধারণা যা তৈরি হবার তা হয়েই যায়

তানিম এহসান এর ছবি

সেক্ষেত্রে সেই আবহ থেকে বের হয়ে আসার পথ কি কেউ বাতলেছেন। কবিতার বারান্দা নামে আরেকটি বই পড়েছি, খুব জটিল লেগেছে - নতুন মানুষের পক্ষে প্রাথমিক সময়ে হজম করা খুব কষ্টকর।

লীলেন ভাই, সেক্ষেত্রে পরিত্রানের উপায় কি? শ্রুতির উপর ছন্দ নিয়ে কাজ করেননি কেউ; নাকি বর্ণ ধরে ধরে ছন্দ বোঝার চর্চাটাই চর্চা হয়ে আছে। শ্রুতিতে নিলে বর্ণগুনে মাত্রিকতায় একটা ফারাক তৈরী হয়! আবার আমি একটা কবিতা যেভাবে নিজের মত করে ছন্দে পড়ি সেইভাবে আরেকজন হয়তো পড়েননা, সবারই নিজ নিজ লয়ে আর তালে পড়ে নেবার অভ্যাস।

আলোচনাটা শুরু করে খুব উপকার করলেন লীলেন ভাই, এই সিরিজটা একটা দারুন মাত্রা পেয়ে গেলো!

যুমার এর ছবি

লীলেনদার কথাটাই বলতে চাচ্ছিলাম।
ভালো লেগেছে।

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

ভালো লেগেছে জেনে খুশী হলাম। মাহবুব লীলেনের কথায় শক্ত যুক্তি আছে!

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

আসমা খান, অটোয়া। এর ছবি

অনেক কিছু শিখলাম। পরের পর্বের আশায় আছি।

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

ধন্যবাদ আসমা খান,
আপনি সুস্থ আছেন তো! ভালো থাকুন।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

তারেক অণু এর ছবি

ওরে বাবা, এ দেহি বিশাল গিয়াঞ্জাম ! , খুব ভাল লাগছে আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- , মনে হচ্ছে- কত অজানা রে ! পরে আরও ভাল ভাবে আস্তে আস্তে পড়তে হবে

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

হোক তবে পর্যটন, আনন্দ ভ্রমণ
পৃথিবীর পথে আর কবিতার রথে!

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

কর্ণজয় এর ছবি

এখন শুধুই পড়ছি...

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

চুলচেরা বিশ্লেষনের অপেক্ষায় রইলাম। সকলের চিন্তা ও অভিজ্ঞতার সন্মীলন ঘটাতে হবে। ব্লগের শক্তিই তো এখানে।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

guest_writer এর ছবি

কবিতা মোটামুটি পড়া হয়েছে বটে, সেই শৈশব থেকে প্রৌঢ়ত্ব অবধি। কিন্তু কবিতার এতসব অন্তর্নিহিত তত্ত্ব সম্পর্কে জানা ছিলনা। এই বয়সে নতুন কিছু শেখা হচ্ছে আপনার কল্যানে। আপনার প্রয়াসটি স্বার্থক হোক।

শিক্ষাকালের ব্যাপ্তি... দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত।

প্রৌঢ়ভাবনা

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

ধন্যবাদ, আপনার প্রেরণা ও আশীর্বাদ সযত্নে সঙ্গে রাখবো।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

সুমন তুরহান এর ছবি

অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা রোমেল ভাই, এতো ব্যস্ততার মাঝেও এরকম একটি উপকারী এবং জরুরি লেখা চালিয়ে যাওয়ার জন্যে। আপনি ধৈর্য ধরে ধরে সকলের প্রশ্নের বিস্তারিত উত্তর দিলেন। লীলেন ভাই, তানিম ভাই, মৃত্যুময় ঈষৎ - সবাইকে অনেক ধন্যবাদ। লেখা, মন্তব্য, প্রশ্নোত্তর থেকে নতুন অনেক কিছু শিখলাম; আগে যেটুকু শিখেছিলাম সেটিও ঝালাই করা হয়ে গেলো।

-----------------------------------------------------------
স্নান স্নান চিৎকার শুনে থাকো যদি
নেমে এসো পূর্ণবেগে ভরাস্রোতে হে লৌকিক অলৌকিক নদী

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

ধৈর্য্য নিয়ে পড়বার জন্য ও মন্তব্য করবার জন্য ধন্যবাদ জানাই।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।