রাজনীতিতে 'ডান্ডাবেড়ি' ও ঘাতক রক্ষার পুনঃ প্রকল্প

হাসান মোরশেদ এর ছবি
লিখেছেন হাসান মোরশেদ (তারিখ: শুক্র, ১৪/১০/২০১১ - ২:১৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

চারদলীয় জোটের রোডমার্চ কর্মসূচী সুন্দরভাবে শেষ হলো। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি অনুযায়ী আশংকা ছিলো- সরকারের পক্ষ থেকে কোন ধরনের বাধা দেয়া হয় কিনা, কেন্দ্রীয় না হোক নিদেনপক্ষে স্থানীয় সরকারদলীয় অতিউৎসাহী কর্মীরা ঝামেলা করলে বড়ধরনের রাজনৈতিক বিশৃংখলার সূচনা হতো। কিন্তু সে রকম কিছু ঘটেনি শেষপর্যন্ত। সরকার পক্ষ থেকে যেমন কোন প্রতিবন্ধকতা আসেনি তেমনি চারদলীয় জোটের আয়োজকরা ও এতো বড় আয়োজনে চমৎকার দক্ষতা দেখিয়েছেন। লোকসমাগম, শৃংখলা, আয়োজন সবকিছু মিলিয়ে বেশ গোছানো উদ্যোগ। হরতাল, ভাংচুরের বিপরীতে ভালো উদাহরন, দায়িত্বশীল বিরোধী দলের এরকমই করা উচিত।

চারদলীয় জোটের নেতা-কর্মীরা দাবী করছেন এই রোডমার্চ এবং রোডমার্চ শেষে সিলেট আলীয়া মাদ্রাসা মাঠে আয়োজিত জনসভা থেকেই মুলতঃ চারদলীয় জোটের সরকার বিরোধী আন্দোলনের সূচনা ঘটলো। যদি তাই হয়ে থাকে, তবে এই আয়োজনের কিছু ইঙ্গিত বিশ্লেষন করে শুরু হয়ে যাওয়া সরকার বিরোধী আন্দোলন তথা আসছে দিনগুলোতে রাজনৈতিক চালচিত্রের একটা ধারনা করা সম্ভব হতে পারে।

রোডমার্চ কর্মসূচী ও খালেদা জিয়ার জনসভায় লোকসমাগম অত্যন্ত পরিকল্পিত ও গোছানো ভাবে সম্পন্ন হওয়ার পেছনে বিএনপির কৃতিত্ব আসলে কতোটুকু? বিএনপি কিংবা আওয়ামী লীগের মতো দলগুলোতে আভ্যন্তরীন কোন্দল নিত্যনৈমিত্তিক, বড় আয়োজনকে ঘিরে এই কোন্দল আরো প্রকাশ্য হয়ে উঠে, বিশেষ করে শেখ হাসিনা কিংবা খালেদা জিয়ার সামনে নিজেকে শক্তিশালী প্রমান করার জন্য স্থানীয় নেতাদের জোর চেষ্টা থাকেই। সিলেট বিএনপিতে ও এই সমস্যা প্রকট।
কিন্তু এবারের আয়োজনে এর কোন ছিটেফোঁটা ও ছিলোনা। সুন্দর, সুশৃংখল ভাবে সবকিছু সম্পন্ন। পাঁচলক্ষ মানুষের সমাবেশ হওয়ার পূর্বঘোষনা ছিলো, পাঁচলক্ষের কম মানুষ উপস্থিত থাকেনি। এরসবটুকু সাফল্য আপাততঃ জেলা বিএনপির সভাপতি ইলিয়াস আলীর পাতেই যাচ্ছে, যিনি আবার কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক। স্থানীয় বিএনপির ইলিয়াসবিরোধীরা ও প্রকাশ্যে কোন বিরোধীতা করা সুযোগ পাচ্ছেননা।

কিন্তু শহরে পোষ্টার লাগানো থেকে শুরু করে, সভামঞ্চ পাহারা দেয়া, সভাস্থলের নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনায় জামাত শিবিরের নেতাকর্মীদের অগ্রনী ভূমিকা- সর্বোপরি এরকম বিশাল আয়োজন প্রফেশনাল দক্ষতা ইঙ্গিত দেয় চারদলীয় জোটের নামে হলে ও বিএনপির চেয়ে জামাত শিবিরের জন্য এই কর্মসূচী ছিলো অধিক গুরুত্বপূর্ণ।

আরো কিছু ইশারা নজরে আনা যেতে পারে।

সিলেট এসে পৌঁছার আগে এক পথসভায় বেগম খালেদা জিয়া শেখ হাসিনার ধর্ম বিশ্বাস নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন-

"দুর্গা পূজার অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের মা দুর্গা গজে চড়ে এসেছে। তিনি পূজা অনুষ্ঠানে যে কথা বলেছেন, আমরা জানতে চাই- উনি আসলে কোন ধর্মে বিশ্বাসী?"

বেগম জিয়াকে ও নিশ্চয় পালটা প্রশ্ন করা যায় তিনি নিজে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন অন্ততঃ দশটি দূর্গাপূজায় দেশের হিন্দুসম্প্রদায়কে শুভেচ্ছা জানিয়ে দূর্গাপূজার সফলতা কামনা করেছিলেন কিনা? সে সময় খালেদা জিয়ার পরিচয় যদি প্রধানমন্ত্রীর বদলে কেবল একজন কট্টর মুসলমানেরই থাকতো তাহলে পূজার সফলতা কামনায় তার ধর্মবিশ্বাস ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলো কিনা? পালটা প্রশ্নে কোন লাভ নেই, বুঝে নিতে হবে একটা ভয়ংকর অসুস্থতা চর্চার শুরু হতে যাচ্ছে, রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব থেকে যে অসুস্থতার চর্চা অনেকবারই হয়েছে এই দেশে, এই উপমহাদেশে।

সমসাময়িক সময়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন

, জামায়াতে ইসলামীকে মাঠে নামতে দেওয়া হচ্ছে না। তারা মাঠে নামলেই তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। রাজনীতিবিদের ডান্ডাবেড়ি পরানোর জন্য তিনি সরকারের কড়া সমালোচনা করেন।"

আলীয়া মাদ্রাসা মাঠের জনসভায় সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জনাব ইলিয়াস আলী, সাধারন ভাবে যিনি সিলেটে জামাত বিরোধী বলে পরিচিত। স্বাভাবিক, ছাত্রদল থেকে ইলিয়াস আলীর উত্থান যে সময়ে- সেই সময়ে সারা দেশেই জামাত-শিবির বিরোধীতায় ছাত্রদলের কর্মীরা ছিলো গুরুত্বপূর্ণ। কেন্দ্রীয় সমঝোতার খেসারত হিসেবে ধীরে ধীরে ছাত্রদল থেকে সেই জামাত-শিবির বিরোধীতা ধুয়ে-মুছে গেছে।
কিন্তু ইলিয়াস আলী ও জানেন সময় পালটে গেছে, খালেদাকে গিলে খেয়েছে জামাত সুতরাং খালেদার প্রিয়ভাজন থাকতে হলে জামাতের ধামা তাকেও ধরতে হবে এবং এই আয়োজনের সফলতার উপর নির্ভর করছিলো তার পরবর্তী রাজনৈতিক ভবিষ্যত।
সুতরাং জনসভায় খালেদা জিয়ার কাছে তার আবদার

বিএনপি জামায়াত ক্ষমতায় এলে বর্তমান সরকারের কিছু মন্ত্রীকেও ডাণ্ডাবেড়ি পরাতে হবে। আওয়ামী লীগে ওইসব নেতাকে ডাণ্ডাবেড়ি না পরালে জনগনের দাবি পূরণ হবে না। ক্ষমতায় গেলে আওয়ামী লীগের যেসব নেতাদের ডাণ্ডাবেড়ি পরাতে হবে, তাঁরা হলেন কামরুল ইসলাম, মতিয়া চৌধুরী, সাজেদা চৌধুরী, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মির্জা আজম, ফজলে নূর তাপস, ফারুক খান, মাহবুব উল আলম হানিফ।

ম্যাডাম জিয়া ও আবদার পূরনের আশ্বাস দিয়েছেন যথারীতি।

ডান্ডাবেড়ির কাহিনী কী?
পুলিশের উপর পরিকল্পিত হামলার অভিযোগে জামাতের এটিএম আজহারকে ডান্ডাবেড়ি পড়িয়ে আদালতে হাজির করা হয়েছিলো কয়েকদিন আগে।
দেখা যাচ্ছে সেই শোকে বিএনপি'র প্রবল মাতম।

যে বার্তা জামাত দেয়ার সাহস পাচ্ছেনা আজকে, সেই জামাতী বার্তা প্রচারিত হচ্ছে বিএনপির মাধ্যমে।

এদিকে ধীর কিন্তু গুছানো পথে শুরু হয়ে গেছে ঘাতক দালালদের বিচার প্রক্রিয়া। জামাত জানে একটা মরন কামড় তাদের দিতেই হবে। একা কিছু করার শক্তি-সামর্থ্য-জনসমর্থন নেই তার, কিন্তু বিএনপি তো আছে। বিএনপির জন্য জামাত এখন সেই জীবানু যে বিএনপির রক্তমাংস খেয়ে বেঁচে উঠার চেষ্টা করবে। জামাত যদি সাংগঠনিক ভাবে এই যাত্রা বেঁচে যায় তাহলে আগামীতে বিএনপি যাবে জাদুঘরে।

জামাতের মরন কামড় কী হতে পারে? সবচেয়ে সহজ এবং কার্যকরী পথ হচ্ছে সাম্প্রদায়িকতা উস্কে দিয়ে দেশে একটা ভয়াবহ অরাজক পরিস্থিতি তৈরী করা যা সরকারের পক্ষে নিয়ন্ত্রন অসম্ভব হয়ে পড়ে।
এই গ্রাউন্ড ওয়ার্ক শুরু হয়েছে বেগম খালেদা জিয়ার সাম্প্রদায়িক কথাবার্তা দিয়ে এবং হতে পারে পাথরঘাটা একটা ছোটখাট টেস্ট কেস।
চট্রগ্রামের এক সাংবাদিক বন্ধুর ফেসবুক স্ট্যাটাস শেয়ার করা যেতে পারেঃ-

পাথরঘাটা গংগাবাড়ির দরিদ্র হিন্দুবাড়ির ঘুমন্ত মানুষগুলোর উপর রাত ৯টার দিকে অতর্কিত এ হামলা নানা রং দিয়ে নানা নামে ( সংঘর্ষ, দাংগা, পুরনো শত্রুতা....) প্রচার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। বিপন্ন মানুষগুলোর বাড়িতে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে একের পর এক বাড়ি। পাথরঘাটা এলাকার নিরীহ জেলেদের উপর এ বর্বরোচিত হামলা সংগঠিত করেছে এলাকার কা্‌উন্সিলর এবং বিএনপি নেতা ইসমাইল বালি । নিরীহ জেলে পরিবারগুলো ...কে ভয় দেখিয়ে আক্রমন করে তাড়িয়ে জায়গা দখল করার হীন স্বার্থে এ ঘটনা। ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির ক্যামেরাম্যান সাজীব গুরুতর আহত। আইসিইউতে ভর্তি। আরো দশ সাংবাদিক আহত। তাদের উপর হামলার এ দায় কার? র‌্যাব- পুলিশ নিস্ক্রিয় ছিল কেন? .... তাদের উদ্দেশ্য কী ছিল? খতিয়ে দেখা দরকার।তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে এমন পরিস্থিতি আবার হবে।পরিকল্পিত এ হামলা আবার যদি হয় 'ধর্মীয় হানাহানির' মিথ্যে প্ররোচনা ছড়িয়ে যেতে পারে সারা দেশে।যা সবার জন্যে বিপদ ডেকে আনবে।

বিএনপির জন্য শোকার্ত হওয়া ছাড়া নাগরিক হিসেবে আমার আর কোন পথ নেই। সরকার বিরোধী আন্দোলনের অনেক অনেক এজেন্ডা সরকার নিজে প্রস্তুত করে দিয়েছে- দ্রব্যমুল্য, শেয়ার বাজার, আইন-শৃংখলা, দুর্নীতি, ট্রাঞ্জিট, সীমান্ত হত্যা- এর যে কোন একটাকে ধরেই সরল পথে জনগনের সমর্থন নিয়ে সরকার বিরোধী আন্দোলন সম্ভবপর কিন্তু বিএনপি সেটা না করে সরাসরিই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরোধীতা করে এখন জামাত বাঁচানোর আন্দোলনে।

আওয়ামী বিরোধীতার নামে '৭২-'৭৫ এ জামাতকে নিরাপদ গর্তে লুকানোর সুযোগ দেয়া হয়েছে- '৭৫ এর পর গর্ত থেকে বের করে এনে পুনর্বাসন করা হয়েছে একই অজুহাতে, এখন যখন জামাত আবার বিপদে আবারো সেই একই অজুহাতে জামাত বাঁচানোর দায়টুকু নিজের কাঁধে তুলে নিচ্ছে বিএনপি।
জামাতকে বাঁচিয়ে শেষপর্যন্ত বিরোধীতাটা আওয়ামী লীগের নয়, বিরোধীতা করা হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের ফসল বাংলাদেশের। কারন জামাত শেষ পর্যন্ত আওয়ামী বিরোধী নাও হতে পারে কিন্তু নিশ্চিতভাবে বাংলাদেশ বিরোধী ছিলো, আছে, থাকবে।


মন্তব্য

তানিম এহসান এর ছবি

প্রচন্ডভাবে সহমত!

আজাদ মাষ্টার( রিডার/কমেণ্ট)  এর ছবি

চমৎকার একটা বিশ্লেষণ করেছন সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে পুরা সমাবেশ করতে কতো টাকা খরচ হয়েছে তার একটা খতিয়ান করলে কিন্তু পিলে চমকানো একটা ট্রেনড লক্ষ্য করা যায় আমি বিএনপি করে এরকম একজনকে জিজ্ঞেস করে যা জানতে পারলাম পুরা সমাবেশ করতে দুই কোটি টাকার মতো খরচ হয়েছে এর মধ্যে জামাত দিয়েছে একাই এক কোটি বিশ লক্ষ টাকা, এর পরে ইসলামী ঐক্যজোট দিয়েছে ত্রিশ লাখের মতো বিএনপির সব মিলিয়ে মাত্র পঁচিশ লাখ চান্দা কালেক্ট করতে পেরেছে অথচ খেয়াল করুন কর্মসূচিটা কিন্তু চার দলের যৌথ কর্মসূচী ছিল না এইটা ছিল মূলত বিএনপির একক কর্মসূচি কিন্তু দেখা যাচ্ছে বিএনপি অপেক্ষা জামাতের গরজ বেশি ছিল সমাবেশ সফল করবার ।

আর চট্টগ্রামের দাঙ্গাটা পরিকল্পিত ভাবেই করা হয়েছিল এই ব্যাপারে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই কারন ওইদিন সামু ব্লগে বিএনপি করে এরকম কয়েকটা নিক হতে বিভ্রান্তিকর সাম্প্রদায়িক উষ্মকানিমূলক বক্তব্য দেওয়া আরম্ভ হয়

যুদ্ধপরাধ এবং ১৯ তারিখের জ্বালাও পুড়াও কর্মসূচীর পর জামাতের ক্যাডারদের পুলিশেরা দৌড়ের এর উপর রেখেছে এই অবস্থায় তারা একটা ইন্ডিয়ার গুজরাট মডেলের দাঙ্গা ঘটাতে যাচ্ছে বাংলাদেশে যাতে দৃষ্টিতা এবং তাদের দিক হতে সরে যায় ।

তানিম এহসান এর ছবি

পুরা সমাবেশ করতে দুই কোটি টাকার মতো খরচ হয়েছে এর মধ্যে জামাত দিয়েছে একাই এক কোটি বিশ লক্ষ টাকা, এর পরে ইসলামী ঐক্যজোট দিয়েছে ত্রিশ লাখের মতো বিএনপির সব মিলিয়ে মাত্র পঁচিশ লাখ চান্দা কালেক্ট করতে পেরেছে অথচ খেয়াল করুন কর্মসূচিটা কিন্তু চার দলের যৌথ কর্মসূচী ছিল না এইটা ছিল মূলত বিএনপির একক কর্মসূচি কিন্তু দেখা যাচ্ছে বিএনপি অপেক্ষা জামাতের গরজ বেশি ছিল সমাবেশ সফল করবার ।

বহুদূর ভাবতে হবে আমাদের!

কল্যাণF এর ছবি

ঠিক ঠিক ঠিক...

মৃত্যুময় ঈষৎ(Offline) এর ছবি

মরণ কামড় দিবে এটা সত্য, এতদসংশ্লিষ্ট ভবিষ্যতের সংকট কালের কথা চিন্তা করে আতংকিত। সরকারকে খুব সতর্ক থেকে পূর্বপরিকল্পনা নিতে হবে।

আওয়ামী বিরোধীতার নামে '৭২-'৭৫ এ জামাতকে নিরাপদ গর্তে লুকানোর সুযোগ দেয়া হয়েছে- '৭৫ এর পর গর্ত থেকে বের করে এনে পুনর্বাসন করা হয়েছে একই অজুহাতে, এখন যখন জামাত আবার বিপদে আবারো সেই একই অজুহাতে জামাত বাঁচানোর দায়টুকু নিজের কাঁধে তুলে নিচ্ছে বিএনপি।
জামাতকে বাঁচিয়ে শেষপর্যন্ত বিরোধীতাটা আওয়ামী লীগের নয়, বিরোধীতা করা হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের ফসল বাংলাদেশের। কারন জামাত শেষ পর্যন্ত আওয়ামী বিরোধী নাও হতে পারে কিন্তু নিশ্চিতভাবে বাংলাদেশ বিরোধী ছিলো, আছে, থাকবে। চলুক চলুক

সাফি এর ছবি

রেইন ফরেস্টের জঙ্গলের গাছগুলোতে একধরণের পরগাছা জন্মায় যা মূল গাছ থেকে পুষ্টি নিয়ে নিয়ে বেঁচে থাকে আর এক সময় মূল গাছটা মারা যায়। খালেদা জিয়ার সাম্প্রতিক বক্তব্য থেকে বুঝাই যাচ্ছে জামাত বিএনপিকে কিরুপে বশে রেখেছে। খুবই আতঙ্কে আছি, দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর এহেন বক্তব্য চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় অমুসলিমদেরপ্রতি তাদের কি মনোভাব। জামাতকে বাঁচাতে বিএনপি আর কত নীচে নামতে পারে, আর বিএনপি এর মুক্তিযোদ্ধা অংশ সেটা কতদিন দেখবে বসে বসে, আপাতত সেটা দেখা ছাড়া করণীয় নেই কিছুই।

কল্যাণF এর ছবি

চলুক

নিয়াজ মোর্শেদ চৌধুরী এর ছবি

সহতম। বিএনপি যদি এখনই সচেতন না হয়, তাহলে জামাত তাদের খেয়ে যাবে এবং বিএনপি তাকিয়ে তাকিয়ে শুধু দেখবে।

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

এই জনসমাবেশে জামায়াত-বিএনপি-ইসলামী ঐক্যজোট আলাদা করা যায় না; কারণ, সমাবেশটা হয়েছে একটা 'টাইপ' এর পক্ষে, নির্দিষ্ট কোনো দলের পক্ষে না। টাইপের পরিচয় কি - তা পাওয়া যায় আপনার এই বক্তব্যে,

কারন জামাত শেষ পর্যন্ত আওয়ামী বিরোধী নাও হতে পারে কিন্তু নিশ্চিতভাবে বাংলাদেশ বিরোধী ছিলো, আছে, থাকবে।

এটা স্রেফ বাংলাদেশবিরোধী শক্তির মহড়া।

৭২-৭৫ এ জামায়াতকে গর্তে লুকানোর সুযোগ দেয়ায় আওয়ামী লীগের দায়ই আমার কাছে সবচেয়ে বেশি মনে হয়। অন্যান্য প্রভাবকের সাথে বঙ্গবন্ধুর অতি উদারতাও বাংলাদেশবিরোধীদের শাস্তি নিশ্চিত না হওয়ার একটা কারণ। ব্যক্তির সাথে রাজনীতির পার্থক্য আছে। মানবতাকে অনেক সময়ই রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য ব্যবহার করা হয়। বঙ্গবন্ধুর মানবতা ও উদারতা ও নেতা হিসেবে আত্মতুষ্টি রাজনীতির ক্ষেত্রে অচল। বাংলাদেশবিরোধীরা তার এই অযোগ্যতার সুযোগ নিয়েছে মাত্র।

বাংলাদেশবিরোধী শক্তি শুরু থেকেই বুঝতে পেরেছে স্বাধীন বাংলাদেশে রাজনীতি করতে হলে আগে স্বাধীনতার ইতিহাসকে কব্জা করতে হবে। ধর্ম ব্যবহারকারী রাজনীতির ছাড়পত্র দেয়া মুক্তিযোদ্ধা জিয়া বা দিগন্ত টিভির কাদের সিদ্দিকী বা জামায়াতের মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ সবই এই প্ল্যানের অংশ। জামায়াত কিন্তু এখন ধুমায়া পাকিস্তানকে গালি দেয়, গোলাম আযম তার 'জীবনে যা দেখলাম' - এও ইয়াহিয়ার সমালোচনা করেছে!

এই প্রক্রিয়ায় তারা প্রথমেই চেষ্টা করছে স্বাধীনতাবিরোধী হিসেবে 'দল' - এর নাম কাটাতে। রাজাকার, আল-বদর বা ছাত্রসংঘের সাথে জামায়াত বা ছাত্রশিবিরের কোনো সম্পর্ক নাই - এই প্রচারের পরে এসেছে তারা শুধু অখন্ড পাকিস্তান চেয়েছিলো এবং সে হিসেবে তারা 'দেশপ্রেমিক', যদিও পরে বুঝতে পেরেছে তাদের ওই 'রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত' ভুল ছিলো (আর 'ভুল' তো সবাই করে!) এবং ভুল বুঝার সাথে সাথেই তারা বাংলাদেশকে 'মেনে' নিয়েছে! চোখ টিপি এই স্ট্যান্সে তাদের লাভ হলো, যুদ্ধাপরাধের বিচারে জামায়াতের কিছু 'ব্যক্তির' বিচার হলেও দল হিসেবে তারা টিকে থাকবে এবং ওই ব্যক্তিদের ছাড়াই দল চালানোর মতো ম্যানপাওয়ার তাদের আছে। আরেকটা লাভ হলো, স্বাধীনতাবিরোধী হিসেবে তাদের দলের অপবাদও ঘুচবে।

এই প্রোপাগান্ডা প্রক্রিয়ার পরবর্তী স্টেপও ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। জামায়াতের যেহেতু স্বাধীনতা যুদ্ধে কোনো দলগত অবস্থান ছিলো না (গোলাম আযমের জীবনে যা দেখলামই ভিন্ন কথা বলে যদিও), সেহেতু জামায়াতীরা কেউ অখন্ড পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো, কেউ কেউ মুক্তিযুদ্ধও করেছে আর দশটা বাঙালির মতো! সুতরাং স্বাধীনতাযুদ্ধের কনটেক্সটে জামায়াত অন্যদের থেকে মোটেই আলাদা না!

এত কথা খরচ করার অর্থ হলো, আওয়ামী লীগ যদি তাদের ভুল সংশোধন করে সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশের পক্ষে কাজ করতে চায়, তাইলে ব্যক্তির বিচারের পাশাপাশি বাংলাদেশবিরোধী দল ও টাইপ নির্মুল করার জন্য তাদেরকে কঠোর অবস্থানে যেতে হবে। ইতিমধ্যেই অনেক দেরি হয়ে গেছে; কিন্তু এখনও সম্ভব।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

কল্যাণF এর ছবি

চলুক

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

লেখায় উত্তম জাঝা!

বেগম খালেদা জিয়াকে মনে করিয়ে দিতে চাই যে এদেশে মুসলিম লীগ নামে একদা একটা দল ছিলো যাদের এখন কেবলমাত্র ইতিহাসের চটিবইতেই খুঁজে পাওয়া যায়। যুদ্ধাপরাধী মানবতাবিরোধীদের পৃষ্ঠপোষকতা কিন্তু তার দলকেও মুসলিম লীগের কাতারে নিয়ে যেতে পারে এটা তাকে ভাবতে অনুরোধ করছি।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

উদ্ভ্রান্ত বেগম জিয়া শেষ পর্যন্ত দলটার সর্বনাশ করছেন।
দ্বিদলীয় গনতন্ত্র পৃথিবীর বহু গনতান্ত্রিক দেশেই চর্চিত। '৯০ এর পর থেকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নিজেদের শক্তির উপর নির্ভর করে নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি চালিয়ে গেলে ভুলভাল করতে করতে একসময় বাংলাদেশে স্বাভাবিক গনতন্ত্র দাঁড়িয়ে যেতো।
শেখ হাসিনাকে ও দায়ী করা যায় স্বৈরাচার পুর্নবাসনের জন্য কিন্তু জামাতের তুলনায় এরশাদ দুধভাত, বিশেষ করে বর্তমানের এরশাদ ও জাতীয় পার্টি এমন কোন শক্তি নয় আর যারা দেশের ক্ষতি করবে কিন্তু জামাত সেই ভয়ংকর দৈত্য যে বিএনপিকে শেষ করবে, শেষ করবে এদেশের স্বাভাবিক বিকাশকে যদি না একে মুলসহ উপড়ে ফেলা হয়।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

তানিম এহসান এর ছবি

জামাতকে শুধুমাত্র জামাতিদের মধ্যে খুঁজতে গেলে ভুল হবে। দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এখন তারা সর্বত্র, ঘাপটি মেরে থাকে বলে ধরা যায়না। এরা সবাই মিলেই জামাত।

বিএনপি মোটামুটি গলার কাছে নিয়ে ফেলেছে জামাত, গলাধঃকরণ এবং উগড়ে দেয়া বাকি। শুধু বিএনপি না, আওয়ামী লীগেরও অনেক বেশি বোঝা দরকার। আমিতো আওয়ামী লীগের উপর ক্রমাগত হতাশ হচ্ছি, সেই হতাশা আশংকায় পরিণত হতে আর বুঝি বেশী দেরি নেই আমাদের।

আড়ালে থেকে ক্ষমতার মসনদ নিয়ন্ত্রন করার মত অর্থনৈতিক শক্তি জামাতের দাড়িয়ে গেছে, দাড়িয়ে গেছে নির্দেশমত শহীদ কিংবা গাজী হবার মত প্রচুর ব্রেইনওয়াশড উইপন, সাংগঠনিক দক্ষতায় ছেয়ে ফেলা বাংলাদেশে আতংক ছড়িয়ে ছড়ি ঘুরানোর মত সিচুয়েশন তৈরী করতে এদের বেগ পেতে হবেনা।

সমস্যা হচ্ছে যে দল মুক্তিযুদ্ধের শেষদিকে বুদ্ধিজীবি হত্যার মত একটা ঘটনা ঘটিয়ে দেশের প্রজ্ঞার জায়গাটায় একটা সুদূরপ্রসারী শূণ্যতা তৈরী করেছিলো এবার তারা সূচনায় কি করবে। ধাবত পদার্থের মত এদের চলাফেরা, সেই তুলনায় বিএনপির উথথান এবং দেশজুড়ে ছড়িয়ে যাওয়ায় ধর্ম যতটা হাতিয়ার ছিলো আওয়ামী লীগের ছিলো বরং উল্টো। সেই আওয়ামী লীগও যখন বিএনপির পথে হাটতে শুরু করে, তার রাজনৈতিক চেতনার জায়গায় ছাড় দিয়ে দেয় শুধুমাত্র ক্ষমতায় আসার লোভে, আমাদের তখন শংকিত হতে হয় বৈকি।

ওরা চলে আসবে একদিন, অতীতে এদের যতটা দেখেছি জাবিতে, আমার সবসময়ই মনে হয়েছে ওরা চলে আসবে একদিন। মওদুদী আইন নাযেল করার চেষ্টা হবে।

হোক, আমি নিশ্চিত তখনই মানুষ পথে নামবে। মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে এখন পর্যন্ত যে রাজনৈতিক প্রক্রিয়া তাতে কিন্ত বিএনপি, জাতীয় পার্টি কিংবা আওয়ামী লীগের আড়ালে মূলত উথথানের পথ ধরে এগিয়েছে জামাত, দেশের আজকের এই সিচুয়েশনের নেপথ্যের মূল কারিগরই এরা - ডিভাইড এন্ড রুল এন্ড উই গ্রো।

কারিগরী ফলছে, এখন দেখার অপেক্ষা - আমাদের এই উপলব্ধি, চেতনা, নিজের কাছে পষ্টতা এবং লড়াকু মনোভাব কোনদিন সঠিক শত্রু চিনে ঘুরে দাড়িয়ে যায় একটা সনাতন প্রত্যাশার বাংলাদেশ গড়ে নেয়ার জন্য। সবাই ঘুরে দাড়াবেনা, কোনদিন পুরোপুরি সবাই দাড়াতে পারেনা। যারা দাড়াবে তাদের যতটা দেখেছি অতীতে, তাতে আমার বিশ্বাসে কোনদিন মরচে পড়েনি, পড়বেওনা। বদলে দিতে খুব বেশি মানুষের প্রয়োজন হয়না, বাকিরা একটা সময় চলে আসে।

আমাদের ধমনীতে লাখো শহীদের রক্ত!!

ঝুমন এর ছবি

মুসলিম লীগ এখনো আছে। রোডমার্চ এ আমি নিজে তাদের দুইটা গাড়ি এবং গাড়ির ভিতর জিন্নাহটুপিধারী লোক দেখেছি। মুসলিম লীগের পতাকাও ছিল।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আমার এক বন্ধু বিএনপিকে 'বাংলাদেশ ননসেন্স পার্টি' বলতো... খারাপ বলতো না আসলে

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

লেখায় পাঁচতারা। ভালো লাগলো খালেদা জিয়ার সাম্প্রদায়িকতার ব্যাপারটা আপনি আলোচনায় এনেছেন।

মোটাদাগে বিএনপি-জামাত নিয়ে নিজের চিন্তাটুকু শেয়ার করি।

বিএনপি আর জামাতে আসলে নীতিগত পার্থক্য কি? কিছু কথা প্রায়ই শুনি, যেমন "জামাত বিএনপিকে গিলে ফেলবে" বা "কেন যে বিএনপি এখনও এই যুদ্ধাপরাধীদের সাপোর্ট দেয়!" টাইপের। বক্তব্যগুলোতে ইনহিয়ারেন্টলি বিএনপি কেমন যেন ইনোসেন্ট হিসেবে প্রতিভাত হয়।
অথচ জামাতের সাথে তাদের সখ্যতা সর্বকালের। জন্মের লগ্নেই জামাতকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেছে বিএনপি, তারপর বিএনপির ত্রিশ বছরের যে ইতিহাস তার শেষ দুই-তৃতীয়াংশ একদম সরাসরি হাতেহাত ধরে রাজনীতির পথ হেঁটেছে। প্রথম দশ বছরও সম্পর্ক ভালোই ছিলো।
অথচ এখনও আমাদের দেশে অনেকে এমনভাবে কথা বলে যেন জামাতকে ছেঁটে ফেললেই বিএনপি ধোয়া তুলসী পাতা হয়ে যাবে। গত বিশ বছরের ইতিহাস কি তবে হাওয়া হয়ে যাবে?

ডানপন্থী ইসলাম-পসন্দ রাজনীতির যে গন্তব্যে আজকের বিএনপিকে আমরা হাঁটতে দেখছি সেটা তার গত ত্রিশ বছরের চর্চার ফল। আজ জামাতকে পিঠ প্রদর্শন করলেও বিএনপির এই পথ থেকে ফিরে আসার আর সুযোগ নাই। বিএনপি হয়তো শুরুতে গড়ে উঠেছিলো একটা মুক্তফ্রন্ট হিসেবে, কড়াকড়িভাবে কোনো নির্দিষ্ট ইজমের অনুসারী না হওয়ায় এর চলার পথের অপশন ছিলো অনেকগুলো, এবং ত্রিশ বছরের পথ পাড়ি দিয়ে আজকের বিএনপি মোটামুটি তার চলার পথে অনেক কনভার্জড হয়ে গেছে।

বিএনপি-জামাত এখন একই, জামাতকে বিএনপির শরীয়াহ উইং বলা যায়।

বিএনপির অনেক সুশীল সমর্থক হয়তো এখনও বিএনপির জামাতকে বয়ে চলায় অস্বস্তি বোধ করেন। তবে বাস্তবতা হলো, বিএনপির পার্সপেকটিভে দেখলে এখন জামাতকে মাথায় হাত বুলিয়ে আশেপাশে রাখাই বিরাট লাভ। প্রায় কোটিখানেক লোকের (মোট জনসংখ্যার ৪-৫%) বিরাট ব্যাংক যদি এত সহজে পাওয়া যায় কে ছাড়বে?

এখনকার বিএনপি মোটেও বোকা না। একদিকে খালেদা জিয়াদের উগ্র বক্তব্যে, বয়োবৃদ্ধ রাজাকারদের কান্নায় ইসলাম-পসন্দ ভোট বাড়বে (আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষই কাজেকর্মে না হলেও চিন্তাধারায় এখনও বেশ ভালোমাত্রাতেই সাম্প্রদায়িক), অন্যদিকে মির্জা ফখরুলের সুশীল কলামে নতুন ভোটারও। সব হিসাব করা।

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

কাজি মামুন এর ছবি

আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষই কাজেকর্মে না হলেও চিন্তাধারায় এখনও বেশ ভালোমাত্রাতেই সাম্প্রদায়িক

প্রচণ্ড সত্য কথা বলেছেন! অনেক সুশীল-জনকে প্রশ্ন করতে দেখা যায়, প্রায় তিন-চতুর্থাংশের উপর সংসদীয় আসন পাওয়া আ'লীগকে কেন আপোষ করতে হলো সংবিধান পরিবর্তন ইস্যুতে? কেন রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল রাখতে হল? কিন্তু অনেকেই যেটা খেয়াল করেন না, তা হলো, আ'লীগকে ডানপন্থীদের কাছে নয়, আপোষ করতে হয়েছে ঐ তিন-চতুর্থাংশে বিজয়ী সংসদ সদস্যদের কাছেই; এরা নেত্রীকে এমনও বলেছে যে, বিসমিল্লাহ ও রাষ্ট্রধর্ম না রাখলে আগামী নির্বাচনে গোঁ হারা হারতে হবে। তাছাড়া বিষয়টি আরও পরিষ্কার হয়ে যায়, যখন আমি আমার পরিচতজনদের মধ্যে যারা আ'লীগকে ভোট দিয়েছিল, তাদের মতামত নেই। আমার বন্ধু, কলিগ, আত্মীয়-স্বজন যারা লীগকে ভোট দিয়েছিল, তাদের ৯৯ শতাংশই সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম রাখার পক্ষে। আ'লীগ ভোটারদের মনোজগতের এই যে পরিবর্তন, এটা কিন্তু বাংলাদেশের বর্তমান রাজনীতির বড় বাস্তবতা। গত তিন-দশকে দেশে যে নিরবচ্ছিন্ন ধর্মভিত্তিক রাজনীতির চাষ হয়েছে, তার প্রভাবেই এমন একটি জনগোষ্ঠী তৈরি হয়েছে, যারা বিএনপিকে সরিয়ে আ'লীগকে ক্ষমতায় বসাতে পারে, যুদ্ধাপরাধের বিচার চাইতে পারে; কিন্তু ধর্মীয় ইস্যুতে এরা পুরোপুরি ডানপন্থীদের মতো এবং আ'লীগের কাছেও একই ট্রিটমেন্ট প্রত্যাশা করে।

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

প্রসঙ্গটা যখন আনলেন তখন নিজের মতামতটা বলি:
ধর্মনিরপেক্ষবাদী পার্সপেক্টিভ থেকে দেখলে আওয়ামী লীগ এখন একটা চরম মোনাফেক দল। এরা মুখের কথায় আর কিছু ধর্মনিরপেক্ষতার ভেক ধরা বুদ্ধিজীবিকে ব্যবহার করে উপরে উপরে ধর্মনিরপেক্ষ ভাব দেখায়, কিন্তু ভিতরে ভিতরে ভোটের চেয়ে বড় কোনো ইস্যু তাদের নাই।
খেয়াল করেন, খালেদার সাম্প্রদায়িক বক্তব্যের জবাবে হাসিনার এটা বলার সাহস হয়নাই যে, "আমার ইচ্ছা আমি মা দুর্গার প্রশংসা করছি, আপনার কি?" তিনিও কিন্তু শেষেমেষ খালেদার মতোই নিজেকে প্রতিপক্ষের চেয়ে বড় ঈমানদার হিসাবে দেখানোর চেষ্টা করলেন।

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

কাজি মামুন এর ছবি

তিনিও কিন্তু শেষেমেষ খালেদার মতোই নিজেকে প্রতিপক্ষের চেয়ে বড় ঈমানদার হিসাবে দেখানোর চেষ্টা করলেন।

ভাই, হাসিনা এটা কেন করলেন জানেন? নির্বাচকমণ্ডলীর কাছে নিজেকে বাঁচাতে। বলছিলাম যে, এটাই এখনকার বাংলাদেশের রাজনীতির কঠিন বাস্তবতা। আ'লীগের ভোটাররা ধর্মনিরপেক্ষতার সমর্থক- আমাদের এই গতানুগতিক ধারনা কিন্তু আজ আর সত্য নয়। একাত্তরের প্রগতিশীল বাংলাদেশী যারা ধর্মের চেয়ে জাতীয়তা, সংস্কৃতি, ভাষা, স্বাধিকারকে গুরুত্ব দিত-তাদের মৃত্যু ঘটেছে। আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, অধিকাংশ বাংলাদেশী আজ পাকিস্তানি ধ্যান-ধারনা, চিন্তা-চেতনায় গড়ে উঠেছে, যাদের কাছে 'তারা মিউজিক' (যারা বাংলাদেশের শিল্প-সংস্কৃতিকে প্রমোট করে, বাংলাদেশের বিশেষ দিবসে বিশেষ অনুষ্ঠান করে) এর চেয়ে হাজার গুন বেশী আদরণীয় জাকির নায়েকের চ্যানেল, যার মাধ্যমে তারা 'নিজের ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব' ও 'অন্য ধর্মের নীচত্ব' সম্পর্কে আইডিয়া পেয়ে এক 'অনন্যসাধারণ অহংবোধের' আনন্দে উদ্বেলিত হয়। মূলত এই বাস্তবতার মুখেই, হাসিনাকে তথাকথিত 'খেলাফত মজলিসের' কাছে আশ্রয় নিতে হয়; আর ধর্মনিরপেক্ষতার ও প্রগতিশীলতার সবচেয়ে বড় ধ্বজাধারী মেনন-শিরিন-মইনুদ্দিনদের আশ্রয় নিতে হয় আ'লীগে। জামাত শুধু একটু সমস্যায় পড়েছে আপনাদের মত তরুণদের জন্য (যারা যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে একেবারে মরিয়া); নইলে জামাত কবেই বিএনপি রিপ্লেস করত!
এখন আপনার কাছে আমার প্রশ্ন, বাংলাদেশের মানুষের এই মনোজগতের পরিবর্তনে আপনি কাকে দুষবেন? আ'লীগ? নাকি ৭৫ এর পর থেকে অন্তবিহীন ধর্মভিত্তিক রাজনীতির আবাদকে? তাছাড়া, এই পরিস্থিতি বদলের উপায়ই বা কি? সঙ্গে আরো একটি প্রশ্ন আপনাকে। যে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি পাকিস্তানের জন্ম দিয়েছিল, তাকে উপরে ফেলে কি করে বাংলাদেশের জন্ম সম্ভব হল? আপনার উত্তরের আশায় রইলাম। হাসান মোরশেদ ভাইয়ের কাছেও প্রশ্নগুলো জমা রইল।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, অধিকাংশ বাংলাদেশী আজ পাকিস্তানি ধ্যান-ধারনা, চিন্তা-চেতনায় গড়ে উঠেছে, যাদের কাছে 'তারা মিউজিক' (যারা বাংলাদেশের শিল্প-সংস্কৃতিকে প্রমোট করে, বাংলাদেশের বিশেষ দিবসে বিশেষ অনুষ্ঠান করে) এর চেয়ে হাজার গুন বেশী আদরণীয় জাকির নায়েকের চ্যানেল, যার মাধ্যমে তারা 'নিজের ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব' ও 'অন্য ধর্মের নীচত্ব' সম্পর্কে আইডিয়া পেয়ে এক 'অনন্যসাধারণ অহংবোধের' আনন্দে উদ্বেলিত হয়।

আপনার এই মন্তব্যটুকুতে আমার ব্যক্তিগত আপত্তি আছে। আপনি কিসের ভিত্তিতে অধিকাংশ বাংলাদেশীকে পাকিস্তানি ধ্যান ধারণা এবং চিন্তা-চেতনায় গড়ে উঠেছে বলে মনে করছেন সেটা জানাবেন আশা করি। অধিকাংশ বাংলাদেশী মানে কি আপনার চারপাশের মানুষদের কথাই বোঝাতে চেয়েছেন? তাহলে বলব, তারা অধিকাংশ বাংলাদেশীকে রেপ্রিজেন্ট করে না।

কাজি মামুন এর ছবি

প্রকৃতিপ্রেমিক,
আমি কোন জরিপ সংস্থায় কাজ করি না বা এই বিষয়ে কোন জরিপ হয়েছে বলেও আমার জানা নেই। আমি যা বলেছি, তা আমার চারপাশ থেকে আহরিত অভিজ্ঞতা থেকেই বলেছি। তবে আমার শিক্ষাঙ্গন, অফিস, বন্ধু, পরিবার, পাড়া ইত্যাদি কিন্তু পরিসংখ্যানের ভাষায় স্যমপ্লিং ক্লাস্টার; এদের মাধ্যমে পুরো 'পপুলেশন'কে রিপ্রেজেন্ট করা বৈশিষ্ট্য বের করা আনা অসম্ভব নয়! যাই হোক, আমি তো আপনাকে কোন সাংখ্যিক বা তথ্যগত প্রমাণ দিতে পারব না; তবে কিছু প্রশ্ন রেখে যেতে পারি:
(১) আ'লীগ সরকার সংবিধান পরিবর্তনে 'রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম' বহাল রাখলেন কেন? (আপনার কি মনে হয়, সৌদির চাপ ছিল? নাকি আ'লীগ বিএনপি-জামাতের ইচ্ছা বাস্তবায়ন করেছে তাদের ভোট বাক্সে ভাগ বসাতে?)
(২) আ'লীগ সংবিধান পরিবর্তনে 'রেফারেন্ডাম' আয়োজন করতে সাহস পেল না কেন?
(৩) '৯৬ তে হাসিনাকে হিজাব পরতে হয়েছিল কেন?
(৪)খেলাফত মজলিসের সাথে আ'লীগকে চুক্তি করতে হল কেন? (বিএনপি-জামাতের কোর ভোটে ভাগ বসাতে নাকি নিজেদের ভোট ধরে রাখতে?)
(৫) বাংলাদেশের ২০০৮ সনের নির্বাচনকে বাদ দিয়ে (যেহেতু বিএনপি ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গিয়েছিল ও সেনা সমর্থিত সরকারের কোপানলে পড়েছিল), সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলোর ভোটের হিসাবের দিকে তাকান। হিজাব পরেও আ'লীগ কত ভোট পেয়েছিল? আর ইসলামের ধারক ও বাহক বিএনপি, জামাত, জাপা ও ইসলামি ঐক্যজোট কত ভোট পেয়েছিল? আর বাম জোটেরই সর্বমোট ভোট কত ছিল?
(৬)ফেলানি হত্যাকাণ্ডে যেভাবে সবাইকে সরব হতে দেখেছেন, ততটা কি সৌদি কতৃক আট বাংলাদেশীকে জবাই করার ক্ষেত্রে দেখেছেন?
আশা করি, এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পাব। প্রগতিশীল 'সচলয়াতন' এর রিসপন্স কিন্তু ঠিক প্রতিনিধিত্ব-শীল নয় সমগ্র বাংলাদেশের! যদি তাই হতো, তাহলে তো আমরা একাত্তরের চেতনা অচিরেই পুর্নপ্রতিষ্ঠিত করতে পারতাম! সত্যটা হল, বাংলাদেশ একাত্তরের ধর্মনিরপেক্ষ ও প্রগতিশীল চেতনা থেকে অনেক দূরে সরে গেছে। এখন আমাদের শেখ মুজিবের মত সেই ক্যারিশমাটিক নেতা দরকার, যে কিনা ধর্মের ভিত্তিতে ভারত ভাগে বাধ্য করা বাঙালি মুসলিমকে ভাষা ও সংস্কৃতির ভিত্তিতে দেশ ভাগে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন!

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

আপনার প্রশ্নের উত্তর কি হবে সেটা আমরা সবাই জানি। তার মানে কি এ-ই যে অধিকাংশ মানুষ পাকিস্তানি ধ্যান ধারণা নিয়ে গড়ে উঠছে? ধর্ম ভীতি মানেই কি পাকিস্তানী প্রীতি?

আরেকটা বিষয় হল বাংলাদেশ বাস্তবিক অর্থে কবে ধর্মনিরপেক্ষ ছিল? যা ছিল বা আছে তার সবই তো কাগজে কলমে।

কাজি মামুন এর ছবি

প্রকৃতি-প্রেমিক,

ধর্ম ভীতি মানেই কি পাকিস্তানী প্রীতি?

তা হবে কেন? আমি শুধু বলছিলাম, যে অসাম্প্রদায়িক ও প্রগতিশীল চেতনা ধর্মরাষ্ট্র পাকিস্তানের কবর রচনা করে বাংলাদেশ সৃষ্টি করেছিল, তা থেকে আজকের বাংলাদেশ অনেক দূরে সরে গেছে এবং এজন্য '৭৫ পরবর্তী ধর্মভিত্তিক রাজনীতির ব্যাপক আবাদই মূলত দায়ী। বুঝতে পারছি আমার মত সাধারণ পাঠকের কথা মানতে আপনার কস্ট হচ্ছে; আপনি শ্রদ্ধেয় হাসান মোরশেদ ভাইয়ের সাথে বিষয়টা নিয়ে আলাপ করতে পারেন।

আপনি সবার কাছেই বেশ প্রশ্ন রেখে যাচ্ছেন দেখছি।

আমি আর কি বলব? যে কাউকে জিজ্ঞেস করুন; আপনার অ-সহিষ্ণুতা কারো চোখ এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। আরে ভাই, আমি তো কেবল দু'চারটে নিরীহ প্রশ্ন করেছি; সচলায়তনে কি প্রশ্ন করা নিষেধ? নাকি আপনাদের 'সচলায়তন' এ সাধারণ পাঠকের জন্য বরাদ্দের বাইরে গিয়ে খুব বেশী অনধিকার চর্চা করে ফেলছি?

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

আমি সুস্পষ্ট করেই বলেছি কোথায় আমার আপত্তি। সচলায়তনে অনেকদিন ধরে আছি বলে আমার মন্তব্য যাতে 'আমাদের' মন্তব্যে পরিণত না হয় সেজন্য 'ব্যক্তিগত' শব্দটিও যুক্ত করেছি। তার পরেও আপনি মুছে দেয়া অংশটি কোট করেছেন। করে আমার মন্তব্যের দায় 'আমাদের' উপর চাপিয়েছেন।

আমি তো ভাই মন্তব্যই করি কালেভদ্রে দুয়েকটা। অসহিষ্ণুতা প্রকাশ পেয়ে থাকলে সেটা বোঝার ভুল হতে পারে। কিংবা আমিও আপনাকে একই দোষে দুষ্ট দাবী করতে পারি।

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

আমার আপত্তি তো ঐ জায়গাতেই। এতই যদি রাজনীতির কঠিন বাস্তবতার কাছে হার মানেন তিনি, তাহলে মাঝেমাঝে কেন ধর্মনিরপেক্ষর ভেক ধরেন? দুই নৌকায় পা দেওয়াটাই মোনাফেকি।

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

হাসান মোরশেদ এর ছবি

কাজী মামুম যে প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন সেটি জরুরী, এই জরুরী প্রশ্ন থেকে আলোচনা অনেক দীর্ঘায়িত হবার দাবী রাখে।
আমি আমার সামান্য দুপয়সা যোগ করি পালটা প্রশ্ন দিয়ে।
আওয়ামী লীগ যাত্রা শুরু করেছিলো- আওয়ামী মুসলিম লীগ হিসেবে ১৯৪৯ সালে। ১৯৫৫ সালে এসে তৎকালীন নেতৃত্ব 'মুসলিম' শব্দ ত্যাগের সাহস দেখালেন- একটা সত্যিকারের গনভিত্তিক ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক দলের যাত্রা শুরু হলো। ধর্ম নিরপেক্ষতা নিয়ে কোন লুকোচুরি না করেই প্রায় শতভাগ জনসমর্থন আদায় করে নিলো, ধর্ম ভিত্তিক রাষ্ট্র ভেঙ্গে নতুন রাষ্ট্রের জন্ম দিলো, নতুন রাষ্ট্রের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা সংযোজিত হলো- এগুলো সবই আমাদের জানা ইতিহাস।
কিন্তু '৯০ এর পরে দেখা গেলো আওয়ামী লীগের পোষ্টারে 'আল্লাহ সর্বশক্তিমান' সংযোজিত- বিএনপির 'বিসমিল্লাহ' র সাথে তাল মিলিয়ে। এখন প্রধানমন্ত্রী হাসিনা ব্যক্তিব্যস্ত নিজেকে সাচ্চা মুসলমান প্রমান করতে, খেলাফত মজলিসের সাথে চুক্তি করতে তার আপত্তি নেই।

১৯৫৫ আর ২০১১ এর মধ্যে পার্থক্য কোথায়? তখনকার আওয়ামী নেতৃত্বের শেখ মুজিব, ভাসানী, সোহারাওয়ার্দী, আতাউর রহমান খানরা আজকের হাসিনার চেয়ে চেতনায় অধিক অসাম্প্রদায়িক ছিলেন, ভোটের হিসাবের চেয়ে নীতি-নৈতিকতা তাদের কাছে বড় ছিলো?
আমার কাছে তা মনে হয়না।

সাদা চোখে দেখলে মনে হবে ৫৫ বছর পরে মানুষ আরো আধুনিক , শিক্ষিত, স্মার্ট, প্রাগ্রসর হয়েছে। আসলে কি তাই?
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন সে সময়ের সমগ্র জনগোষ্ঠীর চেতনায় অসাম্প্রদায়িকতার উন্মেষ ঘটিয়েছিলো। ১৯৫৫ তে আওয়ামী লীগের 'মুসলিম' ত্যাগ এর মাত্র ৩ বছর পরের ঘটনা। ৫০ এর দশকের যে শিক্ষিত মানুষেরা এখনো বেঁচে আছেন তাদের সাথে কথা বললে টের পাওয়া যায়না- বর্তমানের 'শিক্ষিত' রা তাদের চেয়ে চিন্তা চেতনায় কতোটা পিছিয়ে। এক মুস্তফা নুরউল ইসলাম এখনো যে স্মার্ট ভঙ্গিমায় কথা বলেন, আজকের ২৫ বছরের কোন তরুন ও ততোটা স্মার্টলি কথা বলতে জানেনা।
রাজনৈতিক দলগুলো একা কিছু করতে পারেনা। ৫০ এর দশকের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের কথা চিন্তা করুন, তার যে অসাম্প্রদায়িক চরিত্র সেটা রাজনৈতিক দলকে সাহস জুগিয়েছে অসাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে নিজেকে ভুক্ত রাখতে। আজকের সবচেয়ে সংস্কৃতিবান ব্যক্তিটি কতোটা সাম্প্রদায়িকতামুক্তি আমার সন্দেহ আছে।
চিন্তা করুন তখনকার বিশ্ব সংস্কৃতি ও রাজনীতির আবহাওয়া। বিশ্বের দেশে দেশে সমাজতান্ত্রিক ও জাতীয়তবাদী চেতনার উন্মেষ ঘটছে যা চরিত্রে অসাম্প্রদায়িক। আজকের বিশ্ব রাজনীতি ও সংস্কৃতির চরিত্র কেমন? সারা দুনিয়ে জুড়ে ধর্মের কি আগ্রাসন?

আওয়ামী লীগকে গালি দেয়া সহজ কাজ। সহজ কাজটা আমরা সহজে করছি। কিন্তু পূর্বাপর অনেকগুলো ফ্যাক্টর এর সাথে চিন্তার দরকার আছে। শতগালির পর ও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে বলেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, আওয়ামী লিগ ক্ষমতায় আছে বলেই সেদিন চট্রগ্রামের ঘটনা থেকে দেশ ব্যাপী দাঙ্গা শুরু হয়নি।

আওয়ামী লীগ কি প্রকৃত স্যেকুলার? অবশ্যই না। আওয়ামী লীগ কোন সেক্যুলারই না। কিন্তু প্রকৃত সেক্যুলাররা যতোদিন বাংলাদেশের ক্ষমতায় যাবার শক্তি অর্জন না করছে, আওয়ামী লীগকে বাধ্য হয়েই বাঁচিয়ে রাখতে হবে। বিকল্প তৈরীর আগে একে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলে যে শূন্যতা তৈরী হবে সেই শূন্যতাকে দখল করবে ধর্মীয় ফ্যানাটিক গোষ্ঠী যারা ২০০১ এর নির্বাচনের পর সাম্প্রদায়িক আগুনে পুড়িয়েছিলো আমাদের স্বজনদের।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

কাজি মামুন এর ছবি

হাসান ভাই,
অনেক ধন্যবাদ! চলুক

একুশ  এর ছবি

রাতঃস্মরণীয়, ভাই সিলেটে খালেদা জিয়ার সমাবেশ উপলক্ষ্যে আমরা জানলাম মুসলিম লীগ ছিলো না , ২/১ জন হলেও এখনও আছে । সমাবেশের সমর্থনে শহর সিলেটের চিপা গলিতে এবার মুসলিম লীগের নামে পোষ্টার লাগানো হয়েছিলো ।

অরফিয়াস এর ছবি

অনেক আগে যখন বদরুদদুজা চৌধুরী বিএনপি এর হর্তা কর্তা ছিলেন, এক জনসভায় বলেছিলেন, "আওয়ামীলিগ ক্ষমতায় গেলে দেশের সব মুসলমানকে শাঁখা সিঁদুর পড়তে হবে", দেশের রাজনীতিতে যে নষ্ট সাম্প্রদায়িকতার সূচনা ছিলো তাতে উনার অবদান অসামান্য, সবাই হয়তো ব্যাপারটা ভুলে গেছে, অনেকে ভুলে নাই| উনি বিক্রমপুর আসন থেকে নির্বাচনে দাড়ান, আমার নিজের গ্রাম, ওই গ্রামে আমার জানা মতে অনেক হিন্দু ধর্মালম্বী মানুষ কট্টর বিএনপি করে| তাদের সেদিনের জনসভার ভ্ষণ কেমন লেগেছিলো জানিনা|

কিছুদিন আগে দেখলাম, গয়েশ্বর রায় এক দলীয় মতবিনিময়ে বিএনপিতে থাকা হিন্দু ধর্মালম্বীদের দুর্দশার কথা বেশ ত্যাক্ত হয়েই তুলে ধরেন, অবাক লাগে দেশে ধর্মের উপরে ভিত্তি করে কি করে একটা দল চলতে পারে যখন সব ধর্মের মানুষেরই মিলিত সমর্থন আছে|

বেগম জিয়ার এই ভাষণ সেদিনই নজরে এসেছে, কিছু লিখতে চেয়েছিলাম, পরে লিখিনি, কারণ এই কথা লিখে বলে কোনো লাভ নাই, সাম্প্রদায়িক রাজনীতি আমাদের দেশে বিরল না, বরং আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য এর আগেও এটার ব্যাবহার হয়েছে, ভবিষ্যতেও হবে|

দেশে ধর্মের নামে যে সাম্প্রদায়িকতা ছড়ানো হচ্ছে, টা পরিকল্পিত, রাস্তা ঘাটে কিছু মানুষের কথা শুনলেই টের পাওয়া যায় ভিতরে ভিতরে বেশ শক্ত ভাবেই ছড়াচ্ছে ঘটনাটা|

জামাত হচ্ছে পরগাছা, কিন্তু পরগাছার চরম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটা যার দেহকে ভিত্তি করে বাঁচে একসময় টাকেই গ্রাস করে, বিএনপি এর অবস্থাও ভবিষ্যতে এরকম হবে বলেই মনে হয়|

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

ফাহিম হাসান এর ছবি

সাম্প্রদায়িকতাকে ঘৃণা করি। গুরুত্বপূর্ণ লেখার সাথে সহমত।

pathok এর ছবি

চলুক

দ্রোহী এর ছবি

লেখার মূল বক্তব্যের সাথে পুরোপুরি সহমত। উত্তম জাঝা!

ইদানীংকালে প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলীয় নেত্রীর সংলাপ থেকে একটা জিনিস আন্দাজ করতে কষ্ট হয় না যে বাংলাদেশ ধীরে ধীরে একটি কট্টর ইসলামী মৌলবাদি রাষ্ট্র হিসাবে পরিচিত হবার পথে এগিয়ে যাচ্ছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে ভবিষ্যতে যে নিজেকে যতো বেশি মৌলবাদি হিসাবে দেখাতে পারবে বাংলাদেশের রাজনীতির খেলায় তার অবস্থান ততোবেশি শক্ত হবে।

বিএনপি-জামাত সম্পর্ক প্রসঙ্গে সাফির কথাটাই পূনরাবৃত্তি করি: "রেইন ফরেস্টের জঙ্গলের গাছগুলোতে একধরণের পরগাছা জন্মায় যা মূল গাছ থেকে পুষ্টি নিয়ে নিয়ে বেঁচে থাকে আর এক সময় মূল গাছটা মারা যায়। খালেদা জিয়ার সাম্প্রতিক বক্তব্য থেকে বুঝাই যাচ্ছে জামাত বিএনপিকে কীরুপে বশে রেখেছে।"

তবে আমার কখনই মনে হয়নি নীতিগত দিক থেকে জামাত-বিএনপির চাইতে আলাদা কিছু। জামাত-বিএনপির সুসম্পর্কের সুতা জিয়ার রাজাকার পূনর্বাসন প্রকল্পের মাধ্যমে শুরু হয়েছে। মাঝে কিছুটা টানাপোড়ন সৃষ্টি হলেও দুটি পাখি ঠিকই তাদের নীড় চিনে নিয়ে এক ঘরে গিয়ে উঠেছে।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনাটুকু বাদ দিলে আওয়ামীলীগকেও জামাতের চাইতে আলাদা কিছু মনে হয় না। আওয়ামীলীগে তীব্র মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী নেতা কতোজন আছে তা নিয়ে সন্দেহ হয়। ভোটের রাজনীতিতে শেখ হাসিনা যেখানে গোলাম আযমের পা ছুঁয়ে দোয়া নিতে যান সেখানে সঙ্কটে পড়লে আওয়ামীলীগ নেতারা কতোদিন জামাত বিরোধীতা দেখাবেন তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

সাম্প্রতিক দাঙ্গা প্রচেষ্টা যে যুদ্ধাপরাধের বিচারের দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আনার প্রচেষ্টা তা বোঝার জন্য আইস্টাইন হতে হয় না।

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

দ্রোহীর মন্তব্যে উত্তম জাঝা!

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

কল্যাণF এর ছবি

দারুন মন্তব্য। আমরা সাধারন পাব্লিকরা কঠিন চিপায় আছি, লোম বাছতে কম্বলই ফাঁক হয়া যাইতাছে। কি অসহ্য যন্ত্রণা। বিপদের কথা হইল ছাগোলেরা সব চিপায় চাপায় ঢুইকা ঘাপটি মাইরা পইড়া আছে, সব জায়গায়, কোন যায়গা আর বাকি নাই মন খারাপ

পাঠক এর ছবি

বিশ বছর ধরেই শুনছি জামাত বিএনপি কে গিলে খাবে। বিএনপি বিলীন হবে। জামাত মনে হয় স্টার ওয়ার্স রিটার্ন অফ জেডাই এর সেই মরু দানব সারলাক ‌যে হাজার বছর ধরে তার ভিক্টিমকে আস্তে আস্তে হজম করে।
যতদিন আওয়ামী নামের একটা পারিবারিক কাল্ট এর দাপট থাকবে ততদিন এর বিপরীতে একটা বিশাল ভোটের ব্যাংকও থাকবে। বিএনপি'র এন্জিনের ফুয়েলই হলো আওয়ামী কাল্ট এর বিরোধীতা। একারনে তাদের খুব একটা কষ্ট কখনই করতে হয় নি।

তারেক অণু এর ছবি

ঠিক ঠিক

মাহবুব ময়ূখ রিশাদ এর ছবি

বিএনপির সমস্যা এটাই কিছু একটা করলেই সেটা আসলে জামাতের প্রোপাগান্ডা হয়য়ে পড়ছে। এবং যা আমাদের জন্য তীব্র অশনীসঙ্কেত

------------
'আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !

 তাপস শর্মা (অফ লাইন)  এর ছবি

ভীষণ ভাবে সহমত এবং রাজনীতির আখড়ায় ধইরা ঠুয়া দিয়া দিমু...
----------------------------------------------------------------------------------------
চিত্ত যেথা ভয় শূন্য উচ্চ যেথা শির

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।