কৃষ্ণকলিদের দেশে

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি
লিখেছেন রাতঃস্মরণীয় [অতিথি] (তারিখ: বুধ, ১৯/১০/২০১১ - ১:২০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কৃষ্ণকলি আমি তারে বলি
কালো তারে বলে গাঁয়ের লোক
মেঘলা দিনে দেখেছিলেম মাঠে
কালো মেয়ের কালো হরিণ চোখ।।

রবিঠাকুর ময়নাপাড়ার মাঠ এই কৃষ্ণকলিকে দেখে গানটা রচেছিলেন বলে জেনেছি। তার রসিক চোখের সাথে হঠাৎই হয়তো দৃষ্টি আটকে পড়েছিলো শান্ত-সুবোধ তরুনী (নয়তো বড়জোর যুবতি’ই হবে) কৃষ্ণকলির কালো হরিণ চোখের। তাই নিয়েই কবিগুরু রচলেন তার অন্যতম বহুশ্রুত-বহুচর্চিত গানটি। তবে তার নিজদেশের তামিলনাড়ুতে বা প্রতিবেশী সিংহলে যদি কখোনো তিনি সেই রসিক দৃষ্টি মেলে গ্রামের আল বেয়ে হাঁটতেন, তবে যে কতোশতসহস্র কৃষ্ণকলির সাথে তার দৃষ্টিমিলন ঘটতো তা বুঝি গুনে শেষ করার মতো নয়। হয়তো বাংলার ময়নাপাড়ার মেয়ে কৃষ্ণকলিকে তিনি কৃষ্ণকলির স্থানে রেখে আরও যে কতো কৃষ্ণগাঁথা রচতেন গানে গানে, কবিতায়, চিঠিতে, সে হিসেবে আর না’ই বা গেলাম এখন। তবু একটা হতাশা ব্যাক্ত করতেই হচ্ছে; ঠাকুর মশাই তো এক কৃষ্ণকলিতেই মজে রইলেন। কিন্তু আমার মতো অভাগা বহুগামী মনের মানুষের তো আর এক কৃষ্ণকলিতেই চলেনা। গুরুর উপর তাই মাঝেমধ্যেই একটু অভিমান হয় যে কেনো তিনি আরও কতকগুলো কৃষ্ণকলির কথা রচলেন না।

অনেক দিনের ইচ্ছে ছিলো শ্রীলঙ্কা যাওয়ার। কিন্তু যখন সময় ছিলো তখন পয়সা ছিলোনা। আর এখন একটু একটু সামর্থ্য আসলেও সময় হয়ে পড়েছে সোনার হরিণ। দুর থেকে উঁকি দিয়ে যায় কিন্তু ধরা দেয়না। তবে অবশেষ বিড়ালের ভাগ্যে একসময় শিকে ছিড়লো। যে প্রতিষ্ঠানে কেরানিগিরী করে আমার আর স্ত্রীর দুটো ভাতের ব্যবস্থা হয়, সেই প্রতিষ্ঠানের বেশকিছু কর্মকাণ্ড আছে শ্রীলঙ্কায়। ওদের তিনজন কর্মী আবার আমার কাছে রিপোর্ট করে। আধুনিক যুগ, তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে দূরবর্তী ব্যবস্থাপনায় বিশেষ অসুবিধা বোধ হয়না কখোনোই। ইমেইল আছে, স্কাইপ-ইল্যুমিনেট আছে, ফোন আছে, কাজ চলে যায়। তাই যাবো যাবো করেও পরিকল্পনা চুড়ান্ত করতে পারছিলাম না। ওরা অবশ্য আমার জন্যে সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্সের প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছিলো এবং তা আশাতীত কম সময়ের মধ্যে পেয়েও গেলাম। পরিকল্পনা ছিলো আফগানিস্তানে যাবো কিন্তু ক্লিয়ারেন্স লেটার ইস্যু করার এক মাসের মধ্যে শ্রীলঙ্কায় না ঢুকলে আবার নতুন করে প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। আমার বস আমাকে আফগানিস্তান না গিয়ে শ্রীলঙ্কা যেতে বললেন কিছু অতীব জরুরী কিছু বিষয় ম্যানেজ করার জন্যে। ভিসা আবেদন করার পরের দিনই ভিসা দিয়ে দিলো। শ্রীলঙ্কার ভিসা নিতে গেলে অবশ্যই ২ সপ্তাহ অবস্থানের জন্যে ১,০০০ এবং তার বেশি কিন্তু এক মাস পর্যন্ত ভিসা নিতে ২,০০০ ডলার দেখানো আবশ্যিক। কলম্বো বিমানবন্দরেও নাকি কাস্টমসের কাছে এগুলো দেখাতে হয়। এছাড়া ব্যাংক স্টেটমেন্ট দাখিল তো আবেদনপত্রের সাথে আবশ্যিক। ওই ক্লিয়ারেন্স চিঠির বদৌলতে আমি এইসব দাখিল করার প্রয়োজনীয়তা থেকে মুক্তি পেলাম। এমিরেটসে টিকেট করলাম ঢাকা-দুবাই-কলম্বো-মালে-দুবাই-ঢাকা।

বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পেরোতে গিয়েই খেলাম এক ধাক্কা। এমনই এক প্রজাতির একজন মানুষের সামনে পড়লাম যাদের আল্লাহর রহমত লাগেনা। সেখানে থেকে মুক্তি পেয়ে, দুবাই গিয়ে রাতটা কাটিয়ে, পরদিন দুপুরে কলম্বো বন্দরনায়ক বিমানবন্দরে নামলাম। ওখানকার ইমিগ্রেশন এবং কাস্টমসের কর্মীরা হাসিমুখে কথা বলে, শুভেচ্ছা জানালে সেটা প্রত্যুত্তর করে, এবং দাঁড়িয়ে সেবা প্রদান করে কারন ওদের ডেস্কের সাথে কোনও চেয়ার নেই। ওরা রিডিং গ্লাসের ফাঁক থেকে কুৎ কুৎ করে তাকায় না এবং অযথা প্যাঁচাল পাড়েনা। সবার সাথেই স্যার বলে সম্বোধন করে কথা বলে।

অফিস থেকে আমার জন্যে ইনডিয়ান ওশানের একদম পাড়ে একটা হোটেলে থাকার ব্যবস্থা করেছে। দ্য গ্লোবাল টাওয়ার হোটেল। হোটেল এবং সমুদ্র সৈকতের মাঝে চিকন কিন্তু ব্যাস্ত একটা রাস্তা আর রেললাইন। হোটেল থেকে সৈকতে যেতে সর্বোচ্চ ৩০ কদম হাঁটতে হয়। শ্যামাঙ্গিনী, স্থুলবক্ষা, গুরুনিতম্বিনী, কিন্তু মায়াকাড়া দৃষ্টির ডিউটি ম্যানেজার যমুনা স্বাগত জানালো। মেয়েটি নিখুঁত ভাঁজে শাড়ি পরা কিন্তু সিংহলি স্টাইলে নয়, আমাদের দেশের মেয়েদের মতো করে। তামিল, মুসলিম এবং আমাদের দেশের নারীদের শাড়ি পরার কায়দা আবার একই। সিংহলি স্টাইলে শাড়ি পরা হচ্ছে, সাধারণভাবে ওরা শাড়ি পরবে কিন্তু কোমর থেকে শাড়ির অংশের বিঘৎখানিক অতিরিক্ত কুঁচিযুক্ত কাপড় ঝালরের মতো কোমরের চারদিকে ছড়িয়ে থাকবে। আর আঁচলটা বেশ পরিটাটি করে চিকন ভাজে বুকের বাঁ দিকের উপর হয়ে পিছনে পড়ছে। এতে করে যুগল পুর্ণিমার দক্ষিণাংশ উন্মুক্তই থাকছে। আমার কামরাটাও পেলাম সমুদ্রের দিকে মুখ করা। কাঁচের দরজার পিছনে দাড়িয়ে সাগর দেখা যায়।

প্রথম বিকেলটা অফিসে সৌজন্যস্বাক্ষাতেই কাটিয়ে দিলাম। তখনই কান্ট্রি ডিরেক্টর ব্রিফিঙে গ্রীজ ডেভিলদের কথা জানালো। পরে দিনের পুরোটা কুত্তাব্যাস্ত থাকতে হলো একটা সিভিল কন্সট্রাকশন কনসালট্যান্সি প্রতিষ্ঠান নিয়োগের দরপত্রগুলো মূল্যায়ন এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে মিটিঙে। ভাবলাম হোটেলে ব্যাগটা রেখে শ্রীলঙ্কা-অস্ট্রেলিয়ার একদিনের ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধটা দেখে আসি। কিন্তু হোটেলের বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েই ঘুমে ঢলে পড়লাম। যখন ঘুম ভাংলো তখন খেলা প্রায় শেষ। আমি স্টেডিয়াম পর্যন্ত যেতে যেতে আর খেলা অবশিষ্ঠ থাকবেনা। এরপর একটু হাঁটার উদ্দেশে বাইরে বেরোলাম। হোটেলের গেটের সামনে দাঁড়াতেই রাস্তা পেরিয়ে এক যুবক এসে শুভসন্ধা জানিয়ে কথা বলার অনুমতি চাইলো। নিচুগলায় জানালো যে ওর কাছে সুন্দরী রাশান এবং চাইনিজ মেয়েরা আছে। দরটাও রিজনেবল পড়বে। আমি রহস্যঘেরা দৃষ্টিতে একটু ভ্রু উঁচু করে উত্তরে বললাম যে রাশান বা চাইনিজ মেয়েদের সাথে সঙ্গম করতে তো শ্রীলঙ্কায় আসিনি, যদি সুন্দরী যৌনাবেদনময়ী একজন সিংহলী মেয়ে পাই তো ভেবে দেখতে পারি। পিম্প একটু হতাশার সুরে বললো যে ওদের মেয়েরা কক্ষোনো এটা করেনা। আমিও ওকে ধন্যবাদ জানিয়ে কৃত্তিম হতাশার সুরে ব্যাক্ত করলাম যে আমার তাহলে স্বেচ্ছাশ্রমের বিকল্প নেই। পিম্প সরি বলে চলে গেলো আর আমিও একটু হাঁটাহাটি করে হোটেলে ফিরলাম।

পরের দিনটাও মিটিং সিটিং করে ব্যাস্ত সময় কাটিয়ে সন্ধার আগে আগে শহর ঘুরতে বেরোলাম। আমাদের অফিসে গাড়ি আছে কয়েকটা। আর ছোটখাট ঘোরাফেরার জন্যে একটা যন্ত্রচালিত ত্রিচক্রযান আছে। মাসিক চুক্তিতে এটা সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত আমাদের ডিউটি করে। তারপর রমেশ ২-৩ ঘন্টা আবার নিজের মতো চালায় ওটা। ওটার মালিক-চালকের নাম রমেশ। অত্যন্ত বিনয়ী এবং ভালো ইংরেজি জানা ছেলে রমেশ। আমাকে নিয়ে দেখাতে লাগলো শহরের বড়ো বড়ো সব শপিং মলগুলো। আমি ওকে জানালাম যে মলগুলোতে ঘুরবো মাঠ থেকে ফেরার পর। ওকে বললাম দর্শণীয় স্থানগুলোতে নিয়ে যেতে। দূর্ভাগ্য সন্ধা নেমে যাওয়ায় সবকিছুই বন্ধ। তা ও ঘুরলাম। শহরের বন্দর কর্তৃপক্ষের অফিসের সামনে পেলাম একটা পিতলের মুর্তি। আড়াইশো বছরের পুরোনো।

দেখলাম বিশাল আকারের একটা হাতে টেলিফোনের হ্যান্ডসেট ধরা ভাষ্কর্য। এটা টেলিযোগাযোগের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক উন্নতি সাধনের একটা স্মারক।

দূর থেকে দেখলাম কলম্বো টাউন হল এবং ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল। অন্ধকারে অবশ্য ভালোমতো দেখা গেলোনা কিছুই। সাথে ছিলো নতুন কেনা নাইকনের একটা পশু। ওটাকেও ঠিকমতো কব্জা করতে পারছিলাম না।

দেখলাম শ্রীলঙ্কার স্বাধীনতার মন্যুমেন্ট। চারদিকে সিংহমুর্তি পরিবেষ্ঠিত একটা স্থাপনা।

আরও কিছুক্ষণ ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত হয়ে হোটেলে ফিরলাম। পরদিন যেতে হবে উত্তরাঞ্চলীয় রাজধানী ভাভুনিয়ায়

ভাভুনিয়া কে মুখে মুখে প্রায় সবাই বলে ভাউনিয়া। কলম্বো থেকে সকাল ৯টায় চুম্বনযাত্রা শুরু করলাম। না, এ চুম্বন কোনও নর-নারীর চুম্বন নয়। এ চুম্বন ঘটবে গাড়ির সাথে গাড়ির। পথে ডাম্বুল্লা নামের একটা জায়গায় আমরা এবং ভাভুনিয়া থেকে আসা গাড়ি মিলিত হবো। এরপর আমি গাড়ি বদলে ভাভুনিয়ার গাড়িতে চড়ে বাকী পথ পাড়ি দেবো। এজন্যেই এটাকে আমরা বলি ‘কিস ট্রিপ’। কলম্বো শহর ছেড়ে বেরিয়ে চলতে থাকলাম ডাম্বুল্লার উদ্দেশ্যে। চার ঘন্টার পথ। পথের দুপাশে সবকিছুই আমাদের দেশেরই মতো। দিগন্তজোড়া ধানক্ষেত-

পথে একটু দেরী হলো অবশ্য। এক জায়গায় রাস্তার অর্ধেকটায় কাজ চলছে তাই একপাশ ধরেই পালাক্রমে কিছু গাড়ি যাচ্ছে আর কিছু আসছে। ডাম্বুল্লায় দারুন একটা ধাবা ধরণের রেস্টুরেন্টে দুপুরের খাবার সেরে যাত্রা করলাম ভাভুনিয়ার পথে। দুই ঘন্টার যাত্রা। ভাভুনিয়া পৌঁছতে পৌঁছতে বিকেল। কিন্তু কয়েকজন সহকর্মী অপেক্ষা করছিলো আমার জন্যে। চা খেতে খেতে ওদের সাথে কথা বলে গেলাম যেখানে থাকার জায়গা সেখানে। এটা একটা এনজিওর খামার বাড়ি। শহর থেকে বেশ একটু দুরে একদম গ্রামের মধ্যে। সেখানে ট্রেনিং সেন্টার আছে, ডরমিটরি আছে, একটা সুইমিং পুলও আছে। আর আছে একটা কুকুর প্রজনন খামার। কিন্তু ওদের ব্যবস্থাপনা একদম যাচ্ছেতাই। বোঝা গেলো ওদের আন্তরিকতার অভাব নেই। কিন্তু দক্ষতা এখনও অর্জন করে উঠতে পারেন কর্মীরা। সন্ধায় বলেছিলাম আমার জন্যে ডিনারে ফ্রাইড রাইস দিতে কারন আমি নুডলস একদমই পছন্দ করিনা। আর এ দুটোই ওখানে ডিনারের অপশন ছিলো। খেতে গিয়ে দেখি এক চাইনিজ ব্যাটা, ডাইনিঙের কর্মীদের সাথে শুরু করেছে বেদম ঝগড়া, চিনা যুবক আর ডাইনিঙের কর্মীরা, দুই দলেরই ইংরেজি বড় নাজুক। খেতে দিয়েছে কিন্তু পানি নেই। অন্য কোনও কোমল পানীয়ও নেই। কি এক ফ্যাসাদ। সবথেকে রাগ হলে যখন দেখলাম ওরা আমার ফ্রাইড রাইস চাইনিজকে দিয়ে আমার জন্যে নুডলস রেখেছে। কোনরকম সামান্য একটু গিলে রুমে এসে পানি খেলাম আর ঠিক করলাম এখানে আর খাওয়া নয়। চাইনিজ আর আমি একসাথেই হেঁটে আসলাম ওর মোবাইলের আলোয় পথ দেখে। চাইনিজের রুম আর আমার রুম একই ভবনে। সে একজন মোবাইল ফোন টাওয়ারের টেকনিশিয়ান। রাত ৮ টার দিকে এক সহকর্মী আসলো আলাপ করতে। সারাদিন মাঠে থাকায় ওদের সাথে আলাপ করার সুযোগ সীমিত তাই এখানেই সেরে ফেললাম। তারপর একঘুমে সকাল।

সকালে বেরোলাম কাজে। অফিসে গিয়ে এক মগ চা গিলে বেরিয়ে পড়লাম ফিল্ডের উদ্দেশ্যে। প্রথমে দেখতে গেলাম একটা দুধ প্রক্রিয়াজাতকরণ প্ল্যান্ট। তখনও চালু হতে সপ্তাহখানেক বাকী। তবে যন্ত্রপাতি সবকিছু স্থাপন করা হয়ে গেছে। এটা আমরা করে দিয়েছি স্থানীয় গৃহভিত্তিক ক্ষুদ্র দুগ্ধউৎপাদনকারীদের ডেইরি ভ্যালু চেইনে শক্তিশালী একটা অবস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে। সমবায় ভিত্তিতে এরা এটা পরিচালনা করবে এবং সদস্যরাই এর মালিক থাকবে। শুরুতে ওরা দুধ পাস্তরাইজেশন করবে আর সাথে সাথে চকোলেট, টফি, এইসব বানাবে অল্প পরিমানে।

এরপর গেলাম একটা ধানের বীজের একটা সমবায় গুদামে। এখানে সদস্যরা তাদের বীজ সংরক্ষণ করে। বিশাল গুদাম, তাতে সারি সারি বীজের বস্তা রাখা। প্রতিটা লটের উপর কাগজে মালিকের নাম লিখে রাখা। সমিতির সেক্রেটারীর মেয়ে আমাদের গুদাম খুলে দেখালো এবং আমার বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে লাগলো।

এবার চললাম ইরিগেশন প্রকল্পের চ্যানেল সংষ্কারের কাজ দেখতে।। সরু রাস্তা বেয়ে চলেছি। হঠা সামনে থেকে একটা হরিণ দৌড় দিলো। একদম যেনো আমাদের চিত্রল হরিণ। হয়তো চিত্রল হতেও পারে। এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখি আরও অনেকগুলো দুর থেকে ডাগর আঁখি মেলে আমাদের দেখছে।

এই এলাকাটায় একসময় বেশকিছু পরিবার বসবাস করতো। কিন্তু গৃহযুদ্ধের বিভিন্ন সময় তারা এলাকা ছেড়ে ইনডিয়ায় চলে যেতে বাধ্য হয়। সেই থেকে এলাকাটা জনশুন্য। সম্প্রতি অনেকেই ফিরে আসছে কিন্তু তাদের কাছে জমির কাগজপত্র নেই। সরকার এরকম প্রায় ৫০ টা পরিবারকে এই এলাকায় পুনর্বাসিত করেছে। সেই বহুকাল আগের ইরিগেশন চ্যানেল ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। সেটাই আমরা আবার নতুন করে তৈরী করে দিচ্ছি ওদের চাষাবাদের সুবিধার্থে।

এখান থেকে ভাভুনিয়ায় ফিরে বিকেলে দেখা পেলাম পুরোনো বন্ধু সন্তুরণের। বছরখানের আগে ওর সাথে কোপেনহেগেনে দেখা হয়েছিলো এবং কয়েকদিন একসাথে ছিলাম। খুব ভালো লাগলো ওকে দেখে।

পরেরদিন সকালে অফিসে এসে চা গিলে, মেইল চেক করে, বিড়ি সিগারেট টেনে আস্তে আস্তে রওনা করলাম বাট্টিকালোয়ার পথে। বাট্টিকালোয়াকে এরা সংক্ষেপে বলে বাট্টি। পথে যেতে যেতে দেখলাম কিভাবে ট্রাফিক পুলিশ পোর্টেবল স্পীডোক্যাম দিয়ে ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে থেকে গাড়ির গতি মাপছে। পথে পড়ছে একটার পর একটা মন্দির আর শয়ে শয়ে বাঁদর।

আধাপথ গিয়ে পোলোন্নুওয়ারায় আমাদের চুম্বন হবে বাট্টিকালোয়া থেকে আসা গাড়ির সাথে। চুম্বনকেন্দ্রের কিছুটা সামনে এক অতিপ্রাচীন শহর, এনশিয়েন্ট সিটি অব পোলোন্নুওয়ারা। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের একটা তীর্থস্থান এবং অন্যদের জন্যে দর্শণীয়।

নতুন গাড়ির চালককে নিয়ে লেকের পাড়ে একটা ঐতিহাসিক রেস্টুরেন্টে লাঞ্চ করতে গেলাম। ১৮৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত পোলোন্নুওয়ারা রেষ্ট হাউস। ১৯৫৪ সালে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ এবং ডিউক অফ এডিনবরা এখানে এসে অবস্থান করে। তখন রানীর ব্যাক্তিগত পছন্দ ও স্বাচ্ছন্দ বিবেচনায় রেখে এই রেষ্ট হাউসের খোলনলচে বদলে ফেলা হয়।

বুফে তখন প্রায় শেষ। ড্রাইভার আগেই খেয়ে নিয়েছে শহর থেকে তাই একাই খেতে বসলাম। দামী রেস্টুরেন্টে তিনবেলা খাবার পয়সায় একখানে একবেলা খেলাম, তাও ভালোভাবে না। এতো দাম গুনতে হলো শুধুমাত্র রেস্টুরেন্টটার ঐতিহাসিক মূল্যের জন্যে। মনকে শান্তনা দিলাম যে যেখানে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ সস্বামী অবস্থান করেছেন, যে রেষ্ট হাউস রানীমাতার নিতম্বপাতে এবং রাজদম্পতির মলমুত্রত্যাগে কূলীন হয়েছে, সেখানে কঞ্জুসের মতো খাবারের দাম নিয়ে চিন্তা না করে বরং নিজেকে ধন্য মনে করাই সমীচিন হবে। একটা ব্যাপার বেশ ভালো লাগলো, এখানের ওয়েট্রেসরা সবাই বেশ বয়ষ্ক এবং যথেষ্ঠ ঢাকাঢোকা পোষাক পরা, অনেকটা নানদের মতো। অত্যন্ত মাতৃসূলভ আচরণ করছে তারা। লেকের পাড়ে দাঁড়িয়ে বিড়ি খেলাম। ওয়েটার বিল নিয়ে সেখানেই আসলো। তখনই আসলে বিলের অংক দেখতে পেলাম। প্রায় ১,৪০০ শ্রীলঙ্কান রূপী! কৃত্তিম হাসিতে উদ্ভাসিত হয়ে ক্রেডিট কার্ড বের করে দিলাম। দেখতে পেলাম লেকের অন্য পাড়ে একটা হাতি এসে পানি খাচ্ছে।

ওখানে থেকে বেরিয়ে ড্রাইভারকে অনুরোধ করলাম আমাকে একটু সেই এনশিয়েন্ট সিটি অব পোলোন্নুওয়ারায় নিয়ে যেতে। সে সহাস্যে রাজী হলো। কিন্তু কাছে গিয়ে ঢুকতে পারলাম না সময়স্বল্পতার কারনে। ওখানে ঢোকার মাত্র একটা পথই আছে কিন্তু সেটা অনেক দূরে। সেখানে থেকে ঢুকে পায়ে হেঁটে মূল প্রতিমার কাছে আসতে হয়। রাজা পরাক্রমবাহু দ্বাদশ শতকে এই শহর বুদ্ধনিবাস তৈরী করেন। আমি রাস্তা থেকে কয়েকটা ছবি তুললাম। কিন্তু ভিতরে যে কি ঐশ্বর্য্য আছে তা পুরো না দেখলে কল্পনা করাই যায়না। আপনাদের জন্যে কিছু সূত্র দিচ্ছি ওখানের ছবিগুলো দেখার। এখানে, এখানে এবং এখানে ক্লিক করেন।

একটা ব্যাপার উল্লেখ করতে হয়, শ্রীলঙ্কায় প্রায় প্রতিটা রাস্তার মোড়ে দেখতে পাবেন হয় বুদ্ধ নয়তো বিশিষ্ঠজনেদের মুর্তি।

আর তামিল অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে কিছুদুর পরপর বর্ণাঢ্য মন্দির একটার পর একটা। নিচের ছবিরটা রাস্তার পাশের ছোট্ট একটা মন্দির।

প্রায় সন্ধ্যা নেমে আসলো বাট্টি পৌঁছতে। গেষ্ট হাউসে ওঠার পর সহকর্মী দেখা করতে আসলো। ওর সাথে প্ল্যান করলাম পরদিন নিকটস্থ সমুদ্র সৈকতে যাবো। এই গেষ্ট হাউসে মাত্র একরাতের জন্যে থাকতে হবে। ওরা চলে গেলে রাতের খাবারের অর্ডার দিয়ে দেড় ঘন্টা পর খাবার পেলাম। তারপর খেয়ে দেয়ে ঘুম এবং এক ঘুমে সকাল।

সকালে চেক আউট করে নদীর একদম পাড় ঘেসে রিভিয়েরা গেষ্ট হাউসে চেক ইন করেই বেরিয়ে পড়লাম সৈকতের উদ্দেশ্যে। এই প্রাইভেট কটেজটাতে আমার থাকার ব্যবস্থা হয়েছিলো।

ছোট্ট একটা সৈকত কিন্ত লোকারণ্য। একদল এসেছে ঢোল নিয়ে, দমাদম পিটাচ্ছে আর কেউ ডাঙায় আর কেউরা কোমর পানিতে দাঁড়িয়ে নাচছে।

কিছুটা জায়গা ঘিরে বাচ্চাদের এবং সাঁতার না জানাদের সাঁতরানোর ব্যবস্থা করা আছে। কেউ কেউ আবার স্পীডবোট নিয়ে একপাক ঘুরে আসছে।

দেখতে পেলাম দুর থেকে একজন উইণ্ড সার্ফিং করে পানির বুক চিরে তীরের দিকে ধেয়ে আসছে। কাছে আসতেই আশ্চর্য হয়ে দেখলাম যে ওটা বড়জোর ১০ বছরের একটা বাচ্চা।

অন্যসব সৈকতের মতো এখানেও ছোট্ট একটা বাজার আছে কিন্তু খাদ্যসামগ্রী ছাড়া বাজারের সবকিছুই বিদেশী বিশেষ করে চায়নিজ।

ওখান থেকে ফিরে বাট্টির মুসলিম অধ্যুষিত এলাকার একটা বেশ নামকরা রেস্টুরেন্টে বসে দুটো গিলে কিছু স্থাপনা দেখতে গেলাম। এখানে দেখলাম প্লেটটা অত্যন্ত পাতলা পলিথিন দিয়ে মুড়ে রাখা হয়েছে এবং খরিদ্দাররা সেই পলিথিনের উপরেই খাবার নিচ্ছে। এটার কারন হলো এখানে গরুর গোশত বিক্রি হয় এবং গরুর গোশত দিয়ে খাওয়া প্লেটে খাবার খেতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা যাতে বিব্রত না হয়।

একে একে দেখলাম বাট্টিকালোয়া গেইট এবং তার ঠিক পাশেই সলোমন বন্দরনায়েকের একটা বিশাল তাম্রমুর্তি।

কাছাকাছি এলাকায় দেখলাম অনেক বড় জায়গা নিয়ে গড়ে ওঠা এক মসজিদ।

এটার ঠিক পাশেই বৃটিশদের তৈরী এক দূর্গ। বর্তমানে এটা সরকারের তহশিল অফিসে রূপ নিয়েছে। বাইরে থেকে দেখে মনে হলো এরা সংষ্কারের নামে দূর্গটার আচ্ছামতো বারোটা বাজিয়েছে।

গেলাম বিখ্যাত বাট্টিকালোয়া লেগুনের পাড়ে ১৯১৩ সালে স্থাপিত সেই ঐতিহাসিক বাতিঘরে। এখানে দেখলাম একটা সোলার প্যানেল লাগানো একদম চুড়ার গম্বুজের সাথে। ওটা ব্যাটারীতে চার্জ দেয় এবং সেই চার্জে রাতের বেলায় একটা নির্দিষ্ট সময়ে ওই বাতিঘরের বাতি জ্বলে।

পরেরদিন গোটা দিনটাই কাটলো একটার পর একটা মিটিঙে। উল্লেখযোগ্য কিছুই ঘটলো না। সন্ধার পর গেষ্টহাউসের রেস্টুরেন্টে বসে রাত ১১টা পর্যন্ত মেইল চেক এবং সচলায়তনের জন্যে একটা লেখা তৈরীতে কেটে গেলো।

পরদিন সকাল থেকেই বেরিয়ে পড়লাম। বাট্টি থেকে বেশ খানিকটা দুরের একটা গ্রামে গেলাম। এই গ্রামটা একসময় এলটিটিই গোরিলাদের শক্ত একটা ঘাঁটি ছিলো। অসংখ্য পরিত্যাক্ত বাঙ্কার দেখলাম সেখানে। যেতে যেতে পথে দেখি একদল শিশুকিশোর কিছু একটা নিয়ে খেলছে,

একদল মোষ নাক পর্যন্ত পানিতে ডুবিয়ে বসে আশ্রয় নিয়েছে তীব্র গরমের যাতনায়,

একটা পাখি আনমনা দাঁড়িয়ে আছে,

ফিরতি পথে একটা সভাস্থলে দাড়ালাম। এখানে প্রত্যাগত তামিল পরিবারগুলোকে নিয়ে আলোচনাসভা হচ্ছে। এদের সবারই জমিজমার কাগজপত্র হারিয়ে বা নষ্ট হয়ে গেছে। আমরাই এদের শান্তিপূর্ণ উপায়ে হারানো জমিজমা পূনরুদ্ধারের ব্যাপারে সহযোগিতা করছি। এই সভায় আমরা আমন্ত্রণ জানিয়েছি সাবেক জেলা ভূমি কর্মকর্তাকে প্রধান বক্তা হিসেবে। তার সাথে আরও আছে বর্তমান জেলা ভূমি কর্মকর্তা। তারা প্রত্যাগতদের জমি ফিরে পাওয়ার জন্যে গ্রহনীয় খুটিনাটি বিষয়গুলো বুঝিয়ে দিচ্ছে।

সেখান থেকে ফিরে লাঞ্চ সেরে যাত্রা করলাম আমপারা জেলার উদ্দেশ্যে। আমপারা নামটা অনেকের কাছেই বিশেষ পরিচিত। এটা সম্ভবত জাফনার পরেই এলটিটিই গোরিলাদের সবথেকে বড় এবং শক্তিশালী ঘাঁটি ছিলো। এক প্রত্যাগত উপকারভোগীর বাড়িতে গিয়ে দেখলাম বিধ্বস্ত ঘরে কোনওরকমে ওরা বসবাস করছে। ওদের আঙিনায় আর বাড়ির পাশের ফাঁকা জমিতে সব্জী ফলিয়েছে। পাখিদের অত্যাচার থেকে বাঁচার জন্যে একটা বন্দুক বসিয়েছে আর হাতির আচমকা আক্রমন প্রতিহত করার জন্যে বসিয়েছে ওয়াচ টাওয়ার।

এবারের গন্তব্য অনেক দূরের একটা জায়গায় যেখানে আমরা ইরিগেশন সিস্টেম মেরামত করে দেবো। রাস্তার পাশে এতো ময়ুর কল্পনা করা যায়না। শয়ে শয়ে বললে কম বলা হবে, বলতে হবে হাজারে হাজারে ময়ুর।

রাস্তার পাশের ক্ষতবিক্ষত বাড়িঘরগুলো সেই অশান্ত দিনগুলো স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এখনও মেরামত করার মতো সামর্থ আসেনি বাসিন্দাদের।

এরপর মাইনফিল্ডের ভিতর দিয়ে ১০ ফিটের মতো এক চিলতে ডিমাইনিং করা কাঁচা রাস্তা ধরে এগিয়ে চললাম গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। গাড়ি থেকে নেমে এদিক ওদিক তাকাচ্ছি। পিসুতে তলপেট ফেটে যাচ্ছে কিন্তু কিছু বলতে পারছি না। ভাগ্যিস আশেপাশে কোনও লোকজন নেই। সঙ্গীদের একটু এগিয়ে যেতে বলে একটা গাছের আড়ালে গিয়ে ঝেড়ে দিলাম। তারপর তাকিয়ে দেখি দলের সবাই একটা একটা গাছের নিচে দাঁড়িয়ে এ্যাকশানে চলে গেছে। দারুন একটা পাখি দেখলাম গাছের ডালে কিন্তু নামটা মনে করতে পারলাম না।

ফিরে চললাম বাট্টি অভিমুখে প্রচণ্ড ব্যাস্ত একটা মাঠের দিন কাটিয়ে। ফেরার পথে আবারও সেই ময়ুরের দঙ্গল।

পরদিন দুপুরে যাত্রা করলাম কলম্বোর দিকে যথানিয়মে কিস ট্রিপ মেথডে। পথে বিশাল একটা মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় গাড়ি থামিয়ে ড্রাইভার লাঞ্চ করতে নিলো। লাঞ্চ শেষে বাইরে এসে বিড়ি ধরালে ড্রাইভার বিনীতভাবে ভিতরে গিয়ে টানতে বললো। ভিতরে মানে ক্যাশ কাউন্টারের পাশে দাঁড়িয়ে। ড্রাইভার ব্যাখ্যা করলো যে যেহেতু রমজান মাস এবং এখানে সবাই খুবই ধর্মভীরু। তবে একজন বিদেশীকে বিড়ি টানার জন্যে তারা কিছুই বলবে না শুধু কষ্ট পাবে। এছাড়া এই এলাকার হিন্দু বা বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষ রমজান মাসে প্রকাশ্যে ধুমপান করেনা।

কলম্বোতে ফিরে বাকী দুইদিন ব্যাস্ততার ভিতরে কাটালাম। বিকেলের দিকে একটু শপিঙে গেলাম। মার্কেটগুলোতে ঈদের জন্যে প্রচণ্ড ভিড়। বিভিন্ন আয়ের মানুষদের জন্যে বিভিন্ন অপশন, যে যেমন পারছে, কিনছে। বাড়ির সবার জন্যেই কিছু না কিছু কেনাকাটা করলাম এবং যথারীতি রাফিনেরই সবথেকে ভালো বণিজ্য হলো। সন্ধ্যায় গেলাম কলম্বোর সবথেকে বিখ্যাত এ্যান্টিক শপে। সেখানে শ্বেতপাথরের তৈরী বিশাল একটা বৌদ্ধমুর্তি,

পরদিন গোছগাছ করতে করছে সময় কেটে গেলো। দুপুরের দিকে বেরোলাম বাজারে। শুধু নিজের জন্যে বিখ্যাত স্টিল ব্লু ফ্যাশনহাউস থেকে একটা শার্ট কিনলাম। এবার ফেরার পালা তাই ফেরতযাত্রায় নেমে পড়লাম অনেক স্মৃতি আর অভিজ্ঞতা সাথে নিয়ে।

সেই প্রথম দিনের দেখা কৃষ্ণকলি যমুনা আমাকে বিদায় জানালো।


মন্তব্য

কল্যাণF এর ছবি

হাততালি , খালি একটা জিনিস কিলিয়ার করেন রাতঃদা' মাইন ফিল্ড পার হইয়া হালকা হইছিলেনতো?

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

মাইনফিল্ড পার হওয়ার পরপরই ঝেড়েছি।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

স্বপ্নাদিষ্ট এর ছবি

হো হো হো

-স্বপ্নাদিষ্ট
=======================
যে জাতি নিজের ভাগ্য নিজে পরিবর্তন করে না, আল্লাহ তার ভাগ্য পরিবর্তন করেন না।

guest_writer এর ছবি

আমাদের অ্যাপার্টমেন্টে দুই দফায় দুটো শ্রীলঙ্কান পরিবারের বাস ছিল। তাঁদের কাছ থেকে তাঁদের দেশের রাজনৈতিক, সামাজীক পরিপ্রেক্ষিত সম্পর্কে কিছুটা ধারনা পেয়েছিলাম। আপনার ছবি-ব্লগ থেকে আরও কিছু জানা হল। তাঁদের কাছ থেকে জেনেছিলাম তাঁদের দেশও দূর্নীতিতে হাবুডুবু খাচ্ছে।

ছবিগুলো ভাল লাগলো।

আর কৃষ্ণকলিদের উদ্দেশ্যে একি উর্দু শায়েরী,

" তুমহারা এ কালে রঙ ফেরেশতাকে ভুলছে,
ও তিল বানা রাহেতে আউর ফিসায়ী পিছাল গ্যায়ি।"

প্রৌঢ়ভাবনা

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

আপনি ঠিকই জেনেছেন, দুর্নীতি শ্রীলঙ্কার প্রতিটি সেক্টরকে গ্রাস করেছে এবং এই দুর্নীতির হোতারা হচ্ছে প্রায় সবই সিংহলী। এখানে আরেকটা খুবই খারাপ বিষয় হচ্ছে সিংহলী কর্তৃক তামিল এবং মুসলিমদের দমন-পীড়ন এবং বঞ্চনা। মুখ ফুটে একটা কথা বলারও কোনও উপায় নেই তামিল ও মুসলিমদের।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

রাতঃদা, প্রথম ছবিটা অসাধারণ। কালো হরিণ চোখ বোধহয় একেই বলে। লেখা পড়ছি। কিন্তু শুধু প্রথম ছবিটার জন্যেই গুরু গুরু

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

ওটা সম্ভবত দ্যা ডেইলি টেলিগ্রাফ থেকে মেরেছি। লিংক অবশ্য দেওয়া আছে কৃষ্ণকলির সাথে।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

পাঠক এর ছবি

ভালো লেগেছে পড়ে। পড়তে পড়তে আমিও বেড়িয়ে আসলাম শ্রীলঙ্কা থেকে। অনবদ্য। হাসি

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

তাহলে আমার অন্য লেখাগুলোও ঝটপট পড়ে ফেলুন, মুফতে অনেক বেড়ানো হবে।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

guesr_writer rajkonya এর ছবি

ধানক্ষেতের ছবিটা দেখে মনে হলো যেন বাংলাদেশ!

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

আমারও একই অনুভূতি হয়েছিলো।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

কৌস্তুভ এর ছবি

লম্বা লেখা, কিন্তু পড়তে ভালো লাগল। আপনার লেখার স্টাইলটা তাড়াহুড়োয় লেখা জার্নাল টাইপের। দেঁতো হাসি

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

লেখার প্রথম ২৫ শতাংশ অনেক ধীরে সুস্থে লিখেছিলাম কিন্তু বাকী ৭৫ শতাংশ সুপার স্পীডে মেরেছি।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

শাব্দিক এর ছবি

চলুক

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

হাসি

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

সুলতান এর ছবি

আপনার ভ্রমন কাহিনীগুলো পড়ে ঐ জায়গাগুলোতে যেতে ইচ্ছা করে। অপেক্ষায় আছি। জানিনা কবে অপেক্ষার প্রহর শেষ হবে। ধন্যবাদ লেখাটার জন্য।

-মানিক

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

হুটহাট করে বেরিয়ে পড়ো। প্ল্যান করে বেড়ানোর প্ল্যান করতে গেলে প্ল্যানেই সময় চলে যায়।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

সুমিমা ইয়াসমিন এর ছবি

আপনার লেখা ও ছবিতে শ্রীলংকা ঘুরে এলাম।

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

পাঠকের প্রতিমন্তব্যের কপি পেস্ট। দেঁতো হাসি

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

 তাপস শর্মা  এর ছবি

দরুন উপভোগ্য। ছবি গুলোও খুবই সুন্দর। তবে খুব বড় হয়ে গেছে লেখাটা, তবুও শেষ পর্যন্ত পড়ে ঠকতে হয়না পাঠককে

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

একবার ভেবেছিলাম লেখাটা দুটো পর্বে দেই। কিন্তু পরে আবার মত বদলালাম। কেনো বদলালাম তা কিন্তু জানিনা!

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

তারেক অণু এর ছবি

চলুক ঐ দারুণ পাখিটা এক ধরনের ধনেশ, রাজধনেশ হতে পারে। আনমনা দাড়িয়ে থাকা পাখিটি কাস্তেচরা। ইস, এত কাছে পেলেন কি করে!!

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

আমার ছোট্ট 'পশু'র আলট্রাজুম ব্যবহার করেছি। তাই দেখবেন পিক্সেল ভালো আসেনি।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

কাঠের সেনাপতি এর ছবি

সম্ভবত এটা - Indian Pied Hornbill (Anthracoceros coronatus)

উইকি লিঙ্ক

তাসনীম এর ছবি

পড়তে বেশ লেগেছে।

সচলে ভ্রমণকাহিনি পড়ে প্রায়ই দীর্ঘশ্বাস ফেলতে হয়। কত জায়গাতেই যাওয়া হোল না।

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

কত জায়গাতেই যাওয়া হোল না।

বেরিয়ে পড়লেই তো হয়।

আমি কিন্তু আপনার স্মৃতিচারণমূলক লেখাগুলোর বেজায় ভক্ত। ওই লেখাগুলো আমাকে শৈশবে-কৈশোরে ফিরিয়ে নিয়ে যায়।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

ঘ্যাচাং

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

উচ্ছলা এর ছবি
রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

হাসি

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

তানিম এহসান এর ছবি

পড়তে পড়তে, দেখতে দেখতে হঠাৎ মনে হলো অনেকদিন পর আপনার এইরকম একটা লেখা পড়ছি! হিথ্রোর ২০ পাউন্ড এ মন্তব্য করতে পারিনি সময়ের অভাবে, এখানে জানিয়ে গেলাম, নিয়মিত পড়তে চাই হে রাতঃ স্মরণীয় রাতের পথিক!

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

আমিও নিয়মিত লিখতে চাই কিন্তু সময়ের সাথে অনেকসময় পেরে ওঠা যায়না। তবে আপনাদের উৎসাহ আমাকে লিখতে শক্তি যোগায়।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

দ্যা রিডার এর ছবি

চলুক

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

হাসি

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

পাঠক এর ছবি

ঘুরে এলাম শ্রিলঙ্কা, আপনার সাথে। যমুনার ছবি দিন।

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

যমুনার ছবি দিয়ে আপনার হৃদচাঞ্চল্য বাড়াইতে চাইনে যে!

আসলে তার সাথে কোনও ছবিই তোলা হয়নি। মনের ক্যামেরায় তাকে ধরে রেখেছি।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আপনার অফিসে একটা ছোটখাটো চাকরি দেন তো ভাই...

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

লইজ্জা লাগে

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

বন্দনা এর ছবি

রাতঃদা লিখা ছবি দুটাই ভালো হয়েছে, কিন্তু কলম্বো যাবার জন্য দুবাইতে ট্রানজিট ভয় পাইছি। কলম্বোতে আমার ৭ ঘন্টার ট্রানজিট ছিল, ঘুরে ঘুরে শহর দেখেছিলাম, বেশ ভালো লেগেছে, সবচেয়ে বড় কথা সিকিউরড মনে হয়েছে।

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

আসলে ইচ্ছে করেই দুবাইতে ট্রানজিট নিয়েছি। ব্যাংকক সুবর্ণভূমি এয়ারপোর্ট আমার কাছে একটুও ভালো লাগেনা। বসতে চাইলে জায়গা পাবেন না, হাঁটতে হাঁটতে ঠ্যাংদুটো অবশ হয়ে আসবে, তাপমাত্র নিয়ন্ত্রণে চরম অব্যবস্থা, ইত্যাদি, ইত্যাদি। দুবাই হয়ে গেলে ট্রানজিটের সময়টুকু অন্তত বিজনেস ক্লাস লাউঞ্জে বসে ফ্রি খেয়েদেয়ে, ফ্রি ঘুমিয়ে, সময়টা ভালোই কেটে যায়। ঢাকা থেকে সপ্তাহে তিনদিন মাহিন লঙ্কা এয়ার সরাসরি কলম্বো যায়। এখোনও ট্রাই করিনি কারণ এদের ব্যাকগ্রাউণ্ড জানা নেই আর বাজেট এয়ারলাইন্সে আমার অনাগ্রহ।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।