নিজস্ব দূরত্বে থেকে দেখেছি . . (সনাতন)

তানিম এহসান এর ছবি
লিখেছেন তানিম এহসান [অতিথি] (তারিখ: শনি, ২২/১০/২০১১ - ৪:৩২পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

প্রস্তাবনা

একফোঁটা দিয়েছিলাম শিরোনাম শেষে অবারিত বিষ - একফোঁটা নিয়েছিলাম শ্বাস - একফোঁটা ইতিহাস, অস্ফুট পাপ! আজ এসো ঝাড়বাতি সরিয়ে ফিরিয়ে আনি - ফিরিয়ে আনি লন্ঠনে লন্ঠনে জাগা বেহুতাশ চলে যাওয়া অভিমানী-ছায়াময়-স্থিরতা - সনাতন নাম তার সনাতন ---

দেখো কি অদ্ভুত এই জীবন নামের প্রণোদনা! তোমার আমার নাম পরিচয় - তোমার আমার নাম এর ভিড়ে হারিয়ে যাওয়া নানান মানুষ নামের সাথে নিয়ে গেছে আমাদের নিরুদ্বেগ সময়; নাম এর সাথে চলে যায়, চলে আসে আমাদের নিজস্ব চরিত্র - চরিত্রের ধুপ - আমাদের একেকটা মানুষের সাথে আমাদের একেকটা মানুষ - চলে যায় চলে আসে -

আজ এই কার্তিকের খোঁজ না রাখা ২১ শে অক্টোবর যশোর নামের এক প্রাকৃত পুরাতন শহরে শিরিষডাকা সন্ধ্যায় পাশে দীঘি - দীঘির বুকে পৌঁছে যাওয়া যন্ত্রের ভেঁপু দূরে রেখে তোমাকে বলি - সনাতন নামে আমার এক বন্ধুর বন্ধুতা ছিলাম আমি!

আমাদের দেখা হয় বালকের শৈশবে, ততদিনে সে শিশু স্মৃতি মনে রাখতে পারার বয়সে পৌঁছেছে - বাড়ী থেকে বহুদূর - আসাম নামের এক দারুণ মেঘময় অচিন দেশ ঘেঁষে আমাদের সিলেট এর জকিগঞ্জ - কুউউউউঝিকঝিক ট্রেন, চা-গরম কেটলির হুঁশশ - তারপর বাড়ী যেতে থাকা - চল্ বাড়ী যাই চল্ বাড়ী যাই বাড়ী বাড়ী - যেতে যেতে .. ..

যেতে যেতে নিমগ্ন বালকের জানালা সমানুবর্তি হয় - বাংলাদেশ দেখতে দেখতে হুহু করে তার বাংলাদেশ জেগে উঠে বাংলাদেশে - সে বালক টের পায় তার অজানা চোখ বেয়ে নেমে আসা জল সব বিমূর্ত বাতাসেরা নিয়ে গেছে -

আমাদের দেখা হয়েছিলো বাজিতপুর বলে এক জায়গার নাম আছে বাজিতপুর যেতে যেতে - জারুল ফোটানো নরসিংদী .. মেথিকান্দা মেথি সব মেথি নিয়ে হাওড়ের অনুকূল মেঘবতি ভৈরব - নির্মোহ মেঘনার জল সব দূর থেকে দেখে ফেলে হুহুডাকা সন্ধ্যা-বিকালে;

সেদিন তার অন্যমনে লুকিয়ে কেঁদে ফেলা অসংখ্য আত্মজ মুহূর্ত কাটানোর পর একটা স্টপেজ মিলে গেলে জেনে ফেলা - তার লুকিয়ে কাঁন্নার আকাশ অসূর্যস্পশ্যা থেকে যেতে পারে, কিন্ত সনাতন বলে কেউ একজন তার ভেজা গাল ছুঁয়ে থাকে আমার বিপরীত জীবন;

সবকিছু কি ভীষণ ছুঁয়ে যায় - তুমি সবকিছু ভারি চমৎকার অনায়াসে নেবে বলে জন্মেছিলে তুলোর মত তুলা জাতক! তুলা চরিত্রের কার্পাস ফুলে লেগে গেছে শুশুকের শ্বাস -

ফিরে এসো সনাতন, তোমাকে ডাকি বলে শোননা তুমি তাই তোমাকে ডাকিনা, ডাকার চাইতেও বেশি ডেকে ফেলি সনাতন জেনে ফেলা সনাতন স্থৈর্য আমার!

স্থৈর্য কেউ দেবেনা, কেউ দেবেনা স্থৈর্য বরং নিয়ে যাবে স্থিরতা সব; চারপাশে দেয়াল তুলে দিয়েছি পরিখার জলে - যে নেবে নাও - আমি অপলক রেখে দেব চিন্ময় স্থিরতা সব - -

ডুব দিলে ভেসে উঠি, ভেসে গেলে ডুবে যাই! ভেসে গেলে ভেসে যেতে চাই, ডুবে ডুবন্ত। নুনচোর পাখীটির মত ডুবে গেলে ঠোঁটে চাই সবটুকু ডুব -

স্নান মানে স্নান নয় - আপামর অনুভূতি জুড়ে অবিচ্ছিন্ন আবেশে জেগে ওঠে একটি বেহালা অবয়ব নিয়ে ছড়মোড়া আপন নৈবদ্য - ঝিরিঝিরি স্থিতি!

স্থিতি মানে অশব্দ শব্দের ভিড়ে অনুসিক্ত ঘোরওলা একফালি দড়িছেঁড়া পালে লাগে নির্মলা জোয়ার; স্থিতি মানে অধিরাগ পুরুষ্টু বাতাসের লয়ে অহোরাত্র স্থির!

নির্বাণ মানে নিরবধি স্নান – গ্লানি সব ক্লান্তির বারান্দায় ঘেমেনেয়ে একাকার হয়ে গেলে তিরোভাব জলকণা শীতলাকার উল্লাসে প্রতিবার ধুয়েমুছে রেখে যায় প্রস্রবণ সম্ভাবনা! -

আজ সনাতন তোমায় পেলাম এক জনমের আধেকখানা জীবন শেষে - আজ সনাতন চোখের অনল ফিরলে তুমি ঠোঁটে হাসি - আজ সনাতন ফিরলে তুমি আমার ভীষণ ঘর-বসতি সনাতন এক পরম আবেশ পেলো খুঁজে ......

আবার জেনে গেছি সারেঙ বাড়ীর ঘাটে ফিরবোনা কোনদিন - ফিরবোনা বলে প্রতিদিন ফিরে ফিরে আসি - প্রতিবার জেনে যাই - আমার কোনদিন ফিরে যাবার কথা ছিলোনা -

‘আমি সনাতন - আমি ফটিক জল - জল নয় এজলে আকাশ এসে গুছিয়েছে নিজেকে - নীলকণ্ঠ জল - স্থিতধী সমরুপ - আমি শিরোনাম নই, উপসংহারে সনাতন এক শুরুতেই জেনে গেছি অশেষ অবশেষ’ -

সজ্ঞানে সনাতন তোমাকে খুঁজে ফেরে খুঁজে যায় স্থৈর্য-আসক্ত একটি জাতিস্মর সময়; অপরাপর নৈঃশব্দ্যেরা জেনে যায় সে খবর - ঘন হয়ে আসে; তারপর কিছু অজানুলম্বিত হয়ে যাওয়া ভাব এ একজন আবেগ-বিধৌত মানুষ জেনে ফেলে আবার জন্মেছে তার সনাতন ফিরে আসা - ফিরে আসে স্থপতি নিরাকার নীলাচল নিয়ে ; তারপর সে এবং তারা ‘নবান্ন’ কথা বলে যাবে - ততক্ষণ তোমাদের যাপিত জীবনে তুমি নবান্নের আঘ্রাণ নাও!

যাদুধন! যাদুধন কৈবর্তের মত হাসন পিঞ্জরায় কথা বলে
সহজিয়া পাখি এক লালনের মানব সংসার;
লাউয়ের ডগায় বৈরাগ্য দেখে বৈষ্ণবী মন্দিরা,
ঘটে তার জল দেয় মরমের লীলাখেলা -
উচাটন বেহুলা-গাজী-কালু-সাতভাই চম্পাবতি-লখিন্দর
বজরায়, পানসীতে, গয়নার নাওয়ে নাওয়ে পরবাসী বাঁশরী বাজায়;
চরকের ধ্যানধুয়া - ধ্যানে নাচে ব্যাঙ্গমা-ব্যাঙ্গমী,
বটের পাজরে পাজরে ঘরামি জলের ছায়া,
কলসির কাঁখ কাঁপে তিনভাগ মূলে -
চিরবিশ্রাম-প্রহরে গেরুয়ার রঙ দেখে খঞ্জনি চাঁদের আলো
বিপ্রতীপ আমন-আউশ ক্ষেতে একে ফেলে -
কিষাণীর ধানবোনা মুখের নবমী আদল।

একটা পতাকা যাদুধন! একটা পতাকায় জড়ায়ো তোমার নাইওরী জীবন
আর আমারে দিও বাঙালা!

http://youtu.be/TQYaVb4px7U

(ক্রমাগত: সংকলন - খুলনা, ২২.১০.২০১১)


মন্তব্য

Fazle karim Khan Tutul এর ছবি

তনিম, অসাধারন...আমার সত্যি খুব ভাল লেগেছে

কল্যাণF এর ছবি

চলুক

Saima এর ছবি

অনেক ভাল লাগল। চলুক

আশালতা এর ছবি

এন্টেনায় ঠিকমত আসছে না তো ! আরেকটু সরল করে দিলে হয়না ? হাসি

----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি

তারেক অণু এর ছবি

চমৎকার

guest_writer এর ছবি

ভালইতো লাগলো। চলুক

প্রৌঢ়ভাবনা

বন্দনা কবীর এর ছবি

বাহ!!!

তানিম এহসান এর ছবি

সকল পাঠককে ধন্যবাদ।

মন্তব্যকারী সবার জন্য আলাদা আলাদাভাবে আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- পাতা দিয়ে রান্না করা কেচকি মাছের ঝোল ঝোল তরকারীর জিভে জল আনা গন্ধ .... যার যার মত করে খেয়ে নিয়েন, আমার খেতে হলে আরো অপেক্ষা করতে হবে ৬ দিন --ততদিন মন খ্রাপ!!

টুটুল ভাই, আপনাকে আলাদা করে ধন্যবাদ, আমি জানি আপনি শুধু এই মন্তব্যটা করার জন্য সচলে লগ-ইন করেছেন - অসাধারণ সব লেখা ছাপা হয় এখানে, নিয়মিত হতে পারলে ভালো লাগবে। শিশুদের জন্য আদর, ছোটটার জন্য কোলে চড়িয়ে সারা বাড়ী ঘুড়িয়ে এলোমেলো কথা বলা!

বন্দনা এর ছবি

কেমন যেনো বিষাদমাখানো লিখাটা তানিম ভাইয়া। মন খারাপ

তানিম এহসান এর ছবি

আচ্ছা! বন্দনার মন ভালো থাক হাসি

উচ্ছলা এর ছবি

আগেও বলেছিলাম, আপনার লেখা পড়লেই মন খারাপ হয়ে যায়। তবুও না পড়ে থাকা যায় না।

অসাধারণ হাসি

তানিম এহসান এর ছবি

নিয়মিত পাঠিকা এবং মন্তব্যকারি উচ্ছলা, অনেক ধন্যবাদ হাসি

অতিথি অন্যকেউ এর ছবি

দী-র্ঘ-শ্বাস নিয়ে পড়লাম। এমন কখনও লিখতে না পারার নিশ্চিত হতাশা... আর কথাগুলোই তো ভেসে এসেছে দীর্ঘশ্বাসের মতো গাঁয়ের নিঝুম তবু মেঘলা দুপুরের বাতাসের শব্দের মতো করে..

অনেকদিন পর কিছু শব্দ ছুঁয়ে গেলো.. আনন্দ-বেদনা-সুখ-দুঃখের অনুভূতিতে না গিয়েও.. নিরপেক্ষ দীর্ঘশ্বাস...

তানিম এহসান এর ছবি

মন্তব্যে ভাবালেন বটে হাসি .. “নিরপেক্ষ দীর্ঘশ্বাস” হাসি ধন্যবাদ জানবেন।

ফকির লালন এর ছবি

বিষাদের ফ্যাক্টরি আছে আপনার, সংক্রমিত হই যে.........

তানিম এহসান এর ছবি

কবি’র মন্তব্য পেয়ে অনুপ্রাণিত হলাম খুব হাসি .... আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।