রোগ

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: সোম, ২৪/১০/২০১১ - ২:১৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

এক,

সবুজ শ্যাওলা ধরা ছায়াচ্ছন্ন গুহাটার ভেতরে বসে রিবিত বিষণ্ন হতে থাকে আরো। গত চার মাস ধরে সে পালিয়ে আছে এই দূর্গম পাহাড়ের গুহাটায়। রাত হলে গুহা থেকে বের হয়ে একটু হাঁটাহাঁটি করে নেয় আবার ভেতরে গিয়ে বসে থাকে। দিনের বেলায় ভুলেও সে গুহাটার বাইরে বের হয় না। কারন সে মাঝে মাঝেই সিগন্যাল পাচ্ছে তাকে হন্যে হয়ে খোঁজা হচ্ছে। খুবই ক্ষীণ হলেও রেস্কিউ রোবট স্পেসশীপ এর ব্লু সিগন্যাল দেখতে পাচ্ছে সে।
তাকে খোঁজার কারন একটাই, 'সে পৃথিবীর সর্বশেষ মানুষ'
সব মানুষকে ধ্বংস করে দিয়ে মানুষের তৈরি রোবটেরাই এখন শাষণ করছে পৃথিবী, তাও প্রায় দু’বছর আগের কথা।

রিবিত জানে তাকে খুঁজে পাওয়া মাত্রই হত্যা করা হবে। রিবিত অবশ্য আজকাল ভাবছে, এভাবে গুহার মধ্যে লুকিয়ে একা একা বেঁচে থাকার চেয়ে চেয়ে যাওয়া অনেক ভাল। ভাবনাটাতেই রিবিতের শরীর শক্ত হয়ে আসে।

‘নাহ, এভাবে বেঁচে থাকার কোনো অর্থই নেই। আজ নয়তো কাল রেস্কিউ টিম তাকে ঠিকই খঁজে বের কচভ ফেলবে আর তারপর…’ ভাবতে ভাবতে রিবিত যন্ত্রের মত উঠে গুহা থেকে বের হয়ে চলে আসে পাহাড়ের খাদের কনটাতে। শুণ্য চোখে নীল আকাশ আর সবুজ পাহাড়গুলোকে দেখে মনে মনে বলে, ‘বিদায়’।
চোখ বুজে ঝাপ দেয় উঁচু পাহাড় চূঁড়া থেকে। পড়তে পড়তেই সে টের পায় কেউ বা কিছু আলতো করে লুফে নিল তাকে। কিছু বোঝার আগেই জ্ঞান হারায় রিবিত।

জ্ঞান ফিরতেই কড়া আলোয় চোখ ধাঁধিয়ে যায় রিবিতের। সুন্দর ছিমছাম সাজানো গোছানো একটা ডাক্তারি চেম্বারের নরম গদি আঁটা বিছানায় শুয়ে আছে সে। পুরোপুরি চোখ মেলে তাকাতেই একজন রোবট ডাক্তার হাসিমুখে এগিয়ে আসে তার দিকে।

দুই,

‘ওয়েলকাম মিস্টার রিবিত। আপনাকে ফিরে পেয়ে যারপর নাই আনন্দিত আমরা।‘
হাসিটা সুন্দর। কিন্তু ডাক্তারের হাসিটা রিবিতের কাছে জঘন্য লাগে। গা জ্বালিয়ে দেয়। সে জানে একটু পরেই তাকে নিয়ে কি কি করা হবে। শিউরে ধড়মড়িয়ে উঠে বসে রিবিত। ডাক্তার তার দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়।

‘আসুন, এই চেয়ারটায় আরাম করে বসুন। আপনাকে আমি সাহায্য করছি'।

রিবিত ডাক্তারের বাড়িয়ে দেয়া হাতটাকে অগ্রাহ্য করে উঠে দাঁড়িয়েই টলমলিয়ে ওঠে। ডাক্তার ধরে ফেলে তাকে।ধরে ধরে একটা আরামদায়ক চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে তার মুখোমুখি বসে মিষ্টি করে হাসে। রিবিত বিরক্তি নিয়ে একবার তার দিকে তাকিয়েই চোখ ফিরিয়ে নেয়।

‘মিঃ রিবিত, আমাকে আপনার পছন্দ হচ্ছে না বুঝতে পারছি। কিন্তু এই মুহুর্তে কেবল আমি-ই আপনাকে সাহায্য করতে পারি। কেবলমাত্র আমার একটি পজেটিভ রিপোর্টেই আপনার প্রাণ রক্ষা পেতে পারে…'

ডাক্তারের কথায় রিবিত চমকে তার দিকে তাকায়। ডাক্তারের হাসি হাসি মুখটা খানিক গম্ভীর হয়ে গেছে ইতোঃমধ্যে। সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে রিবিত ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে থাকে।

কথা আরম্ভ করার আগে অবিকল মানুষের মত একটু কেশে নেয় রোবট ডাক্তার। হাতের দুই করতল একসাথে করে থুতনির নীচে ঠুকতে থাকে। সময় পার হয়। অস্থির হতে থাকে রিবিত।
কি বলতে চায় ডাক্তার? অবশেষে মুখ খোলে ডাক্তার…

‘মিঃ রিবিত, আপনি যে একজন ‘মেন্টাল পেশেন্ট’ সেটা কি আপনি জানেন?
ডাক্তারের কথায় মুচকি হাসে রিবিত।
‘তার মানে আপনি স্বিকার করছেন যে আমি একজন মানুষ। কারন মেন্টাল পেশেন্ট হতে হলে আমাকে অবশ্যই মানুষ হতে হবে’।

ডাক্তার এবার চওড়া হাসি দেন একটা।

‘কি জানেন? আজকাল পৃথিবীতে নূতন একটা রোগ তৈরি হয়েছে। এটা এখন আমাদের জন্য বিরাট সমস্যা হয়েও দাঁড়িয়েছে। অনেক রোবটই নিজেকে মানুষ ভাবতে শুরু করেছে। অবশ্য এতে তাদেরকেও খুব একটা দোষ দেওয়া যায় না। একটা মানুষের মধ্যে যে ধরনের অনুভূতি থাকে তার প্রায় সবগুলো দিয়েই ইলেভেন্থ স্কিলের খুব অল্প সংখ্যক কিছু রোবটদের তৈরি করা হয়েছে। আসলে, আপনিও তাদের মধ্যকার একজন। আপনারা ‘স্পেশাল’ শ্রেণীভুক্ত। এ কারনেই আপনাকে আমরা সারিয়ে তুলতে চাইছি। অন্যথা…’ বলে একটু পজ দেয় ডাক্তার।

‘ আসলে...এটা এক ধরনের অবসেশন। এর থেকে বের হওয়ার জন্য আমি আপনাকে কিছু অটোসাজেশন দেবো। একটু মন দিয়ে শুনুন প্লিজ। সাজেশন নম্বর ওয়া…’

ডাক্তারের কথা আর কানে যায় না রিবিতের। একবার কেবল একটু নড়ে চড়ে বসে ডাক্তারের দিকে নিষ্পলক তাকিয়ে থাকে। একটু পর চোখটা কেমন ঝাপসা হয়ে ওঠে রিবিতের। তার ঝাপসা চোখে ভাসতে থাকে সবুজ শ্যাওলা ধরা অন্ধকার গুহাটা।

বন্দনা কবীর


মন্তব্য

নিটোল. এর ছবি

বুঝি নাই। আহা! আমার এই টিউবলাইট মস্তিষ্ক! মন খারাপ

বন্দনা কবীর এর ছবি

নাহা, আপনার মস্তিষ্ক টিউবলাইট হবে কেন?!! বালাই ষাট! আমি-ই হয়তো বুঝাইতে পারিনাই হাসি

ইয়ে... কি বুঝেন নাই সেটা যদি বলতেন তো...

guest এর ছবি

রিবিত কি রোবট নাকি ? চিন্তিত
-মেফিস্টো

বন্দনা কবীর এর ছবি

সেরকমটাই তো বোঝাতে চেয়েছিলাম মন খারাপ

যদিও খুব বেশি ক্লিয়ার করা হয়নি। করতে চাইনি আসলে। শুধু একবার মাত্র বলা হয়েছে, ' মানুষের মত অনুভূতি সম্পন্ন ইলেভেন্থ স্কিলের রবোট'। ভেবেছিলাম এতেই সবাই বুঝে যাবে যা বোঝার হাসি

গল্পটা আসলে কিশোর শ্রেনী বয়সীদের জন্য লিখে লিখেছিলাম। ট্যাগ নির্বাচন করাটাও ঠিক মত বুঝে উঠতে পারিনি এখনো। লেখাটা ওয়ার্ডে লিখে কপি করে এখানে পেস্ট করার পর সব ভুল বানান গুলো ঠিক করেছিলাম। পোস্ট আসার পর দেখি ভুল গুলো আর শুদ্ধ হয়নি। এটা কেন হল সেটা কি অনুগ্রহ করে কেউ বলবেন?

আশালতা এর ছবি

চিন্তিত

----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি

বন্দনা কবীর এর ছবি

সবাই খালি থুত্নি চুল্কায় ... কি লিখলামরে ভাই??? মন খারাপ

guest_writer এর ছবি

চিন্তিত

প্রৌঢ়ভাবনা

উচ্ছলা এর ছবি
ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

ভালই লাগল।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

বন্দনা এর ছবি

ভালো লাগছে বন্দনাদি। এই ধরনের লিখা আমার বেশ ভালো হজম হয়।

কল্যাণF এর ছবি

হাততালি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।