হায়েনাদের মুখোশ আজ উন্মোচিত

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শনি, ২৩/০২/২০১৩ - ৩:২৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

গত ০৫ ফেব্রুয়ারি থেকে চলে আসা শাহবাগের আন্দোলনের কারণে আজ যুদ্ধাপরাধী , জামাত শিবির, রাজাকার এই শব্দগুলো আমাদের দেশের প্রতিটি মানুষের মনের শব্দকোষে একটি ঘৃণ্য জায়গা দখল করে নিয়েছে। আমার ঘরের মাত্র আড়াই বছরের শিশুটিও মাঝে মাঝেই বলে উঠছে রাজাকারের আস্তানা জালিয়ে দাও গুড়িয়ে দাও। এই ছোট্ট শিশুটির মনে আজকে যেই ঘৃণা যেই ক্ষোভ তাও এই শাহবাগ আন্দোলনের একটি বড় অর্জন। আমার বিশ্বাস আমার ছেলের মত আজ প্রতিটি ঘরেই এই একই স্লোগান উচ্চারিত।

আমি মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি। তাই রাজাকারদের চালানো তাণ্ডব আমার বই পড়ে অথবা মানুষের মুখ থেকে শোনা। এরপর বিভিন্ন সময়ে আমার মায়ের মুখে শোনা নানারকম ঘৃণ্য অপকর্মের কথা শুনেছি। আমাদের পাঠ্য পুস্তকেও ঠিক সেভাবে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে এই দলটির চালানো অমানবিকতার কথা, এদের নৃশংসতার কথা, এদের রক্ত পিপাশু এক পাশবিক মনোবৃত্তির কথা উঠে আসেনি। কাজেই ছোট বেলা থেকেই এদের পৈশাচিকতার কথা শুনে একজন শিশুর বেড়ে হওয়া ওঠে না। এদের বিরুদ্ধে কিছু বলা মানেই ইসলামের উপর আঘাত, কাফের, মুরতাদ বলে আখ্যায়িত করা হয়। আশাকরি আমার শিশুটিকে আর সেই ভাবে বেড়ে উঠতে হবে না। সে এখন জানে রাজাকার মানে কি, আর শিবির মানে কত বড় পাষণ্ড।

এখন আর সন্ধ্যা হলেই তাকে টিভিতে তার প্রিয় কার্টুন দেখাতে পারিনা। মাঝে মাঝেই তার নিয়ম করা রুটিনের বাইরে গিয়ে আমাদের টি ভি স্ক্রিনে থাকে শাহবাগের প্রজন্ম চত্বর। সে শুরুতে কিছুটা কান্না জুড়ে দিলেও এখন এই শাহবাগের নানা স্লোগান তার মুখস্থ। সেই সাথে সচলের হিমু দার গাওয়া আর স্বয়ম ভাইয়ের লেখা ‘এই প্রজন্ম চত্বরে’ গানটি সে আত্মস্থ করে ফেলেছে। এখন খাবার সময়ে এই গানটা বাজালেই সে চুপ। এই কথা গুলো বলছি কারণ একটি ছোট্ট শিশুও আজ জানে এই প্রজন্ম চত্বরের কথা, ওইসব নরপিশাচ যুদ্ধাপরাধীদের ঘৃণ্য অমানবিকতার কথা। আমার দুঃখ নেই কারণ সে এখন থেকেই নিজেকে সেই চেতনায় উদ্দীপ্ত করতে পারবে।

আমার আজকের মূল বিষয় আসলে শাহবাগ নয়। আজকে লিখতে বসলাম শাহবাগের থেকে পাওয়া চেতনার আলোয় উন্মোচিত নরপিশাচ জামাত শিবিরের মুখোশের কথা । খুব ব্যথিতহয়েছি আজ যখন তাদের চালানো নৃশংসতা এক এক করে নানা চ্যানেল গুলোতে দেখেছি। একটি স্বাধীন দেশের পতাকার তলে থেকেও কি করে একটি দল সেই পতাকাকে অস্বীকার করতে পারে, ছিঁড়ে জালিয়ে দিতে পারে সেই অস্তিত্বের একমাত্র অবলম্বনটিকে।কি করে একটি স্বাধীন দেশে বাস করে স্বাধীন মানচিত্রের একটি খণ্ডে বাস করে সেই পতাকাকে লাঞ্ছিত করে। আমি মেনে নিতে পারিনা লজ্জায় আর ক্ষোভে ফেটে যাচ্ছে আমার সকল মানবিক বোধ। একটি দল যারা এই কাজ করতে পারে তার অর্থ আর বুঝতে বাকী থাকে না যে তারা এই দেশের অস্তিত্বকেই অস্বীকার করে। সেই দল আর সেইসব শুয়োরদের এই দেশে থাকার কোন অধিকার আজ আর থাকে কি? আজ তাই আর বুঝতে বাকী থাকে না যে কি জ্বালা নিয়েই না জ্বলে উঠেছিল শহীদ জননী জাহানারা ইমাম, কত বেদনার ভারেই না ভারাক্রান্ত হয়ে এই দেশের মানুষ এই বর্বরদের বিচারের দাবীতে সোচ্চার, আর কত ব্যথা নিয়েই না প্রতিটা শহীদ পরিবার এই নরপিশাচদের বিচার দেখে যাবার জন্য অপেক্ষমাণ।

একাত্তরে এই ঘাতক গো আজমদের গলাকাটা দেখিনি কিন্তু দেখেছি রাজীবের বীভৎস লাশ, দেখেছি এদের বোমার বারুদে ক্ষত বিক্ষত মানুষের আহাজারি। যেই ভাষার জন্য আমার ভাইয়ের রক্ত ঝরেছে, যেই ভাষার জন্য শহীদ হয়েছে আমার ভাই , যেই ভাষার জন্য আজকে আমাদের এই শহীদ মিনার সেই পবিত্র জায়গাটিও আজ নরপিশাচ ওই পেতাত্তারা কলঙ্কিত করেছে। ছিঁড়ে ফেলেছে কর্ক সিট অথবা মলিন সুতির কাপড়ে আঁকানো বাংলা ভাষার বর্ণমালাকে। এরা কি মানুষ নাকি পাকিস্তানী সেই পেতাত্তা যারা আজও মেনে নিতে পারেনা এদেশের বাংলা ভাষা, এদেশের অস্তিত্ব।

আমার মনে আছে ছোটবেলায় এই প্রভাত ফেরীতে যোগ দেবার জন্য, এই শহীদ মিনারে ফুল দেয়ার জন্য কয়েক ক্রোশ পায়ে হেটে ফুল কুড়োতে যাবার কথা। একজন শিশু অথবা কিশোর কি আবেগ আর অনুভূতির জোয়ারে ভাসলে সেই ভোর বেলায় প্রভাত ফেরীতে যোগ দেয় ভাষা শহীদদের জন্য ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে। আজ জামাত শিবির আমার মায়ের ভাষাকে অস্বীকার করে অস্বীকার করলো ওই ছোট্ট শিশুর বাবার কাঁধে ভর করে ছুটে যাওয়া শহীদ মিনারের প্রভাত ফেরী, সদ্য শৈশব পেরিয়ে কৈশোরে পদার্পণ করা কিশোর ছেলেটির বহু কষ্টে অর্জিত সেই হলুদ গাঁদা ফুল । আর সে কারণেই তারা আজ সেই ফুল রাস্তায় ছুঁড়ে ফেলে তা পোড়াবার ধৃষ্টতা দেখিয়েছে।

আমি আঁতকে উঠেছি যখন সংবাদ মাধ্যমের কর্মীদের উপর আজ জামাত শিবির হামলা চালিয়েছে। ওরা সবার মুখ বন্ধ করে দিতে চায়। ওরা ওদের চালানো তাণ্ডবের কোন চিহ্ন রাখতে চায় না। আজ কদিন ধরেই দেখেছি গণমাধ্যম কিভাবে এই রাজাকারদের বিরুদ্ধে তাদের মাইক্রোফোন, কলম আর ক্যামেরা উঠিয়েছে। ছাগু পত্রিকা আর মিডিয়া ছাড়া অধিকাংশ গণমাধ্যমের প্রচারণার কারণে আজ ঘৃণ্য এইসব মানবতা বিরোধীদের মুখোশ সবার কাছেই উন্মোচিত। আর সে কারণেই এই সংবাদ কর্মীদের তারা আজ রুখে দিতে চায়।

আজ কয়েক মাস ধরে চলে আসা সারা দেশে জামাত শিবিরের চালানো হামলা আর নৃশংসতা তাদের চার দশকের বেশী সময় ধরে ঢেকে রাখা মুখোশ উন্মোচন করেছে। ওরা জেগে ওঠা বাঙালির শানিত চেতনার সেই গণজাগরণ মঞ্চকে ভেঙ্গে দিয়েছে। ওরা জানে এই মঞ্চ থেকেই ওদের পতনের গোড়াপত্তন শুরু। তাই আজ এই মঞ্চকে ওদের বড় ভয়। আজ দেশের বিভিন্ন জায়গায় তাদের প্রথম টার্গেট হয়েছিল সেই গণ জাগরণ মঞ্চ। গণ জাগরণ মঞ্চে শুরু হওয়া গণস্বাক্ষর অভিযানের সেই দলিল তারা আজ রাখতে দিতে চায় না। তারা যেমনটি চায়নি এদেশের সূর্য সন্তানদের আর তাই হত্যা করেছিল এই দেশের বিবেককে। কিন্তু ওরা জানেনা স্বাধীনতার পর লাখো সূর্য সন্তান আজ এদেশের প্রতিটি ঘরে। আজ চাইলেই এদের কণ্ঠ রোধ করা যাবে না। আজ চাইলেই রুখে দেয়া যাবে না জাগ্রত এই দেশের প্রতিটি ঘরে স্ফুলিঙ্গের মত জেগে ওঠা বিবেকদের।

আজ দুপুরের পর থেকে টিভির পর্দায় ভেসে ওঠা জামাতি তাণ্ডব দেখে মনে হয়েছে দেশ আর এক মুক্তিযুদ্ধের যুগ সন্ধিক্ষণে দাড়িয়ে। আজ তাদের চালানো বুলেটের আঘাত যেন আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের গায়ে আঘাত করে চলেছে। ওদের ফেলা বোমার শব্দ আজ যেন সেই সময়ে চালানো তাণ্ডবের এক প্রতিদ্ধনি। আজ বারবার কেন জানি সেই একাত্তর সালের সেই সব দিনের কথা মনে পড়ছিল যা শুনেছি , পড়েছি আর ধারণ করে চলেছি নিজের চেতনায়। কি যন্ত্রণা আর প্রতিকূলতার মধ্য দিয়েই না এদেশের লাল সবুজের সূর্য তরুণরা তাদের স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিল। সেদিন তাদেরকে যেমন লড়তে হয়েছে একটি সুসজ্জিত পাকি বাহিনীর সাথে তেমনিভাবে সয়ে যেতে হয়েছে ধর্মের দোহায় দিয়ে রাজাকারদের নানান অপপ্রচার। আজও তারা থেমে নেই। পুরনো সেই সম্পদকে আবার তারা পুঁজি করতে চায়। ইসলামের ঝাণ্ডা তুলে ওরা এবারও সেই ধর্ম ব্যবসাকে পুঁজি করতে চেয়েছে। কিন্তু ওদের সেই স্বপ্ন আজ আর পূরণ হবে না। একাত্তরে অসহায় ভেবে যেই মা বোনদের ইজ্জত নিয়েছিল এই হায়েনারা, খালি করেছিল অনেক মায়ের কোল, ভাই হারা হয়ে ছিল অনেক বোন আজ সেই সব মা ,ভাই, বোনদের শপথ নিয়ে বলছি- এই মুহূর্তে বাংলা ছাড় লেজকাটা কুকুরের দল তা নাহলে এই প্রজন্মের সূর্য সন্তানেরা তোদের ছাড়বে না। এত বছর ধরে একটা মুখোসের ভেতরে লুকিয়ে থাকা হায়েনার কুৎসিত চেহারা আজ সারা বাংলার মানুষের সামনে উন্মোচিত। তোদের বিচার হবেই, পালানোর পথ নেই।

অমি_বন্যা


মন্তব্য

কানিজ ফাতেমা  এর ছবি

কেউ বেশি বাড়লে তার পতন নিশ্চিত। লেখায় গুরু গুরু চলুক

অমি_বন্যা এর ছবি

ওরা আসলেই বাড়ছে। আর বেশী বাড়লেই পতন।

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

তেল ফুরিয়ে যাওয়ার আগে প্রদীপ হাঁ হারিকেন যেমন দপ করে জ্বলে ওঠে, এদের আস্ফালন দেখে সেই তেল ফুরিয়ে আসা হারিকেনের কথা মনে পড়ছে। কিন্তু সমস্যা হলো যদি আবার কেউ তার শুকনো খোলে তেল ঢুকিয়ে দেয়।

স্বাধীনতা বিরোধীদের বিচার হবেই, হতেই হবে। আজ এই গণজাগরনের পরেও যদি ওদের বিচার না হয় তবে ধরে নিতে হবে সরকারও হাতে তেলের ডিব্বা নিয়ে লাইনে আছে।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

অমি_বন্যা এর ছবি

স্বাধীনতা বিরোধীদের বিচার হবেই, হতেই হবে। আজ এই গণজাগরনের পরেও যদি ওদের বিচার না হয় তবে ধরে নিতে হবে সরকারও হাতে তেলের ডিব্বা নিয়ে লাইনে আছে। চলুক

সুমাদ্রী এর ছবি

লেখায় উত্তম জাঝা! । কেমন আছেন? আইভরি কোস্টকে মিস করা শুরু করেছেন কি? ভাল থাকুন।

অন্ধকার এসে বিশ্বচরাচর ঢেকে দেওয়ার পরেই
আমি দেখতে পাই একটি দুটি তিনটি তারা জ্বলছে আকাশে।।

অমি_বন্যা এর ছবি

আমি আছি । আপনি কেমন? আইভরি কোস্ট মিস করি সব সময়। আপনিও ভালো থাকবেন, দাদা।

Rozy এর ছবি

কোন ঈমানদার এবং কোন মুসলিম কখনোই তার পবিত্র স্থান মসজিদে আগুন দিতে পারে না।
কোন ঈমানদার এবং মুসলিম কখনোই মসজিদের গালিচায় আগুন দিতে পারে না।
কোন ঈমানদার এবং মুসলিম কখনোই জায়নামাযে আগুন দিতে পারে না।
কোন ঈমানদার এবং মুসলিম কখনোই পবিত্র ধর্ম গ্রন্থ কোরআন এবং পবিত্র কিতাবে আগুন দিতে পারে না।
কিন্তু সাধারণ মুসলিমদের মধ্যে ঢুকে জামায়াত শিবিরের লোকজন এ ঘৃন্যতম তান্ডব চালিয়েছে।
যে কোন প্রকারেই হোক যে কোন ভাবেই হোক জামায়াত শিবিরের রাজনীতি বন্ধ করা হউক।

অমি_বন্যা এর ছবি

একটাই দাবী জামাতের রাজনীতি বন্ধ হোক।

রংতুলি এর ছবি

এ পতাকা কোন সস্তায় পাওয়া বস্তু নয়, এর সাথে যাচ্ছেতাই আচরণ করার অধিকার কাউকে দেয়া হয় নাই!

অমি_বন্যা এর ছবি

যারা পতাকাকে ছিঁড়েছে ওরা মানুষ না হায়েনা, শুয়োর, নরপিশাচ, শকুন।

অতিথি লেখক এর ছবি

জাতীয় পতাকা, শহীদ মিনার ও শহীদদের উদ্দেশ্যে অর্পিত পুস্পস্তবক অবমাননাকারীরা তো মনে হচ্ছে পার পেয়ে যাবে। কি বিচিত্র এই দেশ! খুবই ক্ষুব্ধ এবং হতাশ।

নির্ঝর অলয়

অমি_বন্যা এর ছবি

বিচিত্র তো বটেই তা না হলে এই রাজাকারেরা এত বছর ধরে আছে কি করে?
তবে এই সব শকুন রা পার পাবেনা আশা রাখি। বাকিটা দেখা যাক।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।