অপদস্ত পরিষদের নতুন গিনিপিগদের শুভেচ্ছা- তবে তারাও ব্যর্থ হবেন

অপ বাক এর ছবি
লিখেছেন অপ বাক (তারিখ: বিষ্যুদ, ১৭/০১/২০০৮ - ৭:৫৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বাংলাদেশের সবচেয়ে বিব্রতকর ঘটনা হলো রাজনৈতিক দলগুলোর পারস্পরিক অবিশ্বাস এবং নির্বাচন প্রভাবিত করবার প্রবনতা রোধের জন্য নির্বাচনপ্রস্তুতিকালীন সময়ে একজন তথাকথিত নিরপেক্ষ এবং গ্রহনযোগ্য সম্মানিত!!! ব্যক্তির তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে নির্বাচনকালীন ১৪ সপ্তাহের জন্য সরকার প্রধান হিসেবে দায়িত্বগ্রহন এবং একটি গ্রহনযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব তার ঘাড়ে ফেলে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর নৈতিক এবং অনৈতিক জোট গঠন। এটাকে অন্তবর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে সংসদে অধিবেশন বসে এবং এটা বাংলাদেশ সংবিধানের অংশ হিসেবে গৃহীত হয়।

তবে রাজনৈতিক দলগুলোর পারস্পরিক অবিশ্বাস কখনই এই ১০ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদকে কলুষতামুক্ত বিবেচনা করতে পারে নি। তাই প্রতিটা নির্বাচনের পরে উপদেষ্টামন্ডলীকে অভিযুক্ত করেছে পরাজিত রাজনৈতিক জোট। আর এর পরে রাজনৈতিক অবিশ্বাস এবং সহিংসতা এবং রাজনৈতিক কুটকৌশল, জয়ের জন্য মরিয়া হয়ে থাকা প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের সাংঘর্ষিক অবস্থান গ্রহন, বেহায়া পা চাটা প্রেসিডেন্ট ইয়াজুদ্দিনের হঠাৎ প্রধান উপদেষ্টার পদ গ্রহন এবং অন্যসব উপদেষ্টার মতামতকে উপেক্ষা করে প্রধান একটি রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহন ব্যতীত একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনাতে কোনো সহায়ক ভুমিকা পালন করবে না বলে ৪ উপদেষ্টার পদত্যাগের পরে নতুন একটা রাজনৈতিক সংকটের সৃষ্টি হয়।

১৪ দলীয় জোট নির্বাচন বয়কটের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় ৪ দলীয় জোটের প্রধান শরিক দল জামায়াতে ইসলামী এবং বিএনপির কতিপয় নেতা মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে অন্যসব রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহারে বাধ্য করে- তারা প্রয়োজনে সহিংস হতেও পিছ পা হয় নি- শেসপুর- পাবনা- বগুড়া এবং অন্য যেসব আসনে বাতিল ঘোষিত ২২শে জানুয়ারীর নির্বাচনে বিনা প্রতিদন্ডিতায় নির্বাচিতদের তালিকা দেখলে বুঝা যাবে কোন দলের কর্মীরা অধিক সহিংস ছিলো। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিলো যদি এই ২২শে জানুয়ারীর নির্বাচন কোনো ক্রমে স্থগিত হয়েও যায় তবে বিনা প্রতিদন্ডীতায় নির্বাচিত সাংসদদের আসনে পুণঃনির্বাচন হবে না।

তবে সব হিসাব নিকাশ বদলে ১১ জানুয়ারী ইয়াজুদ্দিন অক্ষমতা মেনে নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করেন এবং এর পর থেকেই তিনি বিভিন্ন পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে উপস্থিত থেকে শিক্ষার মর্যাদা সম্পর্কে ভাষণ রাখছেন।

যদিও সামরিক বাহিনীর সহায়তায় এই পালাবদল বিভিন্ন মহলে প্রশংসসিত হয়েছিলো তবে আমার মনোভাব ছিলো একেবারে ঋণাত্বক, ইতিহাস বলে সামরিক বাহিনীর সহায়তায় কোথাও গণতন্ত্র পুণঃপ্রতিষ্টা পায় নি। কোনো না কোনো ভাবে সাময়িক স্থিরতা শেষে আবারও দুর্নীতি আর অনিয়ম বাসা বাধে রাষ্ট্রে। বাংলাদেশ দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছিলো কারণ কোনো না কোনো ভাবে টানা ১৫ বছর সামরিক বাহিনীর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ক্ষমতার চর্চা ছিলো বাংলাদেশে।

সে সময়ই বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠানে এবং বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতির বৃক্ষ ডালপালা মেলে বেড়ে উঠে। আর ক্ষমতার প্রতিদন্ডী কমাতে এবং ক্ষমতা নিরাপদ রাখবার জন্য অবসর প্রাপ্ত সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের বিভিন্ন আধা সরকারী এবং সরকারী প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পদে বহাল করা হয়। অনেক প্রতিষ্ঠিত সামরিক কর্মকর্তা যারা বিভিন্ন সময়ে পরামর্শকের ভুমিকায় থেকেছেন- বিভিন্ন দপ্তরের প্রধান কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন এবং যারা অবসরপ্রাপ্ত অবস্থায়ও সামরিক বাহিনীর সাথে ঘনিষ্ট সম্পর্ক থাকবার কারণে বিভিন্ন ভাবে ক্ষমতার চর্চা করেছেন তারা সবাই পরবর্তীতে সুশীল হয়েছেন।

আমাদের দুর্ভাগ্য আমাদের অবঃমেজর, লেজে (অবঃ) অবঃ কর্ণেল নানাবিধ ফর্মার সুশীল দেখতে হয়। যদিও সামরিক কর্মকর্তাদের মজ্জাগট গোয়ার্তুমি আর আত্মমর্যাদার ভ্রান্তি যাবজ্জীবন নরকবাসের মতো এর পরও এইসব প্রাতিষ্ঠানিক গোঁয়ারদের বিভিন্ন ভাবে ক্ষমতার চর্চার সুযোগ দিয়েছে রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্র পরিচালনার কাজে নিয়োজিত রাজনৈতিকেরা। অনেকের সাথে সামরিক কর্মকর্তাদের ঘনিষ্ট যোগাযোগ। ভুট্টো এক সময়ে সামরিক কর্মকর্তাদের সাথে ঘনিষ্ট সম্পর্ক তৈরি করে তার রাজনৈতিক ক্ষমতার ভিটা শক্ত করেছিলেন- তারই ফলশ্রুতিতে একটা পর্যায়ে ১৯৭১ এবং এর পরবর্তীতে সামরিক বাহিনীর প্রধান নির্বাহীর হাতেই তার মৃত্যু হয়। তবে রাজনৈতিকেরা কখনই ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়ার মতো স্বাভাবিক নন- তারা ঠেকে শিখেন সব সময়।

খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক উপদেষ্টা কিংবা আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক উপদেষ্টা পদে নিয়োজিত সামরিক ব্যক্তিদের রাজনৈতিক দুরদর্শীতা আদৌ আছে? তারা জনবিচ্ছিন অবস্থায় কাটিয়েছেন সমস্ত কর্মজীবন। তারা জনগণের মনোভাব বুঝে রাজনীতিতে সফল হবেন এমন বুদ্ধিদৃপ্ত অবঃ কর্মকর্তা নেই।

এই নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপরে আস্থাবান মানুষদের আস্থার প্রদীপের সলতে নিঃশেষ হয়েছে বছরপুর্তির আগে আগে। তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নানাবিধ ব্যর্থতার বক্তব্যে সোচ্চার এখন। একটা বর্বর দেশের রাষ্ট্র প্রধানের মতো এখনও জরুরি অবস্থার জুজু ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। পরিস্থিতির উন্নতি হয় নি ১ বছরেও- আর সরকারের দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রনের ব্যর্থতা- সার সরবরাহ ব্যবস্থা ঝুঁকিমুক্ত করতে না পারার ব্যর্থতা এবং এর ফলে দেশে কৃষি উৎপাদন ব্যহত হওয়ার পরে এবং সামরিক গোয়ার্তুমিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি অশান্ত হয়ে উঠা- এবং এর পরে আরও নানাবিধ ঘটনার পরিক্রমায় এখনও সরকার নিজেকে নিরাপদ ভাবছে না- তাদের বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ নিম্ন আয়ের মানুষের প্রতিরোধ এখনও দানা বাধছে না পুলিশের বর্বরতা নিয়ন্ত্রনের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয় নি বলে- উপনৈবেশিক পুলিশের মতোই বাংলাদেশের পুলিশ এখনও ক্ষমতাসীনের গদি রক্ষার কাজে নিয়োজিত পাগলা কুকুর।
তবে কোনো ভাবেই বলা যায় না যে এই সাংবিধানিক ভাবে অরাজনৈতিক এবং কর্মকান্ডে রাজনৈতিক এই সরকারের কোনো পদক্ষেপ দরিদ্র মানুষের উপকারে এসেছে। বরং ৫ উপদেষ্টার পদত্যাগ এবং নতুন ৫ উপদেষ্টার নিয়োগ এবং তাদের প্রতিশ্রুতি পালিত না হওয়ার বাস্তবতা চরম আকার ধারণ করেছে

তাই সিংহ সামরিক বাহিনীর কণ্ঠেও বিড়ালের মিঁউ মিঁউ স্বর- তারা অবঃ মেজর জেনারেলের কণ্ঠে শুনিয়েছেন করুণ মিনতি- আমাদের অনুগ্রহ করে আরও একটু সময় দিন- আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং ছাত্রদের মুক্তির বিষয়ে সর্বাত্মক সহায়তা করতে চাই।
তবে সামরিক গোয়ার্তুমি সম্পর্কে আমার ধারণ যদি মিথ্যা না হয় তবে তারা ২১শে জানুয়ারীর রায়ে অভিযুক্ত প্রমাণ করবেন ৪ শিক্ষককে এবং তারপরে রাষ্ট্রপতির বিশেষ বিবেচনায় ক্ষমা দিয়ে তাদের মুক্ত করবেন- এই হেনেস্তা তারা করবেন কারণ তারা আত্মগর্বে বলীয়ান। আর যদি এটা করা হয় তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতির অবনতি হবে- এই অসম্মানজনক মুক্তি ছাত্র শিক্ষকেরা চাইছেন না।

এই সরকারের কিছু রাজনৈতিক উপদেষ্টার অস্তিত্ব সম্পর্কে জনরব আছে- তবে সেই সব পুরোনো রাজনৈতিক খেলোয়ারদের রাজনৈতিক প্রজ্ঞার অভাব কিংবা তারা পর্যুদস্ত করে অগ্রহনযোগ্য বিবেচিত করতে চাইছে সামরিক বাহিনীকে। তাই তাদের পরামর্শেই হয়তো এই ধীরে চলো রীতি মেনে চলছে সামরিক বাহিনী। আর মইন উ আহমেদ বারবার পরিস্কার করছেন যে তিনি ক্ষমতার শীর্ষে যেতে চান না- রাষ্ট্রপতি হওয়ার ইচ্ছা তার নেই।

তবে ভবিষ্যত যাই হোক না কেনো আমার মনে হয় তথাকথিত সুশীলদের এখন এই তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলা উচিত কারণ, তাদেরই প্রচারিত নিরপেক্ষ বিচক্ষন এবং গ্রহনযোগ্য মানুষদের হেনেস্তার উপলক্ষ্য হয়েছে এই সরকার ব্যবস্থা।

আর যদি তারা এই ব্যবস্থা বহাল রাখতে আগ্রহী থাকেন তবে এটার নাম বদলে অপদস্ত পরিষদ রাখা হোক- কারণ কতিপয় মানুষকে গণমাধ্যমে প্রশংসিত করে তাকে অপদস্ত করবার কারখানা এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা।


মন্তব্য

হাসান মোরশেদ এর ছবি

সিনেমা,সিনেমা আজ সিনেমার বড়দিন...
----------------------------------------
শমন,শেকল,ডানা

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

আরিফ জেবতিক এর ছবি

-----------------------------
কালের ইতিহাসের পাতা
সবাইকে কি দেন বিধাতা?
আমি লিখি সত্য যা তা,
রাজার ভয়ে গীত ভনি না।

সৌরভ এর ছবি

হুমম, ঘটনায় পরিপূর্ণ নাটক !



আমি ও আমার স্বপ্নেরা লুকোচুরি খেলি


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

আড্ডাবাজ এর ছবি

"ইতিহাস বলে সামরিক বাহিনীর সহায়তায় কোথাও গণতন্ত্র পুণঃপ্রতিষ্টা পায় নি"। এভাবেই বোধ হয় চলবে। ধন্যবাদ।

অপ বাক এর ছবি

চলবে?

সবজান্তা এর ছবি

তো কি ?

আমার তো মনে হয় দৌড়াবে। তবে পেছন দিকে দেঁতো হাসি
---------------------------------------------------
অলমিতি বিস্তারেণ

অপ বাক এর ছবি

ভালো লাগলো সরকারের কাজ দেখে- বেকসুর খালাস দিলো শিক্ষকদের- রায় সবই কেনো উপদেষ্টা পরিষদের টেবিল থেকে বিচারকের টেবিলে যায়- কেনো এক যাত্রায় পৃথক ফল হয়- এখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কি মানহানীর মামলা করা উচিত?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।