ভাবনা

অপ বাক এর ছবি
লিখেছেন অপ বাক (তারিখ: মঙ্গল, ১৪/০৮/২০০৭ - ৫:০৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

হুমায়ুন আজাদের উপরে হামলার ৪ বছর পার হয়ে গেছে , হামলার পর পরই একজন নিরীহ ছাত্রকে ধরে নিয়ে যাওয়া হলো- বলা হলো আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরাই আসলে এই হামলার সাথে যুক্ত- কোনো কারণ নেই তবে জোট সরকারের ধারণা ছিলো এটাই প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে-

তবে প্রায় ১ বছর আটকে রেখে আর অত্যাচার করার পরেও এই হামলার সাথে আওয়ামী লীগকে যুক্ত করতে পারে নি জোট সরকার- অবশেষে প্রায় একটা শিক্ষাবছর শেষ হওয়ার পর সেই মানুষটা মুক্তি পায়- তার কাছে স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা ছিলো- বক্তব্যটা মোটামুটি এই পদের যে আদতে হুমায়ুন আজাদের উপরে হামলাটা পরিচালিত হয়েছে র এর সহযোগিতায় এবং ভারতের সম্পূর্ণ মদদ ছিলো এটাতে- এবং র এর স্থানীয় এজেন্ট আওয়ামী লীগ এই কাজ করেছে- তখনকার পুলিশের আইজি কোনো এক কারণে এই মতটাকেই প্রতিষ্ঠা করবার প্রাণান্ত চেষ্টা করেছেন,
রাষ্ট্রযন্ত্র যখন কোনো কিছুকে প্রতিষ্ঠিত করবার চেষ্টা করেন তখন আদতে তারা ভুলে যান কার্যকরণ সম্পর্ক- আওয়ামী লিগের সাথে হুমায়ুন আজাদের বৈরী সম্পর্ক কেনো এ বিষয়ে কোনো ব্যখ্যা উপস্থিত ছিলো না- তবে জোট সরকারের জঙ্গীদের মদতদানের প্রচারণার বাইরে আওয়ামী লীগ আসলে দেশের প্রতিথযশা সাহিত্যিক এবং জাতির বিবেকগুলোকে হত্যা করে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে চাচ্ছে কিংবা কোনো রাজনৈতিক সুবিধা গ্রহনের উদ্দেশ্যে এই হামলা চালিয়েছে-

তবে এই সত্য প্রতিষ্ঠিত হয় নি- জোট সরকারের গায়ে কলংকের মতো লেগে আছে বাংলাদেশের জঙ্গীবাদের উত্থানের সহায়তার দাগ- জামায়াতে ইসলামী কিংবা বি এন পি উভয় দলের রাজনীতির ভেতরে একটা সাধারণ ঐক্য হচ্ছে এদের তীব্র ভারত বিদ্বেষ- আওয়ামী লীগকে ভারত ঘেঁষা অপবাদ সহ্য করতে হয় বলেই হয়তো মাঝে আওয়ামী লীগও ভারতবিদ্বেষী মন্তব্য করেছে- এখন তারাও প্রমাণ করতে চায় তারাও ভারতবিদ্বেষী- পরদেশবিদ্বেষ কোনো রাজনৈতিক মতবাদ হতে পারে না- তবে বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা তারা রাজনীতির মাঠে নিজস্ব আদর্শ ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে- বরং বিএনপি আর জামায়াতের সাথে পাল্লা দিয়ে তাদের রাজনীতি এবং রাজনৈতিক মতবাদ অনুসরণ করে নিজস্ব অবস্থান থেকে সরে গেছে-
এ কারনেই আওয়ামী লীগও একটা সময় ধর্মকে রাজনীতির হাতিয়ার করতে চেয়েছে- ৯৬ এ সফল হওয়ার পরে ২০০১ এ ধর্মকে হাতিয়ার করবার চেষ্টাটা আবার ব্যর্থ হয়েছে জোটের যৌথ প্রচারণায়- আওয়ামী লীগকে ধারাবাহিকভাবে ইসলামের শত্রু প্রমাণিত করবার চেষ্টাতে তারা সফল হয়েছে বলা যায়- তাই ২০০৭ এর নির্বাচনে তারা নিজেদের ইসলামের বন্ধু প্রমাণ করতে গিয়ে খেলাফত মজলিসের সাথে চুক্তি করলো- কাজটা ভালো হয় নি- বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতবিদ্বেষ আর ইসলামপ্রীতি প্রধান উপকরণ হয়ে যাওয়ার সব মানুষের রাজনীতি বলে কিছু নেই বাংলাদেশে- বাংলাদেশের রাজনীতি এখন বিশেষ কয়েকটি গোত্রের রাজনীতি- আর যারাই এই পথে শীর্ষে পৌঁছাতে চায় তারা নিজেরা কিছু উদ্ভট উন্মাদনা ছড়াতে চায়-

বাংলাদেশের রাজনীতির এই অধপতনের পরে কিংবা অধঃপতনের ধারাবাহিকতায় হুমায়ুন আজাদের মৃত্যু নিজে রাজনৈতিক ব্যবসা চলবে এটা অনভিপ্রেত হলেও বাস্তবতা- হুমায়ুন আজাদীয় রাজনীতির একটা ভালো দিক হলো এই মৃত মানুষটাকে নিয়ে কাদা ছোড়াছুড়িতে বিরক্ত হয়ে সে কিছুই বলবে না-

সমস্যা হলো জোট সরকারের আমলে এই মামলার তদন্তে কোনো অগ্রগতি হয় নি- অযথা একটা মানুষকে ধরে নিয়ে গিয়ে তার উপরে অত্যাচার করে ভারত আর আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্ঠতা প্রমাণের পন্থাটা ব্যর্থ হওয়ার পরে এই মামলার তদন্ত আটকে ছিলো- অবশেষে জেএমবির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের আটক করবার পরে ২ জন শীর্ষ নেতা হামলার দায়িত্ব স্বীকার করে- তবে হুমায়ুন আজাদের উপরে হামলার আদেশ কিংবা নির্দেশনা এসেছে সাইদী সাহেবের কাছে এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায় নি- যদিও জেএমবির সদস্যদের অনেকই অতীতে ছাত্রশিবিরের সদস্য ছিলো তবে জামায়াতের দাবি তারা এই হামলা চালায় নি-
একই রকম একটা ঘটনা ঘটেছিলো পার্থের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রযুক্তি অজ্ঞ গোয়েন্দারা ানেক ফলাও করে বললো আসলে হাসিনাকে হত্যার হুমকি দিয়ে পাঠানো ইমেইল এসেছে এই ছেলের কাছ থেকে- কেনো? কোন পার্থিব উদ্দেশ্য কিংবা অপার্থিব উদ্দেশ্যে এ হামলার হুমকি দিবে সেটা বলা মুশকিল-

তবে রাজনৈতিক ক্ষমতায় যাওয়া নেতাদের এবং তাদের পরিচালনা করা সচিবদের ধারণা সবাই আশে পাশে চড়ে ঘাস খায়- কারণ তারাই দেশের সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রজাতি- তারা অনেক পরীক্ষা দিয়ে বিসিএস ক্যাডার হয়েছে- আর দেশের খাদ্যাভাবের জন্য সবাই যারা ভাত মাংস খেয়ে বুদ্ধিমান হওয়ার সম্ভবনা রাখতো তারা সবাই ঘাস খেয়ে নষ্ট হয়ে গেছে-

বাংলাদেশের জঙ্গীবাদের উত্থানের পেছনে প্রাক্তন আইজি এবং বর্তমান সরকারের একজন উপদেষ্টার সরাসরি অংশগ্রহন আছে এমন অভিযোগ তুলেছে ইসলামী শাসনতন্ত্রের এক নেতা-

যদি এমন সমীকরণ সঠিক হয় তবে বলতে হবে বর্তমান সরকারের জামায়াতের প্রতি সহানুভুতিশীল হয়ে উঠাটা তাদের ভেতরের সহমর্মিতার প্রকাশ-

বিচারক হত্যার দায়ে তড়িঘড়ি করে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হলো জঙ্গীদের- এবং তাদের প্রকাশ্যে জবানবন্দী দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হলো না- এখন আবার হুমায়ুন আজাদের উপরে হামলার তদন্ত হচ্ছে এবং অভিযুক্ত হিসেবে প্রথম ২ জনের নাম আছে- এবং তাদের যেহেতু আগেই ফাঁসি হয়ে গেছে তাই কোনো ঝামেলা নাই- বলে ফেলা যায় তারা নিজস্ব দায়িত্বে এই হামলা করেছে এবং তারাই মূল দোষী আর কেউ সংশ্লিষ্ঠ ছিলো না এ ঘটনায়-

বাংলাদেশের প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত এবং পুলিশের কর্মতৎপরতা এবং তাদের তদন্ত রিপোর্ট সব সময়ই ক্ষমতাসীনদের ভাষ্য হিসেবে সামনে আসে- কাকে হত্যা করা হলো এবং কেনো হত্যা করা হলো এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে এটাদিয়ে কোনোভাবে বিপদে ফেলানো যায় কি না-

বিষয়টা নোংরামীতে গিয়ে শেষ হয়- এবং সরকারী পক্ষের ভাষ্য থাকে কাজটা বিরোধীদলের লোকজনের- তারা দেশের আইনপরিস্থিতির অবনতি করতে চায়-
আর বিরোধী দলীয় বক্তব্য হলো কাজটাতে সরকারের মদত আছে-

সাধারণ মানুষ এই মতের লড়াইয়ের ভেতরে পড়ে খাবি খায়-

একটা সাধারণ মৃত্যুও অসাধারণ হয়ে উঠে- এখানে পরকীয়ার জন্য মেজর মানুষ খুন করায়- এখানে ভালোবাসার জন্য মানুষ নিজে আত্মহত্যা করে - মানুষ অপমানিত হয়ে আত্মহত্যা করে - মানুষ ক্রস ফায়ারে মরে যায়- সামরিক বাহিনী পুলিশ দিয়ে খুন করায়- মগের মুল্লুক অবস্থায় আমরা আরও আনন্দিত হই-

বন্যা নিয়ে রাজনীতি হবে না- তবে খুব আশ্চর্য বিষয় হলো টিভি ক্যামেরা আর ইলেকট্রনিক মিডিয়াকে খবর না দিয়ে তারা কোনো ত্রাণ বিতরণে যান না- তাদের মানবসেবা করতে হলেও সেটাকে প্রচারণায় নিতে হয়- মেজর সাহেব- উপদেষ্টা সাহেব যখন বন্যার কথা বলছেন- যখন বলছেন বন্যাপরবর্তী সময়ে কৃষকদের সহায়তা দেওয়া হবে বীজ আর সার দিয়ে তখন সারাদেশের কৃষকদের সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার আগ্রহ জানায় বাংলাদেশ ব্যাংক- এবং একই সাথে কৃষি ঋণে সুদের পরিমাণ বাড়িয়ে করা হয় ১২ শতাংশ- এর আগে সুদের পরিমাণ ছিলো ৮ শতাংশ- এই যে বর্ধিত সুদ এটার একটা ব্যবসায়ীক দিক আছে- কারণ এখন অবস্থা এমন যে কৃষক জমি বাঁচাতে সুদ বাড়ালেও ঋণ নিবে- তবে জ্ঞানী শিক্ষিত বাংলাদেশ ব্যংকের প্রধান কর্মকর্তা বলেছেন এটাতে বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু করতে পারবে না- কারণ এটা ব্যাংকগুলোর নিজস্ব পর্ষদের সিদ্ধান্ত এবং এটার যথার্থতা প্রতিপাদন করতে গিয়ে তিনি বলেছেন আসলে কৃষকদের ঋণ দেওয়া একটা ঝুঁকির কাজ- আর ঝুঁকির জন্য সুদের পরিমাণ বেশী-

শীর্ষ ঋণ খেলাপীদের অনেকেই এখনও বহাল তবিয়তে গাড়ী হাকিয়ে ঘুরে বেড়ায় বাংলাদেশে- তাদের সম্মিলিত অনাদায়ী দেনাকে ব্যাড ক্রেডিট খাতে ফেলে সমন্বয় করে সব কয়টা ব্যাংক- তাদের নিয়মিত চিঠি পাঠানো হয় সুদের তাগাদা দিয়ে- আর দেনাগুলোর পরিমাণ হয় কয়েক কোটি থেকে কয়েকশো কোটি টাকা- আর একজন কৃষক ৯ হাজার টাকা ঋণের দায়ে জেল হাজতে যায়- এই হলো কৃষকদের প্রতি আমাদের সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি-

রাষ্ট্র বলছে কৃষকদের কৃষিশিল্পে উৎপাদন বাড়াতে হবে- দেশের অর্থনীতির জন্যই এটা প্রয়োজন তবে কৃষকদের সহায়তা দেওয়া হবে না ওটা ঝুঁকির কাজ বলে-
এই অবস্থায় আমরা অপেক্ষা করবো আরও একটা বন্যার জন্য- কারন মাননীয় উপদেষ্টা বলেছেন বন্যা উপকারী এতে পলি জমে জমির উর্বরতা বাড়ে- তাতে ফসলের ফলন বাড়ে-

আমাদের এমন উপদেষ্টার প্রয়োজন আছে কি না এটা পাঠকের সিদ্ধান্ত তবে যারা ঠিক ভাবে কথা বলতে পারেন না- তাদের তদারকিতে চলতে আমার নিজের কিছুটা আশংকা রয়েই যায়।


মন্তব্য

হাসান মোরশেদ এর ছবি

আব্বাস নামের সেই ছেলেটার মাস্তানী নাম ও করিৎকর্মা পুলিশ খোঁজে বের করেছিল- 'বোমা আব্বাস' ।
কি অদ্ভুত,জিজ্ঞাসাবাদের নামে পিটিয়ে পংগু করে দেয়া হয় সন্দেহভাজনদের যাদের অনেকেই পরে আদালতের রায়ে নির্দোষ প্রমানিত হয় ।
আমি বিস্মিত হই,বাংলাদেশের মানবাধিকার সংস্থাগুলো জিজ্ঞাসাবাদ কালীন পুলিশী নির্যাতনকে কেনো ইস্যু করেনা?

-----------------------------------
'আমি ও অনন্তকাল এইখানে পরস্পর বিস্ময়ে বিঁধে আছি'

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

অপ বাক এর ছবি

আরও আনন্দের সংবাদ হলো এখনও পিপলস জুট মিলের শ্রমিকদের পাওনা টাকা দেওয়া হয় নি- ৮ মাসে বেতন বকেয়া তবে দেওয়া হয়েছে ১৫ সপ্তাহের বেতন-

বরাদ্দ ৪ কোটি এবং এখনও বেতন ভাতাদি বাবদ বকেয়া টাকার পরিমাণ ৪০ কোটির মতো-

তবে প্রায় প্রতিদিন সুন্দরী গীতিআরা সাফিয়া আর তপন চৌধুরিকে দেখি হাসি মুখে-

ঝরাপাতা এর ছবি

আওয়ামী লিগের সাথে হুমায়ুন আজাদের বৈরী সম্পর্ক কেনো এ বিষয়ে কোনো ব্যখ্যা উপস্থিত ছিলো না-

এমনিতে হুমায়ুন আজাদ বি.এন.পি., আওায়ামীলীগ কোন দলের সমালোচনা করতে যদিও বিন্দুমাত্র কুন্ঠিত হতেন না, কিন্তু ২০০১ এর নির্বাচনে তিনি বি.এন.পি.র বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থানে ছিলেন। সেসময়ের একটি সাক্ষাতকারে সম্ভবত আজকের কাগজে তিনি বলেছিলেন।

দুই নেত্রীর বাক্যবিনিময় প্রসঙ্গে,
আমাদের দুই নেত্রীর ঝগড়া শহরের কলতলার নারীদের মতো, কখনো ঘৃন্য, কখনো উপভোগ্য, . . . ।

আওয়ামীলীগের পক্ষে অবস্থানের প্রসঙ্গে,
হ্যাঁ আমি সরাসরি বি.এন.পি-র বিরোধিতা করছি, কারণ তাদের সাথে যুক্ত হয়েছে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী, রাজাকার, রগকাটা, মৌলবাদী সংগঠনটি।

পোস্টের ব্যাপারে বলি, আলাদা আলাদা দুটো পোস্ট দিলে আরো বিশদ আকারে বলতে পারতেন বলে মনে হয়।


রোদ্দুরেই শুধু জন্মাবে বিদ্রোহ, যুক্তিতে নির্মিত হবে সমকাল।


বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।