৯জনের আত্মহত্যা আর আমার অনুভব

অপ বাক এর ছবি
লিখেছেন অপ বাক (তারিখ: সোম, ০৩/০৯/২০০৭ - ৭:১৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

এ বছরের একটা আলোচিত ঘটনা হলো ময়মনসিংহের কাছাকাছি একসাথে ৯ জনের আত্মহত্যা। বিষয়টা মর্মান্তিক বললে বলতে হবে আমাদের সামাজিক অবকাঠামোই এমন কঠোর যে এখানে সব বিশ্বাস ধারণ করবার স্বাধীনতা নেই- একটা অদৃশ্য সামাজিক চাপ সব সময়ই বিদ্যমান। আমাদের মৌলবাদী দলগুলো কিংবা আমাদের ভেতরে ধর্মীয় উগ্রতা ছড়িয়ে দেওয়ার অপচেষ্টার বিরুদ্ধে সোচ্চার সবাই একটা সময় এই মর্মান্তিক সত্যটা স্বীকার করতে বাধ্য হবে যে এই ৯ জন মানুষকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করবার কাজটা আমাদের সমাজ নামের সংগঠনটাই করেছে।

একটা পরিবারের ৯জনের মৃত্যুর ঘটনা নয় এটা- এটা বরং একদল মানুষের নিজস্ব জীবনযাপনের সংগ্রামে পরাজয়ের লজ্জাজনক ইতিহাস- আমাদের ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার জলন্ত প্রমাণ এ ঘটনা। আমাদের দারিদ্র আমাদের ধর্মীয় খোলসে প্রতারণা করতে প্ররোচিত করে- এ সত্যা গন্ডগ্রামের নতুন ইমামের জন্য যেমন সত্য তেমন ভাবে সত্য সকল জঙ্গীদের জন্য- জঙ্গীরা প্রতারিত হয় এবং তাদের কঠোর বিশ্বাস যেটা অনেকাংশে ভ্রান্ত সেটার প্রভাবে তারা সামাজিক স্থিরতা নষ্ট করে- তবে অন্য সবাই এখনকার বিখ্যাত ও ধনাঢ্য পীরেরাও এই বিশ্বাসের মোড়কে রাখা সহজ ব্যবসা করে প্রভুত সম্পদের মালিক হয়েছে।

সেই ৯জনের পরিবারের প্রধান ব্যক্তি যখন হঠাৎ বেকার হয়ে গেলেন তখন তাদের আয়ের প্রধান উৎস ছিলো ঘরে তৈরি নিদ্রাকুসম তেলের মতো একটা তেল বিক্রী। এই আয় দিয়েই তাদের জীবন চলতো- আমরা রাষ্ট্রীয় অবকাঠামোতে এমন কোনো ব্যবস্থা রাখি নি, তাইএখানে প্রান্তিক আয়ের মানুষ এবং তাদের প্রতিভা বিকশিত হওয়ার যথেষ্ট সুযোগ প্রচলিত ব্যবস্থায় অনুপস্থিত- এই পরিবারের প্রধান যখন সেই তেল বেচা আয়ে সংসার চালানোর কঠিন কাজটা সম্পাদন করছেন এবং এটা যখন পরিবারের সকলের একমাত্র অবলম্বন- তখন হঠাৎ করেই এই ব্যবসায় বিপর্যয়।

আয়ের একমাত্র সংস্থান চলে গেলে করুণার উপর নির্ভরশীল হয়ে যাওয়া ভিন্ন গত্যান্তর থাকে না কোনো- আমাদের এই পরিবার প্রধান একটা পর্যায়ে নিজস্ব ধর্মবিশ্বাসের নতুন কাঠামো তুলে ধরলেন সামনে- বাংলাদেশ ধর্মীয় ভিন্ন মত প্রকাশে অসহিষ্ণু এটা তেমন কঠিন সত্য হয়ে উপস্থিত হয় নি এখানে প্রাথমিক পর্যায়ে- তবে একটু আলাদা ধরনের বিশ্বাসের কথা বলা ধর্মগুরুদের অনুসারীদের সামাজিক শক্তিতে বলীয়ান হয়ে উঠে ধর্মগুরুরা- আমাদের এই পরিবার প্রধানের দুর্ভাগ্য পীর কাঠামোর অনুসারী ধনাঢ্য ব্যক্তিদের আনুকল্য পেতে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি-

তার প্রচারিত বিশ্বাসের একটা অবস্থান ছিলো ধর্ম পালনের প্রয়োজন নেই- আমাদের বিশ্বাসের বলে আমরা পরিত্রান পাবো- নামাজ পড়বার কিংবা পূজার প্রয়োজন নেই আসলে ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার অসারতার প্রচার ছিলো বলেই হয়তো এটা তেমন জনপ্রিয়তা পায় নি- তবে কিছু কিছু মানুষ যে এই বিশ্বাসকে গ্রহন করেছিলো তার প্রমাণ হলো এই ব্যক্তির দরবেশ উপাধী পাওয়া।

দরবেশ নিজস্ব বিশ্বাস প্রচার করছেন- অনুসারীরা তাকে উপহার দিয়ে যাচ্ছে- এই গল্পের সাজুয্য পাওয়া গেলেও যেহেতু দরবেশ নিজেই বলেছেন ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা অর্থহীন তাই তিনি নিজের মৃত্যুর পরে তার লাশ দাফন না করে এমনি মাটিতে পুতে ফেলবার নির্দেশ দেন অনুসারীদের-
গুরুর কথা অবশ্য মান্য- তবে এই দরবেশ তার নিজস্ব মৃত্যু পরবর্তী আনুষ্ঠানিকতার কোনো সুযোগ পান নি- তার পরিবার অনেক ভাবে চেষ্টা করে তাকে জানাযা ছাড়া কবর দিতে- সে প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়- তার নির্দেশনা অনুযায়ী তার পা পাশ্চিম দিকে রেখে তাকে মাটিতে পুতে ফেলবার কাজটা পরিবারের সদস্য কিংবা তার অনুসারীরা করতে পারে নি-

কথা হলো মুর্দা কিংবা মৃত ব্যক্তির চুড়ান্ত ইচ্ছাকে আমরা সম্মান করবো কি করবো না? যদি তার পশ্চিম দিকে পা দিয়ে কবরে শোয়ার ইচ্ছা হয় সেটা শরীয়তের দৃষ্টিতে গ্রহনযোগ্য কি না এটা বিবেচনা করবার প্রয়োজন কি আছে? মূলত যখন এই ব্যক্তি নিজেই একটা ধর্মবিশ্বাসের প্রচারক- তার ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী তাকে দাফন করবার সুযোগটা দেওয়া উচিত কি অনুচিত প্রশ্নটা এখানে এসে দাঁড়ায়।

তবে আমাদের ধর্মীয় অনুশাসনের প্রয়োজনীয়তা এবং এর আড়ম্বর প্রকাশিত হয় আমাদের মৃত্যু এবং বিবাহের সময়- এ ছাড়া অধিকাংশ মানুষের জীবনে ধর্মের প্রভাব খুব স্পষ্ট নয়।

তার পরিবারের সদস্যরা যখন তার অন্তিম ইচ্ছা অনুযায়ী তার দাফনের চেষ্টা করছে তখন সমাজের অন্যান্য মানুষ এসে নির্দেশনা দেওয়া শুরু করলো- এভাবে নয় ওভাবে- এটা নয় সেটা- অতএব পরিবারের সদস্যরা একটা পর্যায়ে তাদের কর্মকান্ডকে ভিত্তি দিতে বললো আমরা খ্রীষ্টান হয়ে গেছি- ওদের বিধানে এমনটা আছে যে পশ্চিম দিকে পা দিয়ে কবরে রাখা যায়-

যদিও বিষয়টার সত্যতা সম্পর্কে আমি সন্দিহান- তবে শুধুমাত্র বাংলাদেশ কিংবা এ অঞ্চলের প্রেক্ষিতে পশ্চিম দিকটা গুরুত্বপূর্ণ- যদি ইউরোপ কিংবা আমেরিকা কিংবা আফ্রিকা কিংবা মধ্যপ্রাচ্যের অন্য কোনো দেশ হতো তবে এই পশ্চিম দিকে পা দিয়ে মৃত ব্যক্তির অন্তিম ইচ্ছা পুরণে কোনো সমস্যা হতো না।

যাই হোক তাকে স্থানীয় গোরস্থানে ইসলামী বিধান মতে কবর দেওয়া হয়- তবে এই মিথ্যার যন্ত্রনায় ভুগতে হয় সমস্ত পরিবারকে- এমনিতেই তারা বিভিন্ন ধরনের সামাজিক চাপের ভেতরে ছিলো- তাদের মূলত এই মৃত ব্যক্তির প্রচলিত ধর্মবিশ্বাস আনুষ্ঠানিক ধর্মাচারণের বিরুদ্ধে যে বানী দেওয়া হয়েছিলো তা অনেকের কাছে গ্রহনযোগ্য মনে হয় নি বলে তারা নিয়মিত হুমকি দিতো এই পরিবারকে- একটা পর্যায়ে তাদের সামাজিক ভাবে বয়কট করা হয়- এবং মৃত্যুর পরে সমাজ বাড়ী এসে সহমর্মিতা প্রদর্শনের বদলে সামাজিক চাহিদা পুরণে তাদের বাধ্য করে- এবং এই ঘটনার পরে আবারও তাদের উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা বলবত থাকে-

একদল মানুষ সমাজবিচ্ছিন্ন হয়ে আছে- তাদের সাথে কারো লেনদেন নেই- তারা জীবনযাপন করছে এবং চৌকোনা একটা ভূখন্ডেই তাদের জীবন সীমাবদ্ধ- তার বিবাহিত মেয়েরা কেউই এই বিশ্বাস ধারণ করতে পারে নি- যদি এমনও হয় যে তারা প্রাথমিক ভাবে এই ধর্মের অনুসারী ছিলো তবে শ্বশুর বাড়ীর চাপে তারা এই বিশ্বাস ত্যাগে বাধ্য হয়েছে-

তারা ঘটনার অন্তত ৫ বছর পরে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয়- এবং ট্রেনের লাইনে ঝাপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করে-

এর পরে এই সামাজিক ঘটনা সামনে আসলেও স্থানীয় চার্চ থেকে জানানো হয়- তাদের রেকর্ড বলছে আত্মহত্যাকারীরা কোনো দিনও ধর্মান্তরিত হয় নি- বরং তাদের ধর্মবিশ্বাস ইসলামী উপাদানই ছিলো বেশী। আনুষ্ঠানিক ভবাে নামাজ রোজা করবার বিধান হয়তো ছিলো না তবে এটা ইসলামী বিশ্বাসের একটা রকমফের হতে পারতো যদি আমরা কষ্ঠিপাথরে এটাকে বিচার করতাম তবে-

আমরা সুফিজমকে আনুষ্ঠানিক ভাবে স্বীকৃতি দিয়েছি- আমরা ভাবগত উপলব্ধিকেও ধর্মবিশ্বাসের নাম দিয়েছি তবে বাউল ধর্ম কিংবা সুফিজমের অন্যান্য রকমফেরকে আমরা সব সময়ই সন্দেহের চোখে দেখছি এবং সময় সময় আমাদের শরীয়তপাগল মুসলিম জনতা এদের বিরুদ্ধে খড়গহস্ত হয়েছে-

আমাকে এই ঘটনা ব্যথিত করে না বরং আবারও চিন্তিত করে- আনুষ্ঠানিক ধর্মপালনের মত্ততার কারণে মৃত মানুষের অভিসম্পাত আমরা অনেক দিন ধরেই বহন করছি- এবং এই প্রকাশ্য ধর্মাচারণের মত্ততা দিন দিন বাড়ছে- সামাজিক ভাবে নিগৃহীত হওয়ার সম্ভবনাও বাড়ছে দিন দিন- আমরা এমন একটা সংগঠনের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাচ্ছি যেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠের মূল্যবোধ আর ভাবনা সহিংস হয়ে উঠছে- এবং তাদের বিরুদ্ধাচারণের পরিনাম কখনও প্রাণঘাতী হয়ে যাচ্ছে।


মন্তব্য

ধ্রুব হাসান এর ছবি

আশ্চর্য হলাম,বেশ কিছু দিন আগে যখন পরিবারটি সদলবলে আত্মহত্যা করলো আমি ভীষনরকম শকড্‌ হয়ে ভাবছিলাম এইটাও কি সম্ভব? যখন মন খারাপ ব্যাপারটা একটু সহনীয় হয়ে আসে তখন খুজতে থাকি কেন এমনটা হলো কিন্তু প্রত্রিকা মাধ্যমে যা জানতে পারি তাতে আমার মন ভরে না,জানেনতো প্রত্রিকাওয়ালারা সবসময় একটা ভারসাম্যপূর্ণ লেখা ছাপাই অথবা অতিরঞ্জন করে ছাপাই ! যাইহোক আপনার লেখাটা পড়ে আবারো মনটা খারাপ হয়ে গেল কিন্তু ভালোলাগলো এই জন্য যে, সত্যের অনেক কাছাকাছি গেছেন আপনি। আমার ভীষনরকম খারাপ লাগে যখন দেখি আমরা আমাদের দেশে এখনো এমন একটা ক্ষুদ্র অতচ শক্তিশালী শ্রেনী গড়ে তুলতে পারলাম না যারা আন্তরিকভাবেই পরমত সহিশ্নু! আপনার সাথে আমি সপূর্ণ একমত যে, আমাদের দেশে এমন একটা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে সংখ্যাগরিষ্ট মানুষের মতামত,প্রকাশ্যে বা নিভৃতে অপরাপর ক্ষুদ্র কিন্তু ভিন্ন বিশ্বাসী মানুষদের হত্যা করে চলেছে...সমাজে প্রান্তিক মানুষদের স্থান হচ্ছে যতদ্রুত সম্ভব হয় মিশে যাও নয়তো মরে যাও! সমাজের ক্ষত চিহ্নটা কতটা স্পট হলে পরে একটা পরিবার সদলবলে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়! আমার প্রায়ই মনে হয় আমার মাতৃভূমিটা একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছে...আমাদের আশান্থিত হওয়ার আর কিছুই যেন অবশিষ্ট নেই। যাক ব্যথিত হওয়া ছাড়া এই মুহূর্তে আর কীই বা করতে পারি এই পরদেশে বসে ? এখন ভয় হয় শেষ পর্যন্ত আমার দেশে ফেরার ইচ্ছটাও যেন মরে না যায় !

এটা কি সম্ভব ঘটনাটার ব্যাপারে আরো ডিটেল জানানো ?...উদ্দেশ্যটা হলো যদি আমি একটা মিনিমাম ফান্ডও মেনেজ করতে পারি তবে এই বিষয়ে আমার জায়গা থেকে কিছু করা যাবে...আই মিন আমি একটা ডকুফিকশন করার চিন্তা করছি, ওই ঘটনা নিয়ে একটা স্ক্রীপ্টও আমার মোটামুটি তৈরী আছে, কিছু কারেকশনের প্রয়োজন। আবারো ধন্যবাদ এই বিশ্লেষনী লেখাটার জন্য।

ভাস্কর এর ছবি

আপনের জবাব পইড়া মনে হওয়ার স্কোপ আছে যে এইরম তাজ্জব ঘটনা খালি এই দেশেই ঘটে...আসলে সারা পৃথিবীর অবস্থাই এইরম, সবদেশের সব কিছুতেই এইরম এলিয়েনেশনরে উষ্কানী দেওনের এলিমেন্ট থাকে। জীবনযাত্রার মানের হেরফেরে হয়তো প্রকাশটা একরম হয় না।

আমাগো মাতৃভূমি হয়তো একটু বেশি ব্যর্থ রাষ্ট্র...কারন এইখানে অন্য সফল রাষ্ট্ররা(!) একটু বেশি মাতব্বরী ফলানের বাসনা দেখায়...আর আমাগো ব্যর্থ সমাজ সেই মাতব্বরী মাইনা নিতে দিনে দিনে আরো উদ্যোগী হইতেছে।

আপনে বলছেন অপবাক সত্যের কাছাকাছি গেছে, কিন্তু আপনি নিজে সত্যের কতোটা কাছে আছেন সেইটা নিয়া আমার প্রশ্ন তৈরী হইলো।


স্বপ্নের মতোন মিলেছি সংশয়ে...সংশয় কাটলেই যেনো মৃত্যু আলিঙ্গন...


স্বপ্নের মতোন মিলেছি সংশয়ে...সংশয় কাটলেই যেনো মৃত্যু আলিঙ্গন...

ধ্রুব হাসান এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকে এই সমুচিত জবাব লিখনের জন্য। কিন্তু আপনার জবাবটা আমাকে একটুও অবাক করেনি, ছোটকাল থেকে আমার বামপন্থী দাদারা (কিছু ব্যতিক্রম বাদে)এভাবে জবাব দিতেন, অনেকদিন পর এই টোনটা পাইয়া মজাই লাগলো, ভাবলাম এখনো তিনারা অবশিষ্ট আছেন!আপনার এই "আসলে সারা পৃথিবীর অবস্থাই এইরম, সবদেশের সব কিছুতেই এইরম এলিয়েনেশনরে উষ্কানী দেওনের এলিমেন্ট থাকে। জীবনযাত্রার মানের হেরফেরে হয়তো প্রকাশটা একরম হয় না।"- ব্যাখ্যাটার সাথে আমিও একমত, যারা সমাজবিজ্ঞান সম্পর্কে একটুও ধারণা রাখেন তারা বিষয়টা জানেন, তবে দাদা যেহেতু দেশটা আপনার মতো আমারো, তাই হতাশা একটু বেশীরকম লাগে; আফটার অল,নিজের শরীরের ক্ষত!

তবে আপনাদের মতো ব্যাখ্যাটা জেনে প্রতিক্রিয়া না জানাইয়া বসে থাকতে পারিনা। আমগো দেশে বামপন্থীগো (কিছু ব্যতিক্রম বাদে) ব্যক্তি মানুষের স্বাধীনতা লইয়া কোন টেনশন নাই, তারাতো সমষ্টি-স্বার্থ উদ্ধারে ব্যস্ত, তাই মনে হয় ব্যক্তিমানুষ (যদি ভিন্নমতালম্বী হয়,তাইলে তো কথাই নাই) মরলো কি বাঁচলো তা নিয়া মাথা ব্যাথা না করলেও চলবে - বিপ্লবটা হলো আসল! হায়রে বিপ্লব!

এসব কথারে আপনি অপ্রাসঙ্গিক কইতে পারেন কিন্তু আমি বল্লাম আপনার এই "আমাগো মাতৃভূমি হয়তো একটু বেশি ব্যর্থ রাষ্ট্র...কারন এইখানে অন্য সফল রাষ্ট্ররা(!) একটু বেশি মাতব্বরী ফলানের বাসনা দেখায়...আর আমাগো ব্যর্থ সমাজ সেই মাতব্বরী মাইনা নিতে দিনে দিনে আরো উদ্যোগী হইতেছে।"- কমেন্ট শুইনা। আপনিও হেগো মতো সাম্রাজ্যবাদী ভূতের উপর দোষ চাপাইয়া আরাম বোধ করেন। বামপন্থী আর জামাতিগো মধ্যে একটা দারুন মিল হইলো হেরা যুক্তিটা মানে সমস্যাটা বোঝে কিন্তু সমাধানের তাল গাছটা হেগো ! যাই হোক, দাদা, এসব আমার এক্কেরে ব্যক্তিগত মতামত, এবং আমার সত্য উপলব্দি একেবারে আমার মতো;কারণ, সত্য জিনিষটাই অবস্থানগতভাবে ভিন্ন ভিন্ন মাত্রার হয়। আর আমি কতোখানি আমার সত্যের কাছাকাছি আছি,তার উপলব্দিও আমার আছে। আবারো ধন্যবাদ আপনার মতামতের জন্য; আশা করি আমগো মাঝে পরমত সহিষ্ণুতা বৃদ্ধি পাবে।

ভাস্কর এর ছবি

বামপন্থী দাদাগো সত্যবচন শুইনা আপনে যে তাগো উপরে খেইপা আছেন সেইটা আঁচ করবার পারতেছি। কিন্তু আমার কথার লগে একমত হইয়া সমাজবিজ্ঞানের জ্ঞান আপনারো আছে জানাইয়া ক্যান দেশের ভাগাভাগি লইয়া পরলেন তা বুঝি নাই। আমি যেই অর্থে কইছি সেইটা হইলো আপনের আগের জবাব পইড়া আমার মনে হইছিলো আপনে ঢালাওভাবে বাংলাদেশরে দোষ দিতাছেন এলিয়েনেশন তৈরীর দায়ে। কিন্তু আসলে এই অবস্থা সারা পৃথিবীতেই আছে সেইটা বলতে চাইছিলাম আমি। আপনে দেশে না আইসা বিদেশে থাকনের যেই বাসনা দেখাইছেন সেইখানে এই উপলব্ধিই সামনে আসে।

আমাগো মতোন ব্যখ্যা জাইনা প্রতিক্রিয়া না জানাইয়া আপনে থাকতে পারেন না বিধায় বিপ্লবের ঘাড়ে যেই দোষ চাপাইলেন, সেইটাও বুঝলাম না। দেশের অবস্থা খারাপ হইয়া যাইতেছে, দেশের গায়ের ক্ষত আসলে আপনের গায়েরও ক্ষত...এতোসব কইয়া যদি ব্যক্তিমানুষের স্বাধীনতা লইয়া বামপন্থীরা ভাবে না টাইপ গড় মন্তব্য কইরা বসেন...সেইখান থেইকা বামপন্থীরা অমানবিকতায় বিশ্বাসী টাইপ সিদ্ধান্তে চইলা যান সেইসব কেবল অপ্রাসঙ্গিক হয় না, বেকুবীপণা হয়।

আমাগো মাতৃভূমি হয়তো একটু বেশি ব্যর্থ রাষ্ট্র...কারন এইখানে অন্য সফল রাষ্ট্ররা(!) একটু বেশি মাতব্বরী ফলানের বাসনা দেখায়...আর আমাগো ব্যর্থ সমাজ সেই মাতব্বরী মাইনা নিতে দিনে দিনে আরো উদ্যোগী হইতেছে।
- এই মন্তব্য থেইকা আপনের মনে হইছে আমিও হেগো মতো সাম্রাজ্যবাদী ভূতের উপর দোষ চাপাইয়া আরাম বোধ করি। ব্যাপারটা আসলে এক্কেরেই আরামবোধ করনের না ধ্রূব সাহেব, ব্যাপারটা হইলো উপলব্ধির। কারন আপনে অল্পজ্ঞানে জামাতীরা যে যুক্তি মানে সেই তত্ত্ব আবিষ্কার কইরা ফেলেন। ধর্মভিত্তিক একটা দল যুক্তি দিয়া চলে, এই বচন খুব সুবিধার ঠেকেনা।

যদিও সমাধানের তালগাছ যে যুক্তি মানে-বোঝে তার হাতে থাকনটাই জরুরী।

আপনে সত্যের আপেক্ষিকতা নিয়া এখন কপচাইতেছেন, কিন্তু আপনেই অপবাকরে কইলেন তিনি সত্যের কাছাকাছি গেছেন...তারমানে তো আমি বুঝছি আপনে সত্যরে ধ্রূব বানাইতেছেন...এখন আপনের সত্য আর আমার সত্য কিম্বা অপবাকের সত্য আলাদারম হইলেতো কোন ধরনের তর্ক করনটা বৃথা সময় নষ্ট...এইরম সিনিক হইয়া যে কিসের দুঃখে থাকেন, কিসের সমাধান খোঁজেন সেইটা বোঝা মনে হয় আসলেই আমাগো মতোন বামপন্থীগো পক্ষে কঠিন!

পরমত সহিষ্ণুতা ব্যাপারটা আমার কাছে ভেইগ মনে হয়...আমি এক্কেরেই যুক্তির সহিষ্ণুতায় বিশ্বাসী।


স্বপ্নের মতোন মিলেছি সংশয়ে...সংশয় কাটলেই যেনো মৃত্যু আলিঙ্গন...


স্বপ্নের মতোন মিলেছি সংশয়ে...সংশয় কাটলেই যেনো মৃত্যু আলিঙ্গন...

আরিফ জেবতিক এর ছবি

ভাষ্কর,আমার লেখা কই?

ধ্রুব হাসান এর ছবি

দাদা আপনার দেয়া গালিগুলো পড়লাম, বুঝলাম আমি বেকুব সিনিক অল্পজ্ঞানী, তবে জ্ঞান আমার অল্পই; এবং এও বুঝলাম আপনার অনেক জ্ঞান! আর আপনার কাছ থেকে কিছু শেখার বাসনায় আপনার জবাবটার উত্তর দেয়া জরুরী। তবে ১৬ ঘণ্টা মজুরি দিয়া আইসা লেখাটা একটু কষ্টকর, আবারো কামলা দিতে যাইতেছি, কাল আইসা লিখার চেষ্টা করুম অল্পজ্ঞান লইয়া তবে ভাই বিদেশ খুব সুখের জায়গা না এইটা অন্তত বলতে পারি! এই ব্যাখ্যা এই জন্যই, আপনি আবার ভাবতে পারেন আমি লেজ গুটায় পালাইলাম কিনা! ভালো থাইকেন।

ভাস্কর এর ছবি

আইচ্ছা...


স্বপ্নের মতোন মিলেছি সংশয়ে...সংশয় কাটলেই যেনো মৃত্যু আলিঙ্গন...


স্বপ্নের মতোন মিলেছি সংশয়ে...সংশয় কাটলেই যেনো মৃত্যু আলিঙ্গন...

ধ্রুব হাসান এর ছবি

দাদা সালাম, আশা করি আমার লেইট উত্তর দেয়াটা অধমের অপারগতা হিসেবে লইবেন। তয় শুরু করা যাক, কি কন? আমি আপনারে এক এক কইরা আপনার সওয়ালগুলানের জবাব দেওনের চেষ্টা করি...

(১) দাদা বামপন্থী দাদাগো সত্যবচনের কি অবস্থা তা গোটা বিশ্বে প্রাক্তন সমাজতন্ত্রী দেশগুলারে দেখলেই বুঝবার পারি ! মিলান কুন্ডেরার “ দ্য জোক’ উপন্যাসটি এর উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হইতে পারে। ওইসব দেশে কম্যুনিষ্ট এখন F-ঘরনার গালির সমার্থক শব্দ। যাই হোক ওইডা এক্কেরে ভিন্ন আলোচনার দাবী রাখে।

(২) একটা কথা একটু খোলাসা কইরা কই, বিদেশ থাহনের বাসনা কোন কালে আছিল না, এহনো নাইক্কা! হেইডা নাই, তার সোজাসাপ্টা কারণ হইলো আমি কোনো দেশের তৃতীয় শ্রেনী-নাগরিক হইয়া থাকতে পারুমা না বইলাই থাকুম না; জাতীয়তাবাদী চেতনা থেইক্কা না! “যাক,ব্যথিত হওয়া ছাড়া এই মুহূর্তে আর কীই বা করতে পারি এই পরদেশে বসে ? এখন ভয় হয় শেষ পর্যন্ত আমার দেশে ফেরার ইচ্ছাটাও যেন মরে না যায় !”......এইডা একজন হতাশ মানুষের বিষাদভরা কমেন্ট ছাড়া আর কিছু নয়। তাছাড়া বিদেশে যারা থাকেন তাদের অন্তত ৭০% আশা করি একমত হবেন, বিদেশে সারা জীবন থাইক্কা যাওনটা কোন রকম সুখের ব্যাপারতো নয়ই, বুদ্ধিমানের কামও না। তাছাড়া আমার হতাশা থেইক্কা আপনার মনে হয়তে পারে আমি দেশের সকল নাগরিক-রেই দোষ দিতাছি; না, তা না; বরং, আমি আমাগো মতো কিছু সুবিধাভোগী মানুষরেই দোষ দিছিলাম, যারা তাদের সঠিক উদ্যেগের অভাবে আজকের বাংলাদেশে পরমত সহিঞ্চুতার পরিবেশ গড়ে তোলার বদলে দেশটার ইমেজ বানালাম - মোল্লাতান্ত্রিক না হলেও মোল্লানিয়ন্ত্রিত একটা দেশ- যে দেশ দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন বেশ কয়েকবার, অথচ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ এখনো দারিদ্র্যসীমার নীচে বাস করে। আমি এই ব্যর্থতার জন্য ঐ মুষ্টিমেয় করাপ্টেড রাজনীতিবীদ-বুদ্ধিজীবি-ছাত্রনেত্রীত্বের দোষ দিয়েছি এবং এই দম বন্ধ করা অবস্থার কারণে একজন সাধারণ নাগরিক প্রাণী হিসেবে নিজেকে হোপলেস মনে হওয়াতে ঐ হতাশার উদ্ভাসন ; অন্য কিছু নয়।

(৩) বামপন্থীগো আমি ঢালাওভাবে দোষ দেয় নাই, আপনি আমার ব্র্যাকেটের ভেতরের অংশ বাদে পইড়া এই অভিযোগটা দিতেছেন। তবে এদের একটা বড় অংশের ভন্ডামী যখন দেখি তখন সত্যিই বেকুব বনে যায়! যদি আপনাগো বেশীরভাগ কথা সত্য হইতো আজকে বাংলাদেশে বামপন্থীগো সংখ্যা গাণিতিকহারে কমতো না, আশা করি বাড়তো। শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বেই হেগো এই অবস্থা! আর আরেকটা ব্যাখ্যা জরুরী, আমি বামপন্থী টাইনা আননের কারণ আপনার জবাবের ধরন দেইখ্যা। এই ধরনটা আমারে বার বার মনে করাইয়া দেয়, জ্ঞান জিনিষটা এক্কেরে আপনাগো সম্পদ, আমাগো মতো সাধারনের ঐ বিষয়ে নাকগলানোর অধিকার নাই। যদি গলায়ও ফেলি তা হয় আপনাগো ভাষায় “তত্ত্ব কপচানি”। ঐ হিসেবে আমি যে বেকুব কথাটা ১০০% ঠিক বলা যায়। তবে এই বেকুব চউক্ষে আপনার প্রি-কনসিভড ইন্টেলেকচুয়াল সুপিরিয়রিটি থেইকা করা বুদ্ধিবৃত্তিক সাম্রাজ্যবাদী লিখনী নজর এড়ায় নাই।

(৪) আর জামাতীরা যে ধর্মনির্ভর দল তা আপনে যেমন জানেন, সবাই তাই জানে। তবে মিলের জায়গাটা অন্যখানে। আপনারা যেমন ভাবেন সমাজতন্ত্রই একমাত্র মুক্তির পথ (যদিও পাহাড়-সমান ব্যর্থতা গোটা দুনিয়া জুড়ে), ঠিক তেমনি হেরাও ভাবে আল্লাহর আইনই সকল সমস্যার একমাত্র সমাধান! তয় এই সত্যটারে ধ্রুব ধইরা লইয়া পৃথিবীর তাবত সাহিত্য-রাজনীতি-সমাজনীতি-শিল্পকলা সবরে বিচার করেন, ঐ মন্ত্রটারে বিচারের টুল হিসাবে ব্যবহার করেন - যার বহিঃপ্রকাশ কোন কোন দেশে ফ্যাসিষ্ট চেহারা লয়! আমার এই রিলায়জেশনটারেই আপনার মনে হইছে অল্প জ্ঞানের প্রকাশ। দুঃখজনক হইলেও আমি বেকুবের লাহান এই বিশ্বাসই করি, তাই আপনি আমারে মূর্খ বইলাও গাল দিতে পারেন; অসুবিধা নাই।

(৫) “যদিও সমাধানের তালগাছ যে যুক্তি মানে-বোঝে তার হাতে থাকনটাই জরুরী ”...আপনে কেমনে বুঝলেন যে আপনার যুক্তিটাই ঠিক, আর তাই আপনার সিদ্বান্তটাও হইবো এক্কেরে খাঁটি ?

(৬) আপনি কইলেন, আমি সত্যরে ধ্রুব বানাইতেছি, কথাডা ঠিক না। আমার জবাবে যদি আপনার তাই ধারনা, হয়তো আমার কিছু করনের নাই দুঃখিত হন ছাড়া। আমার অপবাকের ঘটনা বিশ্লেষনের ধরণটারে যথাযত ব্যাখ্যা মনে হইছে; এই মনে হওটারে আমি সত্য বলসি, অন্য কিছু নয়। এইডাতো মানবেন আমগো সত্য উপলদ্বি ব্যক্তি বিশেষে অবস্থানগত কারণে যাই হোক না কেন, ঐ অত্তগুলান মানুষ যে আত্নহননের পথ বাইছা নিলো এর দায়ভার আমরা কেউ এড়াতে পারি না (কারণ সমাজে যে কোন বিচ্ছিন্ন প্রতিক্রিয়াও সমষ্টিগত প্রতিক্রিয়ারই ফসল, এইটা যে কোন দেশে তার ভিন্ন ভিন্নরূপ লইয়া প্রকাশ হইতে পারে কিন্তু এইডা সামাজিক ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার উদাহরণ, আশা করি হাসিব-এর কথাডার উত্তরো এর মাঝে আছে।)। তবে দাদা সিনিক হইয়া কি দুঃখে কিসের সমাধান খুঁজি তা আপনার বোঝনের কাম নাই; ঐ দায়িত্ত্বটা নিজেরে লইতে দেন।

(৭) “ পরমত সহিষ্ণুতা ব্যাপারটা আমার কাছে ভেইগ মনে হয়...আমি এক্কেরেই যুক্তির সহিষ্ণুতায় বিশ্বাসী ”...... পরমত সহিষ্ণুতা আপনার কাছে ভেইগ মনে হওনটাই স্বাভাবিক, কারন আপনি প্রথমেই ঠিক কইরা লইছেন আপনার যুক্তিটাই অকাট্য! মানুষের অন্ধবিশ্বাস-অবিশ্বাস-বেকুবীপনা-মূর্খতা-সফলতা, এই সমস্ত কিছুরই যে ভিন্ন পাঠ হইতে পারে তা যে আপনি বুঝতে চান না তা আমি বুঝবার পারলাম। পোষ্টমডার্ন ফেনমেনন আমগো আর কিছু দিক বা না দিক এই বোধটা দিছে, অক্ষরজ্ঞানহীন-বেকুব-অর্ধশিক্ষিত-অচ্ছ্যুত-লোভী মানুষের জগত-ও তার যুক্তি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, এই আপাত যুক্তিহীন চিন্তারও ভিন্ন পাঠ জরুরী। এই বোধের লগে আপনি একমত না হইলেও ক্ষতি নাই; তবে এই সকল বোধ যে বেঠিক, ঐ বোধটাই হাস্যকর আজকের সচেতন বিশ্বে। এই প্রসঙ্গে গৌতম ভদ্রের সাব অলটার্ন ষ্টাডিজও প্রাসঙ্গিকভাবে উদাহরণ হিসেবে আসতে পারে (মনে হয় আপনিও হের লগে পরিচিত)। তাই আপনি যখন যুক্তির সহিষ্ণুতার কথা কন, তখন আমগো মত বেকুবের বুঝবার বাকী থাকেনা আপনার পরমত সহিষ্ণুতা’র ধরণটা কি!আর পুর্ব ইউরোপের সমাজতন্ত্রী শাসনযন্ত্রগুলোকে যে আচরণের মইধ্যে দিয়া যাইতে দেখসি, আপনার তীব্র নিন্দার মুখোমুখি হওয়া এই বর্তমান সেনাসমর্থিত সরকারকেও সেই ব্যবহারই করতে দেখতেসি। যুক্তির কাঠামো নির্মাণে এই সরকারের মতোই ব্যক্তিকে উপড়ে ফেলেছে অসংখ্য বার সমস্ত সমাজতন্ত্রীয় শাসক। আপনাদের চেয়ে সেই ইতিহাস কে ভালো জানে?এক্ষেত্রে বার্লিন দেয়াল ভেঙ্গে পড়ার কিছু আগে (দিনক্ষন মনে নাই)ছাত্র আর সাংবাদিকদের সংবাদপত্রের স্বাধীনতার দাবীতে যখন ঝাপিয়ে পড়েছিলো তখন পূর্বজার্মানির পুলিশ যে নিপীড়ন চালিয়েছিলো তার পুনরাবৃত্তি দেখি নানা সময়ে নানা রুপে নানান দেশে (এক্ষেত্রে গুড বাই লেনিন ছবিটাও উদাহরণ হিসেবে আসতে পারে)।

শেষে একটা কথা কইয়া ক্ষান্ত দিমু, আশা করছিলাম আপনি ঐ দুঃখজনক ঘটনা লইয়া সমব্যথিত হইয়া আমার বিরোধীতাই ঝাপাইয়া পরবেন; কিন্তু আপনি তার ধারে কাছে না গিয়া শুধু আমার কমেন্ট লইয়া যেভাবে ঝাপাইয়া পড়ছেন তাতে আপনি যে বেশ তেজী জ্ঞানী ঘোড়া,তা বোঝা যায়। তবে দাদা বহুজাতিক কোম্পনীর প্রচার ও প্রসারে কাম কইরা, মানে বহুজাতিক কোম্পনীর এজেন্ট বিজ্ঞাপনী সংস্থার হইয়া কাম কইরা আর যাই হোক বিপ্লব যে হয়না তা আমার মতো অল্পজ্ঞানী বেকুবের কিছুটা হলেও বোধগম্য। তাই আপনি যখন সাম্রাজ্যবাদী ভূতের মাতব্বরীর উপর দোষ চাপান বা এই উপলব্ধি থেইক্কা সিদ্ধান্ত টানেন তখন তা এক্কেরে অসার লাগে।

হেশে আবারো লাল সালাম।

ভাস্কর এর ছবি

ধ্রূব হাসানের জবাবে আমার বক্তব্য...


যেই উপন্যাসের উদাহরণ দিলেন ঐটা প্রকাশের পর কুন্ডেরার শুনছি পার্টি মেম্বরশীপ গেছিলোগা। তারপর আবার সে মেম্বরশীপের লেইগা অ্যাপ্লাই করে জেল থেইকা বাইর হইয়াই...এরপর আবার লিখে লাইফ ইজ এল্সহোয়্যার...তথ্যটা জ্ঞানজাহির মনে হইতে পারে, কিন্তু আসলে কইলাম কুন্ডেরার সমাজবাদী চিন্তার সম্ভাবনা থেইকা, সে সমাজবাদে আস্থাশীল থাকতে চাইছে তার ঠাট্টার পরেও। গ্যাঞ্জামটা লাগছে ঠিক আমি যেই কথাটা কইয়া আপনের কাছে বামপন্থী দাদা সম্বোধন পাইছি তার ধারে কাছের ঘটনা নিয়াই...সোভিয়েত আগ্রাসনও বিদেশী শক্তিশালী রাষ্ট্রের মাতব্বরীই ছিলো। বিদেশী শক্তির আগ্রাসনমূলক মাতব্বরীর বিরুদ্ধে দাঁড়াইতে গিয়াই কুন্ডেরা ঐসব বই লিখছিলো।


আপনে যেইসব সমস্যার কথা কইয়া সাধারন জনগণ আর দুর্নীতিবাজগো আলাদা করেন তাতে কি প্রমাণ করে? দুর্নীতিবাজগো মাইরা ফেললে বা জেলে ভরলেই সব সমস্যার সমাধান? এই কথা মনে হয় আল-কোরআনেও সাহস কইরা কয় নাই! এখন যেই প্রবণতা তৈরী হইছে এইটা একটা সামাজিক মানসিকতা। সমাজের সকল মানুষের মধ্যেই ছড়াইছে যে, উন্নতির লেইগা, আগে বাড়নের লেইগা নিয়মতান্ত্রিকতায় মুক্তি নাই...যেই কারনে রিকশাওয়ালাও সামনের চাক্কা জায়গা পাইলেই ঢুকাইয়া দ্যায়...তারে আগে বাড়তে হইবো...জায়গা ছাড়লেই বিপদ! এইটা হইছে অপরিমিত আর অপরিকল্পিত সম্পদের ব্যবহার থেইকাই। সামাজিক মানসিকতা হয়তো ক্ষমতাশালীগো মাত্রা ছাড়া ক্ষমতার অপব্যবহার থেইকাই উদ্ভূত...সেইটারো কারন এইখানে সামন্তবাদ থেইকা পুঁজিবাদে উত্তোরণ কোন বিপ্লব ছাড়া সমাধিত হইছে। বহিঃশক্তি যেই অবক্ষয়ী প্রেসক্রিপশন দিছে আমরা তাই নিছি।

পরমতসহিষ্ণুতা ব্যাপারটা আসলেই একটা ভেইগ টার্ম...কোন মতাদর্শ আরেকটা মতাদর্শরে কোনকালেই মাইনা নেওনের কথা কয় না। পৃথিবীর আল্টিমেট ফ্রিডমের দেশ আম্রিকাও যেই কারনে বিভিন্ন সময়ে ম্যাকার্থিবাদের খপ্পরে পরে। আজো সিআইএ খুঁইজা বেড়ায় কম্যুনিস্টগো। অস্কারে গতোবার পর্যন্ত সমাজতন্ত্রবিরোধী ছবি হইলে বিশেষ নমিনেশন দেওয়া হইছে...


আপনে আমার যেই জবাবের প্রত্যুত্তর দিতে গিয়া বামপন্থী দাদাগো গন্ধ পাইছেন সেইটা আমি বহুবার পইড়া দেখলাম সেইখানে জ্ঞান জিনিসটা কারো সম্পদ কিনা সেইটা আমি কোনভাবেই বলি নাই। একটা স্টেইটমেন্টের জবাবে আমি যুক্তির অবতারণা করছিলাম। যুক্তির অবতারণা যদি বামপন্থী দাদাগো বিরুদ্ধে আপনের খেপনের কারন হয় তাইলে আমি আপনারে প্রতিনিয়তঃ খেপাইতে রাজী আছি। বাংলাদেশে বামপন্থীরা কেমনে আছে, তারা ক্যান আনুপাতিক হারে বাড়তাছেনা, ঠিক কইরা কইলে কওন যায় কমতেছে সেইটা তর্কসাপেক্ষ কিন্তু তার জন্য আদৌ যুক্তির অবতারণা দায়ী সেইটা কেউ কইতে পারবো না।

আপনের সুচারু চোখে কোন প্রি-কনসিভড ইন্টেলেকচুয়াল সুপিরিয়রিটি থেইকা করা বুদ্ধিবৃত্তিক সাম্রাজ্যবাদী লিখন ফাকি দিতে পারে নাই সেইটা আদৌ বিষয় না এই তর্কের, বিষয় হইলো, আপনে বিদেশী ঐ মাতব্বরীরে দায়ী করবেন কি করবেন না সেইটা। আপনে যদি বিদেশী মাতব্বরীরে কারন মনে না করেন তাইলে তার বিরুদ্ধে যুক্তি দ্যান। এই কারনেই আমি কপচানোর কথা কইছি...সেইটা আদৌ তত্ত্ব কপচানি না।


বামপন্থী আর জামাতিগো মধ্যে একটা দারুন মিল হইলো হেরা যুক্তিটা মানে সমস্যাটা বোঝে কিন্তু সমাধানের তাল গাছটা হেগো !

আপনে কইছিলেন এইটা...জামাতিরা কোনটারে মুক্তির পথ মানে সেইটা ভিন্ন প্রসঙ্গ। হুদাই কথা ঘুরাইয়েন না, মানুষ বিভ্রান্ত হইবো। সমাজতন্ত্র হইলো শ্রেণী বিলোপের সংগ্রামের নাম...শ্রেণী বৈষম্য দূরীকরণই মুক্তির উপায়, এইটা মানা আর আল কোরআন মানা যে এক না এইটা মনে হয় আপনে বুঝেন যেহেতু গৌতম ভদ্রের লেখা আপনে পড়ছেন।


যুক্তি যে মানে-বোঝে কইতে যে যুক্তির ঠিক বেঠিকতা নির্ণয় বুঝায় সেইটা আমি বুঝি নাই। আপনে দুই লাইন আগে বুইঝা ফালাইছেন মনে হয়।


সত্যের আপেক্ষিকতার বৈচিত্র রক্ষার্থে(!) যা কইলেন সেইটারে সিনিক'ই কইতে হয়। তয় সামগ্রীক ভাবে দায় নেওনের যেই বিষয়টা কইলেন সেইটারে আপাতঃ শান্তিরই মনে হয়...আর যদ্দূর জানি আপনের বামপন্থী দাদারা এইটাও কয়। আর ভিন্নদেশে ভিন্নরম প্রকাশ এইটাতো আমার প্রথম বক্তব্য ছিলো আপনের মন্তব্যের হেতুতে।


আবারো একইরম ফ্যালাসী করলেন...আমি কোথাও কইনাই যুক্তি অকাট্যতার কথা। যুক্তির সহিষ্ণুতা সেই অর্থ বহন করে বইলাও আমার মনে হয় না। যুক্তি যেকোন রম হইতে পারে...তার প্রেক্ষিতে আরেকটা যুক্তিও আসতে পারে এইটা হইলো যুক্তির সহিষ্ণুতা। ঘোষণা দিলাম, একটা মতাদর্শ হইলো আর সেইটার প্রতি সবাইরে সহিষ্ণু হইতে হইবো এইরম পরমত সহিষ্ণুতায় আমার কোন আস্থা নাই। আর যদ্দূর জানি পোস্ট মডার্ন ফেনোমেননও সেইরমই কয়। যেই কারনে ফুকো সাহেব শুনছি ধারণার বিরোধীতা করেন। তয় গৌতম ভদ্রের ছোটখাটো লেখাজোখা পইড়াও আমার মনে হয় নাই উনি যুক্তির বিরোধীতা করছেন...উনাগো সবাইর গুরু গ্রামসী সাহেবও মনে হয় করেন নাই।

পূর্ব ইউরোপের সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র গুলা নিয়া আমার কিছু কওনের নাই, আর শুরুতেই সেই বিষয়ে যুক্তি দিছি।

সবশেষ:

শেষে একটা কথা কইয়া ক্ষান্ত দিমু, আশা করছিলাম আপনি ঐ দুঃখজনক ঘটনা লইয়া সমব্যথিত হইয়া আমার বিরোধীতাই ঝাপাইয়া পরবেন; কিন্তু আপনি তার ধারে কাছে না গিয়া শুধু আমার কমেন্ট লইয়া যেভাবে ঝাপাইয়া পড়ছেন তাতে আপনি যে বেশ তেজী জ্ঞানী ঘোড়া,তা বোঝা যায়।

এই বাক্যটা বুঝি নাই। তয় আমার বিজ্ঞাপণী সংস্থায় চাকরী করনের বিষয়টারে জাস্টিফাই করনের কোন তাগীদ আমার নাই। তয় একটা কথা মনে করাইতে পারি...যেই শ্রমিক ব্যর্থ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে লড়াই করনের স্বপ্ন দেখে, সে কিন্তু পণ্য উৎপাদনেও থাকে। যেই পণ্য বেইচা লাভের ফসল ঘরে তোলে মালিক। তাই বইলা শ্রমিকের কারখানা উড়াইয়া দেওনের কোন বিধান মনে হয় না কখনো জাস্টিফাইড।


স্বপ্নের মতোন মিলেছি সংশয়ে...সংশয় কাটলেই যেনো মৃত্যু আলিঙ্গন...


স্বপ্নের মতোন মিলেছি সংশয়ে...সংশয় কাটলেই যেনো মৃত্যু আলিঙ্গন...

আরিফ জেবতিক এর ছবি

-----------------------------------
ঢাকার ভূমে ফিরেছে একাত্তর/প্রস্তুতি নে,সময় হলো তোর..

হাসিব এর ছবি

খবরটা আমার কাছে যথেষ্ট আগ্রহের সৃষ্টি করছিলো ঐসময় । আমার পত্রিকা পাঠ থিকা আমার যেটা মনে হৈছিলো সেইটা হলো ঐ পরিবার নিজেরাই নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে ফেলছিলো । নিজেরা একটা নতুন ধর্মবিশ্বাসী ছিলো । যেইটা একসময় তাদের আত্নহত্যায় প্ররোচিত করে । বাংলাদেশে এইরকম কোন ধর্মবিশ্বাসের বশবর্তী হয়ে আত্নহত্যা নতুন ঘটনা হলেও পশ্চিমে এটা কোন নতুন বিষয় না । বেশ বড় স্কেলে এইধরনের ঘটনা ঘটছে ইতোমধ্যে । তবে পশ্চিমের সাথে আমাগো পার্থক্য হইলো ঐখানে সমস্যাটা দেখা হৈছে আত্নহননকারী ঘোষ্ঠির মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা হিসেবে । আর আমরা এখানে কেউ কেউ এটারে মাসোকিস্টিকালি দেখতেছি । আত্নহত্যারে এখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ গোষ্ঠির নিপীড়ন হিসাবে দাড় করাইতে চাইতেছি ।

অপ বাক এর ছবি

হাসিকের কাছে একটা প্রশ্ন ছিলো তার মন্তব্য বিষয়ে-
পশ্চিমে ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে বড় বড় আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে- এই বক্তব্যের সারমর্ম কি?

আমার পত্রিকা পাঠ থিকা আমার যেটা মনে হৈছিলো সেইটা হলো ঐ পরিবার নিজেরাই নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে ফেলছিলো । নিজেরা একটা নতুন ধর্মবিশ্বাসী ছিলো । যেইটা একসময় তাদের আত্নহত্যায় প্ররোচিত করে । বাংলাদেশে এইরকম কোন ধর্মবিশ্বাসের বশবর্তী হয়ে আত্নহত্যা নতুন ঘটনা হলেও পশ্চিমে এটা কোন নতুন বিষয় না । বেশ বড় স্কেলে এইধরনের ঘটনা ঘটছে ইতোমধ্যে । তবে পশ্চিমের সাথে আমাগো পার্থক্য হইলো ঐখানে সমস্যাটা দেখা হৈছে আত্নহননকারী ঘোষ্ঠির মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা হিসেবে

এটা মেনে নিলে এটার সাথে একটা প্রতিনিধিত্বশীল ঘটনার উদাহরণ আশা করি আমি-

জাপানের টিউবে বোমা মারা কিংবা সামুরাই আত্মহত্যার ঘটনার বাইরে জঙ্গীবাদীদের নিজস্ব বিশ্বাসে আত্মহত্যাকালীন সময়ে আরও কয়েকজনকে নিয়ে আত্মহত্যা করবার ঘটনার বাইরে আসলে এমন গণ আত্মহত্যার ঘটনা কোথায় ঘটেছে?

আমি নিশ্চিত না- আর আমি তেমন ভাবে পত্রিকা পড়িও না তাই ডিটেইলস জানালে ভালো হয়-

তবে প্রথাগত ধর্মবিশ্বাসের জায়গা থেকে আমি যতটা বুঝি তাতে ধর্ম জীবনযাপনের সৈন্দর্য উপলব্ধি করতে বিভিন্ন বিধি নিষেধ আরোপ করে এটা সত্য হলেও তারা কখনও মানুষকে নিজেকে হত্যার পরামর্শ দেয় না-

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।