‘দ্বিতীয় পৃথিবীর সন্ধানে’ এবং ‌‘বিগব্যাঙ- মহাজাগতিক উষা’ শীর্ষক চট্টগ্রামে বিজ্ঞান বক্তৃতা

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি
লিখেছেন পান্থ রহমান রেজা (তারিখ: বিষ্যুদ, ২৩/০৯/২০১০ - ৫:০৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সপ্তমাচর্যের পরেও আরো কিছু আশ্চর্য ব্যাপার থেকে যায়! কেউ কেউ সেসব আশ্চর্যগুলোকে অষ্টমাচার্য বলেন। আমারো ব্যক্তিগত তালিকায় কিছু আশ্চর্য বস্তু আছে। এর একটি আসিফ ভাই। প্রথম যখন শুনি, বিশ্বাস করিনি। ধূর বলে উড়িয়ে দিয়েছি। আরেকদিন শুনলে, ভ্রুঁ কুঁচকে তাকাই। তাকানোর মধ্যেই প্রশ্ন ছিল: এটা কী করে সম্ভব? বাংলাদেশে জনসভায় লোক আনার জন্য টাকা দিতে হয়। বক্স অফিস হিট সিনেমায়ও কয়েক শো পরে সিট ফাঁকা পড়ে থাকে। আর তার বক্তব্য শুনতে কিনা অডিটোরিয়াম পূর্ণ হয়। তাও আবার বিজ্ঞান বক্তৃতা। তাই কখনো বিশ্বাস হয়নি। কিন্তু একবার বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে গিয়ে ব্যাপারটা টের পাই- ‘ইতিহাসে বিজ্ঞান’ বক্তৃতা অনুষ্ঠানে। ম্যালা মানুষ ৫০ টাকা টিকেট কেটে বক্তৃতা শুনতে এসেছে। শুরুতে অবশ্য সায়ীদ স্যার তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে আসিফ ভাইকে চেনালেন (ততদিনে অবশ্য আমার তাকে খানিকটা চেনা হয়ে গেছে)। তবে সেদিন তিনি কী বলেছিলেন, আজ আর তা মনে নাই। শুধু মানে আছে, আসিফ ভাইয়ের চমৎকার বক্তৃতা মোহগ্রস্ত করেছিল। আবদুল্লাহ আল মুতির পরে সেই প্রথম আমার সহজ সরল ভাবে বিজ্ঞানের জটিল বিষয়ে জানাশোনা।

স্পষ্ট মনে নাই আসিফ ভাইয়ের সাথে কবে পরিচয় হয়েছিল। শুধু মনে পড়ে, একবার ভোরের কাগজে একটা লেখা দিয়েছিলাম। একুশ শতক পাতায়। তিনি প্রকাশ করেছিলেন। সেইসূত্রে, ভোরের কাগজে তাকে তালাশ করা। পত্রিকার মানুষ এতো প্যাঁচগোজহীন সহজ, স্নেহশীল হতে পারেন, আসিফ ভাইকে না দেখলে বিশ্বাস করতাম না! পরে, তার সাথে ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে। তার সাথে ঢাকার অনেকগুলো স্কুল ঘুরে বেড়ানো হয়েছে তরুণ প্রজন্মের বিজ্ঞান ভাবনার অলিগলির সুলুক সন্ধানে, তাদের মাঝে বিজ্ঞান চিন্তার সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলতে। অসম্ভব স্বপ্নবান মানুষ তিনি। বিজ্ঞান নিয়ে স্বপ্ন দেখেন। স্বপ্ন দেখেন, একটি বিজ্ঞানমুখী জনগোষ্ঠী গড়ে তোলার। সেজন্য দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও ল্যাপটপ-প্রজেক্টর নিয়ে ছুটে যান।

তিনি এবার চট্টগ্রাম যাচ্ছেন বিজ্ঞান বক্তৃতা দিতে। আসলে এটা জানানোর জন্যই এই লেখা। কেউ আসিফ ভাইয়ের পক্ষে সচলায়তনে আমার পাবলিক রিলেশন ভাবলেও অসুবিধা নেই। আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১০ চট্টগ্রামের মুসলিম হলে দুটি বিজ্ঞান বক্তৃতা দিবেন তিনি। প্রথমটি সকাল সাড়ে দশটায়। বিষয়: দ্বিতীয় পৃথিবীর সন্ধানে। পরেরটা বেলা তিনটায়। বিষয়: বিগব্যাঙ- মহাজাগতিক উষা! চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক সংগঠন সমাজ সমীক্ষা সংঘ এর আয়োজক।

আসিফ ভাই আমাকে মনে হয় একটু বেশি মাত্রায় স্নেহ-ই করেন। জোর করে বাসায় নিয়ে যান। ঘণ্টার পর ঘণ্টা তার পরিকল্পনা নিয়ে আলাপ করেন, ভাবনা শেয়ার করেন। মনে পড়ে, বছর পাঁচেক আগে একবার শীতলক্ষ্যা নদীর পারের কথা। ততদিনে অবশ্য স্টিমারের অহরহ ভেঁপু নেই। জুট কোম্পানিগুলোর নিরন্তর কোলাহল নেই। তবে জলের কুলুকুলু বয়ে চলা ঠিকই ছিল। সেই বয়ে চলা জলের পাশে এক পড়ন্ত বিকেলে তার কথা শুনি আমি। তিনি বিজ্ঞানভিত্তিক সভ্যতার স্বপ্নের কথা বলতে বলতে চলে যান, ২ হাজার ৬০০ বছর আগের আয়োনীয় সভ্যতায়। সেখানকার পদ্ধতিগত বিজ্ঞানের প্রথম সংগ্রাম শুরুর গল্প শোনান। থেলিস, পিথাগোরাস, ডেমোক্রিটাস, অ্যানাক্সোগোরাস থিওডোরাস, আলেক্সান্দ্রিয়ার কথা বলেন। আমি বিজ্ঞানের মানুষ নই। এত কিছু বুঝি না। তার কথায় শুধু হা হু করে যাই।

আমি কখনো বিজ্ঞান নিয়ে কিছু লিখিনি। বিজ্ঞান নিয়ে লিখবো সেই যোগ্যতা আমার নাই। তবে তার কি কারণে যেন বিশ্বাস, আমি লিখতে পারবো। সেজন্য, তার সম্পাদিত বিজ্ঞান-সংস্কৃতি বিষয়ক লিটলম্যাগ ‘অফিয়াকাস’-এ লিখতে বলেন। ‘মহাবৃত্ত’ বলে বিজ্ঞান পত্রিকায় লিখতে বলেন। আবার বন্যা আপাকে পরামর্শ দেন, ডারউইন সংখ্যার জন্য আমার লেখা নিতে। তার পরামর্শ শুনে বন্যা আপা সুদূর আমেরিকা থেকে আমাকে মেইল পাঠান। মেইল পেয়ে আমি আমার অক্ষমতা নিয়ে নিশ্চুপ বসে থাকি। তারপর একদিন দেখা হলে, লেখা না দেয়ার জন্য বকাবকি করেন। আমি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকি।

আসিফ ভাইয়ের সংগঠনের নাম ডিসকাশন প্রজেক্ট। ইতিমধ্যে এটি যাত্রার দেড়যুগ পার করেছে। ডিসকাশন প্রজেক্টের মাধ্যমে তার স্বপ্ন- মুক্ত চিন্তার স্ফুরণ ঘটবে দেশজুড়ে। সবাই প্রশ্ন করতে শিখবে। মানব প্রজাতির উদ্ভব কিভাবে কিংবা আমরা কোথা থেকে এসেছি, আমাদের গন্তব্যই বা কোথায়। মহাবিশ্বের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র আমাদের যে অবস্থান তাও জানবে জ্ঞানের মাধ্যমে। প্রগতিবিমুখ একটি সামাজিক কাঠামোর ভেতরে জ্ঞানকে গন্তব্য ধরে নিয়ে তার যাত্রায় আমাদের শুভকামনা থাকবে সবসময়।


মন্তব্য

দ্রোহী এর ছবি

প্রথম আলো আর মহাকাশ বার্তা মারফত ডিসকাশন প্রজেক্ট ও আসিফের নাম জেনেছিলাম।

বাংলাদেশে যে মানুষটি বিজ্ঞান বিষয়ক বক্তৃতাকে পেশা হিসাবে নিতে পারে তাঁকে স্বচক্ষে একবার দেখার বড় শখ আমার।

মানুষটিকে আমার শ্রদ্ধা জানাবেন।


কাকস্য পরিবেদনা

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

বস, আবার ঢাকায় আইসেন। তার সাথে আড্ডা দিমুনে আমরা!

ভূঁতের বাচ্চা এর ছবি

এমন মানুষের কথা জানতে পেরেই অনেক ভাল লাগছে। সম্ভব হলে উনাকে বলবেন যেন কিছু ভিডিও ইউটিউবে আপলোড করে দেন। তাহলে বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান প্রচারে আরো একটু সুবিধে হবে উনার। আর আমাদের জন্যে ব্যাপারটা হবে অসাধারণ।
--------------------------------------------------------

--------------------------------------------------------

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

আগের বক্তৃতা অনুষ্ঠানের কিছু ভিডিও মনে হয় উনার কাছে আছে। সেগুলো ইউটিউবে দিতে বলবো। তার ওয়েবসাইটের লিংক দিচ্ছি। দেখতে পারো। ডিসকাশন প্রজেক্ট

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর ভুত মানুষের মাথায় বেশিদিন থাকেনা। আসিফ ভাই তার ব্যতিক্রম। নিজের জীবন তিনি আক্ষরিক অর্থে ব্যয় করেছেন বিজ্ঞানের এই ঘরাণার সাধনায়। ব্যাপারটা খুব সহজ নয়। আমাদের মতো গৃহস্থদের পক্ষে চিন্তার অতীত একটা ব্যাপার।

অটঃ একটি অপ্রাসঙ্গিক তথ্য দেই। আসিফ ভাই সচলের অতিথি লেখক কবি আরিফ বুলবুলের বড় ভাই।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

যতটা তাকে দেখছি, এ কাজে তার নিষ্ঠা অপরিসীম!

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

পাণ্ডবদা, তথ্যে একটু ভুল আছে। আরিফ বুলবুল ভাই আসিফ ভাইয়ের বড় ভাই।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

নীড় সন্ধানী এর ছবি

বাহ, একদম নতুন তথ্য। আমি শুনিনি ওনার নাম আগে।
এই ভদ্রলোকের বক্তৃতা শোনার তীব্র আগ্রহ সৃষ্টি হলো। শনিবার থাকার চেষ্টা হবে মুসলিম হলে।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
এ ভ্রমণ, কেবলই একটা ভ্রমণ- এ ভ্রমণের কোন গন্তব্য নেই,
এ ভ্রমণ মানে কোথাও যাওয়া নয়।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

বক্তৃতা খারাপ লাগবে না আশা করি!

অদ্রোহ এর ছবি

আসিফ ভাইয়ের লেখার মুগ্ধ পাঠক আমি। আবার মুগ্ধতাটুকু জানিয়ে গেলাম।

--------------------------------------------

আজি দুঃখের রাতে, সুখের স্রোতে ভাসাও তরণী
তোমার অভয় বাজে হৃদয় মাঝে হৃদয় হরণী।

--------------------------------------------
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি-বাড়ি যায়
তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।

স্বাধীন এর ছবি

বিজ্ঞানকে সাধারণ মানুষের কাছে পৌছে দেওয়ার এই কষ্টকর প্রচেষ্টার সাথে জড়িত মানুষটির জন্য রইল শ্রদ্ধা। আসিফ ভাইয়ের কিছু লেখার সাথে পরিচিত হতে চাইলে মুক্তমনায় উনার ব্লগ দেখতে পারেন।

আসিফ ভাইকে বলবেন কিছু লেকচার ইউটিউবে আপলোড করে দিতে, তাহলে সেটার মাধ্যমে অনেকেই লেকচার শুনতে পাবে এবং সেটা এক প্রকার প্রচারণা হিসেবেও কাজ করবে।

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

হায়, তার ওয়েবসাইটটা দিতে ভুলে গেছি। স্বাধীন ভাই, ওয়েবসাইটে আরও লেখা এবং বক্তৃতা পাবেন!

পৃথিবী [অতিথি] এর ছবি

ছাপ্পান্নো হাজার বর্গমাইলে আরেকজন আসিফ ভাই আর আরেকটি মহাবৃত্ত পাওয়া যাবে কিনা এ নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। মহাবৃত্ত পত্রিকাটা যদি ইংরেজিতে ছাপা হত, আমি বিশ্বাসই করতাম না এটা বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত, তাও আবার কোন বড় পৃষ্ঠপোষক ছাড়াই।

উনি ইউটিউবে উনার বক্তৃতাগুলো প্রকাশ করলে উনার লক্ষ্যটা আরও নিকটে চলে আসত।

হাসিব এর ছবি

কোন গাণিতিক বিষয়ের উল্লেখ ছাড়াই মহাজাগতিক ব্যাপারস্যাপার, বিবর্তন, আইটি (পিএইচপি, ট্রাবলশুটিং) আর কোনরকম সিম্বল ব্যবহার না করে গণিত - এই বিষয়গুলো ছাড়া বিজ্ঞানের আর কোন বিষয় নিয়ে লেখা বা কথা দেখি না কেন? গণিত (লেমা, প্রপোজিশন, বিভিন্ন থিওরী), ইলেকট্রনিক্স (কলিং বেল বা মশা তাড়ানোর যন্ত্র থেকে উপরের লেভেল), ম্যাটেরিয়াল সায়েন্স এগুলো নিয়ে কেউ লেখে বা বলে না কেন?

________________________________________________
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি

ফারুক হাসান এর ছবি

গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট।

খুব সম্ভবত বিজ্ঞান বলিয়ে ও লিখিয়েরা ধরেই নেন যে বাঙালির বিজ্ঞান জ্ঞান বিলো এভারেজ, তাই খটমট সমীকরণের আমদানি করলে মজাটা থাকবে না।

আরেকটা বিষয় খেয়াল করি। সেটা হচ্ছে, বাংলায় বিজ্ঞান বক্তিমাগুলো খালি মহাকাশ বিজ্ঞান সম্পর্কিত হয়। অবশ্যই মহাকাশ বিজ্ঞান খুবই মজার বিষয়, কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে অন্য বিষয়ে আলোচনা, বক্তিমা, কিংবা লেখালিখি পাবলিক লেভেলে খুবই কম। ব্যাপারটা অনেকটা পত্রিকাগুলোর প্রযুক্তি মানেই কম্পিউটারকে বুঝার মত হয়ে গেছে।

তবে, একই সাথে জনাব আসিফের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে যাই। এরকম আরো নিবেদিত প্রাণ প্রয়োজন যারা বিজ্ঞানের প্রতিটি শাখার নানান বিষয় লিখে, বলে, শিখিয়ে সমাজকে আরো বিজ্ঞানমুখী ও অগ্রসর করবেন। জনাব আসিফকে স্যালুট!

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

আমার নিজের বিজ্ঞানে আকর্ষণ আছে কিন্তু মহাকাশ বিজ্ঞানে নয়। বিজ্ঞান নিয়ে বক্তিমার মহাকাশ ছাড়িয়ে বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখায় যাওয়া প্রয়োজন।

---------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

হাসিব, কেনো যেন খুব ছোটবেলা থেকে আমাদের সবার মাথায় গণিতভীতি ঢুকিয়ে দেয়া হয় যেটা পরবর্তী জীবনে খুব কমজনই কাটিয়ে উঠতে পারেন। উচ্চতর বিজ্ঞানের এই ভাষাটি আয়ত্বে না থাকায় অনেকেই বিজ্ঞানচর্চায় পিছিয়ে পড়েন। গণিতভীতি শেষমেশ বিজ্ঞানভীতিতে পরিণত হয়। উচ্চতর বিজ্ঞানের আলোচনার ক্ষেত্রে যথাযথ ও প্রমিত পরিভাষা না থাকায় বাংলায় উচ্চতর বিজ্ঞানের আলোচনা হয়না বললেই চলে। কিছু কিছু জায়গায় গণিতকে পরিহার করার আপ্রাণ চেষ্টা আমাদের স্বল্পজ্ঞান ও সীমাবদ্ধতাকেই তুলে ধরে।

প্রাসঙ্গিক বিবেচনায় একটা কথা বলি, বাংলা ব্লগগুলোতে গাণিতিক সমীকরণ ও ফর্মুলা সম্বলিত লেখা দুরূহ একটা ব্যাপার। কয়েকদিন আগে সচল জাহিদকে দেখলাম একটা সাধারণ চেহারার ফর্মুলাকে চিত্র হিসাবে পেস্ট করেছে। এই সীমাবদ্ধতাটা দূর করতে না পারলে বাংলা ব্লগেও বিজ্ঞান বিষয়ক গল্পকথাই হতে থাকবে, সিরিয়াস আলোচনা বা গবেষণাপত্র প্রকাশিত হবেনা।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

হাসিব এর ছবি

পরিভাষা চর্চার মাধ্যমে উঠে আসে। আমাদের দুর্ভাগ্য হলো আমরা নিজেরা উদ্ভাবনের স্বর্নযুগে ট্রেন ধরতে ব্যর্থ হয়েছি। যে দেশগুলো ঐ ট্রেনটা ধরতে পেরেছে সেদেশগুলোতে আপনি স্থানীয় ভাষায় পরিপূর্ন একটা পরিভাষা ও সেটার চর্চা দেখতে পাবেন। ওরা এটা গতকাল শুরু করেনি। সেই মধ্যযুগ থেকেই সেটা ওসব জায়গায় চালু আছে। এটা আমরা করতে পারিনি এই ব্যর্থতা মেনে নিয়েও কাজ করা সম্ভব। শুধু দরকার এসব কাজের স্বীকৃতি। দুঃখজনক বিষয় হলো গণিত পড়া, বা বিজ্ঞান পড়া ছাত্রদের বিজনেস শিক্ষা পড়ুয়াদের মতো "মার্কেট ভ্যালু" নেই বাংলাদেশে। হায়ার আইকিউওয়ালা এসব ছাত্ররা যে অন্য সমস্যাও ভালোভাবেই সমাধান করতে পারে সে বিষয়ে চাকুরিদাতাদের কোন ধারনাই নেই। এই মার্কেট ভ্যালু না থাকার কারণে দীর্ঘমেয়াদে এইসব বিষয়ে ছাত্র কমবে। গণিত, বিজ্ঞান ইত্যাদি নিয়ে ভয় আসলে কোন কারন মনে হয় না। অর্থনীতিটাই মূল কারন।

আর গণিত লেখা কোন রকেট সায়েন্স না। ইংরেজি ওয়েবসাইটগুলোতেও সবাই ইমেজ ব্যবহার করে। ওটা তৈরী করতে লাটেখ ব্যবহার করতে জানাই যথেষ্ট।

________________________________________________
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

১. পরিভাষার ব্যাপারে আপনার ব্যাখ্যা সঠিক। তবে পরে ট্রেন ধরা অনেকেও এই কাজটা এর মধ্যে করে ফেলেছে। আমি এশিয়ার কয়েকটি দেশে এটা দেখেছি। সময় নষ্ট না করে শুরু করাটা জরুরী।

২. মার্কেট ভ্যালুর ব্যাপারে আপনার ব্যাখ্যার সাথে একমত। গণিতে বা প্রকৌশলে গ্রাজুয়েশন করা ছেলে-মেয়েরাও যে যেকোনো ব্যবসাতে কাজ করতে পারবে এই ধারণাটা চাকুরীদাতাদের মধ্যে নেই।

চাকুরীকালীন ম্যানেজমেন্ট ট্রেনিং-এর ব্যবস্থা অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে না থাকায় অনেক প্রতিষ্ঠান "MBA with engineering background" এমন লোক চেয়ে বিজ্ঞাপন দেয়।

৩. গণিত, বিজ্ঞান ইত্যাদি নিয়ে ভয় আসলে কোন কারন মনে হয় না - এই কথাটার সাথে একটু দ্বিমত। এই ভয় দেখানোটা ঐতিহ্যের অংশ হয়ে গেছে।

৪. আর গণিত লেখা কোন রকেট সায়েন্স না। ইংরেজি ওয়েবসাইটগুলোতেও সবাই ইমেজ ব্যবহার করে। ওটা তৈরী করতে লাটেখ ব্যবহার করতে জানাই যথেষ্ট।

সমাধানটা কিন্তু খুব সহজ হলোনা। প্রথম দিকে বাংলা ব্লগে অ্যাভোগেড্রো নাম্বার লিখতে আমাকে অন্য একজনের সাহায্য নিতে হয়েছে। এখনো খুব কম কোডই লিখতে পারি। একটা টেবিল বা গ্রাফ আঁকতে খবর হয়ে যায়। কোডের এই জটিলতার জন্য গাণিতিক অর্থনীতির লেখাগুলো লিখতে অনীহা বোধ করি। স্বীকার করি আমার মধ্যে উদ্যোগের অভাব আছে। তবে ব্যাপারটা এখনো খুব সহজ কিছু হয়নি।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ইশতিয়াক এর ছবি

আসিফ ভাই এর বক্তৃতা শুনতে চাই। ঢাকায় ঊনার বক্তৃতার তারিখ আর সময় কিভাবে জানা যাবে?

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

আবার ঢাকায় কবে বক্তৃতা হবে, তা ঠিক হয়নি। ঠিক হলে সচলায়তনে জানানোর চেষ্টা করবো।

ওডিন এর ছবি

এই লোকটার বক্তৃতা একবার শোনার সৌভাগ্য হইছিলো, রাশান কালচারালে, কোন একটা মহাকাশ উৎসবে মনে হয়। নমস্য একটা মানুষ।

______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না

অনিকেত এর ছবি

আমি দেশ ছাড়ার আগেই তাঁর নাম শুনেছিলাম। তখনই অপার বিস্ময়ে অভিভূত হয়েছি---একটা লোক বিজ্ঞান নিয়ে কথা বলে, আর লোকজন টাকা দিয়ে টিকিট কেটে শুনতে আসে !!!!

বিজ্ঞান জনপ্রিয় করার পেছনে এই লোকটির আত্মত্যাগ আর শ্রমের কোন তুলনা হয় না। ধন্যবাদ পান্থ তাঁকে আবার সামনে নিয়ে আসার জন্যে, আমার দেশের অষ্টম আশচর্যটাকে মনে পড়িয়ে দেবার জন্যে---

ভিন্ন প্রসঙ্গঃ কেউ কি চট্টগ্রামে তার বক্তব্যের ভিডিও ধারণ করে ইউটিউবে আপলোড করতে পারবেন?

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

অনিদা, চট্টগ্রামের বক্তৃতার কিছু অংশ ভিডিও ধারণ করা হয়েছে। সেটা আমি ইউটিউবে আপলোড করতে বলবো।

রায়হান আবীর এর ছবি

আসিফ ভাইরে চিনি দেঁতো হাসি

তার-ছেড়া-কাউয়া এর ছবি

আসিফ ভাইয়ের ঢাকায় কোন সেমিনার হলে জানাবেন। দেখা করবো।

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

ওক্কে!

তাসনীম এর ছবি

বিজ্ঞান বিষয়ক বক্তৃতাকে যে বাংলাদেশে কেউ পেশা হিসাবে নিতে পারেন এই খবরটাই অজানা ছিল, আসিফ সাহেবের বক্তৃতা শোনা তো দূরে থাকুক। উনাকে অনেক শ্রদ্ধা ও অভিনন্দন এই কাজটা করতে পারার জন্য।

আশা ছিল ইউটিউবে উনার বক্তৃতার ভিডিও পাবো। মন্তব্য পড়ে মনে হলো নেই। কারো কাছে কোন ভিডিও লিংক থাকলে পাঠাবেন। ওনার ওয়েবসাইটে ভিডিও নেই কোন।

উনার কাজের আরও প্রসার ও প্রচার আশা করছি। কেউ ফেসবুক পেইজ ও ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করলে খুব খুশি হব।

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

অচিরেই ফেসবুকে একটি গ্রুপ/পেইজ খোলা হবে বলে আসিফ ভাই জানিয়েছেন।

বাউলিয়ানা এর ছবি

এহহেরে...অল্পের জন্য মিস হয়ে গেল। বিজ্ঞান বক্তা আসিফ সম্পর্কে অনেক আগে থেকে জানি। কিন্তু বক্তৃতা শোনার সৌভাগ্য হয়নি কখনও।

কৌস্তুভ এর ছবি

তাড়াহুড়োয় পড়লাম, কিন্তু এনার সম্বন্ধে জেনে ভাল লাগল।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আমি যখন প্রথম আসিফ ভাইয়ের দর্শনীর বিনিময়ে বিজ্ঞান বক্তৃতার পোস্টার দেখি, তখনই তব্দা মেরে গেছিলাম। একদিন যখন আরিফ বুলবুল নামের একজন লোকের সঙ্গে পরিচয় হলো এবং জানলাম যে ইনি সেই আসিফ ভাইয়ের বড় ভাই। আরিফ ভাইরেই পরে মাথায় করে রাখার অবস্থা আমার।
আর আসিফ ভাইরে দেখে ব্যাপক অবাক হইছিলাম, এরকম ছোটখাটো একটা লোক এত বড় বিস্ময়ের জন্ম কীভাবে দিয়ে চলেছেন!

আসিফ ভাইয়ের প্রতি শ্রদ্ধা। আপনাকে ধন্যবাদ
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

রণদীপম বসু এর ছবি

আমি ভাবি এক্কেবারে ছোট্টখাটো একটা নিরিবিলি মানুষ আসিফ ভাইয়ের মহাজাগতিক মাথাটা এত্তোকিছু ধারণ করে কিভাবে ! আমার কাছে এটাও একটা বিস্ময় ! হা হা হা !
তাঁর লেখা বিজ্ঞান বিষয়ক প্রকাশিত বইগুলোও সবার সংগ্রহে থাকা দরকার বলে মনে করি।

লেখাটা খুব সুন্দর হয়েছে পান্থ !

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

আসিফ ভাইয়ের সাথে রাতে কথা হয়েছে, অনুষ্ঠান ভালোই হয়েছে। বেশ লোকজনও এসেছিলেন বক্তৃতা শুনতে। অনুষ্ঠানের ভিডিও ধারণ করা হয়েছে। সেটা তার ওয়েবসাইট এবং ইউটিউবে আপলোড করবেন। অক্টোবরে বরিশালে আরেকটা বক্তৃতা অনুষ্ঠান হতে পারে বলে তিনি জানিয়েছেন।

তাসনীম এর ছবি

অপেক্ষায় থাকব। ইউটিউব ছাড়া গতি নেই...ওনার বক্তৃতা সামনা সামনি শোনার সুযোগ অচিরে মনে হয় হবে না।

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।