পাঁচটা প্রশ্ন

পলাশ দত্ত এর ছবি
লিখেছেন পলাশ দত্ত (তারিখ: সোম, ২৬/০১/২০০৯ - ৮:৪৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

একটা ছোটোকাগজ করবো প্রাণস্রোত নামে। সেখানে সচলায়তনের সৌজন্যে এই পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর ছাপতে চাই। অনুগ্রহ ক'রে মন্তব্যের ঘরে উত্তর দিন।
================================================
০১.
কবি বুদ্ধদেব বসু পাঠকের সঠিক মনোযোগ পেয়েছেন বলে মনে করেন?
না পেয়ে থাকলে এর কারণ কী?

০২.
বু্দ্ধদেব বসুর ভাষান্তর করা বোদল্যার ও রিলকে বাংলা কবিতায় কী
ধরনের প্রভাব রেখেছে বলে মনে করেন?

০৩.
কথা সাহিত্যিক বুদ্ধদেব বসুকে আপনি কিভাবে দেখেন?

০৪.
বাংলা উপন্যাসে নতুন কোনো মাত্রা কি যোগ করেছেন বুদ্ধদেব বসু?

০৫.
বুদ্ধদেব বসুর রবীন্দ্রদর্শন সম্পর্কে আপনার মত কী?


মন্তব্য

পলাশ দত্ত এর ছবি

আচ্ছা লোকজন কি ডরাইছে নাকি চিন্তিত কোনো মন্তব্য করে না ক্যান এই পোস্টে চিন্তিত

==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

আমি খুবই ডরাইছি। আমার অ্যান্টেনার উপর দিয়ে গেছে পুরা।

পলাশ দত্ত এর ছবি

আরে ভাই ডরের কারণটা বেইখ্যা করেন। তাইলেও তো আমার লাভ হয়। চোখ টিপি

==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

এনকিদু এর ছবি

ইশতিয়াক ভাইয়ের ডরের কারনটা ঠিক জানিনা । তবে আমিও ডরাইছি । আমি অশিক্ষিত লোক । মিস্ত্রী । এগুলা আমার অ্যান্টেনার উপর দিয়েই যায় ।


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

অভ্রনীল এর ছবি

আমিও কইলাম ডরাইসি! সাহিত্য পড়তে দিলে পইড়া ফেলি... কিন্তু প্রশ্ন করলে জবাব দিতে পারিনা দেঁতো হাসি সারাজীবন বাংলা-ইংলিশে এই জন্য ফেল করতে করতে বাঁইচা গেসি... এই বিষয়ে জ্ঞান আমার মাইনাসে... সেইজন্য এখন মিস্ত্রীগিরী করি...

_______________

এক ছাগলের দুই কান,
তুই আমার জানের জান।

সুমন সুপান্থ এর ছবি

পলাশ ,
প্রথমেই ধন্যবাদ একটা ছোটকাগজ করার সাহস দেখিয়েছেন বলে । কর্পোরেট-সময়ে উল্টো হাঁটার জন্য সাহস-ই দরকার মনে হয় বেশী । নামটা ও চমত্‌কার । আমার কাগজটার ( স্রোতচিহ্ন) নামের সঙ্গে মিল আছে । ভালো লাগলো । আপনার প্রশ্নগুলোর জবাব দেয়া যে কঠিন-ই কেবল, সেটা নয় - সময় আর বিস্তর আলোচনারও দাবী রাখে এইগুলো । তবু...

০১. বাংলা সাহিত্যের হিসাব ধরলে, উত্তরটা- হ্যাঁ । বলতে গেলে জীবনানন্দের পর বুদ্বদেব বসু-ই সম্ভবত সবচেয়ে বেশী পঠিত/আলোচিত ত্রিশ প্রতিনিধি

০২. অসামান্য প্রভাব রেখেছে ।

০৩. সন্দেহ নেই, কীর্তিমান কথাকার । কিন্তু তিনি আমার কাছে সব চেয়ে আগে - কিংবদন্তী সম্পাদক ও সমালোচক ।

০৪. সেই অর্থে না

০৫. ( বলতে গেলে আমার জ্ঞানের পরিধির বাইরের প্রশ্ন এটা ) কিচ্ছু বলতে পারছি না ।

---------------------------------------------------------
তুমি এসো অন্যদিন,অন্য লোক লিখবে সব
আমি তো সংসারবদ্ধ, আমি তো জীবিকাবদ্ধ শব !

---------------------------------------------------------
তুমি এসো অন্যদিন,অন্য লোক লিখবে সব
আমি তো সংসারবদ্ধ, আমি তো জীবিকাবদ্ধ শব !

পলাশ দত্ত এর ছবি

কিন্তু তিনি আমার কাছে সব চেয়ে আগে - কিংবদন্তী সম্পাদক ও সমালোচক ।
- এই অংশটা একটু বিস্তারিত বলবেন?

পুনশ্চ : প্রাণস্রোত কাগজটি আগেও বেরুতো। মাঝে দীর্ঘ সাড়ে ছয় বছর বেরোয়নি।

==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

মাহবুব লীলেন এর ছবি

শুধু এই পোস্টে মন্তব্য করার জন্যই লগিন করলাম

আমার মন্তব্য হলো

০১

কঠিন বই পড়ি না

০২

কঠিন প্রশ্নের উত্তর দেই না

পলাশ দত্ত এর ছবি

আমি তো কোনো কঠিন প্রশ্ন করি নাই। চোখ টিপি

==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

১. সঠিক মনোযোগ পাননি, পেলে আমদানি করা আধুনিকতায় মজে দীর্ঘকাল ঘোরে কাটাতো না আর জীবনানন্দকে সহজেই চিনতে পারতো। তবে বেশি মনযোগ পেয়েছেন।

২. প্রবল প্রভাব, তবে তার ফল ভাল হয়েছি কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে। ইদানিং কেউ কেউ (সলিমুল্লাহ খান, সাজ্জাদ শরিফ) অনুবাদের উৎকর্ষতা নিয়ে সন্দেহ তুলেছেন।

৩. খুব বেশি ভালা পাই না।

৪. ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা, পুরুষকেন্দ্রিক যৌনতা।

৫. মত গঠন করবার অবকাশ পাই নাই।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

পলাশ দত্ত এর ছবি

আমদানি করা আধুনিকতাটা কী? আর আধুনিকতাটা কী?

==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

এই চুক্তি তো ছিল না ভাই, কইছিলেন খালি পাঁচটা সংক্ষিপ্ত উত্তর। এখন চাইছেন সওয়াল জবাব। তাইলে হালায় খেলুমই না।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

পলাশ দত্ত এর ছবি

ভাই, জানি না দেইখা এইভাবে খেদায়া দিবেন! মানুষ হিসাবে মানুষরে সাহায্য করবেন না!!

==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

১.
কবি বুদ্ধদেব বসু পাঠকের সঠিক মনোযোগ পাননি বলেই যদি ধরে নেই, তাহলে সেই দায় কার? তাঁর নিজের কবিতার চেয়ে পাঠক আলোচোকের মনোযোগটা অনেক ক্ষেত্রে বোদলেয়ার রিলকে বা মেঘদূতের অনুবাদে চলে গেছে। কেন? এ নিশ্চয়ই পাঠকের দায় নয়?
দুটো কারন হতে পারে-
ক) কবি হিসেবে তিনি দূর্বল
খ) অনুবাদ কবি হিসেবে তিনি সবল
আবার একই সঙ্গে দুটোই কাজ করতে পারে।

তাঁর অনুবাদ আর সম্পাদনাকর্ম তাঁকে অনেকটা আড়াল করে রেখেছে কবি বা লেখক থেকে। কিন্তু সেই অর্থে তিনি ইন্সটিটু্ট হননাই আবার।

২.
বোদলেয়ার রিলকের ভাষান্তর এবং এর প্রভাবকেই সম্ভবত ফারুক ওয়াসিফ আমদানি করা আধুনিকতা বলছেন। এই জায়গায় আমি তার সঙ্গে একমত। জীবনানন্দর কাছে যে নিজস্ব ভাষাটা পাই তা সম্প্রসারণে ক্ষতিই হইছে ধারণা করি। তবে এটাও সত্য বসু'র ভাষান্তর কীর্তিতেই বোদলেয়ার রিলকে পড়তে পারছি আসলে, নয়তো হয়তো পড়াই হতো না।

৩.
কথাসাহিত্যিক বুদ্ধদেব বসুকে আলাদা করে দেখার অবকাশ পাই নাই।

৪.
নতুন পুরনো কোনো মাত্রাই যোগ করেছেন বলে মনে করিনা।

৫.
এই বিষয়ে আপাতত কিছু বলতে পারতেছি না। যোগ্যতা নাই, বলতে হলে পড়তে হবে।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

আমি খোদ বুদ্ধদেবীয় কাব্য চেতনাকেই আমদানি করা আধুনিকতা বলতে চেয়েছি।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

পলাশ দত্ত এর ছবি

খোদ বুদ্ধদেবীয় কাব্যচেতনাকেই আপনি আমদানি করা আধুনিকতা বলছেন।

এখানে দুটো বিষয়ে আমার সংশয় আছে। প্রথমটি হলো কাব্যচেতনা। কাব্যচেতনা মানে কি কবির কাব্য-বিশ্বাস? নাকি যে-মনোজগতের গঠন থেকে কবি লেখেন সেই মনোজগতকে বলবো কাব্যচেতনা? কাব্যচেতনা বা কাব্যবিশ্বাস শব্দ দুইটার যেকোনো একটা বললেই কি কবিতাকে সুনিয়ন্ত্রিত/সুচিন্তিত কোনো ঘটনা বলে ভুল করে ফেলার অবকাশ থাকে না? আর কাব্যচেতনা বস্তুটির অস্তিত্ব থাকতে হলে তো তার জন্ম হতে হবে কবিতার আগে। সেই চেতনা অনুযায়ী পরে কবিতার জন্ম হবে; অথবা সেই চেতনা অনুযায়ী পরে নিয়ন্ত্রিত হবে কবিতার জন্ম। কিন্তু কবিতা কি আসলে সেই পূর্ব-নির্ধারিত মন-নিয়ন্ত্রিত কোনো কিছু? তাহলে অনেক কবিই যে বলে থাকেন একটি কবিতা যখন লেখা হয় তখনই তিনি কেবল কবি; কবিতা লেখার পর মুহূর্ত থেকে তিনি আর কবি ননা; ঠিক আর একটি কবিতা লেখার মুহূর্তে পেৌছুতে পারার আগ পর্যন্ত;!? কাব্যচেতনা বলে কোনো কিছু যদি আদেৌ থেকে থাকে, তাহলে কবি তো সার্বক্ষণিক কবি-হয়ে-থাকার কথা। কারণ তার নিজস্ব একটি কাব্যচেতনা আছে। মানে সেই চেতনা অনুযায়ী তিনি তার কবিতাকে নির্মাণ করেন। এখানে নির্মাণ শব্দটি লক্ষ্য করবেন। কবিতাকে নির্মাণ। কবিতা কি নির্মাণের জিনিস? নাকি তা স্বতস্ফূর্ততার?

বুদ্ধদেব বসু কবিতা নির্মাণের জিনিস বলে বিশ্বাস করতেন বলে এমন কোনে তথ্য এখন পর্যন্ত আমার জানা নেই। তাই কাব্যচেতনা শব্দটি এখানে অর্থহীন বলে সংশয় জাগে। কারণ বুদ্ধদেব বসু কবি। আর কবির কাছে কবিতা যাপিত জীবনের অংশ হওয়ার কথা। সে-কারণেই তা তার চেতনা না হয়ে হয়ে ওঠার কথা জীবন।

==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

রণদীপম বসু এর ছবি

পলাশ দা' কি হিটলারী চাল মেরে পাঁচটা প্রশ্নের উত্তর চাইলেন ? না কি পাঁচটা তরতাজা প্রবন্ধ চেয়ে বসলেন ? এটার সুরাহা হোক আগে। তারপরে উত্তর খোঁজা যাবে..!

১ নম্বর পয়েণ্টে নজরুল ইসলামের সাথে দ্বিমত পোষণ করার যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে। কিন্তু ব্যাখ্যা করতে পারবো না, তাহলে প্রবন্ধ লিখতে হবে। কিন্তু ওটা পারবো না।

২ নম্বর পয়েন্টে ফারুক ওয়াসিফ উচ্চারিত 'ধারকরা আধুনিকতা' শব্দবন্ধটিকে কিছুটা বিভ্রান্তিকর মনে হচ্ছে। আধুনিকতা বিষয়টাই তো জ্ঞানের মতোই ধার করা জিনিস ! আমাদের সমস্ত অর্জনই কি আসলে ধার করা নয় ? অবুঝ দিগম্বর অবস্থাই বোধ করি প্রকৃত ধারমুক্ত অবস্থা। এক্ষেত্রেও আমার দ্বারা প্রবন্ধ লিখা এখন সম্ভব নয়..। জোরাজুরি করলে নির্দ্বিধায় বলে দেবো, আমি কিছু বলি নাই....হাহ্ হা!

পরের পয়েন্টগুলোতে যাবার আগে পলায়নই নিরাপদ উপায় বলে মনে হচ্ছে...

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

অল্প স্বল্প পড়ি।
সেই সুবাদে জানাতে পারি, কবি হিসেবে তাকে আমার খুব শক্তিশালীকেউ মনে হয় নি। যদিও তাঁর সময়ে তাঁর পাশাপাশিই ভয়াবহ সব কবিতার জোয়ার বইয়ে দিয়েছেন।
দুই, সম্পাদক হিসেবে কবিতা আন্দোলনে একটা বিশাল ভূমিকা রেখেছেন তাঁর "কবিতা" পত্রিকা দিয়ে।
তিন, কথাসাহিত্যিক হিসেবে তার দুটি লেখায় আমি আজীবন স্পন্দিত, চমকিত, নাড়ায়িত। জীবনে যত শ্রেষ্ঠ লেখা পড়েছি, এ দুটি তার মধ্যে পড়ে। সেগুলো পড়ে পড়েই আমার বাংলা লিখতে শেখা। একটি হচ্ছে বড় গল্প "তারা তিনজন", আরেকটি স্মৃতিকাহিনী "হঠাৎ আলোর ঝলকানি"।
সম্ভব হলে সবাইকে এই লেখা দুটো পড়ে দেখার অনুরোধ জানাই। "তারা তিনজন" পাবেন ডিগ্রির বাংলা বইয়ে, কিংবা বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রকাশ করা বাংলাসাহিত্যের শ্রেষ্ঠ গল্পের দ্বিতীয় খণ্ডে সম্ভবত, আর হঠাৎ আলোর ঝলকানি বুদ্ধদেব সমগ্র ছাড়া বোধহয় পাওয়া মুশকিল। তবে যারা ৮৮ থেকে ৯৪ সালের মধ্যে ক্লাস নাইন-টেনে পড়েছেন, তারা বাংলা বইয়ে একটা সংক্ষেপিত লেখা পাবেন, "পুরানা পল্টন" নামে। ওটাই সেই লেখার সংক্ষিপ্ত রূপ।
এই দুটো লেখা পড়েই সারাজীবনের মতো বুদ্ধদেবের পায়ের কাছে মাদুর টেনে বসে পড়েছি!
---------------------------------------------
রাজাকার আলবদর নিপাত যাক!
জয় বাংলা আমার থাক!

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

স্নিগ্ধা এর ছবি

আমি কবিতা বলতে গেলে পড়িই না, তাই কবিতার ব্যাপারে আমি রীতিমতো অজ্ঞান, এবং বুদ্ধদেবের বেশীরভাগ লেখা পড়েছি অনেক অনেক বছর আগে। তারপরও বুদ্ধদেব বসু বলেই উত্তর দেবো -

১) বিভিন্ন লেখা থেকে যা বুঝি, তাঁর জীবিতাবস্থায় অনেকখানিই মনোযোগ পেয়েছিলেন, কিন্তু সেটা বোধহয় খুব দীর্ঘকাল স্থায়ী হয় নি। এই না হওয়াটা তাঁর কবিতারই দায় বোধহয়। 'সঠিক' শব্দটার প্রয়োগে মনে হয় তাঁর প্রাপ্য মনোযোগ পান নি, তাই কি? এ ব্যাপারে আমি নজরুলের সাথে একমত।

২) খুব বেশী কিছু বলতে পারবো না।

৩) কথাসাহিত্যিক হিসেবে বু ব আমার কাছে সবস্ময়ের সেরা একজন! তাঁর রসবোধ, ভাষার সৌন্দর্য্য, উপস্থাপনা - অপূর্ব!!!

৪) আমি মনে করি বু ব'র আগে, বাংলা উপন্যাসে ওই সময় পর্য্যন্ত এরকম নির্মেদ, বাহুল্যবর্জিত (কিন্তু অলঙ্কার বর্জিত নয়) ভাষায়, একধরনের শহুরে-পশ্চিমী-আধুনিক-রোমান্টিক ভঙ্গিতে আর কেউ লেখেন নি। অনেকখানি পশ্চিমীধাঁচের লেখা তার, কিন্তু সেটাই আমি মনে করি তাঁর বিষেষত্ব। বাংলা ভাষার মাধুর্য্য বজায় রেখে তাতে বিদেশী ভাব পরিবেশন করা খুব সহজ কাজ নয়। তিথিডোর এবং রাত ভরে বৃষ্টি ছাড়াও আমি ব্যক্তিগতভাবে কালো হাওয়া, শ্যোণপাংশু, পরিক্রমা, পাতাল থেকে আলাপ, এক বৃদ্ধের ডায়রী - মনে করি অসামান্য কিছু উপন্যাস।

৫) বু ব ব্যক্তিপূজো ব্যাপারটা পছন্দ করতেন না। রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে তাঁর সমস্যা ছিলো না, তাঁর সমস্যা ছিলো রবীন্দ্রপুজোতে, অতিভক্তিতে। এবং তিঁনি ব্যক্তি হিসেবে খুব আত্মাভিমানী (ইগোয়িস্টের ঠিক বাংলা হলো কি এটা?) ধরনের ছিলেন। কাজেই সে কালের রাবীন্দ্রিক হাওয়া বা কবিতার জগতে রবীন্দ্রনাথকে সজ্ঞানে বা অনবধানে অনুসরণ করার যে চল ছিলো, তাঁর পক্ষে ওটা মেনে নেওয়া সম্ভব ছিলো না বোধহয়। আর তাই কল্লোল গোষ্ঠী, তাই কবিতার ক্ষেত্রে একটা পয়েন্ট অফ ডিপারচার তৈরীর চেষ্টা।

কিন্তু, তাঁর শান্তিনিকেতন নিয়ে লেখা স্মৃতিকথাগুলো পড়লে বোঝা যায় কবি রবীন্দ্রণাথ, সাহিত্যিক রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে তাঁর মুগ্ধতা কম ছিলো না। আর, ব্যক্তি রবীন্দ্রনাথকেও কিন্তু তিঁনি উপেক্ষা করেন নি - বড় মেয়ে মীনাক্ষীর নামটা খুব সম্ভবত রবীন্দ্রনাথেরই দেয়া।

পলাশ দত্ত এর ছবি

নজরুল সচেতন/অসচেতনভাবেই বুদ্ধদেব বসুর কবি হিসেবে সঠিক মনোযোগ না-পাওয়ার কারণটা বলে দিয়েছেন কিন্তু!

তা হ'লো এই : তাঁর অনুবাদ আর সম্পাদনাকর্ম তাঁকে অনেকটা আড়াল করে রেখেছে কবি বা লেখক থেকে।

অর্থাৎ, বুদ্ধদেব বসুর কবিতা দুর্বল এ-কথা আমি মানতে রাজি নই।

==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

স্নিগ্ধা এর ছবি

বুদ্ধদেব বসুর কবিতা দুর্বল এ-কথা আমি মানতে রাজি নই

তা না মানতেই পারেন। তবে 'দুর্বল'তা ব্যাপারটি আপেক্ষিক। আমি নিজে বুদ্ধদেব বসু'র কবিতা পছন্দ করি, কিন্তু তার মানে এই না যে আমি মনে করি তাঁর কবিতা 'সঠিক' মনো্যোগ পায়নি, এবং সেটা তাঁর অনুবাদ আর সম্পাদনাকর্ম তাঁকে আড়াল করে রেখেছিলো বলে। তিঁনি অবশ্যই কবি ছিলেন, কবিতা ভালোবাসতেন শুধু তো না, কবিতার এবং নব্য কবিদের উৎসাহী পৃষ্ঠপোষকও ছিলেন।

কিন্তু, তিনি একইসাথে গদ্যলিখিয়েও ছিলেন এবং কম্প্যারাটিভ লিটেরেচার বিভাগের জন্মদাতা ছিলেন। এসব নিশ্চয়ই তার কবিতার কাছ থেকে অনেকখানি মনোযোগ এবং সময় কেড়ে নিয়েছিলো। অর্থাৎ, যতটুকু তাঁর দেবার ক্ষমতা ছিলো, কবিতাকে ততটুকুই তিঁনি দিতে পেরেছিলেন কিনা সে কথা নিঃসংশয়ে বলতে কি পারি আমরা?

যদি ধরেও নিই, তিঁনি 'প্রথমে' একজন কবি তারপর অন্য আর সব ছিলেন, তাহলে তিঁনি যথেষ্ঠ মনোযোগ কেন পাননি বলে আপনার ধারণা?

আর, এটি তো পাঁচটি উত্তরের একটি মাত্র। বাকি চারটি সম্পর্কে আপনার মত?

পলাশ দত্ত এর ছবি

একটা জবাব লিখেছিলাম। নেট-সমস্যায় হারিয়ে গেলো। কপিও করে রাখিনি। আবার দিতে হবে উত্তরটা।

==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

সুমন চৌধুরী এর ছবি

আসলে আমার মতো নির্বোধ পাঠকের জন্য এইসব পোস্টে মন্তব্য দেওয়া একরকম ধৃষ্টতা। আমার ঘরভর্তি কবিতার বই ছিল দেশে। তাঁর দুয়েকটা এখানেও আছে। কিন্তু এইসব আমি বুঝি এমন কথা বলতে কলিজা কাঁপে।

বুদ্ধদেব বসুর কবিতা সম্পর্কে আমার মতামতকে তাই নিতান্তই অ্যামেচার বলে জানবেন। আমি বুদ্ধবাবুর পদ্য অপছন্দ করি। বিশেষ করে তাঁর চিল্কায় সকাল, কঙ্কাবতী কিংবা তপস্বী ও তরঙ্গীনী জাতীয় আহ্লাদীগুলিকে। তাঁর বিপুল কাব্য সম্ভার থেকে কেন যেন আমার শুধুমাত্র রাত তিনটের সনেট কে ই খানিক জাতের মনে হয়েছে। আমি হয়তো ভুল পাঠক। তাই আমার মতামতে কিছু আসে যায় না। তবুও যেহেতু বুঝেনাবুঝে একটা বয়সে গাবরের মতো কবিতা পড়েছি, সেই পাঠকের কথা জানিয়ে গেলাম....



অজ্ঞাতবাস

পলাশ দত্ত এর ছবি

কেনো যেন আমার প্রায়ই মনে হয় বুদ্ধদেব বসু একজন ভুল-পঠিত কবি। এ কারণে এবার তাকে তার কবিতাকে স্মরণ করে দেখবার একটা আয়োজন করছি ছোটোকাগজের বুদ্ধদেব বসু স্মরণ-সংখ্যার মাধ্যমে।

==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।