নোবেল প্রাইজ আ্যসাইনমেন্ট

রকিবুল ইসলাম কমল এর ছবি
লিখেছেন রকিবুল ইসলাম কমল [অতিথি] (তারিখ: রবি, ১২/১০/২০১৪ - ৭:৪৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমাদের পড়াকালীন সময় সুইডেনের লিনশপিং বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিসিনের মাস্টার্স প্রোগ্রামটিতে একটি মজার অ্যাসাইনমেন্ট ছিল। ২০০৮-২০১০ বর্ষে যারা পড়েছে তাদের সবাইকেই এই অ্যাসাইনমেন্টটি করতে হয়েছে। এখনো হয়তো করতে হয়।

অ্যাসাইনমেন্টটি ফিজিওলজি এবং মেডিসিনে নোবেল প্রাইজ ঘোষনার ঠিক পরপর দেয়া হতো। চার-পাঁচ জন ছাত্র-ছাত্রীর একটি গ্রুপ করা হতো। প্রতিটি গ্রুপের কাজ ছিলো সে বছর যারা মেডিসিনে নোবেল পেয়েছে তাদের কাজ আসলেই নোবেল পাওয়ার মত উপযুক্ত কিনা? তারা না পেলে আর কে বা কারা পেতে পারতো?

নির্দিষ্ট কিছুদিন পর সেটির লিখিত রিপোর্ট এবং প্রতিটি গ্রুপকে তাদের সহপাঠি এবং শিক্ষকদের একটি প্যানেলের সামনে প্রোজেক্টরে প্রেজেন্ট করতে হত।

কৈলাশ সাতিয়ার্থীর সাথে মালালা ইউসুফজাইয়ের শান্তিতে নোবেল পুরুস্কার পাবার ঘোষণার পর ফেসবুক নিউজ ফিডে এবং কিছু পত্রিকায় তার নোবেল প্রাপ্তি নিয়ে অনেক `বোদ্ধা´দের প্রতিক্রিয়া দেখে আমার ৬ বছর আগের করা সেই অ্যাসাইনমেন্টটির কথা মনে পড়ে গেল। আমার অবশ্য শান্তির নোবেল নিয়ে এই অশান্ত তর্কে যোগ দেবার মত ইচ্ছা বা সময় কোনটাই নেই।

বরং এই লেখার উদ্দেশ্য বাংলাদেশে আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের জানানো যে, এরকম একটি অ্যাসাইনমেন্ট কিন্তু তাঁরা তাদের বর্তমান ছাত্র ছাত্রীদেরকে দিতে পারে। এটি শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ আবিস্কারের বিষয়ে জানতে উৎসাহিত করবে। নিজেদের ক্রিটিকাল থিঙ্কিং কে আরো শানিত করবে। আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, অ্যাসাইনমেন্টটি করার সময় অনেক নতুন বিষয় জানা হয়েছিল যা সত্যিই খুব আনন্দের।

আজকে কোন একজন বিজ্ঞানী একটি অসাধারণ গুরুত্বপূর্ণ আবিস্কার করলেও সে আগামী বছর নোবেল প্রাইজ পায়ে যাবে না। এমনকি ক্যান্সার, এইড্স বা ইবোলার ভ্যাক্সিন আবিস্কার করলেও না! তাকে অপেক্ষা করতে হবে। এর কারণ হচ্ছে বিজ্ঞানে নোবেল প্রাইজ দেবার একটি শর্তই হচ্ছে- it has to be tested by time। চিকিৎস্যা বিজ্ঞানের গবেষণার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময় দেখা গেছে তাৎক্ষনিক ভাবে খুব ভালো বা সারা ফেলে দেয়া অনেক আবিস্কার দীর্ঘ মেয়াদে শরীরে নানান খারাপ জটিলতা তৈরীর কারণে নিষিদ্ধ করতে হয়েছে। তাই সাধারণত পাঁচ-দশ বছরের পুরোনো আবিস্কার গুলোকেই পুরস্কারের জন্য নির্বাচন করা হয়।

এটি মেডিসিনে নোবেল প্রাইজের জন্য নির্বাচন করার একটি শর্ত মাত্র। প্রতিটি পুরস্কারের জন্যেই নিশ্চয়ই এরকম অনেক গুলো শর্ত রয়েছে। এবারের পুরস্কারের বেলায় তারা তাদের নিজেদের তৈরী করা শর্ত গুলোই মেনেছে কিনা? যে আবিস্কারের জন্য যাদের কে নির্বাচন করা হয়েছে তারাই সেই আবিস্কারের সম্পূর্ণ কৃতিত্বের দাবিদার কিনা? এই আবিস্কারের সাথে সংস্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ কেউ বাদ পরে গেলো কিনা? বিজ্ঞানের পুরস্কারটি প্রায়ই তিন জন একসাথে পায় কেন? চারজন এক সাথে পায় না কেন? অর্থনীতির নোবেল পুরস্কারটি তো বিজ্ঞানী নোবেলের উইল করে রেখে যাওয়া টাকা থেকে নয় বরং সুইডেনের একটি ব্যাঙ্ক স্পনসর করে তারপরও এটিকে নোবেল পুরুস্কার বলা হয় কেন? সবগুলো পুরুস্কার সুইডেন থেকে দেয়া হলেও শান্তির পুরস্কারটি কেন নরওয়ের থেকে দেয়া হয়? এই আ্যসাইনমেন্টি করার সময় এরকম আরো নানান প্রশ্নের সম্মুখীন হবে শিক্ষার্থীরা। জানার আগ্রহ তৈরী হবে তাদের মধ্যে। নিজে নিজে উত্তর খোজার আগ্রহ তৈরী হবে। নিজের মনে তৈরী হওয়া প্রশ্নের উত্তর নিজে খুঁজে বের করার আনন্দ তাদের মস্তিস্কে যে রিওয়ার্ড ম্যাকানিজমটি চালু করে দিবে সেটিই হবে এই আ্যসাইনমেন্টের সাফল্য।

যতদুর মনে পরে ছাত্র ছাত্রীদের অ্যাসাইনমেন্টে আলোচনা যাতে বিষয় ভিত্তিক এবং গঠনমূলক হয় সে জন্য বেশ কিছু গাইড লাইন ছিল। এই মূহুর্তে সেগুলো মনে নেই। তবে আগ্রহী শিক্ষকরা নিশ্চয়ই www.nobelprize.org ওয়েব সাইটটি মনোযোগ দিয়ে দেখে, চিন্তা ভাবনা করে তারা তাদের ছাত্র-ছাত্রীদের আলোচনা গঠনমূলক এবং বিষয়ভিত্তিক রাখার জন্য নিজের মত করে কিছু গাইড লাইন দিয়ে দিবেন।

যেসব শিক্ষার্থীরা সত্যি সত্যি আ্যসাইনমেন্টটি আনন্দ নিয়ে করবে তারা চাইলে সেটি সচলায়তনে (ইংরেজীতে হলে ইংরেজী বিভাগে বাংলায় হলে এখানে) পোস্টও করতে পারে। সহপাঠিরা মন্তব্যের ঘরে সে লেখার উপর আলোচনা করতে পারে। আমি নিশ্চিত সচলায়তনের লেখক পাঠকরাও খুব উৎসাহ নিয়ে সেটি পড়বে এবং অনেকই তাদের সম্পূরক ভাবনা মন্তব্যের ঘরে দিয়ে সে লেখাটি কে আরো চমৎকার করে তুলবে।


মন্তব্য

মেঘলা মানুষ এর ছবি

এটা একটা চমৎকার অ্যাসাইনমেন্ট হতে পারে! আমাদের সৃজনশীল চিন্তার চর্চা বজায় রাখা, নিজে থেকে ভেবে উপসংহারে পৌঁছানো -এসবের জন্য এরকম একটা কাজ শিক্ষার্থীদের দেয়া উচিত।

রকিবুল ইসলাম কমল এর ছবি

ধন্যবাদ। আপনার পরিচিত কোন শিক্ষকের সাথে কথা প্রসঙ্গে আইডিয়াটি শেয়ার করতে পারেন। হাসি

হিমু এর ছবি

শিক্ষার্থীদের বরং প্রথমেই চিন্তা করা উচিত, পুরস্কারের প্রতিটি শাখায় নোবেল পদককে সর্বোচ্চ সম্মান বা কৃতিত্বের স্বীকৃতি হিসাবে মেনে নেওয়া কতোটুকু যৌক্তিক, এবং কৃতিত্বের মহত্ত্ব বিচারে পুরস্কারটি দেওয়া হচ্ছে, নাকি পুরস্কার দিয়ে একটি কৃতিত্বকে মহৎ হিসাবে বিশ্বের কাছে প্রতিষ্ঠিত করা হচ্ছে, সেটি বিবেচনা করা।

নোবেল পুরস্কার যাকে দেওয়া হয়, তিনি সে পুরস্কারের যোগ্য নন, এরকম বলাটা কি আদৌ সাজে? নোবেল পুরস্কার পাওয়ার একমাত্র যোগ্যতা নোবেল কমিটির চোখে যোগ্য বলে বিবেচিত হওয়ার সক্ষমতা। এই সক্ষমতার মানদণ্ডে কে কেন এগিয়ে রইলেন, আর যারা পেলেন না তাঁরাই বা কেন পিছিয়ে গেলেন, সেটা কখনোই জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয় না। যে মানদণ্ড গোপন ও ধোঁয়াটে, সে মানদণ্ডে কে যোগ্য আর কে অযোগ্য, সে বিচার করা কি আদৌ সম্ভব? কাজেই নোবেল যারা এ যাবৎ পেয়েছেন, তাঁরা সকলেই নোবেল পাওয়ার যোগ্য।

নোবেল বিজয়ীর যা প্রাপ্য নয়, তা হচ্ছে তাঁর প্রতি ব্যক্তির শর্তহীন সমীহ। কাজেই যদি বিশ্লেষণ করতেই হয়, প্রশ্ন করতে হবে এই সমীহ চাওয়ার অবস্থানটিকে। যিনি নোবেল পেয়েছেন, তাঁর কৃতিত্ব কি এমন কিছু যে নোবেল পাওয়ার পর তাঁকে শর্তহীন সমীহ করে চলতে হবে? এ প্রশ্নটির উত্তর খোঁজা সম্ভবত বেশি যৌক্তিক আর প্রয়োজনীয়।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

প্রথম ২ অনুচ্ছেদের সাথে একমত। হাসি

নোবেল বিজয়ীর যা প্রাপ্য নয়, তা হচ্ছে তাঁর প্রতি ব্যক্তির শর্তহীন সমীহ

হিমু ভাই,
এই প্রাপ্যতা কি বৈশ্বিক? অথবা সার্বজনীন? হ্যাঁ হলে ঠিকাছে, না হলে কেন মাথা ঘামাব? চিন্তিত

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

হিমু এর ছবি

প্রশ্নটা বুঝতে পারিনি।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

নোবেল বিজয়ীর যা প্রাপ্য নয়, তা হচ্ছে তাঁর প্রতি ব্যক্তির শর্তহীন সমীহ।

এই বাক্যের সঙ্গে আমি শতভাগ একমত। কেবল আমার চিন্তা ছিল এই শর্তহীন সমীহের দাবিদার কি অনেক বেশি মানুষ? (মানুষ বলতে নোবেলপ্রাপ্ত কিংবা আমজনতা যে কেউ হতে পারে।)

যদি এটি গুটিকয় মানুষের আব্দার হয়ে থাকে তবে আদৌ এটা নিয়ে মাথা ঘামাব কিনা? হাসি

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

হিমু এর ছবি

মাথা যতক্ষণ ঘাড়ের ওপর আছে, ঘামিয়ে রাখা ভালো।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

হুমম... তা বটে...
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি হাসি

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

রকিবুল ইসলাম কমল এর ছবি

ধন্যবাদ। আপনার মন্তব্যটি প্রাসঙ্গিক আরো কিছু বিষয় নিয়ে চিন্তাভাবনার খোরাক জোগাল।

নোবেল পুরস্কার যে বিষয় গুলোতে দেয়া হয় সে বিষয় গুলোতে নোবেলকে সর্বোচচ সম্মান হিসেবে বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় উল্লেখ করা হয়। জনমনেও তাই সেই ধারণাটি বদ্ধমূল হয়। নোবেল পুরস্কারের ঐতিহ্য, প্রার্থী নির্বাচনে তুলনামুলক ভাবে সফলতা এবং হয়ত পুরস্কারের অর্থনৈতিক মূল্যটাও এটিকে অন্য সব পুরস্কারের থেকে ভিন্ন মাত্রায় নিয়ে গেছে। সবকিছু ঠিকঠাক রেখেও কাল থেকে নোবেল কমিটি চলচ্চিত্রে নোবেল দেয়া শুরু করলে সেটির গুরুত্ব এরকম নাও হতে পারে। কারণ চলচ্চিত্রে অস্কার নামে অলরেডি একটি অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার আছে। সেটিকে ছাপিয়ে যাওয়া সহজ হবে না হয়তো।

তবে অস্কার-নোবেল যাই হোক না কেন। সব সময়ই যে এটিই সর্বোচচ সম্মানের প্রতীক হয়ে থাকবে তা নিশ্চয়ই নয়। যেমন অ্যাস্ট্রোফিজিক্স, ন্যানো-সাইন্স এবং নিউরোসায়েন্সে কাভলি পুরস্কারকে খুবই সম্মানজনক হিসেবে দেখা হয়। কোন দিন হয়ত জ্ঞান-বিজ্ঞান-শিল্প-সাহিত্যে এরকম আরো কিছু পুরস্কার নোবেল পুরস্কারের সম্মানকেও ছাড়িয়ে যাবে। পুরস্কারের বেলায় যে কথাটি মনে রাখা উচিৎ বলে মনে করি সেটি হচ্ছে পুরস্কার একজন বা গুটি কয়েকজন পায়। তাই বলে জ্ঞান বিজ্ঞানের সে শাখায় শুধু তাদেরই অবদান আরো কারো অবদান নেই এমন ভাবনা যেন অবচেতনেও না জাগে।

নোবেল পুরস্কার যাকে দেয়া হয়, তিনি সে পুরস্কারের উপযুক্ত কিনা বোঝাতে তাকে সেই পুরস্কার পাবার পূর্বশর্ত গুলো মেনে সেটি দেয়া হয়েছে কিনা সেই বিষয়টি বোঝাতে চেয়েছি। যেমন: এবছর নীল এলইডির জন্য পুরস্কার দেয়া হলেও কোন শর্ত পুরোন না করার জন্য লাল বা সবুজ এলইডির আবিষ্কারক পুরস্কারটি পেলো না। সেরকম একটি আলোচনার জায়গা করে দেয়ার জন্যই এই প্রসঙ্গটির অবতারণা করা।

নোবেল পুরস্কার পাওয়ার একমাত্র যোগ্যতা সে পুরস্কার প্রদান করার কমিটির চোখে যোগ্য বলে বিবেচিত হওয়ার সক্ষমতার কথা যেটি বললেন সেটি তো যে কোন পুরস্কার দাতা কমিটির বেলায়ই খাটে। কিন্তু তাই বলে কমিটি স্বেচ্ছাচারিতা করে যাকে খুশী তাকে তো আর পুরস্কার দিয়ে দিতে পারেনা। তাদের কিছু নির্দিষ্ট পূর্বশর্ত মেনেই নিশ্চয়ই অধিকতর যোগ্যদের বাছাই করতে হয়। সেই বাছাই প্রক্রিয়াও সমালোচনার উর্ধ্বে নয়। কী প্রক্রিয়ায় প্রার্থীকে বাছাই করা হয়েছে নোবেল কমিটি ৫০ বছর পর্যন্ত সেটি গোপন রাখে। তারপর সেটি প্রকাশিত হয়। সমালোচনা করার জন্য কিন্তু ৫০ বছর অপেক্ষার কোন বিধি নিষেধ নেই।

আপনার মন্তব্যের শেষ প্যারার সাথে দ্বিমত করার কোন কারণ নেই। শুধু নোবেল লরিয়েট কেন। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের কাউকেই তো শর্তহীন সমীহ করে চলার কোন কারণ দেখি না!

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

কিন্তু তাই বলে কমিটি স্বেচ্ছাচারিতা করে যাকে খুশী তাকে তো আর পুরস্কার দিয়ে দিতে পারেনা। তাদের কিছু নির্দিষ্ট পূর্বশর্ত মেনেই নিশ্চয়ই অধিকতর যোগ্যদের বাছাই করতে হয়।

একমত নই, যতদূর মনে পড়ে ২০০৬ এর শান্তিতে নোবেল পুরস্কারটি নোবেলের উইলের সঙ্গে সরাসরি সাঙ্ঘর্শিক। তারপর থেকেই বোধকরি এই সঙ্ঘর্শ নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়াল। ইয়ে, মানে...

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অতিথি লেখক এর ছবি

আইডিয়াটা খারাপ না।

এবারের পুরস্কারের বেলায় তারা তাদের নিজেদের তৈরী করা শর্ত গুলোই মেনেছে কিনা?

এখানে "নিজেদের" বলাটা কি ঠিক? শর্ত তো জানতাম আলফ্রেড নোবেল নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন। বছরখানেক আগে একটা বই পড়েছিলামঃ Fredrik Heffermehl রচিত The Nobel Peace Prize (২০১০)। এখানে লেখক বেশ যুক্তিগ্রাহ্য উপায়ে ব্যাখ্যা করেছেন যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে প্রদত্ত অধিকাংশ নোবেল শান্তি পুরস্কার আলফ্রেড নোবেলের বেঁধে দেয়া শর্তাবলীকে অমান্য করে দেয়া হয়েছে; এর মধ্যে মুহম্মদ ইউনুস এবং বারাক ওবামা-র পুরস্কারও অন্তর্ভুক্ত (বইটা ২০১০ সালে প্রকাশিত, সুতরাং মালালা ইউসুফজাই/কৈলাস সত্যার্থী-র নাম আসেনি; তবে আলফ্রেড নোবেল-প্রদত্ত শর্তাবলী তাঁরাও পূরণ করেন না)।

Emran

হিমু এর ছবি

বইটা থেকে কিছু সারাংশ আলোচনা করবেন নাকি? আলাদা পোস্ট হলে ভালো হতো।

অতিথি লেখক এর ছবি

ইচ্ছা আছে।

Emran

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

যদ্দুর মনে পড়ে ঐ বছর নোবেল শান্তি পুরস্কার নীতিমালার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ প্রাপকও ছিলেন। তাদের পাশ কাটানোতে মৃদু সমালোচনাও হয়েছিল। হাসি

পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম পোস্টান, ওইসব ইতিহাস আবার একটু খুঁড়ে দেখি। চাল্লু

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

মন মাঝি এর ছবি

এখানে কিছু তথ্য আছে - http://en.wikipedia.org/wiki/Fredrik_Heffermehl#Nobel_Peace_Prize_criticism

****************************************

রকিবুল ইসলাম কমল এর ছবি

তাদের নিজেদের শর্ত বলেছি এই কারণে যে আলফ্রেড নোবেলের উইলে উল্লেখিত শর্তগুলো আক্ষরিক ভাবে না নিয়ে বর্তমান সময়ের বাস্তবতাকে মাথায় রেখে নোবেল কমিটি সেই শর্ত গুলোকে ইন্টারপ্রিটেশন করে পুরস্কারের প্রার্থী নির্বাচনে সেগুলোকে এখনকার বাস্তবতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে থাকে।

গত বছর শান্তির নোবেল প্রাইজের একটি প্রেস ব্রিফিং এ উপস্থিত ছিলাম। তখন এই কথা গুলো কমিটির চেয়ারম্যান থরবিয়র্ন ইয়াগল্যান্ড (Thorbjørn Jagland) এর ব্রিফিং এ শুনেছিলাম।

হাতে আইপ্যাড ছিল, শখের বসে ভিডিও করেছিলাম। ভিডিও ক্লিপটি ইউটিউবে আপলোড করে এখানে এমেড করে দিয়ে যাবো পরে।

আপনার পড়া বইটি নিয়ে আলোচনা পড়ার অপেক্ষায় রইলাম।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

তাদের নিজেদের শর্ত বলেছি এই কারণে যে আলফ্রেড নোবেলের উইলে উল্লেখিত শর্তগুলো আক্ষরিক ভাবে না নিয়ে বর্তমান সময়ের বাস্তবতাকে মাথায় রেখে নোবেল কমিটি সেই শর্ত গুলোকে ইন্টারপ্রিটেশন করে পুরস্কারের প্রার্থী নির্বাচনে সেগুলোকে এখনকার বাস্তবতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে থাকে।

খাইসেরে... নোবেল কমিটিতেও সালাফি-ওয়াহাবি-মুতাজিলা কিংবা ক্যাথলিক-প্রোটেস্টান্ট কিংবা পিকিংপন্থী-মস্কোপন্থী এইগুলা আছে নাকি? বহুত গিয়ানজাম দেখা যায়! চিন্তিত

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

দিগন্ত এর ছবি

কোনো মানুষের প্রতিই শর্তহীন সমীহ সমাজের জন্য ভাল অভ্যাস নয়। শান্তির কাণ্ডারি ওবামা বোমা মারতে উদ্যোগী হলে তাকে যে আর শান্তির কাণ্ডারি বলাটা সমীচীন হবে না, সেটা নোবেল পাওয়ার অজুহাতে ধামাচাপা দেবার প্রচেষ্টার বিরোধিতা করা দরকার।
নোবেল শান্তি পুরষ্কার বিতর্কহীন ভাবে পেয়েছেন এরকম লোকজনের সংখ্যা পৃথিবীতে বিরল। যারা পেয়েছেন তাদের পরিবর্তে অন্য কাউকে পুরষ্কার দেওয়া হলে তাও যে বিতর্কহীন হত এমন ভাবারও অবকাশ নেই। মানব ইতিহাসে শান্তির আইডিয়া চিরকালই বিতর্কিত, ইতিহাসের সব শান্তিচুক্তি আর পিস-কিপিং ফোর্সের কথা পড়ে সেরকমই মনে হয়।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।