মুজাহিদকে অপমান!

রণদীপম বসু এর ছবি
লিখেছেন রণদীপম বসু (তারিখ: রবি, ১৯/১০/২০০৮ - ১২:৪৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

চ্যানের এনটিভি’র রাত সাড়ে দশটার নিউজে জানা গেলো যে পুলিশ জামায়াত নেতা আলী আহসান মুজাহিদের উত্তরার বাসায় তল্লাশি চালিয়েছে। কিন্তু কেন চালিয়েছে তা আমার বোধগম্য হলো না। মোটাবুদ্ধির কারণে এরকম সমস্যা আমার মাঝে মধ্যেই ঘটে থাকে। বোধশক্তি থমকে যায়।

উচ্চ আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর পলাতক আসামী (!) মুজাহিদ যখন সভাসমিতিতে বক্তব্য রাখেন, সবাই দেখে, পুলিশ দেখে না ! প্রধান উপদেষ্টার সাথে বেশ আড়ম্বরেই রাষ্ট্রিয় গুরুত্বপূর্ণ (?) বৈঠক করে, পুলিশ দেখে না ! গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক বলছি এজন্যই যে, রাষ্ট্রিয় মারাত্মক গুরুত্বপূর্ণ কোন সমস্যা না হলে একজন সরকার প্রধান কোন পলাতক আসামীর সাথে বৈঠক করবে এটা আমি বিশ্বাস করি না। কিন্তু সমস্যাটা নিশ্চয়ই মারাত্মক তো বটেই, খুবই গোপনীয়ও হয়তো। নইলে দুর্নীতি দমনেচ্ছুক দায়িত্বশীল সরকার প্রধান নিশ্চয়ই তা জাতিকে অবগত করাতেন। আর আমরা এসব উচ্চপর্যায়ের রাষ্ট্রনীতির কৌশল না বুঝেই পুলিশ কেন দেখে না এটা নিয়ে সবাই হৈ চৈ বাঁধিয়ে দিয়েছি। আমরা বুঝতে চাই না যে, কেউ যদি দেখতে অক্ষম হয় তাকে দোষ দিয়ে লাভ আছে ? দরকার হচ্ছে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার। তবে তারও আগে বুঝতে হবে পুলিশ কি দেখে না ? না কি দেখবে না, কোনটা ? সমস্যা হলো মোটা বুদ্ধির লোকেরা রাস্তার মাঝখান দিয়ে সোজা হাঁটে। তাই এতো ঘোরপ্যাঁচে না গিয়ে সরলভাবে বুঝে ফেলে, সরকার যখন দেখে না, পুলিশও দেখে না। পুলিশ তো সরকারেরই দক্ষিণ হস্ত। তার কি আলাদা কোন সত্ত্বা আছে নাকি ? যখন সরকার দেখতে শুরু করবে, পুলিশও তখন দেখতে পাবে।

কিন্তু আমি এখনো বুঝতেই পারছি না পুলিশ কেন হঠাৎ মুজাহিদের বাসায় তল্লাশি করতে গেলো ! হতে পারে চ্যানেলে একটা ভূয়া সংবাদ দিয়েছে, নয়তো পুলিশের কোন তৃতীয় নয়ন গজিয়েছে যা দিয়ে নিজেরা দেখে না, অন্যকে দেখায়। কেননা সরকার যে দেখতে পায় বা দেখতে চায় এর কোন আলামত এখনো তো স্পষ্ট হয় নি কোথাও। বিমান বন্দরের ত্রিমোহনায় ‘খাঁচার ভিতর অচিন পাখি’ -কে লালনের নাম ধরে মধ্যযুগীয় মোল্লারা যখন বাঙালির হাজার বছরের লোকায়ত সংস্কৃতির নাড়ি ধরে টান দিলো, আমাদের সরকার যে বাঙালির সেই ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারের সরকার তা বিশ্বাস করানোর মতো কোন ব্যবস্থা নিয়েছে কি ? দেলোয়ার হোসেন সাঈদী যখন দেশের অমুসলিমদের উপাসনামূর্তি ছাড়া বাকি সব মূর্তি ভাঙার হুমকী দেয়, সরকার তখনো কোন ব্যবস্থা নিয়েছে কি ? আর উপাসনামূর্তি বাদ দিলে বাকি যা থাকে তা তো প্রায় সবই রাষ্ট্রেরই। নইলে কোথাও কোন কষ্টিপাথরের মূর্তি পাওয়া গেলে প্রত্ন-সম্পদ হিসেবে রাষ্ট্র তা হস্তগত করে কেন ?

সাঈদীর বক্তব্য যখন ওইসব মূর্তি অপসারণকারীর বক্তব্যের প্রত্যক্ষ প্রতিনিধিত্ব করলো, তখন আর বুঝতে বাকি থাকলো কি যে এই জঘন্য কাজটা পরোক্ষে ভিন্ন নাম ধরে মূলত মৌলবাদী জামায়াতে ইসলামীরই কাজ ? প্রধান উপদেষ্টার সাথে মুজাহিদের বৈঠকের পর পর দেশ জুড়ে যখন গুঞ্জন উঠলো, সাথে সাথে ঘটলো মৃণাল হকের ভাস্কর্য অপসারণ ! একটা দিয়ে আরেকটা আড়াল করা ? তাও আবার বিমান বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রহসনমূলক বক্তব্য শুনে একটা রামছাগলেরও হাসি পাবার কথা। বলে কিনা, মূল ভাস্কর্যের নমূনা অনুযায়ী হয় নি বলেই এরাই এর অপসারণের ব্যবস্থা নিয়েছে ! জাতির সংস্কৃতির ধারক বাহক লেখক কবি শিল্পী ভাস্কররা দুর্বলতম দুর্ভাগা বলেই কি তাঁদেরকে নিয়ে এমন রাষ্ট্রিয় ছিনিমিনি খেলা ? মোটাবুদ্ধিতে আবারো বুঝে যাই, উপদেষ্টার বৈঠকখানা থেকে বিমান বন্দর হয়ে মুজাহিদের বাসা পর্যন্ত যে নাটক চলছে তাতে সরকারি সায় তো রয়েছেই, হয়তো সরকারি ইন্দনও রয়েছে। আর তা-ই যদি হয়ে থাকে তবে আর রাখঢাকের কিছু রইলো না যে, জামায়াতে ইসলামীর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত একটা মৌলবাদী সরকার মাথায় নিয়েই আমরা একটা নিরপেক্ষ (!) গণতান্ত্রিক নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, আদৌ যদি সে নির্বাচন হয়। মৌন মিছিল করার দায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রেফতারকৃত সেই ছাত্র-শিক্ষকদের নির্যাতিত হওয়ার স্মৃতি আসলে কখনোই ভুলা যাবে না।

কিন্তু এবারও আমার মোটা মাথায় এটা ধরছে না যে, আইনের প্রতি এতো বিশ্বস্ত আল্লাওয়ালা ব্যক্তি মুজাহিদ পলাতক হবেন কেন ? তিনি কি চোর ছ্যাচ্চর নাকি ! এমন সৎ আদর্শ ও পবিত্র মুবারকধারী জামায়াত শীর্ষ নেতা মুজাহিদ কি অন্যান্য দলের নাফরমান পাতি নেতাদের থেকেও খারাপ হয়ে গেলেন যে, ওরা কেউ গ্রেফতারের আগে পালালো না, আর মুজাহিদ ভয় পেয়ে পালিয়ে থাকবেন ! আর পুলিশ তাকে খুঁজে খুঁজে হয়রান হয়ে যাবে !

উঁহু, আমি বিশ্বাস করলাম না। এটা নিশ্চয়ই একাত্তরের রাজাকার মিথে প্রভাবিত কোন নাফরমান পুলিশ সদস্য কর্তৃক মুজাহিদকে পলাতক আখ্যা দিয়ে তাঁকে সুপরিকল্পিত অপমান করা হচ্ছে ! আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। এবং আমি এও আশা করি যে মুজাহিদ অন্তত চোর ছ্যাচ্চর থেকেও নীচে নেমে যান নি।
(১৮/১০/২০০৮)


মন্তব্য

শামীম এর ছবি

জনগণ বেশি দেইখা ফেলাইলে চোখ ধুইয়া দিতে হয় ... তাই মনে হয় পানির খোঁজে তল্লাশি চালাইছে।

মুর্তি নিয়ে কথাবার্তায় তো ধর্মপ্রাণ হজ্জ্বের নিয়তকারী নেকবান্দাদেরকে অপমান করা হইলো। এই কথাগুলো একজায়গায় লিখছিলাম

হজ্জ্বযাত্রীদের ঈমান এ্যাত দূর্বল না যে বাতাসে ভেঙ্গে পড়বে। ঐ দূর্বৃত্তের কতবড় স্পর্ধা যে ঈমানদারদের ঈমানকে নিয়ে কটাক্ষ করে। ভাষ্কর্যতো দূরের কথা ঈমানদার হজ্জ্বযাত্রীদের সামনে বস্ত্রহীন চীয়াললিডার লাফালাফি করলেও তাঁদের ঈমান হেলবে না। আর যদি সত্যই ভাষ্কর্য দেখেই কারো ঈমানে শৈথিল্য দেখা যায় সেটার দোষ ভাষ্কর্যের উপরে না দিয়ে বরং তাঁদর নিজের বিশ্বাসের ভিত্তি শক্ত করলেই ভাল হবে।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

পুতুল এর ছবি

**********************
"এবং আমি এও আশা করি যে মুজাহিদ অন্তত চোর ছ্যাচ্চর থেকেও নীচে নেমে যান নি।"
না হেসে পারলাম না! খুব মজার কৈতুক ভাই।

"পুলিশ জামায়াত নেতা আলী আহসান মুজাহিদের উত্তরার বাসায় তল্লাশি চালিয়েছে। কিন্তু কেন চালিয়েছে তা আমার বোধগম্য হলো না। মোটাবুদ্ধির কারণে এরকম সমস্যা আমার মাঝে মধ্যেই ঘটে থাকে। বোধশক্তি থমকে যায়।"

এক্কেরে দিলের কথা কইছেন ভাই! আমাগো মাথায় এসব হান্দায় না!

কাঁশ বনের বাঘ

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

বর্ণদূত এর ছবি

আপনাকে অভিবাদন।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- মৌনমিছিলে পাইকারী ধরপাকড় হয়, কিন্তু ভিসি সাহেবের বাংলোতে এ্যাটাক হলে কিছুই হয় না।

ভাইরে, কি আর কমু। "মিয়া সাবের তিন পোলা যেইটা ভালা সেইটাও গাছে উইঠা মুতে।"
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

নিন্দা জানাই ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।