। আমি যে 'কিংবদন্তী'র কথা বলছি...।

রণদীপম বসু এর ছবি
লিখেছেন রণদীপম বসু (তারিখ: শুক্র, ২৪/০৭/২০০৯ - ২:১২পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

এখনো ঘুমাই নি বলেই আমার কাছে আজকে মনে হলেও আসলে এটা ঘটে গেছে কাল অর্থাৎ ২৩-০৭-২০০৯ তারিখ বৃহষ্পতিবার অপরাহ্ণ ছ'টায়। মিরপুর-০১ এর গোলচক্কর সড়কদ্বীপে ভাস্কর হামিদুজ্জামান খানের যে ভাস্কর্যটা মেয়র সাদেক হোসেন খোকার মাধ্যমে উন্মোচন বা উদ্বোধন হলো, এটার নাম 'কিংবদন্তী'। শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে স্টেইনলেস স্টীলে নির্মিত এ ভাস্কর্যটা প্রায় সাড়ে তিন ফুট বেদীর উপর আনুমানিক সাত ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট। অস্ত্রহাতে যুদ্ধরত এক অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধার আধাবিমূর্ত আঙ্গিকে তৈরি ভাস্কর্যটির নামটা কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ'র 'আমি কিংবদন্তীর কথা বলছি' শিরোনামের কবিতা থেকেই যে আহরণ করা হয়েছে, তা বুঝা যায় ভাস্কর্য এলাকায় একটা সুদৃশ্য ফলকে কবিতাটার চারটি চরণ উৎকীর্ণ দেখেই-

“ আমি কিংবদন্তীর কথা বলছি
আমি আমার পূর্বপুরুষের কথা বলছি।
তাঁর করতলে পলিমাটির সৌরভ ছিল
তাঁর পিঠে রক্তজবার মতো ক্ষত ছিল।”

সত্যিই তো তাই ! কারণ আমাদের দাসত্বের শৃঙ্খল ভেঙে দিয়ে গেলেও তাঁরা যে ক্রিতদাস ছিলেন ! হাঁ, তাঁরা ক্রিতদাসই ছিলেন। কিন্তু এখন...?


মন্তব্য

স্নিগ্ধা এর ছবি

আহ, মন ভালো করা একটা ছবি! ধন্যবাদ, রণদীপম হাসি

রণদীপম বসু এর ছবি

ধন্যবাদ স্নিগ্ধাপা।
আরো ছবি দেখতে চাইলে এখানে দেখুন।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

জাহিদ হোসেন এর ছবি

আপনার দুটো পোস্টই পড়লাম এবং ছবিগুলো দেখলাম। ভালো লাগছে, আবার ভয়ও লাগছে যে কে কবে আবার এসে না বলে যে এট‌াকে সরাতে হবে।
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

রণদীপম বসু এর ছবি

তাঁদের পিঠে রক্তজবার মতো ক্ষত ছিলো। আর আমাদের পিঠে বয়ে আনা সেই দাগ এখনো শুকায়নি। সম্ভবত এটাই তফাৎ।
আর তাই অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক হলেও আপনার আশঙ্কা অমূলক নয় এখনো।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

দারুণ !!

রণদীপম বসু এর ছবি

ধন্যবাদ পিপি দা।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

তানবীরা এর ছবি

এখন মানে ??? আবদুল্লাহ আল মামুনের নাটক ছিল না এখনো ক্রীতদাস। এখনো ক্রীতদাস আমরা, তবে বেচা কেনা ডিজিটাল

ছবির জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ
---------------------------------------------------------
রাত্রে যদি সূর্যশোকে ঝরে অশ্রুধারা
সূর্য নাহি ফেরে শুধু ব্যর্থ হয় তারা

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

রণদীপম বসু এর ছবি

হা হা হা !
ডিজিটাল দাসত্বের ক্ষত মুছে মুছে আমাদের এইসব দিনযাপন ! ক্ষত কি শুকায় ? না কি ক্ষরণের যন্ত্রণাই মুছে যাওয়া কেবল !

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

ছবিটা দেখে খুব ভালো লাগলো, রণদা। আপনার ছবিগুলোর মধ্যে দিয়ে আমার দেশ দেখা হয়। ভালো "ফটোগ্রাফি" দেখি প্রচুর। সেগুলোর অসামান্য সৌন্দর্যের মাঝে একটা করে স্থিরচিত্র পাই, দেশ কত সুন্দর জানতে পারি। আপনার দেওয়া ছবিগুলো (বিশেষ করে আপনার দুই মেগাপিক্সের মোবাইলের ছবি) দেখে দেশের জীবনধারা সম্পর্কে ধারণা পাই। আপনার ঘোলা ছবিগুলোই আমার ঘোল।

অনেক ধন্যবাদ।

রণদীপম বসু এর ছবি

হা হা হা ! দুই মেগাপিক্সেল জিন্দাবাদ !

আসলে কি ইশতিয়াক ভাই, আমি তো ফটোগ্রাফি জানি না, হঠাৎ দেখার অস্বচ্ছ চোখ দিয়ে শুধু জীবনকে ধরতে চাওয়ার অসাধ্য চেষ্টাই করে যাওয়া ! আপনাদের অন্তর্দৃষ্টি যোগ হলে হয়তো কিছু অর্থ তৈরি হয়ে যায়। সে কৃতিত্ব অবশ্যই আপনাদের। আমি এখানে নিমিত্ত মাত্র।

ভালো লাগা মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

দুর্দান্ত এর ছবি

আপনার ছবি আর লেখা ভাল লেগেছে। কবিতাটিও অসাধারন, যা নিয়ে নতুন কিছু বলার অবকাশ নেই।
তবে এই চকচকে টার্মিনেটরমার্কা ভাষ্কর্যটি নিয়ে ভাল কিছু মনে আসছে না। অস্ত্র হাতে সামনে আগুয়ান বলশালী এক যোদ্ধা ছাড়া আমাদের মুক্তিযুদ্ধের কি আর কোন রূপ নেই?

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

চলুক
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

রণদীপম বসু এর ছবি

@দুর্দান্ত

মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপ্তি আর গভীরতা তো কম নয় ! নন্দন কলার ছোট্ট একটা পরিসরে সবকিছু কি একসাথে ধরা যায় ? তবে আমার মনে হয় যে কোন সৃষ্টির সাথে নিজের গভীর গোপন আবেগটার মিশেল দিতে না পারলে এর প্রকৃত রূপ বা দৃশ্যপট আমাদের কাছে কখনোই ধরা পড়বে না।
ব্যক্তিগত আবেগও এখানে অনেক বড় ফ্যাক্টর হয়তো। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যাঁদের বুকের বোধের ভেতর নিরন্তর বয়ে চলে কষ্টের নদীটা, তাঁরা হয়তো এই ছোট্ট একটা রূপকের আশ্রয়েই ভেতরের ইতিহাসটাতে ঢুকে যেতে পারেন নিমেষে। এখানেই কোন সৃষ্টির গূঢ় রহস্যটা হয়তো।

যে ইতিহাস আমাদের জানা থাকবে না কিংবা বোধের দরজায় নাড়া দেবে না, তাঁর কোন রূপকের যথার্থ সংবেদনশীলতা আশা করা কি ঠিক ? আমাদের ব্যর্থতা, সেই যন্ত্রণাটা হয়তো আমরা ধারণ করতে পারিনি। নয়তো আমরা যাঁরা মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি বা প্রিয়জন হারানোর কষ্ট আমাদেরকে স্পর্শ করেনি, এই আমাদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের সেই যন্ত্রণাটাকে কেউ যথাযথভাবে চারিয়ে দিতে পারেনি । নইলে একজন মুক্তিযোদ্ধার নান্দনিক প্রতিকৃতি দেখে টার্মিনেটরমার্কা ভাস্কর্য মনে হবার আর কী কারণ থাকতে পারে !

যেখানে বেদনার ছোঁয়া নেই, সেখানে আবেগ আসলেই অথর্ব হয়ে যায়।

আগামী প্রজন্মের যেন শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদেরকে ভুলে না যায়, তারই স্মারক হিসেবে স্থাপিত এই ভাস্কর্যটির প্রকৃত উদ্দেশ্য আগামীতে কতোটা সার্থক হবে, আপনার মন্তব্য থেকে সেই আশঙ্কাটা ফের চাড়া দিয়ে উঠছে বৈ কি !
এখানে 'আপনি' বলতে ব্যক্তি আপনাকে বুঝাচ্ছি না, একটা প্রজন্মকে বুঝাতে চাচ্ছি।
মন্তব্যের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

দুর্দান্ত এর ছবি

আপনি বড় মানুষ তাই দুটো কথাতেই মনের ভাবটি ধরে ফেলেছেন।

জলজ্যান্ত মুক্তিযোদ্ধাদের খেয়ে পড়ে সম্মানের সাথে বেচে থাকার ব্যাবস্থা না করে গুচ্ছের টাকা খরচ করে রাস্তার মোড়ে চকচকে স্থাপনা তৈরী করে আমার ও পরের প্রজন্মের কাছে কি বক্তব্য প্রকাশ করা হচ্ছে সেটা বুঝিনি। কিছুদিন খালি থাকবে, তারপর দেখবেন এই স্থাপনের গোড়াতে এর ছায়াতেই মুক্তিযুদ্ধের আসল অর্জন প্রকাশ করে দেবে কোন বস্তিবাসী বা ভাতওয়ালা।

হামিদুজ্জামান স্যারের তেলা মাথায় আর কত তেল? চকচকে ধাতব এই ফর্মাটাকে তিনি সরকারি বেসরকারি কত জায়গায়ই তো বেচলেন। বাড্ডায় ওয়ার্কশপ খোলার পর থেকে ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক, বংগভবন, এমনকি কারওয়ান বাজারের এক বানিজ্যিক ভবনের সবখানে তার কাজ স্থান পেয়েছে। হামিদুজ্জামান যদি চারুকলার শিক্ষক না হতেন তাহলে তার যশ কতটা হত এটা নিয়ে আমার প্রশ্ন আছে। যে প্রাতিষ্ঠান তাকে এত দিল, সেখানের শিক্ষক হিসাবে তিনি তাকে কি দিয়েছেন, তার হাত গলে প্রতি বছর গন্ডাদশেক ছাত্র বেরিয়েছে এই ক দশকে, কই তাদের কাজকে তো মোড়ে মোড়ে দেখিনা। বুড়ো না হলে বুঝি মুক্তিযুদ্ধ বোঝা যায় না?

মামুন হক এর ছবি

আমি দুর্দান্তের সাথে একমত। ভাস্কর্য স্থাপন করে পরের প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মনে করিয়ে দেবার প্রয়াসকে সরকারী তামাশা বলে মনে হয়। সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের ভরণ-পোষন তো দূরের কথা, সামান্যতম দেখাশুনাও করতে পারেনা, বা চায়না। এইসব আই ওয়াশিং ভাস্কর্য দিয়ে কী হবে? এর শতভাগের একভাগ টাকায় জিফরানের বাবার চিকিৎসা হতে পারত। অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা ফকিরের মতো দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে বেরোচ্ছে, আর নপুংসক সরকার মূর্তি বানিয়েই দেশোদ্ধার করে চলেছে। লাজ লজ্জা বলেওতো একটা শব্দ আছে বাংলায়।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।