দেশে ফেরা - ২ (শহর কথন)

রেশনুভা এর ছবি
লিখেছেন রেশনুভা (তারিখ: সোম, ১৮/০১/২০১০ - ১০:০৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


ছেলেটা একেবারে লেপ্টে আছে মায়ের সাথে, মায়ের চাদরের নীচে। অল্প কিছু তারা অথবা হয়ত চাঁদ ও তখন আকাশে ছিল। রিকশা চলছে আর আর সেই চলার শব্দকে ছাপিয়ে মাঝে মাঝে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাকও শোনা যায়। হঠাৎ হঠাৎ বেরসিক ব্যাঙও গলা মিলায় সেই সুরের সাথে। রাস্তায় কোন বাতি নেই; আশেপাশের দু’চারটা বাড়ীর আলোতেই পথচলা। হয়ত দুষ্ট ছেলের দল রাস্তার ঐ বাতিগুলোকে স্ট্যাম্প মনে করে ফিল্ডিং অনুশীলন করেছে; নয়তবা বিক্রি করে পকেট খরচ যুগিয়েছে। পথের দুপাশে নারকেল গাছের মস্ত সারি। অন্ধকারে একেবারেই মিলেমিশে গেছে; একটা থেকে আরেকটা আলাদা করা দুষ্কর। মায়ের চাদরের নীচে আধো ঘুমন্ত ঐ ছেলেটা একটু বড় হয়ে পড়েছিল এই লাইনদুটি –
“নারকেলের ঐ লম্বা মাথায় হঠাৎ দেখি কাল
ডাবের মত চাঁদ উঠেছে ঠাণ্ডা ও গোলগাল”।
প্রায় হুবহু মিল পাওয়া যায় ঐ রাতটার সাথে।

ঐ দিনটার পরে অপরিচিত এই শহরটা পরিচিত হতে থাকে ছেলেটার সাথে। কখনও বাবার হাত ধরে; আবার হয়তবা মায়ের সাথে রিকশায় বেড়িয়ে। মসৃণ রাজপথ ধরে যেতে যেতে কোন এক অমসৃণ গলিপথে, ঘুরে বেড়ায় সে। স্কুল ছুটির পরে খানিকটা সময় ঐ মেয়েটার পিছু পিছু হেঁটে আসে। পিছু নেওয়া সারাটা পথের প্রায় পুরোটা সময়ই এদিক ওদিক তাকায়। মেয়েটার বাসার সামনে এসে কখনওবা ধরা পড়ে যায় ছেলেটার চোখজোড়া, মেয়েটার কাছে। অধিকাংশ সময়ই পেয়ে আসে নির্বাক অবহেলা কখনওবা বিনিময় একটু হাসির।

একটা সময় ছেলেটা এই শহর ছেড়ে পাড়ি জমায় অন্য কোথাও। অন্য শহরেও দিব্যি মানিয়ে নেয় ও। ঘড়ির কাটাগুলোর স্থান বদল হয়, ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টে যায় এবং তারও পরে আবার নতুন ক্যালেন্ডার জায়গা নেয়, পুরোনোকে সরিয়ে। কিন্তু কিছু কিছু ভালোলাগা সবসময়ই রয়ে যায়। সময় কখনও সরিয়ে দিতে পারে না ওদের।

অনেকদিন পর ছেলেটা ফিরে আসে সেই শহরে। টুংটাং করে বেল বাজে রিকশার। ছেলেটা কান পাতে। যান্ত্রিক কোলাহলে বিরক্ত হয়। ঝিঁঝিঁ পোকা আর ব্যাঙের আবাসস্থল এখন দোপেয়ে এই অতি বুদ্ধিমান জীবের খপ্পরে। রাজপথের হলদে আলোয় ছেলেটার শার্টের রঙ অন্যরকম লাগে। যেমন অন্যরকম লাগে এই শহরের সেই জায়গাগুলোকে, মানুষগুলোকে; অন্যরকম লাগে নিজেকেও। কিন্তু ভালোলাগা কখনও বদলে যায় না।

হঠাৎ করেই এ পাড়ার লোকেরা দেখে একটা ছেলে প্রায় প্রতিদিনই মোড়ে এসে দাঁড়ায়; গলায় কখনওবা হাতে এক যন্ত্রসহ। পাশের দোকানে চা খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকেই ছেলেটা দেখে নেয় তার অতিপ্রিয় শহরটাকে। সাধ মেটে না। আরও ভাল করে দেখবার জন্যই রিকশাচালককে যেতে বলে শহরের কোন এক প্রান্তের দিকে; অনেক আগের ফেলে যাওয়া দৃশ্যগুলোকে হয়ত এখনকার সাথে মিলিয়ে নিতে চায়। যেতে যেতেই কখনও ওর রিকশাকে অতিক্রম করে যায় বেয়াড়া মোটর সাইকেলগুলো সাথে নিয়ে উচ্ছ্বসিত আরোহীদের। আবার হয়তবা রাস্তার ও প্রান্তের কোন এক রিকশায় বসে থাকা সুনয়নার সাথে চোখাচোখি হয়। ঐ এক সেকেন্ডের ভালোলাগা ওরা দু’জনেই ভুলে যায় অন্য কোন মোড়ে পৌঁছে যাওয়ার আগেই।

কিছু স্মৃতি অনেক পরিচিত; আবার বাস্তব হয়ে ধরা পড়ে তা। আবার কোন কোন স্মৃতির উৎসের মানুষগুলোকেই আজ বড্ড অপরিচিত মনে হয়। তবুও সেই স্মৃতিগুলো লালিত হয়, ভাবনার খোরাক যোগায় অলস বেলায়।

কিছু স্মৃতি এবার না হয় স্থির হয়ে তোলা থাক এই পাতায়। মিলিয়ে নেব অনেক বছর পরে, আবার সেই পথে পথে ঘুরে।

ছবি ১- খুলনা সার্কিট হাউজ
Image_001

ছবি ২- জেলখানা ঘাট
Image_002

ছবি ৩- বিভাগীয় কমিশনার ও মুখ্য মহানগর হাকিমের কার্যালয়
Image_003

ছবি ৪- নগরপিতার কার্যালয়
Image_004

ছবি ৫- হাদিস পার্কের ছোট্ট টিলা
Image_005

ছবি ৬- টিলার উপরে যেয়ে দেখা মিলল বাবার সাথে বেড়াতে আসা নাফিসার
Image_006

ছবি ৭- হাদিস পার্কের পুকুর
Image_007

ছবি ৮- খুলনা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার
Image_008

ছবি ৯- ছোট শহরের ছোট যানজট
Image_009

ছবি ১০- লঞ্চ ঘাট
Image_010

ছবি ১১- মোঃ ইকবাল আর মোঃ রানা; দেখা হয় ওদের সাথে লঞ্চ ঘাটে
Image_011

ছবি ১২- ট্রেন স্টেশন
Image_012

ছবি ১৩- শিববাড়ী মোড়
Image_013

ছবি ১৪- বিখ্যাত মুড়ির টিন
Image_014

ছবি ১৫- বেতার
Image_015

ছবি ১৬- জি.পি.ও
Image_016

ছবি ১৭- শেখ আবু নাসের স্টেডিয়াম (খুলনা বিভাগীয় স্টেডিয়াম)
Image_017

ছবি ১৮- আমার জন্মের পরের ন’মাস ছিলাম এখানকার কলোনীতে; বড় মামার বাসা
Image_018

ছবি ১৯- খুলনার মৃত শিল্প এলাকা
Image_019

ছবি ২০- বন্ধ ঝাঁপগুলোও তাই বলে
Image_020

ছবি ২১- শুধু নিজেদের চাহিদাটুকুই মেটাতে পারে শুনেছি; জাতীয় সরবারহ গ্রিডে কোন অবদান নেই
Image_021

ছবি ২২- ছোট মামার বাসা ছিল এখানেই। অনেক খেলেছি দূরের ঐ মাঠে
Image_022

ছবি ২৩- নাহ, এটা আমার কোন মামার বাসা নয় খাইছে
Image_023

ছবি ২৪- খুবি প্রবেশদ্বার
Image_024

ছবি ২৫- ভালোবেসে একাকার, গরুগুলো হতবাক [খুবি ক্যাম্পাস]
Image_025

ছবি ২৬- স্মৃতিসৌধ, গল্লামারী বধ্যভূমি
Image_026

ছবি ২৭- ঐ
Image_027

ছবি ২৮- পথে চলতে পথে চলতে …
Image_028

ছবি ২৯- এই পথ যদি না শেষ হয় … [অ্যাপ্রোচ রোড, খানজাহান আলী সেতু]
Image_029

ছবি ৩০- সোনালী ধানক্ষেত
Image_030

ছবি ৩১- সেতুর উপর
Image_031

ছবি ৩২- সন্ধ্যা নামলে পরে
Image_032

ছবি ৩৩- রাতের সেতু
Image_033

ছবি ৩৪- সেতুর উপর থেকে
Image_034

ছবি ৩৫- বাসায় ফেরার পথে, ময়লাপোতা মসজিদের মিনার
Image_035

ছবি ৩৬- এটা কী, আপনারা বলেন?
Image_036


মন্তব্য

বন্যরানা [অতিথি] এর ছবি

বাহ, এক পলকে ঘুরে এলাম খুলনা।

রেশনুভা এর ছবি

তাহলেই আমার প্রচেষ্টা সার্থক।

জুয়েইরিযাহ মউ এর ছবি

সিরিজটি চলছে বেশ বেশ বেশ হাসি
থেমে যেন না যায় হুট-হাট.. যেন হয় শেষ.....
ভালো লাগলো ছবিগুলো.......
সোনালী ধানক্ষেত আর সন্ধ্যা নামলে পরে - ছবিদুটো দারুণ।

------------------------------------------------------
জানতে হলে পথেই এসো, গৃহী হয়ে কে কবে কি পেয়েছে বলো....


-----------------------------------------------------------------------------------------------------

" ছেলেবেলা থেকেই আমি নিজেকে শুধু নষ্ট হতে দিয়েছি, ভেসে যেতে দিয়েছি, উড়িয়ে-পুড়িয়ে দিতে চেয়েছি নিজেকে। দ্বিধা আর শঙ্কা, এই নিয়েই আমি এক বিতিকিচ্ছিরি

রেশনুভা এর ছবি
ফকির লালন এর ছবি

ভালো লাগলো। সেই ছেলেবেলার পর আর যাওয়া হয়নি।

রেশনুভা এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ। সময় করে ঘুরে আসুন না কেন?

সাইফ তাহসিন এর ছবি

অসাধারন শব্দটাকে সঙ্গায়িত করে আপনার পোস্টটা, ছবিগুলোর কথা কি বলব, এখনই ক্যামেরা নিয়ে বের হয়ে যেতে ইচ্ছা করছে আপনার ছবিগুলো দেখে। এমন মন ছোঁয়া লেখা আর ছবি আরো আসুক

আর হ্যাঁ পোষ্টি লক্ষকোটি তারা

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদ্বপি গরীয়সী

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

রেশনুভা এর ছবি

সাইফ ভাই, এত প্রশংসার যোগ্য আমি না ... হাসি
ভালো থাকবেন। সামারা কে অনেক আদর।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- খুলনা রেলস্টেশনের সাইনবোর্ডটা পড়ে মাথায় টুং করে গুঁতা দিলো, 'খ'টা কোন ফন্টে লেখা? চিন্তিত

স্বর্ণকমলের রাস্তাটা মনে পড়েছে। হাতের ডান দিকে গেলেই বাসস্ট্যাণ্ড। আর হাতের বাম দিকে গেলে রাস্তার বাঁ দিকে কয়েকতলা উঁচু দালান পেরিয়ে চৌরাস্তা মোড়টা ঘুরে ডানে গেলে একটা সিনেমা হল, কী জানি নাম! এদিক থেকে গেলে চৌরাস্তার ওপাশে, ডান দিকে একটা ঝুপড়ি দেয়া রেস্টুরেন্টে খেয়েছিলাম। খাওয়ার স্বাদটা মনে নেই, ভালোই ছিলো মনেহয়। সেই একবারই গিয়েছিলাম খুলনা, দুই হাজার দুই সালে।

আপনার ছবিগুলো বেশ দারুণ হয়েছে।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

রেশনুভা এর ছবি

আপনি বলার পর আমিও দেখলাম খিয়াল কইরা। বুঝলাম না কোন ফন্টে লেখা।
চৌরাস্তা বলতে কী শিববাড়ী মোড় বুঝালেন? যদি তাই হয়, ঐটা সংগীতা সিনেমা হল।

অতিথি লেখক এর ছবি

লেখা আর ছবি, দুটুই ফাটাফাটি। ছবি-১২, ট্রেন স্টেশনে টিনের ছাউনিটা উড়ন্ত পাখীর মত, দেখতে ভাল লাগছে।

অফঃ আমার কাছে শিরোনামে "ব্রাকেট( )" ব্যবহার ভাল লাগে না। এভাবেও হতে পারে- "দেশে ফেরা- ২ | শহর কথন"। অথবা অন্য কোন স্টাইল।
(আমার একান্তই নিজের ভাবনা)
- বুদ্ধু

রেশনুভা এর ছবি

পড়েছেন আর মন্তব্য করলেন বলে অনেক ধন্যবাদ।
শিরোনামে বন্ধনীর ব্যবহার নিয়ে চিন্তা করব।

অনিকেত এর ছবি

রেশ্নুমিয়া,
"তোমার লেখা পড়ে মুগ্ধ হলাম"--এ জাতীয় বাক্যবন্ধ তোমাকে উপহার দিতে দিতে (এবং তুমিও উপহার হিসেবে পেতে পেতে) ক্লান্ত। গোদের উপর বিষফোঁড়া হয়ে জুটেছে এখন ছবি। রীতিমত ঝগড়া লেগে গেল আমার মাথায়--কোনটা বেশি ভাল এই নিয়ে---লেখাটা? নাকি ছবিগুলো?

শেষমেশ হতাশ হয়ে সিদ্ধান্ত নিলাম, তুমি আসলেই 'বিশ্রী রকমের ভাল' লেখক এবং 'ফোটক' (যে ফোটো তোলে!!)

আনন্দম!

রেশনুভা এর ছবি

অনিকেত'দা,
সত্যি বলতে আমি আপনার মন্তব্যের জন্য অধীর অপেক্ষায় থাকি এজন্য যে, দাদা এসে ঠিকই আমাকে আরো উৎসাহিত করবেন এইসব বগরবগর লেখার জন্য।
কোনদিন হতাশ করবেন না যেন।
ভালো থাকবেন বস।

দুষ্ট বালিকা এর ছবি

ভাই, ধুম করে এবার আমার ময়মনসিং এর সাথে সাতে খুলনাটাও ঘুরে আসা হলো!

সিরিজ বন্ধ যেন না হয়!

**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।

মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।

রেশনুভা এর ছবি

সবকিছুই তো একসময় বন্ধ হয়ে যায়।

তিথীডোর এর ছবি

শেষবার খুলনা গিয়েছিলাম বছর তিনেক আগে....

ছবিগুলো ফাটাফাটি!!!!

--------------------------------------------------
"সুন্দরের হাত থেকে ভিক্ষা নিতে বসেছে হৃদয়/
নদীতীরে, বৃক্ষমূলে, হেমন্তের পাতাঝরা ঘাসে..."

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

রেশনুভা এর ছবি

ঘটনা কী? আপনার জন্য তো অন্তঃর্জাল নিষিদ্ধ।
থ্যাংকুশ!!!

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

মৃত শিল্পএলাকা দেখে মন খারাপ হলো। ছবিগুলা দারুণ। শেষটা ষাটগম্বুজ না?

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

রেশনুভা এর ছবি

ঠিক। ষাটগম্বুজ এর খুদে সংস্করণ।

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

হুম, একদিন আমিও খুলনায় যাবো, বেড়াতে। চোখ টিপি আসলে ছবি দেখে হঠাৎ খুলনায় ঘুরতে ইচ্ছে হলো!
..................................................................

আমি অতো তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে চাই না;
আমার জীবন যা চায় সেখানে হেঁটে হেঁটে পৌঁছুবার সময় আছে,
পৌঁছে অনেকক্ষণ ব'সে অপেক্ষা করার সময় আছে।

রেশনুভা এর ছবি

আবার দেশে এসে নেই তাহলে ... দেঁতো হাসি

সিরাত এর ছবি

আমি বুঝি নাই এটা যে ছবি পোস্ট! এখন ঢুকে দেখি এ অবস্থা!

ছবিগুলি খুব ভাল লাগলো। বাংলাদেশের জেলা শহরগুলো নিয়ে এরকম ছবিওয়ালা পোস্ট আরো পেলে বেশ আনন্দিত হবো।

ধন্যবাদ!

রেশনুভা এর ছবি

না বুঝতে পারার দায় আমার। ট্যাগে দিতে ভুলে গেছিলাম।
ধন্যবাদ আপনাকেও।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।