এই অক্ষমতাকে কোথায় রাখি

রেজওয়ান এর ছবি
লিখেছেন রেজওয়ান (তারিখ: রবি, ২৫/১১/২০০৭ - ৬:২৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

হারিকেন সিডরের দেশ জুড়ে তান্ডবের চিত্র ইথারের মাঝ দিয়ে ভেসে আসে। কম্পিউটারের স্ক্রীনে ভয়ন্কর সব সংখ্যা, তথ্য, পরিসংখ্যান দেখি, ব্লগে লিখি, মতামত দেই বা ত্রান যোগাড়ের চেষ্টা করি। তার মাঝেও দৈনন্দিন গতানুগতিক সিডিউলের কোন পরিবর্তন হয়না। প্রবাস জীবন-ঘড়ি এভাবেই চলে।

আজ কয়েকদিন পর দেশে ফোন করলাম। বাবা জানালেন বরিশাল ও ভোলা যাচ্ছেন। পুরনো কাপড় কিছু জড়ো করেছেন এবং কিছু নগদ সাহায্য দেবেন দুর্গতদের খুঁজে বের করে। আমি মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনতে থাকলাম তার কথা যে দুর্গত লোকজন তো কাজ করতে চায়না না খালি সাহায্যের জন্যে বসে থাকে। তিনি সেখানে উপস্থিত থেকে ওদের দিয়ে বিধ্বস্ত বাড়ীর জন্য উপকরন কিনে দিয়ে তাদের দিয়ে মেরামতের কাজ করাবেন এবং দিনের কাজ শেষে টাকা দান করবেন। আমার দেহঘড়ি রিফ্লেক্সবশত: ৭১ বছর বয়সী পিতার শারীরিক সামর্থ ও নানা রোগের কথা চিন্তা করে তাকে থামাতে চায়; বলতে চায় "তুমি কেন যাবা, কাউকে দিয়ে পাঠিয়ে দাও না। এতদিন থাকার দরকার কি?"

কিন্তু আমার তখন কন্ঠরোধ হয়ে আসে। আমি তাকে আশাহত করার মতো বেয়াদবী করতে গিয়েও করি না। আমার কিছু টাকা দান করার মত ভন্ডামিও করতে বলিনা। আমি স্পষ্ট আমার অক্ষমতাটুকু দেখতে পাই।

এই বিপুল ঘুর্ণিঝড় পীড়িত লোকদের জন্যে দরকার কিছু সাহায্যের হাত যা শুধু কিছু টাকা সদকা দিয়েই দায়িত্ব এড়াবে না, নিজের পরিশ্রম দিয়ে (যে কোন প্রকারেরই হোক) সাহায্য পৌছে দেবার কাজটি করবে ও তাদের পূনর্বাসনে সাহায্য করবে।

সেরকমটি আমাদের সাধ্যের মধ্যে থাকলেও না করাটা লজ্জারই বটে। সেই লজ্জাই আমাকে আজ আমার পিতা দিয়েছেন এবং অপরাধী করেছেন।


মন্তব্য

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

একই লজ্জায় লজ্জিত হলাম আমিও।

কনফুসিয়াস এর ছবি

এরকম অসাধারণ একটা আইডিয়ার জন্যে আপনার বাবাকে সাধুবাদ জানাই। খুব ভালো বুদ্ধি। মুগ্ধ হলাম পড়ে।

-----------------------------------
যা দেখি তা-ই বলি...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

খারাপ লাগার সাথে এখন যুক্ত হল লজ্জা; এভাবে তো ভেবে দেখিনি!

দিগন্ত এর ছবি

আপনি লজ্জা পেলেও এই ঘটনা আমার কাছে অনুপ্রেরণা হয়েই রইল, আর থাকবেও অনেকদিন।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

নিঘাত তিথি এর ছবি

মনের জোর কত কিই না করা যায়। আপনার বাবা এই বয়সে না বুঝিয়ে দিলেন এই তরুণ আমাদের। অসাধারণ চিন্তাশক্তি আর উদ্যম তাঁর। হ্যাটস অফ টু হিম।
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

অতিথি লেখক এর ছবি

নাগরিক জীবনে থাকতে থাকতে নাগরিক জীবনের সুবিধাগুলো আত্মীকরণ করে নিচ্ছি। একটু অসুবিধা ভোগ করে যে দুর্গতদের সাহায্যে এগিয়ে যাবো, সেই মানসিকতাটা আমাদের আস্তে আস্তে লোপ পাচ্ছে। এসএমএসের মাধ্যমে কিছু টাকা পাঠিয়ে আমাদের দায়িত্ব শেষ করি। ভাবি একটা কিছু করা হলো।
- আপনার লেখাটি পড়ে বোধের জায়গাটি টাল খেলো আরেকবার।

গৌতম

বিবাগিনী এর ছবি

‌‌ভাল লাগলো খুব উনার কথা পড়ে। হাসি
::একাকিত্বের বিলাস আমার অনেকদিনের সাধ::

‌‌::একাকিত্বের বিলাস আমার অনেকদিনের সাধ::

মুজিব মেহদী এর ছবি

আপনার বাবার মতো এরকম মানবিকতা বোধ দ্বারা তাড়িত মানুষ আছেন বলেই না এখনো এটা ভাবা যায় যে, কেউ শেষ পর্যন্ত পুরোপুরি অসহায় নন!
...................................................................
অসংখ্য 'নেই'-এর ভিড় ঠেলে
জ্বলজ্যান্ত 'আছে' খুঁজে পাওয়া হলো আসল ফকিরি

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

৭১ বছর বয়সে আপনার পিতার যে-ধরনের বাস্তব চিন্তাধারা, উদ্যোগ আর আন্তরিক দেশপ্রেম, শ্রদ্ধায় আমার মাথা নুয়ে আসে।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।