আকাশঢাকা পাথুরে পর্বতগণ: বৃষ্টির দিন, সূর্যের দিন

রিক্তা এর ছবি
লিখেছেন রিক্তা [অতিথি] (তারিখ: বুধ, ৩০/০৪/২০১৪ - ২:৫৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আগের পর্ব

রাত গভীর হতে হতে পর্বতেরা অন্ধকারে মিলিয়ে গেল। শুধু মাঝে মাঝে ট্রেন যাওয়ার ঝিকঝিক শব্দ। শেষ রাতে ঘন্টা দুয়েক মটকা মেরে পরে থাকার পরেও ঘুম আর আসলোই না! তাই ভোর পাঁচটার সময় থেকে আজকের ভ্রমণের জন্য প্রস্তুত হতে শুরু করলাম। হোটেলের ওয়াশরুমে মিনিস্য মিনি কিছু সাবান তেল শ্যাম্পুর বোতল রাখা। অদ্ভুত সুন্দর গন্ধ তাতে। কাঁচা হলুদের সাথে লেবুর রস মিশালে যেমন হয় তেমন। গায়ে লেখা ভারবেনা। ফিরে এসে ভারবেনা গন্ধী প্রসাধণী অনেক খুঁজেও পাই নাই। সব কিছু আবার ব্যাগে ঢুকিয়ে ক্যারিওন ল্যাগেজ নিয়ে গেলাম কমপ্লিমেন্টারি ব্রেকফাস্ট করতে। গিয়ে দেখি বাঙ্গালী একা না, সবাই মাগনা পেলে আলকাতরা খায়।

ব্রেকফাস্ট অবশ্য বেশ ভালো লেগেছিল। স্ক্রাম্বল এগ, পটেটো ফ্রাই, ধোঁয়া ওঠা কফি, টোস্ট, ফ্রুট জুস, ওটমিল, সিরিয়াল ইত্যাদি ইত্যাদি দিয়ে। হোটেলের ব্রেকফাস্ট আমার সব সময়ই ভালো লাগে। আসলে নিজে তৈরী করতে নাহলে আমার সব ব্রেকফাস্টই ভালো লাগে। শুধু ব্রেকফাস্ট কেন, সব বেলার খাবারই...যাক অনেক গোপন তথ্য ফাঁস করে দিচ্ছি, এইবার থামি। তো আমরা যতটা সম্ভব ঠেসে খাওয়া দাওয়া করে যাত্রা শুরু করলাম গন্ধক পর্বতের দিকে। গতরাতের ত্রিভগ্নী পর্বত মেঘে ঢেকে গেছে। হালকা পাতলা বৃষ্টিও শুরু হলো। পথের পর্বতেরা মেঘের বোরকায় সারা শরীর ঢেকে শুধু চূড়া বের করে ভেসে আছে। পুরাকালে নাকি পর্বতগণ উড়তে পারতেন। মেঘে ভাসমান চূড়া দেখে মনে হল ঘটনা মিথ্যা নাও হতে পারে!

গন্ধক পর্বতে পৌঁছাতে পৌঁছাতে বেশ জোরেসোরে বৃষ্টি নেমে গেলো। দ্রুত গাড়ি পার্ক করে লাগোয়া গন্ডোলা স্টেশনে ঢুকে দেখি ভিতরে স্যুভেনির দোকান থেকে কাতারে কাতারে লোকজন বর্ষাতি কিনছে। আমি মাত্র বলা শুরু করলাম আমাদেরও একটা কিনা উচিত। কিন্তু কথা শেষ হওয়ার আগেই শেষটাও বিক্রি হয়ে গেলো। কাজেই কথা না বাড়ায়ে আমি শেষ ছাতির বাঁট চেপে ধরলাম। ছাতি ফ্লোরোসেন্ট সবুজ রঙের। শক্ত মজবুত গঠন, আকারেও দুইজনের জন্য যথেষ্ঠ। এক্টাই সমস্যাঃ আমাদের দুইজনের উচ্চতায় ৬.৫ ইঞ্ছির পার্থক্য থাকায় ছাতি ধরেন ভদ্রলোক। কিন্তু ভদ্রলোকের উচ্চতার সুবাদে হাঁটার গতি আমার চেয়ে বেশি। শেষ পর্যন্ত দেখা যায়, ছাতি আমাদের দুজনের কারো মাথার উপরেই না, বরং দুইজনের মাঝখানে একটা মিথিকাল স্পেস কে কভার করে। কি আর করা। গন্ডোলা স্টেশনের টিকেট আপা টিকেট কিনতে গেলে বললেন আজ না উঠাই ভালো। মেঘের কারণে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। বরং পরের দিনের আবহাওয়ার পূর্বাভাসে নাকি সব ফকফকা।

বৃষ্টি মাথায় করে দৌড় দিলাম কাছের গন্তব্য গন্ধক পর্বতের উষ্ণ প্রসবণের দিকে। পাহাড়ী বৃষ্টি সূঁইএর মত গায়ে বিঁধে যায়। আর পায়ের স্যান্ডেল কোন এক আজব কারণে পিচঢালা রাস্তায় আটকে আটকে যেতে লাগলো।উষ্ণ প্রসবণের পানি একটা স্যুইমিং পুলের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত। সাঁতার না জানায় আমরা পুলের পানির কিনারা ঘেঁসে হাতল ধরে গলা পর্যন্ত ডুব দিলাম। সে এক স্বর্গীয় অনুভূতি। অনেকটা গরম পানি। মাথার উপর ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হচ্ছে। মেঘের কারণে গন্ধক পর্বত দেখা যাচ্ছে না কিন্তু আবছা আকৃতি নিয়ে আরো রহস্যময় হয়ে উঠেছে। পানিতে হাল্কা খনিজ (সালফারই হবে) এর গন্ধ। সাথের ভদ্রলোক পানকৌড়ির মত মাথা ভাসায়ে ডুব দিয়েছে তো দিয়েছেই। কোন প্রশ্ন করলে অনেক কষ্টে এক চোখ খুলে, পাতা নাড়াচাড়া করে জবাব দেওয়ার চেষ্টা করছে। আরামের চোটে উঠি উঠি করেও প্রায় এক ঘন্টা হয়ে গেলো। শাওয়ার নেওয়ার পর উপলব্দি হলো কক্সবাজারে গেলে যেমন জামার হেমে চিরজীবনের মত বালি ফ্রি, এই পুলে নাম্লে তেমনি গন্ধকের গন্ধ। ৩/৪ ধোয়া লেগেছে গন্ধ যেতে। আর চুল কয়েক দিনের জন্য পাত্থর কঠিণ!

পরের গন্তব্য ধনুক নদী আর প্রপাত। পুরা শিক্ষা সফরের মত দেখাঃ নদী থেকে যে প্রপাত একে বারে হাতে কলমে শিক্ষা। পরিচিত অপরিচিত নাম জানা অজানা মিলিয়ে আমার খান দশেক জলপ্রপাত দেখা হয়েছে। এর মধ্যে এর এইটা মনে থাকবে বৃষ্টি জমে থাকা মেঘের আলো আধাঁরির জন্য। আর ছোটখাটো প্রপাত হওয়ার সুবিধা হচ্ছে কাছে থেকে দেখা যায়, বাস্তব বাস্তব মনে হয়। মাধব কুন্ডের ঝরনায় যেমন হাঁটু পানিতে গলা ডুবিয়ে বসে থাকতে পেরেছিলাম। টরন্টোতে থাকার সুবাদে বছরে বার ৩-৪ নায়াগ্রা ফলস দেখা হয়। এতো বিশাল যে পুরোটা একসাথে দেখতে হলে অনেক দূর থেকে বা অনেক উঁচু থেকে দেখা লাগে। তখন টেলিভিশন দেখছি এমন একটা অনুভুতি হয়, নকল নকল লাগে।

ধনুক নদীর কাছে মাউন্ট রান্ডলের গায়ে রূপকথার বিশাল রাজপ্রাসাদের মত এক বাড়ি। পরে গুগল করে নাম পেয়েছিলাম ফেয়ারমন্ট বানফ স্প্রিং রিসোর্ট। কাবিল লোকজন দেখি ঘোড়া নিয়ে খাড়া পাইন গাছের জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে সেই রিসোর্টের দিকে রওনা দিয়েছে। আমি ঘোড়ায় চড়তে পারি না, পাহাড়েও না। দীর্ঘশ্বাস ফেলে, একদিন আমিও… ভাবতে ভাবতে গাড়িতে চড়লাম।

ইতিমধ্যে মেঘে মেঘে আক্ষরিক অর্থেই অনেক বেলা হয়েছে। সকালের ঠেসে খাওয়া হজম হয়ে গেছে ঘন্টা খানেক আগে। বুদ্ধিমান দম্পতির মত সিদ্ধান্ত নিলাম লুইস (হেহে) হৃদের শহরে গিয়েই খাবো। শহরে খাবারের দোকান থাকবে নিশ্চিত। আরো বেশি নিশ্চয়তার জন্য জিপিএস এ খুঁজে দেখি লেইক লুইসের পাশেই অনেক খাবারের দোকান। জিপিএস রীতিমত একটা মলের নাম বলে ফেললো! দ্রুত রওনা দিলাম। ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময় কবিতার স্বার্থকতা প্রমাণ করে যাওয়ার পথে পর্বতগুলোকে কেমন পিজ্জা স্লাইসের মত মনে হচ্ছিল!

লেইক লুইস ক্যানাডার উচ্চতম শহর। এই তথ্যের বাংলা হল আমার শ্রবণশক্তি সেইখানে আবার কমে শূণ্যের কাছাকাছি চলে গেল। বহুকাল আগে এক চশমাধারী বন্ধু উপপাদ্য দিয়েছিলো “চোখে চশমা না থাকলে মানুষ কানে কম শোনে”। এতোদিন পর সেই উপপাদ্যের বিপরীতটাও সত্যি কিনা (কানে কম শুনলে মানুষ চোখেও কম দেখে) এই নিয়ে রীতিমত ধন্ধে পরে গেলাম। যেখানে সরগরম মল থাকার কথা সেখানে নিবিড় বন পথ। বার পাঁচ-ছয় চক্কর দেওয়ার পর মালুম হল কলিকালে জিপিএস ও কাঁচা মিথ্যা কথা বলে। অবশেষে অন্ধের মত এইদিক অইদিক ঘুরাঘুরি করে, পাহাড়ী সুঁইয়ের মত তীক্ষ্ণ আর বরফ শীতল বৃষ্টি মাথায় নিয়ে হান্টার লজ বলে এক আবাসিক হোটেলে হানা দিলাম। বৃষ্টি বিষন্ন বিকাল, ফায়ার প্লেসে আগুন জ্বলছে। কাঠের কাঠামোর জায়গায় জায়গায় এল্ক আর নানা জন্তুর মাথা বসানো। সব ওয়েটার ওয়েট্রেস রা আমাদের দেখে কমপক্ষে ৩ সাইজ লম্বা, মাথায় সোনালী চুল। কথাও বলছে ব্রিটিশ উচ্চারণে (পরে বুঝতে পেরেছিলাম সেটা অস্ট্রেলিয়ান উচ্চারণ)। পুরাই ৩০০ বছরের পুরানো আবহাওয়া। আমি মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে গেছিলাম আমরা হয় ভূতুড়ে হোটেলে ঢুকেছি অথবা খাবার/পানি/ঘুমের অভাবে অজ্ঞান হয়ে গেছি। পাহাড়ী হাঁসের মাংস খেয়ে অবশ্য ভুল ভাংলো। স্বাদ বেশি সুবিধার না। ভুতের গল্পই হোক বা স্বপ্নই হোক অবাস্তব খাবারের স্বাদ সাধারণত হয় বেহেস্তী অথবা স্বাদহীন। পচা স্বাদের খাবার খালি মাটির পৃথিবীতেই হয়। খাবার তেমন ভালো নাহলেও দামের দিক দিয়ে বেশ ভালো ছিল খেলাম।

এরপর কোনরকমে গাড়িটা আসল লুইস হৃদের (মানে এইবার হ্রদই বুঝিয়েছি, শহর না) পাশের পার্কিয়ে রেখে বিমানে কেনা সেই লাল কম্বল (হেহে আগেই বলেছিলাম আগের পর্ব পড়তে ভুলবেন না যেন) গায়ে দিয়ে গাড়ির সিট নামিয়ে দিলাম ঘুম। আধো ঘুমে ডান কাইতে ফিরে দেখি একটা পর্বত। ওমা কি তামশা, বাম কাইতের আকাশেও একটা পর্বত আঠা দিয়ে লাগানো। এইসব পর্বতের জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে ভাতঘুম (নাকি হাঁসঘুম?) মুলতবি রেখে লেকের পারে চলে গেলাম।

বানফ জ্যাস্পারের সব হ্রদই দেখতে অনেক বেশি সুন্দর। তবে কিনা অন্যসব হৃদের পাশে টেমপ্লেটের মত ২,৪,৫-১০ খানা পর্বত থাকে। লুইস হৃদের অই পারে ঠিক মাঝ বরাবর দুটো পর্বত এক বিন্দুতে মিলিত হয়েছে। একদম নিচ থেকে দুটো পর্বতের ঢাল খাড়াভাবে নাটকীয় ভাবে উপরে উঠে গেছে। দুটো পর্বত দেখতে দুইরকম। একটা একটু সবজে বেশি, গাছের জন্য। আরেকটা তুলনামূলকভাবে ন্যাড়া। নাটকীয়তার এইখানেই শেষ না। দুটো পর্বতের মধ্য দিয়ে তৃতীয় যে পর্বত দেখা যাচ্ছে সেটা আবার বরফে ঢাকা। লেকের ধার দিয়ে হাঁটার পথটা পুরাই পৃথিবী থেকে স্বর্গে যাওয়ার পথের মত। কিন্তু খুব বেশিক্ষণ সেখানে হাঁটার সৌভাগ্য হলো না। বিকাল পরে আসছে। আজি আবার জ্যাস্পার যাওয়ার কথা। এইদিক দিয়ে জ্যাস্পারের হোটেল এর রিসিপশন ফোন তুলছে না। হোটেলের চেকইন এর সময় মিস করলে কি হবে, ভয়ে সেটা চিন্তাও করতে ইচ্ছা করছে না। সাথে খাবার পানিও নাই। কাজেই অর্ধাংগ ভদ্রলোককে দিয়ে ফেরার সময় এই পথে আবার এসে হাঁটার পুনঃ পুনঃ প্রতিজ্ঞা করিয়ে রওনা দিলাম মোরাইন হৃদের দিকে।

মোরাইনের ব্যপারে খুব বেশি আর কথা বাড়াবো না। শুধু বলতে চাইঃ এই আমার জীবদ্দশায় দেখা এখন পর্যন্ত দেখা সবচেয়ে সুন্দর জায়গা। আমি এখনো নিশ্চিত না যে আমি বাস্তবে এই হ্রদ দেখেছি। হৃদের আকুয়া মেরিন রঙের পানি অথবা হৃদের ধারে সাদা বরফের কারুকার্য খচিত খান দশের কালো পাথুরে চূড়া অথবা পানিতে তাদের ছায়া কোনটারই কোন তুলনা নাই। সৌন্দর্যের ধাক্কায় ছবি তোলার কথা ভুলেই গেছিলাম। গুগল করে এর সৌন্দর্যের প্রতি সুবিচার করতে পারে এমন কোন ছবি পেলাম না। উল্লেখ্য ফেইসবুকের কল্যাণে একজন সচলের তোলা মোরাইনের বড় সুন্দর একটা ছবি দেখেছিলাম। তিনি যদি কখনো তার ভ্রমণের ব্লগ দেন তো ছবিটা দিবেন আশা করি।

এইবার গাট্টি বোঁচকা তুলে সোজা চললাম জ্যাস্পারের দিকে। কিন্তু আমাদের জিপিএস আবার ভেল্কি দেখানো শুরু করলো। মাত্র ৩০০ কিলোমিটারের পথকে কেন ১২০০ কিলোমিটার ঘুরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে সেটা তখন কিছুতেই বুঝতে পারলাম না। পরে আবিস্কার করেছিলাম টোল রাস্তা বাদ দেওয়ার অপশন দেওয়া ছিল। পার্কে ঢুকার ১৫ ডলার বাঁচাতেই তার এই আপ্রাণ চেষ্টা। বুঝলাম বিভিন্ন গ্রাফ রিলেটেড অ্যালগোরিদম সমাধাণে একেবারে সিদ্ধহস্ত হলেও ১২০০ কিলোমিটার তেলের দাম বের করার গুন অংক এর জানা নাই।

গুগল ম্যাপ দেখার আশাও দুরাশা। মোবাইলে নেটওয়ার্ক নাই। সাথে খাবার নাই পানি নাই। বন্যার কারণে রাস্তা বন্ধ পাওয়ার আশংকা আর চেকিং এর আগেই হোটেল এর রিসিপশন বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয় ইত্যাদি নিয়ে দুরুদুরু বক্ষে আগে দেখা গুগল ম্যাপের স্মৃতিকে সম্বল করে ভদ্রলোক গাড়ি স্টার্ট দিলেন। ইতিমধ্যে বৃষ্টি কমে সূর্য মেঘের আড়াল থেকে বের হয়ে এসেছে। বিকালের আলোয় অনেক দূরে বরফ ছিটানো পর্বত চূড়া গুলো কষ্টিপাথরে রূপার অলংকারের মত ঝকমক করছে। যতদূর চোখ যায় আসেপাশে কোন গাড়ি মানুষজন মানুষের কোন চিনহ নাই। বিশাল বিশাল পর্বতের উপত্যকা দিয়ে যাওয়া হাইওয়েও অনেক ঘুরানো, আঁকাবাঁকা। মাঝে মাঝেই সাথে চলছে নাম না জানা নদী। জায়গায় জায়গয়ায় পথের উপর পর্বতের গা বেয়ে নামা পাথরের টুকরা পরে আছে। পাশে হয়তো লেখা আভালেঞ্চে জোন। অনেক উঁচু থেকে ঝরণা দিয়ে প্রবল বেগে পানি পরছে কোথাও, এমনকি পতনের জায়গাও আমাদের নাগালের অনেক অনেক উপরে। কোথাও ঝরনা জমে বরফ অর্ধেক পথেই, কোথাও আবার শুধু পানির দাগ রেখে গেছে। মাঝে মাঝে রাস্তার একদম পাশ ঘেঁষে পর্বতমালা সারদিয়ে দাঁড়ানো। আবার কোথায় অনেকটা সমতল পেরিয়ে দূরে। সেইসব সমতলও আবার কখনো পাথরে ঢাকা, বুনোফুল, কখনো ঘন পাইন গাছের সারি দিয়ে ভরা। সেই অসীম নিস্তব্ধ, বিশাল পর্বতদের মধ্য দিয়ে আমরা ছুটে চললাম।

এইদিক দিয়ে জিপিএস এর আপা একঘেঁইয়ে গলায় তার দেখানো পথে চলার আমন্ত্রণ দিয়েই চলেছেন। বন্যার কারনে কোথাও কোথাও আসা যাওয়া মিলিয়ে একটা লেইন, তাও স্পিড লিমিট ১৫-৩০ এর বেশি না। মাঝে থামলাম কলোম্বিয়ান আইসফিল্ডে। এক পর্বতের মাথায় বরফ একস্কুপ আইস্ক্রিমের মত ঢালা সেখানে। আকাশের নীলের সাথে সাদা আর রোদের সোনালী রঙ এতো অদ্ভুত সুন্দর দেখাচ্ছিল। সময়ের অভাবে স্নোকোচে চড়ে গ্লেসিয়ার ট্যূরের আশা দুরাশাই থাক্লো।

অবশেষে অনেকটা সময় পরে আমরা শান্ত ছোট শহর জ্যাস্পারে পৌঁছালাম। সূর্য তখন ডুবে গিয়ে শুধু শেষ রশ্নির স্মৃতি রেখে গেছে।

পরের পর্ব

পুনশ্চঃ বকা হইতে বাঁচতে আমাদের সুপ্রাচীণ কালের প্রায় শূণ্য মেগা পিক্সেলের ক্যামেরার আর আমার মোবাইলে তোলা কিছু ছবি যোগ করলাম। অনেক ছবিই আমার বরের তোলা। ভদ্রলোকের জীবন যৌবন মান এর সাথে সাথে এখন ছবিতেও ভাগ বসাচ্চি শয়তানী হাসি ঝাপ্সা, বাকা, আউট অফ ফোকাস অথবা লেন্সে আংগুলওয়ালা ছবিগুলো আমার।(সুক্ষ হাতের কাজে এইজীবনেও দক্ষতা আসবে না আমার মন খারাপ)

পথে-১

ধনুক প্রপাত

ধনুক নদী

ফেয়ারমন্ট রিসোর্ট

লুইস হ্রদ

লুইস থেকে মোরাইনের পথে

কলম্বিয়ান আইসফিল্ড

জ্যাস্পারের পথে


মন্তব্য

তিথীডোর এর ছবি

এক্টাই সমস্যাঃ আমাদের দুইজনের উচ্চতায় ৬.৫ ইঞ্ছির পার্থক্য থাকায় ছাতি ধরেন ভদ্রলোক। কিন্তু ভদ্রলোকের উচ্চতার সুবাদে হাঁটার গতি আমার চেয়ে বেশি। শেষ পর্যন্ত দেখা যায়, ছাতি আমাদের দুজনের কারো মাথার উপরেই না, বরং দুইজনের মাঝখানে একটা মিথিকাল স্পেস কে কভার করে।

মাইরালা! গড়াগড়ি দিয়া হাসি

আপনার সেন্স অফ হিউমার চমৎকার! দেঁতো হাসি

ইয়ে আপু, আমাকে পালক নেন না প্লিজ.. জাস্ট এইরকম ঘোরাঘুরিগুলোতে সংগে নিলেই হবে।

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

রিক্তা এর ছবি

এক ছাতার নিচে ২ জন চলাফেরা করা একটা অসম্ভব বিষয়, বিশেষ করে আমাদের মত দুইজন। একজন মিলিটারী বিদ্যালয়ের বিধায় নিয়মতান্ত্রিক হাঁটাহাঁটি করে। আর আমার কাছে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারলেই হল, হামাগুড়ি দিয়ে যেতেও আমার তেমন আপত্তি নাই।

দত্তকের কথাটা আরেকটু আগে বললেই আমার কত কষ্ট বেঁচে যাইতো, যাই হোক এখনো সময় আছে, চিন্তা ভাবনা করে জানাবেন। তবে আমরা কিন্তু এইরকম ঘুরাঘুরি বেশি করি না। এই টা বিয়ের পাঁচ বছর উপলক্ষে ছিল।

--------------------------------
হে প্রগাঢ় পিতামহী, আজো চমৎকার?
আমিও তোমার মত বুড়ো হব – বুড়ি চাঁদটারে আমি করে দেব বেনোজলে পার
আমরা দুজনে মিলে শূন্য করে চলে যাব জীবনের প্রচুর ভাঁড়ার ।

আয়নামতি এর ছবি

দারুল লাগলো কিন্তু পড়তে! কম্বোলের কথা মনে আছে খুউব দেঁতো হাসি
আচ্ছা ওটা কী পানকৌড়ি পাখির কথা লিখেছেন নাকি?
আরো লিখুন আপু।

রিক্তা এর ছবি

ধন্যবাদ আয়নামতি! বানানটা শুধরে নিলাম।

--------------------------------
হে প্রগাঢ় পিতামহী, আজো চমৎকার?
আমিও তোমার মত বুড়ো হব – বুড়ি চাঁদটারে আমি করে দেব বেনোজলে পার
আমরা দুজনে মিলে শূন্য করে চলে যাব জীবনের প্রচুর ভাঁড়ার ।

সত্যপীর এর ছবি

ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময় কবিতার স্বার্থকতা প্রমাণ করে যাওয়ার পথে পর্বতগুলোকে কেমন পিজ্জা স্লাইসের মত মনে হচ্ছিল!

হো হো হো

পিজ্জা খাইতে খাইতেই পড়লাম। চমেতকার!

..................................................................
#Banshibir.

রিক্তা এর ছবি

হায় ক্ষুধা! হায় পিজ্জা!

বিঃদ্রঃ ১ আপনার লেখায় ইদানিং আর মন্তব্য করি না কেন জানেন তো? ১০০% ভাগ খাঁটি হিংসায়। আগে তো একটু ভাব নিয়ে বলতে পারতাম যে "আপনার লেখা দিন দিন ভালো হচ্ছে"। কিন্তু আপনি সেই লেভেল পার করেছেন অনেক আগেই। এইবার বইমেলা টারগেট নেন।

বিঃদ্রঃ আপনি যেইসব ভালো ভালো লিংক ভদ্রলোককে দিচ্ছেন, সেইগুলা সে প্রসেস না করে আমাকে ফরোয়ার্ড করতেছে। লোক্টা একটা জন্ম করপোরেট। আর আমি কামলাই রয়ে গেলুম ঃ( তবে লিংক এর জন্য একটা বিরাট ধন্যবাদ আপনার পাওনা।

--------------------------------
হে প্রগাঢ় পিতামহী, আজো চমৎকার?
আমিও তোমার মত বুড়ো হব – বুড়ি চাঁদটারে আমি করে দেব বেনোজলে পার
আমরা দুজনে মিলে শূন্য করে চলে যাব জীবনের প্রচুর ভাঁড়ার ।

অতিথি লেখক এর ছবি

বড় হয়ে একদিন আমিও যাবো হাসি

লেখা ও ছবি দুটোই মুগ্ধ হওয়ার মতো। তবে এত লম্বা বিরতি দিয়ে লেখার জন্যে পাঁচতারা দিলাম না পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

মাসুদ সজীব

রিক্তা এর ছবি

চলে আসেন, কি আছে জীবনে।

ছবির কথা বলে আর লজ্জা দিয়েন না। এত সুন্দর জায়গার এইসব ছবি দিতে আমার অনেক ভয় লাগে, কবে না ফটোগ্রাফাররা আমাকে মাইর দেয়।

--------------------------------
হে প্রগাঢ় পিতামহী, আজো চমৎকার?
আমিও তোমার মত বুড়ো হব – বুড়ি চাঁদটারে আমি করে দেব বেনোজলে পার
আমরা দুজনে মিলে শূন্য করে চলে যাব জীবনের প্রচুর ভাঁড়ার ।

দীনহিন এর ছবি

ভুতের গল্পই হোক বা স্বপ্নই হোক অবাস্তব খাবারের স্বাদ সাধারণত হয় বেহেস্তী অথবা স্বাদহীন। পচা স্বাদের খাবার খালি মাটির পৃথিবীতেই হয়। খাবার তেমন ভালো নাহলেও দামের দিক দিয়ে বেশ ভালো ছিল খেলাম।

এরকম হিউমারের ছড়াছড়ি অসম্ভব সুখপাঠ্য করেছে ভ্রমন কাহিনিটিকে!

তিথীর মত আমারও আবেদন, সঙ্গে নিন না আমাকে! দেইখেন, ঠিক ঠিক ছাতি ধরতে পারব! হাসি

.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল

রিক্তা এর ছবি

ধন্যবাদ দীনহিন। আবার গেলে আওয়াজ দিবো নে। ফ্লোরসেন্ট সবুজ ছাতিটাকে যত্ন করে রাখবো দেঁতো হাসি তবে আমরা তো আর তারেক অণু না, ৩-৪ বছর পরে পরে এমন বেড়ানোর মত সুযোগ হয় আর কি।

--------------------------------
হে প্রগাঢ় পিতামহী, আজো চমৎকার?
আমিও তোমার মত বুড়ো হব – বুড়ি চাঁদটারে আমি করে দেব বেনোজলে পার
আমরা দুজনে মিলে শূন্য করে চলে যাব জীবনের প্রচুর ভাঁড়ার ।

রিক্তা এর ছবি

ডুপ্লি ঘ্যাচাং

--------------------------------
হে প্রগাঢ় পিতামহী, আজো চমৎকার?
আমিও তোমার মত বুড়ো হব – বুড়ি চাঁদটারে আমি করে দেব বেনোজলে পার
আমরা দুজনে মিলে শূন্য করে চলে যাব জীবনের প্রচুর ভাঁড়ার ।

স্বপ্নহারা এর ছবি

মোরেইন হইলো স্বর্গ! মোরেইনে দুপুরের দিকে রঙ ধরে, অপার্থিব!

-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।