রাজনৈতিক সংগঠণ কেন করব?

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি
লিখেছেন ষষ্ঠ পাণ্ডব (তারিখ: মঙ্গল, ০৮/০৭/২০০৮ - ১০:৪৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

“One of the penalties for refusing to participate in politics is that you end up being governed by your inferiors” - Plato

বাংলাদেশের মানুষদের সবচেয়ে প্রিয় আলোচ্য বিষয় রাজনীতি। আমরা খুব ছোটবেলা থেকেই আমাদের চারপাশের মানুষদের দিনের একটা অংশ রাজনীতি নিয়ে কথা বলতে শুনি। যদিও খুব কমজনই রাজনৈতিক কর্মকান্ডে সক্রিয় অংশগ্রহন করেন। তাই প্লেটোর রাজনীতি সংক্রান্ত বিখ্যাত উক্তিটি পড়ার অনেক আগেই আমাদের মধ্যে রাজনীতি সম্পর্কে জানার আগ্রহ তৈরী হয়। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে জানার আগ্রহটা রাজনীতির পরিবর্তে রাজনৈতিক দল, রাজনৈতিক নেতা-কর্মী আর তাদের কর্ম-কান্ডের আলোচনার মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে।

রাজনীতি সম্পর্কে মৌলিক পড়া-শোনা, ইতিহাসের নিবিড় অধ্যয়ণ আর তার সাথে সম-সাময়িক ঘটনাবলী বিশ্লেষন করে নিজের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা তৈরী করার কাজটি করেন খুব কমজন। আরো কমজন সেই সচেতনতা অর্জন করার পাশাপাশি রাজনীতির চর্চা করেন। রাজনীতির চর্চা বলতে এখানে রাজনৈতিক দলের মাধ্যমে সমাজ, রাষ্ট্র বা বিশ্বের যে কোন জনগুরুত্বসম্পন্ন বিষয়ে করণীয় নির্ধারন, তার বাস্তবায়ণ, আদর্শের চর্চা ও প্রতিষ্ঠা, বৃহত্তর কল্যানার্থে জনসচেতনা তৈরী করা এবং নেতৃত্ব প্রদানকে বুঝানো হচ্ছে। রাজনীতির পরিধিটি এখানে কিছুটা সীমাবদ্ধ হয়ে পড়লেও রাজনীতি চর্চার মূল বিষয়গুলো উপেক্ষিত হচ্ছে না।

আজ থেকে ষোল বৎসর আগে যখন আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক পর্বের ছাত্র তখন ছাত্র-রাজনীতির সাথে জড়িত হয়ে পড়ি। বাংলাদেশে অবশ্য ছাত্র-রাজনীতি ভিন্ন কোন বিষয় নয়, তা জাতীয় রাজনীতির একটু ভিন্ন রূপ মাত্র। আমার এই রাজনীতি সংশ্লিষ্টতা কোন অধ্যয়ণ বা সচেতনাপ্রসূত নয়, নিতান্তই বন্ধুস্থানীয় বয়োজ্যেষ্ঠদের প্রভাবে আসা। আমার সৌভাগ্য যে আমাকে হলে সীট পাবার জন্য, কোন বিপদ থেকে উদ্ধার পাবার জন্য বা অর্থ-উপার্জনের জন্য রাজনীতিতে জড়িত হতে হয়নি। আমি যে দলটির সাথে জড়িত হই তারা বাংলাদেশে “বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের” ফেরিওয়ালা অনেকগুলি আনুবীক্ষনিক দলের একটি।

দলটির সাথে জড়িত হবার পর আমি যে সান্ত্বনাগুলো লাভ করি সেগুলো হলঃ এক, এই দলটির যে শাখার আমি সদস্য তার অধিকাংশ জন আমার প্রিয়জন। দুই, দলটি অন্ততঃ মুখে মুখে হলেও মার্কসবাদের কথা বলে (মার্কসবাদের ব্যাপারে আমার আগ্রহ ও দুর্বলতা আছে)। তিন, দলটির ঐ শাখার অধিকাংশ জন রূচিবান এবং তখনো লেখা-পড়ার চর্চা করতেন। চার, দলটি তখনো আমার অপছন্দের দলগুলোর লেজুড়বৃত্তি করত না। পাঁচ, দলটি শিবিরীয় কায়দায় নিজেদের স্বাধীন ছাত্র সংগঠণ বলে দাবী করত না, যদিও মূল সংগঠণের সাথে তাদের মত-পথের পার্থক্য ছিল দুস্তর। কারনগুলো বালখিল্য মনে হলেও আমার তখনকার বাস্তবতায় সেগুলো সত্য ছিল। এ নিয়ে আজ আমার আর কোন কুন্ঠা বা লজ্জা নেই।

বুদ্ধ যে তিন শরণ নেবার কথা বলেছেন রাজনীতি করার জন্যও সেগুলো সত্য। এখানে বুদ্ধ বা নেতৃত্বের, ধর্ম বা আদর্শের, সঙ্ঘ বা দলের শরণ নিতে হয়। ব্যক্তিগত বিশ্বাসে আমার মধ্যে সংশয়ভাব প্রবল থাকায় আমি কোনদিন নেতৃত্ব, দল বা দলের ব্যাখ্যা করা আদর্শে অবিচল আস্থা রাখতে পারিনি। তাই অচিরেই নেতৃত্ব, দল বা দলের ব্যাখ্যা করা আদর্শের সাথে আমার মত পার্থক্য প্রবল হয়ে ওঠে। আমার আশা ছিল দল আদর্শে অবিচল থেকে রণনীতি ও রণকৌশলের ক্ষেত্রে বহু মত চর্চার সুযোগ দেবে। কিন্তু আমার সে আশার গুড়ে বালি ছিল। দলটি নেতৃত্বের অন্ধ ও প্রশ্নাতীত অনুকরণপন্থী ছিল। ফলে দিনে দিনে আমি এবং আমার মত যারা ছিলেন সবাই প্রথমে কোনঠাসা এবং পরে দল থেকে ছিটকে পড়তে থাকি।

দল পরিবর্তনের কথা যে মাথায় আসে নি তা নয়। তবে ঘর পোড়া গরু আমি। তাই নতুন কোন দলে ঢোকার আগে যাচাই করে নিতে গিয়ে দেখি অন্যদের অবস্থা কম-বেশী এক রকম। তাদের অবস্থার আশু পরিবর্তনেরও সম্ভাবনা নেই। নিজের কাছাকাছি মতের লোকজন নিয়ে হয়তো নতুন দল করা যেত, তবে আমার সে সাংগঠণিক ক্ষমতা নেই।

এরপর বিপ্লবের পথ ক্রমে ক্রমে গার্হস্থ্যর দিকে বেঁকে যেতে থাকে। আমি এক সময় পুরোপুরি রাজনীতি বিবর্জিত সংসারী মানুষে পরিণত হই। কিন্তু আমি চাইলেই রাজনীতি আমাকে ছাড়বে কেন? রাজনীতি তো আমাদের জীবনে নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের মত জড়িত। অধম রাজনীতিকদের দ্বারা অবিরাম শাসিত হতে হতে মাঝে মাঝেই মনটা বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। আমি জানি স্ফুলিঙ্গের মত জ্বলে ওঠা বা হঠাৎ একটা চীৎকারে হাততালি হয়তো পাওয়া যেতে পারে তবে লাভ কিছু হয় না।

আমার কাছে বেশ অবাক লাগে যখন দেখি যথেষ্ঠ জ্ঞানী, বুদ্ধিমান ও সংবেদনশীল মানুষরাও তাদের দল বা নেতৃত্বের ভুল পদক্ষেপগুলোতেও দলের পক্ষে এঁড়ে তর্ক করেন। দলের মতকে নিজের বিবেকের উপরে স্থান দেন। আশু ফললাভকেই গুরুত্বপূর্ন মনে করেন। কখনো কখনো খোদ নিজের অস্তিত্ব, পরিচয়, ইতিহাস বা কল্যাণের বিপক্ষেও দাঁড়িয়ে যান। আরো ভয়ের কথা এই যে, এতে তারা কোন অনুশোচনায়ও ভোগেন না। ভুল রণকৌশল নিয়ে, ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে সশস্ত্র সংগ্রামের পথে জনগণকে ঠেলে দিয়ে, বিপদ দেখে পিঠটান দেন। নিজেদের ভুলের জন্য হাজার হাজার তরুন প্রান ঝরে পড়লেও তার জন্য কখনো ক্ষমা প্রার্থনার কথা পর্যন্ত ভাবেন না। ঐসব ঝরে যাওয়া তরুনদের রিক্ত পরিবারগুলোর কথা ভুলেও উচ্চারন করেন না।

প্রগতিপন্থার দাবীদার দলগুলোর বড় ব্যর্থতা জন-বিচ্ছিন্নতা এবং ভূমি-বিচ্ছিন্নতা। যুগের পর যুগ পার হয়ে গেলেও তারা জন-মানসের প্রকৃতরূপ এবং জনগণের প্রকৃত চাহিদা বুঝতে অসমর্থ। এটি কি সংবেদনহীনতা না জ্ঞান-পাপ ঠিক বুঝে উঠতে পারিনা। এর বিপরীত ধারার রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যাপারে আমার বলার কিছু নেই। তারা নিজের পেট ভরাতে এসেছেন এবং দিনে দিনে তা আরো দক্ষতার সাথে করছেন। প্রগতিপন্থার দাবীদারদের ব্যর্থতার বিপরীতে প্রতিক্রয়াশীল দলগুলো দিনে দিনে আয়তন ও সংখ্যায় ভারী হচ্ছে।

এরপর কি আমার কোন দ্বায়িত্ব থাকে না? আমার কি কিছুই করার নেই? কেউ কেউ বলেন সবার সাথে কথা বল, লেখা-লেখি কর। নিজের ভাবনাকে সবার সামনে তুলে ধর। কিন্তু এতে করে কি সামাজিক আন্দোলন তৈরী করা বা পরিবর্তনের সূচনা করা সম্ভব? বিষয়টি কি বড্ড বেশী কল্পনাশ্রয়ী হয়ে যায়না?

সংগঠণ যদি না থাকে তাহলে সৎ মানুষদের চিন্তা ও কর্মের synergic effect -টা কিভাবে পাওয়া যাবে? অনেক আশার বিপ্লবের সূচনা এবং নেতৃত্বই বা কে দেবে? প্রশ্ন হতে পারে সংগঠণ গড়ার ‘বেড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধা’র কাজটা কে বা কারা করবে?

তথ্যপ্রযুক্তির বিপ্লবের যুগে সংগঠণ গড়ে তোলার পূর্বতন ধারনাতে মৌলিক কিছু পরিবর্তন এসেছে। এখন দুই বা ততোধিক জন মানুষ পরস্পরের সামনাসামনি পরিচিত না হয়েও ভাব বা চিন্তার বিনিময় করতে পারেন। গোষ্ঠীগত চিন্তা বা উদ্যোগের জন্য ভৌত যোগাযোগ অপরিহার্য নয়। যোগাযোগের সময়ও নূন্যতম পর্যায়ে নেমে এসেছে। চিন্তার ধারাবাহিকতা রক্ষার এবং চিন্তার ভুল চিহ্নিত করার প্রক্রিয়াও সহজতর হয়ে গেছে। একই সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন অংশের মানুষ আলোচনায় অংশ নিতে পারার সুযোগ থাকায় মানবিকতা, মূল্যবোধ, নৈতিকতা ইত্যাদির সংজ্ঞা ও অবয়বেও পরিবর্তন আসছে। অঞ্চল বা জাতিভেদে সফল সংগঠণের বাহ্যিকরূপে পার্থক্য থাকলেও সংগঠণ গড়ে তোলার প্রাথমিক পর্যায়গুলো সবার জন্যই সহজতর হয়ে গেছে।

তারপরও আঞ্চলিক জনগোষ্ঠী বা রাষ্ট্রীয় জাতিগোষ্ঠীর সার্বিক উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য সৎ রাজনৈতিক সংগঠণ সহসা গড়ে উঠছেনা। মানুষের বোধের ঊন্মেষ হচ্ছে কিন্তু কার্যকর পদক্ষেপগুলো নেয়া হচ্ছেনা। ফলে রাজনীতির দূর্বৃত্তায়ণ বন্ধ হচ্ছেনা। এই পিছু হঠার বড় কারনটি হচ্ছে individualism এর প্রসার। তেমন কোন ঘোষিত মত না হয়েও শুধুমাত্র আঙ্গিক ও তাৎক্ষনিক ফল লাভের গ্ল্যামার ভিতরে ভিতরে এই মত-পথকে জনপ্রিয় করে তুলেছে। মানুষ জানে রাজনৈতিক সংগঠণ করা বা বিপ্লবের হ্যাপা না নিয়েও নূন্যতম চেষ্টা করলে আজ সে অপেক্ষাকৃত উন্নত সমাজের বাসিন্দা হতে পারে (সদস্য নয়)। বিশ্বজুড়ে আজ তাই মাইগ্রেশনের হিড়িক, যদিও মাইগ্রেশনের অন্যান্য কারনগুলো আরো আগে থেকেই আছে। অপেক্ষাকৃত উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর অধিবাসীদের নৃতাত্ত্বিক প্রোফাইলগুলো তাই প্রতিদিন একটু একটু করে পালটে যাচ্ছে।

এরপরও কিন্তু বিপ্লব বা সৎ রাজনৈতিক সংগঠণের প্রয়োজনীয়তা একটুও কমে যায় না। Heterogeneous সমাজগুলোতে আভ্যন্তরীন সংকটগুলো নতুনরূপে আরো প্রবলভাবে দেখা দিচ্ছে। “য পলায়তি স জীবতি”র ধারনা সাময়িক স্বস্তি দিলেও স্থায়ী কল্যান করতে ব্যর্থ হচ্ছে। নতুন সংকটগুলোকে পাশ কাটানোর নতুন ফন্দি-ফিকির বার করার চেয়ে সেগুলোর মুখোমুখি হওয়াটা বরং দূরদর্শীর কাজ হবে। Plato-র উক্তি তাই আজো দেশ-সমাজ নির্বিশেষে প্রাসঙ্গিক। নিজ ভূমিতে হোক আর নিজ বাসস্থানেই হোক, সংকটের মুখোমুখি দাঁড়াবার জন্য, লড়াই করবার জন্য রাজনৈতিক সংগঠণ করার কোন বিকল্প নেই। আমি রাজনীতি বুঝি না, বুঝতে চাই না, বলে পার পাবার কোন উপায় এখানে নেই।

ষষ্ঠ পান্ডব


মন্তব্য

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

প্রগতিপন্থার দাবীদার দলগুলোর বড় ব্যর্থতা জন-বিচ্ছিন্নতা এবং ভূমি-বিচ্ছিন্নতা।

এটাই হয়তো তাদের অসফলতার বড় কারণ। যে জনগোষ্ঠীর মুক্তির জন্য লড়াই, তাদের ভেতরে তারা কাজ করেন না, তাই নয়। কিন্তু ঐ জনগোষ্ঠীর জীবন ও সংস্কৃতিকে আত্মস্থ করার দার্শনিক-রাজনৈতিক টুল তারা ব্যবহার করেন না। তাদের মার্কসবাদ মোটাদাগে যুক্তিবাদ ও মানবতাবাদের মিশ্রণে গড়া, মার্কসপন্থীদের বিশ্বজোড়া অভিজ্ঞতার দেশীয়করণে তারা ব্যর্থ। দলে নের্তৃত্বের গড়নে সামন্তীয় ভক্তিবাদ বেশি প্রবল। ইত্যাকার বহুবিধ সমস্যার কথা আপনার লেখায় এসেছে।

কিন্তু একে বকাবকি করা যত প্রবল তত সবল নয়, ক্রিটিকালি এর সঙ্গে এনগেজ হওয়া। আপনার মধ্যে সেই এনগেজমেন্টের তাগিদটা দেখে ভাল লেগেছে।
বাংলাদেশে রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামানোটা আর কোনো ঐচ্ছিক ব্যাপার হয়ে নাই, দিনে দিনে ধ্বংসের পথে যাওয়া দেশ, দিনে দিনে চূড়ান্ত উপনিবেশিক দাসত্বে আটকা পড়া দেশের প্রতিটি বোধসম্পন্ন মানুষের দায়, এ থেকে উদ্ধারের চিন্তা করা। এই চিন্তার পরিশ্রম থেকেই বিদ্যমান মুক্তিকামী রাজনীতির সমস্যা ও সম্ভাবনাগুলো বেরিয়ে আসবে। সেই কাজ এখন আমাদের সামনে।

এ বিষয়ে আপনার আরো লেখা চাই।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

গৌতম এর ছবি

ফারুক ওয়াসিফের সাথে আমি অনেকটাই একমত। আমাদের বামপন্থী রাজনীতিকদের ব্যর্থতার মিছিলে আমি যে বিষয়টি নিয়ে মর্মাহত সেটি হচ্ছে- বামরাজনীতিতে আসা বিভিন্ন প্রজন্মের মানুষদের বুঝতে পারার অক্ষমতা। একটি বিষয় মেনে নিতেই হয়, সর্বোচ্চ ত্যাগতিতিক্ষা সত্ত্বেও, একেক দশকের রাজনীতি একক রকম এবং তা সময়ের পরিবর্তে নানা মাত্রায় বিকশিত হয়। বয়সী নেতৃবৃন্দ সেদিকে দৃষ্টি দিতে চান না। ফলে বামরাজনীতিতে আকৃষ্ট হয়ে যারা আসেন, তারা যখন দেখেন তাদের কৌশলের ধরনের সাথে নেতৃবৃন্দের ধরন মিলছে না তখন তারা দ্রুত হতাশ হন।

নতুন এবং পুরনো প্রজন্মের কৌশলের মধ্যে কোনটি ঠিক- সেটি বিতর্কের বিষয়। কিন্তু বামরাজনীতির তত্ত্বের মধ্যে থেকেই সেগুলোর নিরসন সম্ভব। পুরনোরাও ভুল কৌশল নিতে পারেন, নতুনরাও বিভ্রান্ত হতে পারেন। কিন্তু পুরনোরা যদি নতুনদের বিভ্রান্ত কৌশলকে উপেক্ষা করেন, তুচ্ছ করে উড়িয়ে দেন, তাহলে বামরাজনীতি বিকশিত হওয়ার সম্ভাবনাটা অপূর্ণ থেকে যায়। নতুনদের বুঝতে হবে-বুঝাতে হবে তাদের মতো করে। এই প্রজন্মের গ্যাপটা দিন দিন মারাত্মক হচ্ছে বলে আমি মনে করি।

লেখাটি কৌতুহল জন্মায়, ভাবায়। ধন্যবাদ।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

ব্লগস্পট ব্লগ ::: ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

আহমেদুর রশীদ এর ছবি

ভালো লেখা।আরো লিখুন।

---------------------------------------------------------
আমাকে ডাকে আকাশ, বোঝে মাটি হাওয়া জল
বোঝে না মানুষ আর বিনাশী মুদ্রার ছল

---------------------------------------------------------

ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
________________________________________
http://ahmedurrashid.

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আমাদের রাজনীতিবিদদের মার্কসবাদের সংজ্ঞা ফারুক ওয়াসিফ যথার্থ দিয়েছেন। সুমন চট্টোপাধ্যায় এদের বলেছিলেন “রসে-বশে কম্যুনিস্ট”। আপনার ব্যাখ্যা আমার বলার চেয়ে অনেক প্রাঞ্জল। বেশীর ভাগ মানুষ মার্কসবাদকে আর দশটা রাজনৈতিক মতবাদের মত মনে করেন। আবার অনেকের কাছে এটি ধর্মের মত। মার্কসবাদ যে অর্থনীতি-রাজনীতি-ইতিহাস-সংস্কৃতি-দর্শনের মধ্যকার অন্তঃসম্পর্ক নির্নয়, ইতিহাসকে ব্যাখ্যা এবং ভবিষ্যতের ব্যাপারে forecast করার সামাজিক বিজ্ঞান সেটি তারা মানতে পারেন না।

একজন পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্রের কাছে টলেমীর গুরুত্ব কোপার্নিকাস বা গ্যালিলিওর চেয়ে কম নয়। যদিও টলেমীর তত্ত্ব বাকীরা ভুল প্রমান করেছেন। ভৌত বিজ্ঞানে এধরনের ভুল সংশোধন হর-হামেশা হচ্ছে। এ নিয়ে পদার্থবিজ্ঞানীরা লজ্জাও পাননা বা পরস্পরকে সংশোধনবাদী বলে গালিও দেন না। সেক্ষেত্রে মার্কসবাদে স্থান বা কাল ভেদে সংজ্ঞার্থ বা ব্যাখ্যা পরিবর্তিত হলে পরস্পরকে গালাগালি করব কেন? দলই বা ভাঙবো কেন? এই পরমত সহিষ্ণুতা প্রগতিপন্থার দাবীদারদের মধ্যে এত কম কেন যে ট্রটস্কী মেক্সিকো গিয়েও প্রান বাঁচাতে পারেন না?

জ়েনারেশন গ্যাপের ব্যাপারটি গৌতম তুলে ধরেছেন বলে ধণ্যবাদ। ছোট-বড় উভয়ের কতগুলো কমন সমস্যা আছে। এক, উভয়ে নিজের ব্যাখ্যাতে অনঢ়। দুই, অধিকাংশের মধ্যে নিয়মিত লেখা-পড়া করে নিজেকে renew করার প্রবণতা নেই। তিন, নতুন ধারনাকে স্বাগতম জানানোর ব্যাপারে উভয়েই অক্ষম। ব্যাপারটা নিজে বৌ হলে শাশুড়ী খারাপ, আর নিজে শাশুড়ী হলে বৌ খারাপ এমন।

তবে যাই হোক, আমাদের নিজেদের স্বার্থেই রাজনৈতিক সংগঠণ গড়ে তোলার বা পূনর্গঠণ করার দ্বায়িত্ব থেকে নিজেদের দূরে রাখার আর উপায় নেই।

ধণ্যবাদ সবাইকে। লেখাটি পোস্ট করার সময় ভয়ে ভয়ে ছিলাম। কারন, বেশীর ভাগ পাঠক রাজনীতি বিষয়ক লেখা পছন্দ করেন না বলে আমার ধারনা। অনেকেই নিজেদের অপছন্দের কথা বলে দেন “রাজনীতি বুঝিনা” বলে। ভরসা পেলে সামনে রাজনীতি নিয়ে আরো লেখার ইচ্ছে রাখি।

================================
তোমার সঞ্চয় দিনান্তে নিশান্তে পথে ফেলে যেতে হয়


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

কীর্তিনাশা এর ছবি

@গৌতম - লেখাটি কৌতুহল জন্মায়, ভাবায়।
ঠিক। এরকম আরো লেখার দাবি রইল।
----------------------------------
সোনার স্বপ্নের সাধ পৃথিবীতে কবে আর ঝরে !

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

রাফি এর ছবি

বেশ লম্বা এবং সেইসাথে কঠিন পোষ্ট।
অনেক সময় নিল পড়তে; চমতকার লেখা।

-----------------------------------------------------------
অর্থ নয়, কীর্তি নয় ,স্বচ্ছলতা নয়-
আরো এক বিপন্ন বিস্ময়
আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভেতরে
খেলা করে;
আমাদের ক্লান্ত করে;

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

স্নিগ্ধা এর ছবি

আপনার ব্যাখ্যা বা মতবাদ ভালো লাগলো। তবে দু একটি প্রশ্ন আছে -

এখনকার এই প্রযুক্তি নির্ভর/প্রযুক্তি নির্ণায়িত সময়ে সাইবার সিভিল সোসাইটির মত রাজনৈতিক সংগঠনও কি ভৌত যোগাযোগ ছাড়াই নির্মাণ করা সম্ভব বলে আপনি বলছেন?

Heterogeneous সমাজ বলতে ঠিক কি বোঝানো হলো? Homogeneous কোন সমাজ কি আদৌ আছে নাকি?

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

সামনে রাজনীতি নিয়ে আরো লেখার ইচ্ছে রাখি।

সে আশায়ই রইলাম
*******************************************A life unexamined is not worthliving.-Socrates

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

স্নিগ্ধার প্রশ্নের উত্তরে বলছি, তথ্যপ্রযুক্তির বিপ্লবের দরুন সংগঠণ গড়ার প্রাথমিক ব্যাপারগুলো যে সহজতর হয়েছে আমি সেই কথা বলেছি। এতে অনেক পরিশ্রম ও ঝামেলা কমে তবে তা কখনোই ভৌত যোগাযোগের বিকল্প নয়। রাজনীতি মানুষকে নিয়ে, সুতরাং মানুষের মুখোমুখি না হয়ে রাজনৈতিক সংগঠণ করা সম্ভব নয়।

“Heterogeneous সমাজ” কথাটা এসেছে তার পূর্ববর্তী অনুচ্ছেদের প্রসঙ্গক্রমে। ক্রমাগত মাইগ্রেশনের ফলে অপেক্ষাকৃত উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর অধিবাসীদের নৃতাত্ত্বিক প্রোফাইলে যে বৈচিত্র্য আসছে তাকে আমি “Heterogeneous সমাজ” বুঝিয়েছি। যেমন, অদূর ভবিষ্যতের যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা বা অস্ট্রেলিয়া। ওখানকার সমাজগুলো এখনো homogeneous এই অর্থে যে অভিবাসীদের সংস্কৃতি বা রাজনীতি এখনো মূল জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি বা রাজনীতিকে চ্যালেঞ্জ করার পর্যায়ে পৌঁছায় নি। আভ্যন্তরীন সংকটগুলো সবে সেখানে মাথাচাড়া দিচ্ছে মূল জনগোষ্ঠী এবং অভিবাসী উভয়ের মধ্যে। সুতরাং যারা ভেবেছিলেন নিজ ভূমি থেকে মাইগ্রেট করে রাজনৈতিক দ্বায়িত্ব থেকে মুক্তি পেয়ে গেছেন, তারা ভুল ভেবেছিলেন।

===================================
তোমার সঞ্চয় দিনান্তে নিশান্তে পথে ফেলে যেতে হয়


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

স্নিগ্ধা এর ছবি

আগেই বলে নিচ্ছি, নিছক তর্ক করার খাতিরেই কিন্তু আমি আপনাকে প্রশ্ন করছি না। অর্থাৎ 'কুতর্ক' করার চাইতে আমার নিজের বোঝার ইচ্ছেটাই আসলে প্রধান, এখানে হাসি

আমাদের দেশে যদিও 'সুশীল সমাজ' এখন প্রায় গালির সমার্থক, কিন্তু সিভিল সোসাইটি নামক বিমূর্ত অথচ প্রয়োজনীয় এই অস্তিত্বটি এই প্রযুক্তির যুগে সাইবার মাধ্যমকে সহায় করে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের আগ্রহী নাগরিকদের কোন একটা common cause বা common ground এর ব্যাপারে একসাথে করছে। এবং এটা আরো সম্ভব হচ্ছে কারণ, এই বিশ্বায়নের যুগে জাতি-রাষ্ট্রগুলো তাদের আধিপত্য বা কর্তৃত্ব ছেঁটে ফেলতে বাধ্য হচ্ছে, বিশ্ব অর্থনীতি আর প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য। যে কারণে, অনেকে মনে করেন যে আমরা ধীরে ধীরে একধরনের global citizenship বা বিশ্বনাগরিকত্বের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। সাইবার সিভিল সোসাইটিকে সে ক্ষেত্রে আগামী দিনের প্রতিবাদ বা বদল বা নাগরিক প্রতিনিধিত্বের ক্ষেত্র হিসেবেও দেখা যায়।

আপনার লেখার পরিপ্রেক্ষিতে আমার প্রশ্নটা ছিলো - তাহলে রাজনৈতিক সংগঠনও সেভাবে হওয়া সম্ভব বলে কি আপনি মনে করেন? তৃণমূল স্তরে সংগঠন, সচেতনতা এরকম কয়েকটি ব্যাপার বাদ দিলে, সাইবার রাজনৈতিক সংগঠন কেন সম্ভব নয়? অন্তঃত জনমত, প্রতিবাদ, প্রতিনিধিত্ব, উপস্থাপনা ইত্যাদি ক্ষেত্রে?

আমার দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তরের প্রত্যুত্তরে বলি - আমেরিকার ক্ষেত্রে অন্তঃত বলতে পারি, অভিবাসীদের উপস্থিতি এবং সংস্কৃতি বেশ ভালোভাবেই এখন মূলধারার রাজনীতিকে প্রভাবিত করে। সেভাবে দেখতে গেলেও আমেরিকার সমাজ মোটেই আর heterogeneous নেই, আর নৃতাত্ত্বিক প্রোফাইল অনুযায়ী তো বহুদিন ধরেই ছিলো না।

আমার ব্যক্তিগত মত হচ্ছে কোন সমাজকে আলাদা করে heterogeneous আর বলাই যায় না (হয়তো কিছু আদিবাসী বা উপজাতীয় সমাজ ছাড়া) কারণ সমাজ মানেই
heterogeneous - তা সে নৃতাত্ত্বিক অরিজিন বা উৎস অনুযায়ী হলেও, আর শ্রেনী, লিঙ্গ, সামাজিক বিভেদ এসব তো ধরছিই না।

অতি, অতিদীর্ঘ বক্তব্যের জন্য রীতিমতো দুঃখপ্রকাশ করতে ইচ্ছে হচ্ছে হাসি

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

ষষ্ঠ পাণ্ডব, আপনার লেখার মর্ম, যাকে স্পিরিট বলা হয়_ তা আমাকে টেনেছে আমিও রাজনীতির লোক বলেই। এবং ভাবনার খুঁটিটাকে সেই মাঠের মধ্যেই পুঁতে দেখতে চাই বলে। আপনি যে, রাজনীতি নামক অধুনা বেচারাটিকে দু ঘা মেরে শুরু না করে বরং দায়িত্ব নিয়েছেন, সেটার জন্য আস্থাও বাড়লো।
এত কিছুর পরও আমি রাজনীতির মাঠকর্মীদের পক্ষ নেব। বাংলাদেশে গত এক দশকে বিপ্লবের আশা মরেছে, এখন যে কোনো বিকল্পের ভিশনটাও শিক্ষিত তরুণদের মধ্যে থেকে লোপ পাচ্ছে। সেরকম সময়ে রাজনীতির দার্শনিক ও সাংগাঠনিক দিক থেকে যারা নানানভাবে প্রতিরোধের মধ্যে আছে, তাদের বাতিল করতে পারি না। এই প্রতিরোধের কিছু দৃশ্যমান লাভও আছে।
কিন্তু যে নের্তৃত্ব আজ আছে, তাদের একদল কর্মীদের ইলিউশনের মধ্যে রাখে, আরেকদল ইউটোপিয়া দেখায়। আমি ইউটোপিয়ারও দরকার আছে মনে করি চেতনার শৈশবিক স্তরে। কিন্তু ইলিউশনটা ভাঙ্গা দরকার। নইলে সংগ্রামের বাস্তব চেহারাটা না দেখেই কেউ আশাবাদী আর কেউ হতাশার আবাদি হয়ে বসে থাকবে।
এখানে মার্কসবাদ নিয়ে যা বলা হয়, তার সঙ্গে মার্কসবাদের সম্পর্ক সামান্যই। অতএব মার্কস বেচারাকে এ তর্ক থেকে আপাতত রেহাই দিচ্ছি। তাহলে যা আছে তা কী?
এককথায় একে আমি উপনিবেশিক প্রগতির (উপনিবেশ নিজেকে প্রগতির বাহন বলেই কিন্তু জায়েজ করেছিল এবং প্রগতিবাদীরাও মেনে নিয়েছিল যে, সেসময়ে ইংরেজের কোনো বিকল্প ছিল না।) উল্টানো প্রতিক্রিয়া বলবো। আমরা একদিকে ইউরোপের গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য (ইংল্যান্ডের গণতান্ত্রিক আন্দোলন) আরেকদিকে তার নৈরাজ্যবাদী হিংসাত্মক দিক (ফরাসি বিপ্লবজাত ধারা) এ দুইয়ের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছি, এবং তারই আদলে মাওবাদী আর মস্কোবাদী সেজেছি। ফলে এখানকার ডাইনামিকসটা চোখে পড়েনি।
অন্যদিকে ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের প্রশ্নটা তারা কখনোই ফয়সালাই করেনি। ক্ষমতা+কর্তৃত্ব= এজেন্সি। এভাবে ভাবলে জনগণের কোন অংশ পরিবর্তনের সাময়িক প্রতিনিধি, তাদের ওপর রাজনীতির ভরকেন্দ্রটা খাড়া না করে, আমরা কর্তৃত্বও বৈপ্লবিক ক্ষমতাকে মধ্যবিত্তের ওপরই সাব্যস্ত করেছি। কিন্তু উপনিবেশের সৃষ্টি মধ্যবিত্ত যতক্ষণ না বিভিন্ন উতপাদনশীল শ্রেণী ও সামাজিক বর্গের সঙ্গে নিজের উপনিবেশিক সম্পর্কটাকে ঘুরিয়ে দিচ্ছে, বদলে নিচ্ছে ততক্ষণ এদের পক্ষে জনগণের এজেন্সি হয়ে ওঠা সম্ভব নয়। আমার কাছে গোড়ার সমস্যাটি এই।
যাকে গ্লোবাল সিটিজেনশিপ বলছেন, কেউ কেউ তাকে মোবাইল সিটিজেনও বলছেন। এ ব্যাপারে এই লেখাটা দেখা যায়:
http://www.eurozine.com/articles/2008-06-27-ditchev-en.html

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

স্নিগ্ধা এর ছবি

লিঙ্কটার জন্য ধন্যবাদ! খুব ভালো লেখা - কিছু ক্ষেত্রে আমার মতের সাথে পার্থক্য থাকলেও।

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

সেটাই তো শুনতে চাই। সেজন্যই তো এটা ওটা ঠেলে দিই...লেখার লোক না লিখলে চলবে কীভাবে!

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

লেখাটা যখন শেষ করি বা পোস্ট করি তখন ভাবতে পারিনি পাঠকদের কাছ থেকে এমন প্রতিক্রিয়া পাব। পাঠকের বোধ যখন লেখকের চেয়ে গভীর তখন প্রতিক্রিয়া যে এমন হবে সেটাই স্বাভাবিক। অশেষ কৃতজ্ঞতা বিশেষতঃ ফারুক ওয়াসিফ ও স্নিগ্ধার প্রতি তাদের সুচিন্তিত মতামতের জন্য যেগুলো আলাদা পোস্ট হিসেবে আসলে সম্ভবতঃ আরো বেশী পাঠক পড়তেন।

স্নিগ্ধার বর্ণিত “সাইবার রাজনৈতিক” সংগঠণের ধারনাকে আমরা বাতিল করে দিতে পারিনা। তবে রাজনীতির মূল লক্ষ্যগুলো অর্জনের জন্য সাইবার কার্যক্রম এখনো যথেষ্ঠ নয়। বিশেষতঃ বিপুল আকারে জনমত তৈরী, প্রবল প্রতিবাদ সংঘটন, সক্রিয় প্রতিনিধিত্ব, সৃজনশীল বহুমাত্রিক উপস্থাপণা এগুলোর জন্য ভৌত সংগঠণ এখনো অপরিহার্য। বিদ্যমান কাঠামোর সাথে প্রযুক্তির নয়া উদ্ভাবনগুলোর পরিমিত সমন্বয় সাধন করাতো সংগঠণের অবশ্য কর্তব্য। প্রযুক্তি তা সে ভৌত কৌশলই হোক অথবা সামাজিক কৌশলই হোক।

“বিশ্বনাগরিকত্ব” ব্যাপারটি এখনো প্রতারণামূলক বলে মনে হয়। এমন মনে হবার কারন হচ্ছে এই যে, টার্মটিকে বিভিন্ন গোষ্ঠী বিভিন্ন ভাবে নিজেদের সুবিধামত, নিজেদের দেয়া boundary condition -এর আওতায় ব্যাখ্যা করেন। এখানে স্নিগ্ধার মত সৎ চিন্তার নাগরিকরা এখনো সংখ্যালঘু, অসংগঠিত।

সমাজ ব্যাপারটিই পরম অর্থে heterogeneous। আমি টার্মটি ব্যবহার করেছিলাম অভিবাসীবহুল দেশগুলোর সামাজিক প্রোফাইলের সাথে বাকী দেশগুলোর সামাজিক প্রোফাইলের পার্থক্য বুঝানোর জন্য। আমার লেখার সীমাবদ্ধতা হচ্ছে আমি বিস্তারিত বা প্রাঞ্জল ব্যাখ্যা দেতে অক্ষম। এসমস্ত ক্ষেত্রে ফারুক ওয়াসিফ-এর মত লেখকদের ব্যাখ্যার আশা করাই ভালো।

ফারুক ওয়াসিফ, প্রথমেই বলে নেই আমি এখন কোন রাজনৈতিক সংগঠণের সাথে জড়িত নই (বিস্তারিত ব্যাখ্যা আমার মূল পোস্টে আছে)। তাই নিজেকে রাজনীতির লোক বলতে দ্বিধা হয়। আমি কোন দ্বায়িত্ব নেই নাই, তবে এব্যাপারে নিজের অন্তর্গত তাগিদগুলোকে উপেক্ষা করতে পারি না। রাজনীতির মাঠকর্মীদের প্রতি সমর্থন আমারও, তবে তার আঙ্গিকগত কিছু পরিবর্তন দরকার হয়ে পড়েছে যার কিছু কথা এই মন্তব্যর দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে বলেছি।
বিপ্লবের আশা এক নয় কমপক্ষে দুই দশক আগে মরেছে। এই অধম পান্ডব সেই মূমুর্ষু আশার মথুরা পর্বের মানুষ। আমাদের আশা ভিতরে বাইরে প্রতিদিন একটু একটু করে মরে গেছে।

বাস্তবোচিত রণকৌশল না নিলে, কাজের কাঠামো এবং টাইমফ্রেম ঠিক না করলে, ঘটনা ঘটে যাবার পর “আমিতো আগেই এমন ঈঙ্গিত দিয়েছিলাম” এমন কথা না বলে যুক্তিসঙ্গত forecaste না করলে, ইউটোপিয়া বলুন আর ইল্যুশন বলুন সবই পরিনামে হতাশা নিয়ে আসবে। আমি নিজেও কারনে-অকারনে মার্কসকে রেফার করা অপছন্দ করি।

“কিন্তু উপনিবেশের সৃষ্টি মধ্যবিত্ত যতক্ষণ না বিভিন্ন উতপাদনশীল শ্রেণী ও সামাজিক বর্গের সঙ্গে নিজের উপনিবেশিক সম্পর্কটাকে ঘুরিয়ে দিচ্ছে, বদলে নিচ্ছে ততক্ষণ এদের পক্ষে জনগণের এজেন্সি হয়ে ওঠা সম্ভব নয়। আমার কাছে গোড়ার সমস্যাটি এই।“

অসাধারণ এক মন্তব্য করেছেন আপনি। এই সমস্যাটি অনুধাবন করা হয়েছে অনেক আগেই, কিন্তু সমাধানের কৌশলটি আবিষ্কৃত হয়নি। মনে রাখতে হবে সমাধানটি সব দেশে সব সমাজে একই চেহারার হবে না। বিষয়টি নিয়ে আপনার কাছ থেকে আরো বিস্তারিত ও স্বতন্ত্র পোস্ট আশা করছি।

================================
তোমার সঞ্চয় দিনান্তে নিশান্তে পথে ফেলে যেতে হয়


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

এই লেখাটা নিয়ে এত কম আলোচনা কেন?

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

লোকে আসলে রাজনীতি নিয়ে গল্প করতে পছন্দ করে, রাজনীতি নিয়ে কথা বলতে না।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

রাজিব মোস্তাফিজ [অতিথি] এর ছবি

দুর্দান্ত লেখা। শুভাশীষ দাকে বিশেষ করে ধন্যবাদ-কারণ আপনি এতদিন পরে মন্তব্য না করলে এই অতি চমত্কার লেখা আর দুর্দান্ত মন্তব্যগুলো হয়ত কোনোদিনই পড়া হত না।

মোঃ আব্দুল হালিম এর ছবি

রাজিব ভাইকে ধন্যবাদ, এরকম একটা সাইটের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য। রাজনীতি নিয়ে গল্প, আলোচনা কোনোটাই আমার ভালো লাগতো না বেশ কিছু দিন থেকেই। কিন্তু রাজনীতি নিয়ে প্লেটোর উদ্ধৃতিটা পড়ার পর আত্মউপলব্ধির আয়নায় দেখলাম 'কথা ঠিক'! কিন্তু কি করা যায় তা না আলোচনা করে যদি শুধু তত্ত আলোচনা করা হয় তা হলে আমি আবারো হতাশ হবো। আসুন সবাই মিলে একটা কিছু করি। আসুন সবাই মিলে আলাপ করে ঠিক করি কি করা যায়।

মোঃ আব্দুল হালিম এর ছবি

রাজিব ভাইকে ধন্যবাদ, এরকম একটা সাইটের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য। রাজনীতি নিয়ে গল্প, আলোচনা কোনোটাই আমার ভালো লাগতো না বেশ কিছু দিন থেকেই। কিন্তু রাজনীতি নিয়ে প্লেটোর উদ্ধৃতিটা পড়ার পর আত্মউপলব্ধির আয়নায় দেখলাম 'কথা ঠিক'! কিন্তু কি করা যায় তা না আলোচনা করে যদি শুধু তত্ত আলোচনা করা হয় তা হলে আমি আবারো হতাশ হবো। আসুন সবাই মিলে একটা কিছু করি। আসুন সবাই মিলে আলাপ করে ঠিক করি কি করা যায়।

বোহেমিয়ান এর ছবি

অদ্ভুদ! আমার চিন্তার সাথে অনেক কিছুই মিলে গেছে!
পার্থক্য আপনি গুছিয়ে সুন্দর করে লিখেছেন, আর আপনার অভিজ্ঞতার ঝুলিও ভারি ।


আমার কাছে বেশ অবাক লাগে যখন দেখি যথেষ্ঠ জ্ঞানী, বুদ্ধিমান ও সংবেদনশীল মানুষরাও তাদের দল বা নেতৃত্বের ভুল পদক্ষেপগুলোতেও দলের পক্ষে এঁড়ে তর্ক করেন। দলের মতকে নিজের বিবেকের উপরে স্থান দেন। আশু ফললাভকেই গুরুত্বপূর্ন মনে করেন। কখনো কখনো খোদ নিজের অস্তিত্ব, পরিচয়, ইতিহাস বা কল্যাণের বিপক্ষেও দাঁড়িয়ে যান। আরো ভয়ের কথা এই যে, এতে তারা কোন অনুশোচনায়ও ভোগেন না।

এই প্যারা টাই আমার মূল কথা । আমার খুব খারাপ লাগে... যারা নেতৃস্থানীয় অবস্থানে থেকেও এই রকমটা করেন , দেশের জন্য না দলের জন্য রাজনীতি করেন ...

লোকে আসলে রাজনীতি নিয়ে গল্প করতে পছন্দ করে, রাজনীতি নিয়ে কথা বলতে না।
সম্পূর্ণ সহমত ।

একটা ছোট্ট টাইপো আছে ,সংগঠণ না সংগঠন হবার কথা ।

লেখাটা খুব ই ভালো লেগেছে ।
আপনার অন্য লেখাগুলো ও পড়ে ফেলব আশা করছি ।
__________________________
হৃদয় আমার সুকান্তময়
আচরণে নাজরুলিক !
নাম বলি বোহেমিয়ান
অদ্ভুতুড়ে ভাবগতিক !

_________________________________________
ওরে! কত কথা বলে রে!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।