ভাত নাই, কিল আছে

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি
লিখেছেন ষষ্ঠ পাণ্ডব (তারিখ: সোম, ১৮/০৮/২০০৮ - ১০:৫৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বাংলায় একটা কথা আছে “ভাত দেবার ভাতার না, কিল মারার গোঁসাই”। অর্থ ব্যাখ্যা করার কোন প্রয়োজন নেই, সবার বোধগম্য। গোটা দেশের যে সমস্ত পুরুষ এই জীবনে ভাত দেবার বদলে স্ত্রীকে কিল মেরে এসেছেন, এখন তাদের একটা উচিত শিক্ষা দেবার ব্যবস্থা করা হয়েছে। দূর্ভাগ্যবশতঃ কিলটা এখন শুধুমাত্র ঐ সমস্ত পাষন্ড পুরুষের পিঠেই পরছেনা, দেশের আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা সবার পিঠেই পরছে। “পেটে খেলে পিঠে সয়” কথাটিকে মিথ্যে প্রমাণ করে সবাই অনবরত পিঠেই খেয়ে যাচ্ছেন, পেটে দেবার আর কিছু খুঁজে পাচ্ছেন না।

একটা নতুন ব্যাপার ইদানিং যোগ হয়েছে, যা আগে একটু রেখে ঢেকে ছিল। দেশী ভাতারদের সাথে এখন বিদেশী ভাতারও যোগ হয়েছে। দেশীদের চেয়ে বিদেশীদের ফোঁসফোঁসটা একটু বেশী। তাদের কিলের ওজনটাও বেশী। তাদের সোজা-সাপ্টা কথা, “ভাত দেবনা, কাপড় দেবনা, টাকা ধার দেবনা। তবে মহাজনদের কাছ থেকে টাকা ধার নেবার শর্ত ঠিক করে দেব, সূদের হার ঠিক করে দেব। তোরা যা কিনবি তার দাম ঠিক করে দেব (অবশ্যই তা আগের চেয়ে বেশী দামে), তোরা যা বেচবি তার দামও ঠিক করে দেব (অবশ্যই তা আগের চেয়ে কম দামে)। এরপর যদি বলিস, মরে গেলাম, বাঁচলামনা; তাহলে তা তোদের দোষ”।

রাজা-জমিদাররা চিরটাকাল চোখ বন্ধ করে থাকার লোক। কিল মারা, লাথি মারার কাজ করেন সেনাপতি-কোটাল-সিপাইরা। নায়েব-দেওয়ান-আমলা-ফয়লারা করেন পেটে-ভাতে মারার কাজ। আজকাল রাজা-জমিদারদের দিন শেষ। ভাববেন না জনতন্ত্র এসে গেছে। আসলে সেনাপতি-কোটাল-সিপাইরা নায়েব-দেওয়ান-আমলা-ফয়লাদের সাথে মিলে রাজা-জমিদারদের হঠিয়ে বেশ একহাত দেখিয়ে দিয়েছেন। এসব পুরোনো গল্প সবাই জানেন, বারবার এর পূনরাবৃত্তিও দেখেছেন। তবে আজকাল নায়েব-দেওয়ান-আমলা-ফয়লাদের সাথে সিপাই-সেনাপতিদের দহরম মহরম একটু কম। কোটালও সিপাই-সেনাপতিদের উপর মহাখাপ্পা, তার বহুদিনের ন্যায্য আয়ের পথ বন্ধ বলে।

রাজারাই বলুন আর আমলা-সেনাপতিরাই বলুন সবসময়ই সবার বেশ জোর গলার দাবী হচ্ছে এখানে না খেয়ে কেউ মারা যায়নি। কেউ মারা গেলে দূর্মুখেরা অমন কথা বললেও তাদের মুখ বন্ধ করার জন্য পেটোয়া হেকিম-কবিরাজের দল আছে। তারা বলে উদরাময় বা আন্ত্রিকে মারা গেছে, সর্দি-গর্মিতে মারা গেছে ইত্যাদি ইত্যাদি। তারা যা বলে না তা হচ্ছে, মানুষ দীর্ঘদিন ধরে নিয়মিত খেতে না পেলে একটা পর্যায়ে মারাত্মক অপুষ্টির দরুন, বা খাবারের অভাবে নিয়মিত অখাদ্য খেলে ধীর বিষক্রিয়ায় তার মৃত্যু মোটামুটি নিশ্চিত। এভাবে মানুষ মরলে তাকে না খেয়ে মরাই বলে। “আমি কিছু খাই নি, মরে গেলাম, মরে গেলাম” বলে মরলেই শুধু না খেয়ে মরা হয় না। গুলি খেয়ে সাত দিন পরে মারা গেলেও তাকে “গুলি খেয়ে মরা”ই বলে। অতিরিক্ত রক্তপাতে বা হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যু বলে না।

দ্রব্যমূল্য যখন বাড়ে তখন সবার জন্যই বাড়ে। বিদেশে বাড়ে, সাথে সাথে দেশেও বাড়ে। মানুষের জীবনের মূল্য ছাড়া খুব কম জিনিষই আছে যার মূল্য কমে। আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে যে, মানুষ তার পরও শুধু সহ্যই করে যায়, বিদ্রোহ করেনা। না খেয়ে খেয়ে গায়ের জোরের সাথে সাথে মনের জোরও সম্ভবতঃ চলে যায়। অবশ্য পেটে যখন নিয়মিত ভাত দেবার কিছুটা উপায় ছিল তখনো মনের জোর বিশেষ কিছু ছিল না। তখনও সব ম্যাদামারা ছিল, মুখ বুজে সব অন্যায় সহ্য করত। লোকে অপবাদ দিত “ভেতো” বলে। ভাতের অভাবে এখনতো আর “ভেতো” বলা যাবে না। তারপরও যখন বিক্ষোভ হয় না তখন দোষটা খামাখা ভাতের উপর দেয়া কেন?

অধম পান্ডব মোটাবুদ্ধির মানুষ। সে বোঝে শুধু আগে নিয়মিত ভাত পেত, এখন নিয়মিত ভাত পায়না। উঞ্ছবৃত্তি করে যা আয় হয় তাতে আগে যেভাবে চলতে পারত এখন সেভাবে চলতে পারেনা। আয় আরো অর্ধেক বাড়লেও ব্যয় সঙ্কুলান হবে না। তা আয় অর্ধেক বাড়িয়ে দেবার মত গৌরীসেনটাই বা কোথায়? ভাতের অভাব আর তাই কোন ভাবেই মেটে না। পিঠেও সমান তালে কিল পড়তেই থাকে।


মন্তব্য

গৌতম এর ছবি

পিঠে কিল তো পড়ছে! সেটাই বা কম কী? ভাবুন- পিঠে আপনার কিল পড়ছে, আপনি চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছেন, ভাবতে থাকুন- কেউ একজন আপনার পিঠে আস্তে আস্তে কিল দিচ্ছে, জোর বাড়ছে... মনে হচ্ছে না কেউ আপনার পিঠ ম্যাসেজ করে দিচ্ছে?

যদি মনে না হয়, আপনি জীবনমান বৃদ্ধিতে মিডিয়ার ভূমিকাটা বুঝতে পারছেন না। স্যরি, আপনার মনোজগতের উপনিবেশ বদলানো ছাড়া আর কোনো উপদেশ দিতে পারছি না।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

ব্লগস্পট ব্লগ ::: ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

জুলিয়ান সিদ্দিকী এর ছবি

কিল যে পড়ছে, সেই মুঠিটাকে শক্ত হতে দিলো কারা? আমরাই তো! নাকি?
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।

___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

অত্যন্ত কুন্ঠার সাথে বলতে হচ্ছে এই লেখাটার পটভূমি নিতান্তই ব্যক্তিগত সমস্যা থেকে। গতকাল (মাসের ১৭ তারিখ) আমার এবং আমার স্ত্রীর হাত খালি হয়ে গেছে। আমাদের অবস্থা সমারসেট মমের নায়কের মত, সামনে আরো ১৬টি দিন পার করতে হবে খালি হাতে। বিদ্যুৎ মিত্রের "খালি হাতে আত্মরক্ষা" জাতীয় দাওয়াই এই সমস্যার সমাধান করতে পারবেনা।

আজকাল সবার অবস্থা এতটাই খারাপ যে কারো কাছে টাকা ধার চাওয়ার উপায় নেই। আগামী মাসগুলো (কতগুলো মাস জানি না) পার করার জন্য যদি নিজের চামড়াও বদলাতে হয় তাতেও রাজী আছি, মনোজগতের উপনিবেশ তো কোন ছার।

প্রিয় গৌতম, বলুন তারপরও কি আমার ভাতের সমস্যা মিটবে?

==================================
তোমার সঞ্চয় দিনান্তে নিশান্তে পথে ফেলে যেতে হয়


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

স্নিগ্ধা এর ছবি

লেখাটা পড়ে একটা মন্তব্য করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু এটা পড়ার পর আর কিছু লিখতে ইচ্ছে হচ্ছে না ......

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

প্রিয় স্নিগ্ধা, দয়া করে মন্তব্য করুন। কারন সমস্যাটি common, আমার একার নয়। আমাদের সমস্যার সমাধান আমদেরকেই আলোচনা করে বের করতে হবে। যারা কিল মারছে, তারা তো আর কোন কথা বলবে না। সহমর্মীরা চুপ করে থাকলে উপায় কি বলুন?
================================
তোমার সঞ্চয় দিনান্তে নিশান্তে পথে ফেলে যেতে হয়


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।