অপর পৃথিবী: তারার চারপাশে গ্রহ না থাকাটাই অস্বাভাবিক

শিক্ষানবিস এর ছবি
লিখেছেন শিক্ষানবিস (তারিখ: রবি, ১৫/০১/২০১২ - ৬:২৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আজ থেকে ২০ বছর আগেও আমরা জানতাম না যে সূর্য ছাড়া আর কোন তারার গ্রহ রয়েছে। গত শতকের নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে তথাকথিত বহির্জাগতিক গ্রহ বা বহির্গ্রহ আবিষ্কৃত হতে শুরু করে। সম্প্রতি কেপলার পৃথিবীর সমান বা তার চেয়ে কিছুটা বড় গ্রহও আবিষ্কার করতে পারছে। আজকের হিসাব অনুযায়ী: আবিষ্কৃত মোট বহির্গ্রহের সংখ্যা ৭২৩। গ্রহ আবিষ্কারের সবচেয়ে কার্যকর এবং তথাপি জনপ্রিয় পদ্ধতি দুটি হচ্ছে অরীয় বেগ (radial velocity) এবং অতিক্রমণ (transit)। যেমন, এযাবৎ আবিষ্কৃত গ্রহগুলোর ৬৬৪ টিই আবিষ্কার করা হয়েছে এই দুটি পদ্ধতির মাধ্যমে, এর মধ্যে ২০০টি অতিক্রমণ এবং বাকিগুলো অরীয় বেগ পরিমাপের মাধ্যমে। এই আবিষ্কারগুলো থেকে বিজ্ঞানীরা সিদ্ধান্ত টেনেছিলেন আকাশগঙ্গার শতকরা ১৭-৩০ ভাগ তারার চারপাশে কোন না কোন গ্রহ রয়েছে।

কিন্তু এই ১১ই জানুয়ারি বেরিয়ে এল একবিংশ শতকের সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর বিজ্ঞান সংবাদ: আমাদের এই আকাশগঙ্গায় যত তারা আছে তারচেয়ে গ্রহের সংখ্যা বেশি। আরও সঠিকভাবে বললে, তারাপ্রতি গ্রহের সংখ্যা ১.৬। কিছু তারার হয়ত কোন গ্রহ নেই, আবার কিছু তারার আছে একাধিক, যেমন আমাদের সূর্যের আছে ৮টি। এটি আবিষ্কার করেছে ইউরোপিয়ান সাউদার্ন অবজারভেটরির একদল জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানী যাদের নেতৃত্বে ছিলেন আর্নো কাসাঁ, ডানিয়েল কুবাস এবং রিচার্ড হুক। তারা গবেষণাপত্রটি প্রকাশ করেছেন বিখ্যাত বিজ্ঞান জার্নাল নেচারে (এখান থেকে পিডিএফ ডাউনলোড করা যাবে)।

বাংলাদেশের মত পুরো ইউরোপই পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধে অবস্থিত। সেই অষ্টাদশ শতকে যখন ইউরোপে আকাশ পর্যবেক্ষণবিদ্যার উন্নতি শুরু হয় তখনই জ্যোতির্বিদরা একটি সমস্যা টের পাচ্ছিলেন। তা হচ্ছে দক্ষিণ গোলার্ধ থেকে পর্যবেক্ষণের অভাব। দক্ষিণ গোলার্ধে দুরবিন স্থাপন করে বহিশ্ছায়াপথীয় পর্যবেক্ষণ প্রথম শুরু করেছিলেন উইলিয়াম হার্শেলের ছেলে জন হার্শেল। তাদের ঐতিহ্যের সূত্র ধরেই একসময় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ইউরোপিয়ান সাউদার্ন অবজারভেটরি (ESO বা ইসো) যাদের মূল পর্যবেক্ষণ শিবির দক্ষিণ আমেরিকার চিলিতে। চিলির আতাকামা মরুভূমি জ্যোতির্বিদদের হটস্পট। কারণ এটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে যেমন উঁচু, তেমনি শুষ্ক, যে কারণে বায়ুমণ্ডলের আর্দ্রতা ও প্রবাহ পর্যবেক্ষণে খুব কম ব্যাঘাত ঘটায়। আসলে এই মরুভূমি প্রমাণ করেছে উত্তর নয়, জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণের জন্য দক্ষিণ গোলার্ধই সবচেয়ে উপযোগী।


[অদূরে চেরো পারানাল পাহাড়ের চূড়ায় ভেরি লার্জ টেলিস্কোপ খ্যাত চারটি দুরবিন দৃশ্যমান, নিচে পর্যবেক্ষণ শিবির]

তো ইসো তাদের ৬ বছরের গ্রহ জরিপের ফলাফল একসাথে করে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে। আর জরিপটি চালানো হয়েছে মহাকর্ষীয় অণুলেন্সিং (gravitational microlensing) পদ্ধতিতে। প্রশ্ন হচ্ছে তথাকথিত সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি অরীয় বেগ বা অতিক্রমণ কেন ব্যবহার করা হল না। হয়নি কারণ, ঐ দুই পদ্ধতিতে এমন গ্রহগুলোই শুধু পাওয়া যায় যারা তাদের মাতৃতারার খুব নিকটে আছে। সুতরাং আগে যে বলা হয়েছিল ১৭-৩০% তারার চারদিকে গ্রহ আছে তা সংশোধন করে বলা উচিত, শতকরা ১৭-৩০ ভাগ তারার কাছাকাছি অঞ্চলে গ্রহ রয়েছে। কিন্তু অণুলেন্সিং এর মাধ্যমে ০.৫ থেকে ১০ নভো একক দূরত্বের মধ্যে সকল গ্রহ সনাক্ত করা যায়। উল্লেখ্য পৃথিবী থেকে সূর্যের গড় দূরত্বকে বলে ১ নভো একক। অণুলেন্সিং পদ্ধতি কিভাবে কাজ করে তাই দেখে নেয়া যাক প্রথমে।

আইনস্টাইনের মহাকর্ষ সূত্র বলে ভারী বস্তু তার আশেপাশে স্থানকাল বাঁকিয়ে দেয়। আলো স্থানকালের মধ্য দিয়েই চলে। তাই স্থানকাল বেঁকে গেলে আলোর গতিপথও যাবে বেঁকে। এর মাধ্যমেই জন্ম হয় লেন্সিং প্রক্রিয়ার। তারা এবং গ্রহ যেহেতু অনেক ভারি সেহেতু তারাও স্থানকাল বাঁকাতে সক্ষম, অবশ্যই গ্রহের তুলনায় তারাসৃষ্ট বক্রতা অনেক বেশি হবে কারণ তারার ভর গ্রহের তুলনায় অনেক অনেক বেশি। তো ধরুন আমরা অনেক দূরের একটি তারা দেখছি, এখন আমাদের দৃষ্টিসীমার মাঝে যদি অন্য একটি তারা এসে পড়ে তাহলে পটভূমি তারার আলো পুরোভূমির তারার কারণে বেঁকে যাবে। এ কারণে পটভূমি তারার উজ্জ্বলতা স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যায়, আর যদি পুরোভূমি তারার চারদিকে আইনস্টাইন বলয়ের কাছাকাছি কোন গ্রহ থাকে তাহলে উজ্জ্বলতা কিছু সময়ের জন্য আরও বেড়ে যায়। নিচের ছবি দুটো আশাকরি অণুলেন্সিং বোঝার জন্য যথেষ্ট হবে:

অণুলেন্সিং খুবই বিরল ঘটনা। একটি নির্দিষ্ট সময়ে প্রতি ১০ লক্ষ তারার মধ্যে মাত্র একটি এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যায়। বিজ্ঞানীরা প্রতি রাতে লক্ষ লক্ষ তারা একসাথে পর্যবেক্ষণ করতে থাকেন আলোকবক্রে কোন হেরফের ঘটে কিনা দেখার জন্য। সময়ের সাথে কোন তারার উজ্জ্বলতার হ্রাসবৃদ্ধি দেখানোর জন্য যে লেখচিত্র আঁকা হয় তারই নাম আলোকবক্র। যে তারাগুলোর আলোকবক্রে অণুলেন্সিং এর ছাপ পাওয়া যায় সেগুলো চিহ্নিত করে রাখা হয়। এমনই একটি জরিপ হচ্ছে ওগল (OGLE) বা অপটিক্যাল গ্র্যাভিটেশনাল লেন্সিং এক্সপেরিমেন্ট। এই পরীক্ষায় অনুলেন্সিং এর মাধ্যমে পাওয়া গ্রহপ্রার্থীগুলো আরেকটি গবেষক দলকে জানানো হয় যার নাম প্ল্যানেট (PLANET) বা প্রোবিং লেন্সিং অ্যানোম্যালিস নেটওয়ার্ক। পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকা অনেকগুলো দুরবিনের মাধ্যমে অনুলেন্সিং প্রার্থীগুলোকে নিবিঢ়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেন প্ল্যানেট দলের বিজ্ঞানীরা। আজকে যে খবর নিয়ে লিখছি তা ওগল-প্ল্যানেট যোগসাজোশেরই অবদান।

প্রশ্ন হচ্ছে, মাত্র কয়েকটি গ্রহ আবিষ্কার করেই বিজ্ঞানীরা কিভাবে বলে দিলেন যে সকল তারার গ্রহ আছে? এর জন্য প্রথমেই তারা ওগল-প্ল্যানেট এর গ্রহ সনাক্ত করার দক্ষতা নির্ণয় করেছেন। যদি পর্যবেক্ষণকৃত প্রতিটি তারার চারপাশে একটি করে গ্রহ থাকে তাহলে কতগুলো অণুলেন্সিং ধরা পড়বে সেটাই হিসাব করা হল প্রথমে। এই রাশিটির একটি গালভরা নাম দেয়া যেতে পারে নিরূপণ ক্ষমতা (detection efficiency)। তো ২০০২ থেকে ২০০৭ সালের মধ্যে ওগলে এবং প্ল্যানেট মিলে যতগুলো তারা পর্যবেক্ষণ করেছে তার সবগুলোরই যদি গ্রহ থাকে তাহলে আবিষ্কৃত গ্রহের সংখ্যা কত হওয়ার কথা সেটা খুব সহজেই বের করে ফেলা সম্ভব। এখন বাস্তবে যদি দেখা যায়, ঠিক ততোগুলো গ্রহই আবিষ্কৃত হয়েছে তাহলে নিচের দুটি সিদ্ধান্তের যে কোনটি টানা যায়:

১। আমরা ভয়ানক রকমের সৌভাগ্যবান।
২। আসলেই প্রতিটি তারার চারপাশে গ্রহ আছে।

স্বজ্ঞা বলে আমাদের সৌভাগ্যের ইতিহাস বিশেষ সুবিধের নয়। পরিসংখ্যান সবসময় আমাদেরকে সৌভাগ্য থেকে বাস্তবতার দিকে নিয়ে আসতে সাহায্য করে। পৃথিবীর সব কাকতালকে বৈজ্ঞানিক উপায়ে ব্যাখ্যার নামই যদি হয় পরিসংখ্যান তাহলে বলতেই হবে বিজ্ঞানের মতে আকাশগঙ্গার প্রতিটি তারার চারপাশেই গড়ে একের অধিক গ্রহ আছে। এমনকি তারা এই পরিসাংখ্যিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে কোন ভরের গ্রহের সংখ্যা কেমন হওয়া উচিত তাও হিসাব করেছেন। দেখা গেছে গ্রহের ভর যত বাড়ে সংখ্যা তত কমে, অন্য কথায়, ভারী গ্রহের তুলনায় হালকা গ্রহের সংখ্যা বেশি। সেটা সত্য হলে পৃথিবীর মত গ্রহের সংখ্যাও প্রচুর হওয়ার কথা। কোন তারার ০.৫ থেকে ১০ নভো-একক দূরত্বের মধ্যে কোন গ্রহের সংখ্যা কেমন তার সারাংশ নিচের সংখ্যাগুলো দিয়ে প্রকাশ করা যায়:

১। ১৭% তারার বৃহস্পতি-সদৃশ (০.৩ থেকে ১০ বৃহস্পতি ভরের) গ্রহ আছে
২। ৫২% তারার নেপচুন-সদৃশ (১০ থেকে ৫০ পার্থিব ভরের) গ্রহ আছে
৩। গড়ে প্রতিটি তারার চারপাশে ১.৬ টি করে গ্রহ আছে। এখানে কেবল পৃথিবীর ভরের ৫ গুণ থেকে বৃহস্পতির ভরের ১০ গুণ ভারী গ্রহদের কথা বলা হচ্ছে।

আমাদের ছায়াপথে মোট তারার সংখ্যা প্রায় ৩০,০০০ কোটি। সে হিসেবে গ্রহের সংখ্যা ৪৮,০০০ কোটি। প্রায় পঞ্চাশ হাজার কোটি গ্রহের কতগুলো প্রাণ বিকাশের উপযোগী হতে পারে এবং প্রাণ ধারণে সক্ষম গ্রহগুলোর মধ্যে কতগুলোতে বুদ্ধিমান প্রাণের বিকাশ ঘটতে পারে তা ভাবলেই গা শিউরে ওঠে। কোথায় যেন পড়েছিলাম কোন সভ্যতার পতনের একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হচ্ছে একঘেয়েমি। সেদিক থেকে বলা যায় আর যাই হোক অন্তত একঘেয়েমির জন্য আধুনিক মানব সভ্যতার পতন ঘটবে না। আমাদের একঘেয়েমি দূর করতে প্রতি দশকেই বেরিয়ে আসবে এমন সব শ্বাসরুদ্ধকর খবর।


মন্তব্য

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

আপনাকে সচলে আবার নিয়মিত দেখে খুব ভালো লাগছে। আপনার লেখা সবসময়ই প্রভূখণ্ড! গুরু গুরু

আমার জীবদ্দশায় মহাকাশীয় শ্যালকদের দেখা হয়তো পাবো না, কিন্তু খুব আশায় আছি শেষ বয়সে আমার প্রাক্তন প্রেমিকাদের নাতি নাতনীরা দৌড়ে দৌড়ে এসে জানাবে, "প্রেমিক দাদু, প্রেমিক দাদু, ক্যারাব্যারা গ্রহের ক্যারিবীয় ক্যাবলা আমাকে মিমেইল (মহাকাশীয় ইমেইল) পাঠিয়েছে!

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

সুরঞ্জনা এর ছবি

হাততালি

যদি মডুরা ছাড়েন, তাহলে নেক্সট ব্যানারটা আপনার জন্য। হাসি

............................................................................................
এক পথে যারা চলিবে তাহারা
সকলেরে নিক্‌ চিনে।

শিক্ষানবিস এর ছবি

ভাল আইডিয়া। ব্যানার হলে ভাল হবে। অগ্রীম ধন্যবাদ...

কীর্তিনাশা এর ছবি

কবে যে একটা এলিয়েনের সাথে মোলাকাত হবে !!

আক্কেলগুড়ুম করা এমন তথ্য জানানোর জন্য আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ!!

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

দ্রোহী এর ছবি

প্রভুখণ্ড বললে কম বলা হয়! নিয়মিত হওয়ার জন্য শিক্ষানবিসকে উত্তম জাঝা!!

১৯৬০ সালের বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ব্যবহার করে ফ্র্যাঙ্ক ড্রেক তার সমীকরণের সাহায্যে দেখিয়েছিলেন শুধুমাত্র আমাদের ছায়াপথেই কমপক্ষে ১০,০০০ বুদ্ধিমান প্রাণের অস্তিত্ব থাকা সম্ভব। ২০১২ সালে এসে আমরা জানলাম শুধুমাত্র আমাদের ছায়াপথেই ৪৮০০ কোটি গ্রহ আছে। এই ৪৮০০ কোটি গ্রহের মধ্যে কতগুলো গোল্ডিলকস জোনে অবস্থান করে সেটা হয়তো আগামী কয়েক বছরের ভেতরেই জানতে পারবে মানুষ। হয়তো আগামী কয়েক দশকের মধ্যেই আমাদের ছায়াপথে বহির্জাগতিক প্রাণের অস্তিত্ব নির্ণয় করতে সক্ষম হবে মানুষ।

"I, a universe of atoms, an atom in the universe." — Carl Sagan

শিক্ষানবিস এর ছবি

একটা বড় সাইজের ভুল করে ফেলছি। আমাদের ছায়াপথে তারা আসলে ৩০০ বিলিয়ন (আসলে ২০০ থেকে ৪০০ বিলিয়নের মধ্যে) অর্থাৎ ৩০,০০০ কোটি। তাই গ্রহ ৪,৮০০ কোটি নয় বরং ৪৮,০০০ কোটিদেঁতো হাসি
মাথা পাগলের মত অবস্থা। ড্রেক সমীকরণ নিয়ে বসতে হবে সিরিয়াসলি।

দ্রোহী এর ছবি

হে হে হে... আমি ও ভুল করে ফেলেছি। আমি মুখস্ত করেছি গ্যালাক্সি প্রতি গড়ে ১০০ বিলিয়ন তারা মোট গ্যালাক্সি ১৭০ বিলিয়ন +

এই জন্যই আমি লক্ষ-কোটির হিসাবে যাই না। শতক, হাজার, মিলিয়ন, বিলিয়ন লক্ষ-নিযুত-কোটির তুলনায় সোজা লাগে। চোখ টিপি

হাসিব এর ছবি

বিজ্ঞানীরা এইসব লিনিয়ার প্রেডিকশন কেন করেন? পত্রিকায় সাক্ষাতকার দেবার জন্য? স্যাম্পল সাইজ বাড়লে এই লিনিয়ার প্রেডিকশন বদলাবে এটা তো অবধারিত।

পৃথিবীর সব কাকতালকে বৈজ্ঞানিক উপায়ে ব্যাখ্যার নামই যদি হয় পরিসংখ্যান।

ইয়ে...., এইটা কে বলছে?

দ্রোহীবস কার্ল সাগানের উদ্ধৃতি ব্যবহার দিলেন। নিজেকে "সৌভাগ্যবান" ভেবে আমি রাখলাম এই ইটাখানি।

শিক্ষানবিস এর ছবি

হ্যা, অনেকে বলছেন স্যাম্পল সাইজ বাড়লে গ্রহের সংখ্যা আরও বাড়বে।
কারণ ৫ পার্থিব ভরের কম ভরের গ্রহ সনাক্ত করার মত অবস্থা বর্তমান অণুলেন্সিং এর নেই।

এটাকে লিনিয়ার প্রেডিকশন বলে উড়িয়ে দেয়া যায় না। কারণ প্রতিটি তারাই নীহারিকা অনুকল্প মেনে তৈরি হয়। অর্থাৎ, এক বিশাল আণবিক মেঘের কেবল কেন্দ্রটা তারায় পরিণত হয়, বাকি অংশ থেকে গ্রহ তৈরি না হওয়াটাই অস্বাভাবিক। এজন্য অনেক আগে থেকেই সবাই বলে আসছেন যে, গ্রহ না থাকাটা কেবলই আমাদের পর্যবেক্ষণের সীমাবদ্ধতা।

আজ থেকে ১০ বছর আগে এই খবর প্রকাশিত হলে সবাই উড়িয়ে দিত। কিন্তু কেপলারের পর্যবেক্ষণের পর সেই সুযোগ আর থাকছে না।
শুধু তারা নয়, তাত্ত্বিকদের মতে তারাবিহীন গ্রহও আছে, এদেরকে free floating planets বলে। সেক্ষেত্রে সংখ্যাটা আরও বাড়বে।

ও, আর ঐ কাকতাল বিষয়ক কথাটা কেউ বলে নাই, নিজের বানানো... দেঁতো হাসি

হাসিব এর ছবি

স্যাম্পল সাইজ বাড়লে গ্রহের সংখ্যা বাড়বে অবশ্যই। আর লিনিয়ার এস্টিমেশন উড়িয়ে দেবার কিছু না। অনেক সার্ভিস দেয় এই জিনিস। তবে আমি যেটা বলতে চেয়েছি সেটা হলো স্যামপল সাইজ বাড়ালে এরর সিরিজটাও ভিন্ন রকম হবে। আর ড্রেক সমীকরণের কথা যেইটা বললেন সেইটা একটা এসটিমেশন প্রবলেম। হাতে ড্যাটা না নিয়ে এস্টিমেশন করলে কতটা সঠিক রাস্তায় যাওয়া যাবে সেইটা বলা মুশকিল।

শিক্ষানবিস এর ছবি

হাতে ডেটা তো বাড়ছে প্রতি বছর। ড্রেক সমীকরণ দিয়ে কিছু একটা হিসাব করে আমি তো আর বলব না যে, এটাই শেষ কথা, এইগুলা একটু মজার জন্য করাই যায়, বলা যায় এখন পর্যন্ত যা জানি সে অনুযায়ী এই ফল আসছে। অণুলেন্সিং এর হিসাব ড্রেক সমীকরণকে অনেক তথ্য সরবরাহ করতে পারবে ভবিষ্যতে।

দ্রোহী এর ছবি

বিজ্ঞানীরা এইসব লিনিয়ার প্রেডিকশন কেন করেন? পত্রিকায় সাক্ষাতকার দেবার জন্য?

রোকেয়াপার নারীপ্রুশ সিরিজ পড়ে কিছু শিখতে পাল্লেন্না? বৈজ্ঞানিক জিনিসপত্র পত্রিকার পাতায় সিএসআইয়ের মত করে না লিখলে ফান্ড দেবে কীডায়, বলেন?

কবীর সুমন লোকটা সুমন চট্টোপাধ্যায় থাকাকালেই বড় ভালো ছিল।

শিক্ষানবিস এর ছবি

বৈজ্ঞানিক জিনিসপত্র পত্রিকার পাতায় সিএসআইয়ের মত করে না লিখলে ফান্ড দেবে কীডায়, বলেন?

সেটাই।

অরুন্ধতী ঝিলি এর ছবি

মহাকাশ গবেষনার মতো আজকের পৃথিবীর জন্য আপাত অগুরুত্বপূর্ন কাজটি বন্ধ রাখলেই নানামুখি পার্থিব সমস্যার সমাধান সহজ হয়ে যাবে ?
পোষ্ট করা গানটি ( ইটা ) প্রসঙ্গে বলা...... হাসি

হাসিব এর ছবি

আমার মুখটার মালিক আমি। সেইখানে কথা গুজে দিয়েন না।

অরুন্ধতী ঝিলি এর ছবি

কথা জানেওয়ালে লোকদের কথা শুনতে মন্দ লাগেনা, সে পাটকেল হোক আর মিসাইল হোক !
হাসি

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

চলুক
দুর্দান্ত! এরকম লেখা আরও আসুক।

তারেক অণু এর ছবি

চলুক দারুণ লিখেছেন।
শেষের লাইনটির সাথে ১০০% একমত হলাম না, কিন্তু দারুন উপভোগ করেছি লেখাটি।

সত্যপীর এর ছবি

অসাধারন লিখা।

বুকার মত কুশ্চেন করি একটা, এই মহাকর্ষীয় অনুলেন্সিং ব্যাপারটা দিয়ে কোন তারার সাইজ, আলোদান ক্ষমতা ও সেই তারার লাগোয়া কোন একটি গ্রহের দূরত্বও কি বের করা যায়? আমরা কি গেস্টিমেট করতে পারি ঠিক পৃথিবীর মত তাপমাত্রাওলা গ্রহের সংখ্যা কত?

দ্রোহী এর ছবি

আমি এইসবের কিছুই জানি না। পত্রপত্রিকা আর দুয়েকটা বইপত্রে যা পড়েছি তা দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করতে পারি। আমার বোঝানোটা পুরোপুরি সঠিক নাও হতে পারে:

অপেক্ষাকৃত কাছের তারাগুলোর দূরত্ব প্যারালাক্স পদ্ধতিতে নির্ণয় করা হয়। প্যারালাক্স পদ্ধতিতে পৃথিবীর কক্ষপথে দুটো ভিন্ন অবস্থান থেকে একটা গ্রহ/নক্ষত্রের সাপেক্ষে অপেক্ষাকৃত দূরবর্তী নক্ষত্রের কৌণিক বিচ্যুতি মেপে দূরত্ব বের করা যায়। সমস্যা হচ্ছে এ পদ্ধতিতে দূরত্ব বাড়ার সাথে সাথে কৌণিক বিচ্যুতি কমতে থাকে। ফলে এ পদ্ধতিতে আমাদের ছায়াপথের তারাগুলোর দূরত্ব বের করতেই হিমশিম খেতে হয়। এ সমস্যা থেকে উদ্ধার পেতে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা আরেকটা স্কেল প্রণয়ন করেন। নতুন স্কেলে তারার দূরত্ব ও আকার বের করার জন্য আপেক্ষিক ঔজ্জ্বল্য (luminosity) ব্যবহার করা হয়। কোন জানা দূরত্বে জানা আকৃতির নক্ষত্রের উজ্জ্বলতার ভিত্তিতে অজানা দূরত্বে অবস্থিত অজানা আকারের নক্ষত্রের দূরত্ব ও আকার নির্ণয় করা হয়।

তারার লাগোয়া কোন গ্রহ থাকলে গ্রহের আকর্ষণে তারাটা লাট্টুর মত দুলতে থাকে। এই দুলুনির কারণে আলোক বর্ণালীতে লোহিত সরণ - নীল সরণ (রেড শিফট -ব্লু শিফট) ঘটে। অর্থাৎ তারাটি আমাদের কাছ থেকে একবার দূরে সরে যায় আবার কাছে আসে (অনেকটা লাটিমের ঘুর্ণনের শেষ দিকে সামান্য কাত হয়ে দুলুনির মতো)।

আবার তারার চারপাশে গ্রহ আবর্তিত অবস্থায় থাকলে তারার উজ্জ্বলতার হ্রাস বৃদ্ধি ঘটে। তারপর আছে মহাকর্ষীয় লাল সরণ (আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার সূত্রানুসারে ভারি বস্তুর কাছে এলে আলোর গতি হ্রাস পায় ফলে । আলোক গতির হ্রাসের ফলে আলোক তরঙ্গের লাল সরণ ঘটে। লাল সরণের মান দেখে নক্ষত্রের প্রতিবেশে কত দূরত্বে কি পরিমাণ বস্তু আছে তা আন্দাজ করা যায়।)

এই আর কী! কিছুই আসলে বুঝাইতে পারি নাই কারণ টেকনিক্যাল জিনিস তো জনপ্রিয় ধারার বইপত্র থেকে শেখা যায় না।

 সত্যপীর এর ছবি

আপনের বুঝানোতে পাঁচতারা...আমার মত গাধামানবদের গ্যালাক্সি বুঝানো সহজ কর্ম না। মানুষ কত জানে আর আমি কত বড় বেকুব এটা যত দেখি তত অবাক হই। ধরেন আপনি এখানে তারার দুলুনিটা লাট্টুর দুলুনি দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন কি সুন্দর মাথা্য ঢুকলো। আহা আপনি যদি আমার কলেজ টিচার হইতেন। ফিজিক্স না পইড়া ফেল মারসি কারণ ক্লাসে কেউ আপনের মতন লাট্টু দিয়া বুঝায় নাই।

লিখা চালায় যান চলুক

শিক্ষানবিস এর ছবি

অনুলেন্সিং দিয়ে গ্রহের ভর নির্ণয় করা সম্ভব। কারণ গ্রহটি যত ভারী তার কারণে বক্রতাও তত বেশি হবে এবং আলোও তত বেশি বাঁকবে। পটভূমি আর পুরোভূমি তারা দুটোর উজ্জ্বলতাই যদি জানেন তাহলে গ্রহের কারণে উজ্জ্বলতা কত বাড়ছে সেটা থেকে গ্রহের ভর নির্ণয় করা সম্ভব।

তারা থেকে গ্রহটি কত দূরে আছে সেটাও জানা যাবে। কারণ এখানে আসলে দুটো লেন্সিং এর ঘটনা ঘটছে, একটা তারার কারণে (আসল আলোকবক্র দেখুন), আরেকটা গ্রহের কারণে (আসলটার উপর একটা ছোট্ট রেখা)। আসল আলোকবক্রের উপর ঠিক কোন স্থানে ছোট্ট রেখাটির অবস্থান সেখান থেকেই তারা থেকে গ্রহের দূরত্ব বলে দেয়া যায়।

লেন্সিং এর কারণে পুরোভূমি তারার চারপাশে একটি বলয় তৈরি হয় যার নাম আইনস্টাইন বলয়। একটি মাঝারি আকারের তারার ক্ষেত্রে এই বলয়ের ব্যাসার্ধ্য ২ নভো-একক। গ্রহটির অবস্থান বলয়ের সাপেক্ষে কোথায় আছে তা বোধকরি জানা সম্ভব।

আর তারার তাপমাত্রা তো অন্যভাবে এমনিতেই জানা যায় যেটা দ্রোহীদা উপ্রে বললেন।

তাই এর মাধ্যমে আসলেই পৃথিবীর মত তাপমাত্রাওয়ালা গ্রহের সংখ্যা জানা সম্ভব।

কিন্তু সমস্যা হচ্ছে অণুলেন্সিং খুবই খুবই বিরল ঘটনা। আর এত বিরল বলেই কিন্তু আকাশগঙ্গার মোট গ্রহের একটা ভাসাভাসা ধারণা দিতে এটা ব্যবহার করা গেল। অণুলেন্সিং এর মাধ্যমে এখন পর্যন্ত বোধহয় ২০ টি গ্রহও আবিষ্কার করা যায়নি।

যে ৭২৩টি গ্রহ পাওয়া গেছে তার মধ্যে মাত্র ১৩টি অণুলেন্সিং এর মাধ্যমে। এইখানে দেখুন:
- http://exoplanet.eu/catalog.php

হিমু এর ছবি

দারুণ!

তাপস শর্মা এর ছবি

চমৎকার। দ্বিতীয়বার পড়লাম। পড়তেই হল। সত্যিই একখান প্রভুখন্ড। গুরু গুরু

ফাহিম হাসান এর ছবি

শিক্ষানবিস বেশ প্রোডাক্টিভ স্পেলে আছেন। আপনারকে নিয়মিত লিখতে দেখে ভাল লাগছে।

আচ্ছা, অরীয় বেগটা কী?

শিরোনামের "পৃথিবী"তে টাইপো রয়ে গিয়েছে। হয়ত প্যারালাল বিশ্বের কোন এক শিক্ষানবিসের কীর্তি! খাইছে

শিক্ষানবিস এর ছবি

বিশাল ভুল। ঠিক করে দিলাম। অরীয় বেগ মানে radial velocity. এবার বন্ধনীর ভেতর ইংরেজিটা লিখে দিয়েছি।

উচ্ছলা এর ছবি

রবিবার সকালের শুরুটা দারুন হল আপ্নার এই ইন্টারেস্টিং লেখাটা পড়ে হাসি চলুক

চরম উদাস এর ছবি

চলুক

হিমু এর ছবি

একটা জিনিস আমি পরিষ্কার বুঝতে পারিনি। পটভূমির তারার আলো বেঁকে যাওয়ার কারণে তারার উজ্জ্বলতা বেড়ে যাবে কেন? মহাকর্ষীয় অণুলেন্সিঙের কারণে পুরোভূমির তারার চারপাশে পটভূমির তারাটির কয়েকটি বিম্ব তৈরি হয়, সেই বিম্বগুলোকে পরস্পর উপরিপাতন করলে কি ফলাফল হিসেবে পটভূমির তারার উজ্জ্বলতর একটি ছবি পাওয়া যায়? নাকি আমি ভুল বুঝলাম?

শিক্ষানবিস এর ছবি

হ্যা সেটাই, পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল বেড়ে গেলে পৃষ্ঠ উজ্জ্বলতাও বেড়ে যায়। লক্ষ্যণীয় যে, আমরা তারাটিকে তার মূল অবস্থানে দেখি না বরং মূল অবস্থানের চারদিকে বিম্বগুলো একটা বিশাল বৃত্ত তৈরি করে। এই বৃত্তকেই বলে আইনস্টাইন বলয়। তারার তুলনায় আইনস্টাইন বলয়ের মোট পৃষ্ঠ ক্ষেত্রফল বেশি, এ কারণেই উজ্জ্বলতা বেড়ে যায়।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ক্ষেত্রফল বাড়লে দৃষ্টিগ্রাহ্যতা বাড়বে সেটা ঠিক, কিন্তু উজ্জ্বলতা বাড়বে কীভাবে? ক্ষেত্রফল বাড়লে ইনটেনসিটি কমে যাবার কথা না?


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

শিক্ষানবিস এর ছবি

উজ্জ্বলতা আসলে একটা মিসলিডিং শব্দ। কিন্তু জ্যোতির্বিজ্ঞানে অনেক ব্যবহৃত হয়। আসলে হবে প্রভা বা লুমিনোসিটি।
প্রভা, L = 4*pi*(R^2)*sigma*(T^4)
এখানে R ব্যাসার্ধ্য, এটা যত বাড়বে প্রভা তত বাড়বে। প্রভা বোঝাতেই এখানে উজ্জ্বলতা শব্দটা ব্যবহার করা হয়েছে। তারাটির অন্তর্নিহিত উজ্জ্বলতা বাড়ছে না, আপেক্ষিক উজ্জ্বলতা তথা আমাদের দৃষ্টিগ্রাহ্যতাই আসলে বাড়ছে। আর দৃষ্টিগ্রাহ্য উজ্জ্বলতাই আলোকবক্রের মাধ্যমে পরিমাপ করা হয়।
তবে এটা ঠিক উজ্জ্বলতা শব্দটা লেখায় আরও ব্যাখ্যা করা দরকার ছিল। আসলে খবরটা জানানোই মূল উদ্দেশ্য হওয়ায় অণুলেন্সিং এর বিস্তারিত ব্যাখ্যায় যাইনি।

দ্রোহী এর ছবি

প্রভা দেঁতো হাসি

KamrulHasan এর ছবি

কাজটা ঠিক করলেন না বস! মন খারাপ

হাবাছেলে এর ছবি

এখানে আপেক্ষিক উজ্জ্বলতা বলতে কি পটভূমি তারার আকারের আপেক্ষিক পরিবর্তন কে বোঝানো হয়েছে? তাই যদি হয় তাহলে যখন পর্যবেক্ষক, পটভূমি এবং পুরভুমির তারাটি একই রেখায় অবস্থান করবে তখন পটভূমি তারাটিকে এর প্রাথমিক আকারের চেয়ে বড় দেখাবে কারন মূল অবস্থানের চারদিকে বিম্বগুলো একটা বিশাল বৃত্ত তৈরি করবে। তার মানে হচ্ছে পর্যবেক্ষকের দৃষ্টিতে পটভূমির তারাটির পরিধির আপেক্ষিক বৃদ্ধি ঘটবে, প্রকৃতঅর্থে উজ্জ্বলটার পরিমাণ বাড়বে না। নাকি প্রতিটি বিম্বের নিজস্ব উজ্জলতার সমষ্টি পটভূমি তারাটির উজ্জ্বলতার আপেক্ষিক বৃদ্ধি ঘটায়? ব্যাপার টা এখনও আমার কাছে একটু ঘোলাটে লাগছে যে দাদা। ওঁয়া ওঁয়া
আর প্রভা। হেহে... হাততালি

শিক্ষানবিস এর ছবি

"প্রতিটি বিম্বের নিজস্ব উজ্জলতার সমষ্টি পটভূমি তারাটির উজ্জ্বলতার আপেক্ষিক বৃদ্ধি ঘটায়"- এটা ঠিক।
তবে ব্যাপারটা জ্যোতির্বিজ্ঞানে আসলে কি সেটাই আরেকটু বিশদ বলি। একটা তারার উজ্জ্বলতা কত সেটা আমরা কিভাবে বুঝি?-
ধরেন পৃথিবীতে আমাদের একটা দুরবিন আছে। এই দুরবিনের আয়নার প্রতি একক ক্ষেত্রফলে তারাটি থেকে আসা শক্তির যতটুকু আমরা প্রতি একক সময়ে সনাক্ত করি সেটাই তার ফ্লাক্স। এখন ধরেন তারাটি থেকে প্রতি একক ক্ষেত্রফলে প্রতি একক সময়ে ফ্লাক্সের পরিমাণ ১০ (কথার কথা)।
এখন লেন্সিং এর কারণে কিন্তু যে আলোটা আমাদের দেখার কথা না সেটাই আমরা দেখতে পাচ্ছি। পুরোভূমি তারা পটভূমি তারার সামনে চলে আসার কারণে পেছনের তারা পুরোই ব্লক হয়ে যাওয়ার কথা। পটতারা থেকে যে আলো পুরোতারার গা ঘেঁষে আসছে সেটা সরলরেখা বরাবর চললে কখনোই আমাদের কাছে আসতো না। কিন্তু মহাকর্ষ সেটাকে বাঁকিয়ে আমাদের কাছে নিয়ে আসছে। দুর্বল লেন্সিং এর ক্ষেত্রে আমরা এভাবে একই তারার একাধিক হুবহু বিম্ব পাই, দুই বিম্ব থেকে আসা ফ্লাক্স কিন্তু সমান, তাই দুইটা যোগ হয়ে যাবে। এখন যদি, পৃথিবী, পটতারা আর পুরোতারা একেবারে এক লাইনে থাকে তাহলে পুরোতারার এত বেশি বিম্ব তৈরি হয় যে তারা একসাথে মিলে একটি বলয়ের মত তৈরি করে। এই বলয়েরই নাম আইনস্টাইন বলয়।
আসলে প্রভার ব্যাসার্ধ্য দিয়ে আমি উপরে যে উদাহরণ টানছি সেটা তাত্ত্বিকভাবে সত্যি হলেও এক্ষেত্রে অতোটা অর্থপূর্ণ নয়। এই বিম্বের ব্যাপারটাই বেশি অর্থবহ।

লুমিনোসিটির বাংলা ঔজ্জ্বল্য বা উজ্জ্বলতা করা যাবে না কারণ ব্রাইটনেস সেটা অধিকার করে আছে। সেক্ষেত্রে এর বাংলা হতে পারে প্রভা অথবা দীপ্তি। আমার মতে লুমিনোসিটি এবং রেডিয়েন্স এর একটাকে প্রভা আরেকটা দীপ্তি ডাকা শুরু করা যেতে পারে।
প্রভা দেঁতো হাসি

শিক্ষানবিস এর ছবি

তবে এখানে আরেকটা হিসাব আছে। উপরের ব্যাখ্যা শুনে মনে হাতে পারে তাহলে তো তারার ফ্লাক্স কয়েক শত গুণ বেড়ে যাওয়ার কথা। বাস্তবে সেটা হয় না। কারণ পটতারার পূর্ণ গ্রহণ হয়ে যাওয়ার পর তার খুব বেশি আলো লেন্সিং এর মাধ্যমে আমাদের কাছে আসতে পারে না। কিন্তু যেটুকু আসে সেটু্কুরই অনেকগুলো বিম্ব তৈরি হয়। এই বিম্বগুলো একত্রিত হয়েই ফ্লাক্স পূর্বের তুলনায় ভাল রকম বেড়ে যায়।

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

অনেক কিছুই বুঝিনি, কিন্তু অনেক কিছু জেনেছি। আপনাকে ধন্যবাদ একটা উত্তম জাঝা! পোস্টের জন্যে।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

অনিকেত এর ছবি

দুইটা জিনিস বলতে এলামঃ
১) শিক্ষা-গুরু নিয়মিত হয়েছে --তার জন্যে উত্তম জাঝা!
২) লেখাটার জন্যে গুরু গুরু

hello world এর ছবি

আর্টিকেল টা ভালই লিখেছেন। তবে একটা বড় সমসসা আছে। ইংরেজী শব্দ গুলোর (আপনার নিজের বানানো) বাংলা অনেকটা মিনিংলেস হয়ে গেছে। মূল শব্দ ইংরেজীতে রেখে দিলেই বা বাংলায় বানান করে লিখলে তা মানানসই হত। এই আর্টিকেল বাংলায় পরে তারাই বুজবে যারা আগেথেকেই ব্যাপার গুলা ভালোভাবে জানে (ইংরেজী টার্ম সহ)। তাই translation বা বাংলায় লেখার মূল উদ্দেশ্য অনেকটাই হারিয়ে গেছে !

হাসিব এর ছবি

আমার কাছে লেখাটায় ভাষার কারণে বোধগম্যতায় সমস্যা হচ্ছে এরকম মনে হয়নি। বলে রাখা ভালো আমার এই বিষয়ে কোন প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া নেই।

শিক্ষানবিস এর ছবি

সম্পূর্ণই দ্বিমত। কোন জিনিস বোঝার জন্য ইংরেজি টার্ম জানতে হয় না। ব্যাপারটা কি জিনিস সেটা বুঝলেই হয়।
যারা আগে থেকেই ইংরেজি শব্দটি জানে তার এক নিমিষেই বাংলাটা মিলিয়ে নিতে পারবে, যদি না পারে তাহলে বুঝতে হবে সে বাংলা কম জানে।
আর যারা আগে থেকে ইংরেজি শব্দটা জানে না তাদের ইংরেজি শব্দটা জানার খুব বেশি প্রয়োজনও নেই। তারা বাংলা শব্দের মাধ্যমেই ব্যাপারটার সাথে পরিচিত হবেন। জ্যোতির্বিজ্ঞানে শিখতে গিয়ে কেউ যদি বলে বাংলা শব্দগুলো তাকে ভুল পথে চালিত করছে তাহলে আমি বলব তার পদার্থবিজ্ঞান এবং বাংলা শিক্ষার মূলে সমস্যা আছে, সেটা বাংলা ভাষার সমস্যা নয়।

আমি নিজে শব্দগুলো বানিয়েছি এটা ঠিক না। কয়েকটা আমি বানিয়েছি, তাও সম্পূর্ণ প্রথাগত পদ্ধতি ব্যবহার করে। অধিকাংশ শব্দ আগে থেকেই ছিল। লিস্ট দিচ্ছি:

radial velocity - অরীয় বেগ (আমার বানানো নয়, অনেক আগে থেকেই প্রচলিত)
transit - অতিক্রমণ (আমার বানানো নয়)
gravitational microlensing - মহাকর্ষীয় অণুলেন্সিং (আমি শুধু অণু শব্দটা বানিয়েছি, মাইক্রোস্কোপ যেমন অণুবীক্ষণ হয় তেমনি মাইক্রোলেন্সিং অণুলেন্সিং হতে পারে, এটা না বোঝার কিছু নেই)
einstein ring - আইনস্টাইন বলয় (শনির বলয় শব্দটার সাথে পরিচয় আছে না?)
light curve - আলোকবক্র (এটা বানিয়েছি, কিন্তু সেটা খুবই সরল, লাইট-আলোক+কার্ভ-বক্র। লাইট কার্ভ যারা চিনেন না তারা আলোকবক্রের মাধ্যমেই চেনা শুরু করলে ক্ষতি কোথায়?)
detection efficiency - নিরূপণ ক্ষমতা (একেবারে সরল, না বোঝার কিছু দেখছি না।)

তাসনীম এর ছবি

দারুণ লাগলো।

If we are alone in the Universe, it sure seems like an awful waste of space...

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

সাত্যকি. এর ছবি

খুবই দারুণ একটা ব্যাপার এই গ্রাভিটেশনাল অণুলেন্সিং।
কয়েকটা প্রশ্ন।
আলো কোনদিকে বেঁকে যাবে সেটা কি গ্রহের গতিবেগের দিকের উপরও নির্ভর করে? কেননা পটভূমি থেকে গ্রহের ডান ও বামদিক ঘেঁষে আসা আলোকরশ্মি দুটির সুপারইম্পোজ করার জন্য যথাক্রমে বাম ও ডান দিকে বেঁকে যেতে হবে। যদি দুটি রশ্মিই একই দিকে বাঁকে, তাহলে তো লেন্সিং কাজ করার কথা না।

গ্রহের আবর্তন যে তলে হচ্ছে, নক্ষত্র এবং বীক্ষণ যন্ত্রের সংযোগ রেখা যদি সেই তলে না থাকে, (মানে গ্রহটি যদি আমাদের দৃষ্টিরেখা বরাবর কখনোই উদ্দিষ্ট নক্ষত্রটিকে আড়াল না করে), তাহলেও এই লেন্সিং ফেইল করার কথা।

ভুল বললাম?

শিক্ষানবিস এর ছবি

রশ্মি দুটো যথাক্রমে বাম ও ডান দিকেই বাঁকবে। কিন্তু সেটা গ্রহের গতির দিকের জন্য নয়। গ্রহের কারণে তার চতুর্দিকেই কিন্তু স্থানকাল বেঁকে যাচ্ছে। এই বক্র স্থানকাল দিয়ে চলার কারণে আলো বেঁকে যায়।

একটি টানটান হয়ে থাকা চাদরের উপর একটি বল রাখলে বলটি চাদরের মাঝখানে থাকবে, এতে চাদরের মাঝখানটা যাবে বেঁকে। ধরা যাক এই চাদরের এক প্রান্তে পটভূমির তারাটি আরেক প্রান্তে আমি। পটভূমি তারা থেকে আসা আলো এই চাদর বেয়ে বেয়ে আমার কাছে আসবে, তা আমি চাদরটি যেভাবেই ধরি না কেন। অর্থাৎ ভূমির সমান্তরালে রাখলেও আসবে, আবার ভূমির সাথে উল্লম্বভাবে রাখলেও আসবে। (যদিও উল্লম্ব করে ফেললে বল দিয়ে বক্রতা তৈরি করা যাবে না, তবে ধরে নেন উল্লম্বভাবে রাখা চাদরেও একই ধরণের বক্রতা আছে দেঁতো হাসি) দুই ক্ষেত্রে আলো দুই দিক দিয়ে বাঁকছে, কিন্তু সব সময়ই পটভূমি তারা থেকে আলো আমার দিকে আসছে। বোঝাতে পারলাম কিনা জানি না। আসলে ছবি না দিয়ে এটা বোঝানো সম্ভব না।

এটা ঠিক বলেছেন, এক তলে না এলে অণুলেন্সিং কোনভাবেই হবে না। আসলে ঐ যে বললাম প্রতি ১০ লক্ষে মাত্র একটি তারার অণুলেন্সিং আমরা পর্যবেক্ষণ করতে পারি, তার একটা কারণ এই এক তলে আসার ব্যাপারটা।

কল্যাণ এর ছবি

চলুক

_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩

নীড় সন্ধানী এর ছবি

চমৎকার একটি বিষয়। আমার নিজের ব্যক্তিগত পছন্দের একটা বিষয়। আগ্রহীদের শেখার জন্য চিত্রগুলো খুব দরকার ছিল। গ্রহ আবিষ্কারের এই পদ্ধতি আমার জানা ছিল না। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন জিনিস জানা হলো একটা নক্ষত্রের অভিকর্ষ বল তার পেছনের নক্ষত্রটির উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে দেয় লেন্সের মতো করে। এ যাবত আবিষ্কৃত প্রযুক্তিতে গ্রহ আবিষ্কারের এটাই সর্বোত্তম পদ্ধতি।

মজার ব্যাপার হলো বিজ্ঞান কল্পনার চেয়েও দ্রুত আগায়। খুব জ্ঞানী মানুষও ১০০ বছর আগে যা কল্পনাও করেনি, আজকে তা ডালভাত। আগামী একশো বছরে পৃথিবী কতোটুকু আগাবে তা বোধহয় আগামী পঞ্চাশ বছর পরেও বলা যাবে না। আলোর গতি অর্জন করা আজ অসম্ভব বলে জানি। হয়তো সেই সময় আলোর চেয়ে দ্রুতগতির বাহনে লোকজন গ্যালাক্সির আনাচে কানাচে ঘুরছে।

দারুণ লেখাটির জন্য আপনাকে আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- (গুড়) চলুক

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

ধুসর গোধূলি এর ছবি

আপনার কাছ থেকে খুবই নিয়মিত এসব ব্যাপারে জানতে চাই। একেবারে বিশদে। চলুক

আশালতা এর ছবি

চলুক

----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি

আউটসাইডার এর ছবি

গুরু গুরু গুরু গুরু আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- উত্তম জাঝা!

আপেক্ষিক আমি এর ছবি

উজ্জ্বলতা বাড়ার কারণটা বুঝলাম না ঠিক। চিন্তিত
লেখাটার ব্যাপারে (গুড়)

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।