কাল নিরবধি

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি
লিখেছেন সুলতানা পারভীন শিমুল (তারিখ: শুক্র, ২২/০২/২০০৮ - ১২:০৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

২২.০৮.২০০২
কলেজ ক্যাম্পাস, জায়গায় জায়গায় জটলা। কিছু ক্রুদ্ধ মন্তব্য, ” পিঁপড়া কামড়ালে তুই কি ওটাকে খুঁজে খুঁজে মারিস? একসঙ্গে পায়ে পিষে ফেলিস না? আমাদেরও তাই করতে হবে, চল।” কষ্ট উথলে ওঠে কারো কন্ঠে, ” ইস্, ছেলেটার মাথা নাকি একেবারে থেঁতলে গেছে? বাঁচবে তো?”

কলেজের উল্টোদিকে রেললাইনের ওপাশের রাস্তায় একটা বাস স্থির দাঁড়িয়ে আছে, জ্বলছে। কলেজের ছেলেরা আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। গতি না কমিয়ে গাড়ি থেকে ঠেলে নামিয়ে দেয়া ছেলেটির মৃত্যুর খবর এলে জ্বলে ওঠে ক্যাম্পাস। পরিস্থিতি সামাল দিতে এল পুলিশ। তারপর ধাওয়া, পাল্টা ধাওয়া, টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেট, চারদিকে অস্থিরতা, পরদিন খবরের কাগজে ছবি - রাতভর পুলিশি নির্যাতনের পর পানিতে ফেলে দেওয়া তরুণের লাশ উদ্ধার।

বুকের ভেতর হৃৎপিন্ডটার অস্তিত্ব হঠাৎ টের পেল না অদিতি। কি করে সম্ভব? এটা তো শোয়েবের ছবি ! গতকাল ক্যাম্পাসেই তো কথা হলো ওর সাথে। তারুণ্যের উচ্ছাসে টগবগে উচ্ছল এক তরুণ। অদিতির চেয়ে এক বছর জুনিয়র ও। তাতে বন্ধুত্বে কোথাও বাঁধেনি। কলেজের পরিস্থিতি ভাল নয়। ঝামেলা এড়িয়ে বাসায় চলে যাবার পরামর্শ দিয়েছিল ওকে। উত্তেজিত কন্ঠে ওর জবাব, ” বলো কি? একটা ছেলেকে মেরে ফেলল ওরা, তার প্রতিবাদ জানাব না? মিছিলে যাচ্ছি।”

কারো নিষেধ মানার মতো ছেলেই নয় ও। ভীষন রকম বাউন্ডুলেপনা আর নিয়ম ভাঙ্গার মধ্যেই যেন ওর সুখ। মনে পড়ে যায় প্রথম দেখার দিন। সুমির কাজে ওর সঙ্গে গিয়েছিল। বটতলায় ওরা আড্ডা দিচ্ছিল পাঁচ-ছয়জন। চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিল ও। হঠাৎ একটি ছেলে প্রশ্ন করে ওকে, ” তুমি কি চুইংগাম খাচ্ছো?” তুমি করে বলায় অবাক হলো অদিতি। ওদের সিনিয়র সে। কিছু না বলে মাথা নাড়ল ও। ” তাহলে সিগারেট খাও” বলে বাড়িয়ে ধরল তার হাতের আধখাওয়া সিগারেটটা। মেজাজ খারাপ করে গম্ভীর কন্ঠে জবাব দিল ও, ” খাইনা”। ফিরে আসার সময় পিছুডাক, ” এই আপু শোনো।” আবারও অবাক সে। ” তুমি কি রাগ করেছো? সরি।” নিজের দুই কান ধরে আছে সে। এবার হেসে ফেলল অদিতি।

কি করে বিশ্বাস করবে ও সেই ছেলেটি নেই! মোড়ে দাঁড়িয়ে চটপটি বিক্রি করে যে লোকটা, তিন হাজার টাকা দিয়েছিল তাকে বিপদে পড়েছে বলে। আবার কিছু হলে লোকটা কার কাছে যাবে? ভীষন রকম জীবন্ত একটি ছেলে কোন কিছু না বলেই নিভে যায় কি করে? সেদিন আরো একটা লাশ নিয়ে মিছিল হলো ক্যাম্পাসে। এবারের মিছিলে যোগ দিতে পারেনি শোয়েব। কারণ মিছিলটা তাকে নিয়েই।

নীলার কথা ভাবল সে। অদিতির বান্ধবী। ওকে ভালোবাসত শোয়েব। ” তোমার মত একটা মেয়ে পেলে প্রেম করা যেত। আমাকে কি তোমার খারাপ লাগে, আপু?” ফাজলামো করে বলা। কিন্তু পুরুষবিদ্বেষী, একরোখা মেয়েটির মন জয় করতেও বেশি সময় লাগেনি তার। ভুল বোঝাবুঝি চলছিল ওদের। ওদের ডিপার্টমেন্টে এলে নীলা বকত ওকে। ” তোমার কাছে তো আসিনি, এসেছি আমার অদিতি আপুর কাছে।” আরো ক্ষেপে যেত নীলা। কি করে বোঝাবে মেয়েটা নিজেকে...।

২২.০৮.২০০৭
...উফ! আর ভাবতে পারছে না অদিতি। দিনটা এমন চেপে বসেছে বুকের ওপর। সময় নাকি সবই ভুলিয়ে দেয়। কই.... এতটা দিন গেল, পেরেছে কি?


মন্তব্য

মাহবুব লীলেন এর ছবি

কেউ কখনো পারে না যেতে
কেউ কখনো যায় না
যে যায় সেতো অন্য মানুষ
ফিরেও আসে অন্য কেউ
(মাহবুব হাসান চৌধুরীরর কাছ থেকে ধার করা লাইন)

অনিন্দিতা এর ছবি

সময় সবার সব কিছু ভোলাতে পারে না।
হয়তো কারো কারো পারে।যারা সময়ে সব ভুলে যায় তারা নিঃসন্দেহে ঈর্ষণীয় মানুষ।

স্বপ্নাহত এর ছবি

সময় সবার সব কিছু ভোলাতে পারে না।
হয়তো কারো কারো পারে।যারা সময়ে সব ভুলে যায় তারা নিঃসন্দেহে ঈর্ষণীয় মানুষ।

এরকম ইর্ষনীয় একজন হবার অপেক্ষায় দিন গুনছি।

অদিতির জন্যও সেই কামনা রইল।

=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=
বুকের মধ্যে আস্ত একটা নদী নিয়ে ঘুরি

---------------------------------

বাঁইচ্যা আছি

পরিবর্তনশীল এর ছবি

ভালো লেগেছে
---------------------------------
চোখের পাতায় হাত রেখে ওরা আমাকে স্বপ্ন দেখার যন্ত্রণা দেয়।

রায়হান আবীর এর ছবি

ভাল লেগেছে।

দ্রোহী এর ছবি

লেখাটা ভালো লেগেছে।


কি মাঝি? ডরাইলা?

অতিথি লেখক এর ছবি

ভালো লাগলো।
- শামীম হক।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- প্রিয়তি আর অদিতি'র মাঝে অদ্ভুত একটা মিল খুঁজে পেলাম!
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

তাই?
দুটো নামের শেষেই তি আছে।
এটা ছাড়া আর কি মিল খুঁজে পেলেন বলেন তো...

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বললে,

মেঘবালিকা প্রিয়তির মধ্যে যে আত্মঅহংকার দেখা যায়, কাল নিরবধির অদিতির ভেতরের কষ্টে ভালো করে উঁকি দিলে সেই দাম্ভিক, আত্মঅহংকারের ছবিটাই ফুটে ওঠে।

আপনি মাইন্ড করেছেন!
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

হা হা হা
জ্বি না মশাই।
একথা আবার কেন মনে হলো?
আর আপনার কমেন্টস-এর কিছু অংশ withdraw করেছেন কেন?
পুরোটাই তো ভাল ছিল।
দিল খুলে বলেন স্যার, নো প্রবলেম।

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- আমিতো ভাবলাম ঐটা শুনেই থোতামুখ ভোঁতা করে সেন্টু খেয়েছেন। তাই withdraw করেছি হাসি

দিল খুলে বলবো? অভয় দিচ্ছেন?
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

সেন্টু খাওয়ানো অত সহজ নয়, মশাই।
আর
অভয় দেবার আগেই তো দেখি দিল যথেষ্ট খুলেই বলা হচ্ছে।
না কি বলেন?

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

ধুসর গোধূলি এর ছবি
সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

আপনি সব লেখাই খুব মন দিয়ে পড়েন?

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- এখানে ছোট্ট একটা প্রশ্ন আছে-
সব লেখা নাকি সবার লেখা, নাকি সবার সব লেখা?
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

হা হা হা
এত জটিল প্রশ্ন করে ফেলেছি, বুঝিনি তো।

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

আহমেদুর রশীদ এর ছবি

লিখে যান...

---------------------------------------------------------

ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
________________________________________
http://ahmedurrashid.

অতিথি লেখক এর ছবি

ভালো লাগলো....

জুয়েল বিন জহির

ঝরাপাতা এর ছবি

আরো একটু বিস্তারিত লিখলে ভালো হতো। কেমন যেন খুব দ্রুত। তারপরেও ভালো লেগেছে।


রোদ্দুরেই শুধু জন্মাবে বিদ্রোহ, যুক্তিতে নির্মিত হবে সমকাল।


বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।