জার্মানিতে ঘুরাঘুরি-১

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি
লিখেছেন শোহেইল মতাহির চৌধুরী (তারিখ: শুক্র, ০৬/০৭/২০০৭ - ৯:৩৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বিদেশ মানে আমাদের কাছে অমুক-তমুক বন্ধুর থাকার দেশ। সেসব দেশে বেড়াতে গেলেও আমরা আগে পরিচিত মানুষের ঠিকানাই খুঁজি। অথবা যেসব দেশে এরকম বন্ধু-আত্মীয় আছে সেসব দেশে বেড়াতে যাই। এই বাঙালি কায়দাটায় আমি খুব সুবিধা পাই না। মনে হয় এতে বন্ধু-দর্শন হয়, আড্ডা হয়, রিল্যাক্সও হয় কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভ্রমণ বা বিদেশ দেখাটা হয়ে ওঠে না। জার্মানিতে যাবার পরিকল্পনাটা যখন হলো তখন মাসুদা-ইসমতের কল্যাণে এটা গিয়ে ঠেকলো বন্ধু-দর্শনের অভিযাত্রায়। সুরভির মত আমিও খুব একটা যুত্ পাচ্ছিলাম না মনে। ফলে জার্মানিতে যেসব ব্লগার আছেন তাদের সাথে যোগাযোগ করা হলো না। যাওয়ার আগে ব্লগেও কোনো আওয়াজ দেয়াও হয়নি। তবে সুমন চৌধুরীর সাথে সাক্ষাত্ হতেই পারে এরকম একটা ধারণা ছিল।

আমরা গিয়ে নামলাম বন/কোলন এয়ারপোর্টে।বাংলাদেশের মেয়ে হেলেনের জার্মান স্বামী জিগি আমাদের নিয়ে ছুটলো ওর গ্রাম ইজালনের পথে। মাঝে কোলন থেমে সেই শহরের বিয়ার পান আর জোড়া গির্জা দেখা। autoহেলেন যা রেঁধে টেবিল ভরিয়ে রেখেছিলো তা খেয়ে ভাতঘুম না দিলে বাঙালি খাবারের অপমান। তবু অন্যদের উত্সাহে জঙ্গল দর্শনে বের হলাম। ওদের বাড়ির পাশেই গভীর জঙ্গল। হেলেন-জিগির মিস্টি কন্যা এ্যানা’র ডায়াবেটিস ধরা পড়েছে। ও কিছুদূর গিয়ে বাড়ি ফেরার বায়না ধরলো। সুতরাং গাইড হিসেবে হেলেনকে হারালাম আমরা। থাকলো সাথে হেলেনের ছোটবোন রোজি। ছোট্ট একটা বাজার ইজালন। সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ায় আমরা জঙ্গল ছেড়ে একটা নার্সারিতে ঢুকলাম।auto ফুল আর ফুলের গাছসহ ফুলপ্রেমিকদের কাছে বেচা যায় এমন তাবত্ জিনিস সেখানে আছে। নার্সারির সাথে বিশাল সেই বেচাবিকির দোকান। সুপারশপauto

বাসায় ফিরে এসে দেখি জিগি লুঙ্গি পড়ে ঘরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ভাত-ঘুম দিয়ে উঠেছে। হেলেন জানালো জার্মানির সব স্কুল মাস্টাররাই নাকি দুপুরে একটা ঘুম দেয়। আর লুঙ্গি নাকি জিগির প্রিয় পোষাক। লুঙ্গির উপরে জিগি পড়েছে একটা টি-শার্ট তাতে বাংলাদেশের নদী ও নৌকার ছবি আর উপরে বড় করে লেখা বাংলাদেশ। আমাদের দেশের জামাই এই জার্মানের বাংলাদেশ প্রীতি দেখে খুব মজা পেলাম। প্রতিবছর দেশে গেলে তার শ্বাশুড়ি তাকে একটা লুঙ্গি দেন। আর জিগি সেগুলো পরম যত্নে নিয়ে আসে জার্মানিতে। বাসার নীচে বেসমেন্টে জিগির বিশাল স্টাডি রুম। বিরাট স্ক্রিনের এ্যাপল কম্পিউটার। কয়েক হাজার বই রাখা শেলফে। ফটোগ্রাফি জিগির একমাত্র শখ। অনেকগুলো দামী ক্যামেরার সংগ্রহ দেখলাম। বাংলাদেশের মানুষের ফটোগ্রাফে ভরা রুমের দেয়াল। ছোট্ট একটা ডার্করুমও আছে যেখানে জিগি সাদা-কালো ছবি ডেভলাপ করে। ঘরের একপাশে একটা স্লাইড প্রজেক্টার - জিগি সেটাই চালু করলো। সাদা পর্দায় জিগির তোলা ছবিগুলো ভেসে উঠলো; ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেলেনদের বাড়ির পাশের বাজার, রিক্সাআলা, মুটে, ঠেলাচালক এরকম শ্রমজীবি মানুষের ক্লোজআপ তুলেছে জিগি, প্রচুর মমতায়। তাদের সবার সাথেই জিগির ব্যক্তিগত পরিচয় আছে। অনেকেরই নাম জানে সে। প্রতিবছর বাংলাদেশে গেলে তার সাথে সবার দেখা হয়। তাদের সবার কাছে জিগির পরিচয় একটাই ‘দুলাভাই’।

জার্মানিতেও অনেক বাঙালির সাথে জিগির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। সব ধরনের সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সাথে জিগির একটা যোগাযোগ আছে। অনেক দূরের শহর বার্লিন। তবু সেখানে বসবাসরত ডকুমেন্টারি নির্মাতা শাহীন দিল-রিয়াজের সাথেও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক জিগির। জিগির উতসাহেই দেখলাম শাহীনের প্রথম তৈরি করা ডকুমেন্টারিটি। চরের মানুষ, নদী ও বন্যা নিয়ে করা প্রামাণ্যচিত্র। জার্মানিতে বসে বাংলাদেশকে দেখতে পাওয়ার এক অন্যরকম আনন্দ হলো ছবিটি দেখে।


মন্তব্য

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

ছবি সংযুক্তি এত কঠিন কেন?
কারিগর ভাইয়েরা একটু নজর দেবেন?
তাও ঠিকানা দেখায়।
জায়গামত ছবি দিতে পারলাম না। এই দু:খ কই রাখি।
ঠিক না করলে কিন্তু এতিম হয়ে যাবো।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন ---- সচল রাখুন

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

আরশাদ রহমান এর ছবি

জিগি আর হেলেনের দেখার ইচ্ছা জেগে গেলো। কোন বাঙালি বিদেশে গিয়ে বাঙালির ভাল মন্দ সব কিছুই ছাড়তে পারলে যেন খুশি থাকে।

এটা ঠিক যে বিদেশে গিয়ে বাঙালিদের সাথে আড্ডা দিয়ে কাটালে আর বিদেশর কি দেখা হবে কিন্তু অনেকে বন্ধু বান্ধব খোঁজে যাতে অচেনা যায়গায় নির্দিস্ট সময়ে যত সম্ভব দেখে নিতে পারে, ঘুরতে পারে। আর যারা বিদেশে যে অভ্যস্ত এবভং অন্য দেশে ভ্রমনে গিয়ে নিজেকে হারানো পঠিকের মত মনে করেনে তাদের চেনা লোক না থাকলেও চলে। দেশী টুরিস্ট গাইড হিসাবে বন্ধুরা কাজ করা উচিত। অর্থাৎ ভ্রমনের সময়টা যাতে ভ্রমন করেই কাটানো যায়।

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

জিগির একটা লুঙিপরা ছবি দেন। হাসি

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

সুমন চৌধুরী এর ছবি

ছবি এত কম ক্যা?
.......................................
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

এসএম৩ দেখলাম জায়গামত ছবি ফিট করে আবার ক্যাপশনও দেয়। কিন্তু কীভাবে? আমি ট্রাই দিলাম আর সব ভ্যাচকাইয়া যায়।
ছবি পরিচিতি:
১। বিমূর্ত ছবি তোলার চেষ্টায় গোলকের ছবি। এসব জিনিস মানুষ বাগানে রাখে।
২। কোলনের জোড়া গির্জা। দেখলে কুয়ালালামপুর লাগে।
৩। কোলনের বিয়ারের দোকানে বিয়ারসহ জিগি।
৪। মাসুদা (বামে), সুরভি(বামে) ও এ্যানা।
৫। জিগি-হেলেনের বাসার সামনে সুরভি, হেলেন, মাসুদা, রোজি ও এ্যানা। দূরে জিগি দরজায় তালা দেয়।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন ---- সচল রাখুন

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

সুমন চৌধুরী, এই দু:খের কথা কেমতে বলি। আধঘন্টা ধাক্কাধাক্কি করে ছবি তুলছি পাঁচটা। আরো ধাক্কাইতে কন। ছবি নেয় না। অরূপ আর এসএম৩রে জিগান।
আপনার জন্য আবার ১৫ মিনিট উত্সর্গ করলাম।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন ---- সচল রাখুন

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

সৌরভ এর ছবি

পরিপূর্ণ ভ্রমণলিপি!
জার্মানিতে স্কুলশিক্ষক হওয়া যায় কি না - চেষ্টা করে দেখবো। সেই ছোটবেলার পর দুপুরের ঘুমটা আর দেয়া হয়নি।


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

ধন্যবাদ সৌরভ।
আমার মনমতো হয়নি।
ছবি জোড়ার কারিগরি দিকের চিন্তায় লেখায় ঠিকমত মন দিতে পারিনি।
এর পরের পর্বে আশা করি এই সমস্যা হবে না। মনে হচ্ছে সমস্যার একটা সমাধান পেয়ে গেছি।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন ---- সচল রাখুন

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

সুমন চৌধুরী এর ছবি

বুঝলাম।
.......................................
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

আরিফ জেবতিক এর ছবি

আরেকটু রস চাই।

-----------------------------------
কিস্তিমাতের যুদ্ধ শেষে,সাদাকালো ঘুটিগুলো এক বাক্সেই ফেরত যাবে...

ইরতেজা এর ছবি

আরেকটু রস চাই। ( আদিরস না কিন্তু )
__________________________________
ত্রসরেণু অরণ্যে

_____________________________
টুইটার

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

আরিফ ও ইরতেজা দু'জনেই দেখি রস চায়।
এরকম মন খারাপ করে বন্ধুদের বাসায় যাবার অছিলায় বিদেশ ভ্রমণে বেরুলে কি আর মনটা রসালো থাকে। বিরক্তিই ছিল এই ভ্রমণের মূল ভাব।
তবে আমার বিরক্তিকে পাঠকের মাঝে ছড়িয়ে দেয়াটা বোধহয় ঠিক হয়নি। ঠিক আছে দেখা যাক, আগামী পর্বে কতটা ভুলতে পারি এসব বিরক্তি।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন ---- সচল রাখুন

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

উৎস এর ছবি

লোকের বাসায় বাসায় ঘুরতে আমারও খারাপ লাগে। আমি কোথাও গেলে এজন্য না বলে যাই। আড্ডা, গল্প গুজব আর আতিথেয়তার খপ্পড়ে পড়লে দেশ দেখা হয় না।

হযবরল এর ছবি

জায়গায় ছবি বসালেন কেমনে ?

দাওয়াত খাওয়ার চক্করে একবার পড়লে ঘোরাঘুরি শেষ।

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

হযবরল, পরের পর্বে একদম জায়গামত ছবি বসায়া তারপর পদ্ধতি বলবো।
দাওয়াতের চক্করে ঘুরাঘুরি শেষ হতে বাধ্য। সময় বের করা যায় না। তাই কষ্ট করে বিদেশ গিয়ে যদি দিনের বেলা বাসায় বসে থাকতে হয়, তবে খুব যন্ত্রণা লাগে। সবাই মিলে ঘুরতে যেতে পারলে ঠিক আছে । বা রাতে আড্ডা দিলেও ঠিক আছে।
কিন্তু দিনের বেলা বাসায় বসে ভাত-মুরগি-ডাল খেয়ে হাই তোলাটা আমার পোষায় না।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন ---- সচল রাখুন

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

সিরাত এর ছবি

ভাল লাগলো।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।