গল্পের কল : বানান গল্প ইচ্ছামতন

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি
লিখেছেন শোহেইল মতাহির চৌধুরী (তারিখ: মঙ্গল, ২৫/০৯/২০০৭ - ৪:১৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

গল্পের কল

(গল্পের কলের ছবি দেখে টাসকি খাওয়ার কিছু নাই। আপনার অনুমান সঠিক। কল আপনার কাছেই আছে। ব্যবহার পদ্ধতিটাই শুধু আপনার জানা নাই। সেজন্যই এই পোস্ট।)

প্রথমেই বলি গল্পের কল বাতাসে নড়তেও পারে আবার নাও নড়তে পারে। সুতরাং নড়ানড়ির মাপকাঠিতে গল্প দুই প্রকার। এক হলো শক্ত ও ভারী গল্প। নাড়ানো যায় না। গল্পের বাগানে গ্যাঁট হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। শক্তিশালী গল্প। ঐ এক গল্প যুগ যুগ ধরে চলে। যেমন, রূপবানের কিস্সা। বারো বছরের কন্যা আর বারো দিনের শিশু নিয়ে প্রেমের সাগর পাড়ি দেয়া। এক লাইনে কাহিনীর সংক্ষেপ করলে বুঝা যায় যে এই কাহিনী সবার থেকে আলাদা। মগজ নাড়িয়ে ফেলার মত নতুন চিন্তা। মগজ নাড়ালেও গল্প কিন্তু নিজে নড়ে না, খুব ভারী।

বাকী ধরনটা প্রথমটার ঠিক উল্টা। যেমন নরোম তেমন হালকা। পড়লে মনে হয় এক্কেবারে আমার দেখা কাহিনী। একেবারে সাদামাটা ক্যানভাস, চেনাজানা সব চরিত্র, কাহিনীতেও কোনো আতশবাজি নাই,সুনামি নাই। প্রতিদিনকার ছোট-খাটো ঘটনার গায়ে হলুদ-মরিচ মাখিয়ে ডুবোতেলে ভাজা। এতোই সাধারণ যে উদাহরণও মনে থাকে না। তাই আপাতত: উদাহরণ হিসেবে টেলিভিশনের সিরিয়ালগুলোর কথা মনে করতে পারি। গল্পের পরিণতি, বা বিশেষ কোনো চরিত্রের উত্থান-পতনের মধ্যে কোনো স্বকীয় বৈশিষ্ট্য নাই। মূলত: চরিত্রগুলো আর তাদের নিজেদের সম্পর্কের টানাপোড়েন নিয়াই ঘুরপাক খায়- এরকম কাহিনী।

তো এই দুই ঘরানার গল্পই কিন্তু বানানো যেতে পারে কলে। যেমন কাঁচামাল তেমন রান্না। কাঁচামাল শ্ক্ত হলে গল্পও শক্ত। নরোম হলে নরোম।

এই পর্যায়ে কল সম্পর্কে দুই-চারটা কথা বলা দরকার। কলের থাকে তিনটা ধাপ। ইনপুট, প্রসেস আর আউটপুট। কাঁচামাল, ছুঁ মন্তর, গল্প।

সুতরাং, গল্পের এই কল থাকলে তুড়ি বাজাতেই গল্প প্রস্তুত হয়ে যাবে। কিন্তু প্রথমে দরকার কাঁচামাল। এ জিনিস মিলবে কোথায়? মাথায়! অর্থাত্ আপনি যদি বারো বছরে একটা কাহিনী লেখার মত মগজ নিয়া জন্ম গ্রহণ করে থাকেন তবে এই কথাই ভাববেন- গল্প থাকে গল্পকারের মাথায়।

মাথায় না পেলে গল্প কোথায় পাবেন। তাহলে জর্জেস পলটি'র কথা বলি। আজ থেকে প্রায় একশ' বছর আগে ভদ্রলোক সব গল্পের ছক দিয়ে গেছেন। সেই ১৯২১ সালে। মানুষের মাথায় যত ধরনের গল্প আসতে পারে, যত ধরনের কাহিনী-নাট্যক্ষণ মানুষ তৈরি করতে পারে তার বর্ণনা দেয়া আছে তার দ্য থার্টি সিক্স ড্রামাটিক সিচুয়্যেশানে

সুতরাং সব গল্পসূত্র দেয়া আছে। নিজের মাথা থেকে বের করার জন্য মাথার চুল ছিঁড়ার দরকার কি? যারা এখনই হাত তুলছেন একথা বলতে যে শুধু গল্পে তো হয় না, চরিত্রও লাগে। তারা ভিক্টোরিয়ার বইটা জোগাড় করুন। দেখবেন পৃথিবীতে সব মিলিয়ে চরিত্রও মোটে ৪৬টি

চরিত্র নিয়ে অন্যদিন বলা যাবে। প্রথমে আসুক গল্প। গল্প যেহেতু ৩৬টা। সুতরাং যেকোনো গল্পের মূল লাইনটা নিন। তারপর কলে ফেলে দিন। পছন্দমত বোতাম টিপুন। পাল্টে ফেলুন খোল নলচে। দেখুন নতুন গল্প তৈরি।

নতুন কালের রোমিও জুলিয়েটনতুন কালের রোমিও জুলিয়েট

গল্পের কলের ছবি উপরে দেয়া আছে। সব কলের ছবিই একরকম। কম্পিউটারের মত। এখন এর ভেতরে দিতে হবে ৩৬টি গল্পসূত্র। অথবা আপনার চেনা-জানা যেকোনো গল্পের সূত্র। রোমিও-জুলিয়েটই ধরা যাক। "অসম বা শত্রুভাবাপন্ন দুই পরিবারের পুত্র-কন্যার গভীর প্রেম ও করুণ পরিণতি"। ধরা যাক সংক্ষেপে এটাই রোমিও-জুলিয়েটের কাহিনী। এখন এটাকে কলে ঢুকান। এবার নিজের পছন্দমত বোতাম টিপুন। পেয়ে যাবেন নতুন গল্প।

ওহো, বোতামগুলোর কথাই তো বলা হয়নি। বোতামগুলো ইচ্ছামত বানিয়ে নিতে পারেন। অথবা নিচের তালিকা থেকে বেছে নিন।

১. স্থান ২. কাল ৩. জাতি ৪. পরিণতি ৫. উদ্দেশ্য (মূল) ৬. জীবনের ধাপ ৭. খলচরিত্র ৮.দৃষ্টিভঙ্গি ৯. উল্টারথ ১০.দায়িত্ব/বোঝা ১১. ধরণ (genre) ১২. লিঙ্গ।

আপাতত: ১২টা বোতামেই চলবে। পরে আপনি নিজে কয়েকটা আবিষ্কার করার চেষ্টা করতে পারেন।

তা কোন বোতাম টিপলে কী হবে?

রোমি-জুলিয়েটের গল্পই ধরি উদাহরণ হিসেবে।

১. গল্পসূত্র: অসম/শত্রু দুই পরিবারের পুত্র-কন্যার গভীর প্রেম ও করুণ পরিণতি।

বিকল্প- ক: এখন গল্পের কলে জাতির জায়গায় বদলে দিন ভারতীয়। কাল বা সময়টা বদলে দিন ১৯৯০। বাস গল্পটা প্রসেস হয়ে গেল। এখন যে কাহিনীটা আপনি পাবেন তা হলো "কেয়ামত সে কেয়ামত তক"।

জাহাজের মাঝে রোমিও জুলিয়েটজাহাজের মাঝে রোমিও জুলিয়েট

বিকল্প-খ: একই গল্পে এবার বোতাম টিপে স্থান করে দিন জাহাজ। সময় করে দিন ১৮৩০। প্রসেস করেন গল্প। পেয়ে যাবেন কাহিনী "টাইটানিক"।

বিকল্প-গ: মেয়ের পরিবার উঁচু এই ধাঁচ বদলে আপনি করতে পারেন ছেলের পরিবার উঁচু। স্থান বদলে নিয়ে যান পাহাড়ে, আদিবাসী মেয়ে আর শহরের বাবু। আহা কতো ফিল্মইতো এই গল্পে দাঁড়িয়ে, তাই না।

বিকল্প-ঘ: গল্পের ধরণ (genre) বদলালে তো একেবারে নতুন ধাঁচের কাহিনী মিলবে। রোমিও-জুলিয়েট প্রেমের গল্প। কিন্তু শেষে মৃত্যুদৃশ্য আছে। সুতরাং খুন-খারাবি। এই শেষ দৃশ্যের খুন-খারাবি থেকে উল্টারথে চাপুন। খুনের রহস্য সমাধানে বের হোন। হয়ে যাবে থ্রিলার। টিনেজ থ্রিলারের বাজার কাটতি কিন্তু সাংঘাতিক।

যাক চার বিকল্পের পর এখন নিশ্চয়ই বোতাম টিপার আনন্দে আছেন। টিপুন এবং কল থেকে গল্প বানান। বোতাম বুঝতে সমস্যা হলে আওয়াজ দিবেন।
গল্পের পর গল্প লিখে সচলায়তন অচল করে দিন।


মন্তব্য

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

অবজারভেশন হিসেবে দারুন। ঠাট্টা হিসেবেও তাই। কিন্তু আসলেই কি এত সোজা গল্প লেখা? ইটস নট হোয়াট ইউ রাইট, ইটস হাউ ইউ রাইট ইট।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

আমার মত করে আমি লিখছি। কিন্তু অবজারভেশনের কৃতিত্ব আমার না। এ বিষয়ে অনেক কামেল লোক পথ দেখায়া গেছেন।

এই লেখার কোনো কিছুই ঠাট্টা না। শুধু হালকা করে বলা। রসিকজনই শুধু ডুব দিবে রসের গভীরে।

আপনার হোয়াট টা হলো শক্ত গল্প। আর হাউ -টা হলো নরোম গল্প।

গল্প লেখা সোজা কিন? এই যে ৩৬ গল্প এর বাইরে মূল কাহিনী নেই। এ পর্যন্ত দুয়েকজন কামেল লোক দাবী করেছেন তারা আরো দুটি গল্প-সূত্র আবিষ্কার করেছেন। সেটা ধরলেও ৩৮।

গল্প এখন কারখানায় বানায় কম্পিউটার গেমের স্রষ্টারা। এরা কেউ লেখক না। তাদের কাছে এই কল আছে। শত শত কম্পিউটার গেম তৈরি হচ্ছে। হাজার হাজার গল্প।

মূল গল্প ঠিক করে ফেলার পর হচ্ছে চরিত্রকে মনে থাকবার মতো বৈশিষ্ট্য দেয়া। ধরা যাক হৈমন্তি বা হিমু।
তারপর যে ঘটনাগুলো ধীরে ধীরে গল্পকে তার পরিণতিতে নিয়ে তার বিশ্বাসযোগ্য বর্ণনা। এক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা বা গবেষণা কাজে লাগে।

কিন্তু মূল গল্পসূত্র বানানোর জন্য এই কল যথেষ্ট। চেষ্টা করে দেখুন। ঠাট্টা না।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন ---- সচল রাখুন

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

আরিফ জেবতিক এর ছবি

চলুক।

পুরাটা তৈরী হলে আমি একটা মেশিন কিনতে আগ্রহী।গল্পের কারখানা দেব একটা।

সৌরভ এর ছবি

হুমম।
দুনিয়ার সব মৌলিক গল্প লেখা হয়ে গেছে।
এখন যা হবে, তা হইলো সেইগুলানের পারম্যুটেশন আর কম্বিনেশন।



আমি ও আমার স্বপ্নেরা লুকোচুরি খেলি


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

অরূপ এর ছবি

ভাগ্যিশ শোমচৌ প্রোগ্রামার না...

পোস্টটা খেয়ে ভালো লাগলো..
-------------------------------------
রামছাগলের সামনে, খচ্চরের পেছনে আর নির্বোধের ধারেকাছে না থাকাই শ্রেয়!

হিমু এর ছবি
নিঘাত তিথি এর ছবি

পুরা অফ টপিক একটা কমেন্ট করি। আমি গাধার মত সামহোয়ারইনে আপনার লেখা তেমন একটা পড়তাম না কেন যেন। সচল আমাকে আপনার লেখা পড়তে সচল করেছে। এখন বুঝি কেন সবাই আপনাকে এস এম সি বস বলে। আমি মোটামুটি আপনার লেখার ধরন এবং মননের কঠিন রকমের ভক্ত হয়ে গেলাম।

--তিথি

----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

আরিফ জেবতিক এর ছবি

নজরানা দেয়া উচিত।

আমার কাছে পাঠিয়ে দিন,আমি ফরোয়ার্ড করে দেব।

নিঘাত তিথি এর ছবি

ইয়ে মানে ইন্টারনেটে সব ভার্চুয়াল হলেই ভালো না?

--তিথি

----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

তিথি আপা,আগে বলেছিলেন বোধ হয় আমার লেখা পড়েন না। কিন্তু পছন্দ করে তো দায়িত্বের মধ্যে ফেলে দিলেন। কারণ দেখা যাবে পরের লেখা পড়ে আবার আগের মত আপনার মেজাজ বিগড়ে গেলো।
এক কাজ করেন। ব্যক্তিগত মেসেজের বাটন টিপে একটু কানে কানে বলেন তো কেন এই লেখা আপনার ভালো লাগছে। যদি ডিটেইলসে বলেন তা'লে পরের লেখায়ও একই কায়দা বজায় রাখবো।
আমি আবার কায়দা স্থির রাখতে পারি না।

আপনার মন্তব্য পড়ে খুব খুব ভালো লাগলো। আসেন গল্প বানানো খেলি।

-----------------------------------------------
সচল থাকুন ---- সচল রাখুন

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

নিঘাত তিথি এর ছবি

সেরেছে, আগেও বলেছিলাম না কি? কি লজ্জা! জ্বি না, কেবল এই লেখা আমার ভালো লাগছে সে কথা বলি নি কিন্তু। আর মন্তব্যের শুরুতেই বলে রেখেছি যে সেটা অফ টপিক। আমি যখন থেকে পড়া শুরু করলাম তখন থেকেই দেখি ভালো লাগছে, টানা অনেকগুলোই তো। কেন ভালো লাগছে জানি না। যখন যেমন লিখছেন, লিখতে থাকুন।

--তিথি

----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

সুজন চৌধুরী এর ছবি

হুম, মনে হচ্ছে পুরো সিরিজটা বেশ আগ্রহ নিয়ে পড়বো।
____________________________
লাল গানে নীল সুর হাসি হাসি গন্ধ......

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

সিরিজ?
কোথায় বললাম সিরিজ লিখবো।
সেকি সুজন চৌধুরী আমাকে কোনদিকে ঠেলতে চায়?
বাঁচাও....
-----------------------------------------------
সচল থাকুন ---- সচল রাখুন

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

হাসান মোরশেদ এর ছবি

সেদিন লাইব্রেরীতে দেখলাম নতুন বই এসেছে- 'হাউ ইউ উইল রাইট ইউর নোভেল?'
ঘেঁটে দেখিনি,এর চেয়ে অনেক জরুরী কিতাব পাঠ বাকী ।
তা , শোমচৌ নিজে কোন পদ্ধতির গল্প লিখেন? মডিউলার নাকি অব্জেক্ট ওরিয়েন্টেড?
-----------------------------------
মানুষ এখনো বালক,এখনো কেবলি সম্ভাবনা
ফুরোয়নি তার আয়ু

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

লাইব্রেরিতে কম কম যাবেন। পাতা উল্টাইছেন তাতেই কঠিন দুইটা শব্দ লিখছেন: মডিউলার আর অবজেক্ট অরিয়েন্টেড।
তার চেয়ে আমার পোস্ট পড়েন মন দিয়া।
গল্প দুই প্রকার: শক্ত গল্প আর নরোম গল্প।

-----------------------------------------------
সচল থাকুন ---- সচল রাখুন

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

ভাস্কর এর ছবি

তরল আর কঠিনও মনে হয় আছে...


স্বপ্নের মতোন মিলেছি সংশয়ে...সংশয় কাটলেই যেনো মৃত্যু আলিঙ্গন...


স্বপ্নের মতোন মিলেছি সংশয়ে...সংশয় কাটলেই যেনো মৃত্যু আলিঙ্গন...

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

আরো না।
ভাস্কর দেখি পদার্থের গুণাবলি আরোপ করতে চায়, কঠিন,তরল ও বায়বীয়।
বলেছি, শক্ত ও ভারী এবং নরোম ও হালকা।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন ---- সচল রাখুন

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

আরিফ জেবতিক এর ছবি

বায়বীয় গল্পও আছে।ওটা আমি রেগুলার লেখি।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

মনের নয়,পেটের ক্ষুধায় যাই জনাব-আপনি তো জানেন ।
আর শব্দদ্বয়? উহা ব্লগের প্রোগ্রামার গন ভালো ব্যাখ্যা দিতে পারবেন ।

আপনি তো কম্পিউটার গেমসের কারিগরদের ও গল্পলেখক বানিয়ে দিলেন-সেই কারনে শব্দ দ্বয়ের বেহুদা ব্যবহার ।
-----------------------------------
মানুষ এখনো বালক,এখনো কেবলি সম্ভাবনা
ফুরোয়নি তার আয়ু

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

কম্পিউটার গেমসের কথা আমি ব্লগে বলছি ঠিক।
তবে আজ রাতের সংবাদে বিবিসিও বলছে।

কম্পিউটার গেমসের উদ্বোধন বা প্রিমিয়ার এখন সিনেমা মুক্তির মতো জমজমাট করে করা হয়। বিশাল ব্যবসা।
তাদেরও বিরাট গল্প বানানোর কল আছে।
সাম্প্রতিক কম্পিউটার গেমসের কাহিনী বিষয়ে খবর নিয়ে দেখবেন।
অনেক কম্পিউটার গেমসের কাহিনী দিয়ে পরে আবার চলচ্চিত্রও বানানো হয়েছে।

দুনিয়ায় সবকিছু কি আর রবীন্দ্রনাথের সময়ের মত থাকবে? তা একটা পছন্দের গল্পসূত্র বলেন। তারপর কলে ঢুকায়া দুয়েকটা বোতাম টিপে নতুন কিছু মিনি গল্প উপহার দেন আমাদের।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন ---- সচল রাখুন

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

হাসান মোরশেদ এর ছবি

একটা গল্পসুত্র দেইঃ
একদল বেবুন । বেবুনদের দলে খবর এসেছে নদীর ঐ পাড়ে উৎসব চলছে,অনেক খাবার দাবার অনেক আনন্দ । অভাবী বেবুনের দল নদী পেরুনো শুরু করলো । অগ্রবর্তী দল নদী পেরুচ্ছে,জোয়ারের টানে নদীর পানি বাড়ছে, আরো ক'জন পেরুচ্ছে, পানি আরো বাড়ছে...
দলের একেবারে শেষে এক বেবুন মা,তার শিশু বাচ্চা কোলে । সে যখন নদীর মাঝখানে তখন জল হুহু করে বেড়ে গেছে । পায়ের নীচে সে আর ভর পাচ্ছেনা । একটা শক্ত কিছু পায়ের নীচে পেলে লাফিয়ে পেরুনো যেতো নদী,যোগ দেয়া যেতো উৎসব নগরীতে...

কি করে এবার অসহায় বেবুন জননী?

***
***
দেন তো দেখি আপনার গল্পের কলে সুইচ?
-----------------------------------
মানুষ এখনো বালক,এখনো কেবলি সম্ভাবনা
ফুরোয়নি তার আয়ু

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

হুম গল্পটা আমরা সবাই জানি। তারপর মা-বেবুন শিশু-বেবুনকে পায়ের নীচে রেখে নিজেকে বাঁচালো। খুব ভারী গল্প। বাংলায় রীতিমত বাগধারা আছে চাচা আপন প্রাণ বাঁচা। এই গল্পে অবশ্য প্রথমকে মাকে মহত্ মনে হয়, পরে নিজের জীবন বাঁচাতে সে স্বার্থপরের মতো আচরণ করে।

সুতরাং আপনার দেয়া মূল গল্পের মূলসূত্রটা আমরা এভাবে লিখতে পারি: "নিজের জীবন বিপন্ন হলে আপনজনও শত্রু হয়ে যায়"।

এখন গল্পের কলের সাহায্য নিন।

বিকল্প ক: প্রথমে বেবুন বদলে মানুষ নিয়ে আসেন এই গল্পে। প্রেক্ষাপট হতে পারে যুদ্ধক্ষেত্র। মূল চরিত্র হতে পারে অসম সাহসী বীর যোদ্ধা। দ্বিতীয় চরিত্রটি হতে পারে তরুণ প্রশিক্ষণরত সৈনিক। বোকামী করে শত্রু এলাকায় ঢুকে আহত নির্জীব হয়ে গেছে তরুণ। উদ্ধারকারী হেলিকপ্টারে ঝুলতে ঝুলতে বীর যোদ্ধা টেনে তোলার চেষ্টা করছে তরুণটিকে। কিন্তু তরুণটির গায়ে কোনো শক্তি নেই। এদিকে টের পেয়ে গেছে শত্রুরা। শুরু করেছে গুলি ছোঁড়া। শত্রুর গুলির রেঞ্জ ক্রমাগত কাছে আসছে। অল্প পরেই হেলিকপ্টারে গুলি লাগবে এসে। পাইলট তাড়া দিচ্ছে। তরুণ সেনার দেহ ছেড়ে দিয়ে উঠে গেল হেলিকপ্টার। বীর যোদ্ধার চোখে জল।

বিকল্প খ: এটাও genre বদলে রোমান্টিক প্রেমের গল্প নন-রোমান্টিক শেষ হতে পারে। টাইটানিক ছবির শেষে বরফ-পানিতে ভাসতে থাকা কাঠের টুকরা এনে নায়িকাকে তাতে তুলে দেয় নায়ক। পরে ঠান্ডায় মারা যায় নায়ক, নায়কোচিত মৃত্যু। উল্টে দেন গল্প। দু'জনে উঠতে চেয়েছিলো কাঠে। যেহেতু কাঠ ডুবে যায়, একজন ঠেলে ফেলে দেয় আরেকজনকে। ঠান্ডা জলে।

বিকল্প গ: প্রেক্ষাপট বদলে করে বিষয়টা করে দিন কুমারী মায়ের সমস্যা। শিশুটিকে নিয়ে কুমারী মায়ের নানা সামাজিক পারিবারিক অর্থণৈতিক কষ্ট। দশ তলা ফ্ল্যাটের জানালার পাশে বিছানা থেকে উঠে জানালার কাছে দাঁড়িয়েছে শিশুটা। পাশে সোফায় শুয়ে কুমারী মা দেখছে। শিশুটা খোলা জানালা দিয়ে নীচের দিকে তাকায়। তারপর হামাগুড়ির ভঙ্গিতে জানালা ধরে উঠতে চায়। সোফায় মা চোখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করে। দু'এক মিনিট পর উপর থেকে ভারী বস্তু পতনের শব্দ আসে মায়ের কানে।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন ---- সচল রাখুন

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

সৌরভ এর ছবি

লা-জওয়াব।


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

বিকল্প ঘ: গ্রামের ছাত্রদের পড়ালেখা শেখাতে স্কুল খুলেছেন এক শহর-ফেরত শিক্ষক। গ্রামের ক্ষমতাশীলদের চক্ষুশূল তিনি। অথচ সমান শ্রদ্ধার ছাত্র ও তাদের অভিভাবকদের কাছে। ক্ষমতাশীলরা লাঠিয়াল বাহিনী নিয়ে স্কুল আক্রমণ করে একদিন। একপর্যায়ে শিক্ষককে লক্ষ করে বর্শা ছুঁড়ে মারে এক ভাড়াটে লাঠিয়াল। এতোক্ষণ ছাত্রদেরকে লাঠিয়ালদের কাছ থেকে একাই বাঁচাচ্ছিলেন শিক্ষক। এবার বর্শা থেকে নিজে বাঁচতে ঝট করে একটা ছোট্ট শিশুকে টেনে তুললেন নিজের সামনে বর্ম হিসেবে। বর্শা বিঁধলো শিশুটির বুকে। বেঁচে গেলেন শিক্ষক।

চারটা দিলাম। আরো লাগলে বলবেন।

-----------------------------------------------
সচল থাকুন ---- সচল রাখুন

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

পড়ে বেশ মজা পেলাম ,,,চমৎকার টপিক এবং কনটেন্ট
টাইটানিক আর রোমিও-জুলিয়েট নিয়ে আমার প্রায়ই প্যাঁচ লেগে যায় ,,,

৪৫ ক্যারেকটারের বইটা পড়তে হবে মনে হচ্ছে ,,, বোকাসোকা ধরনের গোয়েন্দাকে কোথায় ফিট করা যায় দেখতে হবে চোখ টিপি
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

দ্রোহী এর ছবি

সেইরকম তুখোড় একটা লেখা। এস.এম.সি বলে কথা!


কি মাঝি? ডরাইলা?

বিপ্লব রহমান এর ছবি

ওরে বাব্বা!


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

সৌরভ এর ছবি

হাসান মোরশেদ এর কমেন্টের লেজ ধরেই বলি, বিগ সি যেমন বলছেন, তাতে গল্পকে "অবজেক্ট অরিয়েন্টেড" একটা শেপ দেয়া হইসে বোধহয়।

আমার ব্যক্তিগত অভিমত, গল্প হইলো - অবজেক্ট নিজে নিজের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এইরকম কোন সিম্যুলেশন।



আমি ও আমার স্বপ্নেরা লুকোচুরি খেলি


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

অরূপ এর ছবি

বিগ সি একটাই হয়! আপনে পারেনও রে বস!!
-------------------------------------
রামছাগলের সামনে, খচ্চরের পেছনে আর নির্বোধের ধারেকাছে না থাকাই শ্রেয়!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।