প্রাচীন বাংলায়, বইয়ের পাতায়

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি
লিখেছেন সুবিনয় মুস্তফী (তারিখ: বুধ, ৩০/০৭/২০০৮ - ১:৫৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

auto
বুকশেলফে শত শত বই। কিন্তু হাজারো কাজের ভিড়ে আগের মত বই পড়া হয় না। ইন্টারনেট এসে অনেক সময় গিলে ফেলেছে। এককালে ইন্টারনেট ছিলো কেবল ব্রাউজ করার জিনিস, ঘুরে ফিরে পড়ার জিনিস। আজকাল নানান ব্লগিং প্ল্যাটফর্মের সদস্য হয়ে কালক্ষেপণের নতুন পথ বের হয়েছে - শখের লেখালেখি!

কিন্তু ছোটকালের সেই নেশাগ্রস্তের মত বই-পড়ার স্মৃতিগুলো আমাকে দোষী আসামীর মতই তাড়া করে বেরায়। বুকশেলফে না-পড়া শত শত বই আমাকে মৃদু তিরস্কার করে। কালকে কাজে যাওয়ার আগের মুহুর্তে তাই একটা বই তুলে নিলাম। পাতাল রেলে বসে যেতে যেতে আধ-ঘন্টা, ফিরতে ফিরতে আরো আধ-ঘন্টা। এরকম করে করে অন্তত কিছু তো পড়া হবে ডেইলি!

তুলে নিয়েছিলাম শওকত আলী সাহেবের প্রদোষে প্রাকৃতজন। গেলোবার যখন ঢাকা গেলাম, এক বন্ধু গিফট করেছিল। কিন্তু কাল পর্যন্ত হাতে নিয়ে দেখা হয়নি। বইয়ের শুরুতে আনিসুজ্জামানের লেখা একটা ছোট রিভিউ বা blurb জাতীয় আছে। সেটার উপর তড়িত চোখ বুলিয়ে বুঝতে পারি এটা ইতিহাস-ভিত্তিক উপন্যাস - হিস্টোরিকাল নভেল।

ইংরেজী ও অন্যান্য ইউরোপীয় ভাষায় এই শ্রেণীর উপন্যাস অঢেল, কিন্তু বাংলায় সচেতনভাবে ভিন্ন এক সময়, ভিন্ন এক দেশ, ভিন্ন এক মানুষকে উপন্যাসের পাতায় ফুটিয়ে তোলার প্রচেষ্টা কতখানি হয়েছে, আমার জানা ছিল না। উৎসুক মনে তাই শুরু করলাম। ট্রেন দুলছে। আমি দুলছি। ৬ নম্বর বাসের মতই গাদাগাদি। এরই মধ্যে শ্যামাঙ্গ জেগে উঠলো।

শ্যামাঙ্গ জেগে উঠলো, আজকে নয়, এখানে নয় - বরং ৮০০ বছর আগে বরেন্দ্রভূমিতে। প্রাচীন বাংলার এক ধুধু প্রান্তরে। চৈত্রের ক্ষমাহীন দাবদাহের মাঝে এক বটগাছের নীচে শ্যামাঙ্গ জেগে উঠলো। আমি মোহিতের মত চলে গেলাম শওকত আলীর হাত ধরে সেই সময়ে।

*

একটু খটকা লাগছিলো শুরুর দিকে। লেখক ইচ্ছাকৃতই ভাষা নিয়ে বিরাট এক এক্সপেরিমেন্ট করেছেন। তৎসম শব্দে ভরিয়ে দিয়েছেন তার গদ্য। যেহেতু ১২০০ সালের আশেপাশে সেন রাজার আমলের কাহিনী, তাই পরবর্তীতে আরবী, ফার্সী, তুর্কী, হিন্দি, উর্দু, ইংরেজী, ফরাসী বা ওলন্দাজ থেকে ধার করা কোন শব্দ আসেনি, সব সযতনে পরিহার করেছেন। এর ফলে শওকতের লেখার ভঙ্গি শুরুর দিকে বেশ কাঠ-খোট্টা লাগারই কথা, বিশেষ করে যারা এককালে হুমায়ুনের অতি সরল গদ্য খুব বেশী করে পড়েছেন, তাদের কাছে।

এরকম শত শত উদাহরণের একটা শুধু দেই -
শ্যামাঙ্গ উঠে বসতেই মুখোমুখি হলো। দেখলো, দুটি শ্যামবর্ণা যুবতী পাশাপাশি এসে দাঁড়িয়েছে। সম্মুখে হঠাৎ অপরিচিত যুবাপুরুষ দেখে ঈষৎ অপ্রতিভ। লক্ষ্য করে শ্যামাঙ্গ, দুজনেই ঈষৎমেদা আর শ্রোণীভারানতা। তবে আবার দুজনকে ঈষৎ চঞ্চলও মনে হয়। হয়তো নবীন যৌবনের কারনে দুজনেরই কৃষ্ণ অক্ষিপক্ষে কৌতুক ও কৌতুহল। শ্যামাঙ্গ মৃদু হাস্যে বললো, আমি ভিন্নদেশী পথিক, এই গ্রামের নাম কী, বলবেন?

শুরুতে এরকম গদ্য পড়ে খটকা লাগছিলো। মাত্র তো ১৯৮৪ সালে লেখা, ১৮৮৪ সালে নয়! মনে হচ্ছিল লেখক এক্সপেরিমেন্ট করতে গিয়ে একটু বেশী বেশী করে ফেলেছেন। একদিকে বিদেশী ভাষা থেকে ধার করা শব্দ বর্জন করেছেন - সম্ভবত তখনকার কথনের প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে চেয়েছেন। কিন্তু আবার একই সাথে তার গল্প বলার (narration) জন্যে ব্যবহার করেছেন বর্তমানের চলিত ভাষা, সাধু ভাষা নয়। আবার ওদিকে গ্রামবাসীদের মুখে তুলে দিয়েছেন শুদ্ধ ভাষা! এর কারন কি? সেকালের গ্রামবাসীরা কি শুদ্ধ বলতো? নাকি এখনকার মত আঞ্চলিকই বলতো?

উত্তর আমার জানা নেই, হয়তো গবেষকেরা জানবেন। কিন্তু তাতে কিছু যায় আসে না। শওকতের এই অবাক-করা ভাষা এক সময় একটা আবহের সৃষ্টি করে। একটা মোহ তৈরী হয় মনে - মনে হয় আরেকটু পড়ি, দেখি এক্সপেরিমেন্টে আর কি কি ভাষা-সাহসের পরিচয় দিলেন? তাই নাক গলানো হয়ে যায় "নাসিকা অনুপ্রবেশ", বাঁশের টুকরো হয় "বংশ খন্ডিকা" আর সাজনা ডাটা হয় "সজিনা দন্ডিকা"! ভদ্রলোক পারেনও। যদিও শ্রোণীভারানতা শব্দের মানে এখনো ঠাহর করতে পারিনি।

(বইটা পড়তে পড়তে আমার কয়েক বছর আগের এক মার্কিন টিভি সিরিজের কথা মনে পড়ে যায়। ডেড্‌ঊড ছিলো উনবিংশ শতাব্দীর প্রেক্ষাপটে একটি ওয়েস্টার্ণ কাহিনী, অনেকখানি সত্য ঘটনা অবলম্বনে। কিন্তু লেখক ডেভিড মিল্‌চ ইচ্ছা করেই চরিত্রদের মুখে কঠিন, কাব্যিক ভাষা তুলে দিয়েছিলেন, অশ্রাব্য কিছু গালিগালাজ সহ। সেই সিরিজের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিকগুলোর একটি ছিল সেই ডায়ালগের কারুকাজ, তার সম্মোহনী শক্তি।)

প্রদোষে প্রাকৃতজন-এর গদ্যেও সেই সম্মোহনী আকর্ষণ অনুভব করি।

*

auto দারুণ লাগে শুরুতে ফ্ল্যাশব্যাকের দৃশ্যগুলো। শ্যামাঙ্গ কে? কেনই বা সে এই বিরান প্রান্তরে ঘুরে বেড়াচ্ছে? ফ্ল্যাশব্যাকে বোঝা যায় যে সে ছিল এক মৃৎশিল্পী। স্থানীয় ভূপতির টাকায় তৈরী মন্দিরের জন্যে সে মাটির শৈল্পিক ফলক বানাতো। কিন্তু ডিভাইন (divine) বিষয়াদি ছেড়ে - যেমন রামায়ন কাহিনী - সে profane বা সেক্যুলার বিষয় নিয়ে ফলক বানাতে উদ্যত হয়। আর্ট হিস্টরির ছাত্র আমি নই, কিন্তু এতটুকু বুঝতে পারি যে ইউরোপীয় রেনেসাঁস-এর সময় যেই বিতর্ক হয়েছিল - sacred vs profane art - সেই বিতর্কই শ্যামাঙ্গের মনে বাসা বেঁধেছে কয়েক শো বছর আগে । কেন তাকে রামের বনগমন নিয়েই ফলক বানাতে হবে? কেন তাকে দৈনন্দিন বিষয় ব্যবহার করতে দেয়া হবে না তার শিল্পে? এই নিয়ে গুরুর সাথে চলমান ঝগড়া এক পর্যায়ে ক্লাইম্যাক্সে গিয়ে পৌঁছায়। শ্যামাঙ্গ সেই মন্দির কম্পলেক্স থেকে চিরতরে চলে যায়।

ঘুরতে ঘুরতে গিয়ে পড়ে নদীতীরে এক গ্রামে। আত্রাই আর করতোয়ার সংযোগস্থল থেকে "বিশ ক্রোশ" দূরে। সেখানে এক পরিবারের সাথে রাত কাটাতে গিয়ে পরিচয় মেলে আরেক টেনশনের। ইতিহাসের ঘূর্ণায়মান চাকার মড়মড় টের পাওয়া যায় বরেন্দ্রর এই বিরানভূমিতেও। এসেছে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা। এই অঞ্চলে তাদের তৎপরতা বাড়ছে। আর এসেছে যবনজাতি!

যবনজাতি। মানে তুর্কী সেনারা। বঙ্গে মুসলমানদের প্রথম অনুপ্রবেশ। সেই মাহেন্দ্রক্ষণে স্থানীয় সমাজের মনে কি কি প্রতিক্রিয়া হয়েছিল - লেখক তা কল্পনা করার চেষ্টা করেছেন। এক সময় এসে স্থানীয় এক হিন্দুর ভাষায় যবনজাতির বিচিত্র উপাসনার একটি বিবরণ পাওয়া যায়। বাঙ্গালের চোখে দেখা প্রথম নামাজের বিবরণ! অসামান্য লেগেছে সেই প্যারাগ্রাফটি।

হায়, এখনো মাত্র ত্রিশ পৃষ্ঠায় আছি! কিন্তু এতটুকু পড়েই যে কি পরিমান ভালো লেগেছে এবং কেন, সেটা হয়তো বোঝাতে পেরেছি। শওকত আলীর সাহসের প্রশংসা করতে হয়। চির পরিচিতের গন্ডী ছেড়ে দূরে বহু দূরে - ৮০০ বছর আগে - তার উপন্যাসের কাহিনী বসাতে সাহস লাগে বৈকি। আর যেই ইতিহাসের চাকার কথা বলছিলাম - লেখক বাংলার ইতিহাসের এক ক্রিটিকাল সময়কেই বেছে নিয়েছেন।

কয়েকদিন আগে পড়ছিলাম - মার্কিন উপন্যাসিক টম উলফ তার এক রচনায় টলস্টয়ের আনা কারেনিনা সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন - The dramas of Anna, Vronsky, Karenin, Levin and Kitty would be nothing but slow-moving romances without the panorama of Russian society against which Tolstoy places them. The characters' electrifying irrational acts are the acts of the heart brought to a desperate edge by the pressure of society.

সেই একইভাবে শওকত আলীর চরিত্ররা তাদের সময়, তাদের সমাজ, তাদের ইতিহাসের যাতাকলে আটকা পড়া কিছু সাধারণ মানুষ। সামনে আসছে বখতিয়ার খিলজি তার ১৮জন ঘোড়সওয়ার নিয়ে। আসছে যবন মুসলিমের প্রতাপ যা ৮০০ বছর পরেও পূবের বাঙ্গালীর স্বত্ত্বার একটি নির্ধারক। শ্যামাঙ্গ-রা সেই ক্রান্তিকালের নীরব স্বাক্ষী। শওকত আলীর রিসার্চের সত্যতা সম্পর্কে ঐতিহাসিকরাই ভালো জানবেন। কিন্তু তার কল্পনাতে যে daring এর পরিচয় দিয়েছেন, তার তারিফ - থুক্কু, প্রশংসা - না করি কিভাবে?

*

বাংলায় লেখা অন্যান্য হিস্টোরিকাল নভেল সম্পর্কে যদি আর কেউ জেনে থাকেন, দয়া করে জানাবেন। শীতে দেশে যাওয়ার ইচ্ছা আছে। বর্তমানের আরো কিছু চমৎকার উপন্যাসের নাম যদি কেউ দেন, তাহলেও কৃতজ্ঞ থাকবো।


মন্তব্য

আলমগীর এর ছবি

যদিও শ্রোণীভারানতা শব্দের মানে এখনো ঠাহর করতে পারিনি।

খুব সম্ভবত বিগবুব।

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

শ্রোণী উরুদেশকে বলে থাকে।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

কনফুসিয়াস এর ছবি

ইন্টারেস্টিং পোস্ট। আশা করছি, খুব শিঘ্রী আপনি বাদবাকি সব বইগুলোও এক এক করে পড়া শুরু করবেন, আর আমাদের এভাবে বই-ভ্রমণ করিয়ে দিবেন। হাসি
*
ভাষার ব্যবহার বেশ মজা লাগলো। আমি ব্যাপারটা সমর্থন করি।
কদিন আগে বন্ধুদের সাথে আলাপে বলেছিলাম, অনুবাদগুলো যদি পুরোপুরি বাংলায় হয়ে যায়, আমি তাহলে স্বস্তি পাবো না। খানিকটা বরং বোঝা গেলেই ভাল যে এটা অনুবাদ। অবশ্য ভাবানুবাদের কথা আলাদা।
সেই সময়ের গ্রামের লোকেরা শুদ্ধ ভাষায় কথা বলতো বলে মনে করি না। নিশ্চয়ই তৎসম উচ্চারণে অশুদ্ধ ভাষায় লেখাটা বেশ কষ্টকর কাজ, এজন্যেই শওকত আলী হয়তো এড়িয়ে গেছেন। হাসি
*
আর ইয়ে, মানে, শ্রোণিদেশ মানে আমি জানি, পশ্চাদ্দেশ, আরও শুদ্ধভাবে বললে নিম্নপ্রদেশ।
কি জানি, ভুলও জানতে পারি!

-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

“শ্রোণীভারানতা” মানে কি? “শ্রোনী” মানে পশ্চাতদেশ। “ভার” মানে এখানে বৃহৎ বা ভারী। “আনতা” মানে ভারে নত নারী। আর ব্যাখ্যা দরকার আছে?

বাংলায় লেখা আরো কিছু ঐতিহাসিক উপন্যাসের নাম বলছি। রিজিয়া রহমানের “বং থেকে বাংলা”, “শুধু তোমাদের জন্য”, সেলিমা রহমানের “আজো বহে নর্মদা যমুনা”, সেলিনা হোসেনের “কালকেতু ও ফুল্লরার উপাখ্যান”, সত্যেন সেনের “বিদ্রোহী কৈবর্ত”, “পুরুষমেধ”, অমিয়ভূষণ মজুমদারের “মধু সাধু খাঁ”। আরো মনে পড়লে জানাবো। উর্দু সাহিত্যিক নসীম হিযাজীর উপন্যাসগুলোর ইসলামী ফাউন্ডেশনের করা বাংলা অনুবাদও চেষ্টা করে দেখতে পারেন। যদিও লেখাগুলো একপেশে দৃষ্টিভঙ্গীতে লেখা ইসলামী পূনর্জাগরণমূলক, তবে জীবনানন্দ দাশের কবিতাকে যিনি ধারন করে আছেন তার পক্ষে সেখান থেকেও রস বের করা সম্ভব বলে বিশ্বাস করি।

১৯৮৬ সালে যখন প্রথম “দুষ্কালের দিবা-নিশি” আর “প্রদোষে প্রাকৃতজন” পড়ি তখন আমার মূখে-চোখে-মনে মুগ্ধতার বিষ্ময়। সেই ঘোর আজো আছে। তখন থেকে স্বপ্ন দেখি যদি কখনো চলচিত্র নির্মানের সুযোগ পাই তাহলে প্রথমেই এই উপন্যাস-দ্বয়ীকে নিয়ে চলচিত্র বানাবো। এক সময় মনে মনে পাত্র-পাত্রীও ঠিক করে ফেলেছিলাম। এই দিবা-স্বপ্ন আমার এখনো আছে।

এই উপন্যাসের বৈশিষ্ট্য তার ভাষা, ভাষার শুদ্ধতা, ভাষা ও কাহিনীর কালানুগতা, ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে নিম্নবর্গের মানুষের খন্ড-ইতিহাস নির্মানের চেষ্টা, ঐতিহাসিক বিপর্যয়ের অর্থনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক কারন ব্যাখ্যার চেষ্টা। সচলের পাঠক যারা এখনো বইটি পড়েন নি, দয়া করে পড়ে ফেলুন।

এমন বইকে সচলের পাঠকদের সামনে আনার জন্য এবং গত কয়েকদিনের উত্তপ্ত রাজনৈতিক ঘটনা প্রবাহের মাঝে সাহিত্যের এমন প্রশান্ত বানী দেয়ার জন্য সুবিনয়কে আন্তরিক ধণ্যবাদ। আরো ধণ্যবাদ সম্পর্কিত লিঙ্কগুলো সাথে সাথেই দিয়ে দেয়ার জন্য।
================================

তোমার সঞ্চয় দিনান্তে নিশান্তে পথে ফেলে যেতে হয়


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

বইয়ের লিস্টের জন্যে অশেষ ধন্যবাদ। এর পরের বার গেলে সব খুঁজে বের করার চেষ্টা করবো।

উপন্যাসের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আপনার মন্তব্যের সাথে সম্পূর্ণই একমত। আর্থ-সামাজিক, ধর্ম-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের বাইরে কিছুই ঘটে না। সত্যজিতের অশনি সংকেত ছায়াছবির কথা মনে পড়ে যাচ্ছে বারবার। প্রলয় যেটা ঘটছে - দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ - আর যেটা সামনে আসছে - দুর্ভিক্ষ - সেটা গ্রাম বাংলার সাধারণ মানুষ টের পায় কিন্তু ঠিক বুঝতে পারে না। এক পর্যায়ে এক গ্রামবাসী জিজ্ঞেস করে সৌমিত্রকে - জাপানীরা যে সিঙ্গাপুর দখল করেছে, সেই সিঙ্গাপুর কোথায়? সৌমিত্র - অর্থাৎডাক্তার গঙ্গাচরণের অবিস্মরণীয় উত্তর আসে - সিঙ্গাপুর? ঐ হবে মেদিনীপুরের কাছে।

প্রদোষে প্রাকৃতজন পড়তে পড়তে সেই সময় আর এই সময়ের মিলটা খুঁজে পাই। অসাধারণ।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

হুমম, শ্রোণীদেশ আলমগীর না চিনলেও কনফুসিয়াস অবশ্যই চেনেন।
প্রকাশের বছরই পড়েছিলাম প্রদোষে প্রাকৃত জন।

সুবিনয় তার পাঠ-বিশ্লেষণ দেবেন এমন আশা আমিও করি। ও হ্যা মনজুরাউলের একটা লেখা আছে বাংলা সাহিত্য ও উপন্যাস সম্পর্কে - এখানেই - তা থেকে সুবিনয় কিছু লেখক ও বইয়ের নাম পেতে পারেন, সমালোচনাসহ।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন... ...সচল রাখুন

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

মনজু'র লেখাটা পড়েছি, তবে উনি কোন লেখককে বা কোন লেখাকে ভালো ডেকেছেন বা রিকমেন্ড করেছেন বলে স্মরণ করতে পারছি না! আবার পড়ে দেখবো।

-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍ গড়াগড়ি দিয়া হাসি

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
মৌমাছির জীবন কি মধুর?

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

আলমগীর এর ছবি

হুমম, শ্রোণীদেশ আলমগীর না চিনলেও কনফুসিয়াস অবশ্যই চেনেন।

চিত্তহারক কিছু একটা হবে অনুমান করেছিলাম। কিন্তু আমার যা ক্ষীণ স্বাস্থ্য তাতে কোনদিকের ভার বইতে পারব তা নিয়ে চিন্তিত ছিলাম।

এখন অনেকেই নেট ঘেটে, বাংলা একাডেমির অভিধান ইত্যাদি দিয়ে শব্দার্থটা নিশ্চিত করেছেন। বাঁচা গেছে।

উপন্যাসে আমার তেমন জ্ঞান নেই। "বাংলায় ভ্রমণ" খুব পুরোনো দুটো ভ্রমণ কাহিনী পড়েছিলাম, ভাল লেগেছিল।

রেজওয়ান এর ছবি

প্রদোষে প্রাকৃতজন পড়তে পেরেছিলাম বাংলা অভিধানের সাহায্য নিয়েই। অজানা শব্দগুলো পড়ার গতিতে বাধা দিলেও লেখনীটি কাহিনীতে মজিয়ে রাখে ।

শওকত আলীকে ধন্যবাদ আমাদেরকে কিছু বাংলা অপ্রচলিত শব্দের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবার জন্যে। বাংলার মত এত সমৃদ্ধ ভাষা আমাদের থাকতেও আমরা তার কথ্য রীতি ও সরলীকরনের উপরই জোর দেই। এখন 'কর্দলী কর্তন' জাতীয় শব্দই অনেকের কাছে বিজাতীয় শোনাবে হয়ত।

পৃথিবী কথা বলছে আপনি কি শুনছেন?

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

রেজওয়ান ভাই, কলার কথা যখন উঠলোই, এই হলো এক নাস্তার বর্ণনা -

"ফলাহারটি সত্যিই উপাদেয়। সুগন্ধী এবং কোমল চিপিটক, প্রগাঢ় দধি, তৎসহ খন্ড-মিষ্টান্ন এবং স্ফীতাঙ্গ, প্রায় বর্তুলাকার, হরিদ্রাভ কদলী।"

!!! এমন লেখা পড়ে মুখে হাসি না ফুটে পারে না। দেঁতো হাসি

p.s. চিপিটক কি জিনিস জানেন নাকি?!
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

মাসুদা ভাট্টি এর ছবি

সুবিনয়,
চিপিটক মানে চিড়া বা চালের তৈরি মুড়ি জাতীয় খাবার। এক্ষেত্রে ভেজানো চিড়, কলা ও অন্যান্য ফলাদি সহযোগে বাঙালির চিরন্তন ফলাহারকে বোঝানো হয়েছে।

অসাধারণ উপন্যাস, বাঙালি-সত্ত্বাকে জানার এবং বোঝার জন্যতো বটেই, ঘটনাবলী ও বর্ণনাভঙ্গীর ভেতর ঢুকতে সময় লাগলেও সেখান থেকে বেরুনো সহজ নয়। আমি নিশ্চিত আপনি আরও অনেকদিন এই উপন্যাসের ঘটনাকাল, চরিত্র, ভাষাভঙ্গী, আবহ থেকে বেরুতে পারবেন না। হাঁটবেন, ভাববেন, এবং নিজেকে এই ঘটনাক্রমে বসিয়ে কথা বলতে থাকবেন, অবিকল ওই ভাষায়। আমার এমনটি হয়, জানি না হয়তো আপনারও হবে, সবারই হয়তো হয়।

স্বপ্নাহত এর ছবি

ইন্টারেস্টিং!!

বইটি পড়া হয়নি। তবে এই লেখাটা পড়ে আগ্রহ জাগলো। দেখি ব্যাটে বলে টাইমিং হলে খুব শিগগিরই জোগাড় করে পড়ে নেবার চেষ্টা করব।

---------------------------

থাকে শুধু অন্ধকার,মুখোমুখি বসিবার...

---------------------------------

বাঁইচ্যা আছি

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

"চিপিটক" নিয়ে আমার কিঞ্চিত সন্দেহ আছে। এটি কি "চিৎ পিঠা" বা "চিতই পিঠা" নয়? খন্ড-মিষ্টান্ন আমার ভুল না হলে "গুড়" বা "পাটালী গুড়"। আনুষাঙ্গিক বস্তুগুলি একসাথ করলে মাসুদা ভাট্টিই ঠিক। কিন্তু তারপরও সন্দেহ যাচ্ছে না। কেউ অভিধান দেখে সংশয় দূর করবেন কি? (আমার সে সুযোগ নেই)
=================================

তোমার সঞ্চয় দিনান্তে নিশান্তে পথে ফেলে যেতে হয়


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

হিমু এর ছবি

শ্রোণীভারানতা শব্দটি ব্যাকরণগত দিক থেকে শুদ্ধ হলেও, প্রয়োগের দিক থেকে ভুল। শ্রোণীর ভারে কেউ ঝুঁকে পড়তে পারেন না, ভার সামলাতে না পারলে পল্টি খেয়ে বড়জোর পেছনে হেলে পড়তে পারেন, অন্তত মেকানিক্স তা-ই বলে।

সংস্কৃতকাব্যে বহুবার স্তনের ভারে ঝুঁকে পড়ার কথা বলা হয়েছে। শ্রোণীর ভারের ব্যাপারে যে শব্দটি বহুলব্যবহৃত, সেটি হচ্ছে শ্রোণীভারাদলসগমনা, অর্থাৎ শ্রোণীর ভারে রয়েসয়ে চলেন যে নারী।

সংস্কৃতে যাঁরা এমন লিখেছেন, তাঁরা যে বাকি কাজকাম ফেলে বেশ বড় একটা সময় বিভিন্ন বয়সের মেয়েদের চলাফেরার ভঙ্গি খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করে কাটিয়েছেন, তা বোঝা যায়। খাচ্চর আমি একলা নই, হেঁ হেঁ হেঁ ...।


হাঁটুপানির জলদস্যু

হযবরল এর ছবি

শ্রোনীভারাদলসগমনা শব্দটা কালিদাসের ’কুমারসম্ভব’ কাব্যে পাওয়া যায়। শব্দের প্রায়োগিক দিকের ব্যাপারে আমি হিমুর সাথে সহমত। এই ধরণের উপন্যাসের ক্ষেত্রে বাংলা সাহিত্যে শরদিন্দুর নাম প্রথমেই বলতে হয়। এই লেখা এবং লেখার মন্তব্য সব মিলিয়ে বেশ জমজমাট।

সুমন চৌধুরী এর ছবি

শ্রোনীভারাদলসগমনা

অর্থাৎ গুয়ামুটা.....নাকি? দেঁতো হাসি



ঈশ্বরাসিদ্ধে:

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

এই কথাটিই বলতে চেয়েছিলাম। এই ছোটো ভুলের মধ্যে দিয়ে শওকত আলীর পুরো উপন্যাসিক প্রজেক্টের একটা ত্রুটি ধরা পড়ে। সেটা হলো প্রাচীনতার জন্য অতিমাত্রায় কৃত্রিমতা তৈরি করা। অতিমাত্রায় সংস্কৃত শব্দও একটা কারণ দুষ্পাঠ্য। কিন্তু উপন্যাস যেহেতু কেবল ভাষা নয়, আখ্যান প্রবাহ। সেই আখ্যানের মধ্যে উনি যে ইতিহাস দেখতে চেয়েছেন, সেটা নিয়ে সুবিনয়ের পড়া শেষ হওয়ার আগে বলা ঠিক হবে না। তবে আমিও উপন্যাসটি পড়বার সময় একরকম ঘোরের মধ্যে চলে গিয়েছিলাম।
শওকত আলী বাংলার ইতিহাসের প্রদোষকালে নিম্নবর্গকে যেভাবে বুঝতে চেয়েছেন, তা সাহসী বটে।

তবে ইতিহাসের প্রাচীনতা নিয়ে অমিয়ভূষণের চাঁদবেনে কিংবা নয়নতারাও বড় কাজ।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

শ্রোণী বিষয়ক জটিলতা নিরসনে অবশেষে আন্তর্জালের শরনাপণ্ণ হইলাম! দেখুন এখানে -
http://vedabase.net/s/sroni
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

রাজশেখর বসুর চলন্তিকা বলছে : শ্রোণী = নিতম্ব।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

রাগিব এর ছবি

বড়ু চণ্ডিদাসের কাব্য পড়ে দেখতে পারেন। সম্ভবত চতুর্দশ শতাব্দীতে লেখা। ঐ সময়ের আসল সাহিত্যের ভাষা পাবেন। (যদিও রাধা কৃষ্ণের কাহিনীর অ্যাডাপ্টেশন, তবু ভাষা ও বর্ণনাটা লক্ষ্যনীয়)।

----------------
গণক মিস্তিরি
ভুট্টা ক্ষেত, আম্রিকা
http://www.ragibhasan.com

----------------
গণক মিস্তিরি
জাদুনগর, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | শিক্ষক.কম | যন্ত্রগণক.কম

জাহিদ হোসেন এর ছবি

নারায়ণ স্যান্যাল (বিকর্ণ) এর লেখা কয়েকটি ইতিহাস-আশ্রয়ী বই আমার এককালে ভাল লেগেছিল। একটির নাম ছিল তুংগভদ্রার তীরে, অন্যগুলোর নাম এখন মনে পড়ছে না।
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

সবজান্তা এর ছবি

প্রাকৃতজনদের নিয়ে লেখা, আমার আরেকটি অত্যন্ত প্রিয় উপন্যাস - সেলিনা হোসেনের "নীল ময়ূরের যৌবন"।

বাংলা ভাষায় লেখা যত বই আজ অবধি পড়েছি, নীল ময়ূরের যৌবন তার মধ্যে অন্যতম প্রিয়। পড়ে দেখতে পারেন।


অলমিতি বিস্তারেণ

রণদীপম বসু এর ছবি

বাংলা একাডেমীর ব্যবহারিক অভিধান অনুযায়ী শ্রোণী বা শ্রোণী হচ্ছে নিতম্ব, পাছা, কটিদেশ। আমি আশেপাশে যে সব ভারীনিতম্ববতী রমণী দেখি, এরা কেমন যেন একটু নুয়ে নুয়ে হাঁটেন, দাঁড়ান।
চিপিটক অর্থ দেয়া আছে চিড়া।
খণ্ড অর্থ দেয়া গুড় ; খাঁড়।
আশা করছি ফলাহারটি সত্যিই উপাদেয় হবে।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

শেখ জলিল এর ছবি

বইয়ের আলোচনা ও মন্তব্য থেকে অনেক কিছুই শিখলাম।
ধন্যবাদ এই পোস্টের জন্য।

যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!

দময়ন্তী এর ছবি

এই বইটি পড়িনি ৷ আলোচনাটি চমত্কার ৷ বইটি যোগাড় করে পড়ে ফেলবো ৷

চিপিটক মানে চিঁড়া আর খন্ড মানে গুড় ৷ এইধরণের প্রচুর শব্দ শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঐতিহাসিক উপন্যাস ও গল্পে ব্যবহৃত হয়েছে৷ ধরুন "কপিত্থ সুরভিত তক্র' মানে হল লেবু দেওয়া ঘোল ৷ কপিত্থ অর্থ আবার বেলও হয়৷ যেমন "গজভুক্ত কপিত্থ্ববত্' ৷

বাংলাভাষায় লেখা ঐতিহাসিক উপন্যাস প্রচুর আছে ৷ সবচেয়ে প্রথমে শরদিন্দুর নাম করতে হয় ৷ ওঁর কিছু উপন্যাস যা আমার খুব ভাল লেগেছিল

শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় -----
কালের মন্দিরা
তুন্গভদ্রার তীরে
তুমি সন্ধ্যার মেঘ
ঐতিহাসিক ছোটগল্প
রক্তসন্ধ্যা
চুয়া চন্দন
নারায়ন সান্যাল ----
কালের মন্দিরা
হংসেশ্বরী
লাডলী বেগম
রমাপদ চৌধুরী ---
লালবাঈ
শ্রীপারাবত ------
আমি সিরাজের বেগম

আর এর থেকে একেবারে আলাদা একটা বই হল
"ভলগা থেকে গঙ্গা' -- রাহুল সাংকৃত্যায়ন ৷ অসাধারণ বই ৷

## সংস্কৃত সাহিত্যে অনেক অসুব্য অসুব্য শব্দ আছে ৷ এরকম আরো একটা শব্দ "ন্যগ্রোধপরিমন্ডলা' ৷ হাসি

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

সবজান্তা এর ছবি

শরদিন্দুর প্রায় সবকটি বইই পাবেন শরদিন্দুর ঐতিহাসিক উপন্যাস সমগ্রতে - যা প্রকাশিত হয়েছে আনন্দ পাবলিশার্স থেকে। বইটি ঢাকা-কলকাতা দু জায়গাতেই সমান সু-প্রাপ্য


অলমিতি বিস্তারেণ

মুজিব মেহদী এর ছবি

প্রদোষে প্রাকৃতজন অনেকানেক বছর আগে পড়েছি। এখন সংগ্রহেও নেই। কিন্তু এর পাঠস্মৃতি ভুলতে পারি না, যেটা অন্যরকম ভালো লাগা দ্বারা আচ্ছাদিত ছিল। সুবিনয় মশাইয়ের লেখা সে স্মৃতি চারণে ইন্ধন দিল।

আমি যে বয়সে এটা পড়ে মুগ্ধ হয়েছি, সে বয়সে নতুন নতুন বাংলা (অধিকাংশই তৎসম) শব্দের জাতকুল জানার আগ্রহও একটা ছিল। খারাপ লাগে নি একদম। কিছু শব্দ অভিধান দেখে বুঝেছি, কিছু বুঝি নি। কিছু বোঝা দরকারই মনে হয় নি। কিন্তু মনে পড়ে, শ্রোণীভারানতা (অধুনাকার বানান শ্রোণিভারানতা) শব্দটি প্রদোষে প্রাকৃতজন পড়ারও আগেই জেনে গিয়েছিলাম। এর একটি ভালো প্রতিশব্দ গুরুনিতম্বা। হায়, এমন রসালো একটা শব্দের অর্থ সুবিনয় অনেক দেরিতে জানলেন!

................................................................
জেতা মৎস্য গিলে বকে মনুষ্য খায় বাঘ-ভালুকে
রহস্য বোঝে না লোকে কেবল বলে জয়।
(দীন দ্বিজদাস)

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

জুলিয়ান সিদ্দিকী এর ছবি

সুবিনয় মুস্তফীরে ভালো একটা বুদ্ধি দেই। আর তা হইলো বিশেষ কইরা বাংলা সাহিত্য অনেক পড়লে পরে দিয়া গ্রন্থের নাম কোনোটারই মনে থাকবে না। একটার ঘটনা ঢুকে যাবে অন্যঘটনায়। মনে হবে ঠিক এইটাই তো! কিন্তু আসলে অন্যটা। মনে হবে এটার লেখক অমুক। আসলে তমুক। বাংলা সাহিত্যরসাস্বাদনের অর্থ বারবার শূন্য থেকে শুরু করা।

পুনশ্চ: আমার বুদ্ধিটা দুর্বুদ্ধিও মনে হইতে পারে। সেই কারণে তেমন জোর দিলাম না।

____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।

___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

প্রমথনাথ বিশীর 'লালকেল্লা'-র কথা মনে পড়ছে। একই লেখকের 'কেরী সাহেবের মুন্সী'।

১৯৯৩-এ অকাদেমি পুরস্কার পাওয়া শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়ের 'শাহজাদা দারাশুকো'-র দুই খণ্ড। পরবর্তী খণ্ডের আগেই লেখকের আয়ু শেষ হয়। তবে এই দুটি খণ্ড একটা সময় ও কিছু ঐতিহাসিক চরিত্রকে জানার জন্যে দরকারি।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

স্নিগ্ধা এর ছবি

বাণী বসু'র 'মৈত্রেয় জাতক' ?

ss এর ছবি

বাংলা ভাষার অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপন্যাস, অত্যন্ত , অত্যন্ত প্রিয় একটি বই প্রদোষে প্রাকৃতজন।

আবীর রেজা এর ছবি

মেঘদূত থেকেই তো শুরু!!

"স্তোনীভারা অলস গমন
পক্ববিম্বধরোষ্টী "

মোহন বীণাবাদক বিশ্বমোহন ভাট-এর সুরকরা কেদার রাগে "মেঘদূত" অ্যালবামে সুকন্ঠী কবিতা কৃষ্ণমূর্তির গান এখনো স্মৃতিতে উজ্জ্বল!

zaber এর ছবি

যদিও শ্রোণীভারানতা শব্দের মানে এখনো ঠাহর করতে পারিনি।
শ্রোণীভারানতা means---------ponderous hip

তারেক অণু এর ছবি

ভাল লাগল, পুরোটা পড়ে আরেকটা রিভিউ লিখেন

মন_মাঝি এর ছবি

প্রদোষে প্রাকৃতজন অনেক আগে পড়েছি। দুর্দান্ত !

বাংলায় ইতিহাসভিত্তিক উপন্যাসের ক্ষেত্রে আমার প্রিয় তালিকায় আছে মহাশ্বেতা দেবীর "আঁধারমানিক", অমিয়ভূষন মজুমদারের 'রাজনগর' আর 'নয়নতারা'। আরো অনেক আছে, এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না। প্রমথনাথ বিশীর মনে হয় অনেকগুলি আছে এবং তার সবই অত্যন্ত সুপাঠ্য - শুধু তার অতি প্রকটভাবে প্রকাশিত পলিটিকাল এজেন্ডার কারনে ভাল লাগে না। আর সুনীলের তথাকথিত ইতিহাসভিত্তিক উপন্যাসগুলি (প্রথম আলো, পূর্ব-পশ্চিম, ইত্যাদি) স্রেফ ফাত্রামি মনে হয়।

বাংলাদেশের সত্যেন সেনের কিছু দুর্দান্ত ইতিহাসভিত্তিক উপন্যাস আছে, যেমন - "জেরুসালেম'। আমার প্রিয়তম লেখকদের একজন।

বানী বসুর "মৈত্রেয়ী জাতক" ফাটাফাটি। এটা গৌতম বুদ্ধের সমকালীন বা তার ঠিক পরবর্তী সময়ের ভারতবর্ষ নিয়ে। একবার শুরু করলে শেষ না করে ঊঠতে মন চায় না। প্রদোষের মত এটারও একটা যাদুকরী "আবহ" আছে, তবে সেটা ঠিক ভাষায় নয়, যদ্দুর মনে পড়ে - এটামোস্ফেয়ারিক বর্ণনাভঙ্গীতে। তবে এই অসাধারন বইটার কাহিণির মর্মার্থ ও কঙ্কলুশনটা বিংশ শতাব্দীর সীমাবদ্ধ রাজনৈতিক প্রেক্ষনীতে দেখার ফলে মূল কাহিণির মূল্য অনেকখানি নষ্ট হয়েছে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।