আজ দোতলার ক্যান্টিনে

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি
লিখেছেন সুবিনয় মুস্তফী (তারিখ: শুক্র, ১৩/০৩/২০০৯ - ৬:০৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমাদের অফিসের দোতলায় একটা ক্যান্টিন আছে। বেশ বড়-সড় ক্যান্টিন, অনেকগুলো টেবিল চেয়ার পাতা। সোফা আছে, লাউঞ্জের মতো করে সাজানো। দুটো টিভিও আছে, তাতে সারাক্ষণ বিবিসি সিএনএন নাহলে Bloomberg-এর মত ফিনানশিয়াল চ্যানেলগুলো নীরবে চলতে থাকে। আগে কোন ক্যান্টিন ছিল না। লাঞ্চ করতে হলে অফিসের বাইরে যেতে হতো, আশেপাশের খাবারের দোকান থেকে কিছু কিনে খেতে হতো। এখন সেই ঝক্কি নেই। সোয়া বারোটার পর থেকেই ক্যান্টিনে মানুষের ঢল নামে - অফিসের বেশীর ভাগ কর্মচারী আজকাল সেখানেই তাদের কলীগদের সাথে ছোট ছোট দল বেঁধে লাঞ্চ সারে। খাবারের মান ভালো, দামও তুলনামূলকভাবে সস্তা। প্রতিদিন মেন্যুতে অনেক রকম আইটেম থাকে - সালাদ, ফল-মূল, রুটি বা ভাত, মাছ-মাংস, ভেজিটারিয়ান অপশন, বিভিন্ন প্রকার মিষ্টি। আর সপ্তাহের পাঁচ দিন আলাদা আলাদা খাবার রান্না হয়, তাই একঘেঁয়ে লাগে না। অল্প সময়েই অফিসের জনপ্রিয় ক্যান্টিন!

ক্যান্টিনের বর্গা দেয়া হয়েছে বহিরাগত এক কেটারিং কম্পানীর কাছে। তাদের শেফই মেন্যু সাজায়, রান্না করে। তাদের কর্মচারীরা ক্যাশ-এ বসে, খাবারের টাকা নেয়। কালো পোশাক পরিহিত এই ছেলেমেয়েগুলোর সাথে প্রতিদিনই ক্ষণিকের আদান-প্রদান হয়, যদিও আলাপ কখনো তেমন দীর্ঘস্থায়ী হয় না। কাউন্টারে একটা ছেলে আর একটা মেয়ে সবসময় বসে। পিটার আর কামিলা - দুজনই পোল্যান্ডের, দুজনই অল্প-বয়েসী। কামিলা বেশ হাসি-খুশি, হাল্কা ঠাট্টা মশকরা করে। দাম দেবার সময় খাবারের ট্রে'র দিকে তাকিয়ে হয়তো বলবে - 'আজকে এতো কম খাবার নিচ্ছো যে, ডায়েট করছো নাকি?'

এই দুইজন থাকে শহরের সেন্টার থেকে বেশ দূরে - শিফট শুরু হয় সকাল ৭টায়, তাই তাদের ঘুম থেকে উঠতে হয় ভোর পাঁচটা বা সাড়ে পাঁচটার মধ্যে। বিকাল পর্যন্ত শিফট চলবে, তাই মাঝে মাঝে ওদেরকে বেশ ক্লান্ত দেখায়।

পিটার-কামিলার স্বদেশী যারা, তারা আজকাল অনেকেই আর লন্ডনে নেই। অথচ এই শহরে যখন প্রথম আসি, তখন তরুণ পোলিশদের দাপট ছিল সর্বত্র। কোথায় গেল সব?

ছোট্ট এক মহাদেশ

২০০৪ সালে পোল্যান্ড সহ বেশ কয়েকটি পূর্ব ইউরোপীয় দেশ ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা EU-র সদস্যপদ পায়। EU-র সদস্য হওয়ার সবচেয়ে বড় যেই গুণ, তা হলো মানুষের চলাচলের অবাধ সুযোগ। যে কোন সদস্য দেশের নাগরিক যে কোন সময়ে আরেক সদস্য দেশে যেতে পারবে। ভিসার বালাই নেই। তাই একজন বিলেতী পর্যটক তার গাড়িতে চেপে ইংলিশ চ্যানেল পার হয়ে ফ্রান্স, জার্মানী পেরিয়ে যদি সোজা ইউরোপের দূর কোণে রোমানিয়া পর্যন্তও চলে যায়, তাহলেও কেউ কোথাও তাকে আটকাবে না। এতগুলো দেশে ঢোকার সময় তার একটি ভিসাও লাগবে না।

এই ভ্রমণের সুবিধার ফলে গত ১০-১৫ বছরে ইউরোপীয় ভূখন্ড অনেক ছোট হয়ে এসেছে, এতে কোন সন্দেহ নেই। লোকজন কথায় কথায় ১০ পাউন্ডের প্লেন টিকেট কেটে চলে যাচ্ছে প্রাগ বা ভিয়েনা, বুদাপেস্ট বা এথেন্স। 'সিটি ব্রেক' নামের এক রকমের ছুটির সংস্কৃতি দাঁড়িয়ে গেছে। গরমের সময় দেখা যায় যে শুক্রবার দিন কেউ কেউ অফিসে লাগেজ নিয়ে এসেছে। কি ব্যাপার? না মানে সেই দিন সন্ধ্যায় ফ্লাইট আছে, অফিস থেকে সোজা চলে যাবে এয়ারপোর্ট। প্লেনে করে দুই-আড়াই ঘন্টার মধ্যে পৌঁছে যেতে পারবে বহুদূরে কোন মোহনীয় শহরে - ভেনিস, ক্রাকোভ বা ভিলনিয়াস। আর নাহলে স্পেন বা ক্রোয়েশিয়ার কোন রৌদ্রস্নাত সমুদ্র সৈকতে। দু-দিন আরামের ছুটি কাটিয়ে রবিবার শেষ ফ্লাইটে আবার লন্ডনে চলে আসবে। বুঝে শুনে খরচ করলে জনপ্রতি ১০০-১৫০ পাউন্ডের মধ্যে ট্রিপ খতম!

এমনটা আগে ছিল না। যারা রুশ-মার্কিন স্নায়ুযুদ্ধের সময়কার ছায়াছবি দেখেছেন অথবা স্পাই সাহিত্য পড়েছেন, তারা জানবেন যে সেকালে লন্ডন বা প্যারিসবাসী মানুষের জন্যে প্রাগ বা ওয়ারসো ছিল আন্দামান দ্বীপের মতোই। বহুদূরে, হাতের নাগালের বাইরে, রহস্য আর রোমাঞ্চে মোড়া। বার্লিন ওয়ালের অপরপ্রান্তে। কেউ ভূল করে সেখানে যেতে চাইলে পঞ্চাশ রকম লাল ফিতা আর একশো রকম প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হতো। ডজনখানেক গোয়েন্দার নজরেও হয়তো পড়ে যেতো তৎক্ষণাৎ। 'ওপার' থেকে কেউ 'এপারে' এলেও একই অবস্থা। অথচ সেইদিন কোথায় হারিয়ে গেছে। সেই মানুষদের বাচ্চা-কাচ্চা, নাতী-নাতনীরা বেড়ে উঠছে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক ইউরোপে। জাতিতে জাতিতে পরিচিতি বেড়েছে, সম্পর্কও বেড়েছে আগের থেকে অনেক বেশী।

ভ্রমণের পাশাপাশি আরেকটা বড় সুবিধা - অবারিত কাজের স্বাধীনতা। এখানেও ভিসার চিন্তা নেই, ওয়ার্ক পার্মিট নিয়ে টানা-হেঁচড়া নেই, মিনিস্ট্রি বা সচিবালয়ে ধর্ণা দেয়ার কোন দরকার নেই। আমার ছোট্ট ডিপার্টমেন্টের কথাই ধরি। আমার সহকর্মী হিসাবে আছে ইউরোপের অনেকগুলো দেশের মানুষ। বেলজিয়াম, ফিনল্যান্ড, ডেনমার্ক, রোমানিয়া, পোল্যান্ড, গ্রীস এই মুহুর্তেই চোখে পড়ছে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে আরো আছে - সুইডেন, পর্তুগাল ইত্যাদি। বিলেতের যে কোন বড় সাইজের কম্পানীতে একই ব্যাপার চোখে পড়বে।

একদিকে বাংলাদেশী বিধায় কাজ পেতে আমার হাজারো সংগ্রাম করতে হয়েছিল, কাজ চলে গেলে আরো হাজারটা নতুন ফ্যাসাদে পড়ে যাবো। অথচ ইউরোপীয় সহকর্মীদের অমন ঝামেলা নেই। চাকরি হারালে ইমিগ্রেশন অফিস থেকে চিঠি পাঠাবে না, ঝেঁটিয়ে বিদায় করতে আইন তৎপর হবে না। যতদিন ইচ্ছা যেমন খুশী পড়ে থাকতে পারবে, আরেকটা কাজ না পাওয়া পর্যন্ত। বস্তুত কাজের ক্ষেত্রে একজন ইংরেজ, একজন ফরাসী, একজন পোলিশ বা একজন গ্রীকের মধ্যে আর কোন পার্থক্য নেই। আইনগত দিক থেকে এদের সবার অবস্থান সমান - কারো বিরুদ্ধে কোন বৈষম্য বা ডিসক্রিমিনেশনের অবকাশ নেই।

নিজ দেশে ডাক্তার, পরদেশে ঝাড়ুদার

২০০৪ সালে যখন পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলো EU-তে অন্তর্ভুক্ত হলো, তখন পশ্চিমের সব দেশ কিন্তু সাথে সাথে কাজের পারমিশন দিয়ে দেয়নি। জার্মানীর মত কিছু দেশ বেশ গরিমসি করেছিল। তাদের বক্তব্য ছিল যে পূবের অপেক্ষাকৃত গরীব দেশের নাগরিকদের জন্যে যদি হঠাৎ করে দরজা-জানালা সব খুলে দেই, তাহলে বহিরাগত শ্রমিকের বন্যায় তো সারা দেশ তলিয়ে যাবে। সেই সময় শুধু বৃটেন আর আয়ারল্যান্ড সহ হাতে গোণা তিন-চারটে দেশ EU-র মূল দর্শনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে তাদের কাজের বাজার উন্মুক্ত করে দেয়। তার ফলে ভেসে আসে মানুষের এক প্রবল জোয়ার। কোন কোন হিসাবে ২০০৪ থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে কম সে কম ১ মিলিয়ন পোলিশ শ্রমিক বৃটেনে পাড়ি জমায়। এদের মধ্যে বেশীর ভাগই অল্প-বয়স্ক তরুণ তরুনী। সাগরের অপর পারে আয়ারল্যান্ডেও একই অবস্থা দাঁড়ায়।

অভিবাসন জিনিসটা চমকপ্রদ। রাতারাতি লন্ডন সহ এই দেশের প্রতিটা শহর আর গঞ্জে পোলিশদের সরব উপস্থিতি টের পাওয়া যায়। কিছু কিছু সেক্টরে ওদের তৎপরতা ছিল বেশী লক্ষণীয়। আমি যখন প্রথম লন্ডনে আসি, তখন এই শহরের এমন কোন কাফে বা রেস্তোরা বোধ হয় ছিল না, যেখানে পোলিশ ওয়েটার দেখিনি। কন্সট্রাকশন সেক্টরে অনেক পোলিশ যোগদান করে। আর শহরের বাইরে আমাদের চোখের আড়ালে যে কৃষিখাত, সেখানেও সাধারণ কৃষি-শ্রমিক হিসাবে ওরা ঝাঁপিয়ে পড়ে। আলু বুনতে হবে? ডাকো পোলিশ। স্ট্রবেরি তুলতে হবে? ডাকো পোলিশ।

মোট কথা - কম দামী খাত, যেখানে ঘন্টায় বেতন আইনত মিনিমাম ৬ পাউন্ড বা ৭ পাউন্ড, এমন সব ক্ষেত্রেই পোলিশদের তখন কদর। কঠিন পরিশ্রমী বলে সুনাম। বয়স কম, সদা হাস্য, আর কাজ শিখতে সচেষ্ট। পোলিশ বলতেই বোঝায় ইংরেজ পোলাপানের বিপরীত - এরা কাজে ফাঁকি দেবে না, দিন কামাই দেয়ার বদঅভ্যাস নেই। কথায় কথায় সিক কল-এর অজুহাত মেরে বেহুদা ছুটি নেবে না। ইংরেজী অত ভালো জানে না হয়তো, কিন্তু কাফে রেস্তোরার কাজ চালিয়ে নিতে যথেষ্ট।

auto

পোলিশদের জন্যে আলাদা দোকান-পাট গড়ে উঠলো - সেখানে পোল্যান্ডের যত রকম খানাপিনা আছে সব পাবেন। রুটি বিস্কুট, মুড়ি-মুরকি - সব অরিজিনাল পোলিশ ব্র্যান্ডের। পোলিশ সসেজ, পোলিশ দুধ, কি নাই। দোকানের সামনে পোলিশ ভাষায় সাইনবোর্ড ঝুলে, আর উইন্ডোতে শোভা পায় লাল-শাদা পোল্যান্ডের পতাকা। পোলিশ অভিবাসীদের জন্যে সাপ্তাহিক আর পাক্ষিক পত্রিকা বেরুলো, আর ইয়াং পোলাপানের জন্যে পোলিশ নাইটক্লাব গড়ে উঠলো।

যারা এই দেশে এসেছিলো, তাদের গড় শিক্ষা-দীক্ষার মান বেশ ভাল ছিল। কোথায় যেন পড়েছিলাম যে পোলিশ মাইগ্র্যান্টদের বেশীর ভাগেরই ন্যুনতম ব্যাচেলার্স ডিগ্রি পর্যন্ত পড়াশোনা আছে। কেউ কেউ তারও বেশী - মাস্টার্স পাশ। এত উচ্চ শিক্ষিত পোলাপান তাহলে এরকম ছুটা কাজ কেন করছে? উত্তর খুঁজতে পোল্যান্ডে যাওয়া লাগতো। আজকে পোল্যান্ডের অর্থনীতির অবস্থা বেশ রমরমা, কিন্তু ৫ বছর আগে সিচুয়েশান বেশ ভিন্ন ছিল। বেকারত্বের হার ছিল ২০%। একজন ইউনিভার্সিটি পাশ-করা চাকুরের মাসিক বেতন (পাউন্ডে হিসাব করলে) ১৫০-২০০ পাউন্ড হতো বড়জোর। আর এদিকে লন্ডনে ঘন্টায় মিনিমাম বেতনই ৬ পাউন্ড - ভালোমত কাজ করলে মাসে হাজার-বারো'শ পাউন্ড উপার্জন করা কোন ব্যাপারই না। এদেশের রেস্টুরেন্টের ফ্লোর ঝাড়ু দিয়েও নিজ দেশের একজন ডাক্তারের থেকে ঢের বেশী টাকা কামানো সম্ভব।

আমার বন্ধু টমাস আর কাশা

বাস্তবে তাই হলো। টাকা বাঁচাতে অনেক পোলিশ থাকতো বেশ গাদাগাদি করে। এমনও শুনেছি যে একটা দুই বেডরুমের বাড়িতে ৮-১০জন থাকছে। কিচেনে তোষক পেতে, এমন কি বাথরুমে ঘুমানোর রিপোর্টও এসেছিল টিভিতে। তবে এগুলো সম্ভবত একটু এক্সট্রিম উদাহরণ। আর সমস্ত পোলিশই যে ছুটা কাজ করতো এমনটা ভাবাও ঠিক না। আমার সাথে দুইজন কাজ করতো, এদের একজন টমাস ছিল দুর্দান্ত প্রোগ্রামার আর একই সাথে অসম্ভব কর্মঠ। দিনের পর দিন স্ক্রীনের সামনে পড়ে থাকতে দেখতাম টমাসকে - লাইনের পর লাইন কোড লিখে যাচ্ছে বিরামহীন গতিতে।

অবশ্য এই ছেলেটা একটু পাগলাটেও ছিল। কোন উইকেন্ডেই সে লন্ডনে থাকতে চাইতো না। তাই ডিস্কাউন্ট এয়ারলাইন্স (যেমন রায়ান এয়ার বা ঈজি জেট) থেকে সে এক দফায় দুই-তিন মাসের রিটার্ন টিকেট কিনে রাখতো। প্রতি শুক্রবার সন্ধ্যায় টমাস অফিস থেকে এয়ারপোর্ট দৌড়ায়। রাত নাগাদ ওয়ারসো-তে বাপ-মার বাসায় পৌঁছে যায়। আবার সোমবার সবচেয়ে ভোরের ফ্লাইট নিয়ে লন্ডনে ফেরে, এয়ারপোর্ট থেকে সোজা অফিস - সব মিলিয়ে ৩-৪ ঘন্টার মামলা।

টমাস কত হিসাবী, পরে বোঝা গেল। টাকা জমিয়ে সে ওয়ারসো-তে একটা ফ্ল্যাট কিনে ফেললো। নিজ দেশে একটা গার্লফ্রেন্ড জুটিয়ে ফেললো। আর ওস্তাদের শেষ মার হিসাবে সে বছরখানেক আগে ওয়ারসো-তেই একটা বিদেশী ব্যাংকে চাকরি বাগিয়ে ফেললো। তারপর অফিসে এসে আমাদের জানান দিলো যে সে চাকরি ছেড়ে দিয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে। পিচ্চি ছেলে কিন্তু জীবনে যে অনেক উন্নতি করতে পারবে, এটা বলাই বাহুল্য।

টমাসের মত আরেকজন পোলিশের সাথে গত বছর বন্ধুত্ব হয়েছিল। মেয়েটি আমাদের অফিসের লবিতে রিসেপশনিস্ট হিসাবে কাজ করতো। নাম কাশা (Kasia)। লম্বায় ৫-৮ বা ৫-৯ হবে, দেখতে সাক্ষাৎ মডেলদের মতো। সমস্ত বিল্ডিং-এ তার থেকে সুন্দরী মেয়ে নিশ্চিত আর ছিল না। কাশার সাথে আলাপ হয় একটু ভিন্ন ভাবে, গত বছর আমার ক্রাকোভ সফরের আগে দিয়ে। পরে ফিরে এসে ওর দেশ নিয়ে ওর সাথে অনেক গল্প-গুজব করেছিলাম।

এই কাশা বলতো যে সন্ধ্যাবেলায় অফিসের পাশের বারে মদ খেয়ে কিছু ইংরেজ ম্যানেজার যখন টলতে টলতে অফিসে ফিরতো, তখন অনেকেই তার প্রতি অশ্লীল আকার-ইঙ্গিত করতো। বিভিন্ন কুপ্রস্তাব দিতো। কিন্তু কাশা দেখতে যেমন সুন্দরী, বুদ্ধি-সুদ্ধিতে ঠিক ততখানি ধীর-স্থির। এইসবে বিচলিত হবার মত মানুষ সে না।

না, তার সমস্যা অন্যত্র। সে পড়াশোনায় ভালো ছিল, পোল্যান্ড থেকে একাউন্টিং-এ ডিগ্রি করে এসেছে। এখন রিসেপশনিস্ট হিসাবে কাজ করলেও উচ্চাভিলাষ হারিয়ে যায়নি, ইচ্ছা আছে তার চার্টার্ড একাউন্ট্যান্ট হবার। কিন্তু তার পোলিশ বয়ফ্রেন্ডের চিন্তাভাবনা সম্পূর্ণ বিপরীত। ভবিষ্যত নিয়ে তেমন চিন্তা নেই, লন্ডনে আছো, কামলা খাটো, টাকা বানাও, টাকা উড়াও - এই তার জীবন-দর্শন। লিভ ফর দ্য ডে আর কি। কাশার সেটা ধাঁচে সয় না। যে করে হোক, একাউন্টিং লাইনে ঢুকতে হবে। সে কারনে যদি আরো পড়াশোনা করা লাগে, করতে হবে, যদি বিনা পয়সায় কোন একাউন্টিং ফার্মে কাজ করতে হয়, তাও সে করতে রাজী।

বাড়ি ফেরার পালা

বৃটেনে যখনে মন্দার ছোঁয়া লাগে প্রায় বছরখানেক আগে, কাশার থেকে প্রথম শুনতে পাই যে ওর পোলিশ বন্ধু-বান্ধবীরা কেউ কেউ দেশে ফিরে যাওয়ার নিয়ত করছে। EU-তে ঢোকার কিছু দিন পর থেকেই পোল্যান্ডের অর্থনীতি বেশ চাঙ্গা হয়ে ওঠে। জার্মানী-ফ্রান্সের বিশাল এক্সপোর্ট বাজারে ওদের শিল্পজাত দ্রব্যের কদর বেড়েছে। বছরে ৬% প্রবৃদ্ধি হেসে-খেলে অর্জন হচ্ছে। এক সময় বেকারত্ব ছিল ২০%-এর কাছাকাছি, এখন তা নামতে নামতে ৮-৯% এসে ঠেকেছে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে পোলিশ কম্পানীরা এখন শ্রমিক শর্টেজের নালিশ জানাচ্ছে! ওদিকে পূব দিকের প্রতিবেশী দেশ ইউক্রেন - সেখান থেকে আরো দরিদ্রতর মাইগ্র‌্যান্ট মানুষ চলে আসছে পোল্যান্ডে কাজের খোঁজে। মানে চাকা পুরো এক চক্কর ঘুরে আসলো, সারা বিশ্বে অর্থনীতি আর অভিবাসনের যেই নিবিড় যোগাযোগ সেটা আরেকবার ফুটে উঠলো।

কাশা কারেন্সির কথাও কিছু বললো। বললো যে দেখো আমি যখন এই দেশে আসি, তখন এক পাউন্ডে ৭ পোলিশ মুদ্রা (zloty, য্‌লোতি) পাওয়া যেতো। এখন য্‌লোতি সাঁই-সাঁই করে উঠছে আর পাউন্ড নামছে। এক পাউন্ড এখন মাত্র চার য্‌লোতির সমান। টাকা কামাবো কি, জমাবো কি, আর দেশে পাঠাবো কি? থাকা না থাকা সমান কথা। তাই অনেকে চলে যাচ্ছে। আমি যদিও থাকছি আরো কিছুদিন।

এর কয়েকদিন পরেই আমি অফিস বদল করি। টমাস আর কাশা - ওদের সাথে যোগাযোগ ছিন্ন হয়ে যায়। কে কোথায় কেমন আছে এখন, জানি না।

তবে এতটুকু টের পাই, যে মন্দার প্রভাব বেশ বাজে ভাবে পড়েছে লন্ডনের পূর্ব ইউরোপীয় পোলাপানের ঘাড়ে। দোকান-পাট, কাফে-রেস্তোরার ব্যবসা আজকাল বেশ খারাপ, ওরা লোক কমাচ্ছে। আর হাউজিং ক্র্যাশের পরে এখানকার ঘর-বাড়ি নির্মান তথা পুরো কন্সট্রাকশন সেক্টরই থুবড়ে পড়েছে। ফলে ঐ খাতেও কোন কাজ নেই আর। রাস্তা-ঘাটে পোলিশ ভাষার কল-কাকলী আগের থেকে ইদানীং কম শোনা যায়। খবরে পড়লাম যে ১ মিলিয়ন পোলিশদের মধ্যে আনুমানিক অর্ধেক ইতিমধ্যে এই দেশ ছেড়ে চলে গেছে।

মন্দার আছর পোল্যান্ডেও পড়েছে, কিন্তু ওরা বৃটেনের মত এতো ভয়ংকর ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে হচ্ছে না। টেনেটুনে চালিয়ে যাতে পারবে। আর শত হলেও নিজের দেশ। এই কয় বছরে ভালো ইংরেজী রপ্ত হয়ে গেছে অনেকের, সেটা নিজ দেশে ভালো চাকরি পেতে সাহায্য করবে। আর সব কিছুর শেষে আছে EU সদস্য হবার গ্যারান্টি। সময় আর সুযোগ এলে আবার এই দেশে ফেরা যাবে, অথবা জার্মানী বা ফ্রান্সে যাওয়া যাবে। যেই নিয়ম জার্মানী বসিয়েছিল - যে নতুন দেশের গরীব শ্রমিকদের জন্যে সদর দরজা খোলা হবে না - সেই নিষোধাজ্ঞা ছিল সাময়িক। ২০১২ সালের পর থেকে সব্বাইকেই সব দেশে উন্মুক্তভাবে চলা ফেরা আর কাজ-কাম করার অধিকার দিতে হবে, এটা স্বয়ং EU-র আদেশ।

ক্যান্টিনে আজ নতুন মুখ

আজকে আমার এতো প্যাঁচালের পেছনে যে মূল কারণ, সেটা বলে ফেলি। দুপুরে ক্যান্টিনে গেছি নিয়মমাফিক। দেখি কাউন্টারে নতুন এক মেয়ে। ওর মুখ খোলার সাথে সাথে শুনতে পেলাম বিশুদ্ধ লন্ডনী উচ্চারণে নির্ভুল ইংরেজী। পোলিশদের মত এর কথায় কোন ভারী এক্সেন্ট নেই। ভীষণ অবাক হলাম। তাকে শুধালাম -

- তুমি কি ইংরেজ?
- হ্যাঁ।
- কি আশ্চর্য - এই ক্যান্টিনে এর আগে কখনো কোন ইংরেজ দেখিনি।
- হ্যাঁ, আসলে এই টীমে আমিই প্রথম ইংরেজ। আশপাশে যা দেখতে পাচ্ছি, সবাই ভিনদেশী। কিন্তু আমার উপায় ছিল না, আমার জব এজেন্সি আমাকে বলে দিয়েছে এখানে এপ্লিকেশন জমা দিতে - আর কাজটাও কপালজোরে পেয়ে গেলাম।

আগেই বলেছি যে ছুটা কাজের বেলায় কম-বয়েসী ইংরেজদের বেশ দুর্নাম আছে - ওরা কর্ম-বিমুখ, অতি আয়েশী আর ফাঁকিবাজ। কোন প্রকার কষ্ট না করে বরং বেকার ভাতা খেতেই ওরা অনেক বেশী রাজী। কিন্তু দিন বদলের হাওয়া যে কত প্রবল, ক্যান্টিনে নতুন মুখ আজকে তাই প্রমাণ করে দিলো। আমি ওর কথাগুলো চিন্তা করতে করতে ডেস্কে ফিরলাম। আর ঠিক তখনই FT-র পাতায় চোখে পড়লো এই হেডলাইন - Britons take whatever work they can. লিখেছে, ক্ষেতের আলু-পটল তোলার কাজ থেকে শুরু করে চিড়িয়াখানার জীব-জন্তুর খাঁচা পরিষ্কার করা - ব্রিটিশ লোক আজকাল যা কাজ হাতে পাচ্ছে, তাই লুফে নিচ্ছে।

পত্রিকার হেডলাইন জীবন্ত হলো আমাদের ক্যান্টিনেও।

(ফটো - ফ্লিকার)


মন্তব্য

কিংকর্তব্যবিমূঢ় এর ছবি

হিমুর কোন একটা বইয়ে একটা ডায়লগ ছিল, "আপনার বাসায় আসা একটা শিক্ষাসফরের মত, কত কিছু যে জানা যায় ..."

আপনার পোস্ট নিয়েও একই কথা খাটে দেঁতো হাসি

চলুক
................................................................................................
খাদে নামতে আজ ভয় করে, নেই যে কেউ আর হাতটাকে ধরা ...

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

কি যে কন! দেঁতো হাসি
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

এনকিদু এর ছবি

যা কইছে ঠিকই কইছে ।


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

অতিথি লেখক এর ছবি

এদের একজন টমাস ছিল দুর্দান্ত প্রোগ্রামার আর একই সাথে অসম্ভব কর্মঠ।

পোলিশরা খুবই ভালো প্রোগ্রামার হয়। প্রোগ্রামিং কনটেস্টে ওদের অবস্হান দেখলেই বুঝা যায়।
------------
উদ্ভ্রান্ত পথিক

এনকিদু এর ছবি

ওয়ারসো ঈগলস


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

অতিথি লেখক এর ছবি

Tomek Czajka
দেঁতো হাসি
------------------
উদ্ভ্রান্ত পথিক

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

সবকিছু কেমন ব্যারাছ্যারা লাইগা যাইতাছে বস!!! মন খারাপ

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

আর কয়েকটা মাস দাঁত কামড়ায় পইড়া থাকো। খবরে কয় মার্কেটের বটম নাকি দেখা যাইতেছে - এই সামারের মধ্যে তলায় গিয়া ঠেকবো। বিশ্বাস করুম কি না ভরসা পাইতেছি না!
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

অমিত এর ছবি

বাড়ির দাম বাড়তারে বলতেছেন ?

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

হাহা, বইতে দিলে শুইতে চায় আর কি চোখ টিপি

না, বাড়ির দাম শিগগির বাড়ার তেমন চান্স নাই। বেকারত্ব ১০%-এ গিয়া ঠেকবো কয়েক মাস পরে, যেইখানে মেরিকা-বৃটেনের গড় বেকারত্ব ছিল ৫%। মিলিয়ন মিলিয়ন বেকার রাস্তায় ঘুরবো। মানে সাধারণ মানুষের বাড়ি কেনার ডিমান্ড মোটামুটি শেষ, অন্তত আগামী ১২ মাসের জন্যে। যাদের চাকরি এখনতরি আছে, তারা মর্টগেজের মত বড় কমিটমেন্টে যাইতে ভয় পাইবো। সব মিলায় ধারণা করা হইতেছে বাড়ির দাম এই বছরের শেষ নাগাদ পতনশীল।

তয় এইসব হইলো best guess। আসল কথা হইলো, কেউ কিস্যু জানে না!
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

আপনার এই লেখাটা অনেক সহজ। পড়ে আরাম পেলাম। হাসি

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

আফা, আমি তো সব লেখাই সহজ করে লেখার ট্রাই করি!
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- আগ্গুন পোস্ট। চলুক

পোলিশ মেয়েরা সুন্দর। ছিপছিপে গড়নের কারণে সেই সৌন্দর্য অপার্থিবতায় গিয়ে ঠেকে!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

কাশা'রে দেখলে হার্টবিট বন্ধ হয়ে যাইতো আমার প্রায়। সাক্ষাৎ দেবী ছিল।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

অমিত এর ছবি

ধুগোরে কেই জলদি বাতাস করেন

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

চলুক

লেখাটা অসম্ভব ভাল্লাগসে। অনেক কিছু জানলাম।

হিমু এর ছবি
সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ব্রিটেনেরই যদি এই হাল হয়, তাইলে আমাদের হকিকত কী? এই দেশে তো মানুষের চেয়ে বেকার বেশি।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

শামীম এর ছবি

পোস্ট পড়েছি শুরুতেই .... ....

দেশে এপার্টমেন্ট শিল্পতো আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ .. .. ... যে দাম! তবে কয়েকদিন আগে শুনলাম ঢাকায় (পল্লবীতে) একটা এপার্টমেন্ট আগে ৬৭ লাখ থেকে কমিয়ে এখন ৫৫ লাখ চাচ্ছে (এখন আবার রেডি ফ্ল্যাট!)। রিসেশনে হয়তো কমে যুক্তিসংগত দামে ঠেকবে। কিন্তু ঢাকায় বড় বড় আলিশান বিল্ডিং ওঠা বেড়েছে বলেই মনে হচ্ছে।

গুলশানে বড় বড় অফিস স্পেস ভাড়া হচ্ছে না, আগে সাজানো ভাড়াটিয়া/ক্রেতাদের সাথে কম্পিটিশন করে আকাশছোঁয়া দামে কিনেছে/ভাড়া নিয়েছে যারা, ব্যাবসা সেই অনুপাতে ভাল হয়নি বলে তাঁরাও ওগুলো ছেড়ে অন্য এলাকায় চলে যাচ্ছে। - কয়েকদিন আগে ইত্তেফাক বা প্রথম আলো পত্রিকায় এমন একটা খবর দেখলাম।

আমাদের অফিস বর্ধিতকরণের জন্য গুলশান ২ চক্করে একটা নতুন ভবন ভাড়া নিতে চাইলে ১০০ টাকা/বর্গফুট/মাস চেয়েছিল। অথচ পরে এর চেয়ে অনেক সস্তায় (এক চতূর্থাংশ খরচে) আরো ভালো জায়গায় পেয়েছি। প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির জন্য এর চেয়ে ভাল জায়গা হতে পারে না ... পেয়েছি বনানী, কামাল আতার্তুকে একেবারে নর্থ সাউথের ছেড়ে যাওয়া ভবনে।
------
দোতালার ক্যান্টিনে খাইতে মঞ্চায় .... .... ....
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

থ্যাংক্স শামীম ভাই, এই প্রথম দেশের প্রপার্টি মার্কেট নিয়া কেউ একটা কনফার্ম খবর দিল। আমার বরাবর ধারণা ছিল যে আমাদের প্রপার্টি খাতটাও পাশ্চাত্যের মতো বিরাট একটা বাবেল - যার মূলে আছে রেমিট্যান্স প্রসূত সহজ লিকুইডিটি। রেমিট্যান্সের যে বারোটা বাজবে, এমন আগাম আভাস পাওয়া গেছে - এই গ্রাফটা দেখেন। এমতাবস্থায় জমি-ফ্ল্যাটের দাম হিলিয়াম বেলুনের মত উড়তে থাকবে বলে বিশ্বাস হয় না। এখন বসুন্ধরার জমির দাম বা উত্তরার ফ্ল্যাটের দাম কতখানি নামতে পারে, সেটাই প্রশ্ন।

আর কারো কাছে কোন উদাহরণ জানা থাকলে জানাইয়েন।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

তানভীর এর ছবি

লেখা মুচমুচা হইছে চলুক । মাঝে মাঝে মন্দাবস্থাও কিন্তু খারাপ না। এই যেমন আপনেরে এখন এইজন্য নিয়মিত দেখা যাইতেছে। কাশা-পাশা আশে-পাশে থাকলে তো আপনের দেখাই পাওন যায় না। চোখ টিপি

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

বুক্কে আর ছ্যাঁচা দিয়েন না ভাইডি... শুধুই হা-হুতাশ! (আর মন্দা শেষ হইয়া গেলে আমি তখন কি নিয়া লেখুম, সেইটাও চিন্তার বিষয়! যারে কয় counter-cyclical market আর কি চোখ টিপি)
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

আলমগীর এর ছবি

দুইজনরে একসাথে পাইছি:
আমি প্রতিবার এই অভতার দেইখা প্যাঁচে পড়ে যাই, কে যে কে? আপনেরা দুইভাই কি ছবি অদল বদল করেন?

লেখা নিয়া আর কী কমু!

নিবিড় এর ছবি

দারুন লেখা চলুক মন্দা নিয়ে ইদানিং এক স্যার খালি থিউরী কপচায় কিন্তু সেই থিউরীর থেকে এই লেখা শ্রম বাজারে মন্দার আসল গতি প্রকৃতি বুঝতে মনে হয় আর ভাল সাহায্য করল তাই ধন্যবাদ মুস্তফী ভাই।


মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

মন্দা কিভাবে এলো, এর থেকে মুক্তির কি উপায়, আর ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক সিস্টেমেরই বা কি রূপ হবে, এই সব প্রশ্ন নিয়ে ফিনানশিয়াল টাইমস পত্রিকা এক দারুণ সিরিজ শুরু করেছে। The Future of Capitalism। অমর্ত্য সেন থেকে শুরু করে অনেক নামী দামী ব্যক্তিত্বদের চিন্তা ভাবনা ওরা তুলে ধরছে। প্রতিদিনই পড়ে দেখার মত।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

দিগন্ত এর ছবি

আমিও পড়ছি এটা, দারুণ লাগছে। আর লেখা সম্পর্কে বিশেষণ আর না দিলেও চলে হাসি. আমি এর মধ্যে একটা আর্টিকেল অনুবাদ করব ভাবছিলাম।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

মনে হল যেন শৈশবে ফিরে গেলাম... পূর্ব ইউরোপ নিয়ে একেকটা গল্পে যেন বেড়িয়ে আসতাম সেখান থেকে। এই বৈঠকী ভাবটা অসামান্য।

শাহান এর ছবি

একটানে পড়ে গেলাম ... দারূন ...

কল্পনা আক্তার এর ছবি

দারুন লিখেছেন!

আজ বিকালে আমি ওয়ারসো'তে এলাম। রাতে খাবারের সময় আমার পোলিশ সহকর্মী ও বন্ধুদের সাথে এইসব বিষয়ে কথা হচ্ছিল তারা যা বললো তার হুবুহু মিল পাচ্ছি আপনার লেখায়।

...........................................................................................................
সব মানুষ নিজের জন্য বাঁচেনা


........................................................................................................
সব মানুষ নিজের জন্য বাঁচেনা

সবজান্তা এর ছবি

দুর্দান্ত !

ক্যামনে লেখেন এতো সহজ কইরা মন খারাপ


অলমিতি বিস্তারেণ

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

বাংলাদেশের অবস্থা যাই হোক না কেন আগুন দামের জমি আর ফ্ল্যাট কেনার লোকের অভাব হবে বলে মনে হয় না। অর্থনীতির কোন আঁচ-আছর এদের গায়ে লাগে না। ঢাকার মত ছোট শহরে যে কয় হাজার ফ্ল্যাট উঠবে সেগুলো তারা অনায়াসে কিনে নেবে। শুধু দুদক-এনবিআর এর মত প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ডিষ্টার্ব না করলেই হয়। ঢাকা বা এর পেরিফেরীর বিশ কিলোমিটারের মধ্যে জমি বা ফ্ল্যাট কেনার কথা ভাবতেও পারবেনা আমার মত লোকজন। নানা রকম হাউজিং লোন, জমি-ফ্ল্যাট কেনার লোনগুলোর প্রতি মাসের ইনসটলমেন্ট যা তা আমার মাসিক আয়ের চেয়েও বেশি। বলাই বাহুল্য ঐসব স্কীম আমার মত লোকজনের জন্য না। তাই বলে ভাববেন না যে দেশে ওসব স্কীম নেবার মানুষের অভাব আছে। দেশে বেকারের সংখ্যা চার কোটি ছাড়ালেও ওসব স্কীম ঠিকই চলবে। এখানে জমি-ফ্ল্যাট বানানো-বিক্রি করার কোম্পানীগুলো বাড়তি লাভ করা একটু কমে গেলেই চেঁচিয়ে আকাশ কাঁপিয়ে তোলে। তাদের কখনো অফিসে বসে মাছি মারতে হয় না। বরং অফিস থেকে মাছির মত লোকজনকে তাড়াতে হয়।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ফকির লালন এর ছবি

ঢাকা শহরে এখন চলছে ডেভেলপারদের একতরফা দাম বাড়াবার খেলা।

গত দু বছর যে দামে যে বুকিং দিয়েছে সে দামে সে আর কিনতে পারছেনা বলে শোনা যাচ্ছে। অজুহাত, র্নিমান সামগ্রীর দাম নাকি বেড়েছে। আসলে, গত দুবছর যেমন ইচ্ছে তেমন দামে কেনবার লোক পাওয়া যাচ্ছিলোনা। তাই যাকেই যে দামে রাজী করানো গেছে সে দামে ফাঁদে ফেলে, নিয়মিত কিস্তি আদায় করে, এখন চলছে চোখ উল্টানোর পালা। বেচারা মধ্যবিত্ত সস্তার লোভে যে ঢেকি গিলেছে তাকে না পারে গিলতে না উগরাতে। হাজার হাজার কোটি টাকার ডেভেলপার কোম্পানি আর মালিকের বিরুদ্ধে সে একা কিভাবে লড়বে?

দেখার কথা ছিল যার সেই রিহাব দেখেও না দেখার ভান করছে, তারা যে ভাই ভাই। স্থপতি আর প্রকৌশলীরা কৌশলে নিশ্চুপ। ক্রেতার স্বার্থ কে দেখবে?

দিগন্ত এর ছবি

বাবল বার্স্ট করা শুধু সময়ের অপেক্ষা।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

রুশ আর ইউক্রেনীয় ভাষার সাথে কিছুটা মিল থাকার কারণে পোলিশ দোকানের ছবিতে KRAKOWIANKA শব্দটির অর্থ আন্দাজ করতে পারি - KRAKOW GIRL হাসি
(তুলনা: KIEVLYANKA - KIEV GIRL)

কী যে শান্তি লাগে রে, ভাই, আপনের লেখা পড়তে! লম্বা লেখা পড়তে জুইত পাই না সচরাচর। এইটা এক টানে পইড়া গেলাম এবং শেষে মনে হইলো: অ্যাতো তাড়াতাড়ি শেষ হইলো ক্যান?

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
যৌনদুর্বলতায় ভুগছি দীর্ঘকাল। দুর্বল হয়ে পড়ি রূপময়ী নারী দেখলেই...

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

আবার ক্রাকোভ যাইতে মঞ্চায়। এই বছর পূর্ব ইউরোপ্টারে টার্গেট রাখছি, ভালো কিছু সিটি ব্রেক নিতে হবে। জ্বালা শুধু ঐ বারে বারে ভিসা নিতে।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

অমিত এর ছবি

ভিসুআল গাইডটা খারাপ না

লিংক

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

জব্বর লিংক, অনেক ধন্যবাদ! সেভ করে রাখলাম, রসায় রসায় দেখতে হবে পুরাটা।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

ফারুক হাসান এর ছবি

কাশার কোনো ফটুক তুলেন্নাই? দেখতে মঞ্চায়!
*********************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

আপনে একা না রে ভাই! কতদিন দেখি না সেই পরীরে, লেখার পর থেকা দেখি আমার মন খালি ডাক পারে...
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

সিরাত এর ছবি

সুপার্ব লাগলো ভাইয়া! পেপারে পড়া এক জিনিস, কারো ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা আরেক জিনিস। কমেন্টগুলি থেকেও শিখলাম।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।