কেন যামিনী না যেতে জাগালে না, বেলা হল মরি লাজে (প্রথম পর্ব)

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি
লিখেছেন সাক্ষী সত্যানন্দ [অতিথি] (তারিখ: সোম, ২২/০৯/২০১৪ - ১:১২পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

[ আগস্ট মাসটা বাঙ্গালীর ইতিহাসে অনেক বড় বড় দুর্ভোগ বয়ে এনেছে। তাঁর সাম্প্রতিকতমটি হল “১৯৭১ ভেতরে বাইরে” নামের একটি বই প্রকাশ। বইটির কথা বোধকরি সবাই জানেন। লেখকের নামও সবাই জানেন, তিনি বাংলাদেশের প্রথম বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল আব্দুল করিম খন্দকার। লেখকের আর একটি পরিচয়, তিনি মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশের সামরিক হাইকমান্ডের তৃতীয় সর্বোচ্চ পদধারী। এই পর্যন্ত কোনই সমস্যা নেই। সমস্যা হল তাঁর প্রকাশনীর নাম “প্রথমা”। এই এলিট প্রকাশনা সংস্থাটি ‘বদলে যাও বদলে যাও’ স্লোগানের জন্য খ্যাত (কুখ্যাত?) পত্রিকা ‘প্রথম আলো’ এর একটি সহযোগী সংগঠন। মাতৃ সংগঠনের মত এই প্রকাশনীটিরও সত্যকে বদলে দেবার দূর্নাম আছে। এই ব্যাপারে নিকট অতীতে সহসচল নজরুল ইসলাম একটি প্রামাণ্য লেখা আছে, উৎসাহী পাঠক সম্পূরক লেখা হিসেবে এটিতে ক্লিকাতে পারেন।

১৯৭১ ভেতরে বাইরে প্রকাশের পর থেকেই ‘প্রথম আলো’ গ্রুপের অতিপ্রচার ও সত্যবিমুখ কিছু টকশোজীবিদের হেঁড়ে গলার চিৎকারে বইটি আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে রয়েছে। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের শেষাংশ সংক্রান্ত একটি প্রমাণবিহীন দাবির প্রেক্ষিতে এই অংশটি বরাবরই চায়ের কাপ থেকে কফির মগ সবখানেই ঝড় তুলেছে। সহসচল নজরুল ইসলাম এখানে এই সংক্রান্ত প্রামাণ্য ও পরিশ্রমলব্ধ একটি আলোচনার সূত্রপাত করেছেন। আরেক সহযোদ্ধা ওমর শেহাব এখানে তৎসংক্রান্ত পত্রিকাদি ঘেঁটে একটি রেফারেন্সের ভাণ্ডার তৈরি করে রেখেছেন। এই প্রসঙ্গের আতিশয্যে বইটির আরও অনেক আলোচনাযোগ্য অংশের ওপর তেমন কোন আলোকপাত করা হচ্ছে না। এ কে খন্দকার পদাধিকারবলে মুক্তিযুদ্ধের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ বলেই বিবেচিত। তিনি যদি প্রথমা প্রকাশনের খপ্পরে পড়েন তাঁর চাইতে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বহুগুণে হুমকির সম্মুখীন হয়। এই প্রেক্ষিতে বইটির যথাসম্ভব পূর্ণাঙ্গ আলোচনা হওয়া প্রয়োজন। এই নিবন্ধে সেই চেষ্টাই করা হয়েছে।

এই পর্বে ২৩২ পৃষ্ঠাসংখ্যা সংবলিত বইটির প্রথম থেকে ২২ পৃষ্ঠা পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য অংশ আলোচিত হল। আসন্ন পর্বসমূহে বইটির পরবর্তী অংশ ক্রমান্বয়ে আলোচিত হবে। মন্তব্য অংশে সহসচল, নিয়মিত পাঠক ও নীরব পাঠকদের সক্রিয় সহযোগিতা একান্ত কাম্য। ]

১। ফ্ল্যাপ-কথনঃ

বইটির প্রথমেই পাওয়া যায়ঃ

বইটি মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাক্রমের বর্ণনা নয়। এতে পাওয়া যাবে যুদ্ধের নীতিনির্ধারনী বিষয় এবং তার সফলতা, ব্যার্থতা ও সীমাবদ্ধতা সম্পর্কিত বেশ কিছু মূল্যবান তথ্য। প্রচলিত মত ও আবেগের উর্ধ্বে থেকে বাস্তবতা আর নথিপত্রের ভিত্তিতে বিষয়গুলোকে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেছেন লেখক। এমন কিছু বিষয়েরও উল্লেখ আছে বইটিতে যা নিয়ে এর আগে বিশেষ কেউ আলোচনা করেন নি। লেখকের নিজের অভিজ্ঞতার সঙ্গে প্রাসঙ্গিক নথিপত্রের সমর্থন বইটির নির্ভরযোগ্যতা বাড়িয়েছে। [বাঁয়ের ফ্ল্যাপ]

খুবই সুন্দর ও যৌক্তিক (একেবারে গোল গোল) কথা। বক্তব্যের সঙ্গে আমার দ্বিমত থাকার কথা ছিল না যদি দাবীকৃত ‘প্রাসঙ্গিক নথিপত্রের’ যথেষ্ট সরবরাহ থাকত। তাই বইটির নির্ভরযোগ্যতাকে বিনা প্রশ্নে ছাড় দেয়াকে আত্মঘাতী হবে বলেই মনে হয়। পূর্নাঙ্গ আলোচনার প্রেক্ষিতে বইটির নির্ভরযোগ্যতা যাচাইয়ের ভার পাঠকের হাতেই ছেড়ে দিচ্ছি। বইয়ের পেছনের ইনার ফ্ল্যাপে একটি সংক্ষিপ্ত লেখক পরিচিতি রয়েছে। এটি জানাচ্ছেঃ

গ্রুপ ক্যাপ্টেন হিসাবে তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন এবং ডেপুটি চীফ অফ স্টাফ নিযুক্ত হন। স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত তিনি বিমানবাহিনীর প্রধান ছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে সপরিবারে হত্যা করা হলে এর প্রতিবাদে তিনি বিমানবাহিনী প্রধানের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। ১৯৭৬ থেকে ১৯৮২ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া এবং ১৯৮২ থেকে ১৯৮৬ পর্যন্ত ভারতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। ১৯৯৮ ও ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮৬ থেকে ১৯৯০ এবং ২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনামন্ত্রী ছিলেন। [ডানের ফ্ল্যাপ]

দাগ দেয়া অংশটুকু আমি অন্তত এই প্রথমবারের মত দেখছি। আসুন, এই সংক্রান্ত আরও কিছু নথিপত্র ঘেঁটে দেখি

অধ্যাপক আবু সাইয়িদ রচিত ‘বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড ফ্যাক্টস এন্ড ডকুমেন্টস’ (চতুর্থ সংস্করণ, ১৯৯৪, জ্ঞানকোষ প্রকাশনী) কিন্তু বলছে ভিন্ন কথাঃ

খন্দকার মোশতাকের ঐতিহাসিক (!) ভাষণ তখন শেষ হয়েছে। একটু পরেই বাংলাদেশ বেতারে নতুন প্রেসিডেন্টের প্রতি আনুগত্যের ভাষায় কথা বললেন একে একে সেনাবাহীনির প্রধান শফিউল্লাহ, বিমানবাহিনীর প্রধান এ.কে. খন্দকার, নৌবাহিনীর প্রধান এম. এইচ. খান, বিডিআর প্রধান খলিলুর রহমান, পুলিশ প্রধান নুরুল ইসলাম, রক্ষীবাহিনীর ভারপ্রাপ্ত প্রধান লে. কর্ণেল আবুল হাসান। এল বিভ্রান্তি। বিক্ষোভের পরিবর্তে এল হতাশা। প্রতিশোধের বদলে এল ক্ষোভের নিষ্ক্রিয়তা। সবাই ভাবল তাহলে কি সত্যই কনসলিডেটেড আর্মি ক্যু? [পৃষ্ঠা - ১৪০]

একই বইয়ে আরও জানা যাচ্ছেঃ

বঙ্গবন্ধু হত্যার পরে ১৬ অক্টোবর পশ্চিম জার্মানীতে অবস্থানরত, ন্যাটোর এয়ার ফোর্স স্কুলের ইন্সট্রাক্টর পেন্টাগনের সিআইএ’র খাস বান্দা এম. জি. তোয়াবকে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রধান করা হল। স্বাধীনতা যুদ্ধের বিমানবাহিনীর প্রধান এ.কে. খন্দকারকে বিদায় দেয়া হল। [পৃষ্ঠা - ১৪৩]

এবং

মোশতাক প্রেসিডেন্ট হয়ে সূর্যসন্তানদের বিচার করা যাবে না বলে এক বিশেষ অধ্যাদেশ জারী করে। শুধু তাই নয়, এই খুনী চক্রকে নিরাপদে বিদেশে যাবার যাবতীয় ব্যাবস্থা করে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বোস্টার, কায়সার এবং মোশতাক। প্রেসিডেন্ট জিয়া বিদেশে অবস্থানরত এই চক্রের ১২ জনকে বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ দুতাবাসে চাকুরী দেন ফরেন মিনিস্ট্রির ডেপুটেশনে এবং ১৯৮০ সালে তাদেরকে বিসিএস ফরেন সার্ভিস ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। [পৃষ্ঠা - ১৫৫]

এই বারো জনের সঙ্গে খন্দকার সাহেবকে এককাতারে আনতে আমি আগ্রহী নই। কিন্তু, পরম্পরা বিচারে “প্রচলিত মত ও আবেগের উর্ধ্বে থেকে বাস্তবতা আর নথিপত্রের ভিত্তিতে বিষয়গুলোকে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করে” কেউ যদি তা করে ফেলে তাকে কি খুব দোষ দেয়া যাবে?

এ প্রসঙ্গে আরও উদ্ধৃত করা যায় লে. কর্ণেল (অবঃ) এম. এ. হামিদ পিএসসি লিখিত ‘তিনটি সেনা অভ্যুত্থান ও কিছু না বলা কথা’ (দ্বিতীয় সংস্করণ, ১৯৯৫, মোহনা প্রকাশনী) থেকে। এ বইটি জানাচ্ছেঃ

ইতিমধ্যে মেজর রশিদ ডালিমকে সেখানে রেখে দ্রুতবেগে আগামসীহ লেনে খন্দকার মোশতাক আহমদের বাসায় ছুটে গিয়েছে। তিন চীফ রেডিও স্টেশনে পৌঁছবার আগেই তাকে নিয়ে রশিদ সেখানে পৌঁছে যায়। মোশতাক সেখানে তিন বাহিনী প্রধানের অপেক্ষায় বসে রইলেন। কিছুক্ষনের মধ্যেই মেজর ডালিম তাদের নিয়ে রেডিও স্টেশনে পৌঁছল। ঘড়ির কাঁটার সাথে তাল মিলিয়ে চলছে ঘটনা প্রবাহ। প্রতি মিনিটে মিনিটে ধাপে ধাপে পরিস্থিতির পরিবর্তন। রেডিও স্টেশনের অভ্যন্তরে খন্দকার মোশতাক আহমদ তিন বাহিনী প্রধানকে সাদর অভিনন্দন জানালেন। সেনাবাহিনীর বীরত্বপূর্ণ কাজের জন্য কংগ্রাচুলেশন্স জানালেন। অত্যন্ত হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশে আলোচনা চলল। ঝানু পলিটিশিয়ান খন্দকার মোশতাক। তিনি প্রেসিডেন্ট পদ গ্রহনের পূর্বে শর্তারোপ করলেন। সশস্ত্র বাহিনী প্রধানেরা তাঁর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করবেন। ... ... ... তিন প্রধান সব কিছুই মেনে নিলেন। ঐ পরিস্থিতিতে তা ছাড়া তাদের করবারও আর কিছু ছিলনা। তারা এক এক করে রেডিওতে রশিদ-ফারুক মনোনীত প্রেসিডেন্ট খন্দকার মোশতাক আহমদের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করলেন। মোশতাকের পক্ষে তাহের উদ্দিন ঠাকুর খসড়া বানালেন। রেডিও বাংলাদেশ অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে সদর্পে বারবার তাদের আনুগত্য ঘোষণা প্রচার করে চলল। [পৃষ্ঠা - ৪৫]

এবং

তিন বাহিনী প্রধান জেনারেল শফিউল্লাহ, এডমিরাল এম এইচ খান ও এয়ার মার্শাল খন্দকার জনাব মোশতাক আহমদের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করার পরে অনিশ্চিত অবস্থা নব্বই ভাগ দূরীভূত হয়ে যায়। এবার মোশতাক সাহেব তার দুই পাশে ফারুক আর রশীদকে রেখে রাজনৈতিক কর্মকান্ড শুরু করলেন। [পৃষ্ঠা - ৪৯]

এবং

ইতিমধ্যে মোশতাক আহমদ জেনারেল ওসমানীকে তার ডিফেন্স উপদেষ্টা নিযুক্ত করেন। মেজর জেনারেল খলিলুর রহমান হন চীফ অফ ডিফেন্স স্টাফ। এই সময়ের সবচেয়ে উল্লখযোগ্য ঘটনা হল, মেজর জেনারেল শফিউল্লাহর স্থলে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে সেনাবাহিনীর নতুন চীফ অফ স্টাফ নিযুক্ত করা হয় ২৪ আগস্ট ১৯৭৫ তারিখে। সম্পূর্ণ আকস্মিকভাবে এই গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন কার্যকর করা হল। ফারুক রশিদের চাপেই যে এটা ঘটল তা বুঝতে কারো বাকি রইল না। রশিদের মতে এটা ছিল পূর্ব নির্ধারিত। সিভিল-মিলিটারিতে আরও বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদ পরিবর্তন করা হল। ১৬ অক্টোবর বিমান বাহিনী প্রধান এ. কে. খন্দকারের স্থলে জার্মানী থেকে ডেকে এনে এম. জি. তোয়াবকে এয়ার চীফ বানানো ছিল উল্লেখযোগ্য। [পৃষ্ঠা - ৫৫]

আসুন দেখি প্রোপাগান্ডিস্টদের প্রিয় বই Anthony Mascarenhas রচিত Bangladesh A Legacy of Blood (1st edition, 1986, Hodder & Stoughton) আমাদের কি তথ্য দেয়? এতে বলা আছেঃ

The most important was Farook and Rashid's insistence that Major General Ziaur Rahman should replace Major General Shafiullah as Chief of the Army Staff. Later despite Moshtaque's reservations, they brought in another man of their choice to head the Bangladesh Air Force. He was Group Captain Towab, a former Pakistan Air force officer who had for a time served as the senior air officer with the Mujibnagar government-in-exile in Calcutta. Towab was living in retirement with his German wife in Munich when Rashid went there to recruit him. [Page-83]

“বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে সপরিবারে হত্যা করা হলে এর প্রতিবাদে তিনি বিমানবাহিনী প্রধানের পদ থেকে পদত্যাগ করেন।” এই দাবীকে তো কেউই সমর্থন জানাচ্ছেন না দেখা যায়। তাহলে এত বছর পরে হঠাৎ এই দাবী করার পেছনের গুঢ় রহস্য কি, কেউ বলতে পারেন? বইটি হাতে নিয়েই যদি এমন স্থুলরকমের ডাহা মিথ্যাকথন চোখে পড়ে, তাহলে বইটির ওপর কতটা ভরসা করা যেতে পারে?

২। ভূমিকা-কথনঃ

আসুন এবার অধ্যায়ওয়ারী বইটির ব্যাবচ্ছেদ করা যাক। প্রথমেই ভূমিকা অংশে জানা যাচ্ছেঃ

আমি রাজনীতিবিদ ছিলাম না, বরং কুড়ি বছর পাকিস্তান বিমানবাহিনীতে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেছি। তার পরও দেশ ও জাতির ক্রান্তিলগ্নে আমি সিদ্ধান্ত নিতে একটুও ভুল করিনি। যথাসময়ে আমি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেই এবং যুদ্ধ শেষে বিজয়ীর বেশে দেশে ফিরে আসি। মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়া সামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে আমিই ছিলাম সর্বজেষ্ঠ। তাই মুক্তিযুদ্ধে আমাকে অনেক গুরুদায়িত্ব পালন করতে হয়েছে, পাশাপাশি অনেক নীতিনির্ধারনী সিদ্ধান্তও আমাকে নিতে হয়েছে। আমি মুক্তিযুদ্ধের অনেক ঐতিহাসিক ঘটনাও প্রত্যক্ষ করেছি। [পৃষ্ঠা - ০৯]

উল্লিখিত ‘যথাসময়ে’ শব্দটি পরবর্তীতে অত্যন্ত গুরুত্ববাহী হয়ে উঠবে।

১৯৭৫ সালের পর রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে আমাকে দীর্ঘদীন দেশের বাইরে থাকতে হয়। দেশত্যাগের আগে আমার সকল মুল্যবান কাগজপত্রের সাথে মুক্তিযুদ্ধকালে লেখা আমার নোটগুলো এক আত্মীয়ের বাসায় রেখে যাই। প্রায় ১২ বছর পরে দেশে ফিরে আমি সেই নোটগুলো আর ফেরত পাইনি। ... ... ... আমার বয়স, একাগ্রতা, ধৈর্য ইত্যাদি সবই মুক্তিযুদ্ধের পূর্নাংগ স্মৃতিকথা লেখার অনুকুলে নয়। তাই আমি মুক্তিযুদ্ধের কয়েকটি মাত্র অধ্যায় আমার স্মৃতি থেকে লিখে ফেলতে সক্ষম হই। ... ... আমি স্মৃতিকথার জন্য যে বিষয়গুলো বেছে নিয়েছি তা বেশ গুরুত্বপূর্ণ অথচ তথ্যের অভাবে কম প্রচারিত বা আলোচিত বা ভুলভাবে প্রচারিত। [পৃষ্ঠা – ১০]

বইটি কেবলমাত্র স্মৃতিকথা হতে পারত, কিন্তু এই অকপট সত্যকথনের পরে স্মৃতিগুলো কি আদৌ বইটির “নির্ভরযোগ্যতা” বাড়াবে?

মুক্তিযুদ্ধের প্রায় ৪২ বছর পরে আমি বইটি লিখছি। তাই বইটিতে তথ্য উপস্থাপনার ক্ষেত্রে আমাকে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়েছে। আমার তথ্যগুলোকে বিশ্বাসযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য আমাকে বেশ কিছু বই পড়তে হয়েছে। [পৃষ্ঠা – ১০]

এই বক্তব্য অত্যন্ত বিভ্রান্তিকর। তিনি গবেষণা গ্রন্থ রচনা করেননি, করেছেন স্মৃতিকথা। নিজের স্মৃতির সমর্থনে অন্যের বই (৯ টি বইয়ের তালিকা দেয়া আছে) হাতড়ালে সেটি কতটুকু স্মৃতিকথা থাকে? স্মৃতিকথা আর সংকলিত গবেষণা গ্রন্থের এই হাইব্রিডায়ন প্রক্রিয়াও নির্মোহ মনে সন্দেহের দোলা দেয়।

আবেগতাড়িত হলে বা কারো প্রতি আনুকূল্য দেখাতে গেলে অতি অবশ্যই আমাকে হয় সত্য এড়িয়ে যেতে হবে নতুবা মিথ্যার আশ্রয় নিতে হবে। আমি এর কোনটাতেই বিশ্বাসী নই। তাই কখনো কখনো রূঢ় সত্য প্রকাশে ব্যাক্তিবিশেষ সম্পর্কে প্রচলিত ধারনার বাইরে আমি কিছু মন্তব্য করেছি বা প্রমাণ তুলে ধরেছি। [পৃষ্ঠা - ১১]

আবারও চমৎকার গোল গোল কথা। কিন্তু তাঁর উল্লিখিত প্রমাণের উপস্থিতি যে খুব অল্প অংশের জন্যই প্রযোজ্য তা সুকৌশলে এড়িয়ে গিয়ে ধারণা দেয়া হয়েছে সমগ্র বইটিই বুঝি তথ্যপ্রমাণে ঠাসা।

তবে আমি মনে করিয়ে দিতে চাই, আমার কথাগুলোই শেষ কথা নয়। আগামীদিনের ইতিহাসবিদ ও গবেষকেরা আরও তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে পূর্নাঙ্গতা দেবেন[পৃষ্ঠা - ১১]

অতীব সত্য কথন। দ্বিমতের অবকাশ নেই।

৩। প্রথম অধ্যায়ঃ

বইয়ের ‘প্রাক-কথন’ শীর্ষক প্রথম অধ্যায়ে লেখক জানাচ্ছেনঃ

অবশেষে ১৯৫১ সালের জানুয়ারি মাসে আমি ক্যাডেট পাইলট হিসাবে বিমানবাহিনীতে যোগ দেই। ... ... ... আমি সেখানে ক্যাডেট হিসাবে এক বছর নয় মাসের প্রশিক্ষণ নেই এবং ১৯৫২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কমিশনপ্রাপ্ত হই। আমার সঙ্গে আরও দুজন বাঙ্গালি ক্যাডেট ছিলেন তবে একমাত্র আমিই বৈমানিক হিসাবে কমিশন পেয়েছিলাম। এর পর চাকরির বদৌলতে ১৯৫২ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত আমি পশ্চিম পাকিস্তানে ছিলাম। [পৃষ্ঠা - ১৬]

এবং

আমার বাবা-মা বাংলাদেশে থাকলেও বেশির ভাগ সময় পাকিস্তানে থাকার কারণে পূর্ব পাকিস্তানে আমার যাওয়া-আসা একটু কমই হত। তাই পারিবারিক জীবন শুরু করতেও আমার একটু দেরি হয়েছিল। [পৃষ্ঠা - ১৯]

এবং

১৯৬৯ সালের ৪ মার্চ আমি পাকিস্তান বিমানবাহিনীর ঢাকা ঘাঁটিতে উইং কম্যান্ডার হিসাবে বদলি হয়ে আসি। ১৯৬৫ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানে যেসব ঘটনা ঘটেছিল, বিশেষত ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, পশ্চিম পাকিস্তানে থাকার ফলে আমি তা জানতে পারিনি। কারণ, প্রথমত পাকিস্তানি পত্র-পত্রিকায় পূর্ব পাকিস্তানের খবরাখবর বিস্তারিত ভাবে আসত না। তা ছাড়া পশ্চিম পাকিস্তানের সংবাদপত্র গুলো ছিল মূলত মুসলিম লীগের মুখপত্র। সেসব গণমাধ্যমে পাকিস্তানপন্থী সংবাদ প্রকাশিত হত। সত্য খবরগুলো জানা যেত না। ফলে ঐ সময়ে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পূর্ব পাকিস্তানের সংবাদ তেমন কিছু জানতে পারতাম না। দ্বিতীয়ত, ১৯৬৯ সালের শুরু থেকে আমি বদলি হয়ে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পূর্ব পাকিস্তানে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। তাই যথাযথভাবে সবকিছুর খবর নিতে পারতাম না। [পৃষ্ঠা - ২০]

১৯৫২ সাল থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত কোন ব্যাক্তি যদি বাংলাদেশের ভূখণ্ডে অনুপস্থিত থাকেন তাঁর কি মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট আদৌ উপলব্ধি করা সম্ভব? আমি সন্দিহান। তাঁর এই অনুপস্থিতির অর্থ তিনি ভাষা আন্দোলন, ছয় দফা আন্দোলন, আগরতলা মামলা এবং ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নন। এমনধারা ব্যাক্তির কাছে মনে হতেই পারে মুক্তিযুদ্ধ বুঝি টুপ করে আকাশ থেকে খসে পড়েছে।

পিএসএ ডিগ্রি অর্জনের পর ১৯৬৬ সালে পিএএফ একাডেমিতে প্রশিক্ষণ শাখার কর্মকর্তা হিসাবে যোগ দেই। সে বছরই উইং কম্যান্ডার পদে পদোন্নতি লাভ করি। পিএএফ একাডেমিতে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত পিএএফ ফ্লায়িং বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন করি। এই পদে আমার প্রধান দায়িত্ব ছিল পাকিস্তান বিমানবাহিনীতে যত রকম নতুন পরিকল্পনা নেয়া হবে তা পরীক্ষা করে দেখা। অর্থাৎ নতুন স্টেশন নির্মানের স্থান, উচ্চমাত্রার রাডার ও নতুন অস্ত্রের কার্যকারিতা পরীক্ষা করা ইত্যাদি। [পৃষ্ঠা - ১৭]

সাধারণত, তৎকালীন সামরিক ও বেসামরিক বিভিন্ন পদে বাঙ্গালি কর্মকর্তাদের বৈষম্যের কথাই জানা যায়। এই প্রেক্ষিতে পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে খন্দকার সাহেবের এই গ্রহনযোগ্যতা যদি কেউ “আবেগের উর্ধ্বে থেকে বাস্তবতা আর নথিপত্রের ভিত্তিতে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করে” তাহলে কেমন হবে?

১৯৫১ থেকে ১৯৬৯ পর্যন্ত প্রায় ১৮ বছর পাকিস্তানে অবস্থানকালে আমি পাকিস্তানি কর্মকর্তা ও সাধারণ মানুষের কাছে ভাল ব্যাবহার পেয়েছি। পশ্চিম পাকিস্তানে আমার অনেক ভালো বন্ধুও ছিলেন। তারা সব সময় আমার ও আমার পরিবারের প্রতি খুব যত্নবান ছিলেন। যেমন রাতে বাসায় বিশ্রাম নিচ্ছি হঠাৎ খবর এল ফ্লায়িং এ যেতে হবে। ব্যাস, অফিসের কাজে বের হয়ে যেতাম। এ সময় আমার স্ত্রী একদম একা থাকত। কিন্তু আশেপাশের পরিবারগুলো ছিল অত্যন্ত বন্ধুসুলভ। তারা আমার স্ত্রীর দেখাশোনা করত। সবসময় খেয়াল রাখত, যেন আমার অনুপস্থিতিতে ওর কোন অসুবিধা না হয়, যেন ভয় না পায়। [পৃষ্ঠা - ২০]

লেখকের এই অভিজ্ঞতা তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানে কর্মরত/বসবাসরত অধিকাংশ বাঙ্গালি পরিবারের স্মৃতি থেকে স্পষ্টতই আলাদা। খন্দকার সাহেব কি অতিমাত্রায় ভাগ্যবান ছিলেন? ‘ভাগ্য’ কথাটিকেও কিন্তু বিশ্লেষণ করা দুস্কর। কেউ যদি ‘প্রচলিত মতের বাইরে গিয়ে ও আবেগের উর্ধ্বে উঠে’ এই অংশটিকে ‘মেহেরজান সিনড্রোম’ হিসেবে চিহ্নিত করে ফেলে? তখন বইটির নির্ভরযোগ্যতা কেমন হবে তা চিন্তার দাবী রাখে বলেই মনে হয়।

[চলবে]


মন্তব্য

নজমুল আলবাব এর ছবি

স্যার সত্য বলতেছেন। তিনারে পাকিস্তানিরা পছন্দ করতো। তিনিও তাদের।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

মন খারাপ
"সত্যটা" পাস্ট টেন্স হইলে হাফ-সমস্যা, কিন্তুক প্রেজেন্ট টেন্স হইলে ডাবল-সমস্যা

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অতিথি লেখক এর ছবি

সুযোগ বুঝে মুক্তিযোদ্ধা বনে গিয়েছিল এই লোক। এরকম আরো কত লোক !!!! যাক , এই দু হাজার চৌদ্দ সালে এসে কেমন জানি সব মুখোশ খুলে যাচ্ছে।

রাজাকার চিরকালই রাজাকার, কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা চিরকাল মুক্তিযোদ্ধা নয়।

রাজর্ষি

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

মন খারাপ

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

মেঘলা মানুষ এর ছবি

করেছেন কি? বায়োলজির ব্যাঙ কাটার মত কেটেকুটে, চমৎকার বিশ্লেষণে তো ভেতরের সবকিছু বের করে নিয়ে আসলেন!
পরের পর্ব আসুক, জলদি।

শুভেচ্ছা হাসি

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

এই সব কি কন? কাটাকাটির ডরে বায়লোজি লই নাইক্যা!
পরের পর্ব ক্যাম্নে আইব? হরতাল বাড়ায় নাই তো। খাইছে

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

ইয়াসির আরাফাত এর ছবি

বিমানবাহিনী প্রধান পদ থেকে 'স্বেচ্ছা পদত্যাগ' কইরা পরক্ষণেই অস্ট্রেলিয়াতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত? অ্যাঁ

কামেল ব্যক্তি। গুরু গুরু

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

ছি ছি...
খালি স্বেছা না হে, পেতিবাদ কইরা

[কিন্তুক পেতিবাদের স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও আন্তর্জাতিক মানের ‘প্রাসঙ্গিক নথিপত্রের’ ব্যাপারডা উনি চাইপা গেছেন]

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

নজমুল আলবাব এর ছবি

পেত্তিবাদটা আন্তজ্জাতিক মানের ছিলো বলেইতো উনারে অস্টেলিয়া ফাডাইলু, এক্কেরে আন্তজ্জাতিক বানায়া দিলো তেনারে।

এক লহমা এর ছবি

চমৎকার ব্যবচ্ছেদ করা হয়েছে। হয়ত এতে এই মুহূর্তে শয়তানদের শয়তানী কিছুই কমবে না। কিন্তু ওদের শয়তানীটা যে ধরা পড়ে গেছে, সেটা নিশ্চিত করা যাবে। সেটার মূল্য অনেক। চলুক

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

লইজ্জা লাগে আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-
এইটা তালগাছ মার্কা রেফারেন্স হয়ে যাবার সম্ভাবনা আছে
তার আগেই অসঙ্গতিগুলোর লিস্টি করে রাখাটা খুব জরুরি

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

লইজ্জা লাগে আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-
এইটা তালগাছ মার্কা রেফারেন্স হয়ে যাবার সম্ভাবনা আছে
তার আগেই অসঙ্গতিগুলোর লিস্টি করে রাখাটা খুব জরুরি

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

মুক্তিযুদ্ধে এত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা, তাঁকে নিয়ে উল্টাসিধা ভাবনায় মন সায় দেয় না। কিন্তু কি আর করা, সাদা কে সাদা আর কালোকে কালো তো বলতেই হবে।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

মন আমারও সায় দেয় না, আব্দুল্লাহ ভাই
কিন্তু,

সাদা কে সাদা আর কালোকে কালো তো বলতেই হবে।

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অতিথি লেখক এর ছবি

ভূমিকা এতদিন খতিয়ে দেখা হয়নি বলে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে। নীচে নজরুল ভাইয়ের কমেন্ট দ্রষ্টব্য।

অভিমন্যু . এর ছবি

চলুক চলুক
পরবর্তি কিস্তি গুলি দ্রুত আসুক।

________________________
সেই চক্রবুহ্যে আজও বন্দী হয়ে আছি

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

লাইন ধরায়া দিলাম যে, এইবার বইটা পইড়া দ্যাহেন খাইছে
নতুন কইরা হরতাল দেয় নাই তো, দ্রুত লিখুম ক্যাম্নে? ইয়ে, মানে...

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

২৫ মার্চ রাতে যখন পুলিশ ইপিআর রা পর্যন্ত প্রতিরোধ গড়ে তুললো, বাঙালি সেনা অফিসার রা তো বটেই, সেখানে এ কে খন্দকার তখন কী করছেন? ঢাকায় পাকিস্তান বিমান বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে তখনো তিনি আছেন।
তখন সশস্ত্র বাহিনীর বাঙালি অফিসারদেরকে পাকিস্তানীরা মেরে ফেলছিলো বা বন্দী করছিলো, কিন্তু এ কে খন্দকার একেবারে নিরাপদ ছিলেন, মুক্ত ছিলেন। সারাদেশে মুক্তিযুদ্ধ চলছে, এ কে খন্দকার তখনো পাকিস্তান বিমান বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
সাধারণ মানুষ পর্যন্ত যার যা আছে তাই নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে তখনো এ কে খন্দকার পাকিস্তান বিমান বাহিনীতেই।
তেলিয়াপাড়ায় সেনা অফিসাররা ওসমানীর নেতৃত্বে বৈঠক করে সমর পরিকল্পনা করছেন, তখনো এ কে খন্দকার মুক্তিযুদ্ধে নাই।
মে মাসের মাঝামাঝিতে তিনি ভারতে যান, মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন আরো পরে। সম্ভবত জুলাই মাসে জিয়াউর রহমান ওসমানীকে সেনাপ্রধানের পদ থেকে সরিয়ে যুদ্ধ কাউন্সিল গঠন করার প্রস্তাব করেন, যার প্রধান হিসেবে এ কে খন্দকারের নাম প্রস্তাব করেন। খালেদ মোশাররফ এই যুদ্ধ কাউন্সিলের বিরোধীতা করেন।

যাহোক, অনেক কথা আছে। বইটার পরতে পরতে অনেক ঝামেলা আছে, সেগুলো পড়তে বিরক্ত লাগছিলো বলে পড়া আপাতত স্থগিত রেখেছি। আপনি আলোচনা শুরু করেছেন ভালো হয়েছে। চালিয়ে যান।

আর একটা কথা বলে রাখি। বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পরে বিমান বাহিনী থেকে এ কে খন্দকারের সরে যাওয়া এবং এম জি তোয়াবের যোগদানের ব্যাপারটা খুব একটা সরল না। এর সঙ্গেই আছে বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামী দলটার পুনপ্রত্যাবর্তনের শুরু। ঘটনা আবার সেই ৭ই মার্চ, স্থান আবার সেই রেসকোর্স ময়দান। সচল হাসান মোরশেদের এই দুটি পোস্ট আর অমি রহমান পিয়ালের এই লেখাটি পড়লেই বুঝতে পারবেন।

আর একটা প্রশ্ন, এ কে খন্দকার যে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের 'প্রতিবাদে' বিমান বাহিনীর প্রধানের পদ ছেড়েছিলেন, সেটার কোনো রেফারেন্স আছে? রিজাইন লেটার? এই ডকুমেন্টটা অত্যন্ত জরুরী।

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

ওঁয়া ওঁয়া আমার পরের পর্বের স্পয়লার দিয়া দিলেন তো। এইগুলা আমিও ধরছি।

বইটার পরতে পরতে অনেক ঝামেলা আছে,
সেগুলো পড়তে বিরক্ত লাগছিলো বলে পড়া আপাতত স্থগিত রেখেছি।

হ, পড়তে আমারও বিরক্তই লাগছে নজু'ভাই। কিন্তুক, খালি জয়পাকিস্তান লইয়া আলোচনার ঠেলায় বাকি সব আজাইরা কথারে বিনা প্রশ্নে ছাইড়া দিতে আমি ইচ্ছুক না, তাইলে মিথ্যা-কথাগুলান শেষে বৈধতা পায়া যাইতে পারে। আমার কাছে জয়পাকিস্তান সংক্রান্ত কথার চাইতে বাকি বিভিন্ন কথার সুদূরপ্রসারী গুরুত্ব বেশী বইলা মনে হয়। আর লেখক এ কে খন্দকার বইলাই এইগুলার খণ্ডন, নিদেনপক্ষে আলোচনা তারাতারি হওন দরকার।

তোয়াবের কাহিনি ভাসা ভাসা জানা ছিল, লিঙ্কের লিগ্যা আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

রিজাইন লেটার তো আমিও খুঁজতাছি, আচ্ছা এয়ার/সেনা হেডকোয়ার্টারে কি থাকার কথা না? চিন্তিত

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

স্যরি, মেজাজ খারাপ করে লিখে ফেলছি। যাউগ্গা, আমি ভাবছিলাম বইটা নিয়া ডিটেলে লেখুম, খাটনি কমায়ে দিলেন। আপনি চালায়ে যান, আমি আছি পিছে পিছে।
রিজাইন লেটার আদৌ দেওয়া হইছিলো কি?

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

না না বস, ইট'স ওকে দেঁতো হাসি
আপনে লিখবেন জানতাম না তো, আমি তাইলে অফ যাই
আমার চ্যাংড়া চোখে অনেক কিছু বাদ পড়তে পারে যেইটা আপনের চোখে আটকাইত

আমার ধারনা পদত্যাগ পত্র পাওয়া যাবেনা, তয় অব্যাহতি পত্র পাওয়া যেতে পারে চোখ টিপি

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ছি আপনার লেখা আর মন্তব্যগুলো।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

লইজ্জা লাগে আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

[ অটঃ আবদারের কথা ভুলি নাই কিন্তু, ভাবনা'দা দেঁতো হাসি ]

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অতিথি লেখক এর ছবি

পুরা ব্যাপারটাই "মেহেরজান সিন্ড্রোম"- সন্দেহ নাই। আর যেখানেই মেহেরজান, সেখানেই কারওয়ানবাজার। আরো এনালাইসিস চলুক।

--সুবীর

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- হাসি
সিএ ভবনের নাম পাল্টায়া মেহেরজান ভবন রাখন যায়?

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।