সেবার বই

সোহেল ইমাম এর ছবি
লিখেছেন সোহেল ইমাম [অতিথি] (তারিখ: শুক্র, ২০/০৫/২০১৬ - ১:৫২পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

লেখা থাকতো “সেবা বই, প্রিয় বই, অবসরের সঙ্গী” কথা সত্য, কিন্তু ঝক্কিটাও কম ছিলনা। এক একটা সেবার বই কিনে বড়দের লুকিয়ে বাড়িতে ঢোকানোর ব্যাপারটা বিশেষ সহজ ছিলনা। বিশেষ করে স্কুলের নিচের ক্লাসে পড়বার সময়। সেবা বই মানেই “মাসুদ রানা” আর সেটা ছিল প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য। বড়রা সেবার বই বলতে এই প্রাপ্ত বয়স্ক মার্কা মারা মাসুদ রানাই বুঝতো সে সময়, ফলে সেবার অন্য বই কিনলেও গুরুজনদের রক্তচক্ষু এড়িয়ে সে বই নিজের কাছে রাখা যাবে সে ভরসা অল্পই ছিল। ছোট বয়সটা লেকচার মারার মত বয়স না সুতরাং কাউকে বুঝিয়ে বলারও বিশেষ উপায় থাকতোনা। বই সহ ধরা পড়লে চোরের মত মাথা নিচু করে তর্জন গর্জন হজম ভিন্ন পথ নেই। কিন্তু সেসব সয়েও সেবার বই কেনা হতো, সে বই বাড়িতেও ঢুকে পড়তো। সামনে বা পিছে প্যান্টের মধ্যে অর্ধেকটা বই গুঁজে তার ওপর টি-শার্টটা ঝুলিয়ে আড়াল করে বাড়িতে ঢুকতে হতো। অনেক সময় পেটের কাছে টি-শার্টের উপর দিয়েও বইটা উঁচু হয়ে থাকতো, সেটা সামাল দিতে হতো অনেকটা কুঁজো হয়ে শার্টের প্রান্তটাকে আরো সামনে ঝুলে দিতে দিয়ে। এ অবস্থায় হাঁটা জিনিসটা বড় অদ্ভুত কিসিমের হতো। একবার বাড়িতে ঢুকে গেলে আর সমস্যা নেই। বড়দের লুকিয়ে ঘরের কোনে বসে দিব্যি পড়া চলতো।

এই ঝক্কি সামলাতে সামলাতে সেই ছোট্টবেলাতেই বন্ধুরা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করতাম সেবার বইয়ের প্রচ্ছদে মেয়েদের ছবি দেওয়ার দরকারটা কি। বিশেষ করে এই নারী-মুখশ্রীই বড়দের একটা ভুল ধারনা দিত যে বইটা বিশেষভাবেই বড়দের। ছোটদের হাতে দেখা মাত্রই ভেবে নিতে হবে ছোঁড়া পেকে গেছে। কে বোঝাবে জুলভার্নের বিজ্ঞান ভিত্তিক কল্পকাহিনী গুলোতে নারী সংক্রান্ত রোমান্স বিশেষ নেই। তবে পেকে যাবার ব্যাপারটা মিথ্যে নয়। সেবার বই পড়তে পড়তেই আমরা পেকে উঠেছিলাম। সেই পাকার বিস্তৃতি শুধু একটা দিকেই ছিলনা। স্কুলের বই পড়ায় বিশেষ মন ছিলনা, মন পড়ে থাকতো সেবার বইয়ে। এক অর্থে সেবা প্রকাশনীই ছিল আসল স্কুল। আর হবেই বা না কেন। অনুবাদ সিরিজ আর কিশোর-ক্লাসিক সিরিজের বই গুলোর লম্বা তালিকাটা একবার মনে করুন। পৃথিবীর আনাচে কানাচে যেখানেই একটা সুখপাঠ্য বই লেখা হয়েছে সেবা অনুবাদ করে ফেলেছে। ওই অতটুকুন বয়সে রহস্যের দ্বীপ, পাতাল অভিযান, কার্পেথিয়ান দুর্গ পড়তে পড়তেই পড়া হয়ে যাচ্ছে অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট, স্বপ্ন-মৃত্যু-ভালোবাসা। এইচ.জি.ওয়েলসের অদৃশ্য মানব, ব্রামষ্টোকারের ড্রাকুলা কিংবা রবিনহুড, কোনটা ছেড়ে কোনটার কথা বলি। এগুলোর পাশাপাশিই আবার জিম করবেট আর কেনেথ এ্যাণ্ডারসনের শিকার কাহিনী – জঙ্গল, রুদ্রপ্রয়াগের চিতা, কুমায়ুনের মানুষখেকো। আর সেই সাথেই ছিল অন্য ধরনের কিছু বই যে গুলো সেই প্রথম জীবনেই বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ জন্মিয়ে দিয়েছিল যেমন ইউএফও, বার্মুডাট্রায়াঙ্গল, ভিনগ্রহের মানুষ। অনেক পরে উপলব্ধী করেছি বই গুলোয় বিজ্ঞানের চেয়ে বিজ্ঞান নিয়ে অবৈজ্ঞানিক রোমান্টিকতাই ছিল বেশি। কিন্তু সে সময় এই বই গুলোই বিজ্ঞান সংক্রান্ত অনুসন্ধিৎসার জন্ম দিয়েছিল। এখন বুঝি এসব আর কিছু নয় রহস্য-বানিজ্য। সে সময় পৃথিবীর অন্যদেশ গুলোতেও এই বিষয়ের বই গুলো জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। সেবা বাংলায় অনুবাদ করে পাঠককে ভাবিয়েছে, তারপর মেকী বিজ্ঞান থেকে পাঠক আপনা থেকেই পৌঁছে গেছে বিজ্ঞানের রাজ্যে। সেবার একটা বই ছিল নামটা সম্ভবত “মানুষ হলাম কেমন করে”। আদিম অবস্থা থেকে কিভাবে ধাপে ধাপে বিবর্তনের ধারায় আমরা এখনকার মানুষ হয়ে উঠলাম তারই গল্প। প্রচ্ছদে ছিল আদিম মানুষের একটা ছবি। বইটা পরে আর দেখিনি। বোধহয় আর পুনঃ প্রকাশ হয়নি। আবার ভিন্ন স্বাদ নিয়ে এসেছিল কাঠগড়ার মানুষ সিরিজের বই গুলো। অপরাধ জগতের কাহিনীর সাবলীল উপস্থাপন সে সময় আর কয়টা ছিল। রিপ্লের বিশ্বের বিস্ময় তো ছিলোই। সেবার প্রজাপতি মার্কা লোগোটাই তখন দুর্দান্ত একটা প্রতীক হয়ে উঠেছিল।

কিন্তু যে কথাটা আজ বিস্ময় নিয়ে ভাবি তা হলো, বইয়ের দোকানে গিয়ে বলতাম সেবার নতুন কি এসেছে? সেবার প্রিয় লেখকদের কারো নাম বলা যেত, যেমন রকিব হাসান, কাজী মাহবুব হোসেন, রওশন জামিল, শামসুদ্দিন নওয়াব, শেখ আব্দুল হাকিম অথবা সেই অব্যর্থ নাম যার সাথে সব সময়ই রহস্য রোমাঞ্চ মিশে আছে সেই কাজী আনোয়ার হোসেন, কিন্তু আমরা বলতাম সেবার কি এসেছে? একটা প্রকাশনীর ওপর এমন ভরসা আর কখনওই বোধহয় জন্মায়নি। সেবার বই ধরার আগেওনা পরেও না। সেবার বই পড়া হয়না অনেক দিন। বইয়ের দোকানে এখনও যাই কিন্তু কোন প্রকাশনীর নাম ধরে বলতে পারিনা অমুক প্রকাশনীর কি এসেছে দেখানতো। কিন্তু সেবার বইয়ের সময় তা বলা যেত। কারন সেই সময় অদ্ভুত একটা ভরসা ছিল প্রকাশনীটার উপর। জানতাম বাড়ি আনলে রহস্য-রোমাঞ্চ নিয়ে সময়টা খারাপ কাটবেনা। এই ভরসা যে শুধু আমারই ছিল তা নয়। সেবার বই কেনা মাত্র হুড়োহুড়ি লেগে যেত কে আগে পড়বে। অল্প ক’দিনেই পেপারব্যাক বইটার অবস্থা চোখে দেখা যেতনা। মলাট দুমড়ে যেত, সেলাই খুলে খুলে যেত ঢিলে হয়ে, বইয়ের সিরদাঁড়ার ওপর কাগজটা ছিঁড়ে কোথায় উড়ে যেত হদিস পাওয়া যেতনা। সে সময় কিশোর তরুণদের সাথে পথ চলতে দেখা হলে প্রায়ই দেখা যেত হাতে সেবার বই। হয় এই মাত্র কিনে আনলো, নয়তো কোন বন্ধুর বাড়ি থেকে পড়তে নিয়ে এলো।

রাজশাহী শহরে সে সময় যেখানে যেখানে সেবার বই পাওয়া যেত সেই দোকান গুলোও মুখস্ত ছিল। সেবার বইয়ের যে বিপুল জনপ্রিয়তা তখন ছিল তাতে শ্রেফ সেবার বই নিয়েই ব্যবসা করতো বেশ কয়েকটা ছোট দোকান। এসব দোকান ভর্তি থাকতো সেবার বইয়ে, নেহাত অন্য প্রকাশনীর দু’চারটা বই রাখা হতো, রাখতে হয় বলেই। সেবার বই বড় দোকান গুলোও রাখতো। এখন অনেক গুলো দোকানই উঠে গেছে। তখন যাদের কাছে বই কিনতাম তাদের দোকান গুলো গুপ্তধনের খনির মত লাগতো। এখন রাণীবাজারের মাদ্রাসা মার্কেটের সামনে একটা দোকানে বাইসাইকেলের সরঞ্জাম বিক্রি হয়। আশির দশকে সেখানে যে বইয়ের দোকানটা ছিল তার নাম ছিল জ্ঞানের আলো। জ্ঞানের আলোতে সেবার বই কিনতে অনেক গিয়েছি। তার থেকে এতটু দক্ষিনে কয়েক পা হাটলেই একটা মোড় পড়তো সেখানে অনেক পরে একটা ভিডিও ক্যাসেটের দোকান হয় নাম ছিল ফ্রেণ্ডস ভিডিও। এই ভিডিওক্লাবের দুই দোকান পরেই ছিল উদয়ন গ্রন্থ নিলয়। উদয়ন থেকে পশ্চিমে বাটার মোড়ের দিকে কয়েক পা হাঁটলেই হাতের বামে পড়তো সঞ্চিতা নামের বইয়ের দোকানটা। এসব দোকানে আমরা আতিপাতি করে সেবার বই খুঁজতাম। অনেক সময় দেখতাম বইয়ের স্তুপের মধ্যে সেবার কোন পুরনো প্রকাশিত বই লুকিয়ে আছে। নতুন বইতো দেদারসে প্রকাশ হওয়া মাত্র কিনে ফেলতাম, কিন্তু এই পুরনো বই গুলো খুঁজতে খুঁজতে পেয়ে গেলে কি যে আনন্দ হতো বলে বোঝানো যাবেনা। যেন কোন গুপ্তধনের নক্সা দেখে তেতুল গাছ আর শ্যাওড়া গাছের মাঝে কয়েক কদম ডাইনে আর কয়েক কদম বাঁয়ে গিয়েই পেয়ে গিয়েছি কাঁসার কলস ভর্তি সোনার মোহর। সে সময় সোনার মোহর পেলেও আমি নিশ্চিত তা সেবার বইয়ের পেছনেই উড়ে যেত।

মনে আছে সাহেববাজারের সোনাদিঘীর মোড়ের সমবায় সুপার মার্কেটের বীনাপানি বুকডিপো। প্রথমটা মনে হয় এখান থেকেই সেবার বই কেনা শুরু হয়। এই দোকানটার ভেতরের তাক গুলোয় যেমন তেমনি দোকানের সামনেই নতুন আসা সেবার বই থরে থরে সাজানো থাকতো। এই দোকানটা পাশেই আরেকটা দোকান ছিল নামটা এখন আর মনে পড়ছেনা। আরে হ্যা, বুকস্ প্যাভিলিয়ন। সোনাদিঘীর মোড়ে অনেক গুলো বইয়ের দোকান ছিল সেসময়, এখনও আছে। সে সময় সেবার কুয়াশা সিরিজের পাগল ছিলাম। কুয়াশা সিরিজ মাসুদরানা সিরিজের মতই ছিল কিন্তু এটা ছিল ছোটদের। সেসময় কুয়াশা সিরিজের অনেক গুলোই পাওয়া যেতনা। সম্ভবত তখন আর কুয়াশা সিরিজ লেখা হতোনা। এই বই গুলোয় নাম থাকতোনা, কুয়াশা-১, কুয়াশা-২ এভাবে পাওয়া যেত। ঠিক পাওয়া যেতনা, খুঁজে বের করতে হতো। আমার লক্ষ্য ছিল কুয়াশা সিরিজের সব গুলো বই সংগ্রহে রাখবো। সম্ভবত ৬৮, ৬৯ অবধি সংগ্রহ করার পর দেখলাম ৩৫, ৩৬, ৩৭ নেই। এখন সাহেববাজার জিরো পয়েন্ট থেকে কয়েক পা পশ্চিমে গেলে যেখানে জামাল সুপার মার্কেট তারই নিচতলায় বইবিথি দোকানটা। এই বইবিথি ছিল এক সময় পেছনের পুরনো রাস্তাটায়। বইবিথি কোত্থেকে যে কুয়াশার পুরনো সিরিজ গুলো যোগাড় করে আনতো সেটাও এক রহস্য। একবারও পড়া হয়নি এমন কিন্তু পুরনো বলেই মলাট শুদ্ধ হলুদ হয়ে যাওয়া বই। কুয়াশা ৩৫,৩৬ মিলে গেল। এই দুটো ছিল মুক্তিযুদ্ধের সময়ের কাহিনীকে ভিত্তি করে লেখা। এই বইয়েই কুয়াশা ছাড়া সম্ভবত প্রধান চরিত্রের সব গুলোই পাক বাহিনীর হাতে মারা যায়। পরের সিরিজ গুলোয় তাদের আবার জীবিত করে তোলা হয়, মনে হয় জনপ্রিয়তার চাপেই। আর দোষ দেওয়া হলো ডি-কষ্টার ওপর। বলা হলো ডি-কষ্টাই শহীদ, মহুয়ার মৃত্যুর মিথ্যে খবর রটিয়েছিল। আমরা তখন পরের সিরিজ গুলো আগেই পড়ে ফেলেছি সুতরাং জানি শহীদ, কামাল, মহুয়া কেউই মারা যায়নি। কুয়াশা সিরিজের কয়েকটা বাদে সব বই গুলোই সংগ্রহে ছিল আমার। একবার কয়েক বন্ধু মিলে সেবার বই দিয়ে একটা পাঠাগার করলাম। উৎসাহের আতিশয্যে কুয়াশা সিরিজের সব গুলোই সেখানে দান করে ফেললাম। কিন্তু ঘরে এসে মন খুত খুত করতে থাকে। বই গুলো ফেরত আনারও উপায় নেই। আবার এক এক করে সংগ্রহ শুরু হলো কুয়াশা সিরিজের সব বই।

একটু বড় হলে সেবার অন্য ক্যাটাগরি গুলো নিয়েও এভাবেই হামলে পড়তাম আমরা। সেবার অনুবাদ ছাড়াও কিছু মৌলিক রহস্য উপন্যাস ছিল। সম্ভবত সেবার আগে রহস্য-রোমাঞ্চ নিয়ে উপন্যাস লেখার চল খুব একটা ছিলনা। নেহাত ছোটদের বই না হলে এই ক্যাটাগরিটাকে অন্য প্রকাশনী ঠিক সাহিত্য বলে ভাবেনি। আরেকটা ক্যাটাগরি ছিল আত্মোন্নয়ন মূলক। মনে আছে সেবার ধুমপান ত্যাগে আত্ম-সম্মোহন বইটা কি উত্তেজনা নিয়েই না কিনে এনছিলাম। তখন ধুমপানই ধরিনি সুতরাং তা ত্যাগ করা নিয়ে বিশেষ বিচলিতও ছিলামনা কিন্তু দরকার ছিল হিপনোসিস শেখা। কিভাবে সম্মোহন করতে হয় তা শিখতে হবে। অনেকটা যাদু শেখার উত্তেজনা। কিন্তু দেখা গেল এটা শ্রেফ নিজে নিজে নিজেকেই সম্মোহিত করা। সম্মোহন শিক্ষা বেশিদূর এগায়নি, কিন্তু অটোসাজেশন জিনিসটা খুব কাজে দিয়েছিল। হয়তো মনোবিজ্ঞানে আগ্রহ জন্মাবার সেটাই ছিল প্রথম সোপান। আরেকটা বই খুবই কাজে দিয়েছিল সেটা ছিল যৌন বিষয়ে সাধারন জ্ঞান। ছোটবেলায় বন্ধুদের কাছে থেকে জানা অনেক ভুল ধারনাই শুধরে দিয়েছিল বইটা। এই শ্রেনীর যে বইটা আমার সত্যিই কাজে এসেছিল তা ছিল বিশু চৌধুরীরর স্বর্নশিখর। বইটা এখনও আমার কাছে আছে। স্বর্ন শিখরে হয়তো ওঠা হয়নি কিন্তু অনেকের চেয়ে, অনেক কিছু নেই এর ভিতরও ভালো সময় তৈরী করাটা শিখেছি এই বই থেকে।

সেবার অনুবাদ সিরিজের প্রায় সব ক’টা বইই সংগ্রহে ছিল। পরে কিশোর-ক্লাসিক বের হতে শুরু করলে সেগুলোও বাদ যায়নি। মোটামুটি ধরলে সেবার বইয়ের ক্যাটালগে চোখ বুলালে দেখতাম খুব কম বইই আমার সংগ্রহের বাইরে আছে। কিছু বই পরে আর প্রিন্ট হয়নি। কয়েকটা অন্য কারো কাছে কোন এক সময় চেয়ে নিয়ে এসে পড়া হয়েছে কিন্তু পরে আর পাইনি। কিন্তু এত বই, এত চেষ্টা করেও রাখতে পারিনি। সেবার বইয়ের এই আরেক ভ্যাজাল নিজের করে নিজের অধিকারে রাখবার উপায় নেই। সেবার বইয়ের অপ্রতিরোধ্য আকর্ষনেই বই গুলোর ডানা গজিয়ে যেত। কঠিন পাহারায় রাখলেও কেউ না কেউ সেবার বই পড়তে নিয়ে যাবেই আর তারপর ফেরত আসবেনা। হয়তো যে নিয়ে গেল তার কাছ থেকেও বইটা আবার চালান হয়ে গেছে অন্য কোথাও। সেবার বইয়ের জনপ্রিয়তা তখন এমনই ছিল। শেষটায় দেখা গেল আমার কাছে সেবার একটা বইও সংগ্রহে আর নেই। অনেক কাল পর ইদানীং সেবার পুরনো বই গুলো ভলিউম আকারে কয়েকটা বই একসাথে প্রকাশ হচ্ছে। এই বই গুলো একটা দু’টো করে কিনে রাখছি। বন্ধুদের প্রায় সবাই এখন সাংসারিক ব্যস্ততায় বই পড়া ভুলেছে। বই ধার নিয়ে পড়ার মানুষ আশে পাশে বিশেষ আর নেই। কিন্তু এখনও অনাবশ্যক সতর্কতায় সেবার বই গুলো রাখছি সেলফে অন্য বই গুলোর পেছনে, যেন দেখা না যায়। কেন করছি এমনটা জানিনা। হয়তো এই শেষ সংগ্রহটা আর হারাতে চাইনা কোনক্রমেই।

সেবার বই ছিল ঘোর লাগা একটা সময়ের সাক্ষ্মী। আমরা যে সময় সেবার বই পড়া ধরেছি তারও অনেক আগে প্রকাশিত হয়ে গেছে কাজী আনোয়ার হোসেনের গল্প সংকলন তিনটি উপন্যাসিকা, পঞ্চ-রোমাঞ্চ। বোধহয় ছয়-রোমাঞ্চ প্রায় আমাদের সময়েই প্রকাশ হয়েছিল। কি অদ্ভুত একটা অনুভূতি নিয়ে পঞ্চরোমাঞ্চ পড়ছি এখনও মনে পড়ে। গল্প গুলো প্রায়ই কোন না কোন বিদেশী গল্পের ছায়া অবলম্বনে রচিত ছিল। দু’একটা সম্ভবত মৌলিক রচনাই। ঠিক এই ধরনেরই আরেকটা বই ছিল ছায়াঅরণ্য। এই বই গুলো তখন একাধিকবার পড়েছি। দামী হীরে-জহরতের মত মনে হতো এই বই গুলোকে। কিশোর বয়সের সেই উত্তাল সময়ে কল্পনার রাজ্যটা এত বিশাল করে দিয়েছিলো সেবা প্রকাশনী তা আর বলবার অপেক্ষা রাখেনা। এক একটা সময় জুলভার্নের রহস্যের দ্বীপের মত কোন এক দ্বীপে আবিস্কার করতাম নিজেকে, কখনও রবিনহুডের দলবলের সাথে শেরউড এর অরণ্যে ছুটছি, কখনও ক্যাসল ড্রাকুলার সেই অন্ধকারে আচ্ছন্ন প্রকোষ্ঠ গুলোয় ঘুরছি জোনাথান হারকারের সঙ্গে। কল্পনার মোহময় টানে একটার পর একটা বই পড়ছি। পড়া চলছেই। আমাদের প্রজন্মে বই পড়ার অভ্যাসটা বোধহয় গড়ে দিয়েছিলেন কাজী আনোয়ার হোসেনই তার সেবা প্রকাশনীর মাধ্যমে। এত বিচিত্র স্বাদের সাহিত্যের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল মানুষটা যে সেই ক্ষুধায় মন দিকবিদিকে ছুটে গেছে। আরেকটু বড় হয়ে মনটা কেবল প্রেমের রোমান্টিক গল্পের ঘোরেই বুঁদ হয়ে থাকতে চায়নি, দেখতে চেয়েছে এই বিপুল পৃথিবীর প্রায় প্রতিটা কোন। সেই অন্তর্জালের আগের যুগটায় এই বিচিত্র পৃথিবীটাকে তারুণ্যের কৌতুহলের সামনে তুলে ধরাটা কোন সামান্য ব্যাপার নয়। কাজী আনোয়ার হোসেন তার যাদুকাঠির ছোঁয়ায় বাংলাদেশের পাঠক-মনকে কূপমণ্ডুকতার বেষ্টনীর বাইরে নিয়ে এসেছিলেন। গড়পড়তা ধারার বাইরে যারা আজ চিন্তা করতে পারেন, এবং করছেন তাদের মধ্যে সেদিনের সেবার বইয়ের পাঠকরাই হয়তো বেশি।

সাহিত্য রচনায় বাংলা ভাষাভাষীদের ভূখণ্ডে আকাল নেই। না সেদিন, না এদিনেও। গল্প, উপন্যাস, কবিতা, প্রবন্ধ লেখার ধারা থেমে নেই। কিন্তু রহস্য-রোমাঞ্চ ধারায় মৌলিক প্রয়াস কি খুব চোখে পড়ে? সেবার প্রধান ধারায়ই ছিল এটা। পাঠক মনে রহস্য-রোমাঞ্চের আবেদন কম নেই। এখনও অন্যান্য প্রকাশনী থেকে এধরনের বিদেশী গল্প-উপন্যাসের অনুবাদ কম হচ্ছেনা। সেবা প্রকাশনীর জয়-যাত্রার সময়টায় অনুবাদতো বটেই, বিদেশী কাহিনীর ছায়া অবলম্বনেও রচিত হয়েছে এ ধরনের বহু বই। অন্য প্রকাশনী গুলো সস্তা, চটুল সাহিত্য বলে এধরনের কাহিনী প্রকাশে বিশেষ আগ্রহী ছিলনা। কিন্তু সেবা প্রকাশনী পাঠক মনের আবেদনকে উপলব্ধী করেই রহস্য-রোমাঞ্চ মূলক কাহিনীর বই প্রকাশে পিছপা হয়নি। পেপার ব্যাক বইয়ের সুলভ সংস্করনের চেহারার মধ্যেই একটা সস্তার ব্যাঞ্জনা আছে। কাজী আনোয়ার হোসেনের সেবা প্রকাশনীই এই ধারাটাকে জাতে তুলে দিয়েছিল। সেবার বইকে আর দশটা নরম কাগজের মলাটের বইয়ের সাথে এক করে ভাবা যায়নি। সেবার মান সম্মত প্রকাশনা সেই সম্মানটা আদায় করে নিয়েছিল। সেবার অনুকরনেই সে সময় আরো কিছু প্রকাশনীকেও সামনে এগিয়ে আসতে দেখি। তাদের প্রকাশিত বই গুলোর চেহারাতেও সেবার বইয়ের অনুকরন চোখে পড়তো, বিশেষ করে আঙ্গিকগত দিক দিয়ে। ইংরেজি সাহিত্যে স্পাই থ্রিলার, গোয়েন্দা কাহিনী, অতিপ্রাকৃতিক কাহিনী, এ্যাডভেঞ্চার কাহিনী, ফ্যান্টাসী ধরনের লেখা কম হয়না। এ ধারার মৌলিক রচনার পরিমানও কম নয়। মহৎ ও গুরু-গম্ভীর সাহিত্যের পাশাপাশি এই ধারার রচনার প্রবাহও চলতে থাকে। বাংলাদেশে ঠিক এধরনের সাহিত্যের মৌলিক প্রয়াস খুব একটা দেখা যায়না। সেবা প্রকাশনীর সময় ঠিক এরকম একটা সম্ভাবনা মনে হয় সত্যিই তৈরী হয়ে উঠছিল। সেবার প্রথম দিকের বেশ কিছু রহস্যোপন্যাস মনে হয় মৌলিক প্রচেষ্টাই ছিল। কিন্তু জনপ্রিয়তার চাপে, পাঠকদের নতুন নতুন বইয়ের ক্ষুধার খোরাক যোগাতে গিয়ে বিদেশী-কাহিনীর ছায়া অবলম্বন করতে হয়েছে সেবার অনেক লেখককেই। খোদ কাজী আনোয়ার হোসেন যিনি বাংলা সাহিত্যে স্পাই থ্রিলারের সত্যিকার স্বাদ এনে দিয়েছিলেন, “মাসুদরানা” এই কাল্পনিক চরিত্রকে কিংবদন্তীর স্তরে তুলে দিয়েছেন, তিনিও পাঠক মনের খোরাক যোগাতে বিদেশী কাহিনীর ছায়া অবলম্বন করতে বাধ্য হয়েছিলেন।

সে সময় সেবার বইয়ের শেষ কয়েকটা পাতায় পাঠকদের অনুভব জানিয়ে পাঠানো চিঠি গুলো ছাপানো হতো এবং প্রকাশনীর তরফ থেকেও প্রতিটি চিঠির নিচেই জবাব দেবার চলও ছিল। এই চিঠি গুলোয় মাঝে মাঝেই পাঠকদের তরফ থেকে মৌলিক রচনার প্রসঙ্গ উত্থাপিত হয়েছে অনেকবারই। এ প্রসঙ্গে কাজীদা বা সেবা প্রকাশনীর তরফ থেকে প্রায়ই উত্তর আসতো মৌলিক রচনায় সময় লাগে, কিছু আনুষাঙ্গিক গবেষনার শ্রমও প্রয়োজন। কিন্তু যে হারে পাঠকরা নতুন বই চাইছে তাতে প্রায় সময়ই মৌলিক রচনার জন্য সে সময়টা দেওয়া লেখকদের পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠেনা। ফলে অনুবাদ এসেছে, দেদারসে বিদেশী কাহিনী অবলম্বন করে রোমাঞ্চ কাহিনীও রচিত হয়েছে কিন্তু মৌলিক রচনার তালিকায় সংযোজন বিশেষ কিছু আর হতে পারেনি। আমার মনে হয় অন্তত সেবা প্রকাশনী এধারায় মৌলিক সাহিত্য রচনায় কিছুটা অবদান রাখতে পারতো। ইংরেজি সাহিত্যে যারাই স্পাই থ্রিলার লিখছেন, বা অন্য ধরনের অতিপ্রাকৃতিক বিষয় বা এ্যাডভেঞ্চার নিয়ে লিখছেন তারাও লেখার আগে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ, গবেষনার পরিশ্রম স্বীকার করেই লিখছেন। বাংলা সাহিত্যে সেখানে এই বিদেশী কাহিনীর অনুবাদ আর অনুসরনই কেবল রয়ে গেল। সেবা প্রকাশনীর থেকেই এধরনের মৌলিক রচনার শুরুটা হতে পারতো। সম্ভবত বাংলাদেশে বইয়ের কাটতি, বই প্রকাশনায় বিনিয়োগ যথেষ্ট ছিলনা বা হতে পারেনি বলেই প্রতিটি বই রচনায় লেখকের উপার্জন বলতে যা ছিল তাতে এই মৌলিক রচনার পরিশ্রমটার সুযোগ বিশেষ ছিলনা। লেখাকে পেশা হিসেবে গ্রহন করাটা এখনও অলীক স্বপ্নের স্তরেই রয়ে গেছে। মাঝে মধ্যে যে দু’চারজন লেখক জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তাদের বাদ দিলে লেখালেখিকেই একমাত্র পেশা হিসেবে হিসেবে গ্রহন করতে পেরেছেন এমন দৃষ্টান্ত বিরল। আর একারনেই সম্ভবত লেখার জন্য গবেষনামূলক কাজে দেবার মত সময়ও অপ্রতুল। অন্য একটা বা দুটো উপার্জনের রাস্তা রেখেই একজন লেখক বাকী অবসর সময়টায় লেখালেখি করেন। এখনও সে কারনেই বোধহয় বিদেশী কাহিনীর অনুবাদ বহাল আছে কিন্তু এই বিশেষ ধারায় মৌলিক প্রয়াস এক রকম থমকেই আছে।

সেবা প্রকাশনীও মৌলিক রচনার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারেনি সম্ভবত এই কারন গুলোর জন্যই। তারপরও কাজী আনোয়ার হোসেনের সযত্ন পরিচর্যায় সেবা প্রকাশনী যা করতে পেরেছিল তাও কম নয়। বিনোদনকে মুখ্য করে প্রকাশনার কাজ চলতে থাকলেও দেশের বিপুল সংখ্যক পাঠককে বিশ্বসাহিত্যের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া, বই পড়ার নেশা ধরিয়ে দেওয়া কম কথা নয়। বিরাট বিরাট সাহিত্য পুরস্কারের দরকার নেই, বাংলাদেশের কয়েক প্রজন্ম ধরে পাঠকদের শ্রদ্ধা আর কৃতজ্ঞতা যে লোকটাকে অন্তর থেকে সম্মান জানিয়ে এসেছে সেই কাজী আনোয়ার হোসেন আমার কাছে তাই এক কিংবদন্তীর পুরুষ। যিনি এমন একটা প্রকাশনী সংস্থা গড়ে তুলেছিলেন যে আমরা বইয়ের দোকানে গিয়ে অকপটে বলতে পারতাম সেবার নতুন কি এসেছে দেখান। কাজী আনোয়ার হোসেনকে নিয়ে অনু তারেক ভাইয়ের একটা সুন্দর লেখা আছে। সেই লেখার চেয়ে সুন্দর করে শ্রদ্ধা জানাবার ভাষা আমার জানা নেই। কিন্তু একটা ব্যক্তিগত অনুভূতির প্রকাশ হিসেবেই এত কথা লেখা। না লিখে উপায় ছিলনা। সেবার কাছে ঋণের শেষ নেই যে। সেবাই বই ধরিয়ে দিয়েছে। পড়ার অভ্যাসটাও। এখন আর সেবার বই বিশেষ পড়া হয়না। তবে বই পড়া আর থামেনি। থামেনি মনের নানান জিজ্ঞাসাও।


মন্তব্য

নুড়ি এর ছবি

ইশশশ... ছোট্টবেলার কত কথা মনে পরে গেলো! স্কুলে থাকতে চুরি করে সেবা রোমান্টিক পড়তাম আর পড়া শেষে বিছানার তোষকের নিচে রেখে দিতাম, একদিন বাসায় তোষক বালিশ সব রোদে দেয়ার জন্য হুলুস্থুল শুরু হল আর আমার জারিজুরি সব বমাল ধরা! ভয়ে তো আমি অস্থির, এইবার তো মাইর থেকে রক্ষা নাই, দূর থেকে নজর রাখছিলাম বাবা আর আম্মু কি ডিসিশন নেয় দেখতে। পরে তারা আমাকে কিছু বলেনাই, এতো ছোট বয়সে সেবা রোমান্টিক আমি পড়তে পারি এই চিন্তাই তাদের মাথায় আসেনাই, ঝড়ঝাপটা সব বড় বোনের উপর দিয়ে চলে গেলো! খাইছে

সোহেল ইমাম এর ছবি

পড়বার জন্য অনেক ধন্যবাদ। এইরকম ঝাল-মিষ্টি স্মৃতির জন্যই সেবার বইয়ের কথা ভোলা যায়না।

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

তারেক অণু এর ছবি

দারুণ স্মৃতি রোমন্থন! জীবনে প্রথম তিন গোয়েন্দা কিনেছিলাম বুকস প্যাভিলিয়ন থেকে! অনেক কাহিনী মনে পড়ে গেল, সেবার বই নিয়ে আসলেই আরও আরও লেখা দরকার।

ধন্যবাদ ভাই।

সোহেল ইমাম এর ছবি

উৎসাহটা ভাই আপনার কাছ থেকেই এসেছে, নইলে অনেক কথাই শুধু বন্ধু মহলের ঘেরাটোপেই থেকে যেত। আপনার সেবার বই নিয়ে লেখা গুলো দারুন।

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

জীবনযুদ্ধ এর ছবি

বাউন্তিতে বিদ্রোহ আর শীর মত বইগুলো কে যেন আমার কাছ থেকে লুঠ করে নিয়ে গিয়েছিলো, আজ অবধি খুঁজে পাই নি.

সোহেল ইমাম এর ছবি

সেবার বই এরকম লুঠতরাজ থেকে বাঁচানোটাই ভিষন মুস্কিল ছিল সে সময়।

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

প্রোফেসর শঙ্কু এর ছবি

এখন সেবার বই দেখলে মুখে অজান্তেই হাসি ফুটে ওঠে, হয়তো আগের মতন পড়ি না, তবু এখনো প্রতি বইমেলায় সেবার বই গাট্টি বেঁধে কিনে নিয়ে আসি একগাদা। এই ভাললাগা কয়েকটি প্রজন্মের শৈশব, কৈশোর আর যৌবনের সাক্ষী।

সোহেল ইমাম এর ছবি

হাসি

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

অতিথি লেখক এর ছবি

আহ, কত কিছুই না মনে করিয়ে দিলেন। আমাদের জেনারেশনের ছেলেপেলেদের একটা বড় অংশকে বইপড়ুয়া বানানোর পিছনে সেবার অবদানই বেশি। চমৎকার লেখা। ধন্যবাদ।

ফাহমিদুল হান্নান রূপক

সোহেল ইমাম এর ছবি

আপনাকেও ধন্যবাদ।

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

অতিথি লেখক এর ছবি

একটা বিষয় আমাকে প্রায়ই ভাবায় সেবার বইয়ে 'বিদেশি গল্পের ছায়া অলম্বনে' লেখা হয় কেন? মুল বইয়ের বা গল্পের নাম ও মুল লেখকের নাম উল্লেখ করতে অসুবিধা কোথায়? মানলাম বইগুলো পুরোপুরি অনুবাদ নয়, কিন্তু তার ভিত্তিটা তো ঐ বইটা - সেটা স্বিকার করতে অসুবিধা কোথায়? কপিরাইটের ঝামেলার কথা যদি বলেন তাহলে বলতে হয় সেবা তো কপিরাইট মানছে না, আর মুল বইয়ের লেখক বা প্রকাশক যদি মামলা করতে চান তাহলে এই গল্পের ওপরও মামলা করা সম্ভব।

সোহেল ইমাম এর ছবি

পড়ার জন্য ধন্যবাদ। প্রশ্নটা আমার মনেও জাগে। সম্ভবত সেবা প্রকাশনীর সাথে জড়িতরাই ভালো বলতে পারবেন।

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

কনফুসিয়াস এর ছবি

অনেক ভালো লাগলো লেখাটা। সেবা অনেক প্রিয় ছিল আগে, এখনো তাই।

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

সোহেল ইমাম এর ছবি

পড়বার জন্য অনেক ধন্যবাদ ভাই। নতুন বই গুলো এখন আর বিশেষ পড়া হয়না, তবে পুরনো কিছু বই এখনও পেলে সংগ্রহে রাখার চেষ্টায় থাকি।

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

কনফুসিয়াস এর ছবি

অনেক আগে লিখেছিলাম এটা -
http://www.sachalayatan.com/konfusias/9515

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

সোহেল ইমাম এর ছবি

লেখাটা খুব ভালো লাগলো। লিংকটা দেবার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

হি মন্দা এর ছবি

আমার মনেও একই প্রশ্ন ,প্রচ্ছদে মেয়ের ছবি দিতে হবে কেন ? তাও বিদেশী মেয়ে ! এর জন্যই মাঝে মাঝে উত্তম মধ্যম খেয়েছি। আমি নিশ্চিত মেয়েদের ছবি না থাকলে উত্তম মধ্যম খেতে হতো না।আমি পাঠ্য বইয়ের ভিতর রেখে শুয়ে শুয়ে পড়তাম।কিন্তু আমার মা কেমন করে যেন টের পেয়ে যেতেন।তিনি বলতেন 'আউট' বই নাকি আমি বেশি মনোযোগ দিয়ে পড়তাম।

সোহেল ইমাম এর ছবি

হ্যাঁ এটা নিয়ে সেবার ওপর রাগ হতো, কিন্তু এরকম কোন কোন প্রচ্ছদ কন্যাদের প্রেমেও পড়ে যেতাম সেসময়।

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

কোলাকুলি

অটঃ আচ্ছা সচলের লুকজনের সমিস্যা কি? সবাই দেখি সেবা আর সুকু'দা পইড়া বড় হইছে! চিন্তিত

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

সোহেল ইমাম এর ছবি

হ্যাঁ ভাই, সেরকমটাইতো মনে হচ্ছে। এক ক্ষুরে মাথা কামানোর ফল বোধহয়। (কোন ইমো দিতে পারলামনা, কেন জানি ইমো কাজ করছেনা)

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

আলেক সাই এর ছবি

আমি এই কিছুদিন আগেও সেবার বই গিফট পেয়েছি ।
রহস্য পত্রিকাটা নিয়মিত রাখতাম ।
স্মৃতির জাবর কাটছি ।
আহ ! সেইসব দিনগুলো খুব মনে হচ্ছে মন খারাপ

সোহেল ইমাম এর ছবি

হাসি

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।