বাবুলমুন্সীর মৎস্য শিকার

সোহেল ইমাম এর ছবি
লিখেছেন সোহেল ইমাম [অতিথি] (তারিখ: রবি, ১০/০৭/২০১৬ - ১০:০৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ঠিক বাড়ি ফেরবার সময়ই আচমকা বৃষ্টি এসে পড়বে কে জানতো। বাবুলমুন্সী বললো আরেক কাপ চা হোক। হোক তাই হোক, তথাস্তু। চায়ের দোকানে আটকা পড়লে কাপের পর কাপ চা গেলা ছাড়া আর কিইবা করার থাকে। বাড়ি ফেরা দরকার ছিল, রাতও কম হয়নি। কিন্তু বাবুলমুন্সীকে দেখলে মনে হবে এটাই যেন তার বাড়ি। তার বাড়িতে বৃষ্টিতে আটকা পড়া অতিথিকে চা সেধে আপ্যায়ন করছে। বেশ খুশি খুশি চেহারা নিয়ে বৃষ্টি দেখছে । আচমকা বৃষ্টি নামায় যেন ভারি খুশিই সে হয়েছে। টেবিলে চায়ের কাপ আসবার আগেই ইলেকট্রিসিটি চলে গেল। বৃষ্টির মধ্যে দিয়ে ছুটে যাওয়া গাড়ি গুলোর আলো ছাড়া বিশেষ আলো নেই কোথাও। চায়ের দোকানের লোকটা খুট করে একটা টিমটিমে চার্জার লাইট জ্বালালো। সে লাইটের যা আলো তার চেয়ে কেরোসিন কুপি বাতিই যেন ভালো ছিল। কুপি বাতি আর বিশেষ দেখা যায়না।

বাইরের অবিরল জলধারার দিকে তাকিয়ে বাবুলমুন্সী বলে “আহ, পুকুর গুলো এবার ভরে যাবে রে। ভালো বৃষ্টি হচ্ছে এবছর।” মাছ মারার নেশা তার, সাংঘাতিকই নেশা। নাওয়া খাওয়া ফেলে পুকুর ঘাটে দিনরাত চব্বিশ ঘন্টা বসিয়ে রাখলেও একটুও ক্লান্ত হবেনা । শ্রেফ মাছের চার আর টোপের মাল-মশলা ফুরিয়ে যায় বলেই যেন তাকে বাড়ি ফিরতে হয়, নইলে পুকুর ধারেই যাবজ্জীবন খাটতে সে এক পায়ে খাড়া। তার নেশার জন্য প্রায়ই আমাদের বাড়িতে বিনে পয়সার মাছ চলে আসে। মাছ মারার পর সেগুলো বন্ধু-বান্ধবদের বাড়িতে বিলিয়ে তবেই সে বাড়ি ফেরে। বাড়িতে তার মাছ নেবার উপায় নেই। সময়ে অসময়ে মাছ কুটতে কুটতে বাবুলমুন্সীর গিন্নি নাকি একদিন ক্ষেপে উঠেছিল; “আর যদি অসময়ে মাছ এনেছ” ইত্যাদি। অতএব বাবুলমুন্সী অপরাধের তামাম নিদর্শন অন্যদের বাড়ি বাড়ি ঝেড়ে ফেলে সুবোধ বালকের মত ঘরে ফেরে। এহেন মানুষ বৃষ্টি দেখলেই পুকুরের কথা ভাববে, মাছের কথা ভাববে এ আর আশ্চর্য কি।

টিমটিমে চার্জারের আলোয় চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতেই বাবুলমুন্সীর চোখ দু’টো চক চক করে। প্রমাদ গুনলাম। নির্ঘাত একটা মাছ ধরার গল্প আসছে। তার গণ্ডা খানেক মাছ শিকারের কাহিনী আমাদের মুখস্ত। এখন সেই ভাণ্ডার থেকেই পুরনো একটাকে ঝেড়ে ঝুড়ে হয়তো এমন ভাবে বলতে শুরু করবে যেন এই গল্পটা সে আগে কখনও বলেইনি। আমি খুব আশা নিয়ে বাইরে তাকাই। বৃষ্টিটা যদি একটু ধরে আসে। একটা রিক্সাও যদি মিলে যায়। সে আশার গুড়ে বালি দিয়ে বৃষ্টিটা আরেকটু যেন জাঁকিয়ে আসলো। রাস্তার ওপর অনেকক্ষণ হয় একটা রিক্সাও দেখিনি। বাবুলমুন্সীর বড়শীতে ধরা খাওয়া মাছের মত আমার অবস্থা।

“ভুতের গল্পের আসর বসাবার মত পরিবেশ, কি বলিস”, চায়ের কাপে সশব্দে চুমুক দেয় সে “একটা ভুতের গল্প হলে মন্দ হয়না”। যাক বাবা মাছধরার গল্প তাহলে নয়।

“শোন একবার হলো কি, কোথাও পুকুর পাচ্ছিনা।”

ব্যাস, ভুত রেখে ফের মাছ। আহা এজন্যই তো বাবুলমুন্সী তার নাম। ভুতের টোপ দেখিয়ে সেই পুরনো কাসুন্দী। পালাবার উপায় নেই।

“বুঝলিতো, আগের মত পুকুর কি আর পাওয়া যায়। সবাই মাছ চাষে লেগেছে, মাছের ব্যবসা। শখের পুকুর নয় যে ছিপ নিয়ে বসে পড়লেই হলো। একবারে গোনাগুনতি মাছ। দু’টোর পর আরেকটা বড়শিতে বাধালেই পুকুরের মালিকের হৃদপিণ্ডে সেই বড়শী গেঁথে যায়। মুখ চোখের যা অবস্থা হয় তাতে তখন তখনই ক্ষান্ত দিয়ে উঠে পড়তে হয়।

“আলেক সাই একবার একটা পুকুরের খোঁজ দিল। বেওয়ারীশ পুকুর, জংলায় ঘেরা। মালিক টালিক নেই। কাছে পিঠে লোকালয়ও সেরকম নেই। কিন্তু পুকুর টৈটুম্বুর মাছে। আলেক সাইয়ের ভাই, ভাতিজা না ভগ্নীপতি বিদেশ থেকে এসে একটা ছিপ নিয়ে বসেছিল ঘন্টা খানেকের মত। ওহ, ওইটুকু সময়ের মধ্যেই হোৎকা শরীরের কাতলা গুলো টপাটপ টোপ গিলতে শুরু করে। এক একটার ওজন ধর সাড়ে সাত কেজিরও ওপরে।

“কাঁটাখালির ঘরছেঁড়া গ্রামের কাছাকাছিই কোথাও জায়গাটা। এখনও ঘরছেঁড়ায় আলেক সাইয়ের জ্ঞাতি গুষ্টির অবশেষ কয়েক বিঘা জমি আঁকড়ে বেশ করে খাচ্ছে। বাকিরা শহরে সেটল করেছে অনেক দিন হয়। তো আলেক সাইয়ের এক কাকার ঠিকানা পাওয়া গেল, কাকাকেও পেলাম। তিনিই সঙ্গে লোক দিয়ে দিলেন একটা। সে ছোঁড়ার বয়স কম, লিকলিকে শরীর, নাম কলিম। মাথার তার ছেঁড়াই মনে হলো। যাহোক সেই পথ দেখিয়ে নিয়ে চললো। সঙ্গে চলতে থাকলো তার বকবকানি। ছোঁড়া বকে বেশি বোঝাই গেল। পুকুরটার কাছে পৌঁছাতে পৌঁছাতেই সন্ধ্যে হয়ে এলো।

“লেন গো দেইখে লেন। আন্ধার হয়া আসলো টপ করে ফেরা লাগবে।”

“কট মট করে ওর দিকে চাইলাম, ছোঁড়া বলে কি!! হাতের ঝোলা, ছিপটা কি ব্যটার চোখে পড়ছেনা। এখনই ফেরা লাগবে মানে। কষে একটা গালিই দিয়ে ফেললাম। গালি খেয়ে বেচারা জড়োসড়ো হয়ে যায়। আসলে সে ভাবেনি আমি রাতভর মাছ ধরবো। ভেবেছে এখন পুকুর দেখতে এসেছি, হয়তো কাল সকালে কোন এক সময় এসে বসবো মাছ ধরতে। পুকুর ধারে রাত কাটাবার কথা শুনে যেন ওর চোখ দু’টো কোটর ছেড়ে বেরিয়ে আসতে চায়।

“ভাইজান, ইদিকটায় সন্ধ্যাবেলা কেউ আসেনাগো। এ যে জ্বীনের পুকুর, রাত কাটাবার জো নাই। খারাপ জায়গা।”

“বলিস কি!!” মুখে অবাক হবার ভাব এনে বলি। কিন্তু সামনে খলবল করছে একটা জ্যান্ত পুকুর, এই পুকুরপাড় থেকে হাতি দিয়ে বেঁধেও আমাকে একচুল কেউ নড়াতে পারবেনা। ঠিক সেই সময় পুকুরের জলে ছলাৎ করে একটা শব্দ হয়। মাছের ল্যাজের ঝাপটা, শব্দটার মোহময়তা মনে নেশা ধরিয়ে দেয়। জুল জুল চোখে জলের দিকে তাকিয়ে থাকি।

“বিস্তর কাঠখড় পুড়িয়ে ছোঁড়াকে রাজি করালাম। আমার সাথে খাবার আছে রাতে অসুবিধা হবেনা। চার্জার লাইটও আছে। বললাম অনেক দোয়া তাবিজ জানি, জ্বীন-ভুতের সাধ্য নাই কাছে ঘেসে। তাছাড়া আমরা পীর বংশের লোক আমাদের রূহানী তাকতের কাছে এই সব অশরীরি ভুত-প্রেত নস্যি। গুল-গপ্পো ঝাড়তেই হলো। দোয়া-দরুদের ভরসায় নয় সম্ভবত একলা জঙ্গল ডিঙিয়ে, খাঁ খাঁ করা মাঠ পেরিয়ে গাঁয়ে ফেরার ভয়েই বেচারা থাকতে রাজী হয়ে গেল।

“মাছের চার আর টোপের সাজ সরঞ্জাম বের করে গুছিয়ে রাখতে রাখতেই দেখি কলিম একটু পর পরই এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। আশে পাশে একটু শব্দ হলেই চমকে উঠছে।
পুকুর ঘিরে ঘন জঙ্গল। গাছতো বেশ কয়েকটা আছেই কিন্তু গাছ বেয়ে জড়িয়ে ওঠা লতা-গুল্মের ঝাড়েই জায়গাটা নিরেট জঙ্গলের চেহারা পেয়ে গিয়েছে। সব রেডি করে বসতে বসতেই আশপাশটা যথার্থ অর্থেই অন্ধকার হয়ে এলো। চার্জার লাইটটা জ্বালাতেই হলো। চার্জার লাইটটার আলোর অবস্থা দেখেই প্রমাদ গুনলাম। তাড়াহুড়োয় লাইটটায় চার্জ দেওয়া হয়নি। আলোর জোর নেই। কতক্ষণ থাকে সন্দেহ। ওদিকে জলের মধ্যে আরো কয়েকটা ল্যাজের ঘাই পড়েছে। সেই শব্দে মনটা এতোটাই উতলা হয়ে উঠলো যে আলোর সমস্যা নিয়ে ভাবা হলোনা বিশেষ। আশে পাশে শুকনো কাঠ-কুটো জ্বালিয়ে একটা অগ্নিকুণ্ড বানিয়ে নিলেও চলে যাবে। না হয় সারারাত থাকলামনা, ঘন্টা তিনেক সময়ে গোটা দশেক বড়শীতে বাধাতে পারলেই হলো।

“অন্ধকার ঘনিয়ে আসার সাথে সাথেই ঝিঝির ডাকে আশপাশের জঙ্গল যেন জীবন্ত হয়ে উঠলো। চার্জার লাইটের আলো বেশি দুর যাচ্ছেনা, ফাৎনাটা দেখা যাচ্ছে কেবল। পুকুরটা বিশেষ বড় নয়। সন্ধ্যার আবছা আলোয় ওপারের গাছ গুলোর শাখা-প্রশাখা প্রায় পানি পর্যন্ত নেমে এসেছে দেখেছি। একটা বট কি পাইকুড়ের ভাঙ্গা শাখা পানিতে নাক ডুবিয়েও আছে। এখন অবশ্য আঁধারে সেসবের কিছুই চোখে পড়ছেনা। না পড়ুক, আমার চোখ ফাৎনার ওপর। ফাৎনাটার আশে পাশে ছোট ছোট বুদ্বুদ ভুড়ভুড়িয়ে উঠেই মিলিয়ে যায়, ফাৎনাটা একটু নেচেও ওঠে। ঘটনা শুরু হয়ে গেছে। সরেশ টোপটা ঘিরে বাজারের খদ্দেরদের মত মাছের আনাগোনা শুরু হয়েছে। টোপটার আশপাশ ঘুরে পরখ করে দেখছে।
পুকুরের টলটলে সমতল জলের ওপর জলের নিচের অদৃশ্য জগতটাকে জীবন্ত হতে দেখি। এটা দেখার জন্য চোখ লাগে, বুঝলি। অন্য যে কেউ দেখলে পানি ছাড়া আর কিছু পাবেনা কিন্তু মাছ শিকারীদের কাছে এই জলের আবরন স্বচ্ছ কাঁচের মত।

“কলিম ছোঁড়াটা প্রায় গা ঘেসেই বসেছে। একটু পর পরই খস্ করে দেশলাই ঠুকে একটা করে বিড়ি ধরাচ্ছে। আমার সিগারেটের প্যাকেটটা পাশেই রাখা কিন্তু মনোযোগটা পুরোটাই দখল করে আছে পানিতে আধ ডোবা ফাৎনার নাচন। রুই-মৃগেল টোপটা ঠোকরাতে ঠোকরাতে টুপ করে গিলে নেবে আর কাতলা টোপটা খেতে চাইবে চেটে চেটে। মুখের পানি ছেড়ে দিয়ে টোপটাকে গলাতে চাইবে। টোপটার টুকরো টাকরা পানিতে গুলে গেলে সেই পানিটা সুড়ুৎ করে টেনে নেবে। এই টানার সময়ই চোয়ালের এখানে ওখানে দু’তিনটে বড়শী যাবে বিধে। সে সময়টা বড় সতর্কতার। হ্যাঁচকা টানে কাতলের নরম ঠোঁট থেকে বড়শী খুলেও যেতে পারে। রুই মাছের এত হ্যাঙ্গাম নেই। সে আমূল টোপটাই গিলে ফেলবে আর অবধারিত ভাবে বড়শি আঁটকে যাবে গলায়।

“অশরীরি উপস্থিতির ভয়েই হোক বা মাছ ধরার তন্ময়তার জন্যই কলিম ছোঁড়াটা আর বক বক করছেনা। একেবারে গা ঘেসে বসেছে। প্রথম ফাৎনার দুলুনিটা ছিল ফলস্ এ্যালার্ম, অভিজ্ঞ চোখ বুঝলিতো। বড়শিটা তুলে দেখি রাজ্যের কাঁকড়া টোপটাকে ছেঁকে ধরেছে। কাঁকড়া ছাড়িয়ে নতুন একটা টোপের গুলি পাকাই। টোপটার গুলি পাকাবার সময় খানিকটা নারকেল তেল হাতের তেলোয় মেখে নিতে হয়। সবাই জানেনা বুঝলি, নারকেল তেলের সুবাস কাতলা টেনে আনবে। পরেরবার কিন্তু কাতলার বদলে উঠলো একটা ছোট্ট কচ্ছপ। পুরনো পুকুরে এসব হ্যাঙ্গাম থাকবেই। মাছ উঠছেনা কিন্তু এই কাঁকড়া আর কচ্ছপেই কলিম মনে হলো উৎসাহ পায়। ওকে আস্বস্ত করে বলি, “বুঝলি কলিম, দু’চারটে বাধিয়েই মাঝরাতের আগেই বাড়ি ফিরবো চিন্তা করিসনা।”

“মাঝরাতের কথায় যেন আবার মুষড়ে পড়ে ছোঁড়াটা। ‘জায়গা ভালোনা ভাইজান, এই পুকুর তেনাদের, তেনাদেরই কাটা। কেউ নাই কিচ্ছু নাই আচনক একদিন সকালে সবাই দেখে জঙ্গলের ভিতর একখান পুকুর কাটা। দিনের বেলাতেও জন মনিষ্যি আসেনা। কাইল সকালে ফের আসবেন, আর রাত কইরেননা।’ তাকে ঠাণ্ডা করার জন্য কি বলবো ভাবছি ঠিক তখনই ফাৎনাটা আবার নেচে ওঠে। আমি নড়িনা, অপেক্ষা করি। আবার নেচে উঠতেই হুইলটায় একটা ছোট্ট মাপা ঝাঁকি দিই। ব্যাস্ , হুইলের চাকাটা ফর ফর করে ঘুরতে শুরু করে। মাছ ঠোঁটে বড়শী বাধিয়ে এবার সুতো টেনে দুরে পালাতে চাইছে। এইটাই খেলাবার সময়। এসময় হ্যাঁচকা টানের কোন খাওয়া নাই। তাকে বুঝতে দিতে হবে সে এখনও স্বাধীন, আবার একটু এদিক ওদিক ঘুরিয়ে তাকে নিয়ন্ত্রনের মধ্যেই রাখতে হবে। নিচে নেমে কোন জলজ আগাছায় মাথা গুঁজে দিলেই বিপদ। হুইলের নমনীয় মাথাটা মাছের ভারে অনেকখানিই বেঁকে যায়। কলিম ইশ্ ইশ্ করছে আনন্দে। ঘাড় এগিয়ে সে দেখার চেষ্টা করছে মাছটা কোথায় যাচ্ছে।

“ডাঙায় যখন কাতল মাছটাকে তোলা হলো তখন তার পেল্লাই সাইজ দেখে চমক খাবার জোগাড়। ঠিক সাত কেজি না হলেও কাছাকাছি যাবে। কলিমতো আনন্দে নাচতে থাকে। ছোঁড়াটা কাজের। দক্ষ হাতে মাছটা ধরে বড়শী ছাড়ানো দেখেই বোঝা যায় একাজ আগেও সে করেছে। পর পর আরো দু’টো কাতলা বাধলো। কলিমের উৎসাহ চরমে উঠেছে। বাড়ি ফেরার কথা আর মুখে আনছেনা। আগের মত আবার বকবকানি শুরু হয়ে গেছে। এবার কিন্তু তার বকবকানি শুনতে খারাপ লাগছেনা। রাত কত হলো হিসেব নেই। ঘড়ি আনিনি, সেলফোনটাও আলেকসাইয়ের কাকার বাড়িতে রাখা ব্যাগেই থেকে গেছে। সেসবের জন্য বিশেষ আফসোস হচ্ছেনা। একটু দুশ্চিন্তা খালি চার্জার লাইটটা নিয়ে, আলোটা আরো যেন ম্লান হয়ে এসেছে। কতক্ষণ চলবে কে জানে। আলোটা খুব বেশি দুরে যাচ্ছেনা।

“আবার অপেক্ষা। তিন তিনটে ঝটপট বড়শিতে বেধেছে, কিন্তু এখন সময় গড়িয়ে যাচ্ছে ফাৎনা নড়েনা। বেশ কিছু সময় পার হবার পর টোপটা তুলে দেখি অনেক খানিই গলে গেছে। নতুন আরেকটা টোপ দেওয়া হলো গুলি পাকিয়ে। এবার কলিম আব্দার করে বসে,

“ভাইজান, দেন আমি ছুড়ি।”

সুতো ধরে টোপ লাগানো বড়শীর গুচ্ছটা দুলিয়ে দুরে ছুড়ে দেয় কলিম। কাজটা সেরে সে যেন মস্ত আনন্দ পেয়েছে। আয়েশ করে পাশে বসে বলে,

“ভাইজান বিড়ি শেষ, বেয়াদবী না নিলে একটা সিগারেট দেন।”

“আরে নে না। প্যাকেটটা তার দিকে বাড়িয়ে ধরি। নিজেও একটা ধরাই। দু’জনের সিগারেটই শেষ হয়ে এসেছে এমন সময় ফাৎনাটা একবার নড়ে ওঠে। হুইলের সুতোয় টান পড়ে। কিন্তু কিছু একটা গড়বড় আছে। টানটার ভেতর কেমন এলোমেলো ভাব। রুই না কাতলা? ভাবতে ভাবতেই হুইলের চাকাটা লাটাইয়ের মত ঘুরতে শুরু করে। সিগারেটটা ফেলে হুইল সামলাতে গিয়েই বেকুব। সুতোটা টান টান হয়ে আছে, কিন্তু কোনাকুনি পানিতে নামার বদলে সুতোটা জলের দু’ফুট উপরে জলের সাথেই সমান্তরাল হয়ে আছে। মাছটা বড়শীতে বেধেছে ঠিক আছে কিন্তু সে থেমে পড়েছে। নড়াচড়া করছেনা। মাছ যেভাবে পালায় সেভাবে দুরেও সরে যাচ্ছেনা। আবার বোঝাই যাচ্ছে জল থেকে অন্ততঃ দু’ফুট মাথা তুলে সে হয়তো পানির মধ্যেই স্থির দাঁড়িয়ে পড়েছে। মাছ কি? মাছের আচরন নয় এটা। জলের দু’ফুট ওপরে সমান্তরাল হয়ে থাকা সুতোটা সমস্ত হিসেব নিকেশ মিথ্যে করে দিচ্ছে। ভাবনা গুলিয়ে যায়। কি এটা? কলিম আমার বাহু খামচে ধরেছে। বিস্ফোরিত চোখে সুতোটার দিকে চেয়ে আছে। চার্জারের আলোটা কমে আসছে সুতোর ওদিকটা ঘন অন্ধকারে আড়াল হয়ে আছে, কি আছে দেখা যায়না। ছিপ ধরা আমার হাতটা কাঁপতে শুরু করলো। জল থেকে দু’ফুট উপরে মাথা তুলে কোন মাছ এরকম স্থির হয়ে থাকবে এটা অসম্ভব। হাতের কাঁপুনি শরীরে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। হাঁটু জোড়ায় অদ্ভুত দুর্বল লাগছে। মনে হচ্ছে এখনই হাঁটু ভেঙ্গে বসে পড়বো। ঠিক সেই সময় সুতোটা ওপর দিকে উঠতে শুরু করে। যে অজানা বস্তুটা মুখে বড়শী ধরে মাঝ পুকুরে পানির মধ্যে দাঁড়িয়ে ছিল সে যেন ডানা মেলে দিয়েছে। বড়শী নিয়েই সে উড়তে শুরু করেছে উপরে। সুতোটা আরো বেঁকে আমাদের মাথা ছাড়িয়েও উঠে যায়। একটা হ্যাঁচকা টানে মুঠোর মধ্যে থেকে হুইলটা বেরিয়ে অন্ধকারে মিলিয়ে যেতেই শিরদাঁড়ায় বরফ শীতল অনুভবটা সারা শরীরে তীব্র ঝাঁকি দেয়। গোঁ গোঁ করে পাশেই কেউ গুঙিয়ে কেঁদে ওঠে। মনে হয় কলিমই হবে। নাকি আমি। তীব্র আতঙ্ক তখন সমস্ত দেহটাকে গ্রাস করে ফেলেছে। হাতে হ্যাঁচকা টান পড়ে। কলিম আমার হাত টেনে ধরে ছুটছে। দু’জনেই ছুটছি জঙ্গল ভেঙ্গে।

“ডানা মেলে দেওয়া জিনিসটা যে কোন মুহূর্তে বাদুড়ের মত বিশাল পাখা মেলে দিয়ে ছোঁ মেরে নেমে আসবে। ধারালো নখরে বিধিয়ে তুলে নেবে যেভাবে ছিপটা হ্যাঁচকা টানে ছিনিয়ে নিয়েছে। আতঙ্কের উন্মত্ততায় ছুটছি দু’জন। উচিত হয়নি, উচিত হয়নি কলিমের কথায় আমল না দেওয়াটা। কি এক অতিপ্রাকৃত ভয়ঙ্কর অন্ধকার চারদিক দেয়াল তুলে আমাদের আঁটকে ফেলতে চাইছে। আশপাশের জঙ্গল যেন কোন ভয়াল প্রাণীর মুখগহ্বরের মত। এই শক্তির সাথে কি দিয়ে লড়াই করবো। পা দু’টো পাগলের মত শরীরটাকে ছুটিয়ে নিতে চাইছে দূরে, এই ভয়াবহ বিপদ থেকে যত দূরে সম্ভব।

“চার্জার লাইট আর মাছ ধরার সাজ সরঞ্জাম পড়ে রইলো পুকুর পাড়েই। জঙ্গল ছেড়ে ক্ষেতের আইল ভেঙ্গে ছুটতে ছুটতে কিভাবে গাঁয়ে এসে পৌঁছালাম জানিনা। আলেকসাইয়ের কাকারবাড়ির উঠোনে পৌঁছেই জ্ঞান হারায় কলিম। আমি ধপ করে উঠোনে মাটির ওপরই বসে পড়ি। লোকজন আলো নিয়ে বেরিয়ে আসছে। আলেক সাইয়ের কাকা যেন কাকে ধমকাচ্ছে। শব্দ গুলো তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে, বুঝতে পারছিনা। কেউ কি আমাকে মাটি থেকে তুলতে চেষ্টা করছে। শুধু বুঝতে পারছি দু’দিক থেকে দু’টো শক্ত মুঠো আমার দু’দিকের বাহু ধরে দাঁড় করাচ্ছে। আমি কি হাঁটতে পারবো?

“পরদিন সকালে যখন ঘুম ভাঙ্গলো তখন প্রথমটা বুঝে উঠতে পারলাম না কোথায় আছি। মাটির বাড়ির দেয়ালের কাটা জানালা দিয়ে রোদ আসছে। আরে হ্যাঁ, আলেক সাইয়ের কাকারবাড়ি। মনে পড়লো কাল আমরা মাছ ধরতে গিয়েছিলাম। তারপর? একটু একটু করে মনে পড়তেই শরীরটা অজানা কারনে আবার শিউরে উঠলো। কি ভয়ঙ্কর আর অদ্ভুত অভিজ্ঞতা। কলিম এখনও জ্বরের ঘোরে ভুল বকছে। ওর জন্য পাশের গ্রামের মক্তবের এক কামেল হুজুরকে খবর দেওয়া হয়েছে। তিনি এখনও এসে পৌঁছাননি। তাড়াতাড়িই সেখান থেকে বেরিয়ে পড়লাম। আলেকসাইয়ের কাকা বিস্তর বকাবকি করলেন। যদি তিনি জানতেন আমি রাত্রেই মাছ ধরার প্ল্যান করছি কিছুতেই ওই খারাপ জায়গাটায় যেতে দিতেননা। তিনি কলিমের মতই ভেবেছিলেন পুকুরটা শুধু চেনার জন্যই গিয়েছি। ব্যাগটা হাতে ঝুলিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। অনেক দূর হাঁটতে হবে তারপরই ভ্যান ট্যান একটা কিছু পেলে বড় রাস্তায় পৌঁছানো যাবে। সেখান থেকেই বাস ধরবো।

“মনটা খুঁত খুঁত করছে। এর আগে যুক্তি-বুদ্ধির বাইরে কোন ঘটনার সামনে পড়িনি। জ্বীন-ভুত সংক্রান্ত অভিজ্ঞতাও কিছু ছিলনা। এখন যেন বোধের সমস্তটাই কেমন নড়ে চড়ে গিয়েছে। হুইল দু’টো পুকুর পাড়েই ফেলে এসেছি। একটা দিয়ে মাছ ধরছিলাম আরেকটা এমারজেন্সির জন্য রাখা। দু’টোই খুব প্রিয় বস্তু, কয়েক মাস আগেই অর্ডার দিয়ে আনানো। সঙ্গে বড়শীর বাক্সটাও ওখানেই পড়ে আছে। খান পঞ্চাশেক নানা জাতের বড়শী। একদিনের সংগ্রহ নয়। ওগুলোর জন্য মন কেমন করতে থাকলো। আবার সেই অভিশপ্ত পুকুর পাড়েও যেতে মন চাইছেনা। দ্বিধায় দুলতে দুলতে সিদ্ধান্ত নিলাম একটু বেশিই হাঁটা হোক মাছ ধরার দামী সাজ-সরঞ্জাম গুলো জঙ্গলে ফেলে যাবার কোন মানে হয়না। তাছাড়া দিনের আলোর মধ্যে কেমন একটা ভরসা আছে। ঠা ঠা রোদ্দুরের ভেতর একটা সাহস চলেই আসে। আমি পুকুরের দিকে হাঁটতে শুরু করি।

“পুকুর পাড়ে যেমন ভাবে ফেলে এসেছিলাম তার সবই পাওয়া গেল। কিন্তু পুকুরের দিকে তাকাতেই চক্ষু স্থির। আমার গতরাতের মাছধরার হুইলটা পুকুরের মাঝখানটায় ঝুলছে। ওপারের পাইকুড় গাছের একটা ঝাকড়া শাখা খানিকটা ভেঙ্গে পানিতে নাক ডুবিয়ে আছে তার নিচেই ছিপটা লম্বালম্বি ঝুলে আছে। সুতোটা অনুসরন করে গাছের উপরের দিকটায় তাকাতেই চোখে পড়লো হলুদ-কালোয় মেশানো গুইসাঁপটা। ছিপের সুতোয় আপাদমস্তক জড়িয়ে গাছের শাখার মধ্যেই বন্দি হয়ে আছে প্রাণীটা। গতরাত্রের জ্বীনটা তাহলে এই। পুকুরটা ছোট। কলিম যখন শেষ টোপটা ছুড়ে দেয় তখন নির্ঘাত ওপারের পাড়ের কাছে গিয়ে পড়েছিল। গুইসাঁপটা টোপটা গিলে ফেলেই বিপাকে পড়ে। তারপর হড়বড় করে গাছে চড়ে বসে কিন্তু সুতোয় আরগাছের শাখা প্রশাশাখায় জড়িয়ে ওখানেই বন্দি হয়ে গেছে। গুইসাপটাকে মুক্ত করতে না ছিপটা উদ্ধার করতে জানিনা, আমাকে বিস্তর খাটতে হলো। একবার ভাবলাম ঘরছেঁড়ায় গিয়ে আসল ব্যাপারটা জানিয়ে যাই। কলিমকেও একটু দেখে আসি, বেচারা জ্বীনের ভয়ে এখনও হয়তো আধমরা হয়ে আছে। কিন্তু বেলা বাড়ছে, রোদের তাপও। অনেকটা পথ হাঁটতে হবে এখনও। ভাবলাম পরে একসময় গিয়ে জানিয়ে আসা যাবে।”

বুঁদ হয়ে গল্প শুনছিলাম। বাবুল মুন্সী যখন বলে, “হবে নাকি আরেক কাপ” তখন ঘোর ভাঙ্গে। তড়বড় করে উঠে দাঁড়াই। বৃষ্টি এখনও পড়ছে, কিন্তু একটা রিক্সা দেখা যাচ্ছে রাস্তায়। এখন আর চায়ের বা গল্পের লোভে এই মুক্তির শেষ উপায়টা হারাবার কোন মানেই হয়না। “অ্যাই খালি”, আমি রিক্সাটা ডাকি। জানি একটু দেরী করলেই বাবুলমুন্সী আরেকটা গল্প ফেঁদে বসবে। তার আগেই পালাতে হবে। দেরী করলে বৃষ্টির রাতে রাস্তায় আর একটা খালি রিক্সাও পাওয়া যাবেনা।


মন্তব্য

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

১।
বাবুল মুন্সী চা খাইতে চায় শুইনা ডরাইছিলাম, নিচে কোনও ব্রাকেট না দেখে পড়লাম। চোখ টিপি

২।
জ্বিন-ভূত নিয়া এইরকম দুনিয়াবী ব্যাখ্যা দেয়া ঠিক না। নায়েক ভাইয়ার চ্যালারা আপনার 'বাক-স্বাধীনতা'
নিয়ন্ত্রণের দাবী জানাতে পারে। উনাদের সংখ্যা অনেক, দুনিয়ায় মানুষের চাইতে উনাদের সংখ্যা বেশি। খাইছে

৩।
দারুন, আরো লিখুন। দেঁতো হাসি

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

সোহেল ইমাম এর ছবি

উৎসাহের জন্য অনেক ধন্যবাদ হাসি

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

অতিথি লেখক এর ছবি

ক্লজেট থেকে বের হলেন তাহলে সোহেল ইমাম! আপনার লেখার স্টাইলটা গল্পের সাথেই ভালো যায়। আমার মনে হচ্ছিলো এ কেবল সময়ের ব্যাপার। কিছু কিছু ক্লিশে (এই যেমন আশার গুড়ে বালি, তার ছেঁড়া, চোখ দুটো কোটর ছেড়ে,......) বাদ দিলে লেখাটি দারুণ, ঝরঝরে এবং গতিময়। তবে ভূতের গল্প ভুতুড়ে হলেই আমার ভালো লাগে। এই গল্পে আতংক তৈরি হবার উপাদান গুলো ছিল, আপনি চাইলেন না। অবশ্য এটা নিতান্তই আমার দৃষ্টিভঙ্গি।

মোখলেস হোসেন।

সোহেল ইমাম এর ছবি

কথা সাহিত্যে আপনার অধিকার অনন্য। আপনার মন্তব্য গুলো তাই মনে রাখার চেষ্টাকরি, কিন্তু ক্ষমতা সেই তুলনায় শোচনীয় ভাবেই ক্ষুদ্র। পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ মোখলেস ভাই।

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

অতিথি লেখক এর ছবি

কী যে বলেন ভাই! অবন্তীর শেষ কিস্তিটা প্রায় এক সপ্তাহ হয় অতিথির কীর্তিকলাপে ঝুলে আছে। অধিকার থাকলে প্রকাশিত হতো হয়তো। আপনার লেখার হাত ভালো, বলবার মতো অনেক গল্পও জমে আছে নিশ্চয়ই।

----মোখলেস হোসেন।

সোহেল ইমাম এর ছবি

উৎসাহের জন্য অনেক ধন্যবাদ হাসি

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

Ashraf এর ছবি

অনেকদিন পর এই একটা লেখা পড়ে অনেক আনন্দ পেলাম।

সোহেল ইমাম এর ছবি

পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

MD UJJAL HOSSAIN এর ছবি

আরও সুন্দর সুন্দর লেখা উপহার দিন।

সোহেল ইমাম এর ছবি

ধন্যবাদ ভাই। হাসি

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

সত্যপীর এর ছবি

চমৎকার!

..................................................................
#Banshibir.

সোহেল ইমাম এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ। পড়বার জন্য আর উৎসাহের জন্যও। আপনার লেখা পাচ্ছিনা বহুদিন।

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

এক লহমা এর ছবি

গল্প ভালো লাগলে, মনে ধরলে তাই নিয়ে কথা বলতে ইচ্ছে করে। কিন্তু, একটা মূলকথা মনে রেখে - ভালো লেখার সমালোচনা করাটা প্রায় আবদার জানানো যে আর একটু যদি পাওয়া যেত, সেইরকম!

(১) লেখক আর গল্প কথক (বাবুল মুন্সী)-এর বাচন-এ একটু তফাৎ থাকলে গল্প আরও উপভোগ্য হত। সেই তফাৎ নানা ভাবে নিয়ে আসা যায় - কথক-এর কথার মাঝে তার নিজস্ব লব্জ ঢোকান, আঞ্চলিক টান প্রয়োগ, শারীরিক প্রকাশ-এর উল্লেখ এইসব আর কি।

(২) জ্বীন-ভুত সংক্রান্ত গল্পে মজা চরমে ওঠে যখন অলৌকিকতার একটা ব্যাখ্যা দেওয়ার পরেও একটা আবছা কুয়াশা রেখে দেওয়া যায়। বাস্তবতা মেনেই সেটা করা যায়, শুধু সেটার কারণটা নিশ্চিত করে বলে দিতে নেই। গা ছমছমে 'হলেও হতে পারত'-এর আকর্ষণটা বড়ই জমাটি!

(৩) শেষ প্যারাগ্রাফ-টা দারুণ হয়েছে। বাবুল মুন্সীর মৎস্যশিকার নিয়ে বলা গল্পটা এখানে যে বাবুল বলছেন না, বলছেন লেখক - সেই বিচ্ছিন্নতাটা চমৎকার ভাবে ধরা হয়েছে।

পরের লেখার জন্য সাগ্রহ অপেক্ষায় রইলাম।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

সোহেল ইমাম এর ছবি

ঠিকই ধরেছেন। ত্রুটিগুলো অবহেলা করা যায়না। এই গুলোর দিকে দৃষ্টি দেওয়া দরকার ছিল। সুন্দর পরামর্শের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ। হাসি

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

সুলতানা সাদিয়া এর ছবি

হাততালি

-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু

আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে

সোহেল ইমাম এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- হাসি

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

ঈয়াসীন এর ছবি

বাহ

------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।

সোহেল ইমাম এর ছবি

ধন্যবাদ ঈয়াসীন ভাই।

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

আশরাফ মাহমুদ এর ছবি
সোহেল ইমাম এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ ভাই।

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

হান্নান এর ছবি

খুব ভালো হয়েছে।

সোহেল ইমাম এর ছবি

ধন্যবাদ হাসি

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

অতিথি লেখক এর ছবি

বাহ! দারুন তো। বর্ণনা পড়ে মাছ ধরতে যেতে ইচ্ছা করছে এখন।

-নুড়ি

সোহেল ইমাম এর ছবি

হাসি ধন্যবাদ উৎসাহের জন্য।

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

নীড় সন্ধানী এর ছবি

ভুতের রহস্যটা এভাবে হাটে হাড়ি ভেঙে জানান দিলেন? আমি সত্যি সত্যি একটা ভয়ের গল্প চাইছিলাম।

লিখতে থাকুন আরো হাসি

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

সোহেল ইমাম এর ছবি

হাসি আসলে ভয়ের গল্প লেখার পরিকল্পনা ছিলনা। পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাই , ভয় কিন্তু পাইছিলাম। গুইসাপ এসে পড়ায় হালকা হলাম। হাততালি চলুক
গল্পটা পড়ে আমার আরেকটা গল্প মাথায় আসল।
এ্যানি মাসুদ

সোহেল ইমাম এর ছবি

আপনার মন্তব্য পড়ে ভালো লাগলো। আপনার লেখা পড়েছি তাই আপনার মাথায় আসা গল্পের জন্য উৎসুক হয়ে উঠলাম। লিখে ফেলেন, অনেকদিন হয় আপনার লেখা পাইনা।

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

মেঘলা মানুষ এর ছবি

দারুন একটা গল্প পড়লাম!

শুভেচ্ছা হাসি

সোহেল ইমাম এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ। হাসি

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

অতিথি লেখক এর ছবি

দারুন,দারুন। আরও লিখুন।

জান্নাতুন নাহার তন্দ্রা।

সোহেল ইমাম এর ছবি

উৎসাহের জন্য অনেক ধন্যবাদ।

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

দেবদ্যুতি এর ছবি

গল্প এত ভালো লেখেন আপনি! আপনার গল্প শেষে একটা গান মনে পড়লো- 'হাজার মনের কাছে প্রশ্ন রেখে/ একটি কথাই শুধু জেনেছি আমি/ পৃথিবীতে 'ভূত' বলে কিছু নেই'। আরও গল্প লিখুন, শুভকামনা।

...............................................................
“আকাশে তো আমি রাখি নাই মোর উড়িবার ইতিহাস”

সোহেল ইমাম এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ, পড়ার জন্য, মন্তব্যের জন্য এবং গানটার জন্যও। হাসি

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।