শহীদুল জহিরের মহল্লা-এক

শুভাশীষ দাশ এর ছবি
লিখেছেন শুভাশীষ দাশ (তারিখ: সোম, ২৩/০৮/২০১০ - ৬:২২পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

I ask you, who can endure these efforts?
You read to me when I’m standing,
You read to me when I’m sitting,
You read to me when I’m running,
You read to me when I’m shitting.
- Epigrammata, Martial.

শহীদুল জহির কথাশিল্পী। মার্কেজের যাদুবাস্তবতা তাঁর লেখায় এসে গেছে বলে কিছু সমালোচক রায় দিয়েছেন। আবার সেই রায়ের বিরোধিতা করেছেন অনেকে। তাঁদের মতে শহীদুল জহিরের স্বকীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা অবান্তর। সমালোচক তাঁর লেখার রসদ সংগ্রহ করতে অন্য লেখার সাথে শহীদুল জহিরের নির্মাণের সম্পর্ক খুঁজবেন। সমালোচনা সাহিত্যে তুলনা প্রতিতুলনা নিয়েই কাজকারবার। প্লাজিয়ারিজমের দোষে দুষ্ট না করে তুলনা করা গর্হিত বলে ধরে নেয়ার মানে নেই। এডোয়ার্ড সায়ীদ তাঁর ‘অন অরিজিনিল্যাটি’ প্রবন্ধে এই প্রসঙ্গে আলোচনা করেছেন। প্রবন্ধের শুরুতে বলেছেন-

সাহিত্যের অভিজ্ঞান নিতে গুণ বা ধারণা হিসেবে মৌলিকতার গুরুত্ব বুঝতে কিছু পদ্ধতি আছে। তার মধ্যে সাহিত্য নিয়ে ভাবাগোনায় মৌলিকতার মধ্যে অনেকাংশে অন্যের প্রভাব ঢুকে গেছে - এই প্রবণতাকে আমি গণনায় ধরি। লোকে কেবল কোন বইকে মৌলিক হিসাবে দেখানোর চেষ্টা করে তা কিন্তু নয়। কোন লেখক কেন মৌলিকতার নিরিখে অন্যদের চেয়ে শ্রেয় , সাথে সাথে আরো অনেক বিষয় যেমন লেখার আঙ্গিক , চরিত্রায়ন কি আবহ এগুলো নিয়ে আলোচনা অব্যাহত আছে। এছাড়া সাহিত্যের উৎস, নয়া মতবাদ, সংস্কার তত্ত্ব,নবমার্গ, প্রভাব, সনাতনী রীতি, চলিত রীতি ইত্যাদি নানান কিছুতে বিশেষ ধারার মৌলিকতার তালাশ হরহামেশা চলে।

লেখকেরা ভালো পড়ুয়া। অসাধারণ লেখকদের লেখা পড়লে নিজের লেখায় সেই ভাব কিছুটা আসা অস্বাভাবিক নয়। বাকিটা নিজের মেনিফেস্‌টেশন। মার্কেজের লেখায় হেমিংওয়ের ছাপ আছে। কুন্ডেরা স্বীকার করেছেন সারভেন্তেস আর প্রুস্ত তাঁকে খুব মোহিত করে। তাঁর লেখায় সেটা টের পাওয়া যায়। লেখকদের চেষ্টা থাকে তাঁদের প্রিয় লেখকের প্রভাব থেকে বেরিয়ে আসতে। উইকিতে দার্শনিকদের জীবনীতে ইনফ্লুয়েন্সড্ বাই আর ইনফ্লুয়েন্সড্ বলে দুটো ক্লিকানো আছে। লেখকদের ক্ষেত্রে এটা লেগে যাবে হয়তো শিগ্‌গির।

আপাতত বাদ দিই প্রভাবিত হবার কথা। শহীদুল জহিরের ‘ডলু নদীর হাওয়া ও অন্যান্য গল্প’ গ্রন্থের প্রথম গল্প নিয়ে কথা আরম্ভ করি। গল্পের নাম ‘কোথায় পাবো তারে’। গগন হরকরার গান থেকে নেয়া হয়েছে গল্পের শিরোনাম। এই গল্প মহল্লার গল্প। মহল্লা নিয়ে শহীদুল জহিরের আরো বেশ কিছু গল্প আছে। কোথায় পাবো তারে পুনরাবৃত্তির গল্প। পুনরাবৃত্তি নিয়েই মানুষ বেঁচে থাকে। আমরা ভাত খাই, পায়খানা করি, সাবান দিয়ে হাত ধুই বা ধুই না, মহল্লার রাস্তায় হাঁটি, রাতে সংগমের সুযোগ থাকলে করি অথবা ঘুমিয়ে পড়ি। পরের দিন উঠে একই কাজ চালাই। এই গল্পের আব্দুল করিম সেই রকম ডালপুরি খাওয়ার পুনরাবৃত্তিতে ঢুকে পড়ে। ‘ডাইলপুরির মইদ্দে ডাইল নাইকা, হুদা আলু!’ আব্দুল করিমের এই কথা ঘুরে ফিরে গল্পে বারবার আসতে থাকে। পাঠক শুনতে থাকে মনোটোনাস মেলানকলি। রিপিটেইটিভ রিসাম্পসান নামে বাইবেলের একটা ঘরানা এক ধরণের সাহিত্য পদ্ধতি হিসেবে দেখা হয়। আব্দুল করিমকে ডালপুরি খাওয়ায় মহল্লার আব্দুল আজিজ ব্যাপারি। কথা প্রসঙ্গে আব্দুল আজিজ ব্যাপারি, তার সাথে দক্ষিণ মৈশুন্দি, ভূতের গলির লোকেরা মায় পাঠক জানতে পারে তার ময়মনসিংহ যাওনের হাউসের কথা। সেখান থেকে সে ব্যাপারির জন্য ডাল নিয়ে আসবে কারণ ‘হালারা আলু দিয়া ডাইলপুরি বানায়’

আরো জানা যায়- ময়মনসিংহ যেতে বলেছে তাকে কেউ একজন। মহল্লার লোকেরা এসব শুনে খোরশেদ আলমের বেকার ছেলে আব্দুল করিমের মানুষ হতে না পারার সম্ভাবনা দেখে আফসোস করে। এবার রহমতগঞ্জের আড়ৎদার আলি আকবর পাকড়াও করে আব্দুল করিমকে। ময়মনসিংহ যাবার কথা জিজ্ঞেস করায় সে জানায় আকুয়া হয়ে ফুলবাড়িয়া যাবে। ফুলবাড়িয়াতে ভালো গেণ্ডারি হয়। আর গেণ্ডারি থেকে গুড়।আলি আকবরের জন্য গেণ্ডারি সে নিয়ে আসবে।

মহল্লার লোকজন আব্দুল করিমের এইসব কায়দার কথা শুনে মজা পায়। তাকে আরেকদিন আবার ধরে আব্দুল আজিজ ব্যাপারি। পুনরায় ডালপুরি সাধে। প্রথমে লজ্জা পায়। পরে ডালপুরি খেয়ে আলু দিয়ে বানানোর অভিযোগ করে। ময়মনসিংহ গিয়ে সস্তায় ডাল আনার ইচ্ছা আবারো জানায়।

পাঠক আস্তে আস্তে আব্দুল করিমের বিপন্নতা আবিষ্কার করে। শহীদুল জহির আমাদের গল্প করেন বিপন্নতার। পুনরাবৃত্তির। সেখানে নতুন কথা জানা যায়। মহল্লার লোকেরা জানতে পারে শেফালির কথা। তখন তাদের চিন্তায় কিছুটা অন্যভাব আসে।

... শেফালি একটা মেয়ে এবং আব্দুল করিম বলে যে সে তার বন্ধু। ফলে মহল্লার লোকদের রাতের ঘুম বিঘ্নিত হয়, সারাদিনের কর্মক্লান্ত দেহ নিয়ে বিছানায় জেগে থাকে, জীবনের ব্যর্থতা এবং অপচয় বোধ তাদেরকে গ্রাস করতে উদ্যত হয় এবং তারা কেমন বিষন্ন হয়ে পড়ে; তাদের মনে হয় যে, বেকার থাকাইতো ভাল আব্দুল করিমের মত! আব্দুল করিম তার অলস সময় শুয়ে বসে কাটায় এবং দূরবর্তী শেফালির গল্প করে, তার ময়মনসিংহ যাওয়ার কোন লক্ষণ দেখা যায় না। ... (জহির,২০০৮, পৃষ্ঠা ১৫)

পরে জানা যায় আব্দুল করিম ময়মনসিংহ যাত্রা করেছে। তার সঙ্গী হয়েছে আব্দুল আজিজ ব্যাপারির পুত্র দুলাল মিয়া। যেন ডন কিহাতো আর তার সাথী সাঙকো পাঞ্জা। শেফালির নির্দেশনা অনুসারে তারা মহাখালি থেকে বাসে করে ময়মনসিংহ পরে সেখানকার গাঙ্গিনার পাড়ে থেকে বাসে চড়ে ফুলবাড়িয়া পৌঁছে। দুলাল মিয়া ঠিকানা চাইলে আব্দুল করিম শেফালির কথা অনুসারে একটা বিশাল লম্বা পথের নির্দেশ বের করে দেখায়। দুলাল মিয়া দিশেহারা হয়ে বলে- এই হালার মারারি এর কথা কইছে, কিন্তু বাপের নাম, গ্রামের নাম, কিছু দেয় নাইকা। দুলাল মিয়ার কাছ থেকে পরে এই সব গল্প শুনে মহল্লার লোকজন ঠিকানা লেখা সেই কাগজ দেখতে চায়। আব্দুল আজিজ ব্যাপারি ডালপুরি কী আলুপুরি সেঁধে আব্দুল করিমের কাছ থেকে সেই কাগজ উদ্ধার করে। ভূতের গলির লোকেরা তখন কাগজটা দেখতে পায়। তাদের কামনা মেটে। অতিরিক্ত ‘যে’ প্রয়োগ বাদ দিলে এই গল্পের জহিরিয় কথন অনবদ্য।

... দুলাল মিয়া বলে যে, নদী পেয়ে যাওয়ায় তার উৎসাহ বাড়ে, কারণ, সে বলে যে, নদী হচ্ছে এমন এক বস্তু যা দেখলে সবসময় মনে হয়, কোথাও এসে পৌঁছলাম! আমরা জানতে পারি যে, গজারি গাছের খুঁটি এবং তক্তা দিয়ে তৈরি একটা চওড়া সাঁকো সমর্থ সম্ভোগরত প্রেমিকের পিঠের মত ঈষৎ বাঁকা হয়ে নদীর দুই পাড়ের লাল মাটি স্পর্শ করে পড়ে ছিল; সেই দুপুরে অথবা দুপুরের পর দুলাল মিয়ার পিছনে আব্দুল করিম আখালিয়া নদীর সাঁকোর ওপর উঠে আসে। দুলাল মিয়া বলে যে, নদীর অন্য প্রান্তে পৌঁছে তারা যখন পুনরায় পাড়ের ওপর অথবা সাঁকোর কিনারায় দাঁড়ায় তারা দেখে যে, তাদের ছায়া দেহের মায়া ত্যাগ করে দূরে যেতে চায় না, পায়ের নিচে পোষা কুকুরের মত শুয়ে থাকে।... (জহির,২০০৮, পৃষ্ঠা ২২)

ইশারায় পুনরাবৃত্তির এই গল্প বলে শহীদুল জহির আমাদের একঘেঁয়ে যাপিত জীবনকে পাঠকের সামনে খুলে দেখান।

সূত্র
১। Martial. Epigrammata,III:44, in Works, ed. W.C.A. Ker (Cambridge, Mass., & London, 1919-20)
২। Edward W. Siad, The World,the Text, and the Critic, 126 (Harvard University Press, Cambridge, Massachusetts,1983)

বহি

ডলু নদীর হাওয়া ও অন্যান্য গল্প
শহীদুল জহির
মাওলা ব্রাদার্স
এপ্রিল ২০০৮


মন্তব্য

লুৎফর রহমান রিটন এর ছবি

শুরুর পর্বটার ভঙ্গি খুবই আকর্ষণীয়।রচনায় শহীদুল জহির শহীদুল জহির গন্ধটা আরো আকর্ষণীয়।
শুভ কামনা শুভাশীষ।

হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

রিটন ভাই,

মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।

--------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার

সুমন সুপান্থ এর ছবি

আমার কেন জানি মনে হয়েছিলো, আপনি এবার শহীদুল জহির 'ধরে' ফেলবেন। মাত্রই এই মহান কথাকারকে নিয়ে দু'এক ছত্র লিখেছি, পোস্টাবো যেই না ভাবলাম, আপনার এই কৃপা ।

অপেক্ষায় রইলাম ঈগলচক্ষু নিয়ে, শুভাশীষ । অনেক বাতচিত হবে আশা করছি।

---------------------------------------------------------
তুমি এসো অন্যদিন,অন্য লোক লিখবে সব
আমি তো সংসারবদ্ধ, আমি তো জীবিকাবদ্ধ শব !

---------------------------------------------------------
তুমি এসো অন্যদিন,অন্য লোক লিখবে সব
আমি তো সংসারবদ্ধ, আমি তো জীবিকাবদ্ধ শব !

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

ধুরু যা, আপনি না হয় লিখতে শুরু করেন। আমি ক্ষেমা দেই।

---------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার

অতিথি লেখক এর ছবি

এই বইয়ের "ইন্দুর-বিলাই খেলা" গল্পটা অসাধারণ... আমার পড়া সেরা ছোট গল্প গুলোর একটা।

শহীদুল জহিরের নির্মাণ চলতে থাকুক... শুভেচ্ছা রইল...

"চৈত্রী"

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

ধন্যবাদ। মন্তব্যের জন্য।

--------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার

অতিথি লেখক এর ছবি

শহীদুল জহিরের মহল্লা, এ নামটাই বেশি লাগসই লাগছে। যদ্দুর মনে পড়ে, জহিরের শুরুর দিককার গল্পগুলোতে এই জাদুবাস্তবতা অত প্রকটভাবে আসেনি, আশা করি এ নিয়ে আলোকপাত করবেন।

অদ্রোহ।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

শহীদুল জহিরের মহল্লা- নামটা আমারও পছন্দ।

---------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

পড়লাম। আমার শহীদুল-পাঠ অত্যন্ত সীমিত। কী কারণে আগ্রহ পাই নাই মনে করতে পারতেসি না। তবে, সামগ্রিকভাবে সাহিত্যপাঠে অনাগ্রহ একটা কারণ হইতে পারে। শেষ উপন্যাস কবে পড়সি মনে নাই। ছোটগল্প মাসে ১-২ টা পড়া হয়। কই যাই মন খারাপ
___________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

হ। যেকোনো কিছু পড়তে ভাল্লাগে। আর কিছু না পড়তে আরো ভাল্লাগে।

---------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার

সৈকত আরেফিন [অতিথি] এর ছবি

শহীদুল জহিরকে নিয়ে স্মারক গ্রন্থ বেরিয়ে গেছে; তবুও এই লেখাটির আলাদা একটা গুরুত্ব
আছে। শহীদুল জহির নিয়ে যে কোন লেখাই তাঁর লেখার মত আগ্রহ নিয়ে পড়ি।
এই লেখাটিও সেমতই পড়লাম, ভাল লাগল।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

ধন্যবাদ।

---------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার

ওডিন এর ছবি

খুব ভালো লাগলো শুভাশীষ'দা।

_______________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

হাসি

-----------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার

ফারুক হাসান এর ছবি

দুর্ভাগ্য যে এখনো শহীদুল জহির পড়া হয় নাই। এইবার দেশে গেলে প্রথম চান্সেই কিছু পড়ে ফেলব। পোস্টের চমৎকার উপস্থাপনা আবারো সেই ইচ্ছেটা উস্কে দিল।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

পারাপার তো পাইলেন। পড়া শুরু করেন।

--------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার

ফারুক হাসান এর ছবি

বইটার জন্য অশেষ ধন্যবাদ। পড়তেছি হাসি

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

ফেসবুকের খসড়াটা পড়সিলাম। এইবারো আবার পড়লাম। ...

পপকর্ণ নিয়া গ্যালারিতে বসলাম। পরেরটা ছাড়েন...

_________________________________________

সেরিওজা

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

হাসি

--------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার

সিরাত এর ছবি

আপনে মানুষ না।

লেখাটা আরো মনোযোগ দিয়ে আবার পড়বো। এরকম আরো দেন!

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

এসব লিখতে ম্যালা টাইম যায়।

--------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

১. মার্কেজের প্রভাবের কথা শহীদুল জহির নিজেই স্বীকার করেছেন। তবে তার মানে এই না যে তাঁর উপর মার্কেজের প্রভাব হুমায়ুন আহমেদের 'নন্দিত নরক'-এর উপর সোমেন চন্দের 'ইঁদুর'-এর প্রভাবের মত। জহিরের নিজস্ব ভাষা আছে, গোত্র আছে, মহল্লা আছে, দেশ আছে। একাধিক গোত্রের সংশ্লেষের সফল প্রয়োগ আছে। জহিরের যাদুনগরী এমন যে তার ভিন ভাষায় অনুবাদ দুঃসাধ্য। আর অনুবাদ করলেও মূল সুর ঠিক থাকবেনা।

২. এই গল্পটা পড়লে বেকেটের গডোর কথা মনে পড়ে যায়। যদিও দুটোর পটভূমি ও বিস্তার এক প্রকারই নয়।

৩. 'কোথায় পাবো তারে'র আলোচনায় শেফালীদের বাড়ি যাবার পথের বর্ণনাটি আশা করেছিলাম। এই একটি জায়গা যেখানে পাঠক বাস্তব থেকে এক অবশ্যম্ভাবী যাদুর মুখোমুখি হন। বুদ্ধিমান পাঠক হয়তো শুরুতেই বুঝতে পারেন যে শেফালীদের বাড়িতে কখনো পৌঁছানো যাবে না। কিন্তু সেটা যে কত বড় অসম্ভব কাজ, প্রকৃতি সেখানে কী মায়া নিয়ে যে প্রহেলিকা তৈরি করেছে তা ঐ অনুচ্ছেদে না পৌঁছানো পর্যন্ত বোঝা যায় না।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

১। সেটাই। আত্মস্থ করার পদ্ধতি জহিরের নিজস্ব।

২। বেকেটের গডো অবলম্বনে বাংলাদেশে কী কোনো নাটক বানানো হয়েছে? মানে থিয়েটারে?

৩। আমি লিখছিলাম এটা নিয়ে। এডিট কর্তে গিয়ে খসিয়ে দিলাম। পাঠক গল্পটা পড়ুক।

---------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

'গডোর প্রতীক্ষায়' নামে নাটকটি ঢাকার কোনো একটি বড় গ্রুপ প্রায় বছর বিশেক আগে বানিয়েছিল। এর পরের কথা জানিনা।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সবজান্তা এর ছবি

ভালো লাগলো শুভাশীষদা।

সাহিত্যের ক্ষেত্রে মার্কেজের প্রভাব অন্তত তাঁর লেখাতে আমি চোখে পড়ার মতো দেখি নি। জাদুবাস্তবতা নিয়েই দুইজন লিখেছেন, তবে আমার বিচারে নিজেদের স্টাইলেই। কোথাও কিছুটা মিল পেলেও, সেটা আমার কাছে খুব গুরুতর কিছু মনে হয়নি যা শহীদুল জহিরের স্বকীয়তাকে বিদ্ধ করে।

অটঃ শহীদুল জহিরের উপর একটা দারুণ বই বের করেছে পাঠক সমাবেশ, গেলো বইমেলাতে। শহীদুল জহির স্মারক গ্রন্থ। এই মোটকা একটা বই। তাঁর সম্পর্কে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার সমাবেশ।


অলমিতি বিস্তারেণ

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

বোর্হেসের মধ্যে যে ম্যাজিক, মার্কেজ তার চেয়ে কিছুটা সরে নিজের একটা অবস্থান নিয়েছেন। ঠিক একইভাবে নিজেকে মার্কেজের কাছ থেকে স্বতন্ত্র করে রাখেন শহীদুল জহির। তিনি মহল্লার মধ্যে ভাসতে থাকা গল্পহীনতা ধরে এনে এনে শব্দ বাক্যের শবে ঢুকিয়ে দেন।


---------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।