পাগলা মাসুদ

সুমন চৌধুরী এর ছবি
লিখেছেন সুমন চৌধুরী (তারিখ: শনি, ২৬/০৪/২০০৮ - ১২:৫৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বহুদিন পর গতকাল দুপুরে পাগলা মাসুদের সাথে দেখা। শুনলাম ফ্রাঙ্কফুর্টে নানান ঝামেলায় পড়ে শেষমেষ স্টুটগার্টে আছেন। কাসেলে এসেছেন পুরনো বন্ধুদের সাথে দেখা করতে। এসেই যথারীতি স্টেয়ার্ণের মোড়ে নতুন ক্যাসিনো, ক্যাসিনো রয়্যালে ঢুকে গোটা কুড়ি ইউরো খুইয়েছেন। মাসুদ ভাইয়ের গল্প বলেছিলাম বহুদিন আগে অন্য কোথাও। সচলের সকলে না পড়লেও অনেকেই পড়েছিলেন। বহুদিন পরে দেখা পেয়ে আবার ইচ্ছে হচ্ছে তাঁর গল্প বলতে। কারণ পাগলা মাসুদ পৃথিবীতে একটাই হয়। আফটার মেড, কারিগর ডেড।

ভালো নামের শুরু মাসুদ দিয়ে হলেও পদবী জানা হয়ে ওঠেনি। কাসেলের আসু সমাজে ( রাজনৈতিক আশ্রয়প্রাপ্তদের সংক্ষেপে আসু বলা হয়.....জার্মান ভাষায় Asylant.) পাগলা মাসুদ নামে পরিচিত ।বাড়ি সম্ভবত সিলেট । প্রথম দেখা ২০০৩ এর সিলভেস্টারে । একটা ব্যাকার্ডি-ব্ল্যাক এর অবশিষ্ট এক-চতুর্থাংশ পৌনে এক বোতল কোকের মধ্যে ঢেলে খানিক নাড়ানাড়ি করে নিজে আধাচুমুক মেরে আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন , '' বেখার্ডি-খুলা '' আমি ঢাললাম খানিক গলায় ...''আস্তে খান বাইয়া...আস্তে খান ...ওনেক খোরা..ওনেক খোরা'' আমি হাসিমুখে তার ''বেখার্ডি-খুলা'' ফেরত দিলাম। তারপর সেদিন আর দেখা হয় নি।

তখনও কাসেলের বাংলাদেশী ছাত্রদের সাথে পরিচয় হয় নি। প্রায়ই একা একা হাটতে বের হতাম। বিশেষ করে বরফের মধ্যে হাটতে দারুণ লাগতো (নতুন নতুন আর কি)। হঠাৎ শুনলাম ডানদিক থেকে কে যেন ডাকছে ...তাও আবার বাংলায়..তাকিয়ে দেখি প্রমাণ সাইজের ভোম্বা জ্যাকেটের মধ্য থেকে একটা মুন্ডু আমার দিকে হাসিমুখে তাকিয়ে আছে ।''...হে হে হে হে ...চিনল্যন ন ..আমি মাসুদ...'' ''আরে কি খবর '' আমি ভদ্রতা করার চেষ্টা করলাম । ''বাইয়ু...এই খাসেলত আমি খাউরে চুদিন্যা....আমি ইয়ানো ফাচ বইচ্চর জেলে ছিলাম...এ্যা...খাউরে চুদিন্যা...আমরা বুঝলেন নি ..অ্যা..ছোয় বাই..দেশে তাকতে এখেকজনা বোচরে চাইট্টা-ফাসটা খরি মাডার খচ্চি...খেউ চোখ উডাই চাইলে আমারে খোবর করবেন, আমি থাখি.......ইত্যাদি'' আমি বল্লাম,''শুনে খুব ভালো লাগলো''। ভদ্রলোক আমার ঠিকানা নিয়ে সেদিনকার মতো বিদায় নিলেন । পরে মনে হইলো , এইটা কি করলাম..ঠিকানা দিতে গেলাম ক্যা...

এভাবে প্রায়ই দেখা হতো। আমার বাসা থেকে দুটো ট্রাম স্টেশন পরেই তার ডেরা। একদিন বাসায় এসে শুনিয়ে গেলেন জীবন কাহিনি। পরে শুনেছি তার জীবন কাহিনির ভার্সন অনেকগুলো। ভদ্রলোক (সেদিনকার ভাষ্যমতে) জোড়া খুনের মামলায় দেশ ছেড়েছিলেন বাইশ বছর আগে । বয়স ষাটের কাছাকাছি। কাগজ করেছেন বিবাহ মারফত। এক নাইজেরিয়ানকে চাক্কুমেরে জেল খেটেছেন পাঁচ বছর। খটকা লাগলো তখনই। এই স্বাস্থে আফ্রিকানদের সাথে এঁটে ওঠা অসম্ভব। যাই হোক আমার বাসার কাছেই নাকি তার বান্ধবী থাকেন। আগে তিনিই নাকি স্ত্রী ছিলেন, এখন বান্ধবী। রেগুলার ডিস্কোতে যাতায়াত করেন। বালিকারা বয়স জানতে চাইলে বলেন ষোল।

এরপর টানা বহুদিন দেখা সাক্ষাৎ নেই । বছর দুয়েক আগে একদিন সকালে বাজার করতে গিয়ে দেখলাম ভদ্রলোক উদ্ভ্রান্ত চেহারা নিয়ে দাড়িয়ে আছেন। এসেই আমার হাত ধরলেন , ''..আফনেগো বার্চিটিতে খাতারিনা খোই এক মাগীরে চিনেন ?'' আমি বললাম,''শুধু Katharina বললে তো চেনা মুশকিল'' উনি বল্লেন,''ইকটু মুটা খোরি...মাগী ১৫০ ইউরো নিয়া গেছে....আমার মাল লই ফালাইতে ফাইব্বো ন... '' আমি বল্লাম কি হইছে ? কয় ,''শনিবারে ডিস্কোত গেছি..এখ্ শালায় বোদকা খাওয়াই দিছে....এক্ মাগী কয় আরও খা আরও খা ..তারফোর অনেক নাছানাছির ফোরে আমি জিগাই খোতো নিবি ...খয় টেখা লাগবো ন ..ইষ লিবে ডিষ...তারফরে বাসায় আইনসি..লাগাইসি..ভুরে খয় ...আমারে ১৫০ টেকা হাওলাত দে ....সোখালে ১১ টার মধ্যে ফাইবি ....আম স্টেয়ার্নে রসম্যানের সামনে থাকুম.........আমি দিয়া দিছি'' আমি বল্লাম, "দিলেন ক্যা" ? কয়,''আরে তোখন মালমুল খাই ঠাফাই-ঠুফাই আর হুশ থাখে ন'' আমি বল্লাম আপনি কি এইখানে রবিবার থিকা দাড়াইয়া আছেন? কয় ,''হ...তিন দিন দইরা এই ১১টা থিকা ১২টা-১টা পর্যন্তখাড়াই থাকি....খাতারিনার গুষ্টি....ইত্যাদি'' ......কিভাবে মুখে মলিন মলিন ভাব ধরে রেখেছিলাম জানিনা। বাড়ি ফিরা দাপাইয়া হাসলাম অনেক্ষণ।

ভদ্রলোক শুনলাম স্টুটগার্টেও নানারকম ঝামেলায় আছেন। যেখানেই থাকুন ভালো থাকুন। ''খাতারিনা''দের খতরনক থাবা থেকে দূরে থাকুন।


মন্তব্য

আরিফ জেবতিক এর ছবি

ইন্টারেস্টিং কারেক্টার !

পরিবর্তনশীল এর ছবি

''খাতারিনা''দের খতরনক থাবা থেকে দূরে থাকুন।
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

সৌরভ এর ছবি

পাগলা মাসুদ পৃথিবীতে একটাই হয়। আফটার মেড, কারিগর ডেড।

হাহ হা।


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

নজমুল আলবাব এর ছবি
রায়হান আবীর এর ছবি

আহারে বেচারা!!
---------------------------------
জ্ঞানীরা ভাবলেন খুব নাস্তানাবুদ করে ছাড়া গেছে...আআআহ...কি আরাম। বিশাল মাঠের একটি তৃণের সাথে লড়াই করে জিতে গেলেন।

ছোট্ট তৃণের জন্য অপরিসীম ঘৃণা।

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

বস পাবলিক!

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

শেখ জলিল এর ছবি

''আস্তে খান বাইয়া...আস্তে খান ...ওনেক খোরা..ওনেক খোরা''....অন্যেরে উপদেশ দিলেও নিজে বেশি খাইয়া ধরা পড়ছে কাতরিনার কাছে...হাহাহা!
..হায়রে পাগলা মাসুদ! বেচারা।

যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

এরম মহাপুরুষের দিদার পাওয়া তো মওলার কৃপা...।
আর কিছু না। মিছা দুনিয়া-মিছা কাত্রিনা।

ক্যামেলিয়া আলম এর ছবি

আপনি কি সিলেটের? এত সুন্দর ভাবে লিখলেন কি করে?--------
.....................................................................................
সময়ের কাছে এসে সাক্ষ্য দিয়ে চ'লে যেতে হয়
কী কাজ করেছি আর কী কথা ভেবেছি..........

.....................................................................................
সময়ের কাছে এসে সাক্ষ্য দিয়ে চ'লে যেতে হয়
কী কাজ করেছি আর কী কথা ভেবেছি..........

সুমন চৌধুরী এর ছবি

হাহাহাহাহাহা ...আমার বাড়ি সিলেট না....আমি ঢাকাইয়া....



ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

বিবাগিনী এর ছবি

‌‌হাসতে হাসতে হাড্ডি গুড্ডি আলগা হয়ে যাইতেছে গড়াগড়ি দিয়া হাসি

ওহ সুমন ভাই আমিও তো ঢাকাইয়া দেঁতো হাসি

::একাকিত্বের বিলাস আমার অনেকদিনের সাধ::

‌‌::একাকিত্বের বিলাস আমার অনেকদিনের সাধ::

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

তুরুপ তুরুপ!


মনে হয় তবু স্বপ্ন থেকে জেগে
মানুষের মুখচ্ছবি দেখি বাতি জ্বেলে

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

ধুসর গোধূলি এর ছবি
তারেক এর ছবি

বাগ্যিস! খাটে বসিয়া ফড়িতেছিলাম। চেয়ারে বসিলে তো উলটাইয়া ফড়িতাম।
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

সুমন চৌধুরী এর ছবি

সবাইকে বেফক দইন্যবাদ।



ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

বিপ্লব রহমান এর ছবি

ওরে!‍ ... হো হো হো হো হো হো হো হো হো


আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

জটিল মজা পাইলাম! হো হো হো

হাসান মোরশেদ এর ছবি

ডরাইছি

----x----
...অথবা সময় ছিলো;আমারই অস্তিত্ব ছিলোনা

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

অতিথি লেখক এর ছবি

বেফক মজাক ফাইলাম গো।
~রেনেট

খেকশিয়াল এর ছবি

কয় আরও খা আরও খা

গড়াগড়ি দিয়া হাসি

-----------------------------------------
রাজামশাই বলে উঠলেন, 'পক্ষীরাজ যদি হবে, তা হলে ন্যাজ নেই কেন?'

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

উদ্ধৃতি :
আমি বল্লাম, "দিলেন ক্যা" ? কয়,''আরে তোখন মালমুল খাই ঠাফাই-ঠুফাই আর হুশ থাখে ন''
.... হা হা হা হা! হো হো হো হো!

-------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়!

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

দুর্দান্ত এর ছবি

" ঠাফাই -ঠুফাই"

র. গুপ্তের ছোটবইয়ের বাইরে এই শব্দযুগলের যথার্থ ব্যাবহারিক প্রয়োগ দেখানো কড়া মুন্সিয়ানা। মারহাবা।

সবুজ বাঘ এর ছবি

ভাত খাউনের পর আবার শালায় ট্যাকা থ
খুঁজে ক্যা?

মুজিব মেহদী এর ছবি

১৫ ঠাপের টেহা ১ ঠাপে খুয়াইলে কেউ পাগল না হইয়া পারে?

................................................................
আমার সমস্ত কৃতকর্মের জন্য দায়ী আমি বটে
তবে সহযোগিতায় ছিল মেঘ : আলতাফ হোসেন

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।