আমার দিনকাল

স্বপ্নহারা এর ছবি
লিখেছেন স্বপ্নহারা (তারিখ: মঙ্গল, ০৬/১০/২০০৯ - ১:৩২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সকাল বেলা ঘুম থেকে ওঠার কিছুক্ষণের মধ্যেই মেজাজটা খিচঁরে গেল। বয়স হয়েছে, কয়েকদিনের মধ্যে আশিতে পা দিব; কিন্তু তাই বলে শরীরের এই অবস্থা মানতে মন চায়না। কিছুদিন ধরেই খালি পেট নেমে যাচ্ছে। গেল মাসে এতগুলো ইফতারের দাওয়াত ছিল, সবগুলাতেই যোগ দিয়েছি কিন্তু পরদিন ভয়াবহ ধাক্কা সইতে হয়েছে। রোজাতো কোনদিনই খুব একটা রাখিনা কিন্তু ভাবতো দেখাতে হয়! সারাদিন টয়লেটে বসে থাকতে নিজের কাছেই ভাল লাগেনা...আর আজকাল মাঝে মাঝে বিছানায়ই হয়ে যায়। তারওপর দেখাশোনার কেউ নেই, আপন কেউ নেই...ভাই একটা আছে, সে নিজের আখের গোছাতেই ব্যস্ত। আহা! একটা কচি মেয়ে যদি একটু আদর-যত্ন করতো! আর অসুখ হলে হ, ক্যান্সার-ট্যান্সার কিছু একটা হ, লোকজনের সহানুভূতি পাই, পেপারে আসুক, অফিসে একটু সম্মান পাই। কিন্তু কপাল আমার! জীবনে একবার জ্বর পর্যন্ত হয় নাই...আগে খালি মাঝে মাঝে আমাশয় হত। এখন এই বয়সে আমাশয়-ডায়রিয়া একদিনের জন্যও রেহাই দিচ্ছেনা...ভাল্লাগেনা আর। 'পটকী লীক হয়ে যায়' এই কথা কাউরে বলা যায় না সওয়া যায়।

আর ভাল লাগবে কেমনে...মন ভাল না থাকলে শরীর ভাল থাকে? গত আট-নয় মাস ধরে মেজাজ খারাপ, কেউ কথা রাখেনা। আজকালকার সবাই নিজের স্বার্থ ছাড়া কিছু বোঝেনা, সবাই খালি আমাকে ব্যবহার করে...কাজ হয়ে গেলে কোন সম্মানের ধার ধারেনা। খোঁজও নেয়না। মাঝে মাঝে নিজেকে বেশ্যা মনে হয়...রাগে গা জ্বলে যায়, কিন্তু এখন মুখবুজে আছি। পেটের ব্যারাম বাদ দিলে শরীর আমার ফিট...মানুষ পঞ্চাশেও এত ফিট থাকেনা। তাছাড়া আমি ফ্যাশনেবল মানুষ, চুলে রেগুলার কলপ দেই, ভাল ভাল জামাকাপড় পরি। কমপক্ষে আরো বিশ বছর বেঁচে থাকব...এই বিশ বছরে আমার কোম্পানিতে পরিবর্তন হবেই। আমি জানি, হাতি গর্তে পড়লে তেলাচুরাও উষ্টা মারে...কিন্তু হাতি হাতি-ই! মরার আগে আবার আমি কোম্পানির এমডি হবই...খালি ঝোপ বুঝে কোপটা মারতে হবে। আমার কোম্পানির অনেক শেয়ারের মালিক এখনো আমি...তাই ডিরেক্টরস বোর্ডে এখনো আছি-থাকব। কিন্তু আজকাল কেউ পাত্তা দিচ্ছেনা, সময় হলে আবার দিবে...সময়ের অপেক্ষায় আছি। কোম্পানিতে আমিই সবচেয়ে বয়েসে বড়, পইপই করে বললাম আমারে কোম্পানির সুপারভাইসরি কমিটির প্রধান নামে যে অনারারি পোস্ট আছে ওইটা দিতে...এমডি শালী দিলনা। দিল আমার চেয়ে ছোট একজনরে...সে অবশ্য এমডির কাছের লোক। কিন্তু বড় হিসাবে ত আমারই পাওয়া উচিত ছিল...দেশে সম্মান বলে কিছু রইলনা! আফসোস! আমার দলটা আরেকটু বড় হইলে, পিছে আরো কিছু সাপোর্ট থাকলে, খুটিঁর জোর আরেকটু বেশি হইলে যেকোন একটা ভিপি হইলেও হইতে পারতাম...নতুন এমডি অবশ্য এমডি হওয়ার আগে আমারে অনেক আশা দিছিল...অন্ততপক্ষে যেকোন একটা ফাংশনাল ম্যানেজার করার কথা ছিল। শালী পুরাই ফাউল...ভাও বুইঝা সব ভুইলা গেছে!

এখন প্রায়ই নষ্টালজিয়ায় ভুগি...নিজে যখন এমডি ছিলাম সে দিনগুলোর কথা মনে পড়ে...আহা কী দিন ছিলরে বন্ধু কী দিন ছিল!
একজন সিকিউরিটি গার্ড থেকে ঝোপ বুঝে বুঝে কোপ মারতে মারতে একসময় আমি সিকিউরিটি ডিভিশনের চীফ হয়ে গেলাম। যখন আমি চীফ হলাম তখন অবশ্য লাস্ট এমডির মরহুম স্বামী ছিলেন তৎকালীন এমডি...তিনিও আমার মত সিকিউরিটি চীফ ছিলেন। অনেকে বলেন তিনি কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা এমডিকে হত্যার সাথে জড়িত! তো উনার পদাঙ্ক অনুসরণ করতে করতে একসময় আমিও কোম্পানির সবকিছু দখল নিয়ে নিই। সব আগের ডিরেক্টর গুলোকে ঘুষ দিয়ে-লোভ দেখিয়ে দলে ভিড়িয়ে নিই। কেউ কেউ বলে আমি নাকি আগের এমডিকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিয়েছি...আমি কিছু বলিনা। আর বললে ত কেউ আমারে কোলে তুলে নিবে না...কী লাভ! তবে কোম্পানির বয়স অনুযায়ী অনেক রক্ত ঝরেছে......ক্ষমতার লোভ...টাকার লোভ...
এগুলোও অবশ্য এই কোম্পানি আগে যে বড় কোম্পানির অংশ ছিল তার উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া।

তবে আমি ছিলাম দয়ার সাগর...নিজে যেমন ফুর্তি করেছি আশেপাশের সবাইকেও করতে দিয়েছি, নিজে একা লাভবান হইনি...একা একা সব খাইনি। আর তখন ছিল যৌবনকাল...কত নারী আমার রূপে পাগল হয়েছে...কত দেশী-বিদেশী অভিনেত্রী-গায়িকা আমার সাথে শোওয়ার জন্য পাগল ছিল। কচি বালিকা (আহা!) থেকে শুরু করে বুড়ি...সবাইকে আমি অবারিতভাবে বীর্যদান করেছি। নিজের বউ ছিল...তেমন যুতের ছিলনা...আর বুড়ি হয়ে গেছিল...ভাল সহবত করতে পারতনা। তাই নানাদেশে কয়েকটা গোপন প্রেমিকাও রেখেছিলাম...কোম্পানির টাকায় সবাইকে ধন-দৌলত-ক্ষমতা সবই দিয়েছি। আমার এই চারিত্রিক দুর্বলতার কথা চাপা ছিলনা...আমি ছিলাম যৌনক্ষমতার যাকে বলে 'লিজেন্ড'! আমার যৌনক্ষমতা নিয়ে সবার মধ্যে কত গল্প চালু ছিল...লোকে বলত আমি হিজড়াকেও গর্ভবতী করতে পারি! কিন্তু আমার সমস্যা ছিল একান্ত গোপন...আমি সন্তান জন্মদানে অক্ষম। সেটা যখন বুঝতে পারি তখন তড়িঘড়ি করে এক বাচ্চা ধরে এনে বউয়ের কোলে দিয়ে বলি... অফিসের লোকজনকে বলবে আজ থেকে এই আমাদের ছেলে। কিন্তু সবাই কেমন করে জানি টের পেয়ে যায়...সে যাকগে!

আমিই এখনকার আর তার পূর্বসুরী এমডিকে অফিসে নিয়ে আসি...তাদের জীবন চলার ব্যবস্থা করি। এখনকার এমডি নাসিমা হল এই কোম্পানির প্রথম এমডির মেয়ে...আর কিছুদিন আগে যে এমডি ছিল মানে আমার প্রাক্তন সিনিয়রের বউ জুলেখা দুইজনরেই আমি অনেক দয়া-দাক্ষিণ্য করেছি। আমার নরম মন আবার মেয়েমানুষের দুঃখ সহ্য করতে পারেনা! কত শখ ছিল এদের দুইজনরে নিয়ে একসাথে সহবত করব...মহব্বত করব...তারমধ্যে আবার জুলেখা ছিল মহা সুন্দরী! ওকে দেখলেই আমার...থাক যে আশা পূরণ হয়নি তার কথা বলে আর কী হবে। এখন অবশ্য দুইটাই ডাইনী বুড়ির মত হয়ে গেসে...কিছু করতে ইচ্ছা হয়না। মেয়েমানুষ যে সব সর্বনাশের মূল এদের দিয়েই শিখেছি...এদের দয়া না দেখালে হয়ত আজও আমি এমডি থাকতাম।

এসব কথা মনে পড়ে আর দুঃখ লাগে। এত বুদ্ধি করে এত উপরে উঠেছিলাম, নিজের ভুলে আবার নিচে নেমে গেলাম। মেজাজটাই খারাপ লাগে...আজ তাহলে ঐ নাসিমার দয়ার উপর আমার সম্মান নির্ভর করতোনা। কয়দিন আগে অবশ্য আমারই এক জুনিয়র সিকিউরিটি চীফ কোম্পানির ব্যবসা দখল করার চেষ্টা করেছিল...অনেকের নামে মামলা করে দিয়েছে না হয় পদত্যাগ করিয়ে দিয়েছে। আমারে অবশ্য কিছু বলেনি তেমন...হাজার হোক আমরা এক গোয়ালের ষাঁড়! যাকগে...একটু ডিভিডি দেখি গিয়ে, কালকে দেশী কিছু থ্রিএক্স মুভি দিয়ে গেছে অফিসের এক ছেলে। আজকাল বিদেশী আর ভাল লাগেনা...জিনিস খাড়া হয়না সহজে। বারবার খালি লাস্ট বউটার কথা মনে হয়...আহা কি জিনিস ছিল সে বিছানায়! এই বয়সেও নিজেকে তাগড়া ঘোড়ার মত মনে হত...অনেক কায়দা জানতো। কিন্তু সেও আসছিল আমার ক্ষমতার লোভে...তারে না খেদাইলে কোম্পানিতে এখন আমার যা পজিশন তাও থাকতনা। এখন অবশ্য আবার আমার প্রথম বউয়ের সাথে মিল করার চেষ্টা করছি। তবে ফেসবুক জিনিসটাও ভাল লাগে; কত দেশের কত রকমের কচি-মাঝারি-বুড়ি দেখা যায়, বন্ধু বানানো যায়, রসের কথা বলা যায়। মাঝে মাঝেই আমি ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাই; তবে আজকার মেয়েগুলো চালাক...অনেক স্মার্ট...সুযোগ দিতে চায়না!

এইযে আবার ফোন বাজতেছে। দেখি কে ফোন দিল...

-হ্যালো...ওহ কাজী তুমি। হ্যাঁ কি হইছে?
-ওহ...গ্রহণ কালো তে ছাপা হইছে...আচ্ছা দেখতেছি।

হুমম...গ্রহণ কালো পেপারে কোম্পানিতে আমার মনোভাব নিয়ে নাকি খবর ছাপা হয়েছে। আজকাল আমার খবর কেউ তেমন নেয় না। দেখি কি ছাপাইছে...আমি কয়দিন আগেই নাসিমা শালীর উলটাপালটা আচরণ আর আমারে ঠিকমত সম্মান দেয়া হচ্ছেনা বলে একটা বিবৃতি দিয়েছিলাম। আমারে সম্মান দিবে-পোস্ট দিবে বলে দলে টেনে এখন এমডি হওয়ার পর আর খবর না নেয়া...দেখি কি করা যায়! নতুন লোকজন ডিরেক্টরস বোর্ডে আসার পর কোম্পানি অত ভাল চলছেনা..একটা সুযোগ চাই আমার... একটা সুযোগ...একটা সুযোগ...

খবরঃ[url= http://www.eprothomalo.com/index.php?opt=view&page=1&date=2009-10-03] [/url]

[করপোরেট দুনিয়া সম্পর্কে আমি তেমন কিছু জানিনা...তবু লিখলাম। বানান ভুল ছাড়া অন্য সকল ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখলে খুশি হব...:)]


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

হেহে চাচামিয়ারে নিয়া ভালই লেখসেন দেঁতো হাসি

shafi

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।