আমরা করব জয়

তানবীরা এর ছবি
লিখেছেন তানবীরা (তারিখ: বিষ্যুদ, ২৬/০৬/২০০৮ - ৪:৫০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমরা করব জয়
{ শেষ পর্ব}

Afsluitdijk বানানো ছিল জয়ের দিকে যাত্রার প্রথম পদক্ষেপ। তারপর আস্তে আস্তে ১৯৩৬ সালে Overijssel এর দিকে ৫৪ মিটার লম্বা ড্যাম বসিয়ে ১৯৪০ সালে জন্ম হয় ‘"Flevoland" এর, সেখানে মোট জমি উদ্ধার করা হয় ৪৮,০০০ হেক্টর. ১৯৫০ সালে ৯০ কি,মিটার লম্বা রিং ড্যাম বসিয়ে ১৯৫৬ সালে জন্ম হয় Oostelijk Flevoland এর. এখানে পাওয়া যায় মোট ৫৪,০০০ হেক্টর জমি। Oostelijk Flevoland এ তৈরী হয় দুটো গ্রাম আর একটি শহর ‘LelyStad = City of Lely'’. দেশবাসী পরম মমতায় আর ভালোবাসায় তাদের প্রিয় প্রকৌশলী লেলি’র নামে শহরটির নামকরন করেন। ১৯৬২ সালে ‘LelyStad' এ প্রথম বসবাস আরম্ভ করার লক্ষ্যে বাড়ি ঘর নির্মান শুরু হয় এবং ১৯৬৭ সালে মানুষ সেখানে সত্যিকার অর্থে জীবন শুরু করেন। বাইরের পৃথিবীর অনেকেই অবশ্য ভাবেন লেলিস্টাড আসলে জঙ্গল, সেখানকার লোকেরা জঙ্গলে বসবাস করে। কিন্তু সেখান রয়েছে স্কুল - কলেজ ইউনিভার্সিটি, হাসপাতাল, বাচাদের জন্য হাইটেক পার্ক, ডাচ টেলিভিশন সেন্টার, অসংখ্য সফটওয়্যার ইন্ডাস্টি। আজকের প্রার্চুযময় অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন জীবন যাপন পদ্ধতি দেখলে ভাবাই দায় মাত্র ৫০ বছর আগে এ সমস্ত কিছুই সমুদ্রে বিলীন ছিল। ১৯৬৮ সালের ২৮শে মে প্রথম মাটির দেখা পায় Zuidelijke Flevoland. এখানে পাওয়া যায় প্রায় ৪৩,০০০ হেক্টর জমি। সেখানে প্রায় ১২,০০০ হেক্টর জমি আলাদা করে রাখা হয় Almere শহর তৈরীর জন্য। ১৯৭৯ সালে Almere শহর তৈরীর কাজ শুরু হয় আর ১৯৮৪ সালে তা শেষ হয়। Enkhuizen থেকে Lelystad এর দিকে ড্যাম বসিয়ে ১৯৭৫ সালে Markerwaard কে শুকানো হয় এবং যোগাযোগ ব্যবস্থাও উন্নত হয়। ১৯৭৬ সালে ড্যামটিকে যানবাহন চলাচলের জন্য মুক্ত করে দেয়া হয়। ১৯৭৯ সালে Zeewolde শুকানোর কাজ শুরু হয় ১৯৮৩ সালে সেখানে লোকে প্রথম মানুষ বসতি স্থাপন করেন। Weiringen, Flevoland, LelyStad, Dronten, Almere w Zeewolde নিয়ে ১৯৮৬ সালের ১লা জানুয়ারী গঠিত হয় নেদারল্যান্ডসের বারতম প্রভিনস ‘Provincie Flevoland.' Provincie Flevoland’ এর জন্ম আজ আর কোন রুপকথা নয়, এক সাফল্যময় সত্য ও বাস্তব। এভাবে হাজার হাজার কিলোমিটার পানি শুকিয়ে বসবাস, চাষবাস, ও অন্যান্য কাজের জন্য উপযুক্ত করা হয়। সময়ের সাথে সাথে খোলা পানির নর্দমা, উন্মুক্ত পানি গুলো ঢাকা পানির পর্যায়ে ও মাটির নীচের নর্দমার আকার লাভ করে। তবে এই প্রভিনসকে গাছ গাছালি, বাড়িঘর তথা জীবনের রঙ্গের স্পর্শ পেতে বহুদিন অপেক্ষা করতে হয়েছিল। প্রতি বছর কয়েক হাজার হেক্টর জমিকে চাষের উপযোগী বানানোর প্রকল্প হাতে নেয়া হতো। সমুদ্র থেকে পাওয়া জমির ৭৫ শতাংশ চাষাবাদের কাজে ব্যবহূত হছে, ৮ শতাংশ বসবাসের জন্য আর বাকী অংশ প্রাকৃতিক নৈর্সগ্যের এক অনবদ্য ভূমি হিসেবে। আশেপাশের বহু দেশ থেকে লোকজন এখানে ক্যাম্পিং এ আসেন। প্রায় ৬,০০০ হেক্টর জমি এখানে শুধু প্রাকৃতিক নয়নাভিরাম দৃশ্যের জন্য ফেলে রাখা হয়েছে যেখানে হাজার হাজার পাখি বিশ্রাম নেয় সারাবছর, তাছাড়া পাখিরা এখানে নিজেদেরকে নিরাপদ অনুভব করে। ১৯৭০ সালের হিসাবনুযায়ী ১৬৫,০০০ হেক্টর জমি সমুদ্র থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।

Afsluitdijk বানিয়ে সমুদ্রকে রুখে দিয়ে নেদারল্যান্ডসবাসীরা যখন একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছিলেন তখন ১৯৫৩ সালে প্রচন্ড বন্যা হলো পশ্চিম দক্ষিন পাশে। এর চেয়ে বড় দুর্যোগ আর কখনও এদেশে আসেনি। দেশের বাইরে থেকে বহু লোক এসেছিল সে সময় নেদারল্যান্ডসকে সাহায্য করতে, তাদের অনেকেই বন্যা প্রতিরোধ কর্মসূচীতেও সাহায্য করছিলেন, তারা বন্যা প্রতিরোধের উপায় বললেন Zeeland প্রদেশকে সমুদ্রকে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য। কিন্তু সমুদ্রকে জমি ফিরিয়ে দেয়া? ‘কখনই না’ উত্তর ছিল নেদারল্যান্ডস সরকারের। অনেক অনেক গবেষনার পর নেদারল্যান্ডসের সরকার ডেলটা প্রজেক্টকে সর্বোত্তম বিবেচনা করে একে দেশের পশ্চিম পাশকে সুরক্ষিত করার জন্য নির্বাচিত করেন। ডেলটাকে নির্বাচিত করার জন্য প্রধান যে কয়েকটি বিষয় কাজ করেছে তাদের মধ্যে ছিল একটি তাদের পুরনো প্রযুক্তি উপকুল সীমাকে কমিয়ে আনা আর একটি উত্তর সমুদ্রের সবচেয়ে দূর্বল সীমাগুলোকে চিহি¡ত করে তার ব্যবস্থা গ্রহন করা। উপকুলের সীমা কমে আসলে পানির সাথে যুদ্ধে তাদের অবস্থান অনেক শক্ত হয়। ২০০০ সাল পর্যন্ত নেদারল্যান্ডসে জমি কতদূর নীচে বসে যেতে পারে বা কতদূর ক্ষতি হতে পারে সেই সম্ভাবনাকে মাথায় রেখে তারা অনুসন্ধান চালান এবং তারা ড্যামগুলোকে আরো উচু করার জন্য উপদেশ দেন। তাদের হিসাবে প্রতি ১০০ বছরে নেদারল্যান্ডস ১ মিটার করে নীচের দিকে ডেবে যায়। তখনও প্ল্যানিং চুড়ান্ত রুপ নেয়নি, এর পরিবর্তন, সম্ভাবনা সমস্ত খুটিনাটি গভীরভাবে পরীক্ষা করে দেখা হছিল। ১৯৫৮ সালে প্ল্যানিং চূড়ান্ত হয় এবং চির জীবনের জন্য অশান্ত সমুদ্রের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়। ডেলটা প্ল্যানিং এর বিপক্ষেও বাধা এসেছিল, সেখানকার জেলেরা, পরিবেশ রক্ষাকারী সংগঠন এবং এক বিয়ার কোম্পানী তাদের কারখানায় বাধা পড়ার আশঙ্কায় প্রতিবাদ করেন, পরে সরকার বিয়ার কোম্পানীকে অন্যভাবে পুর্নবাসন করে দেয়। ১৯৫৮ সালেই কাজ শুরু করা হয় যা ২০০২ সালে সাড়ম্বরে শেষ হয়। ডেলটা প্ল্যানের সরকারী লক্ষ্য ছিল পশ্চিম উপকুলের বন্যার সম্ভাবনাকে ১০,০০০ বছরে একবার আর সারা দেশের জন্য ৪,০০০ হাজার বছরের একবার সেই সীমানায় নিয়ে আসা। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য সমুদ্রের ভিতর দিয়ে ৩,০০০ কি,মিটার আর সমুদ্রের বাইরে দিয়ে ১০,০০০ কি,মিটার বাধ দেয়া হয়েছে। এছাড়া সারা দেশের সমস্ত খাল, নদীকে পাইলিং করে এদের দুপাশ বেধে দিয়ে এদেরকে ডেলটা উচতায় নিয়ে আসা হয়েছে এবং কালনাগিনী সমুদ্রকে বাধ দিয়ে চিরদিনের জন্য Zeeland প্রদেশ থেকে আলাদা করে দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে অনেক ঐতিহাসিক জায়গা রয়েছে বলে সমস্ত জায়গায় বাধ দেয়া সম্ভব হয়নি, তাই ৩২৫ মিটার লম্বা ও ২২ মিটার উচু একটি রাস্তা বানানো হয় পানির মধ্যে দিয়ে, Stroomvloedkering যার নাম। ১৯৮৬ সালে রানী বিয়াট্রিক্স যখন Stroomvloedkering এর উদ্বোধন করতে আসেন তখন সগর্বে বলেন ‘আমরা এখন নিরাপদ, যুদ্ধে আমরা নিশ্চিতভাবে জয়ী হয়েছি’। ২০০২ সালে ডেলটা প্রকল্পকে সরকারীভাবে সমাপ্ত ঘোষনা করা হলেও এর কাজ এখনও চলছে। বিপদ পরিমাপ করার জন্য যে কমিশন কাজ করছে তারা এখনও মাঝে সাঝেই ছোট-খাট সঙ্কটে পড়লে ডেলটার আলোকে ব্যবস্থা গ্রহন করেন। নেদারল্যান্ডসের ভৌগলিক কারণেই হয়তো কোনদিনও ডেলটার কাজ শেষ হবে না। তবে এ কথাও আজ আর নিশ্চয় করে কেউ বলতে পারেন না কারণ আজকের নেদারল্যান্ডসের অবস্থান ও আকার মাত্র পঞ্চাশ বছর আগে কেউ কল্পনা করতে পারেননি। নেদারল্যান্ডসবাসীরা নিজেরাও বলেন, ‘"The Netherlands seems safe, but the fight against water continues.'.’ ডেলটা প্রজেক্টই মানুষের ইতিহাসে আজ পর্যন্ত তৈরী করা একমাত্র সবচেয়ে লম্বা ও বড় নির্মান কাজ। যার কারণে এ্যামেরিকার সোসাইটি অফ সিভিল ইঞ্জিনিয়ার’সরা একে মর্ডান সায়ন্সের সপ্তম আশ্চর্যের একটির মর্যাদা দিয়েছে।

অনেকেই ভাবতে পারেন কেনো এর নাম ‘ডেলটা’ রাখা হলো? গ্রীক বর্ণ ‘আ’ এর আদি মানে হলো ডেলটা = তিনটি কোনা, ডেলটার ডিজাইনের সাথেও ‘আ’ এর মিল আছে আর এর আক্ষরিক মানে দাড়ায় যেখানে এসে নদী শেষ হয়ে যায়, পরবর্তীতে তাই হয়েছিল কিন্তু এছাড়াও একে ডেলটা নাম দেয়ার অন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল। বহির্বিশ্বে বন্যা প্লাবিত এই অঞ্চলটি ‘The Dutch Delta' নামেই পরিচিত ছিল। তেরটি ভাগে ভাগ করে ডেলটার কাজ সম্পন্ন করা হয়। Hollands IJssel 1958, De Zandkreek 1960, Het Veerse - Gatdam, De Grevelingendam, Vokerakdam and Hellagatsplein 1969, Haringsvleitdam 1970, Brouwersdam 1972, Markiezaatskade 1983, Oosterschelde 1986, Oesterdam 1987, Philipsdam 1987 তবে এবার বাধ দেয়ার চিরাচরিত উপাদান দস্তার টুকরো, উইলো গাছের গুড়ি এগুলো বদলে নতুন সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয়। নাইলন এবং ঘাইটাসফলট ব্যবহার করেছেন তারা কারণ পানির নীচে থাকার জন্য এগুলোর গুনগত মানও অনেক ভালো এবং বেশীদিন পানির নীচে ভালো থাকে। ট্যুরিষ্টরা খুব আগ্রহ নিয়ে ডেলটা ওয়ার্ক দেখতে যান, ডেলটার সাথে সাথে নেদারল্যান্ডসের ভিতরের সীমার চারিদিকে ছড়ানো মনোগ্রাহী নীল সমদ্রে উপভোগ করেন। পৃথিবীর খুব কম দেশেই এই সৌন্দর্য দেখতে পাওয়া যাবে, হয়তো কোথাও না। চারিদিকে টলটলে নীল পানি মাঝখানে সব গাড়ি চলছে সাই সাই শব্দ করে, ১০০ কি, মিটার সে সব রাস্তার সর্ব নিম্ন গতিবেগ। পানি নেদারল্যান্ডসবাসীর আজীবনের সাথী আর সাথে পানির সাথে তাদের যুদ্ধও। সে কারণেই বোধহয় চার বছর বয়স থেকে নেদারল্যান্ডসে বাচাদের সাতার শেখা বাধ্যতামূলক। স্কুলে পড়ার সাথে সাথে সাতারও শেখাতে হবে। সমুদ্র যদিও তার ভয়ঙ্কর ফেনা আস্তে আস্তে অনেক নামিয়ে এনেছে, সে এখন আর ভয়ঙ্কর জেদী কোন বালিকা নয় বরং শান্ত - শিষ্ট কোমল পরিনত এক তরুনী। কিন্তু সমুদ্রকে নিয়ে এদের গবেষনা, কাজ, এখনও শেষ হয় নি। দিনরাত কি করে প্রযুক্তিকে পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করা যায়, আরো উন্নত নিরাপদ করা যায় সেই নিয়ে তারা আজো ব্যস্ত। চেষ্টা আর সদিছা কোন অসম্ভবকেই আর অসম্ভব রাখে না। বিজ্ঞান আজ সব অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলছে, সে সমুদ্রে বাধ দেয়াই হোক কিংবা ব্লাড ক্যান্সারকে সারিয়ে তোলাই হোক, প্রকৃতির বিরুদ্ধে যুদ্ধে বিজ্ঞান আজ খরগহস্ত। বিজ্ঞান আজ প্রত্যেক জায়গায় সগর্বে সেই স্বাক্ষর রেখে দিছে।

ঝ³া কবলিত, বন্যা কবলিত, নীচু সমতলভূমির বাংলাদেশ আজ কোথায় দাড়িয়ে???

নেদারল্যান্ডস আর বাংলাদেশের প্রাকৃতিক গঠন আর বন্যা সমস্যারও অসংখ্য মিল আছে। সেই কারণেই বোধ হয় ডাচ সরকার নিজের আগ্রহে অনুদান প্রকল্প হিসেবে বাংলাদেশে ড্যাম বানানোর জন্য পরিকল্পনা, গবেষনা, গবেষক, কারিগরী সহায়তা বিনামূল্যে প্রদান করেছনে। ১৯৯৮ সালের ভয়াবহ বন্যার পর ডাচ টিভি বাংলাদেশের বন্যা প্রতিরোধের উপায় ও সম্ভাবনা নিয়ে একটি ডকুমেন্টরী দেখিয়েছিল। প্রায় ৬০০ ডাচ ইঞ্জিনিয়ার সেই মূর্হুতে বাংলাদেশে কাজ করছিলেন এই বিষয়ের উপর। তাদের কারো কারো মতামতও তখন টিভিতে সরাসরি সম্প্রচার করা হছিল। তাদের মতানুসারে, বাংলাদেশের যেহেতু ভূমির সাথে সমুদ্রের সীমানা অনেক বড় তাই কয়েক’শ কিলোমিটার লম্বা ড্যাম বানাতে হবে এবং তার জন্য যে পরিমান পয়সা দরকার সেটা জমাতে বাংলাদেশের তিনশ বছরও লাগতে পারে। সেটা অবশ্য ১৯৯৮ সাল থেকে তিনশ বছর বলা হয়েছিল। তারা তাদের ডিজাইন, বাজেট, গবেষনা সব সরকারের কাছে জমা দিয়েছেন এবং তা নিয়ে আলোচনাও হয়েছে সরকারের উচ পর্যায়ে যদিও তার কিছুই সাধারণ জনগণ এখনও বিশদভাবে জানতে পারেনি। তাদেরকে প্রশ্ন করা হয়েছিল ডাচ টিভির পক্ষ থেকে তারা ইতিমধ্যে যে বাধগুলো বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় দিয়েছেন সেগুলো কেন ভেঙ্গে পড়ছে বা আশানুরুপ ফল দিছে না? তাদের উত্তর ছিল, বাধ দিয়ে কিছুটা জায়গা শুকিয়ে ফেলা মাত্রই লোকজন এসে সেখানে বাড়িঘর বাধতে শুরু করে, তাতে ড্যাম ডেবে যায়, অথবা ভেঙ্গে পড়ে, সরকারী ভাবে জনগণকে সচেতন করার কোন প্রয়াসই নেই এখানে। বাধের থেকে কতদূরে চাষ করা বা বসবাস করা উচিৎ সেগুলো কিছুই সরকার জনগণকে বোঝান না। বাংলাদেশকে কেউ কি এই টাকা ঋণ হিসেবে দিতে পারে সে কথাও হয়েছিল সেই প্রোগ্রামে, তাতে স্পষ্টভাবে সবাই উল্লেখ করেন এতো টাকা ঋণ দেয়া কখনও সম্ভব না, নেদারল্যান্ডস যেভাবে শত বছর ধরে টাকা জমিয়ে এই দুঃখ ঘুচিয়েছে, বাংলাদেশকেও ঠিক তাই করতে হবে। কিছু সাহায্য হয়তো বিশ্বব্যাংক বা অন্যান্য সংস্থা দিতে পারে, নেদারল্যান্ডস কারিগরী সহায়তা দিবে কিন্তু আগাতে হবে দেশের জনসাধারণকেই, তাদেরকেই বুঝতে হবে বাধের প্রয়োজনীয়তা ও উপকারিতা। সরকার ডাচ গবেষকদের সামান্য একটু উপদেশ অবশ্য মেনেছেন, বর্ষার আগে আগে নদীতে ড্রেজিং করানো হয় আজকাল। কিন্তু নদীকে গভীর ভাবে ড্রেজিং করে দুপার বেধে দেয়া পর্যন্ত আগান না কখনও, অর্থাভাবে। অতি অবশ্য করণীয় কাজের জন্য সবসময় আমাদের সরকারের অর্থাভাব থাকেই। সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা বাংলাদেশ বন্যায় ভেসে যাওয়াই আজ নিয়তি হয়ে দাড়িয়েছে আমাদের। নদীর ভাঙ্গনে হাজার হাজার গ্রাম বিলুপ্ত হয়ে যায়, লোকজন উদ্বাস্তু হয়ে শহরে ভিড় করে, শুরু হয় চরম দারিদ্র, হতাশা আর অপরাধে জড়িয়ে পরার নতুন কাহিনী। নেদারল্যান্ডসের ডেলটা ওর্য়াক যতবারই দেখতে যাই, ভাঙ্গা মন নিয়ে নিজেকেই প্রশ্ন করি বাংলাদেশ আজ কোথায়?

যারা প্রথম পর্বটি পড়তে ইচ্ছুক তাদের জন্য ঃ

http://www.sachalayatan.com/tanbira/16156


মন্তব্য

দ্রোহী এর ছবি

প্রথম পর্বের মতই দুর্দান্ত লেখা।

উপকূলে বাঁধ দিয়ে বন্যা রোধ করতে যে পরিমান টাকা লাগবে তা জমাতে বাংলাদেশের তিনশো বছর লাগবে -এটা ডাচ ইঞ্জিনিয়ারদের হিসাব। বাংলাদেশের আমলাদের হিসাবটা জানতে পারলে ভাল লাগত। সেটা কি ১০০০ বছরের চাইতে কম হবে....


কি মাঝি? ডরাইলা?

ধুসর গোধূলি এর ছবি
তানবীরা এর ছবি

ড্যামতো হইব না, গড়টা অন্ততঃ হোক, কি বলেন?

তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

তানবীরা এর ছবি

এই হিসাবটা ৯৮ এ ছিলো, তখন এর বন্যার পর আমি এই বিষয়টা খুব ফলো করতাম।

তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍চমত্কার লেখাটির পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের কথা চিন্তা করে মনটা খারাপই হয়ে গেল।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
মৌমাছির জীবন কি মধুর?

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

স্নিগ্ধা এর ছবি

ভালো লাগলো, তানবীরা, খারাপও!

তানবীরা এর ছবি

সন্ন্যাসী আর স্নিগ্বা, মন খারাপটা বোধ হয় আমাদের দেশ নিয়ে আমাদের নিয়তি

তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

অতিথি লেখক এর ছবি

যখন এ ধরনের স্থাপনার বর্ননা শুনি বা দেখি তখন মনে হয় আমরা এখনও প্রস্তরযুগে আছি। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি আমাদের মত low lying দেশে ড্যাম দিয়ে উপকূল রক্ষা সম্ভব নয়, কারিগরি ও আর্থিক দিক দিয়ে সেরকম চিন্তাভাবনা আত্তঘাতী হয়ে দেখা দিতে পারে।
লেখা দুটি পড়ে অনেক কিছু জানতে পারলাম.....

রাফি

তানবীরা এর ছবি

ড্যাম দিলেই হবে না, সেটাকে নিয়মিত মাপতে হবে, দেখতে হবে যেমন এরা করা। প্র্রকৃতির বিরূদ্বে যুদ্ধ চলবে অবিরাম।

তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

ভালা হইছে
হাছা কইলাম কিন্তু

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

তানবীরা এর ছবি

থ্যাঙ্কু, হাসাসে !!!

তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

কীর্তিনাশা এর ছবি

প্রথম পর্বের মতই ভালো লাগলো। আর বাংলাদেশের কথা কি বলব। আমার দেশের কথা ভাবলে কেবল দীর্ঘশ্বাস আর বিষন্নতা ভর করে।

-----------------------------------
সোনার স্বপ্নের সাধ পৃথিবীতে কবে আর ঝরে !

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

তানবীরা এর ছবি

আমারো সেই অবস্থা, তাই আমার বিষন্নতা আপনাদের সাথে ভাগ করলাম।

তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আমি বিষয়টা ভালো জানি না তাই জিজ্ঞেস করি... হয়তো পরিবেশবিদরা (এইখানে তো শামীম ভাই তানভীর ভাই আছেন) ভালো বলতে পারবেন...
বাংলাদেশের উপকূল অঞ্চলে বাধ বোল্ডার দেওয়া হইছিলো... (যদিও ডেল্টা প্রজেক্টের ধারে কাছে না বোধহয়) কিন্তু তাতে ক্ষতিই হইছে বেশি... পলি সাগরে না গিয়া জমা হইছে বাধের ভিতরেই... আর সব মিলায়া লবনাক্ততা ছড়াইছে উপকূল অঞ্চলে... বাধ বোল্ডারের কারনে সৃষ্ট লবনাক্ততায় উপকূল অঞ্চলে চাষের জমির ক্ষতি হইছে ব্যাপক...
এই বিবেচনায় বাংলাদেশের আসলে কি করণীয়?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

তানবীরা এর ছবি

এ নিয়ে বিশদ আলোচনা আমি করতে পারছি না কারন ব্যাপারটা আমি জানি না। তবে কাজে ভুল ছিল কিনা কে জানে। শুধু এটুকু জানি এদের থেকে আমাদের ্পয়সা লাগবে অনেক বেশী কারন আমাদের উপকূল সীমানা অনেক বড় এদের থেকে ।

তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।