অমর চলচ্চিত্র- দ্য মোটরসাইকেল ডায়েরীজ

তারেক অণু এর ছবি
লিখেছেন তারেক অণু (তারিখ: সোম, ২১/১১/২০১১ - ৪:৪৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

1motorcycle-diaries

(সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ—এখানে প্রিয় কিছু চলচ্চিত্রের গল্প বলার ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়েছি মাত্র, এটা কোন মুভি রিভিউ নয়, কারণ এমন চলচ্চিত্র নিয়ে রিভিউ লেখার জ্ঞান বা প্রজ্ঞা কোনটাই আমার নেই, এটি স্রেফ ধারা বিবরণী। কাজেই যাদের চলচ্চিত্রটি এখনো দেখা হয় নি, তারা আগে দেখে ফেললেই ভাল হয়, নতুবা সব ঘটনা জানলে হয়ত আগ্রহ কিছুটা কমে যাবে। এমন লেখার ব্যাপারে সকল ধরনের পরামর্শ স্বাগতম। )

বিশ্বরেকর্ডধারী এক তরুণ ডাক্তার, সারা বিশ্বের এমবিবিএস পরীক্ষায় সবচেয়ে কম সময়ে, সবচেয়ে বেশী পরীক্ষা দিয়ে, সবচেয়ে ভাল ফলাফলের কৃতিত্ব তার দখলে, গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে সেই কীর্তি আজও অম্লান। কিন্তু অতি মেধাবী তরুণ সিদ্ধান্ত নিলেন পেশাগত ভাবে ডাক্তার হবেন না, সংগ্রাম করবেন আমৃত্যু মানুষের মুক্তির জন্য সংগ্রামে- দেশ, কাল, সীমানার, আঙ্গিক ছাড়িয়ে। আর্জেন্টিনার রোজারিও শহরে জন্ম নেওয়া, কিউবা বিপ্লবের অন্যতম মহানায়ক, কঙ্গো ও বলিভিয়ায় বিপ্লবের অগ্নিস্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে দেওয়া এই সূর্যসন্তানের নাম আর্নেস্তো গুয়েভারা ডি ল্য সেরনা, কিন্তু সারা বিশ্বে তিনি এক নামে পরিচিত – চে ।

বিশ্বরেকর্ডধারী ডাক্তার নয়, তার সেই পরিচয় মুছে গেছে পিতৃপ্রদত্ত নামের মতই বিপ্লব পরিচালনায় তার কিংব্দন্তিময় ক্যারিশমা আর হিমালয়সম ব্যাক্তিত্বের কাছে। কিন্তু চে তো সবসময় এমন ছিলেন না, আর্জেন্টিনায় এক শহুরে সবচ্ছল পরিবারের ডাক্তার বাবার মেডিক্যাল কলেজ পড়ুয়া তেইশ বছরের আর্নেস্তো তার প্রানপ্রিয় বন্ধু আলবার্তো গ্রানাদোর সঙ্গে এক লক্কড়মার্কা ঝরঝরে মোটর সাইকেলে বের হয়ে পড়েন সাড়ে বারো হাজার কিলোমিটার ব্যাপী এক ঐতিহাসিক ভ্রমণে, যা বদলে দেয় তার জীবন, দর্শন, লক্ষ্য, পরিচিত বিশ্ব। সেই সঙ্গে বদলে দেয় বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের জীবনকে এক অন্য লক্ষ্যে। সেই রোমাঞ্চকর জীবন বদলে দেওয়া ভ্রমণ লিপিবদ্ধ ছিল আর্নেস্তো গুয়েভারা এবং আলবার্তো গ্রানাদোর রোজনামচায়।

এ নিয়ে লেখা হয়েছে অসংখ্য গবেষণামূলক বই, প্রবন্ধ, অভিসন্দর্ভ। অবশেষে এমন ঘটনাবহুল দীর্ঘ কাহিনী দুই ঘণ্টারও কম সময়ে রূপোলী ফিতেয় ফ্রেমবন্দী করার দুরূহ কাজটি সম্পন্ন করার মহাপরিকল্পনা হাতে নেন বিশ্বখ্যাত ব্রাজিলীয় চলচ্চিত্র পরিচালক ওয়াল্টার সারেস, রচিত হয় এক মহান সৃষ্টি, নতুন করে উম্মোচিত হয় এক মহাজীবনালেখ্য।

motorcycle_diaries_ver21

দি মোটরসাইকেল ডায়েরীজ (Diarios de Motocicleta)এর প্রথম দৃশ্যেই কানে ভেসে আসে সদা হাস্যরত জীবরসায়নবিদ আলবার্তোর উদাত্ত কণ্ঠের গান, দৃশ্যপটে আবির্ভাব হয় দুই বন্ধুর অগোছালভাবে যাত্রার সরঞ্জাম গোছানোর দৃশ্য। আলবার্তোর ৩০তম জন্মদিন উপলক্ষে বহু বছর ধরে সযত্নে লালন করা এই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে আক্ষরিক অর্থেই রাস্তায় নামেন তারাম সঙ্গী আলবার্তোর জং ধরা কিন্তু বহুল প্রতীক্ষিত নর্টন ৫০০ মোটর সাইকেল, যার আদরের নাম ল্য পোদেরসা ( The Mighty One) । পরিকল্পনা থাকে দুই বন্ধু চার মাসে আট হাজার কিলোমিটার ভ্রমণ করে আর্জেন্টিনা, চিলি, পেরু পাড়ি দিয়ে পৌঁছাবেন ভেনিজুয়েলার কারাকাসে। তখনো তাদের জানা নেই তাদের বুনোতম কল্পনাকেও হার মানাতে যাচ্ছে।

১৯৫২ সালের ৪ জানুরারি বাক্সপেটরা গুছিয়ে কোনমতে মোটরসাইকেলে বেঁধেছেদে আর্নেস্তোর পরিবারের সবাইকে অশ্রুসজল বিদায় দিয়ে যাত্রা শুরু হয় শহুরে জীবন ছেড়ে আদিগন্ত বিস্তৃত অবারিত পাম্পাসের উদ্দেশ্যে। কদিন পরপরই মাকে প্রতিশ্রুতি মোতাবেক চিঠি লিখেন আর্নেস্তো, সরল ভাষায় বলে যান যাত্রাপথের অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতার কথা। আর্নেস্তোর প্রেমিকা চিচিনার সাথে সাক্ষাতের জন্য পূর্বপরিকল্পনা মোতাবেক তার অতি ধনী পরিবারের খামার বাড়ীতে কিছুদিন অতিবাহিত হয় তাদের। প্রেমিকার কাছে ফিরবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আবার যাত্রা শুরু হয় অজানা রোমাঞ্চের দ্বারে।

কঠিন কঠোর পথ সম্মুখ পানে, ঝড়ো বাতাসে উড়ে চলে যায় তাদের তাবু। বৃষ্টিসিক্ত রাস্তায়, তুষারাবৃত পথে, খানাখন্দে, জলায়, রাস্তা জুড়ে দাড়িয়ে থাকা গরুর পালের ধাক্কা খেয়ে বারংবার থেমে যায় পুরনো মোটরসাইকেল, কিন্তু থামেনা দুই তরুণের স্বপ্নযাত্রা। হাঁপানির রোগী আর্নেস্তো পর্যুদস্ত হয়ে পড়ে হিম শীতল পাহাড়ি আবহাওয়ায়, সুউচ্চ আন্দেজের ক্ষুরধার শীতল হাওয়া পরাভূত করার ক্রমাগত চেষ্টা চালায় তার দুর্বল ফুসফুসগুলোকে।

অবশেষে বিশাল দেশ আর্জেন্টিনা পাড়ি দিয়ে ছোট স্টিমারে করে প্রথম বিদেশের ভূখণ্ডে পদার্পণ করেন তারা, দেখা দেয় চিলির তুষার ছাওয়া পর্বতশৃঙ্গ। অনভ্যস্ত তুষারময় পথ পাড়ি দিয়ে ক্ষুদে শহর তেমুকোতে পৌঁছান তারা, এইখানে স্থানীয় খবরের কাগজে তাদের ভ্রমণকাহিনী ছাপা হয় ছবিসহ, যা পরবর্তীকালে তাদের ভ্রমণে স্থানীয়দের কাছে থেকে সাহায্য লাভের ব্যাপারে হয়ে ওঠে অতিমাত্রায় সহায়ক। চিলির লস এঞ্জেলস শহরেও এমন অযাচিত কিন্তু বহুল প্রতীক্ষিত সাহায্যের সন্ধান পান তারা স্থানীয় দমকলবাহিনী প্রধান ও তার দুই কন্যার কাছ থেকে। কিন্তু এখানেই এক অতি অসুস্থ দরিদ্র মহিলার চিকিৎসা করতে যেয়ে তার হতদরিদ্র অবস্থা আর্নেস্তো মুখে-মননে নিয়ে আসে পরিবর্তনের ছাপ, আনে অন্য ভুবনে সৃষ্টি হওয়া কষ্টের ছোঁয়া।

এই শহরেই প্রিয় মোটরসাইকেল ল্য পোদেরসাকে বিদায় দিতে হয় চিরদিনের মত, আয়ু সম্পূর্ণরূপে নিঃশেষিত হয়ে গিয়েছিল তার এমন বন্ধুর পথে যাত্রার ধকলে, এই প্রথম সদা হাস্যরত প্রেমিক আলবার্তোর চোখে দেখা যায় বন্ধু বিসর্জনের অশ্রু।

আমাদের গ্রহের সবচেয়ে শুষ্কতম স্থান চিলির আটকামা মরুভূমি পদব্রজে পাড়ি দেবার সময় এক অত্যাচারিত ভূমিহীন বামপন্থী দম্পতির সাথে দেখা হয় তাদের। আর্নেস্তো তার রোজনামচায় লেখেন, আজ জীবনের শীতলতম রাত কাটালাম এই খোলা প্রান্তরে সামান্য নিবু নিবু আগুনের উত্তাপ অবলম্বন করে আর অসহায় সেই আদর্শবাদী দম্পতির কাহিনী শুনে। তাদের মন বিষিয়ে ওঠে শাসকশ্রেণীর এমন ঘৃণ্য অত্যাচারে। পরদিন প্রত্যুষে খনির কাজের জন্য দল বেঁধে আসা অতি দরিদ্র কর্মীদের প্রতি বহুজাতিক কোম্পানির অমানবিক আচরণে ক্ষিপ্ত হয়ে গালিবর্ষণের সাথে সাথে পুলিশ লেলিয়ে দেবার হুমকি অগ্রাহ্য করে তাদের গাড়ীতে পাথর ছুড়ে পারেন আর্নেস্তো।

এরপর চলন্ত বাহনের জানালা দিয়ে কেঁপে কেঁপে ওঠে আন্দেজের সবুজ উর্বর উপত্যকা, বোঝা যায় পথের এবড়োথেবড়ো অবস্থা বোঝাতেই পরিচালক এমন বাস্তবসম্মত শট নিয়েছেন। অবশেষে তারা ল্যাতিন আমেরিকার প্রাণকেন্দ্রে এসে উপস্থিত হন প্রাচীন ইনকা রাজধানী বর্ণিল শহর কুজকোতে পদার্পণ করে, সেই সাথে ইনকাদের সুমহান সৃষ্টি পাহাড়চূড়োয় নির্মিত শহর মাচুপিচুতে। ইনকাদের প্রতি অগাধ শ্রদ্ধা নিয়ে তারা বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যান এদের ধ্বংস করতে অনুপ্রবেশকারী স্প্যানিশদের রক্তাক্ত ইতিহাসের নিদর্শন দেখে। সেই সঙ্গে পাহাড়ের বাঁকে বাঁকে দেখা হয় বঞ্চিত রেড ইন্ডিয়ান কৃষকদের সাথে, যাদের ন্যায্য জমি দখল করে নিয়ে গেছে ভূমিদস্যুর দল, পুলিশ লুট করেছে তাদের সম্পদ।

আমাজনের অরণ্যের প্রান্তসীমায় কুষ্ঠ রোগীদের এক আশ্রমে বেশ কিছুদিন কাটান তারা, বন্ধু হয়ে ওঠেন সমাজ থেকে বিতাড়িত মানুষগুলোর। তারা বিশ্বাসই করতে পারছিলনা তাদের ছুঁতে আপত্তি নেই এমন মানুষও আছে! পড়ে চলে একসাথে খাওয়াদাওয়া, ফুটবল খেলা। নিজের জন্মদিনে আবেগ তাড়িত হয়ে মধ্যরাতেই খরস্রোতা বিপদজনক আমাজন নদী পাড়ি দিয়ে আর্নেস্তো যান সেই কুষ্ঠ আশ্রমে, জানান তিনি ভালবাসেন তাদের।

১২,৪২৫ কিলোমিটারের ভ্রমণ শেষে ভেনিজুয়েলার কারাকাসে বিচ্ছিন্ন হন তারা, উড়োজাহাজে চেপে মেডিক্যাল কলেজের লেখা-পড়া শেষের উদ্দেশ্যে আর্জেন্টিনায় ফিরে আসেন আর্নেস্তো, এরপরের ইতিহাস তো সবারই জানা।
দি মোটরসাইকেল ডায়েরিজ চলচ্চিত্রের অন্যতম উপজীব্য যেমন ল্যাতিন আমেরিকার প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলী, স্থানীয় মানুষের মুখশ্রী, তেমনি আর্নেস্তো গুয়েভারার ভূমিকায় বিখ্যাত অভিনেতা গায়েল গার্সিয়া বার্নেল ( উল্লেখ্য চের ভূমিকায় এটি তার দ্বিতীয় অভিনয়) আর আলবার্তো গ্রানাদোর ভূমিকায় রডরিগো ডি ল্য সেরনার অনবদ্য অভিনয়।

motorcycle_diaries_movie_poster_01

আর সেই সাথে এক অনন্য আবহ সঙ্গীত, গীটারের ছয় তারের চলমান ধ্বনি যেন ঘাই মারে হৃদয়ের গভীরে, মস্তিষ্কের কোষে কোষে, যেমন আনন্দে চেতনাকে কাঁপানো হয় তির তির আনন্দে, তেমনি রোমাঞ্চিত করে নবভ্রমণের আশায়, সবার শেষে এক অদ্ভুত ঘিরে আসা বিষণ্ণতায় ভরে দেয় আমাদের চেনা পৃথিবীটাকে। ২০০৫ সালে শ্রেষ্ঠ সঙ্গীতের অস্কার জিতে নেয় এই অসাধারণ সৃষ্টি, সেবার অস্কারের মঞ্চে এটিকে আবার গেয়েছিলেন অ্যান্তোনিও ব্যান্দেরাস এবং গীটার বাজিয়েছিলেন কার্লোস সান্তানা।

শুনেই দেখুন একবার, বুকটা হু হু করে উঠে কিনা

সিনেমার শেষ পর্যায়ে নাম দেখানোর পর্বে আর্নেস্তো ও আলবার্তোর আসল কিছু সাদা-কালো আলোকচিত্র দেখান হয়, সেই সাথে কয়েক মুহূর্তের জন্য বড় পর্দায় হাজির হন আলবার্তো গ্রানাদো, তখন তার বয়স ৮০ ছুই ছুই। কিউবায় সেই যে বন্ধু আর্নেস্তোর আমন্ত্রণে এসে সান্তিয়াগো স্কুল অফ মেডিসিন স্থাপনা ও পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছিলেন তা করেছিলেন নিরলস ভাবে।

Che OnRaft 1952

স্প্যানিশ ভাষার নির্মিত এই সেলুলয়েড মহাকাব্যের শেষ দৃশে উড়ালরত বিমানের দিকে চেয়ে নিশ্চয়ই চিরতরুন আলবার্তো ভাবছিলেন তার বন্ধু চে আর্নেস্তো গুয়েভারার কথা, যিনি এক ভুবন ছেড়ে চলে গেছেন ৪৪ বছর আগে, যিনি আর ফিরে আসেন নি, কিন্তু বিশ্বময় ছড়িয়ে গেছে তার স্বপ্ন, আকাঙ্খা, দর্শনের কথা।

বন্ধুরা, আলবার্তো গ্রানাদো গত ৫ মার্চ ৮৮ বছরের পরিপূর্ণ সার্থক জীবন কাটিয়ে শুরু করেছেন আরেক অনন্ত যাত্রা, আমার এই লেখা তার পুণ্যস্মৃতির প্রতি, মানবতায় তার দৃঢ় বিশ্বাসের প্রতি, তার তীব্র ভ্রমণপিপাসার প্রতি সম্মান জানানোর অতি ক্ষুদ্র প্রয়াস মাত্র।


মন্তব্য

তুলিরেখা এর ছবি

ওরে বাবারে! তারেক অণু, আপনি যে হায়ার ডাইমেনশনের রোলার কোস্টারে চড়াইয়া দিছেন, এই ভেনিস তো এই চে আর্নেস্তো, এই হেস্ত তো এই নেস্ত, এই তিব্বত তো এই উত্তর মেরু, এই কিউবা তো এই কানাডা! এই কিরিবাতি তো এই মাছুপিছু। এই তিয়াহুয়ানাকো তো এই পুমা পুঙ্কু। এই পুব তো এই পশ্চিম, এই উত্তর তো এই দক্ষিণ, এই উপরে তো এই নিচে! মাথা ঘোরে যে তারেক। উফফফ।
হাসি

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

তারেক অণু এর ছবি

কিরিবাতি ! আহা,কবে যে দেখা হবে !
আরে , মাথা ঘুরবে না, শক্ত হয়ে বসেন ! চাল্লু

মন মাঝি এর ছবি

মাথা ঘুরতাছে!

একটু দমে দমে ছাড়েন ভাই। প্রতিটা পর্বের মাঝখানে একটুখানি গ্যাপ দেন। আগের পর্বগুলি একটু হজম হওয়ার সময় দেন পাঠকদের। মিষ্টি বেশির ভাগ মানুষের সবচেয়ে প্রিয় খাবার, কিন্তু মুখভর্তি মিষ্টি ঠিকমত চেখে-চিবিয়ে তারপরে গেলার আগেই যদি আরো ১০ কেজি মিষ্টি তার মুখে ঠেসে দেয়া হয় - তাহলে কি অবস্থা হবে ভাবুন তো একবার...

আপনার লেখা ও ছবিগুলি তারিয়ে তারিয়ে রসিয়ে রসিয়ে চেখে চেখে পড়া ও উপভোগ করার জিনিষ, দুমদাম-হুমহাম করে ঝড়ের বেগে চোখ বুলিয়ে গপাৎ করে গিলে ফেলে ভুলে যাওয়ার জিনিষ না। আমি তাই বলব, এত দ্রুত পোস্ট করে আপনি বরং আপনার ইন্ডিভিজুয়াল পোস্টগুলির প্রতি পুরোপুরি সুবিচার করছেন না। আপনার প্রত্যেকটা ইন্ডিভিজুয়াল পোস্টেরই নিজস্ব কিছু চরিত্র, বৈশিষ্ট্য বা সৌন্দর্য আছে। এত দ্রুত পোস্ট করে আপনি কিন্তু পাঠকদের সেই বৈশিষ্ট্য বা সৌন্দর্য যথাযথ ভাবে এপ্রিশিয়েট বা আস্বাদন করার সুযোগ ও সময় দিচ্ছেন না। ফলে পোস্টগুলির উপরও অবিচার করা হচ্ছে।

যাইহোক, এটা স্রেফ আমার মতামত মাত্র। আশা করি মাইন্ড করবেন না।

****************************************

তারেক অণু এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ। সে জন্যই তো বিভিন্ন বিষয়ের উপর লেখা দিচ্ছি, একটানা কিছু একটা নিয়েই না দেবার চেষ্টা করছি।
আপনার ভালো লাগার জন্য ধন্যবাদ। আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

ডাউনলোড দিলাম ...

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

তারেক অণু এর ছবি

দেখে কেমন লাগল জানিয়েন-- সাবটাইটেল সহ আছে আশা করি--

নিটোল এর ছবি

ছবি দেখা হয়নি,তাই লেখাটা পড়লাম না (আপনার পরামর্শ অনুসারেই)। বুকমার্ক করে রাখলাম। শিগগির দেখে আপনার লেখাটা পড়ে ফেলব।

আর আপনে একটু...ইয়ে মানে...আমাদেরকে একটু ধীরে খাওয়ান। আমরা কালো ধোঁয়া আর শিশা খাওয়া জাতি,ভালো জিনিশ এতো জলদি জলদি বারবার পেলে তো পেট খারাপ করবে! খাইছে

_________________
[খোমাখাতা]

সাফি এর ছবি

হ আমিও স্পয়লার এলার্ট দেখে আর পোস্ট পড়লাম না

তারেক অণু এর ছবি

সাবটাইটেল সহ আছে আশা করি- চলুক

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

আপনার পোস্ট না পড়ে ফেলে রাখা খুবই দুরূহ। গন্ধম খাওয়ার মত। যতই নিষেধ করেননা কেন, আমি বাবা পড়ে ফেলতেই চাই। যদি আদৌ সিনেমাটা দেখা না হয়!

খুব ভাল লাগলো। ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন, আমাদের জন্য তা খুব প্রয়োজন।

তারেক অণু এর ছবি

দেখে জানিয়েন কেমন লাগল ! ভাল থাকুন সবসময়।

নীড় সন্ধানী এর ছবি

এই ছবিটা জমিয়ে দেখার জন্য অপেক্ষা করছে সংগ্রহশালায়। সুযোগ পাচ্ছি না গত কয় মাস মন খারাপ

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

তারেক অণু এর ছবি

দেখে ফেলেন, আজ বাকী, কাল নগদ।

দুর্দান্ত এর ছবি

১। স্প্য়ানিশ ভাশায় 'জি ইউ ই' এর উচ্চারণ 'গুয়ে' নয়, এর উচ্চারণ 'গে'। আমেরিকা বা স্পেনে গিয়ে রাস্তায় গুয়েভারা গুয়েভারা বলে চিল্লালে চে'র আত্মীয়রাও তাকে চিনবে না। 'গেবারা' বললে হাবানার বাইরের যে কিছু কলেজছাত্র তাকে চেনে তারা তাকে চিনতেও পারে।

২। আশা ছিল এখানে একজন কোঊতূহলী বরলোকের ছেলেকে মহান বিপ্লবী নেতা হতে দেখবো। কিন্তু আশাহত হয়েছি। মোটরসাইকেল ডায়েরী ছবিটি বোধকরি যারা চে কে রেভূলিশিনিস্ট হিসেবে চিনেছেন, পড়আশোনা করে হোক বা রূপকথা থেকে হোক, তাদের জন্য়ি বানানো। কিন্তু যারা চেকে চেনেনা, তাদের কাছে এই ছবিটার আবেদন শুধুই একটি সুস্বআদু ভ্রমণ কাহিনী হিসেবে।

৩। এই ছবির সবচাইতে শক্তিশালি বক্তব্য় বোধকরি চে কে দেবতা আসন থেকে নামিয়ে তাকে একজন রক্তমানংসের মানুষ হিসেবে পরিচিত করা।

৪। এই ছবিতে এসে গল্প যেখানে থেমে গেছে, সেখান থেকেই মনে হয় সোডারবাররগের দুই খন্ডের ' চে' শুরু হয়েছে। সুতরানং সিলেবাসে ঐ দুটো ছবি যোগ করার আহ্বান রইল।

তারেক অণু এর ছবি

কথা সত্য। অনেক কষ্টে স্প্যানিশভাষী বন্ধুদের বোঝানোর পর বলত , ও চে গ্যেভারা !
সেটাই হয়ত লেখা উচিত,কিন্তু বাংলায় অনেক অনেক দিন ধরেই গুয়েভারা চালু আছে দেখে আর ঘাঁটলাম না।
ভ্রমণ কাহিনী তো বটেই, কিন্তু মোটরসাইকেল ডায়েরীর কারণে তো আর্নেস্তোর চে, তে রূপান্তর।
সোডারবাররগের দুই খন্ডের ' চে' নিয়ে আসছে শীঘ্রই--

দুর্দান্ত এর ছবি

বেচারী পিকাসোর 'গেরনিকা'ও একই 'গুয়ে' ডুবে গেছে।
সোডারবারগের দুই চে পড়তে চেয়ার টেনে বসলাম। চলুক

তারেক অণু এর ছবি

হুমম, এই গু নিয়ে মানুষ যখন নাম বলতে মস্করা করে না বুঝে মেজাজ যা খারাপ হয়! লিখে ফেলেছি, পোস্ট করব পরে।

তারেক অণু এর ছবি

হুমম, এই গু নিয়ে মানুষ যখন নাম বলতে মস্করা করে না বুঝে মেজাজ যা খারাপ হয়! লিখে ফেলেছি, পোস্ট করব পরে।

ন এর ছবি

সিনেমাটা দেখেছি লেখা পড়ে আবারও দেখতে মন চাচ্ছে, অসাধারণ লেখা

তারেক অণু এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ!

পাঠক এর ছবি

প্রিয় ছবি - তবে চে'র গিনেস রেকর্ড সম্পর্কে তথ্য জানা ছিল না - উইকিতে বলে উনি মেডিকাল ডিগ্রী পান ১৯৫৩ সালের জুনে, যখন তার বয়স ২৫

তারেক অণু এর ছবি

হা, কিন্তু আর্জেন্টিনার শিক্ষা ব্যবস্থা একটু অন্য ধরনের, আপনি চাইলে খুব তাড়াতাড়ি শেষ করতে পারেন আবার বছর কয়েকের ছুটি নিয়ে পরে একই জায়গা থেকে শুরু করতে পারেন।

অন্যকেউ এর ছবি

অনেক আগে দেখেছি মুভিটা। স্মৃতিতে সবচে' বেশি দাগ কেটে আছে কুষ্ঠ রোগীদের দ্বীপ। লেখাটা পড়তে পড়তে চোখের ভেতরে এক একটা ফ্রেম ভেসে উঠছিলো আবারও। চোখের সামনে আবার দেখতে পাচ্ছিলাম মোটরবাইকের ওড়ানো ধূলা, কানে যেন শুনতে পাচ্ছিলাম গম্ভীর এঞ্জিনের গুমগুম শব্দ...
আবহ সঙ্গীতটা ইউটিউবে বাজছে এখনও। আর্নেস্তোর কথা হৃদয়ে বাজবে সবসময়।
আপনার মুভিবর্ণন চমৎকার লাগছে। আমি মিষ্টি বেশি খাওয়ার পক্ষে ভোট দিলাম। দেঁতো হাসি

_____________________________________________________________________

বরং দ্বিমত হও, আস্থা রাখো দ্বিতীয় বিদ্যায়।

তারেক অণু এর ছবি

আমিও মিষ্টি বেশী খেতে চাই ! ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য !

উচ্ছলা এর ছবি

প্রায় প্রতিদিন একটা করে নতুন পুরাতন সিনেমা দেখা হয়; এটা আমার কাছে পানি খাওয়ার মত নৈমিত্তিক ব্যাপার। কিন্তু কোনো সিনেমাকেই এতটা দরদ, ভালবাসা আর নৈপুন্য দিয়ে বর্ণনা করার শক্তি আমার নেই।

গুরু গুরু

তারেক অণু এর ছবি

আছে আছে, শুরু করে দিও। কিন্তু কেবলমাত্র মনপছন্দ সিনেমাটাই।

কল্যাণF এর ছবি

চলুক

তারেক অণু এর ছবি

কুতি ছিলেন গো দাদা !

কল্যাণF এর ছবি

আর বুলোনা ভাই, যুগপৎ তাপে, চাপে ও _পে আছি, চারি পাশ্য কাল কেশ্য হয়ে যাছে।

তারেক অণু এর ছবি

ঘিরে লেন মামুর বুটা দের !

কল্যাণF এর ছবি

আরে আমাখেই ঘেরে লিছে মন খারাপ

তারেক অণু এর ছবি
তাপস শর্মা এর ছবি

দেখিনি মন খারাপ । দেখুম ঠিক ঠিক ।

তারেক অণু এর ছবি

হ ! দেখে ফেল দাদা ভাই!

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

ঝরঝরে বর্ণনায় যেন নর্টন ৫০০ এর গতি। আমার মত অল্পসল্প ইংরেজি জানাদের জন্য ছবি দেখবার আগে এমন বর্ণনা পড়ে নেয়া বরং উপকারী বলেই মনে হয়। গল্প ও সংলাপের গভীরে প্রবেশ করতে সুবিধে হয়!

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

তারেক অণু এর ছবি

নিহাও, চীন থেকে ফিরেই চৈনিক মস্করা!
বললাম সিনেমাটা স্প্যানিশে! তারপরও ইংরেজির দোহায়! আর নর্টনের যে গতি !

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

ছবিটা দেখার আগ্রহ জাগলো আপনার চমৎকার আলোচনা পড়ে। আমি বরাবরই মোটর সাইকেলের ভক্ত। আমার নিজের একটা ১৫০ সিসি বাজাজ স্কুটার আছে। প্রায় ৩ বছর পর সম্প্রতি ওটাকে আবার মেরামত করেছি। এখন থেকে বাড়ি গেলে চালাবো। আর ছবিটা দেখে মনে পড়ছে অনেক আগে আমার বড়মামা কোত্থেকে যেনো একটা ট্রিয়ম্ফ মোটরসাইকেল জোগাড় করেছিলেন, ওটা বেশ চালাতাম।

আমি সময় পেলেই গিটার শুনি। অনেকের বাজনাই ভালো লাগে, বেশিরভাগই রক। তবে প্রায় সবার বাজনাই কান দিয়ে শুনি আর কার্লোস সান্টানার মতো দু'একজনের বাজনা মন দিয়ে শুনি। ধন্যবাদ আপনাকে।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

তারেক অণু এর ছবি

শুনে খুশি হলাম, দেখে জানিয়েন কেমন লাগল।
বাড়ীর নিষেধের কারণে মোটর সাইকেল দেশে চালানো হয় নি, আসলে জীবনের প্রথম মোটর সাইকেল চালালাম মাত্র ২সপ্তাহ আগে, কিন্তু স্কুটার জাতীয়।

Amit এর ছবি

ভাই আপনি তো চমৎকার লিখন শিল্পি। চে'র মোটর সাইকেল এ চড়ে আর আপনার বর্ণনায় ঘুরে এলাম দক্ষিণ আমেরিকা ... অসম্ভব সুন্দর এক journey.

আরও বেশি রিভিউ দিন... শুভকামনা রইল।

তারেক অণু এর ছবি

ধন্যবাদ। দাঁড়ান, আর কয় দিন পরে ঐ যাত্রার কয়েক জায়গায় নিজেই নিয়ে যাব। ভালো থাকুন।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।